ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ৫

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_৫

রাত আর কিছু না বলে আমার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে বাঁকা হেসে চলে গেল।

রাতের এমন কাজে আমি তো অবাকের চরমে। আমি যেন জমে গেছি। পা যেন কাটকে গেছে। চেয়েও নাড়াতে পারছি না। তবে মনের মধ্যে এক অন্যরকম অনুভূতিও খেলা করছে। তা কিসের অনুভূতি তার নাম আমার জানা নেই। তবে হ্যা ভালো লেগেছে।

এসব ভাবতে ভাবতেই বাসায় চলে গেলাম। গেটে আর রাতকে দেখি নি।

রাতে শুয়ে শুয়ে রাত ভাইয়ার কথা ভাবছিলাম। উনার ফেরাতে আমি খুশি আবার রাগ আর ভয়ও। আমার জন্য উনার আগে করা কাজ গুলো উনার প্রতি আমার মনে এক ভয়ের সৃষ্টি করেছে। যা আমি চাইলেও মুছতে পারছি না।

পরেরদিন,

যথাসময়ে ভার্সিটির মাঠে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখনি সামনে এসে দাঁড়ায় এনি।

এনি- হেই ইউ আমার রাতের থেকে দূরে থাকো বুঝেছো।(আমাকে উদ্দেশ্য করে)

কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে না পারায় আমি বললাম

আমি- মানে?

এনি- মানে নেক্সট টাইম তোমাকে যেন আমি আমার রাতের সাথে না দেখি।

আমি- ঠিক আছে। তো তুমি তোমার রাতকে ধরে রাখো বা বেধে রাখো।

এনি- মানে?

আমি- আরে তুমিই তো মাএ বললে না যে আমি যান তোমার রাতের কাছে না যাই। কিন্তু আমি তো তোমার রাতের কাছে যাই না। বরং তোমার রাতই আমার কাছে আসে। সো তাকে বেধে রাখো। যেন আমার কাছে না আসে সিম্পল।

এনি- হাউ ফানি। রাত আসবে তোমার কাছে? সিরিয়াসলি? তোমার মতো মিডিলক্লাস মেয়েদের দিকে রাত চেয়েও দেখে না আর সে আসবে তোমার কাছে। নাইছ জোক।

তন্নিমা- মিডিলক্লাস না হাইক্লাস তুমি কি করে জানো?

এনি- তোমাদের ড্রেস আর চলাফেরা দেখেই বুঝা যায় তোমরা কোন ক্লাস। যেই ক্লাসই হও হাই ক্লাস তো নও। হাই ক্লাস হলাম আমরা দেখো আমার ড্রেস আপ আর চলাফেরা।(ভাব নিয়ে)

আমি- মানুষের সম্পর্কে না জেনে কথা বলতে নেই। বাট কি আর করার। থাকো তুমি।

এনি- জানি না মানে? আর তোমাদের মতো মিডিলক্লাসদের জানার ইচ্ছাও আমার নেই।

আমি কিছু না বলে শুধু একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে চলে এসেছি।

ক্লাসে ডুকবো এমন সময় হুট করেই একটা ছেলে এসে সামনে দাঁড়ায়।

ছেলেটি- হাই আমি সামির। (হাত বাড়িয়ে দিয়ে)

আমি- নাইছ নেইম। বাট আমি যার তার সাথে হাত মেলাই না।

সামির- ওকে। তাহলে বরং আমরা ফ্রেন্ডস হয়ে যাই। তাহলে তো আর হাত মেলাতে কোনো প্রব্লেম থাকবে না তাই না?

আমি- মানে?

সামির- ক্যান উই বি ফ্রেন্ডস?

আমি- চেনা নেয় জানা নেয় ফ্রেন্ড হতে বলছেন?

সামির- আরে ফ্রেন্ড হলেই তো চিনতে পারবে।

আমি- কিন্তু আপনাকে দেখে তো আমাদের ইয়ারের মনে হচ্ছে না।

সামির- হ্যা আমি মাস্টার্স করছি।

আমি- এমা তাহলে তো আমাদের থেকে অনেক বড়। তাহলে ফ্রেন্ড হবো কি করে?

সামির- ফ্রেন্ড হতে হলে এইজ মেটার করে না।

রিমা- করে নে না। উনি না আমার ক্রাশ। এই ফাকে যদি আমাদের মাঝে কিছু একটা হয়। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।(কানে কানে লাজুক হেসে)

আমি রিমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। এই মেয়ে কত ক্রাশ খায়। কালকেও রাতকে দেখিয়ে বলছিল ক্রাশ। আর আজকে এই সামিরকে দেখিয়ে।

তন্নিমা- হ্যা বল।

আমি- ওকে ওকে। ফ্রেন্ড।(হাত মিলিয়ে।)

সামির- আর তোমরা?(সবাইকে উদ্দেশ্য করে)

অনিক- আমাদেরও কোনো প্রব্লেম নেই। ফ্রেন্ডস।

আমি- আচ্ছা আসি আমাদের ক্লাস আছে। বাই।(বলেই চলে এলাম।)

ক্লাসে,

রিমা- এই চলে এলি কেন? আর একটু থাকতাম। কত ভালো লাগছিল সামিরকে এত কাছ থেকে দেখে। হায়।

আনিকা- দেখেছিস। সব মেয়েগুলো কেমন তাকিয়ে ছিল। আহারে তাদের ক্রাশ যেচে এসে আমাদের সাথে কথা বলল। ওরা তো ফুলবেই।(বলেই হেসে দিল।)

রিমা- তা যা বলেছিস। এত ভালো লাগছিল যে কি বলব।

আমি- কিন্তু এই সামিরটা কে?

রবিন- কার কথা হচ্ছে?(ক্লাসে ডুকতে ডুকতে)

অনিক- আচ্ছা তোর প্রতিদিন এতো লেট হয় কেন বলত?

রবিন- আরে একটা কাজে আটকে গেছিলাম। এখন বল, কার কথা হচ্ছিল?

রিমা- সামিরের।

রবিন- সামিরের মানে?

তন্নিমা- আমি বলছি।

তন্নিমা রবিনকে কিছুক্ষণ আগের সব কথা বলল।

আমি- আরে এখন তো বল এই সামির কে?

রবিন- সামির হলো এই ভার্সিটি ভিপি মানে রাত ভাইয়ের অপজিট টিমের লিডার। যাকে বলে রাত ভাইয়ের শএু। আর আমাদের ভার্সিটির সেকেন্ড ক্রাশবয়। কারণ ফাস্ট রাত ভাই। সামির এক নাম্বারের প্লেবয়। এখন পর্যন্ত অনেক মেয়ের সাথে তার রিলেশন ছিল। আর হ্যা বড়লোক বাবার দেমাগি ছেলে। বাবা একজন নাম করা বিজনেসম্যান।

তন্নিমা- কিন্তু তোর সাথে কথা বলতে এসেছিল কেন?

আমি- আমি কি জানি?

রবিন- সে যাই হোক চল। এখনি স্যার এসে পড়বেন।

সবাই- হ্যা।চল।

২য় ঘণ্টা পর হুট করেই পানি পিপাসা পেল। তাই এখন পানি আনতে যাচ্ছি ক্যান্টিন থেকে একা। সব ডিপার্টমেন্টরই ক্লাস হচ্ছে তাই পরিবেশ একদম নিরব। তন্নিমা অবশ্য আসছিল আমার সাথে কিন্তু হুট করেই অনিকের পড়ার কি সমস্যার জন্য আসতে পারে নি। অগত্যা আমি একাই যাচ্ছি।

আমাদের ক্লাস দ্বিতীয় তলার একদম কর্ণারে। কয়ের ডিপার্টমেন্ট এর ক্লাস হয়ত আজকে নেই। কারণ ক্লাস গুলো সব খালি। দ্বিতীয় তলায় হয়ত আমাদেরই ক্লাস হচ্ছে আজকে।

আমি কোনো দিকে ধ্যান না দিয়ে হাটা চালিয়ে গেলাম। কিন্তু যেই না সিঁড়িতে পা দিতে যাব ওমনি কেউ আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মুখ চেপে ধরে কোথাও নিয়ে যেতে থাকে। মুখ বন্ধ থাকায় আমি চিল্লান দিতে পারছিলাম না। তাই শুধু হাত পা ছুটাছুটি করছি। আর লোকটার হাতে কিল ঘুষি দিচ্ছি।

লোকটা আমাকে একটা খালি ক্লাসে নিয়ে যায়। যা দেখে আমি ভয় পেয়ে যায়। আমি আরো বেশি ছুটাছুটি শুরু করে দেই।

লোকটা আমাকে ক্লাসে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিয়ে যায় দরজা বন্ধ করতে। ফেলে দেয়াতে আমি ব্যথা পেলেও এই ব্যথাকে গুরুত্ব দিলাম। এখন সবচেয়ে বেশি দরকার আমার এখান থেকে বের হওয়া আর নিজের সম্মান বাচানো।

আমি কোনো রকম উঠে। দৌড়ে গেলাম দরজার দিকে। কিন্তু ততক্ষণে লোকটা দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। লোকটা যেই এইদিকে ফিরল আমি দৌড়ের ফলে নিজের একপায়ের সাথে আরেক পা বেধে পড়ে যেতে নেই। লোকটা তক্ষণাত আমাকে ধরে ফেলে।

আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিচ্ছি। কিন্তু হুট করেই পেটে কারো হাতের স্পর্শ আর মুখে কারো গরম নিশ্বাস পরায় আমি ধড়ফড়িয়ে উঠালাম। আমি লোকটা মুখে না দেখেই লোকটার সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে দিলাম। কিন্তু লোকটার কোনো হেলদুল নেই। তিনি সেই আগের মতোই আমাকে ধরে আছেন।

আমি- ছাড়ুন। ছাড়ুন আমাকে। ছাড়ুন বলছি। আই সেইড লিভ মি।

কিন্তু লোকটার কোনো উত্তর না আসায় আমি একটু শান্ত হয়ে নিজের মুখটা একটু উপরে তুলে যা দেখলাম তাতে আমি অবাক। কারণ লোকটা আর কেউ না রাত ভাইয়া।

আমি ভালো করে উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি কেমন শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। উনার চোখে মুখে আমি একপ্রকার নেশা দেখতে পাচ্ছি। যা আমাকে বারবার উনার দিকে তাকাতে আকর্ষণ করছে।

আমি বারবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছি। উনার এভাবে ধরে রাখা আমার একপ্রকার অসস্তির সৃষ্টি করছে। আবার মনে একধরণের অনুভূতিও কাজ করছে যার নাম আমার অজানা।

আমি এবার একটু হালকা ধাক্কা দিয়ে আসতে করে বললাম।

আমি- ক কি হ হলো। ছ ছাড়ুন আ আমাকে।(হালকা ধাক্কা দিয়ে।)

কিন্তু এতে কোনো কাজ হলো না বরং আরো উল্টো হলো। উনি হু বলেই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।

এবার যেন অসস্তির মাএা কয়েকগুন বেড়ে গেল। আবার রাগও হলো কিছুক্ষণ আগে উনার আমাকে এখানে নিয়ে আসার কথা মনে হতেই।

এবার একটু জুড়েই চিল্লানি আর ধাক্কা দিলাম।

আমি- কি হলো শুনতে পারছেন না? ছাড়ুন বলছি। লজ্জা করে না। একটা মেয়েকে এইবারে ধরে থাকতে?(বলেই জুড়ে ধাক্কা দিলাম।)

উনি ঘোরে থাকায় ধাক্কায় একটু পিছিয়ে গেলেন। আর সাথে হুশ এলো। উনি কিছু না বলে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে নিলেন।

উনার এমন কাজে আমি অবাক। কারণ আমি তো ভেবেছিলাম। ছোটবেলার মতো চড় পড়বে গালে। আসলে ছোটবেলায় আমি রাত ভাইয়ার সাথে একটু জুড়ে কথা বললেই ভাইয়া মেরে দিত। তাই আমি ভাবলাম সেই অভ্যাস এখনো আছে হয়ত। কিন্তু না। তিনি কিছু না বলেই চোখ বন্ধ করে নিলেন।

উনি চোখ খুলার পর সামনে তাকিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার অন্তর আত্মা কেপে উঠল।

চলবে?

ভুল এুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন এবং উৎসাহ দিবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here