#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ১১ #কেয়ার
লেখিকা – Zaira Insaan
মিহি হাত বাড়িয়ে জানালা গ্লাস ধরবে সেসময় তার হাত স্পর্শ করলো স্নিগ্ধ। মিহি আঁতকে উঠলো। স্নিগ্ধ
নিজেও চমকে উঠে। সে গ্লাস বন্ধ করার জন্য হাত এগিয়েছিল কিন্তু ভুল করে যে মিহির হাতের সাথে স্পর্শ করবে তা জানা ছিল না তার। চট করে হাত নামিয়ে নিল দুজনেই। মিহির হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে উঠানামা করতে লাগল। এ প্রথম কোন ছেলের হাতের স্পর্শে লাগল। মিহি কে গুটিসুটি মেরে বসতে দেখে আড়চোখে একবার দেখে নিল স্নিগ্ধ। অন্য সিটে বসে থাকা তনু চোখ বুলিয়ে বুলিয়ে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে লাগল এদের অবস্থা। তারপর ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করলো কিছু একটা। মিহির চুল উড়ছে উড়ে উড়ে মুখের সামনে গড়িয়ে পড়ছে। ঠোঁট দুটো শুষ্ক মরুভূমির দশা। লম্বা লম্বা ফাঁট পড়েছে ঠোঁটে। কিছুক্ষণ পর পর জিভ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছে ঠোঁট।
মিহি কে মৃদু মৃদু কাঁপতে দেখে ভ্রু কুটি করল স্নিগ্ধ। বলল,,
“জানালা লাগিয়ে দিব?”
ভ্রু উঁচু করে তাকালো মিহি কিছুটা চমকেছে সে। সম্মতি জানিয়ে মাথা হালকা নাড়তেই স্নিগ্ধ ওর সামনে হাত বাড়িয়ে গ্লাস লাগিয়ে দিল। শীতল হাওয়া আসা বন্ধ হয়ে গেল। আসার জন্য অন্য পথ খুঁজছে তারা। মিহির পাশের জানালা বন্ধ করে দিলেও পেছনের সিটের জানালা খোলা থাকার কারণে অবাধ্য মতন ভেতরে ঢুকছে ঠান্ডা বাতাস। একপলক পেছনে তাকালো মিহি। অতঃপর গোপনে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া ওড়না পুরো শরীরে বিছিয়ে দিল। নাক, কান, হাতের আঙুল গুলোও ঠান্ডা হয়ে আসতেই ‘চ’ ন্যায় বিরক্ত শব্দ বের করলো ও। স্নিগ্ধ অনেকক্ষণ যাবত তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে লাগল তারপর বলে উঠল,,
“ওড়না দিয়ে কাজ হবে না বরং তুমি গায়ে শাল জড়িয়ে রাখো।”
“লাগবে না, আমি ঠিক আছি।” মিনমিন স্বরে আস্তে করে বলল মিহি।
স্নিগ্ধ শানিত কন্ঠে বলল,,
“তোমার জন্য পুরো বাসের জানালা তো বন্ধ করে রাখা যাবে না। ঠান্ডা লাগছে তোমার গায়ে শাল জোড়াও নাহয় পরে অসুস্থ হয়ে যাবা।”
বলে উপর থেকে মিহির ব্যাগ নামিয়ে নিল স্নিগ্ধ। মিহির দিকে এগিয়ে দিল। মিহি ওর দিকে তাকাতেই সে ইশারা করলো ব্যাগ খুলতে। ব্যাগ খুলে খোঁজা শুরু করল ও। গতরাতে ওই নাম্বারের চিন্তায় সোয়েটার ভরতে ভুলে গেল মিহি। ঠোঁট কামড়ালো মিহি, এখন স্নিগ্ধকে বললে তো প্রথমে কয়েকটা ধমক মারবে। এখন? পুনরায় ব্যাগে চেইন লাগিয়ে নিরব শিশুর মতন বসে রইল মাথা ঝুঁকিয়ে। স্নিগ্ধ ওর মতিগতি দেখে উপর থেকে আরো একটা ব্যাগ নামালো। নিজের ব্যাগ! তারপর সেখান থেকে একটি সোয়েটার বের করে মিহির কোলে দিয়ে দিল। নিজের কোলে সোয়েটার দেখে কপালে ভাঁজ ফেলল মিহি। তারপর ফট করে তাকালো স্নিগ্ধের দিকে। সে বলল,,
“পড়ে নাও।”
বলে মিহির ব্যাগ সহ নিজের ব্যাগ আগের স্থানে রেখে দিল। মিহি ইতস্তত বোধ করতেই স্নিগ্ধ বলে,,
“সময় অপচয় না করে দ্রুত পড়ো।” শান্ত গলায় হালকা শাসালো স্নিগ্ধ।
মিহি তড়িগড়ি করে দ্রুত পড়ে নিল স্নিগ্ধের সোয়েটার। আশেপাশে কিছু লোক ওদের দেখছে তারপর মুচকি মুচকি হাসছে। উষ্ণতা পেয়ে ঝিমুতে লাগল মিহি। ঘুম আসছে। চোখের পাতা দুটো ভীষণ ভারী ভারী লাগছে। চোখ খোলা বড্ড কষ্ট হচ্ছে ওর। আর না পেরে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়লো। চোখ যেহেতু খুলতেই পারছে না তাহলে ঘুমিয়ে যাওয়ায় ভালো। মিহির নড়চড় না দেখে নজর বুলালো স্নিগ্ধ। বাসের পর্দার সাথে মাথা লাগিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ছে মিহি। তাকে আর জাগালো না নিশ্চিন্তে ঘুমের রাজ্যে যেতে দিল।
_____________
কক্সবাজারে পৌঁছেছে প্রায় ১০ মিনিট হয়ে গেছে। মিহি চার ঘন্টায় ঘুমে কাটিয়ে দিল নিরামিষের মতো। স্নিগ্ধ ও বাধ্য হয়ে বসে রইল কেননা মিহির ঘুমের ঘোরে অজান্তেই স্নিগ্ধের কাঁধে মাথা রেখে হাত পেঁচিয়ে আছে। স্নিগ্ধ শান্ত কন্ঠে বলল,,
“আর কত ঘুমাবেন? আমরা কক্সবাজার এসে গেছি।”
“হু?”
চোখের পাতা পিটপিট করে প্রশ্ন করল মিহি। সে এখনো জানে না সে কি করে বসেছে! স্নিগ্ধ আবারো বলল,,
“আপনি ঘুমান কিন্তু আমাকে যেতে দেন।”
ঘোরে কপালে ভাঁজ ফেলল মিহি। চোখ খোলার প্রখর চেষ্টায় আছে। স্নিগ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিসফিস করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,,
“উঠবা নাকি কোলে তুলে নিব?”
তড়িৎ গতিতে শ্রবণ হলো এ চয়ন। চটজলদি হুট করে চোখ খুলল। অতঃপর নিজের এতটা কাছে তার স্নিগ্ধ স্যার কে দেখে বুক ধক করে উঠল। হুড়মুড় করে উঠে বসে, নিজের অবস্থান বুঝতে কিঞ্চিৎ পরিমাণও সময় লাগল না। এক ঝাঁক লজ্জা গালে প্রকাশ পেল। ইশশ্ কি লজ্জার ব্যাপার! লজ্জায় ইচ্ছে করছে হুড়মুড় করে মিশে যায় মাটির সাথে একদম। এতটা লজ্জাজনক অবস্থা কেমনে হয়!? কোথাও তাকাতে পারছে না সে। স্নিগ্ধ দাঁড়িয়ে উপর থেকে ব্যাগ নিতে নিতে বলল,,
“তাড়াতাড়ি নীচে নামো সবাই অপেক্ষা করছে।”
কন্ঠস্বর স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয়নি। মিহি অবাক হলো কিন্তু প্রকাশ করলো না। প্রকাশ করবে কিভাবে মুখ তো নুয়ে রাখছে যেন স্নিগ্ধ তার লজ্জাময় মুখ দেখতে না পায়।
বাস থেকে নামার আগে মিহি বলে উঠলো,,
“একটু দাঁড়ান।”
স্নিগ্ধ পেছনে ফিরলো। মিহি গা থেকে সোয়েটার খুলে তার দিকে এগিয়ে দিল। স্নিগ্ধ বলল,,
“লাগবে না আমার, কিন্তু এ সোয়েটার টা তুমি তোমার ব্যাগে ঢুকাও।”
মিহি না বলতেই ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখলো স্নিগ্ধ। মিহি ভড়কে গিয়ে নিজের কাছে পুনরায় নিয়ে নিল। তারপর দুজনেই বাস থেকে নীচে নামলো।
সব টিচার ও স্টুডেন্টের সাথে দেখা মিলল এদের। সামনে দাড়াতেই ইসকাত স্যার মিহিকে বলে উঠলো,,
“তোমার মতো কেয়ারল্যাস মেয়ে আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি, মিহি।”
মাথা নুয়ে ফেলল মিহি। আর তাকাতে পারবে না। আরো কিছুক্ষণ দশ গাইড সমান বকলেন ইসকাত স্যার মিহিকে। স্নিগ্ধ চুপ করে মিহির দিকে প্রসন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মিহি ছোট করে ‘স্যরি স্যার’ বলে ঘটনা থামালো। অতঃপর সব স্যার টিচারদের কথা বার্তায় ফাইনাল হলো দুপুরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে কক্সবাজারে ছোট মেলার ঘাটে ঘুরতে বেরুবে। বাধ্য মতো সবাই স্যারদের ঠিক করা হোটেলে উঠে পরলো।
____________
মিহি চোখ দুটো সঁটান করে উপরের ফ্যানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সকালে তার সাথে এসব কি ঘটলো! মিহি উঠে দাঁড়ায় ব্যাগের কাছে এসে চেইন খুলল স্নিগ্ধের দেওয়া কালো সোয়েটার টা হাতে নিল। তনু পেছন থেকে হুট করে বলে উঠলো,,
“কি করছিস ওখানে?”
মিহি ঘাবড়ে গেল। দ্রুত সোয়েটার টা কাপড়ের একদম নীচ তলায় ঢুকিয়ে দিয়ে চট করে চেইন লাগিয়ে দিল। তনু কপাল কুঁচকে তাকালো। মিহি ঘাবড়ে ঘাম ছুটলো। তনু চোখ কুঁচকে তাকাতেই মিহি মেকি হাসলো বললো,,
“কিরে ঘুমাস নি?”
“কেন আমি ঘুমিয়ে গেলে কিছু করবি নাকি?”
মিহি আমতা আমতা করে বলল,,
“না..নাতো।”
তনু উঠে দাঁড়িয়ে সামনে এসে একপলক ব্যাগের দিকে তাকিয়ে ওর দিকে তাকালো বলল,,
“কি?”
“কই কি! কিছু না।”
“একটু পর বেরুতে হবে, তো রেডি হোও ।”
মিহি মুচকি হেসে সম্মতি জানালো। তনু ওয়াশরুমে যেতে নিলে মিহি আবারো ফিরে ব্যাগ টেবিল থেকে নামিয়ে নীচে রাখছে এমন সময় তনু বলে উঠলো,,
“স্নিগ্ধ স্যার….”
মিহি নাম শুনে পিলক চমকে ঘুরে তাকালো। চোখে মুখে বিস্ময়কর ভাব দেখে তনু হালকা হেসে বলল,,
“স্নিগ্ধ স্যার সহ বাকিরা আবার অপেক্ষা করবে তোর জন্য, তো তাড়াতাড়ি রেডি হোও।”
মিহি চোয়াল শক্ত করে চোখ খিচে গরম কন্ঠে বলল,,
“উনার নাম ধরার দরকার কি? সবাই বললেও তো চলতো।”
তনু ঠোঁট গোল করে ওহহ্ বলে বলল,,
“ইয়াহ, রাইট।”
বলে হালকা মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে গেল।
_____________
চারদিকে প্রচন্ড কোলাহল চলছে। ছোট মেলা টাতে ঘুরতে এসেছে সবাই। সূর্য কিছুটা ডুবো ডুবো অবস্থা। কাঁচা হলুদের রঙ ছড়াচ্ছে সূর্য। শব্দদূষণে কান ফেটে যাওয়া উপক্রম। ভার্সিটির ছেলে মেয়েরাই মেলায় আসার পর থেকে এক ধরনের অবস্থা শুরু করছে। মিহি বিরক্ত হয়ে আওয়াজ নীচু করে বলল,,
“উফফ্! এরা এমন করছে কেন?”
তনু শুনতে পেয়ে বলল,,
“সবাই তো তোর মতো আর শান্তশিষ্ট বাবু তো না, তাই।”
মিহি রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালো। তনু মেকি হেঁসে সামনে এগিয়ে গেল আর ভিড়ে গেল ওদের সাথে।
মিহি আস্তে আস্তে হাঁটছে আর বিভিন্ন দোকানে হরেক রকমের জিনিস দেখার তালে মেতে আছে। কোন এক দোকানে দাঁড়ালো ও। পরক্ষণে কোন এক জিনিসের দাম শুনে বিতৃষ্ণায় সেখান থেকে সরে আসলো। সুক্ষ্ম নজরে মিহি কে একবার দেখে নিল স্নিগ্ধ। মিহির নির্লিপ্ত মুখ তাকে ঘটনা বুঝতে সাহায্য করলো। হৈহুল্লার মাঝখানে ফাঁক গলে বেরিয়ে সেই একই দোকানে গেল স্নিগ্ধ।
(চলবে…)
[ রিচেক দেওয়া হয়নি, ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ]