প্রিয় পরিণতি পর্ব ৭

গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ০৭!
লেখক: তানভীর তুহিন!

তালি বাজানো জনতাগুলো ছিলো তামান্না,তন্বী আর জুলফিকার।ওদের জড়িয়ে ধরা থেকে শুরু করে, আবিদের বসে মেঘকে প্রোপোজ করা, ওদের চুমু খাওয়া সব মূহুর্তের ছবি তুলেছিলো তামান্না।সবগুলো ছবিই আছে আবিদের কাছে। সেদিন থেকেই আবিদের শুরু হয় তার “মেঘবানু”-র সাথে পথচলা। মাত্র চারদিনের মাথায় আবিদ প্রোপোজ করেছিলো মেঘকে, মাত্র চারদিনের মাথায় মেঘ ও প্রেমে পড়ে গেছিলো আবিদের সবকিছুতে, দিয়ে দিয়েছিলো সব অধিকার সেই চারদিনের মাথায় প্রোপোজ করা সম্পর্কটার বয়সই আজ প্রায় সাড়ে তিন বছর।আর এই সাড়ে তিন বছরের প্রত্যেকটা মুহুর্তে তারা অনুভব করেছে যে তাদের দুজনের সিদ্ধান্তটা কোনো আবেগ ছিলো না বরং ছিলো অনুভুতিমাখানো খাটি ভালোবাসা।

পুরোনো এসব ভাবতে ভাবতেই আবিদ ঘুমিয়ে যায়। সকাল সাড়ে সাতটা বাজে। এলার্মের চড়া আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আবিদের। আজ অফিস বন্ধ আবিদের। তাই আজ সারাটাদিন মেঘের সাথেই কাটাবে। এমনিতেই এই দুই দিন ঝগড়া করে কথা বলে নী দুজন দুজনার সাথে। আবিদ ঝগড়া তো খুব করে কিন্তু মেঘের যেনো দিনদিন সহ্য করার ক্ষমতাটা আরো বেড়ে যায়। কারন মেঘ জানে যে আবিদ যতই ঝগড়াই করুক না কেনো “মেঘবানু” ছাড়া আবিদ অচল। আর তার মেঘবানু তো নিজেকে কল্পনাই করতে পারে না আবিদকে ছাড়া। কথায় আছে না সম্পর্কে যত বেশি ঝগড়া থাকে সম্পর্ক তত বেশি মধুর হয় ওদের সম্পর্কটাও ঠিক তেমন।

সকাল ৮:১০ বাজে। আবিদ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কলেজের সামনে। অপেক্ষা করছে মেঘের জন্য। আজ ২২ শে ফেব্রুয়ারি। গতকাল ২১ শে ফেব্রুয়ারি থাকায় অফিস বন্ধ ছিলো আবিদ মেঘকে নিয়ে বের হবে বলে বুদ্ধি করে আজকেও ছুটি নিয়ে নিয়েছে। আবিদ তিনবছর যাবৎ চাকরি করছে। মানে ওদের সম্পর্ক শুরু হবার ছয়মাস পর থেকেই আবিদ চাকরিজীবী। আবিদও সারাদিন ব্যাস্ত থাকে তার চাকরি নিয়ে আর মেঘ ব্যাস্ত থাকে তার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। কিন্তু প্রত্যেকদিন বিকাল ৫-৭ টা তারা দুজন দুজনকে সময় দেয়।তারপর রাতে চ্যাটে,কলে, ভিডিও কলে কথা বলা তো থাকেই। সব মিলিয়ে ওদের সম্পর্কের এই সাড়ে তিন বছরই ওদের কাছে স্বর্নালি। বিন্দুমাত্র একঘেয়ে বা বিরক্তিভাব আসে নী ওদের মধ্যে। ঝগড়া তো অনেক হয় কিন্তু যেখানে ভালোবেসে দুজন দুজনের কাছে থাকতে চায়। সেখানে কখনই ঝগড়া পাড়ে না দূড়ে সরিয়ে দিতে।ঝগড়াও আবিদ শুরু করে সরি বলে আবার সবটা মিটিয়েও নেয় আবিদ। আর মেঘ শুধুই চুপ-চাপ থেকে অভিমান করে। আর যখন আবিদ অভিমান ভাঙাতে যায় তখন মেঘ ইচ্ছেমতো শাসন করে নেয়।

সোয়েটার পরে পিঠে ব্যাগ নিয়ে হেটে হেটে আসছে মেঘ। দূড় থেকেই দেখতে পেলো আবিদ দাঁড়িয়ে আছে বাইক নিয়ে। ঘড়িতে সময় দেখলো প্রায় সাড়ে আটটা বাজে। কাজ হইসে,এখন কাছে গেলেই আগুন বের হবে।টাইম সেন্স নেই তোমার? আমি দাঁড়িয়ে আছি আধাঘণ্টা যাবৎ,তোমার খেয়াল থাকে কোথায়? এসব ভাবতে ভাবতেই মেঘ হেটে এগিয়ে আসছিলো আবিদের দিকে। মেঘ পাশে ফিরতেই দেখলো মেঘ আসছে। বাইরের হালকা শীতে মেঘের ঠোট কাপছে হালকা করে। আবিদ রাতে সেই শুরুর দিনগুলো নিয়ে ভাবছিলো। তাই মেঘের এই ঠোট কাপা দেখেই সেই জানুয়ারি মাসের সকাল আটটা মনে পড়ে গেলো আবিদের। মেঘ কাছে এসেই নরম আদরমাখা কন্ঠে বললো, ” সরি গো। ঘুম থেকে উঠে রেডি হতে হতে দেড়ি হয়ে গেলো! ”
– ” একদিনও ঠিক টাইমে আসছো তুমি? আমার অভ্যাস হয়ে গেছে তোমার দেড়ি করে আসা স্বভাবে! ”

মেঘ নিজেও জানে যে সে সবসময়ই দেড়ি করে ফেলে। মেঘ মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

– ” বাসায় কী বলে বের হইছো? ”
– ” সাড়ে আটটায় ক্লাস তো। ক্লাসের কথা বলেই বের হইছি। আর বলছি যে ক্লাসের পরে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবো। ফিরতে সন্ধ্যা হবে। ”
– ” তার মানে আজ সারাদিনই আমার? ”

মেঘ মাথা নিচু করেই ঘাড় নেড়ে হ্যা বললো।

– ” তোমার ব্যাগে ইম্পরট্যান্ট কিছু আছে? ”
– ” উহু! ”
– ” তাহলে ব্যাগটা দাও, দোকানে রেখে আসি। এটা শুধুই টানার প্রয়োজন নেই! ”

মেঘ পিঠ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে আবিদকে দিলো। আবিদ নিয়ে ব্যাগটা দোকানদারকে দিতেই দোকানদার হাসিমুখে ব্যাগটা রেখে দিলো। আসলে আবিদ যখন এই কলেজে পড়তো তখন সবার সাথেই একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলো। সেই সুবাদে দোকানদার এর সাথেও আবিদের সম্পর্কটা বেশ ভালো।আবিদ এসে মেঘকে জিজ্ঞেস করলো, ” কিছু খেয়ে এসোছো? ”
– ” এই শীতে এতো সকালে কেউ কিছু খেতে পারে নাকি? নাস্তা করার জন্য টাকা নিয়ে আসছি! ”
– ” যারা রাস্তার পাশে ঘুমায়, যাদের পেটে ক্ষুদা থাকা স্বত্তেও খাবার পায় না তারা পারে। তোমার আমার মতো মানুষরা পারে না আরকি! ”
– ” আমার দার্শনিক জামাইটা! ”

আবিদ হেলমেট নিয়ে মেঘকে পড়িয়ে দেয়, তারপর নিজেও পড়ে নেয়। আবিদ বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট করতেই মেঘও উঠে পড়ে। আগে মেঘ লেডিস স্টাইলেই বাইকে বসতো। কিন্তু তাতে বসে ঠিক আরাম পেতো না। তাই আবিদের শাসনে এখন জেন্টস স্টাইলেই বসে। আবিদ বাইক কিনেছে প্রায় দেড় বছর। আর বাইকটা আবিদের নিজের উপার্জনে কেনা।আবিদ পিছনে ঘুরে মেঘকে বললো, ” সিটবেল্ট বাধছো না কেনো? “। সিটবেল্ট মানে হলো বাইকে উঠে আবিদকে জড়িয়ে ধরে আবিদের পিঠে মাথা রাখতে হবে তাহলেই আবিদ বাইক চালাবে। মেঘ আবিদকে জড়িয়ে ধরে বললো, ” নাও তোমার গরীবের সিটবেল্ট বেধে ফেলেছি। এবার চলো! ”

আবিদ আর মেঘ একটা হোটেলে ঢুকে নাস্তা সেড়ে ফেলেছে। এখন প্রায় দশটা বাজে। মেঘ আর আবিদ একটা পার্কে বসা। দুজনই টুকটাক কথা বলছে। মেঘ আবিদের হাত জড়িয়ে কাধে মাথা দিয়ে বসে পা নাড়াচ্ছে। আবিদ জিজ্ঞেস করলো, ” বাসার সবাই কেমন আছে? ”
– ” ভালোই। আঙ্কেল আন্টি কেমন আছে? আর ইশু পাকনিটার কী অবস্থা? ”
– ” হুম ভালোই! ”

– ” আচ্ছা মেঘ একটা রহস্য জানতে চাইবো। বলো জিজ্ঞেস করলে আলহাদি হবা না একদম! ”
– ” আমি মোটেই আলহাদ করি না। তুমি বলো! ”
– ” আমি রাগের মাথায় তোমায় কত কড়া কড়া কথা বলি। তুমি ওসব হজম করো কীভাবে? আমিই যখন পরে ওসব মনে করি আমার নিজের কাছেই তো কত্তো খারাপ লাগে যে তোমায় এসব বলেছি! ”
– ” সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি তোমায় আর তুমি আমায় অকৃত্রিমভাবে ভালোবাসি। আর সম্পর্কের শুরুতেই তো বলেছিলে আমার তোমার রাগ সহ্য করতে হবে। তাই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। আর সত্যি বলতে তুমি যখন আমায় বকা-বকি করো তখন আমি ভেতরে ভেতরে খুব হাসি। কারন যখন তুমি বকা দাও তখনই আমার তোমার ওই সরি বলা মুখটা মনে পড়ে। কীভাবে একদম নিষ্পাপ চেহারা করে এসে মিষ্টি করে বলো সরি মেঘবানু! ”
– ” মানে তুমি আমার বকা-বকির তোয়াক্কাই করো না? ”
– ” কেনো করবো? আমি তো জানি আবিদ একটা পাগল। মন থেকে কখনই আমাকে বকবে না। যা বলবে তা তার রাগ বাবাজির প্রেশারে পরে! ”
– ” তুমি এতোকিছু জানলা কীভাবে? ”
– ” তুমি এমন কী থাকে যেটা আমায় বলো না? ”
– ” সব কিছু বলে দেই নাকি? ”
– ” হু সবই বলো। এখন চুপচাপ বসে থাকো। এমনিতেই গত দুইদিন একটুও হাতধরে কাধে মাথা রাখতে পারি নাই। আমার হাতধরায় ব্যাঘাত ঘটাচ্চো তুমি! ”

আবিদ বেশ ভালো করেই জানে এই কথাগুলো বলে মেঘকে আলহাদি করে ফেলেছে সে। আর মেঘের এই আলহাদিপনাগুলো দেখতেও আবিদের বেশ ভালো লাগে।

দুপুরে বাইরে লাঞ্চ করে,বিকালে হলে ছবি দেখে সন্ধ্যার দিকে কলেজের সামনের দোকান থেকে মেঘের ব্যাগ নিয়ে। আবিদ মেঘকে বাসায় দিয়ে এলো। রাতে ৬-১০ টা অবধি মেঘ পড়তে বসে এর মাঝে টুকটাক কথা হয় তাদের। রাতে খেয়ে দেয়ে প্রায় দুঘণ্টা ফোনে কথা বলে দুজনেই ঘুমিয়ে যায়। কারন মেঘের সাড়ে আটটা থেকে ক্লাস আর আবিদের নয়টা থেকে অফিস। তারপর সারাদিন দুজনে কলেজ আর অফিসের হ্যাপা সামলিয়ে প্রতিদিনকার মতো সাড়ে পাচটার দিকে দেখা করে।
মেঘের বাসায় কিছুই বলে না কারন সবাই জানে মেঘের বিকালে ৪-৬ টা কোচিং আছে। আসলে মেঘের কোচিংটা ৪-৫ টা। মেঘ ইচ্ছে করেই ১ ঘন্টা বাড়িয়ে বলেছে যাতে আবিদের অফিস ছুটির পরে আবিদের সাথে সময় কাটাতে পারে।

এভাবেই খুব ভালোভাবে যাচ্ছিলো ওদের দিনকাল।দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো ছয়মাস। মেঘের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। মেঘের বয়স এখন ২১ বছর আর আবিদের বয়স ২৬ বছর। ফাইনাল পরীক্ষার পর-পরই মেঘের বাসায় বিয়ের কথা শুরু হলো। মেঘও আভাস পেয়ে গেলো যে এখন সময় হয়ে এসেছে আবিদের সম্পর্কে বাসায় বলার জন্য।

চলবে!
#thetanvirtuhin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here