প্রিয় পরিণতি পর্ব ৮

গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ০৮!
লেখক: তানভীর তুহিন!

অল্পকিছুদিন পরেই মেঘের মা,ভাইয়া,ভাবি জানতে চাইলো যে তার কোনো পছন্দের ছেলে বা সে কোনো ছেলেকে ভালোবাসে নাকি। তার তো বয়স হচ্ছে বিয়ে দিতে হবে এবার। মেঘের ভাইয়া রাতুল জিজ্ঞেস করলো!
– ” তুই নির্দিধ্বায় বল মেঘ। লজ্বা বা ভয় পাবার তো কথা না কারন তোকে আমরা যথেষ্ট স্বাধিনতা দেই। তাই নির্দ্বিধায় বল পছন্দ করিস কাউকে? ”

মেঘের কেমন যেনো একটু লজ্বা লাগছিলো কিন্তু সে ভয় পাচ্ছিলো না কারন সে জানে তার ফ্যামিলি তাকে অবশ্যই সাপোর্ট করবে যদি ছেলে ভালো হয়। আর আমার আবিদ তো বেষ্ট আমার কাছে। অবশেষে ইতস্ততা কাটিয়ে মেঘ বলে দিলো!

– ” ভাইয়া আমার প্রায় সাড়ে তিনবছরের একটা রিলেশনশিপ আছে! ”

মেঘের মা,ভাইয়া,ভাবি সবাই তো যেনো আকাশ থেকে পড়লো। এতোদিনের রিলেশনশিপ আছে মেঘের কিন্তু এতোদিন তারা বিন্দুমাত্র টের পায়নি। মেঘের ভাইয়া স্বাভাবিক ভাবেই মেঘকে জিজ্ঞেস করলো, ” তা ছেলের নাম কী? ছেলে কী করে? কাজ-ধাজ কিছু করে নাকি পড়াশোনা? ”

– ” ওর নাম আবিদ।আবিদ তালুকদার। আর ও তিন বছর যাবৎ চাকরি করে। আর চাকরিটাও বেশ ভালো,বেতন প্রায় ৩৫ হাজার! ”

– ” তাহলে তো বেশ ভালোই। কাল বিকাল পাচটায় ছেলেটাকে আমার হসপিটালের পাশের ক্যাফেতে নিয়ে আয় ওখানেই কথা বলবো ওর সাথে! ”

মেঘতো খুশিতে পারছেনা একলাফে গিয়ে আবিদের কোলে পড়ে তারপর আবিদের গলা জড়িয়ে কানে কানে বলে, ” বিয়েটা আমাদের হচ্ছে আবিদ শুনছো! ”
কিন্তু রাতুলের এই ক্যাফেতে দেখা করাটা মেঘের মায়ের পছন্দ হলো না। সে বললো, ” ছেলেকে ক্যাফেতে কেনো ডাকবি? ছেলে তার গার্জিয়ান নিয়ে বাসায় আসুক? পারিবারিক ভাবে কথা বলি? ”

– ” না আম্মু, আগে আমি ছেলেটাকে দেখে নেই। আমি ফাইনাল হলেই ছেলেকে তার ফ্যামিলি নিয়ে বাসায় আসতে বলবো। আগে আমি দেখি আমাদের মেঘের পছন্দ ঠিক কতটা খাটি! ”
– ” আচ্ছা যা ভালো বুঝিস কর! ”

পাশ থেকে মেঘের ভাবি মেঘকে জড়িয়ে ধরে বললো, ” কীরে সব তো আমার কাছে বলিস। আর এতোদিন ধরে আমার নায়িকাটা তার নায়ককেই লুকিয়ে রাখলো আমার থেকে? ”

মেঘ আর মেঘের ভাবির সম্পর্কটা অনেক ভালো। কেউ দেখলে বুঝবেই না যে ভাবি আর ননদের সম্পর্ক। ওরা এমন ভাবে ব্যাবহার করে যে সবাই ওদের ছোটবোন আর বড়বোন মনে করে। এবার রাতুলের ৫ বছরের ছেলেটাও এসে মেঘের কামিজ টেনে টেনে বললো, ” ইয়ে মেগ ফুপুইর বিয়ে কাবো! ”
মেঘের যেমন লজ্বা লাগছিলো ঠিক তেমনি খুশিও লাগছিলো। আবিদকে খবরটা জানানোর জন্য অস্থির হয়ে আছে মেঘ। তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে কতক্ষন লাফিয়ে নিলো। তারপর আবিদকে ফোন লাগালো। তখন প্রায় চারটা বাজে, ” হ্যালো আবিদ শোনো! ” কথাটা বলতে গিয়েই থেমে গেলো মেঘ। এই খবরটা দেখা করে দিলে আবিদ আরো বেশি খুশি হবে। আর আবিদের সেই খুশি হওয়া মুখটা দেখা থেকে বঞ্চিত হতে চায়না মেঘ। কথা ঘুরিয়ে বললো, ” খুব দেখা করতে ইচ্ছে করছে।বিকালে অফিস ছুটির পরে আমরা যে রেষ্টুরেন্ট এ দেখা করি ওখানে আসো! ”
– ” হুম তা নাহলে এলাম। কিন্তু তুমি তো সপ্তাহখানেক পর পর দেখা করো। এই পরশু দেখা করে আজ আবার দেখা করতে চাইছো? ”
– ” এখন কী কলেজ আছে যে প্রতিদিন দেখা করবো? বাসা থেকে কী বলে বের হবো এজন্যই তো সপ্তাহখানেক পর পর দেখা করি! ”
– ” তা আজ কী বলে বের হবা? ”
– ” আজ কিছুই বলা লাগবে না! ”
– ” বলা লাগবে না মানে? বাসায় কোনো সমস্যা হয়েছে মেঘ? ”
– ” না! ”
– ” বাসায় কোনো সমস্যা হলে বলো! ”
– ” আরে না বাল। এই তুমি এতো পেচাচ্ছো কেনো? দেখা করতে বলছি দেখা করবা শেষ। একয়দিন তোমার সাথে দেখা না করে করে আমিও খিটখিটে হয়ে গেছি। আমার মেজাজও টেম্পার আবিদের মতো হয়ে গেছে! ”

আবিদ একটু রসিকতা মিশিয়ে বললো, ” তোমার এসব মেজাজগুলো সহ্য করে যে এখনও তোমায় ভালোবেসে যাচ্ছি তারজন্য তোমার আমায় ধন্যবাদ জানানো উচিত মেঘবানু! ” বলেই হেসে ফেললো আবিদ।
– ” তুমি আমার মেজাজ সহ্য করো? আজ দেখা হোক চান্দু তোমায় দেখাচ্ছি মেজাজ কাকে বলে! ”
– ” আচ্ছা দেখা যাবে। এখন কাজ আছে রাখছি। রেষ্টুরেন্ট এ দেখা হবে আমি অফিস থেকে বের হয়ে ফোন দিবো! ”
– ” আচ্ছা! ”

ফোন রেখে কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো আবিদ। মেঘ ফোনটা নিজের বুকের উপরে রেখে চোখ বন্ধ করে ভাবছে সেই শুরুর দিনগুলো। অবশেষে বিয়ে করবে সে তার আবিদকে। মেঘ জানে সে যতটা না খুশি হবে তারচেয়ে লক্ষ-কোটিগুন বেশি খুশি হবে তার আবিদ পাগলটা!!

পাচটা বাজে। মেঘ রেষ্টুরেন্টের কেবিনে বসে আছে। প্রায় দুই বছর যাবৎ মেঘ আর আবিদ এই রেষ্টুরেন্ট এ দেখা করে আর এই কেবিনটাতেই বসে। এটা আসলে স্পেশিয়ালি কাপলদের জন্য ডিজাইন করা। কেবিনগুলোর বাইরে থেকে কিছুই দেখা যায় না যাতে কাপলরা যথেষ্ট প্রাইভেসি পায় আরকি। রেষ্টুরেন্ট এর প্রায় সব স্টাফরাই মেঘকে আর আবিদকে চিনে। মেঘকে আজ আগে এসে বসে থাকতে দেখে একটা স্টাফ বলেই ফেললো, ” ম্যাম। স্যার কী রাগ করেছে? ”
– ” না তো। কেনো জিজ্ঞেস করলেন? ”
– ” না মানে সবসময় স্যার আগে এসে ওয়েট করে তারপর আপনি আসেন।তাই আরকি! ”
কথাটা শুনেই মেঘ হেসে বললো, ” তেমন কিছু না! ”

৫:২৫ এর দিকে আবিদ এলো। এসেই কেবিনে মেঘকে দেখতে পেয়ে বললো , ” অফিসে কাজ ছিলো গো। আর আজ তো ইতিহাস রচিত হলো মেঘ এসে আমার জন্য ওয়েট করছে! ”

মেঘ আবিদের হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলো।আবিদ বসে হাতটা পেছন থেকে নিয়ে মেঘের কোমড়ে রাখলো। এটা আবিদের অভ্যাস আর মেঘও এই অভ্যাসে অভ্যস্ত।মেঘও তার মাথাটা আবিদের কাধে রাখলো। আবিদ জিজ্ঞেস করলো, ” কী খাবে বলো? ” কথাটা বলেই আবিদ গ্লাস নিয়ে পানি খাওয়া শুরু করলো। মেঘ আবিদকে অবাক করে দিয়ে বললো, ” তোমায় খাবো! “। কথাটা শোনার সাথে সাথেই আবিদ বিশম খেলো। মেঘ হেসে ফেললো। আবিদ ভ্রু কুচকে মেঘের কপালে হাত দিয়ে বললো, ” তোমার শরীর ঠিক আছে তো? ”

মেঘ কোনো কথা না বলে আবিদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আবিদ ও পিঠে হাত রাখলো। কিন্তু মেঘের এই আচরন অস্বাভাবিক লাগছে আবিদের কাছে। মেঘ আবিদকে জিজ্ঞেস করলো, ” সারাদিন সিগারেট খেয়েছো? ” আবিদ মেঘের সাথে ঝগড়া না হলে সিগারেট খায় না। এটা শুধু আবিদই জানে। আবিদ মাথা নেড়ে বললো যে খায়নি। মেঘ আবিদের কপালে, দুইগালে, তারপর ঠোটে চুমু খেলো। আবিদ আহাম্মকের উপরে আহাম্মক্ক হয়ে যাচ্ছে। মেঘ তার মুখটা আবিদের কানের কাছে নিয়ে তারপর আবিদকে বললো, ” আজকে বাসায় তোমার কথা বলছি। ভাইয়া কাল বিকাল পাচটায় তোমাকে নিয়ে ক্যাফেতে দেখা করতে বলছে। সব ঠিকঠাক হলে বিয়ে দিয়ে দিবে। বিয়েটা আমাদের হচ্ছে আবিদ পাগলা শুনছো? ” আবিদ মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তারপর মেঘের কপালে চুমু খেয়ে বললো, ” থ্যাংকস ফর দিস সারপ্রাইজ। এটা আমার জীবনের বেষ্ট সারপ্রাইজ ছিলো! ”
– ” আমি জানিতো। এজন্যইতো ফোনে না বলে দেখা করে বলেছি। তোমার মুখের এই হাসিটা মিস করতে চাই নী! ”
আবিদ মেঘের ঠোটে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো, ” আই লাভ ইউ মেঘবানু! ”
– ” আই লাভ ইউ ঠু, থ্রি, ফোর, ফাইভ, সিক্স!! ”
মেঘ কিছুটা হাসলো মেঘের কথা শুনে। মেঘ আবিদের বুকে মাথা রেখে আদরমাখা কন্ঠে বলতে শুরু করলো, ” আবিদ এই দু-তিনদিন প্লিয একটু রাগটা মেরে ফেলিও। শর্ট টেম্পার যাতে না চলে আসে তোমার। দেখো ভাইয়া অনেক ভালো কিন্তু এক কথার মানুষ। বাসায় ভাইয়ার উপরে কেউ কথা বলবে না। উনি হ্যা বললে হ্যা আর না বলে দিলে সেটা হ্যা ও হবে না। তাই উনি তোমায় আগে ক্যাফেতে দেখা করতে বলছে। তারপর যদি তার পছন্দ হয় তাহলে তোমার গার্জিয়ান নিয়ে বাসায় যেতে বলবে। আমি জানি তুমি ভাইয়াকে মানিয়ে নিতে পারবা। তোমার কথার যাদুতে আমিই ভুলে গেছিলাম। ভাইয়া আর কোন চিজ! শুধু রাগটা উঠিয়ো না। আর এই দু-তিনদিন এ কোনো ঝামেলায় জড়িয়ো না প্লিজ প্লিজ আবিদ। আমি চাইনা তোমার এই রাগ বা কোনো ঝামেলার কারনে আমি তোমায় হারিয়ে ফেলি! ”

– ” আচ্ছা আমি এই দুদিন কন্ট্রোল করবো নিজেকে। আর কোনো ঝামেলায় জড়াবোও না। খুশি? এবার আমায় চুমু খেতে দাও!বলেই আবিদ মেঘের ঠোটে ঠোট চেপে দিলো! ”

আজ ওরা দুজনই খুশি। রাতে ফোনে বেশকিছুক্ষন কথা বললো ওরা যেখানে মেঘের একমাত্র কথা ছিলো আবিদ প্লিয কাল যাতে ভাইয়া রাজি হয়ে যায়।উনি না বললে কিন্তু সব শেষ হয়ে যাবে। আবিদও বললো যে সে রাজি করিয়েই ছাড়বে। তার মেঘকেই লাগবে। ”

সকালে পৌনে আটটায় আবিদ ঘুম থেকে উঠলো!

চলবে!
#thetanvirtuhin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here