মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=২৫

0
2195

মেঘ_বৃষ্টি পর্ব=২৫
❤❤
রোদ-রোদেলা

#তানিয়া_আনিতা

মেঘ চলে যাওয়ার পর তানিশা সেখানে বসে মুখে হাত দিয়ে কাদতে থাকে। কাদতে কাদতে একপর্যায়ে মুখ থেকে হাত সরিয়ে জোরে জোরে হাসতে থাকে।তারপর মুখে কিছু আওয়াজ করে

——–আহারে আমি না হয় মনে রাখবো তোমার কথা কিন্তু এখন কি হবে তোমার সাথে যা হতে চলেছে তা তো খুবই দুঃখজনক।ইসরে আমি তো তোমায় এমনভাবে ফাঁসিয়েছি এখন তুমি যায় বলো না কেন বৃষ্টি তোমার কথা বিশ্বাস করবে না। তুমি কি চাইবে না চাইবে সেটা আমার জানার দরকার নেই কিন্তু আমি যা চাই তা তো নিয়ে ছাড়বো।বলে আবারও হাসতে লাগলো।

কিছুক্ষন আগে
,
,
,
,
,
,
মেঘ প্যাকেট টা যেখানে রেখেছিল সেখান থেকে বৃষ্টির নজরে পরবে ভেবেছিল।কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত বৃষ্টি সেদিকে খেয়াল না করে নিচে চলে যায়। ঠিক তখনি তানিশা চলে আসে আর মেঘকে না দেখে বেরিয়ে যেতে নিলে বিছানার ওপর চোখ যায়। বেস তাতেই সে নিজের বুদ্ধি খাটায়। প্যাকেটের শাড়ি পরে সোজা চলে যায় ছাদে। আর বৃষ্টি রুমে এসে দেখে প্যাকেট খোলা সাথে একটা চিরকুট যেখানে লিখা,

——-এটা এনেছি শুধু তোমার জন্য প্লিজ শাড়িটা পরে ছাদে এসো আমি অপেক্ষা করছি।

বৃষ্টি আর কিছু না ভেবে সোজা ছাদে চলে গেল আর বৃষ্টির আাসার টের পেয়ে তানিশা মেঘের সাথে ওমনভাবে কথা বলতে শুরু করল যাতে বৃষ্টি মেঘকে ভুল বুঝে আর ঠিক তাই হলো।

মেঘ রুমে গিয়ে দেখে বৃষ্টি কাদছে।মেঘ কিছু টা আনদাজ করতে পেরে,

——–সরি আসলে আমি ওটা তোমার জন্য এনেছিলাম কিন্তু তানিশা ভুল করে পরে ফেলেছে। বিশ্বাস করো আমি জানতাম না এমন কিছু হবে।

এবার বৃষ্টি রাগি দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকায়,
,
,
,
,
,,
———বিশ্বাস আর আপনাকে তাহলে আমি যা দেখেছি আর যা শুনেছি সেগুলো কি সব মিথ্যে, সব বানোয়াট। ছিঃ ছিঃ আমি ভাবতে পারছি না আপনি এতো জঘন্য মনের মানুষ। আমাদের মধ্যে যা ছিল তা ব্যক্তিগত।আপনি কীভাবে পারলেন তানিশাকে এসব বলতে।এই আপনার ভালোবাসা। নিজেদের পারসোনালি কথা অন্যকে জানিয়ে দিলেন।আপনারা যখন কলেজ থেকে একে অপরকে ভালোবাসতেন তাহলে কেন করলেন আমাকে বিয়ে, কেন আলাদা করলেন আমাকে আর রোদকে।শুধু মাএ কি নিজের জেদ আর আমাকে শায়েস্তা করার জন্য। আমার ভাবতে ঘৃনা লাগছে যে আপনি আমার স্বামী। তানিশা ঠিক বলেছে আমি শুধু আপনার মোহ আর আমি কখনো আপনাকে সুখ দিতে পারবো না তাই আপনি আমাকে ছেড়ে দিন আমি কখনো কারো মাঝখানে আসতে চাই না।

বলে কাদতে কাদতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর মেঘ দাঁড়িয়ে রইল। কি করবে সে,কীভাবে বোঝাবে বৃষ্টিকে কেননা বিষয়টা এমন ভাবে হয়েছে যে মেঘ চাইলেও কিছু করতে পারবে না।

রাতের খাবার খেয়ে মেঘ তানিশার রুমে যায়। তানিশা মেঘকে দেখে একটু এগিয়ে আসে,

——–কি হলো মেঘ তোকে এতোটা ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেন, কিছু কি হয়েছে।

——–তানিশা তোকে কিছু বলার জন্য এসেছি

——–হুমম তো বল না

——–আসলে আমি বলতে চাইছি তুই কালি এই বাড়ি থেকে চলে যাবি।আমি তোর জন্য ভালো মানের হোটেলের রুম ঠিক করে রেখেছি।কাল সকালে বাড়ির ড্রাইবার তোকে তোকে দিয়ে আসবে।

——–কিন্তু মেঘ তুই নিজেই তো আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিস আমি তো আসতে চাই নি তাহলে।

——–হুমম আমি এনেছিলাম কিন্তু ছাদের বিষয়টা বৃষ্টি দেখে ফেলেছে তাই এটা নিয়ে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে তাই আমি চাই তুই এখান থেকে চলে যা।

——–কিন্তু আমি তো সরি বলেছি তুই চাইলে আমি বৃষ্টির সাথে কথা বলতে পারি।

——–না এমনি বিষয়টা অনেক জটিল হয়ে গেছে এখন যদি তুই কিছু বলতে যাস তাহলে আরও জটিল হবে।আর কোনোভাবে যদি মায়ের কানে যায় তবে সমস্যা আরো বেড়ে যাবে যা আমি চাই না। তাই কাল সকলেই তুই চলে যাবি।

বলে মেঘ বেরিয়ে গেল আর তানিশা রেগে পাশে থাকা গ্লাস টা আচা মেরে ভেঙে ফেললো।






———আমি জানি মেঘ তুই বৃষ্টিকে খুশি রাখতে আমাকে চলে যেতে বলছিস। ৪ বছর আগে বৃষ্টির কথায় তুই সবার সামনে আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলি যার জন্য আমাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। আর আজকেও বৃষ্টির জন্য তুই আমাকে তোর বাসা থেকে অপমান করে তাড়িয়ে দিলি।ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না এবার এর মাসুল দুজনকেই দিতে হবে। আমি বৃষ্টিকে তোর জীবন থেকে সরিয়ে দিবো। আর তার জন্য যা যা করা দরকার আমি করবো।

বলে রাগে ফুঁসতে থাকে।পরদিন সকালে তানিশা চলে যায়। এতে মেঘ বা বৃষ্টির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। মেঘের মা জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু মেঘ সেটা নিজের মতো করে মেনেজ করে নিয়েছে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দেখতে দেখতে কেটে গেল ৬ মাস।এ ৬ মাসে ওদের মাঝে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।মেঘ অফিসে বসে কাজ করছে এমন সময় তার একটা কল আসে। রিসিভ করতেই ওপাশের ব্যক্তির কথা শুনে মেঘের মুখে হাসি ফুটে উঠল। মেঘ দ্রুত কেবিন থেকে বের হয়ে অফিসেের সবাইকে ডাকলো।সবাই হাজির হতেই,
,
,
,
,
,
,
——–এক্সকিউজ মি গাইস সবার জন্য একটা সুখবর আছে। ৬মাস আগে যে প্রজেক্টের জন্য আমরা বান্দরবান গিয়েছিলাম সেখান থেকে ওনারা কল করেছে আর জানিয়েছে আমরা সেটা পেয়ে গেছি।আপনারা বিশ্বাস করতে পারবেন না প্রজেক্ট কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সো এই খুশিতে কাল আপনাদের সবার জন্য আমি পার্টি থ্রো করছি আর এরজন্য আজ সবার ছুটি।








মেঘের বলার বাকি আর সবাই তো খুশিতে আটখানা। তার ওপর সবাই যার যার মতো অফিস থেকে চলে গেল। পার্টির জন্য অনেক বড়, শহরের নাম করা রেস্টুরেন্ট ঠিক করলো মেঘ।পার্টির দিন মেঘ তৈরি হয়ে আগে চলে গেল রেস্টুরেন্টে। বৃষ্টি বাসার সব ঠিক করে রুমে গিয়ে আলমারি খুলে কাপড় দেখতে লাগলো।আসলে বৃষ্টি বুঝতে পারছে না সে কি পরবে হঠাৎ তার চোখে একটা শাড়ি পরলো তাই আর কিছু না ভেবে সেটা নিয়ে তৈরি হয়ে নিলো।তারপর নিচে নেমে সার্ভেনদের ডাক দিলো।

——–শোনো আজ তোমাদের রাতের খাবার তৈরি করতে হবে না আর হ্যা বাকি যেসব কাজ আছে সেগুলো সেরে মেইন দরজা ভালো করে আটকে ঘুমিয়ে পরবে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আজ আমাদের আসতে একটু দেরি হবে।আর সাথে চাবি আছে তাই তোমরা তোমাদের কাজ সেরে গেট আর দরজা অফ করে দিবে।

বলে বৃষ্টি বেরিয়ে গেল। আর তাছাড়া বাসায় তার শ্বাশুড়ি মা ও নেই। হঠাৎ করে মেঘের মামা অসুস্থ হওয়ায় তিনি ওখানে গিয়েছেন এক সপ্তাহ হলো।কিন্তু ফোন করে জানিয়েছেন যে ওনি এখন অনেকটা সুস্থ তাই মেঘের মা খুব শীঘ্রই চলে আসবেন। একদিকে ভালো হয়েছে যদি তার শ্বাশুড়ি থাকতো তবে মেঘ আর বৃষ্টি দুজনকে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতো।









এদিকে অফিসের সবাই পৌঁছে গেছে। কিন্তু বৃষ্টি এখনো পৌঁছায় নি।তৃনা কখন থেকে অপেক্ষা করছে কিন্তু বৃষ্টির দেখা মেলেনি।হঠাৎ রেস্টুরেন্টের দরজা ঠেলে কেউ প্রবেশ করতেই সবার চোখ সেদিকে আটকে গেল। কালোশাড়ি লাল পার সাথে ম্যাচ করা ব্লাউজ, চুলোগুলো সামনে দিক কিছু টা উচু করে পেছনের গুলো কোপা করা, সামনের ছোট ছোট চুলগুলো একপাশে এনে দেওয়া, তার সাথে রয়েছে হালকা সাজ আর হালকা অর্নামেন্টস বলতে গেলে কোনো এক অপ্সরা ঢুকছে দরজা দিয়ে। কেউ চোখ সরাতেই পারছে না।দুজোরা চোখ তো পলকি ফেলছে না, তৃনা দৌড়ে এসে

——–কিরে বৃষ্টি এতো দেরি করলি কেন সে কখন থেকে অপেক্ষা করছি। আচ্ছা বাদ দে কি সাজলি রে তুই কেউ তো চোখি সরাতে পারছে না। কি দারুন লাগছে।এই শাড়িটা তো পুরো তোকে আরও ফুটিয়ে তুলেছে।কালো শাড়িতে তোর দুধে আলতা গায়ের রং যেন আরো মনোমুগ্ধকর হয়েছে। এ প্রথম তোকে শাড়িতে দেখলাম তুই রোজ শাড়ি পরে আসতে পারিসনা অফিসে।

——–তোর মাথা ঠিক আছে এটা সামলাতে যে আমার কি অবস্থা হচ্ছে তা আমি জানি।তাও আজ পার্টি বলে পরছিলাম। জানিনা ভালো করে আটকেছে কিনা।মনে হচ্ছে যে কোনো সময় খুলে যেতে পারে।আর তোকেও খুব সুন্দর লাগছে।

বৃষ্টি তৃনা দুজন দুজনের কথা শুনে হাসতে হাসতে সামনে এগিয়ে গেলো।এদিকে মেঘ তো এখনো ঘোরের মাঝে আছে। সত্যি বলতে মেঘ তো বৃষ্টিকে দেখে পুরো ফিদা। মেঘের খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টি সামনের এলোমেলো চুলগুলো নিজের হাতে ঠিক করতে।কিন্তু সেটাতো সম্ভব নয় ভেবে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আর অন্য দিকে শ্রাবন তো হা হয়ে গেছে। শাড়িতে যে একটা মেয়েকে এতো সুন্দর লাগে সেটা ও জানতো না।তারপর শ্রাবন এসে বৃষ্টি আর তৃনার সাথে কথা বলতে লাগলো।এরমধ্যে পার্টিও শুরু হয়ে গেছে সবাই নিজেদের মধ্যে ডান্স করছে আর বৃষ্টি একটা টেবিলে বসে তা দেখছে মেঘ দূর থেকে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি কে দেখছে।.
.
.
.
.
.
.
.
মেঘ কিছু একটা ভেবে বৃষ্টিকে হাত বাড়িয়ে দিলো নাচের জন্য কিন্তু বৃষ্টি সেটা তোয়াক্কা না করে সরে গেল।এমন সময় শ্রাবন এসে বৃষ্টিকে জোরাজোরি করতে লাগলো নাচের জন্য। আর না পেরে বৃষ্টি শ্রাবনের সাথে নাচতে লাগলো।সেটা দেখে মেঘ রেগে গেল কেননা বৃষ্টি তার সাথে না নেচে অন্য ছেলের সাথে নাচছে যেটা মেঘের মেজাজ খারাপ করে দিলো।তাই সে গিয়ে ড্রিংক অর্ডার করলো।আর একের পর এক খেতে লাগলো।এদিকে সবাই যখন পার্টিতে বিজি ঠিক তখনি অচেনা একজন ঢুকে পরলো রেস্টুরেন্টে আর কিছু টা দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো মেঘ বৃষ্টির দুজনের অবস্থা। শ্রাবন নাচের বিভিন্ন স্টেপে বৃষ্টির কাধে আর কোমরে হাত রাখছে আর মেঘ বসে সেগুলো দেখে ড্রিংকস নিচ্ছে আর রাগে ফুঁসছে।
দূরের অচেনা মানুষটি মেঘের এমন কান্ড দেখে ডেবিল হাসি দিল।
,
,
,
,
,
চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here