মাঝরাতে বুকের উপর ভারি কিছু অনুভব করতেই ঘুম ভেঙে গেল তূর্যর। সে চোখ মেলে দেখতে পেল অচেনা একটা মেয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তূর্য অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো,,, মেয়েটা কে? আর এখানেই বা কি করে এলো? তার পর সে মেয়েটাকে ভালো করে স্ক্যান করতে লাগলো। মেয়েটা দেখতে নিঃসন্দেহে অসম্ভব রূপবতী! উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং আর কাজল কালো দুটি চোখ! পৃথিবীর যে কোন পুরুষ তার চোখের দিকে তাকিয়ে হাজার পথ পাড়ি দিতে পারে নির্দ্বিধায়! মেয়েটা গোলাপি বর্ণের পাতলা ঠোঁট দুটো অনাবৃত কাঁপছে… হয়তো কিছু বলার চেষ্টা করছে। তূর্য মাথা তোলে তার কথাগুলো শুনার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলো না। সে মেয়েটাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই তূর্যর মামা মামী এসে হাজির হলো তার রুমে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তূর্যর মামী বললো,
——“দেখছো? তোমার ভাতিজি জাতে মাতাল হলে কি হবে তালে একদম ঠিক। পাগল হলে কি হবে?শেয়ানা মেয়ে একটা। বেছে বেছে একেবারে তূর্য বাবার শরীরের উপরই ঢলে পড়েছে। নষ্টিফষ্টি করার স্বভাব আর গেল না।”
তূর্যর মামা তার স্ত্রীকে থামানোর চেষ্টা করে বললো,
——” আহা… তুমি এমন করে কেন বলছো? জানোই তো ওর মাথায় একটু সমস্যা আছে।”
——“এমন করে বলবো না তো কি বলবো? নিজের বাবা-মাকে তো সেই কবেই খেয়ে ফেলেছে এখন এসছে আমার হাড়মাশ জ্বালাতে।”
( তূর্য তার মামাতো ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে অনেক দিন পর মামার বাড়ি এসেছে। আর কারেন্ট চলে যাওয়ার তূর্যর খুব গরম লাগছিল। তাই সে তার দরজা খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়ছিল।)
তূর্য তার মামা মামীর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটা যেন তার শরীরের সাথে আর মিশে গেলো। তার পর পেছন দিকে একবার তাকিয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
——“প্লীজ আমাকে বাঁচাও। নয়তো ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। এই দেখ এখানে কতো ব্যাথা দিছে।”( হাত দেখিয়ে)
কথাটা শুনে তূর্যর মামী মেয়েটির দিকে তেড়ে এসে বলতে লাগলো,
——-“এই ওর কাছে আমার নামে কি নালিশ করছিস রে? যতই কাহিনী করিস আজকে আমার হাত থেকে কেউ তোকে বাঁচাতে পারবে না। আমার খাবি,,, আমার পড়বি। আবার আমারই ক্ষতি করবি তা তো হবে না। আজ তোর একটা হেস্তনেস্ত করেই তবে আমি ক্ষান্ত হবো।”
মেয়েটা তূর্যর দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
——“দেখ ঐ পঁচা মেয়েটা আমার দিকে কিভাবে তেড়ে আসছে। আবার আমাকে মারবে।”
——“কেউ তোমাকে মারবে না। আমি আছি তো। কোন ভয় নেই।”
তার পর তূর্য বিছানা থেকে উঠে তার মাম-মামীর দিকে এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
——“মেয়েটা কে মামী?”
——“পূর্ণতা। তোমার ছোট মামার মেয়ে।”
মামীর কথা শুনে তূর্য অবাক হয়ে বললো,
——“সেই পিচ্চি পূর্ণতা। কত্তো বড় হয়ে গেছে এখন! তার পর পেছন দিকে তাকিয়ে বলল,,, পূর্ণতা এদিকে এসো। আমি তোমার তূর্য ভাইয়া। তোমার একমাত্র ফুফাতো ভাই।”
পূর্ণতা বাচ্চাদের মত করে বললো,
——“না আমি যাবো না। ওরা আমাকে মারবে।”
তূর্য এবার ওর মামা-মামীর দিকে তাকিয়ে বলল,
——” মামা-মামী ও কি বলছে এসব?”
ওর মামী একটা বিরক্তিকর নিঃশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করল,
——” আর বলো না,,, তোমার ছোট মামা-মামী এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার পর বাবা-মায়ের মৃত্যু সইতে না পেরে পূর্ণতা পাগল হয়ে গেছে। এতো দিন পাগলা গারদেই ছিল কিন্তু তন্ময় বিদেশে থেকে আসার পর ওকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। সে নাকি তার চাচাতো বোনকে ছাড়া বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারবে না। এখন আমার হয়েছে এক জ্বালা। এই মেয়েকে সামলাতে গিয়ে আমার হাড়মাশ সব জ্বলে পুড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে। জানো? আজকে কি করছে? তিথি তন্ময়ের বিয়েতে পড়বে বলে একটা নতুন জামা কিনে এনে খাটের উপর রাখছে। আর এই নবাবজাদী সেই জামা নিয়ে আগুনে পুড়া দিসে। আমার মেয়েটার সে কি কান্না। গুনে গুনে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে জামাটা কিনছিলো।”
পূর্ণতা আবার বাচ্চাদের মত করে বললো,
——-” তিথি আপু শুধু নিজের জন্যেই জামা কিনে। আমার জন্য একটাও জামা কিনে না। তাই তো জামাটাতে আগুন ধরিয়ে দিসি।”
——“দেখসো কি শেয়ানা মেয়ে! ঠাটায় লাগাবো একটা।”( তূর্যর মামী রেগে বললো)
——“দেখছো ভাইয়া আবার আমাকে বকতেছে।”(অভিমানী গলায়)
——“ঐ তোর ভাইয়া আমাকে কি করবে রে? আজকে আয় তোকে মজা দেখবো। নিজের বাবা-মাকে তো সেই কবেই খেয়ে ফেলেছিস। এখন এসেছিস আমাকে জ্বালাতে।”
তূর্য মুচকি হেসে বললো,
——” আহা মামী এমন করে বলবো কেন? বাচ্চা মেয়ে বুঝতে পারেনি। তাই এমন করে ফেলেছে।”
——“তুমি বুঝবে না বাবা। ও সব বুঝে। শুধু পাগলে ভান করে থাকে।
তার পর তূর্যর মামী পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল,,,ঐ এখনো এখানে বসে আছিস কেন? আয় ঘরে আয়।”
—–“না আমি যাবো না। তোমারা আমাকে মারবে।”
——“যাবি না মানে?”
——“তোমরা ঘরে যাও মামী। আমি ওকে বুঝিয়ে বলছি।”
——-“বাবা তোমার ঘুমে সমস্যা হবে। আর তা ছাড়া ঐ পাবনা ফেরত পাগলকে তুমি বুঝাতে পারবে না। ও বুঝে শুধু চাবুকের বারি।”
——“মামী তুমি হয়তো জানো না। আমি একজন সাইনক্রিয়াটিস্ট।”
তূর্যর কথা শুনে তার মামী রাগে গজগজ করতে করতে সেখান থেকে চলে গেল। পেছন পেছন তার মামাও। তার পর তূর্য পূর্ণতার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো,
——“এখন ভয় করছে?”
——“না একদম না। তুমি আমার খুব ভালো ভাইয়া।”
——” তাই বুঝি।”
——“হ্যাঁ তো।”
——“তাহলে আমি যা বলবো। তাই শুনবে?”
——“হ্যাঁ।”
——” তাহলে যাও এখন নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। অনেক রাত হয়েছে।”
——“না আমি যাবো না। ওখানে তিথি আপু আছে। আমাকে মারবে। আমি এখানেই থাকবো।”
——-“কিন্তু এখানে যে আমি থাকবো?”
——-“না আমি এখানেই থাকবো। আচ্ছা? আমরা তো একসাথেই থাকতে পারি…তুমি ও থাকো আমি ও থাকি সমস্যা কি? আমি আর তিথি আপুও তো এভাবে থাকি।”
তূর্য বুঝতে পারছে একে যুক্তি দিয়ে কোন লাভ নেই। তাই সে বললো,
——“আচ্ছা তুমি এখানেই ঘুমাও। আমি বারান্দায় থাকি।”
——” তুমি বারান্দায় থাকবে কেন? ওখানে তো কোন খাট নেই। তুমি এখানেই থাকো। আমার পাশে।”
——“পাগলী। তুমি জানো না বড় হলে ছেলে মেয়ে একসাথে থাকতে নেই?”
——“তাই? আচ্ছা। তাহলে তুমি বরং বারান্দায়ই যাও। কিন্তু আমার যদি ভয় করে?”
——“ভয় পেলে ডাকবে আমায়।”
এই বলে তূর্য তার গিটারটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেল। অনেক দিন গান গাওয়া হয় না। তাই তূর্য একটা গান ধরলো। এমন সময় পূর্ণতা তাকে আবার ডেকে উঠল। ঘরে গিয়ে দেখলো……
#চলবে…?
#পূর্ণতা🖤
#Writer_Meghla(মেঘ)
#সূচনা_পর্ব