প্রিয় পরিণতি পর্ব ৯

গল্প: প্রিয় পরিনতি!
পর্ব: ০৯!
লেখক: তানভীর তুহিন!

আবিদ ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করার জন্য ডাইনিং এ গেলো। আবিদের ফ্যামিলির সবাই একসাথেই নাস্তা করে। আবিদ আর ওর বাবা নাস্তা করে চলে যায় অফিসে, আর ওর বোন ইশু চলে যায় প্রাইভেটে। নাস্তা শেষে আবিদ ওর মাকে বললো, ” আম্মু আমার ডার্ক ব্লু স্যুট টা একটু ইস্ত্রি করে রেখো তো! ”
– ” হঠাৎ স্যুট? কোথায় যাবি? ”
– ” একটু কাজ আছে পরে বলবো! ”
ইসু আবিদকে কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে বললো,” ভাবির সাথে কই যাবি ওইটা বল! ”
– ” পরে বলবো। অফিসে লেট হয়ে যাচ্ছে! ” বলেই অফিসের জন্য বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।

আবিদ ফুরফুরে মেজাজে বাইক চালাচ্ছে। খানিকবাদে ট্রাফিকে আটকে গেলো। বাইকের ইঞ্জিন অফ করে দিয়ে বসে বসে শিষ বাজাচ্ছে আবিদ। তখনই খেয়াল করলো ট্রাফিক পুলিশ একটা বুড়ো রিকশাওয়ালার সাথে তর্কাতর্কি করছে। আসলে রিকশাওয়ালার রিকশাটা একটু গর্তমত জায়গায় আটকে গেছে। আর রিকশাওয়ালা বুড়ো হওয়ায় ঠিক টেনে উঠাতে পারছে না। আর এজন্যই মূলত এই জ্যাম। এক পর্যায়ে ট্রাফিক পুলিশ বিরক্ত হয়ে বুড়ো রিকশাওয়ালাকে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। আবিদের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। সোজা বাইক স্ট্যান্ড করে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশকে থাপড়ানো শুরু করলো। আর ওই রিকশাওয়ালা আবিদকে টানছিলো যাতে এভাবে না মারে। কারন আবিদ যাকে মারছিলো সে একজন পুলিশ।আবিদের সেদিকে খেয়াল নেই পুলিশটাকে মারছে আর বলছে, ” কীরে ক্ষমতা পেয়ে মাথায় উঠে গেছিস না? বাবার বয়সি একটা মানুষের গায়ে হাত তুলবি? ” আর তখনই জ্যামের মধ্যে ঢুকে মেঘ এর ভাই রাতুলের গাড়ি। দূড় থেকে আবিদের কথাগুলো শোনা যাচ্ছিলো না। রাতুল শুধু দেখতে পেলো যে আবিদ ওই পুলিশটাকে মারছে আর ওই বৃদ্ধ লোকটা আবিদকে টানছে না মারার জন্য। এক পর্যায়ে আবিদের অনিচ্ছাকৃত ধাক্কায় ওই রিকশাওয়ালাও নিচে পড়ে যায়। রাতুল এসব দেখে গাড়ির স্টেয়ারিং এ একটা ঘুষি মেরে বলে, ” কী দেশ? একটা ছেলে একটা পুলিশকে পেটাচ্ছে আর কেউ দেখছেই না।তারপর আবার যে আটকাতে যাচ্ছে তাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দিচ্ছে। এসব কুলাঙ্গার আর অসামাজিক জীব ছাড়া আর কিছুই না! ” রাতুল গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখনই ওর ফোনে হাসপাতাল থেকে ফোন আসে যে রাতুলকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে ইমারজেন্সি কনফারেন্স আছে। আর ততক্ষনে মানুষ জড়ো হয়ে আবিদের হাত থেকে ওই পুলিশটাকে ছাড়িয়ে রিকশাটাও রাস্তার পাশে নিয়ে গেছে। ফলে ট্রাফিকও ক্লিয়ার হয়ে গেছে। তাই রাতুল আর গাড়ি থেকে না নেমে রাগ নিয়েই গাড়ি টেনে হাসপাতালে চলে যায়। এদিকে আবিদ দাঁড়িয়ে থেকে ওই পুলিশটাকে দিয়ে রিকশাওয়ালার কাছে মাফ চাওয়াইছে। আর পুলিশটাও কোনো প্রতিবাদ না করে মাফ চেয়ে নিয়েছে। কারন সব মানুষজন আবিদের পক্ষ হয়ে কথা বলছিলো।আর এমন সময় পুলিশটা প্রতিবাদ করলে আরো গণধোলাই খেতো এটা পুলিশটা বুঝে গেছিলো।আবিদ যাওয়ার সময় পুলিশটাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” শোন তোদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জনগনদের সেবা করার জন্য। হোক না কেনো সেই জনগন একজন ভিক্ষুক কিংবা একজন রিকশাচালক। তোদের কোনো অধিকার নেই তাদের গায়ে হাত তোলার। আজকেই শিক্ষা নিয়ে নিস। নাহয় ভবিষ্যতে এমন করতে গেলে দেখবি আমার মত কেউ এসেই আবার শিক্ষা দিয়ে দিবে!”। আবিদ অফিসে চলে যায়। এর মধ্যে আবিদ যখন রাস্তায় ছিলো। তখন মেঘ দুবার ফোন করেছিলো আবিদকে। কিন্তু রাস্তার ঝামেলার চিল্লা-পাল্লাতে আবিদ রিংটোন শুনতে পায় নী। অফিসে গিয়েই আবিদ মেঘকে ফোন দিলো, ” হ্যালো মেঘ বলো! ”
– ” দুবার ফোন দিলাম। ফোন ধরলে না কেনো? ” আবিদ জানে ও এখন এই রাস্তার ঝামেলার কথা বললেই মেঘ শুধু শুধু চিন্তা করবে। তাই কথা এড়িয়ে বললো, ” ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো! ”
– ” ও আচ্ছা। তুমি অফিসে চলে গেছো? ”
– ” হুম মাত্র ঢুকলাম! ”
– ” এতো লেট? ”
– ” রাস্তায় জ্যাম ছিলো! ”
– ” নাস্তা করছো সকালে? ”
– ” হুম, তুমি? ”
– ” হুম। শোনো না ঠিক টাইমে চলে আসবা ক্যাফেতে। আর দোয়া-দরুদ পড়ো যাতে সব ঠিক ঠাক থাকে! ”

আবিদ হেসে দিয়ে বললো, ” এতো ভয় পাচ্ছো কেনো? তোমার ভাইয়া বা ফ্যামিলি না মানলে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলবো! ”
– ” একদম বাজে কথা বলবা না তুমি। আমি পালিয়ে বিয়ে করবো না। আমি আমাদের সুখের জন্য আমার ফ্যামিলির মান-সম্মান ডুবাতে পারবো না। আর পরিবারের অভিশাপ নিয়ে আমরা সুখিও হবো না। আমার তোমায়ও লাগবে আমার পরিবারও লাগবে। আর এই দুটোই আমার কাছে রাখার সম্পুর্ন দায়িত্ব তোমার! ”
– ” হুম দায়িত্ব পালন হবে। এখন কাজ আছে টাটা! ”
– ” আই লাভ ইউ! ”
– ” কাজ রেখে চলে আসি? ঘুরতে যাবো নে! ”
মেঘ হেসে দিয়ে বললো, ” এতো আলহাদি হতে হবে না। আর কয়েকটাদিন ই তো তারপর ইচ্ছেমত ঘুরবো। এখন ঘুরতে যাবার জন্য টাকা কামাও! ”
– ” উহু বিয়ের পরে ঘুরবো না। সারাদিন বাসায় থাকবো! ”
– ” কেনো? ”
– ” যাতে তাড়াতাড়ি তুমি মা আর আমি বাবা হতে পারি! ”
– ” বাহ। তাহলে কাজ কে করবে? বিয়ের পরে কী বাবার টাকায় চলবা? ”
– ” আমার সেভিংস আছে কিছু। বিয়ের পরের ছয়মাস শুধু বসে আদর খেয়ে মন ভরাবো। আর পেট ভরাতে ওই সেভিংস এ হয়ে যাবে! ”
– ” অসভ্য একটা। কাজ করো টাটা! ”
– ” লাভ ইউ! ”
– ” লাভ ইউ টু,থ্রি,ফোর,ফাইভ সিক্স! ”

আবিদ ফোন রেখে কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।

বিকাল সাড়ে তিনটা বাজে। মেঘ রাতুলকে ফোন দিলো, ” ভাইয়া তোমার কাজ শেষ হবে কখন? ”
– ” আমি পাচটা নাগাদ ক্যাফেতে থাকবো! ”
– ” আচ্ছা ঠিক আছে! ”
– ” আচ্ছা! ”
– ” ভাইয়া একটা কথা বলবো? ”
– ” হ্যা বল না! ”
– ” ওর যদি কোনো ছোটো-খাটো ভুল চোখে পড়ে। প্লিয নজরআন্দাজ করে দিও! ”
– ” আমি কী কোনো পরীক্ষা নিচ্ছি নাকি ওর? পাগল মহিলা আমি শুধু ওর সাথে কথা বলব।আমার কোনো ইচ্ছে নেই ভিলেন হওয়ার! ”
– ” থ্যাংকিউ ভাইয়া! ”
– ” হুম হইছে রাখছি। কাজ আছে আমার! ”
– ” আচ্ছা! ”

বিকাল চারটার দিকে আবিদ মেঘকে ফোন দিলো।
– ” হ্যালো শোনো। আমি বাসায় যাচ্ছি ওখান থেকে রেডি হয়ে সোজা ক্যাফেতে চলে যাবো! ”
– ” হুম আচ্ছা। আমি ক্যাফেতেই থাকবো। তুমি তো দেড়ি করো না। তবুও বলছি লেট করবা না একদম। ভাইয়া কিন্তু খুব টাইম মেন্টেইন করে চলে! ”
– ” ভাইয়া টাইম মেন্টেইন করে। আর বোনের টাইম সেন্সই নাই। বাহ! ”
– ” খুব সেন্স আছে। দেইখো আজ তোমাদের দুজনের আগে আমি ক্যাফেতে যাবো! ”
– ” আচ্ছা ঠিক আছে। আমি বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে তোমায় ফোন দিবো! ”
– ” আচ্ছা টাটা! ”

আবিদ ফোন রেখে বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে নিলো। তারপর মেঘকে জানিয়ে দিলো যে সে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।

৪:৫০ বাজে মেঘ ক্যাফেতে বসে আছে। পাচটা নাগাদ মেঘের ভাইয়া চলে এলো। এদিকে আবিদ জ্যামে আটকে আছে। মেঘ আবিদকে ফোন দিলো, ” কোথায় তুমি? ভাইয়া এসে বসে আছে। ”
– ” রাস্তায় জ্যাম। পাচ মিনিট ওয়েট করো আসতেসি! ”
– ” আচ্ছা ঝলদি আসো।আমার নার্ভাস লাগতেছে খুব! ”
– ” ডোন্ট ফীল হিজি-বিজি, জাস্ট ফীল চিজি এন্ড ইজি। আই এম কামিং, জ্যাম ছুটে গেছে। রাখছি এসে কথা বলবো! ”
মেঘ হেসে ফোন রেখে দিয়ে রাতুলকে বললো,” রাস্তায় জ্যাম নাকি আর পাচ মিনিট লাগবে!”
– ” আচ্ছা। তোর আবিদ কফি খায় তো? ”
– ” হ্যা খায়! ”
– ” তাহলে তিনকাপ কফি অর্ডার করে দিচ্ছি! ”
– ” আচ্ছা! ”

রাতুল ওয়েটারকে ডেকে তিনকাপ কফি অর্ডার করে দিলো।।

চলবে!
#thetanvirtuhin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here