ফাল্গুনের ঢেউ পর্ব -১০

#ফাল্গুনের_ঢেউ
পর্ব – ১০ #সাথী
লেখিকা -‌ Zaira Insaan

কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটি দেখে ভারী চমকালো ও। তনু উঠে স্ক্রিনে চোখ বুলাতেই ভড়কে উঠলো। এ কেন কল করলো এবার? আনমনে প্রশ্ন করে বসল মিহি। তনু ওকে সর্তক করে বলে,,

“রিসিভ করিস না মিহি, থাক সেভাবে।”

মিহি ঠোঁট চেপে ধরে আর ফোন রিসিভ করলো না। সাইলেন্ট মুড করে টেবিলে রেখে দিল। ঢোক গিলল কয়েকবার। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে লাগল। আবারো কল আসলো একই নাম্বারে। মিহি ও তনু আড়চোখে তাকালো। তনু ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,,

“ওটার দিকে ওতো খেয়াল দিস না। তুই কাপড় গোছা।”

বলে মিহি কে আলমারির দিকে ফিরিয়ে দিল। অতঃপর মিহির অগোচরে ওর ফোন থেকে সেই নাম্বারটি ব্লক করে কল লিস্ট থেকে ডিলিট করে দিল তনু।
_____________

নতুন মাসের আগমন ঘটে।‌ শীত শীত পরিবেশ। হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে দূর্বল পাতা গুলো তারপর নিস্তব্ধে ঝরে পড়ছে। কদম ফুল গুলো নতুন করে নতুন রূপে সাজছে। এ ঠান্ডায় মিহি কম্বল চাদর সব মুড়িয়ে ঘুমুচ্ছে। আহা কি শান্তির ঘুম! শীতে কম্বলের পরম উষ্ণতা পেয়ে আলাদা এক গভীর ও শান্তির ঘুম হয়। যা মিহিও উপভোগ করছে। কিন্তু সে যে একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছে…। ফোনের ককর্শ শব্দে এই আরামের ঘুম ভাঙল ওর। ফোন ধরতে মোটেও ইচ্ছে নেই। তাই ধরল না। ওই দিকে তনু নামের ওই মেয়েটার যে তাড়া ধরল কথা বলতে। বার কয়েক বার রিং ঢুকলো ফোনে কিন্তু মিহি ধরছে না। এদিকে তনুর এক অবস্থা ফোন না ধরলে যেন বিরাট কিছু হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে অনেকক্ষণ গালি দিল তাও শান্ত হলো না। অতঃপর আর কোন উপায় না পেয়ে ছুটে গেল ওর বাসার দিকে।

ঘরে এসে বেল চাপলো কিছুক্ষণ তনু। ঘুম পুরোপুরি উধাও মিহির। এমন শব্দদূষণে কার ঘুম হয়? তাও ঘুমের রেশ লেগে আছে চোখে। ধীরে ধীরে উঠে এসে দরজা খুলল ও। তনু ওকে দেখে অবাক। বলে,,

“রেডি হোও নি?”

“কিসের জন্য?”

“তোর মনে নেই?” তনু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

মিহি পিটপিট চোখে তাকালো। মুখোমন্ডল দেখে বোঝা যাচ্ছে তার কিছু মনে নেই। তনু তড়িগড়ি করে বলল,,

“শিক্ষাসফরের ডেট আজকে।”

শ্রবণ হওয়ার মাত্রই চোখ চড়কগাছ হয়ে গেল মিহির। কিহ বলে চেঁচিয়ে উঠলো ও। তনু বলল,,

“এটা মাথায় রাখতে না পারলে তাহলে তুই মাথায় রাখিস কি?”

“আজকেই!?” আরেকটু কনফার্ম হতে জিজ্ঞেস করলো মিহি।

“জ্বি, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয় ভার্সিটি সবাই অপেক্ষা করছে না গিয়ে।”

মিহি দ্রুতগতিতে রুমে চলে গেল। কোনমতে ফ্রেশ হয়ে লাল রঙের গেঞ্জির উপর সাদা কুটি পড়ে নিল। চুল জট ছাড়া হওয়াতে চিরুনি ছাড়াই চুলে আঙুল চালিয়ে উচু করে খোঁপা করে নিল। গলায় কালো সাদা মিশ্রিত ওড়না ঝুলিয়ে দ্রুত নীচে নামলো। তনুর সামনে দাঁড়াতেই তনু দেখলো ওর হাত খালি! বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল,,

“২দিন কি এই কাপড়টা পড়েই থাকবি? বেকুব! ব্যাগ কই? যা ব্যাগ নিয়ে আয়।”

শাসনের স্বরে বলে তনু। মিহি নিজের বোকামি বুঝে আবারো উপরে চলে যায়। ব্যাগ ও কালো মাস্ক নিয়ে নীচে নামলো এবার। তারপর দুজনেই একত্রে বেরিয়ে গেল।

রাস্তায় রিকশা খোঁজার তালে এরা। একটা রিকশাও পাওয়া যায় না মুসিবতে। এমনে যখন প্রয়োজন হয় না তখন দুই চারটা রিকশা সামনে এসে ঘুরঘুর করে। মিহি বিরক্ত হয়ে বলল,,

“তুই যে রিকশা টা করে আসছিস সেই রিকশা টা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে করে রাখলে কি হতো। দেখ এখন একটা রিকশাও পাওয়া যাচ্ছে না”

তনু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে। দোষ তো করছে তার উপর আবার কথাও শুনাচ্ছে! পাঁচ মিনিটের মতো সময় পেরিয়ে একটা রিকশা দেখা গেল কোনমতে। তনু রিকশা টা দাঁড় করালো। ভাড়া শুনে অবাক হলো দুজনেই। যে জায়গায় ৬০টাকা দিয়ে যাওয়া যায় সেখানে ভাড়া বলছে ৮০ টাকা!
এটা ছাড়া আর কোন পথ দেখা যাচ্ছে না বিধায় দুজনেই উঠে বসে সেই রিকশায়। অতঃপর যাত্রা শুরু হয় ভার্সিটি যাওয়া।
_____________

ভার্সিটি পৌঁছে দ্রুত গতিতে ছুটে এলো তারা। মাঠ পুরো খালি। সুনসান নীরবতা ‌পালন করছে পরিবেশ। থমকালো দুজনেই ওদের আসতে আসতেই ইতিমধ্যে বাস ছেড়ে দিয়েছে? চোখ পিটপিট করলো মিহি। অন্যপাশে তাকাতেই চোখ গেল বসে থাকা এক মানবের দিকে। স্নিগ্ধ কোন এক বেঞ্চে বসে মোবাইলে ফিড স্ক্রোল করছে। চমকে উঠে মিহি ও তনু। স্নিগ্ধ তাহলে যায় নি? এগিয়ে গেল মিহি বেঞ্চের কিঞ্চিৎ দূরত্ব নিয়ে পেছনে দাঁড়ালো। বসে থাকা পুরুষটির দিকে চোখ খিচে তাকালো। স্নিগ্ধ ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে মোবাইল দেখছে। বোধহয় ক্রদে আছে। মিহি গোপনে নিঃশব্দে গলা ঝেড়ে কিছু বলতে নিলে এর আগে স্নিগ্ধ বলে উঠে,,

“ঘুম ভাঙছে তাহলে মহারানীর।”

পিলক চমকে উঠলো মিহি সাথে তনুও। স্নিগ্ধ তাহলে ওদের আসতে দেখেছিল! ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো স্নিগ্ধ তারপর উঠে দাঁড়ালো। মিহির চোখ ও উঁচু হলো। স্নিগ্ধ মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে মিহি কে বলে,,

“তোমার নাম লিস্টে আমি দিয়েছি কেন সেজন্য তুমি জেদ দেখিয়ে সঠিক সময়ে না এসে এখন আসছো।”

বাকরুদ্ধ হয়ে গেল মিহি। স্নিগ্ধ কি ঘটনার সাথে কি ঘটনা যোগ করে ফেলছে। মিহি নরম কন্ঠ বলে,,

“না স্যার, সেটা না।”

“এখন আবারো মিথ্যা বলবে তুমি।”

হাত পা বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেল মিহির। স্নিগ্ধ ভুল বুঝছে ওকে। মিহি বড় ঢোক গিলে বলে,,

“মিথ্যা বলছি না, আমি ডেট ভুলে গিয়েছিলাম যে আজকেই যাওয়ার ডেট। তাই সময় মতো আসতে পারিনি আমি।”

তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল স্নিগ্ধ। তনু বলে উঠলো,,

“এখন?”

“অন্য বাস করে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে এখনো।” বলল স্নিগ্ধ।

মিহির দিকে একপলক তাকিয়ে সামনে হাঁটা শুরু করল ও। মিহি ও তনুও পা টিপে টিপে হাঁটতে লাগলো। কিছু সময়ের পর অন্য এক বাস স্ট্যান্ড এ এসে দাঁড়ালো। নরম রোদ ভোর সাড়ে সাত এই শীতে অনেকেই কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য রওনা হবে। তাই অত কোন সমস্যা হচ্ছে না। বাস আসলো সময় নিয়ে স্নিগ্ধ এক নজর দিল মিহির দিকে। মিহি দৃষ্টি নামিয়ে উঠে গেল বাসে। স্নিগ্ধের সামনে ও এতো কালার হয় কেন? প্রত্যেক বার এই মানুষটার সামনে ওর শরমে পড়তে হয়। তাও দোষী শরম। বাস অনেক সিটই খালি আছে কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তা ভরে গেল। আর খালি মাত্র চার সিট। এক ভদ্রমহিলা এসে বসলো তনু গিয়ে বসে ওই ভদ্রমহিলার পাশে। আর দুইটা খালি সিট দেখে উপায়ন্তর না পেয়ে স্নিগ্ধ ও মিহি পাশাপাশি বসলো। মিহি জানালার কাছে সিটটাই নিল। ঘাবড়িয়ে হাত কচলাতে কচলাতে শেষ মিহি। লাল বর্ণ ধারণ করেছে নিমিষেই। স্নিগ্ধ তা দেখে বলে,,

“কি হাত ছিঁড়ে ফেলবা নাকি?”

চমকে তাকায় মিহি। তারপর বন্ধ করে দেয় হাত কচলানো। স্নিগ্ধ পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফেসবুক দেখতে লাগল। মিহিও আড়চোখে নজর দিল তার নিউজফিডের দিকে দেখে সামনে অনেক হাস্যকর মিমস শো করছে। মিহির হাসি পেয়ে বসলো কিন্তু স্নিগ্ধের দিকে তাকাতেই দেখে সে হাসছে না বরং গোমড়া মুখি হয়ে দ্রুত স্ক্রোল করছে। মিহি মুখ বিমর্ষ করে ভাবে,,

“একটা মানুষ এত কেমনে নিরামিষ হয়? হাসতে ওতো পারতো, এই ব্যাক্তির বউ যে হবে সে মেয়ে বড্ড কষ্ট পাবে তার এই গোমড়া মুখ দেখে।”

মিহি নজর সরিয়ে বাহিরে পেতে দিল। বাহির থেকে সাঁ সাঁ করে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। গাছপালা গুলো দ্রুতই চোখের আড়াল হয়ে যাচ্ছে। ঠান্ডা হাওয়ায় কিছুটা কাঁপছে মিহি। ইচ্ছা করছে এখনি জানালা সট করে বন্ধ করে দিতে। কিন্তু স্নিগ্ধের জন্য বন্ধ করতে পারছে না‌ যদি তার গরম লাগে? মিহি ভেবে নিল স্নিগ্ধ থেকে জিজ্ঞেস করে তারপর বন্ধ করে দিবে জানালা। তার দিকে ফিরতেই দেখে সে কানে ইয়ারফোন গুজে চোখ বন্ধ করে আছে। দুনিয়ার কোন চিন্তা নেই এমন তার ভাব। মিহি ভ্রু কুঁচকালো সে ঘুমিয়ে গেল নাকি? দেখে মনে হচ্ছে এই শীতল হাওয়া তাকে ঘুমে নিমজ্জিত করছে। হতাশ দৃষ্টিতে তাকালো মিহি। এমন হাওয়ায় সে প্রায় যায় যায় অবস্থা। মিহি হাত বাড়িয়ে জানালা গ্লাস ধরবে সেসময় তার হাত স্পর্শ করলো স্নিগ্ধ।

(চলবে…)

[ ২৯ তারিখের পর গল্প রেগুলার ও বড় করে দেওয়া হবে 💕 ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here