মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=২২
❤❤
রোদ-রোদেলা
#তানিয়া_আনিতা
বাসার দরজা খুলতেই রোদের মা থ হয়ে গেল আর রোদের বাবা সোফায় বসা ছিল, ওনি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেল,
——-কিরে রোদ এই অসময়ে আর তোর সাথে মেয়েটা কে
——-মা আগে ভেতরে ঢুকি তারপর না হয় সব বলছি।
দুজনে ভেতরে ঢুকে ড্রয়িংরুমে যায়।তারপর রোদ বলতে থাকে,
——মা ও হচ্ছে রোদেলা আর তোমাদের বৌমা। আমরা আজই কোর্ট ম্যারিজ করছি।
——-মানে আমাদের না জানিয়ে তুই কোত্থেকে কে না কাকে বিয়ে করে আমাদের সামনে নিয়ে এলি আর বলিস কিনা আমাদের বৌমা আর তুই কি করে ভাবলি আমরা মেনে নিবে।
——–মা আমি তোমাকে ওর পরিচয় দিবো কিন্তু ওকে রুমে রেখে আসি তারপর। প্লিজ মা অনুমতি দাও।,,
,
,
,
,
,
,
রোদের মায়ের অনুমতি পেয়ে রোদ রোদেলাকে রুমে রেখে আসে তারপর আবার মায়ের কাছে যায়। এদিকে রোদেলা আছে খুব ভয়ে কারণ না জানি কিনা কি হয়।হঠাৎ বাহির থেকে চিৎকার চেচামেচির শব্দ পেয়ে রোদেলা বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আর দরজার একটু – সামনে আসতেই
——-অসম্ভব এটা কখনোই হতে পারে না, আমি কোনোদিন এই মেয়েকে তোর বউ বলে মানবো না, তুই কি ভুলে গেছিস এই মেয়ের ভাই আমাদের কতো অপমান করেছিলো শুধু তাই নয় আমাদেরকে পুলিশের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলো আর তুই শেষে কিনা এই মেয়েকে বিয়ে করলি,তার চেয়ে যদি তুই কোনো গরিব ঘরের মেয়েকে বিয়ে করে আনতি আমি কিছুটা অমত করতাম কিন্তু এই মেয়েকে তো আমি জীবনেও মেনে নিবো না।
,
,
,
,
——–মা প্লিজ শান্ত হও আগে আমার কথা শুনো,তুমি ভাবলে কি করে যে আমি ওই মেঘ আহমেদের করা সকল অপমান ভুলে যাবো।আমি ওর বোনকে বিয়ে করেছি শুধু ওর অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। ওকে যদি শাস্তি দিতাম হয়তো কষ্ট কম হতো, কিন্তু ওকে না ওর বোনকে দিয়েই এবার আমাদের অপনামের শোধ তুলবো।আর তোমরাও তোমাদের সকল রাগ ওর বোনের ওপর তুলবে,তাই তো এই প্ল্যান।কিন্তু তোমরা ভুলেও ওকে এসব নিয়ে কিছু বলবে না। যে ওর ভাইকে আমরা চিনি বা ওর সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন।
।
।
।
।
।
।
এতোক্ষণ রোদ তার বাবা মাকে তার প্ল্যানের সব কথা বলল আর এসব কথা শুনেই রোদের মা রোদকে অনেক সাপোর্ট করলেও রোদের বাবা এটা মানতে পারেনি। তিনি এই নিয়ে বাধা দিলে রোদের মায়ের ধমকে আর কিছু বলতে পারলেন না।এদিকে রোদেলা প্রথমে অনেক চিৎকার শুনলেও পরে নিরব হয়ে যায়।আসলে রোদের রুম অনেকটা দূরে থাকায় রোদেলা আওয়াজ শুনেছে কিন্তু কি কথা হয়েছে ওদের মাঝে সেগুলো কিছুই শুনতে পারে নি। রোদ রুমে গিয়ে দেখে রোদেলা রুমে পায়চারি করছে আর রোদকে দেখেই রোদেলা দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরে
——–রোদ তোমাকে কি খুব বকা দিয়েছে, ওনারা খুব রেগে আছে তাই না,এ সব কিছু আমার জন্য হয়েছে আমি যদি জোর না করতাম তবে এসব কখনো হতো না আমায় ক্ষমা কর রোদ বলে কাদতে থাকে।
——–আরে আরে কি বলছো পাগলের মতো, তুমি সব দোষ নিজের মনে কেন করছো আসলে বুঝতেই তো পারছো মায়ের মন আর আমি ওদের একটা ছেলে সবার তো অনেক ইচ্ছে থাকে তাই না, একটু রাগ তো করবেই, বাদ দাও এসব কথা, কিন্তু তোমাকে কথা দিতে হবে আমার মা বাবা তোমাকে যায় বলুক বা যায় করুক না কেন তুমি ওদের মুখের ওপর কোনো কথা বলবে না, ওনারা যায় বলে তাই করবে ঠিক আছে।
,
,
,
,
রোদের কথায় রোদেলা সহমত পোষণ করে। তারপর রোদ গিয়ে একটা বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পরে।তা দেখে রোদেলা
——-কি হলো ওখানে যাচ্ছো কেন এতো বড় বেডে তো আমরা একসাথে ঘুমাতে পারি তাহলে।
——-আসলে আমি চাই না এখন আমরা একসাথে এক বেডে ঘুমাই,আমাদের দুজনের কিছুটা সময়ের প্রয়োজন,আর আমার চেয়ে তোমার বেশি দরকার তাই আমি এখানে ঘুমাবে, তমিও ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরো।
বলে রোদ সোফায় গিয়ে শুয়ে পরে আর রোদেলা সেদিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে নিজেও শুয়ে পরে।
——-আমি চাই না আমার দিয়ে কোনো ভুল হোক কারণ তোমাকে আমি কোনোদিন স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না, কেননা আমার মন জুরে এখনো একজনি আছে আর সে হচ্ছে বৃষ্টি। তুমি শুধু আমার একটা চাল মাএ যা দিয়ে আমি ওই মেঘ আহমেদকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারবো।(মনে মনে)
.
.
.
.
.
.
.
এভাবে বেশ কিছু দিন কেটে গেল। এর মাঝে রোদেলার সাথে তার মা বা ভাই করো কোনো যোগাযোগ হয়নি আসলে রোদেলা অনেকবার চেষ্টা করছে কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়েছে কারন মেঘ চাই নি রোদেলার সাথে কথা বলতে আসলে রোদেলা এমন একটা কাজ করবে সেটা কখনো চিন্তা করে নি তার ওপর যাকে ভালোবাসে সেই তো তার শএু তাহলে কীভাবে সে নিজের বোনের অন্যায় টা মেনে নিবে।
।
।
।
।
।
রোজকারের মতো মেঘ অফিসে গিয়ে নিজের কাজে মন দিল। হঠাৎ তার কেবিনে কেউ নক করলো। মেঘ ঢোকার পারমিশন দিলো ঠিকি কিন্তু মেঘ তখনও নিচে তাকিয়ে কাজ করতে লাগলো।প্রবেশকৃত মানুষটির নিরবতা দেখে মেঘ ওপরে তাকালো আর অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো
——–তানিশা, তুই কেমন আছিস আর দেশে কখন ফিরলি।
——-বাব্বাহ চিনতে পারলি তাহলে আমি তো ভেবেছিলাম ভুলেই গেছিস সেদিনের ঘটনার পর থেকে।
।
।
।
।
।
আসলে মেঘ কলেজের সেই ঘটনাটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল কিন্তু তানিশার কথায় মনে পরলো।সে চাই না সেসব নিয়ে কথা বলতে। তাই কথা ঘুরাতে
——-আরে বাদ দে ওসব কথা যা হওয়ার হয়েছে এবার বল দেশে কখন আসলি।
——–এতো গতকালের ফ্লাইটে আজকে এসে পৌঁছালাম তাই ভাবলাম তোর সাথে একটু মিট করে যায় যদি ও জানি তুই রেগে আছিস আমার ওপর।
,
,
,
,
,
,
কথার মাঝখানে হঠাৎ করে বৃষ্টি মেঘের কেবিনে ঢুকে পরে আর তানিশাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়, তানিশাও বৃষ্টিকে দেখে দাঁড়িয়ে পরে।তানিশা কিছু বলতে গেয়েও বলল না এর আগেই বৃষ্টি কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। তানিশা মেঘের দিকে প্রশ্ন করার মতো রূপ নিতেই, মেঘ প্রসঙ্গ পাল্টাতে
——–তো হঠাৎ কি মনে করে দেশে আসা হলো শুনি আর আংকেল আন্টি কেমন আছেন। ওনাদের তো কোনো খবর নেই।
——-আসলে ওদিনের পর আমি বাইরে চলে যায় আর ওখানেই সেটেল হয়েছি কিন্তু কি বলতো নিজের দেশের প্রতি টান সবসময় কাজ করে, কিন্তু সময়ের জন্য আসা হয়না আর এখানে তো কেউ নেই বাবা মাও ওখানে, তাছাড়া আমাদের কিছু জমিজমার কাজ আছে সেগুলোর জন্য আসা আর সাথে দেশও একটু ভিজিট করা। এই আরকি। ভাবছি ভালো কোনো হোটেলে উঠবো।তোর চেনা কোনো ভালো হোটেল আছে।
——-কি বলিস তুই আমার বন্ধু হয়ে তুই হোটেলে থাকবি আর আমি তা হতে দিব নেবার যতদিন দেশে থাকবি ততোদিন আমার বাড়িতে থাকবি।আর মায়ের সাথে ও দেখা হয়ে যাবে।
.
.
.
..
.
.
.
এরপর অনেক্ক্ষণ কথা বলার পর অফিস টাইম শেষ করে দুজনে বেরিয়ে গেল। ওদের বেরোনোর পর বৃষ্টি ও বেরিয়ে গেল। মেঘ আর তানিশা বাসায় পৌঁছানোর পর মেঘের মা তানিশাকে দেখে জরিয়ে ধরল। মেঘের বিয়ে,রোদেলার বিয়ের সব কথা বললো। কিছুক্ষন কথা বলার পর বৃষ্টি বাসায় ঢুকল।আর মেঘের মা বলে উঠল
——-আরে বৌমা তুমি এসেছো দেখো কে এসেছে, তানিশা তুমি এতোক্ষন মেঘের বৌকে দেখতে চাইছিলে না এতো আমাদের মেঘের বৌ
বলে বৃষ্টিকে টেনে তানিশার সামনে আনলো আর তানিশা বৃষ্টিকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চোখ বড় বড় করে ফেললো, আর বলল
——-বৃষ্টি….
,
,
,
,
,
,
চলবে…………