বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ১৩

#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ১৩

ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলস বিশ্বের পর্যটক ঘুরার জন্য অন্যতম জায়গা, এখানকার এক একটি হোটেল সত্যিই নজর কাড়ার মতো, এগুলো দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি এখানকার ওয়ার্কার্সদের আতিথেয়তাও গেস্টদের মুগ্ধ করে।তেমনি গেস্টদের জন্য অন্যতম হোটেল হচ্ছে ‘হোটেল এঞ্জেলেনো’।যার সপ্তম তলার একটি রুমে এখন পিনপিন নিরবতা বিরাজ করছে, বারান্দা থেকেই নিচের আলোকিত পুল সাইড দৃশ্যমান হয়ে আছে, কেউ একজন সেই বারান্দায় বসেই রুমের দিকে চেয়ে আছে,,

ঘুমন্ত সায়রার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে ব্যাক্তি। কতটাইনা ভুল বুঝেছে সে মেয়েটিকে অথচ তার কোন কিছুই সঠিক নয়। আরাভ রেস্টুরেন্টে বসে ভেবেছিলো সত্যিই ও গোল্ড ডিগার আর বাঙালী নারীর এতো অধঃপতন দেখে আফসোসও হচ্ছিলো ওর। কিন্তু যখন মেয়েটি রেস্টুরেন্ট থেকে বেরুচ্ছিলো তখন কানে থাকা ব্লুটুথ ওর চোখে পড়ে সাথে এটাও বুঝতে পারে মেয়েটা কারো দিকে ইশারা করছে। পাশে তাকিয়েই ওর সমবয়সী কয়েকজনকে দেখতে পেয়ে বুঝে যে ডালমে কুচ কালাহে,,

তাই দেরি না করে ওদের ফলো করতে থাকে এবং লিফটেও হুডি পড়ে ছিলো ও যাতে গতিবিধি লক্ষ্য করতে পারে। সপ্তম তলায় উঠেই তার পাশের রুম বুক করে আর কিছু শুনার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যার্থ হয় তাই দরজা খুলে অপেক্ষা করেছিলো সায়রার জন্য। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই সায়রাকে বেরিয়ে আসতে দেখে এই রুমে নিয়ে আসে। মেয়েটি দেখতে অনেক সুন্দর, উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের চেহারা, খাড়া নাক, টানা চোখের সাথে ঘন পল্লব আর হাল্কা গোলাপি ঠোট।মনে হচ্ছে বিধাতা খুব কারুকার্য করেছে এই চেহারায়। যেকোন উত্তম পুরুষও এই বাদামি চোখ জোড়ার প্রেমে পড়তে বাধ্য। এসব ভেবেই ঘরে এসে বেডে ওর আর মুখখানির দিকে চেয়ে রইলো। কিন্তু হঠাৎ করেই এমন কিছু হবে ভাবতে পারেনি

“ডেম এই মেয়ে! শিট” তখনি ফোন বেজে উঠলো, এই করুণ মুহুর্তে ফোনও যে ডিস্টার্ব করবে বিশ্বাস হচ্ছে না, কিন্তু নাম্বার দেখে শান্ত হয়ে গেলো, মা ফোন করেছে

“হ্যা মম বলো, কি করছো?”

“কি আর করবো, তোর অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। কখন আসবি আর আমায় দরজা খুলতে হবে”

“ওহো মম, এখানে ঘুরতে এসেছি মাত্র দুইদিন। একটু ঘুরতে দাও তারপর নাহয় আসবো।তা হিটলার কি তোমার পাশে ”

“হুম আস্তে বল শুনতে পাবে, দুই সবসময় কেন তার পেছনে পড়ে থাকিস বলতো?”

“তোমার হিটলার জামাই আমাকে শান্তিতে থাকতে দেয়? শুধু তার টাকা উড়াই বলে খোটা দেয়। এখন আমি তার একমাত্র ছেলে, আমি উড়াবো নাতো কে উরাবে? কিন্তু হিটলার বাবা কি তা বুঝে?”

“এই চুপ কর, কবে আসছিস সেটা বল,খেয়াল রাখিস নিজের দিকে আর তাড়াতাড়ি ফিরিস”

“যথাজ্ঞা মহারাণী, এখনো বাবার জন্য কি প্রেম!”

“চুপ ফাজিল রাখছি”

ও জানে এখন ওর মায়ের মুখ লাজে রাঙা হয়ে আছে, বাবাকে ছোট থেকেই রাগি দেখে এসেছে তবে মা একদম বিপরীত যাকে বলে মাটির মানুষ। দুজন সম্পুর্ণ ভিন্ন মানুষ তারা তবে ভালোবাসার কমতি নেই। লাইফে ওর মায়ের মতো বউ পেলে সকল পুরুষের কপাল ধন্য!

রোয়েনের সাথে দেখা হওয়ার আজকে সপ্তম দিন, ওইদিন বেশি কাজ করানোর জন্য খুব বেশি রাগ হলেও এখন মনে হচ্ছে লোকটিকে যতো খারাপ ভেবেছে ঠিক ততোটাও খারাপ নয়। যদিও গুন্ডা টাইপ তবুও মনটা ভালো।কিছুটা নারিকেলের মতো উপর দিয়ে শক্ত কিন্তু ভেতরে নরম। ইনায়া এসব কথাই ভাবছিল হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ে, এতোরাতে কে হঠাৎ আসবে তাই ভেবে পাচ্ছে না। আর এনাও বাসায় নেই, কিছুটা ভেবে চিনতে দরজা খুলতেই কেউ একজন ঢলে পড়লো ওর গায়ের উপর, মুখ তুলতেই দেখে রোয়েন যার হাত দিয়ে গড়গড় করে রক্ত পড়ছে

“কি হয়েছে আপনার? এই অবস্থা কে করেছস আপনার? ” আতকে উঠে বললো ইনায়া

“পানি দিবে একটু?প্লিজ “খুব কষ্ট করে বললো রোয়েন, ইনায়া মাথা নেড়ে রোয়েনকে সোফায় বসালো তারপর পানি আনতে গেলো। এই সুযোগে রোয়েন হাতের গুলি বের করে পকেটে ঢুকিয়ে ফেললো। ইনায়া পানি এনে খাইয়ে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো,

“কি ভাবে হয়েছে এই অবস্থা?এত খানি কাটলো কি করে?”

“তোমার বাসার কাছাকাছি এসে এক্সিডেন্ট হয়েছে তাই ভাবলাম এখানে আসি,চিন্তা করোনা আমি এখনি চলে যাবো ” মুখ ছোট করে বললো রোয়েন, ইনায়া তা বুঝতে পেরে বললো

“সমস্যা নেই আরেকটা রুম আছে এইখানে, আপনি চাইলে আজ রাত থেকে যেতে পারেন ”

রোয়েন যেনো এই কথার অপেক্ষায় ছিলো কিন্তু তা মুখে প্রকাশ না করেই বললো

“তুমি যখন বলছো তাহলে থেকে যাই”

“ইশশ কি বাধ্য আমার?” মনে মনে বললো ইনায়া কিন্তু মুখে কিছু বললো না

তারপর রোয়েনকে ধরে পাশের রুমে শুইয়ে দিলো আর নিজে ওর রুমে চলে গেলো। এই পুরো ঘটনা কেউ একজন পুরোটা সময় জুড়ে দেখছে, তার চেহারা জুড়ে রহস্যময় হাসি

“দ্যা মাফিয়া কিং ফল ইন লাভ উইথ আ গার্ল! ইন্টারেস্টিং ” বলেই হাসতে থাকলো, যেনো খুব কাঙ্ক্ষিত কিছু পেয়ে গিয়েছে।

🌸🌸🌸

সকালে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো সায়রা, মাথা ব্যাথা যেন চাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে ও। হঠাৎ ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজের শব্দে ও চমকে উঠে, আর নিজের দিকে তাকাতেই দেখে ও একটা সাদা কালার শার্ট পরে আছে সাথে একটা টাউজার তাও কোন ছেলের

“তাহলে কি আমি এগর্ন এর কাছে ধরা খেয়ে গিয়েছিলাম? আমি কি শেষ পর্যন্ত নিজেকে রক্ষা করতে পারলাম না? বাবাই, মাম্মা কি বলবো আমি ”

এতোটা অসহায় নিজেক আর কখনো লাগেনি ওর,না চাইতেও চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে ওর। কি হয়ে গেলো ওর সাথে! মাথা নিচু করে করে তাই ভাবছিলো তখনি ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজ এলো আর ধীরে ধীরে দুটো পা ওর দিকে এগিয়ে এলো। চোখ তুলে সম্পুর্ণ অচেনা একজন ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ও ভড়কে গেলো, কে এই ছেলে?

সামনের ছেলেটি দাঁত কেলিয়ে বললো

“ওহ উঠে গেছো! যাও ফ্রেশ হয়ে আসো ”

এমন সুদ্ধ বাংলা শুনে সায়রা হেবলার মতো চেয়ে আছে, এমন কাউকে জীবনেও দেখেছে বলে ওর মনে পড়ছে না!

#চলবে

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখিবেন ☺)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here