প্রিয় পরিণতি পর্ব ৬

গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ০৬!
লেখক: তানভীর তুহিন!

জানুয়ারি মাসের সকাল ৮ টা মানেই প্রচুর শীত আর কুয়াশা। তন্বী গিয়ে কলিংবেল চাপতেই মেঘ এসে দরজা খুললো। মেঘ একদম রেডি। তন্বী ভেতরে গিয়ে মেঘের মাকে সালাম দিলো।
– ” আসসালামু আলাইকুম আন্টি,কেমন আছো? ”
– ” এইতো মা আলহামদুলিল্লাহ,তোর কী অবস্থা? ”
– ” এইতো আন্টি ভালোই! ”
– ” তা দুই পাজি এই সকাল বেলা কই যাচ্ছিস? নতুন কলেজে ভর্তি হলি। কোথায় ক্লাস করবি তা না করে পুরোদিন ঘুরবি। তাও আবার এতো সকালে বের হচ্ছিস! ”
– ” আরে আন্টি একদিনই তো। আর আমরা একা যাচ্ছি না সাথে আরো ফ্রেন্ড আছে। তোমার মেয়েকে সন্ধ্যায় এনে দিয়ে যাবো! ”
– ” আচ্ছা আচ্ছা যা। খেয়াল রাখিস দুজন দুজনার! ”

মেঘ আর তন্বী বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। আবিদ গাড়িতে হেলান দিয়ে গেটের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘের মুখটা দেখার জন্য। গেট থেকে আগে তন্বী বেড়িয়ে এলো। তারপর মেঘ বের হলো হাত দুটো ঘষতে ঘষতে, মুখ দিয়ে সাদা ধোয়ার মতো বের হচ্ছে, ঠোট গুলো শীতে কাপছে। ওই কাপা ঠোটগুলো যে আবিদকে কী পরিমানে টানছে তা শুধু আবিদই জানে। একদম বাচ্চাদের মতো সোয়েটারে প্যাকেট হয়ে এসেছে মেঘ। আবিদ ঠায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে।মেঘ আবিদের কাছা-কাছি এসে বললো, ” গুড মর্নিং! ” আবিদ ক্যাবলার মতো মুচকি হেসে বললো, ” আমার জন্যতো বেষ্ট মর্নিং এটা! ” মেঘ আবিদের কথায় লজ্বা পেয়ে মুচকি হেসে মাথা নিচু করে ফেলে। আবিদ গাড়ির সামনের দরজাটা খুলে মেঘকে বসতে বলে। মেঘ বসতেই আবিদও গিয়ে বসে পরে গাড়িতে। বাইরে ঘন কুয়াশা গাড়িতে বসেই গাড়ি স্টার্ট করে হেডলাইট অন করে দেয় আবিদ। আবিদ আর মেঘ সামনে। আর পেছনে তামান্না,জুলফিকার আর তন্বী বসেছে। তামান্না বললো, ” যেতে তো ১০ টা বেজে যাবে প্রায়। তোরা গাড়িতে কী করবি কর। সারারাত আমায় ঘুমাতে দিস নাই। এখন ঘুমাবো আমি। আর আবিদ তুই ও তো ঘুমাস নী গাড়ি সাবধানে চালাস। আর টায়ার্ড লাগলে ব্রেক নিয়ে নিস। আমি ঘুমালাম!”

তন্বী মাঝখানে বসেছে দুপাশে তামান্না আর জুলফিকার। জুলফিকার গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে,তন্বী জুলফিকার এর কাধে মাথা দিয়ে আর তামান্না তন্বীর কাধে মাথা দিয়ে বস্তার মতো পরে ঘুমাচ্ছে। আবিদ গাড়ি চালাচ্ছে আর মেঘকে দেখছে। বাইরে ঘন কুয়াশা মেঘ কখনও এই টাইমে বের হয় নী। তাই একটু বাইরে দেখছে সে। আর ভাবছে আবিদ সারারাত ঘুমায় নী কেনো? আর আমরা যাচ্ছিই বা কোথায় যে সেখানে যেতে ২ ঘন্টার মতো লেগে যাবে? মেঘ শুধু অপেক্ষা করছে যে কখন পেছনের ওরা গভীর ঘুমে মগ্ন হবে আর সে একটু প্রানখুলে আবিদ বেচারার সাথে কথা বলবে। আর এদিকে আবিদ মেঘকে চুপ-চাপ দেখে ভাবলো হয়তো মেঘ লজ্বা পাচ্ছে আর সেকারনেই হয়তো কথা বলতে চাচ্ছে না একদম। তাই আবিদ গাড়ি চালানোতে মনযোগ দিলো। আবিদ কিছুক্ষন বাদে বাদে মেঘকে এক পলক দেখে নেয়। এক অদ্ভুদ ভালো লাগা কাজ করে যখন মেঘের দিকে তাকায়। মেঘ পেছনে তাকিয়ে দেখলো সবাই ঘুমিয়ে গেছে। মেঘ একটু কাশি দিলো আরকি আবিদকে বোঝানোর জন্য যে সে কথা বলবে আবিদের সাথে। আবিদ বললো, ” তোমার ঘুম পেলে ঘুমিয়ে যাও! ”
– ” না আমার ঘুম পাচ্ছে না। তার আগে বলুন আপনি সারারাত ঘুমান নী কেনো? ”
– ” কাজ ছিলো একটু! ”
– ” কী কাজ?”
– ” তোমার জন্যই করা কাজ। ধৈর্য্য ধরো। কথায় আছে সবুরের ফল মিষ্ট হয়। তবে আমার কাজ তোমার কাছে মিষ্টি লাগবে না ঝাল লাগবে তা ঠিক জানি না! ”

মেঘ মনে মনে বললো, ” তোমায়ই এত্তো ভালোলাগে আমার। তোমার কাজ কীভাবে ঝাল লাগবে। এতো অল্পসময়ে কী ঝাদু করলা যে আমি তোমায় ভালোবাসতে চাই? এতো অল্প সময়ে এতো বেশি ভালো কীভাবে বেসে ফেললাম আমি? ”

আবিদ মেঘের ভাবনার মধ্যে হস্তক্ষেপ করে বললো, ” একঘেয়ে লাগছে না? ”
– ” উহু! ”
– ” আচ্ছা মেঘ! ”
– ” হুম! ”
আবিদ বলতে চাচ্ছিলো যে তোমার হাতটা একটু আমার হাতে দেবে খুব ইচ্ছে করছে ধরতে। কিন্তু সেটা অনধিকারচর্চা হয়ে যাবে ভেবে আর বলে নী।
– ” বলুন না। কী বলবেন! ”
আবির কথা এড়িয়ে বললো, ” বাসায় কিছু বলে নী? এতো সকালে বের হলে তার জন্য? ”
– ” উহু, তন্বী ছিলো তো! ”

আবিদ আর মেঘ দুজনেই চুপ। দুজনের মনেই কথাতো বহু আছে বলার জন্য কিন্তু মেঘ বলতে পারছে না লজ্বায় আর আবিদ বলতে পারছে না মেঘ লজ্বা পাবে সেটা ভেবে।

মেঘ আবার পেছনে তাকালো দেখলো যে তন্বী জুলফিকার এর বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। মেঘ এরও খুব ইচ্ছে করছে একটু ডান পাশে চেপে আবিদের কাধে মাথা রেখে হাত জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু কী করবে? এসব ভাবতে ভাবতেই আবিদ গাড়ি থামালো।

৯:৪০ বাজে। আবিদ সবাইকে উঠিয়ে দিলো। ওরা একটা চায়ের দোকানের সামনে। আবিদ আসলে যাচ্ছে ওর পছন্দের গ্রামের বাড়িতে। ওখানে ওর বাবা একটা প্লট কিনে বাড়ি করেছে। প্রত্যেক ছুটিতে ওরা ওখানে বেড়াতে যায়। চারপাশে জঙ্গলের মতো। ফুলের বাগানের মাঝখানে বাড়ি। আর বাড়ি থেকে সামনে কিছুটা হাটলেই নদী। আর আবিদ সেই নদীর ধারেই একটা উচু টঙ এর মতো বানিয়েছে দালানের মতো করে।মেঘকে ভালোবাসার কথা বলার জন্য ওর চেয়ে নিরিবিলি আর উপযুক্ত জায়গা হতেই পারে না। কারন মেঘ যে পরিমানে লজ্বা পায়। মেঘকে যদি কোনো পার্ক অথবা রেষ্টুরেন্ট এ প্রোপোজ করতো তাহলে মেঘ খুব অপ্রস্তুত বোধ করতো। আর আবিদ মোটেই সেটা চায় না।তাই ওখানে নিয়ে যাচ্ছে।

সবাই চা খাচ্ছে। এই হালকা কুয়াশায়, আবছা রোদে চা খাওয়াটা যে কতটা স্বস্তির তাও আবার রাস্তার ধারের নিরিবিলি টং আকারের দোকানের বেঞ্চিতে বসে। মেঘের ঠোট গুলো যখন চায়ের কাপে ফু দিচ্ছিলো আবিদের মনে হচ্ছিলো ইশ যদি আমি চায়ের কাপ হতাম। মেঘ যখন চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে চা খাচ্ছিলো আবিদের মনে হচ্ছিল আমার ঠোট দুটো যদি চায়ের কাপের পাশ হতো। আবিদ নিজের চা খাওয়া ছেড়ে মেঘের চা খাওয়ার দৃশ্য দেখছিলো। মেঘ এতক্ষন চা খাওয়ায় মনোযোগী ছিলো কারন গাড়ি থেকে নামার পরেই শীত করছিল খুব। হঠাৎ দেখলো আবিদ একদৃষ্টে অপলকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ব্যাস শুরু হয়ে গেলো মেঘের সেই ধুকপুকানি। হৃদপিন্ডটা মনে হয় এখন বেড়িয়েই যাবে এতো জোরে ধুকপুকাচ্ছে। তামান্না আবিদ আর মেঘকে এই অবস্থায় দেখে আবিদকে বললো, ” দেখছিস মেয়েটা এতো লজ্বা পাচ্ছে তারপরেও এভাবে তাকিয়ে কেনো আছিস? চা খেয়ে শেষ করনা। অনেক তাকিয়ে থাকতে পারবি সুযোগ চলে যাচ্ছে না! ” তামান্নার কথায় মেঘের লজ্বায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। আবিদও বেশ লজ্বা পেয়েছে। জুলফিকার আর তন্বী হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে এসব দেখে। আবিদ চায়ে চুমুক দিলো। এক চুমুক খেয়ে তামান্নাকে বললো,” তামান্না কুত্তি তুই এখন আমার মজা উড়াচ্ছিস তো। খালি তুই প্রেম করা শুরু কর তোরে আমি চিকেন বানিয়ে রোস্ট করবো! ” তামান্না আবিদের দিকে তাকিয়ে বললো, ” এই শীতে আমি তোর সাথে মারা-মারি করবো না।তাড়াতাড়ি চা খেয়ে চল! ”

চা খেয়ে গাড়িতে উঠলো সবাই। সবাই এখন জেগে আছে। সবাই সবার সাথে টুকি-টাকি কথা বলছে। তামান্না তখন মেঘকে জিজ্ঞেস করলো,” আচ্ছা মেঘ আমরা যখন ঘুমাচ্ছিলাম। আবিদ তোমার সাথে কী কী করেছে? ”
আবিদ পিছনে ফিরে বললো, ” এখন গাড়ি থামিয়ে তারপর তোরে মারবো কিন্তু! ”
– ” এখানে না থামিয়ে তাড়াতাড়ি চল।যত ঝলদি যাবি তত বেশি টাইম স্পেন্ট করতে পারবি! ”

আবিদ তামান্নার কথা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। তাই মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। প্রায় আধাঘণ্টা পরে ওরা গ্রামের বাড়ি চলে এলো। মেঘের যায়গাটা বেশ পছন্দ হয়েছে, কিন্তু এ বাড়িটা কার? আর আমরা এখানে কেনো এলাম? মেঘের মাথায় এসব প্রশ্ন ঘুর-পাক খাচ্ছে। মেঘ আবিদকে জিজ্ঞেস করলো, ” এই বাড়িটা কাদের? ”
– ” আমার বাবার! ”
– ” ওহ আচ্ছা! ”

একটু দাড়াও আসছি। বলেই আবিদ জুলফিকারদের কাছে গেলো। মেঘ চারপাশটা ঘুরে দেখছে। ফুলের বাগানগুলো খুব পছন্দ হয়েছে মেঘের। একটু পরেই আবিদ এসে বললো ওদিকটায় চলো। মেঘ আবিদের সাথে হাটা শুরু করলো। টং টা দেখেই মেঘের খুব ভালো লেগে যায়। আবিদ মেঘকে নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। মেঘ চারপাশ দেখছে। ঠোটের কোনে হাসি লেগে আছে। এই যায়গাটা এতোটা সুন্দর যে যেই দেখবে সেই যায়গাটার প্রেমে পড়ে যাবে। মেঘ চারপাশটা দেখছিলো। এর মধ্যে তামান্না সিড়ি বেয়ে উপড়ে আসে। তন্বী আর জুলফিকার নিচে দাঁড়ানো। তামান্না একটা ছোট কার্টন রেখে আবিদের ঘাড়ে থাপ্পড় মেরে বলে, ” অল দ্যা বেষ্ট, আবিদ্দা। একদম মন খুলে কথা বলবি। আমরা ওদিকে আছি!” আবিদ মুচকি হেসে বললো,” থ্যাংকস রে তোরা না থাকলে এতোটা করতে পারতাম না। ” তামান্না একটু আলহাদি হয়ে বললো, ” মেঘকে পেয়েই আমায় থ্যাংকস বলে পর করে দিচ্ছিস হারামাজাদা! ” আবিদও রসিকতা বলে ” তুই আমার আপন কবে ছিলি? ”
– ” আচ্ছা ছিলাম না যা। আমরা ওদিকে আছি। তাড়াতাড়ি এসে সুখবরটা দিস! ” আবিদ মুচকি হাসলো। তামান্না নিচে নেমে গেলো। তামান্না নিচে নামতেই তন্বী আর জুলফিকারও আবিদকে অল দ্যা বেষ্ট বললো। তন্বী মেঘকে বললো ” লজ্বা একটু কম করে পাইস চুন্নি! ” বলেই ওরা চলে যায়। মেঘ আগা-মাথা কিছুই বুঝতে পারে না। আবিদ মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ আবিদের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই আবিদ কার্টন টা খুলে একটা লাল গোলাপের তোড়া হাতে নিয়ে মেঘের সামনে হাটুগেড়ে বসে পড়লো। এবার মেঘ বুঝতে পারলো অল দ্যা বেষ্ট এর রহস্য। মেঘের কী যে খুশি লাগছে, এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করে ছিলো সে। তার কানগুলো আকুল হয়ে আছে আবিদের কথাগুলো শুনে আবার আবিদের প্রেমে পড়তে। আবিদ গোলাপের তোড়াটা হিমাদ্রির সামনে ধরে বলা শুরু করলো।

– ” মেঘ তুমিই আমার জীবনের প্রথম মেয়ে যাকে দেখে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছিলো। আমার জীবনে নামমাত্র প্রেম তো এসেছে কিন্তু ওগুলা শুধুই এট্রাকশন ছিলো ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও ছিলো না। কিন্তু তোমার প্রতি আমার যেটা সেটা শতভাগ আমার পবিত্র অনুভূতি। তোমার প্রত্যেকটা জিনিসই ভালো লাগে আমার। আমি হয়তো খুব তাড়াতাড়িই তোমার কাছে ব্যাক্ত করে ফেলছি আমার অনুভুতিগুলো। কিন্তু কী করবো বলো খুব বেশিই অনুভুতি তৈরী হয়ে গেছে তোমায় নিয়ে এই অল্পকয়দিনে। তাই আর পারছিলাম না তোমায় ভালোবাসি কথাটা না বলে থাকতে। বিশ্বাস করো আমি তোমার পছন্দ অপছন্দ স্বমন্ধ্যে কিছুই জানি না। কিন্তু আমি তোমার পছন্দ, অপছন্দ, ভালোলাগা,খারাপলাগার এক অংশ হতে চাই। কষ্ট হয়তো অনেক পাবা, আমি রেগে হয়তো অনেক কষ্ট তোমায় দিয়ে ফেলবো কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমায় কোনোদিন ছেড়ে দিবো না। শুধু একবার বিশ্বাস করে পথচলার জন্য আমার হাতটা ধরো। রেগে হয়তোবা বলতে পারি যে চলে যাও আমায় ছেড়ে কিন্তু ওসব পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই হবে না। আমি এ অবধি কাউকে গোলাপ দিয়ে বলি নাই ভালোবাসি। তুমিই প্রথম আর আমি চাই তুমিই শেষ হও। আই লাভ ইউ মেঘ। একটা সুযোগ দাও ভালোবেসে ভালোবাসা পাবার। হয়তো তাড়াতাড়িই সবটা হয়ে যাচ্ছে তাই তুমি কনফিউজড কিন্তু বিশ্বাস করো তুমি ঠকে যাবা না। আমি তোমায় আমরন ভালোবাসবো বিনিময়ে তুমি সারাজীবন নাহয় আমার হয়ে থেকো আর এক আধটু করে ভালোবেসো। বলো মেঘ হবে আমার সবটা? বাসবে আমায় ভালো? পারবে আমায় করে নিতে তোমার সবটা? ”

মেঘের চোখে পানিতো আসে নী কিন্তু মেঘের কলিজা ভিজে গেছে আবিদের এই সরল সিকারোক্তিতে। এই ছেলেকে আর কীভাবে না বলবো আমি? আমি যে ওর প্রেমে উন্মাদ হয়ে গেছি। আমি যে শুধু আবিদেরই তাতে কোনো সন্দেহই নেই। মেঘের চুপথাকা দেখে আবিদ আবার বললো, ” আই লাভ ইউ মেঘ। উইল ইউ বী মাই এভরিথিং?ফর এভার এভার এভার এন্ড এভার?

– ” আই উইল! আই লাভ ইউ ঠু আবিদ। বিশ্বাস করো আবিদ আমিও তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি আর তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কথাদিচ্ছি তোমার সবটুকু হয়েই তোমাকে নিজের সবটুকু করে নিবো। যতই রাগ করো যতই কষ্ট দাও শুধু আমি যখন অসহ্য হয়ে অভিমান করে বসবো তখন একটু সময় নিয়ে ভাঙিয়ে নিও আমার অভিমান। আমি এর আগে কখনও কাউকে ভালোবাসি নী। তাই এ বিষয়ে আমি একদমই বুঝিনা কিছু কিন্তু আমি এটা জানি যে তুমি আমায় আর আমি তোমায় ভালোবাসি। আমাদের সম্পর্কে যেনো কখনও কৃত্রিমতা না আসে আমরা যেনো অকৃত্রিম ভাবে ভালোবেসে যেতে পারি আজীবন। শুধু এতটুকুই চাইবো তোমার কাছে। দেবে আমায় এই প্রতিশ্রুতি?

আবিদ মেঘকে জড়িয়ে ধরে বললো, ” কথা দিচ্ছি তোমায়। তোমায় আমরন অকৃত্রিম ভালোবাসবো, কখনও ছেড়ে যাবো না। ” মেঘ আবিদের সামনে বসে পড়লো তারপর বললো ” মনে থাকবে তো এসব? ” আবিদ মেঘের গালে হাত রেখে বললো, ” ভুলে যাবার কোনো ইচ্ছা নেই আমার তবুও যদি ভুলে যাই তাহলে কাছে এসে নাহয় মনে করিয়ে দিও! ”
মেঘ মুচকি হাসলো। তারপর আবিদের হাত থেকে ফুলের তোরাটা নিলো। আবিদ কার্টন থেকে একটা কাপল ওয়াচ আর একটা কাপল রিং বের করলো। মেঘকে পরিয়ে দিলো ঘড়িটা আর রিংটা। মেঘের হাতে দুটোই বরাবর লেগেছে এর কারন হলো তন্বীর ইনফরমেশন। তারপর মেঘও আবিদকে ঘড়ি আর আংটি পড়িয়ে দিলো। আবিদ মেঘের হাত ধরে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। আবিদ মেঘকে জিজ্ঞেস করলো, ” আচ্ছা মেঘ একটা কথা বলবো কিছু মনে না করলে? ”
– ” কিছু মনে করার মতো সম্পর্ক কী আছে আমাদের মধ্যে? এতো ফর্মালিটি না করে বলে ফেলো! ”
– ” জানি খুব ঝলদিই আবদার করে ফেলছি কিন্তু সকালের তোমার ওই কাপা কাপা ঠোটটা দেখেই তোমার ঠোট জোড়ায় খুব অধিকার ফালাতে ইচ্ছে করছিল। এখনো মাথা থেকে সরাতে পারি নী ওই প্রবনতা টা। দেবে একটু অধিকার ফলাতে?

কথাটা শুনেই মেঘের বুকে হাতুড়ি পেটানো শুরু হলো। না করার সাধ্য মেঘের নেই। কারন মেঘ যে বাধা পড়ে গেছে আবিদে। তাই মাথা নিচু করেই বললো, ” এভাবে কখনও জিজ্ঞেসই করবে না। যখন আদর করতে মন চাইবে করে ফেলবে। আদর করা আটকে রাখা যে কত কষ্টের সেটা আমি সকালে বুঝেছি! ”
– ” মানে? ”
– ” আমার সকালে খুব ইচ্ছে করছিলো তোমার ঘাড়ে মাথা রেখে গাড়িতে বসতে। কিন্তু লজ্বার কারনে পারি নী! ”
– ” আমিও হাত ধরার জন্য মরে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তুমি কী ভাবে নেবে ব্যাপারটা তা ভেবে আর ধরা হয় নী! ”

মেঘ মাথা উঠিয়ে আবিদের দিকে তাকাতেই আবিদ মেঘের কোমড়ে হাত দিয়ে মেঘকে কাছে টেনে নিলো। আবিদ আস্তে আস্তে মেঘের ঠোটের দিকে আগাচ্ছে। মেঘের হৃদস্পন্দন বেড়ে চলছে। চোখ বন্ধ করে ফেলেছে মেঘ নিঃশ্বাস উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দুজনার। আবিদ মেঘের ঠোট এ ঠোট ছুইয়ে দিতে মেঘ আবিদের শার্ট খামচে ধরলো। শরীরে এক অদ্ভুত কাপনের সৃষ্টি হয়েছে মেঘের। আবিদ আর মেঘ দুজনেই আপন মনে অধিকার ফলাচ্ছিলো দুজনের উপর। তখনই পাশ থেকে তালিবাজার শব্দে মেঘ আবিদকে ছেড়ে একটু দূরে সরে যায়। আবিদও কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করে!!

চলবে!
#thetanvirtuhin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here