#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_04
আজ প্রায় দুই বছর নরকযন্ত্রণা ভোগ করছি আমি। তবে অনেক হয়েছে,আর নয়! এখন থেকে আমি নিজেকে বদলে ফেলবো নিজের জন্য। যারা আমার বিশ্বাস নষ্ট করেছে তাদের সবাই কে উচিৎ শিক্ষা দিবো। টাকা আর পাওয়ার সব কিছুই যখন আমার আগে পিছনে আছে। তখন সেগুলোর না হয় আমি একটু অপব্যবহার করলাম। নিজের প্রিয়জন দের ভালো রাখতে আর নিজেকে একটু সুখি রাখতে। আমার উপর জোর করে মিথ্যা সম্পর্কের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। তাকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিবো।
আজ থেকে না হয় বৃষ্টির নতুন সৃষ্টি হলো।
এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়।
একদিন সকালে বৃষ্টি রেডি হয়ে বাড়ির বাহিরে যাচ্ছিল। তখন তাকে পেছন থেকে গম্ভীর কন্ঠে শিকদার মির্জা ডেকে ওঠেন।
বৃষ্টি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পড়ে। তারপর পেছন ফিরে সুন্দর একটা মলিন হাসি উপহার দিয়ে বলে,”বা বা আমি ভার্সিটি তে যাচ্ছি। আপনি তো জানেন আমি লেখাপড়া করতে কতোটা ভালোবাসি। তাছাড়া বাকি জীবন যখন সিঙ্গেল থাকতে হবে। তখন এই লেখাপড়া করার খুব দরকার আছে। আমি এই লেখাপড়া কমপ্লিট করে আপনার আর মা’র পাশে দাঁড়িয়ে সমাজ সেবা করতে চাই। আর সে কাজ করতে গেলে নিজেকে তো উপযুক্ত শিক্ষিত করতে হবে তাই-নয় কি?”
শিকদার মির্জা বলে,”আজ হঠাৎ তুমি এমন কথা বলছো কেনো? মাথার মধ্যে কি কোনো কুমতলব আছে তোমার?”
বৃষ্টি – বা বা আপনি একজন বড় রাজনীতিবিদ হয়ে আমাকে এমন কথা বলছেন? আপনার তো উচিৎ আমাকে উৎসাহ দান করা যাতে ভবিষ্যৎ এ আপনাদের দেখানো পথে চলতে পারি। তাছাড়া আমি আমার এই সারাজীবন সিঙ্গেল থাকার ভাগ্যটা কে মেনে নিয়েছি। আর কতোদিন বলুন এভাবে আপনাদের সাথে মনোমালিন্য করে বসবাস করবো? যখন সারাজীবন এখানে থাকতে হবে। জলে বসবাস করে তো আর কুমিরের সাথে বিবাদ করা যায় না।”
তখন পেছন থেকে শিকদার মির্জার বড় ছেলের বউ পাপিয়া বলে ওঠে,”এ তো খুব ভালো কথা বৃষ্টি। যাক অবশেষে তাহলে তুমি তোমার বৈধব্য মেনে নিয়েছ। আলহামদুলিল্লাহ্। আর নিজের পরিবারের কথা যে চিন্তা করছো তা ভেবে ভাল লাগছে।”
শিকদার মির্জা – বড় বউমা আজ বৃষ্টির কথা শুনে আমারো ভাল লাগছে। এখন মনে হচ্ছে ও আর বাড়াবাড়ি কিছু করবে না। তাই আজ থেকে বৃষ্টি তুমি বাকি সবার মতো চলাফেরা করবে। তোমাকে আমাদের রাজনীতির কালচার না হয় তোমার মা শেখাবে।”
বৃষ্টি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”বাবা আমি নিজে থেকে কিছুটা অভিগতা অর্জন করতে চাই। তারপর না হয় মা’র কাছে শেখা যাবে। আগে তো নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে হবে আমাকে। তারপর না সবাইকে বলবো আমার পরিরর্তনের কথা।”
পাপিয়া বলে,”যাক আজ এতোদিন পর তোমার এই নতুন রুপ কে স্বাগতম জানাচ্ছি সবাই। পরিবারের সকলে তোমার এই সিদ্ধান্তে অনেক খুশি হবে।”
তখন শিকদার মির্জার বউ ডায়না মির্জা এসে বলে,”সব কিছু তো বুঝলাম তবে এ মেয়ে যে ছাড় পেয়ে উড়াল দিতে চেষ্টা করবে না তার কেনো গ্যারান্টি আছে?”
বৃষ্টি এবার বলে,”আম্মা এখন আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। একটুপর তো লাশ হয়ে খাটিয়াতে শুয়ে থাকতে পারি।” যেমনটা.. থেমে গিয়ে আবারো বলে,”আমি জানি আমার উড়বার জন্য কতো খানি আকাশ বরাদ্দকৃত। তাই সে প্রাচীর পার করে আমি উড়ে যেতে চেষ্টা করবো না। চেষ্টা করেও লাভ হবে না ফিরে তো এখানে আসতে হবে। কোনে একদিন না হয় আপনারা নিজেরাই আমাকে মুক্তি দিবেন সে আশাতে বুক বেধেছি। ”
ডায়না মির্জা – তোমাকে মুক্ত করে দিবো! সেই দিন কোনোদিন ও আসবে না। আর তোমার সে আশা কোনো দিনও পূরণ হবে না।
বৃষ্টি জানে এদের সাথে তর্ক করতে থাকলে সারাদিনেও ফুরাবে না। তাই সে শিকদার মির্জা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”বাবা আমি তাহলে এখন ভার্সিটি তে যায়। নয়তো লেট হয়ে যাবে। তা ছাড়া নিয়মিত ক্লাস করা হয় না আমার। এখন থেকে নিয়মিত ক্লাস করতে হবে আর ক্লাসের ফাঁকেফাঁকে সমাজসেবা মূলক কাজ করতে হবে তো।”
শিকদার মির্জা আজ অনেক খুশি বৃষ্টির উপর। কারণ দু বছর ধরে যে মেয়েকে তারা রাজি করাতে পারছিল না। আজ নিজ দায়িত্বে সে মেয়ে কাজ করতে চাইছে।
বৃষ্টি কে চলে যাবার জন্য ইশারা করতেই বৃষ্টি বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে যায়।
ডায়না মির্জা বলে,”এতোটা ছাড় দিও না। যদি পাখি পালিয়ে যায়? ”
শিকদার মির্জা – পাখি খাঁচাছাড়া কখনো হবে না। তাই তাকে মাঝেমধ্যে ছেড়ে দিয়ে দেখতে হয় সে কতোটা পোষ মেনেছে। আর সে যখন নিজে থেকে আগ্রহ প্রকাশ করছে তখন তাকে উৎসাহদান করা আমার দায়িত্ব।
‘
‘
‘
সেদিন রাতে রোদের কাছে অপমানিত হবার পর থেকে রিয়ানা অনেকটা বদলে গেছে। সে আর এখন রোদের আগে পিছনের ঘুরাঘুরি করে না।
সাদিকের সাথে সে তার ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। সাদিক আর রিয়ানা একসাথে পড়ে। মাস্টার্স এর স্টুডেন্ট তার দুজনে। তাই রিয়ানা আর সাদিক অনেকটা ফ্রী বন্ধুর মতো।
এদিকে রিনি এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কিছুদিন পর তাই ফাইনাল পরিক্ষা।তারপর তৃতীয় বর্ষে উঠবে। তিনজন একি ভার্সিটির স্টুডেন্ট এখন।
সাদিক দের বাড়ি আর রিনিদের বাড়ি পাশাপাশি। রাস্তার এপারওপার! তাই তারা তিনজন এখন নিয়মিত একসাথে যাতায়াত করবে বলে ঠিক করে।
রিনি আগে থেকে সাদিকের ভার্সিটিতে পড়ে। তবে সাদিক কখনো রিনিকে সাথে করে নিয়ে যেতো না। আজ কে তার সাথে রিয়ানাও যাবে বলে রাজী হয়েছে।
রিমি মুখ ভেঙ্গচি কেটে বলে,”বাহ দারুণ সাদিক ভাই! এতোদিন আমাকে সাথে নিয়ে ভার্সিটিতে যেতে তোমার সমস্যা ছিলো। কিন্তু রিয়ানা আপু যেই-না আজ যাচ্ছে তখন তাকে নিয়ে যেতে তোমার সমস্যা হচ্ছে না?”
সাদিক রিনির মাথায় জোড়ে টোকা দিয়ে বলে,”হিংসুক মেয়ে একটা। এতোদিন যদি তোকে একা সাথে করে নিয়ে যাতায়াত করতাম। তাহলে লোকে অনেক আজেবাজে কথা বলতো। তবে আজ থেকে তোরা দু জন গেলে আর কেউ কিছু বলবে না।”
রিনি – বুঝি বুঝি আমি সব বুঝি। রিয়ানা আপুর মতো সুন্দরি তোমার সাথে গেলে তোমার তো ভার্সিটিতে ডিমান্ড আরো বেড়ে যাবে। যারা তোমার উপর ফিদা তারা জেলাসি ফিল করবে। তাদের জ্বালানোর জন্য আমাদের সাথে নিচ্ছ তাই তো। ”
রিয়ানা রিনিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আগে ভার্সিটি যাই তারপর না হয় দেখবো তোমার ভাইয়ের ডিমান্ড কেমন। তোমার কথায় কেনো বিশ্বাস করবো?”
রিনি- চলো তাহলে আজকেই প্রমাণ পেয়ে যাবে।
এরপর তিনজন একসাথে বাড়ির গাড়িতে ভার্সিটি উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সাদিক গাড়ি ড্রাইভ করে। সাদিকের পাশে রিয়ানা বসে পেছনের শিটে রিনি একা। সামনে সাদিকের সাথে বসতে না পেড়ে মুখটা গোমড়া করে রাখে। আর পেছনে বসে বসে ওদের
আজারে প্যাচাল শুনতে থাকে। তবে সবটা ভালো লাগতো যদি সে রিয়ানা স্থান বসতে পারতো তাহলে।
এদিকে রোদ বেচারা আজ কয়েকদিন হলো দেশের হসপিটালে জয়েন করেছে। এখানে রোগীদের এতো পেশার যা বলার বাহিরে। রাত-দিন সে সবাইকে সেবাদান করতে গিয়ে একটুতেই হাঁপিয়ে উঠছে। আসছে বিদেশে এতোটা চাপ তার উপর কখনো পড়তো না। এখানে সব কিছু তার একটু অন্যরকম লাগছে। আজ কয়েকদিন তো সে কাজের জন্য ঠিকমতো বাড়িতে যেতে পারে না। বেচারা এখন নিজের নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে একটু চিন্তায় পড়ে গেছে। সত্যি দেশে আশার সিদ্ধান্ত কি ঠিক ছিলো? হয়তো নতুন পরিবেশে কাজ করতে। আর নিজেকে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে তার একটু সময় লাগছে। তবে সমস্যা নেই কিছুদিন পর সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
আজকে রোদের পেশেন্ট কম আছে। তাই রোদ ভেবেছে আজ বাড়িতে ফেরার পথে সে রিনিদের ভার্সিটিতে যাবে সেখান থেকে চারজন একসাথে বাড়িতে যাবে। একটু ওদের সাথে আড্ডা দেওয়া হয়ে যাবে।
(