রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -০৩

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_03

“আতিয়া ইবনাত বৃষ্টি” নামটা রিনির মুখে শুনে রোদের বাড়ির সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। মিসেস খানের হাত থেকে কাঁচের গ্লাস পড়ে ভেঙ্গে টুকরো-টুকরো হয়ে যায়।

রোদ আর রিয়ানা বাড়ির সবার দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে আসলে সমস্যা কোথায়?হঠাৎ করে সবার কি হয়েছে?

রোদ কিছু বলবে তার আগে মিসেস খান বলে,”বাবা মেয়েটার নাম কি ছিল? ”

রোদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”এই বৃষ্টি টাইপের নাম বলেছিল মনে হয়।”

মিসেস খান বৃষ্টির নাম শুনে আর কথা বাড়াই না।
এদিকে এসির ঠাণ্ডা হাওয়ার মাঝে থেকেও রিনির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। এটা দেখে রিয়ানা প্রশ্ন করে এনি প্রবলেম রিনি? তুমি হঠাৎ এমন ঘামছ কেনো?

রিনি দ্রুত নিজের কপালের ঘাম ওড়না দিয়ে মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,”নাহ কোনো সমস্যা নেই।”

মিসেস খান এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে,”অনেক রাত হয়েছে। তোমরা সবাই নিজেদের রুমে ঘুমাতে চলে যাও! আর সাদিক তুই রাতে এখানে থাকবি না বাড়িতে চলে যাবি?”

তখন মিস্টার খান এসে বলে,”এতো রাতে সাদিকের যাবার দরকার নেই। আজ রাতটা এখানে থেকে যাক সে।”

রোদ নিজের রুমে চলে আসলেও তার কেনো জানি সন্দেহ হচ্ছে কোথাও তো কোনো না কোনো সমস্যা আছে। ঐ মেয়েটার নাম শুনে সবাই এতোটা ঘাবড়ে গেলো কেনো? আর হঠাৎ করে রিনির চেহারার রংটা এমন বদলে গেলো কেনো? থাক কাল রিনির থেকে জেনে নিবো।
এমন সময় রোদের দরজাতে কেউ নক করে।

দরজার খুলতেই দেখে রিয়ানা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কথা না বলে সোজা রুমের মাঝে ঢুকে রোদ কে জড়িয়ে ধরে রিয়ানা। কতো দিন পর তোমাকে এতোটা কাছ থেকে দেখছি।

রোদ রিয়ানাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,”দেখ রিয়ানা আমাকে এভাবে হুটহাট জড়িয়ে ধরবি না। আমার এসব মোটেই পছন্দ না। তা তুই ভাল করেই জানিস।”

রিয়ানা রোদের গলা জড়িয়ে ধরে ওর খুব কাছে এসে নেশা ভরা কন্ঠে বলে,” আমি জড়িয়ে ধরলে সমস্যা কোথায়? তোমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার বুকের উপর মাথা রাখাতে অন্যরকম এক শান্তি অনুভব হয়। আর সব সময় তোমার সাথে মিশে থাকতে ইচ্ছা করে তা কেনো বুঝতে চেষ্টা করো না।”

রোদের কেনো জানি রিয়ানার এতো কাছে আশাটা মোটেই সহ্য হচ্ছে না। তাই হুট করে রিয়ানা কে ধাক্কা দিয়ে বিছানাতে ফেলে দিয়ে বলে,”দেখ রিয়ানা আমি তোর সাথে এমন কিছু করতে চাই না যার জন্য পরে পস্তাতে হয়। তাছাড়া বিয়ের আগে এতো ক্লোজ হওয়া আমার মোটেই পছন্দ না।”

রিয়ানা – আজব তো! তোমার আমার বিয়ে আজ না হয় কাল হবেই। তার জন্য এতো আনকম্ফোর্টেবল ফিল করার কি আছে? আমাদের মাঝে যদি গভীর কিছু হয়ে যায় তাতেও তো সমস্যা নেই। ইউ নো আমি কি বলতে চাইছি। বলে লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়।

রোদ ধমক দিয়ে বলে,”বেয়াদব মেয়ে! তুই কি বলতে চাইছিস বুঝতে পারিস? বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক করা মেয়েদের এই সমাজে কি বলে জানিস তো?”

রিয়ানা রোদের সামনে এসে বলে,”বাহিরে কান্ট্রিতে তো বিয়ের আগে এসব কমন বেপার। তারা এসব কে ডাল-ভাত মনে করে। সেখানে তোমার মতো স্মার্ট ছেলের কাছে এতোটা অবহেলা মোটেই মেনে নেওয়া যায় না।”

রোদ রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,” বিদেশে যারা এসব করে তাদের তো রুচি বলে কিছুই নাই। তাছাড়া আমার ওদের মতো জিনা করে পাপের ভাগীদার হবার শখ নেই। আর তোর যদি এসবের দরকার হয় তাহলে অন্য কারো কাছে যেতে পারিস। আমি তোর সাথে বিয়ের আগে কোনো রকমের ব্যভিচারের লিপ্ত হতে পারবো না।”

রিয়ানা – তুমি একটু বেশি বলছো না রোদ ভাইয়া। বিয়ের আগে একজন আরেকজনের কাছে আসলে সমস্যা কোথায়?

সাথে সাথে রোদ কড়া গলায় জবাব দেয়,- বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তোর সমস্যা কোথায়?

রিয়ানা -সারাদিন বিয়ে বিয়ে করো কেন? নিজে তো এখুনি বিয়ে করবে না। কিছুদিন নিজের ক্যারিয়ার কে সময় দিতে চাও। তাহলে দাও নিজের ক্যারিয়ার কে সময়। তুমি আমার অনুভূতি গুলো কখনো বুঝতেই চেষ্টা করো না রোদ ভাইয়া।

রোদ রিয়ানার হাত ধরে রুমের বাহিরে দাঁড় করিয়ে বলে,” তোর এই ফালতু চিন্তা ভাবনা গুলো কে একটু বিশ্রাম দে। নিজের লেখাপড়াতে মন দে। আমার সময় হলে বিয়ে নিজেই করবো তখন তোকে বলতে হবে না। বলেই রিয়ানার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়।”

এদিকে রিয়ানা অপমানিত বোধ করে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে। কান্না করতে করতে সে বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে চলে যায়।

রোদ বিছানাতে এসো সোজা শুয়ে পড়ে মাথার উপর বালিশ চাপা দিয়ে চিৎকার করে বলে, “উফফ কেউ আমার মনের গভীরতা দেখতে পারে না। আমারো যে কিছু ইচ্ছা আছে তার মূল্য নেই কারো কাছে। সবাই বাহিরে কড়া রোদ টাই দেখে আমার মনের আকাশে একটু মেঘ বৃষ্টির দরকার তা কেউ বুঝতে চেষ্টা করে না।”



এদিকে বৃষ্টির হাত ধরে লোকটা সোজা নিচে ড্রয়িংরুমে এনে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ড্রয়িংরুম রুমের চারিদিকে বন্দুক হাতে কালো পোশাক পরিহিত পুরুষ মানুষেরা দাঁড়িয়ে আছে মূর্তির মতো। এদের দেখে আর বৃষ্টির কলিজায় ভয় স্পর্শ করে না।

বৃষ্টিকে এভাবে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলার জন্য সে খুব জোড়ে ব্যাথা পেয়ে আহহহ করে আত্মনাদ করে ওঠে।

এদিকে সেখানে উপস্থিত সকল মানুষেরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কেউ চাইলেও বৃষ্টির সাহায্য করতে পারে না।

লোকটা জোড়ে চিৎকার করে বলে,”এই বেয়াদব মেয়ে তোমার সাথে ঐ ছেলেটা কে ছিলো? যাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়েছিস?”

বৃষ্টি কান্নায় ভেজা কন্ঠে বলে,”আপনি বিশ্বাস করুণ আমি তাকে চিনি না।”

লোকটা – না চিনলে তার সাথে সুইমিং পুলের পাশে কি করছিলে? আমার লোকেরা তোমাকে একটা ছেলের সাথে দেখেছে। এখন যদি আর একটাও মিথ্যা বলেছো তাহলে তোমার কিছু না করলেও তোমার আপন মানুষদের সাথে কি করবো কল্পনাও করতে পারবে না।”

বৃষ্টি এবার জোড়ে কান্না করে বলে,”বিশ্বাস করুণ বা বা আমি তাকে চিনি না। সে হঠাৎ আমার সামনে এসেছিল। তাই বাকি সব পুরুষদের মতো তাকেও শাস্তি দিতে পানিতে ফেলে দিয়েছি এর থেকে বেশি কিছুই না। প্লিজ বিলিভ মি।”

বৃষ্টির চুলের মুঠি ধরে বলে,” আমার বাড়ির সম্মান,সম্পদ তুমি। তোমার জন্য যদি একটু সম্মান নষ্ট হয় তাহলে এর ফল তোমার আপনজনদের ভোগ করতে হবে বলে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়।”

একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা বৃষ্টির পাশে বসে বলে,”তোমার এই জীবন যৌবন পুরোটাই বৃথা।
না কোনোদিন কেউ তোমাকে গ্রহণ করবে না কেউ ভালোবাসার অধিকার পাবে। তাহলে যাও কেনো পুরুষদের আকৃষ্ট করতে?”

মহিলার মুখে এমন কথা শুনে বৃষ্টির নিজের প্রতি প্রচুর ঘৃণা হতে থাকে। সত্যি তো তার এই জীবনের কোনো মূল্য নেই। তবে কেনো সে বেঁচে আছে এই স্বার্থপর দুনিয়াতে? কার জন্য বেঁচে আছে? রোজ রোজ এমন নরকযন্ত্রণা ভোগ করার মানে হয় না। তবে সে এসব ভোগ করতে বাধ্য।

বৃষ্টি এরপরেও আকুতির সুরে বলে,”মা আপনি কেনো এভাবে বলছেন। নিজেও তো একজন মেয়ে। তাহলে আরেকটা মেয়ের সাথে এতোটা অন্যায় করা কি উচিৎ? ”

মহিলা বলে,”কে তোকে বলেছিল এতো রুপ রং নিয়ে জন্ম নিতে? আর জন্ম যখন নিয়েছিস তখন কেনো তা পুরুষের চোখের আড়ালে রাখতে পারিস নাই?”

বৃষ্টি – কারো লোলুপ দৃষ্টিতে আমি পরলে তার দায় কি আমার? আমি একটা সুন্দর জীবনের আশা করেছিলাম তবে এই রুপ রং সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। আমার জীবনের বড় কালো অধ্যায়ের রচিতা আমি।

মহিলা- তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”এতো ড্রামা না করে নিজের রুমে চলে যা। ঐ রুমের মধ্যে গিয়ে তোর নাকের জল,চোখেরজল এক কর কেউ দেখবে না।”

বৃষ্টি সেখান আর এক মূর্হত্ব অপেক্ষা না করে ছুটে নিজের কারাগারে চলে আসে,মানে নিজের রুমে।
রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজার সাথে পিঠ দিয়ে বসে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে।

আমিও তো আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো ছিলাম। তাহলে আমার সাথে সবাই এতোটা অন্যায় করছে কেনো? আমার বিশ্বাস নিয়ে সবাই খেলা করেছে। আমি কি এই অন্ধকার জীবন থেকে বেড়িয়ে একটু শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারবো না?
আমার কি সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নেই?
কেউ কি নেই যে আমাকে একটা সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারবে। নয়তো এই নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি?

(

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here