রোদ বৃষ্টির প্রেম পর্ব -০২

#রোদ_বৃষ্টির_প্রেম
#Nishi_khatun
#part_02

-এই যে মিস্টার রোদ! তা আপনাকে এতো সুন্দর করে পানিতে চুবিয়েছে কে? মেয়েটা কি আমার থেকেও বেশি সুন্দরি ছিলো? যে তাকে জড়িয়ে ধরতে গেছিলে? কিছুটা রেগে কথাটা বলে রিয়ানা।(রিয়ানা রোদের ফুপাত বোন)

রোদ চোখ মুখ কুঁচকে রিয়ানার কথার উওর না দিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায় সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জড করে ড্রয়িংরুমে এসে ধপাৎ করে সোফার উপর বসে পড়ে।

রিয়ানা -বুঝলি রিনি (রিনি রোদের ছোট বোন) আজকাল আমাদের হিরো অন্য নারীর দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে।

রিনি- বলো কি আপি? রোদ ভাইয়া তোমাকে ভুলে অন্য কারো কাছে গেলো কি করে? আর এটা তুমি মেনে নিতে পারলে?

রিয়ানা নেকা কান্না জুড়ে দিয়ে বলতে থাকে, এতোবছর বিদেশে আমাদের সাথে ছিলো।
কিন্তু দেশে আসার আগে উনি পাল্টি খেলেন।
আমরা সবাই দেশে ফিরে আসি কিন্তু উনি ওখানে থেকে যায়। দেশে আসবে সে কথা উনি আমাকে বলেই না। দেশে আসার আগে কি ভাব তার।
আমার সাথে অযথা ঝগড়াঝাঁটি করেছিল।
তখন তো বুঝতে পারি নাই দেশে এসে সোজা তার প্রেয়সীর কাছে চলে যাবে।

এবার রোদ চেঁচিয়ে বলে,”জাস্ট শাট আপ! মাইন্ড ইউরোর ল্যাঙ্গুয়েজ রিয়ানা! তখন থেকে কিসের আজারে নেকামি করছো হ্যাঁ? তোমাকে ভালো লাগে এর মানে এই নয় যে তুমি আমার মাথায় উঠে বসবে।
আমাকে অপমান করার অধিকার কারো নেই।
আর যে মেয়েকে চিনি না, জানি না তাকে বানিয়ে দিচ্ছ আমার প্রেয়সী বাহ দারুণ। ”

রিনি- আচ্ছা ভাইয়া তোমাকে এতোটা রাগতে হবে না। তুমি বলো ওখানে আসলে কাহিনী কি হয়েছিল? না মানে আপু কে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজড। এতো কাহিনী শুরু হলো কি করে? আসলে ভুলটা কোথায় হয়েছে?

রোদ বলে,”আমি এখানে আসার আগে রিয়ানার সাথে ঝগড়া হয়। কেনো আমি দেশে ফিরে আসছি না।
আমি রিয়ানাকে অনেকবার বুঝিয়ে বলেছি দেখ রিয়ানা আমার কিছু কাজ আছে। সেগুলো এখান থেকে কমপ্লিট করে আমি দেশে ফিরতে চাই।
আমি কোনো ভাবে চাই না দেশে গিয়েও কোনো রকম ঝামেলা হোক আমার চাকুরী তে জয়েনিং এ।
আর তা ছাড়া আমি একজন ডাক্তার।
মানুষকে সুস্থ করে তোলা আমার কাজ।
ওখানে কিছু পেশেন্ট ছিল যারা আমার আন্ডারে চিকিৎসা নিচ্ছিল। হুট করে তাদের মাঝ পথে রেখে আসতে পারি না। দেশে এসে সোজা হসপিটালে জয়েন করবো সেই ব্যবস্থা করা, তো অন্য দিকে সব কিছু গুছিয়ে ফিরে আশার পুরো প্রসেসিং টাই ঝামেলাপূর্ণ। এসবের মাঝে কিছুদিন আমার উপর দিয়ে খুব পেশার যাচ্ছিল। তার মাঝে রিয়ানার বায়নার শেষ নেই।
তাই এক দুই কথাতে ওর সাথে আমার ঝগড়া হয়ে যায়। তাই ঝগড়াটা আর মিটমাট করি নাই।
দেশে এসে সারপ্রাইজ দিবো বলে। তাই সব কিছু ঠিকঠাক করে দেশে ফিরে এসে আগে রিয়ানার সাথে দেখা করতে চাই। তখন বাবা-মা বলে তোরা না কি কোথাও একটা পার্টিতে গেছিস। তো আমি তাদের সাথে কথা বলি। তাদের কে বলি রিয়ানা কে সারপ্রাইজ দিতে চাই। সো তোমরা আমার জন্য সেই ব্যবস্থা করে দাও। বাবা মা আমার কথা মতো সাদিক কে বলে। সাদিক সেখানে গিয়ে সব কিছু রেডি করে দেয়।”
(সাদিক রোদের চাচাতো ভাই)

রিনি – ওহ সাদিক ভাইয়াও জানতো তুমি দেশে আসছো! সে তোমাকে সাহায্য করছে। আর আমি বোন হয়ে জানতেও পারলাম না। সব কিছু তো ঠিকঠাক চলছিল তাহলে রিয়ানার স্থানে অন্য কেউ কি করে আসলো?

রোদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। ছেলের চোখে চোখ পড়তেই মিসেস খান চোখটা নিচে নামিয়ে বলে,”আমার কোনো দোষ নাই। যা দোষ তোর বোন রিনির।”

রিনি লাফিয়ে উঠে বলে,”আমি মাঝখানে টপকে পরছি কি কর?”

মিসেস খান চোখ গরম করে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”(রোদের মা) সব দোষ তো তোর।
আমার ছেলেটা বকা খেয়েছে তোর জন্য। আমার ডাক্তার ছেলের মান সম্মান কোথাকার কোন মেয়ে পানি পানি করে দিয়েছে গো।”

রোদ – ওহ মা! প্লিজ তোমাদের ড্রামা বন্ধ করো।

রিনি – মা এসবের মধ্যে আমাকে পেঁচিয়ে ভাইয়ার কাছে বকা খাওয়ানোর ধান্দা করছো কেন?

মিসেস খান- এই তোকে যে বলছিলাম পার্টিতে এসে রিয়ানার একটা ছবি দিতে!তুই কার ছবি দিয়েছিস আমার ফোনে? আমি না দেখেই সে ছবি রোদের কাছে ফরওয়ার্ড করে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।

রিনি নিজের ফোনটা এবার দ্রুত হাতে নিয়ে ইনবক্স চেক করতে শুরু করে।

নিজের ইনবক্স চেক করে রিনি জোড়ে চিৎকার করে ওঠে। আল্লাহ্‌ গোওওওওও!

উপস্থিত সবাই রিনির চিৎকার শুনে ভয় পেয়ে যায়।

মিসেস খান – এই বেয়াদব মেয়ে এতো জোড়ে চিৎকার সবার অ্যাটেনশন নিতে চাইছিস?

রিয়ানা রেগে বলে,”রিনি তুমি আমার ছবি না দিয়ে কার ছবি দিয়েছিলে? ”

রিনি রিয়ানা এবং মায়ের কথায় কান না দিয়ে সোজা ভাইয়ের সামনে বসে পড়ে,কাঁপা কাঁপা কন্ঠি বলে,”ভা-ই-য়া মেয়েটার সাথে কি তুমি কোনো খারাপ কিছু করেছিলে?”

রোদ রিনির দিকে তাকিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে বলে,”মানে কি বলতে চাইছিস? ক্লিয়ার করে বলবি!”

রিনি এবার গলা ঝেড়ে বলে,”না মানে,তুমি কি মেয়েটাকে,হাগ,কিস এসব কিছু করেছো?”

রোদ এবার রিনির গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে,” তোর কি মনে হয় আমি ক্যারেক্টার লেস? যে কোনো মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হাগ,কিস করতে যাবো? আমার সম্পর্কে এসব ভাবার সাহস কে দিয়েছে তোকে?”

রিনি বলে,”না মানে তুমি তো দেশের বাহিরে থেকে তোমার সব লেখাপড়া কমপ্লিট করেছো। তাই হয়তো বাহিরে কান্টির মতো ফ্রি ভাবে রিয়ানা আপু ভেবে হয়তো তার সাথে এগুলো করতে পারো।”

রোদ – দেশের বাহিরে থেকেছি মানে কি আমার চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে? আমি নিজের লিমিট জানি। আর রিয়ানার সাথে আমার সম্পর্ক এতোটা গভীর নয় যে তার সাথে এসব কিছু করতে যাবো।

রিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে যাক বাবা তাও ভাল। তবে মেয়েটা তোমাকে শুধু থাপ্পড় দিয়ে পানিতে ফেলে দিলো? তোমার হাত- পা কোনো কিছুই সে ভাঙ্গলো না এটা কেমন করে সম্ভব?

রোদ দাঁত কিড়মিড় করে বলে,”তুই কি চাইছিলি মেয়েটা আমাকে হসপিটালের জয়েনিং এর আগে সেখানে পেশেন্ট করে পাঠিয়ে দিক? তুই আসলে আমার বোন তো? না কি অন্য কিছু?”

রিনি- আমি তোমার বোন,এখানে কোনো সন্দেহ নেই।তবে তুমি যার সাথে ক্যাচাল করেছ সেই মেয়েটা এতো সহজে তো কাউকে ছেড়ে দেয় না তাই।!

এতো সময় সাদিক চুপচাপ সব কিছু শুনছিল হঠাৎ করে হাত পা ভাঙ্গার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলে,”এই সামান্য ভুলের জন্য রোদ ভাইয়ের হাত পা কেনো ভাঙ্গতে যাবে? আসলে বলতো তুই কার ছবি দিয়েছিলি? ”

রিনি সাদের সামনে নিজের মোবাইল টা ধরতেই সাদ ছবি দেখে বলে,”মেয়েটার তো পেছন সাইড দেখা যাচ্ছে। চেহারা দেখা না গেলে চিনবো কি করে?'”

রিনির এবার গলা শুকিয়ে আসছে। ওর মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বাহির হচ্ছে না। তাই দেখে সকলে নানারকম প্রশ্ন করতে থাকে।
রিনি বেচারি চুপচাপ সবার প্রশ্ন শুনে যাচ্ছে। সে পড়েছে বিশাল টেনশনে। মেয়েটা কে সে কথা যদি সবাই জানে তাহলে এদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে।




বৃষ্টির সামনে একজন পুরুষ মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। যাকে দেখে বৃষ্টি ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে।

– সে বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য গম্ভীর কন্ঠে বলে,”পার্টি থেকে হুট করে এভাবে চলে আসার মানে কি? আর এতো সাহস কে দিয়েছে?”

বৃষ্টি শুকনো একটা ঢোক গিলে বলে,”আমার ওখানে ভালো লাগছিল না তাই চলে এসেছি। তাছাড়া আর কোনো সমস্যা নেই।”

বৃষ্টির সামনে থাকা লোকটা এবার অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”সত্যি কোনো সমস্যা ছিলো না তো?”

বৃষ্টি দু দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে না বোধক সম্মতি প্রকাশ করে। এর সাথে সাথে বৃষ্টির গালে ঠাসসস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় লোকটা। আচমকা এমন কাজে বৃষ্টির চোখ থেকে বিনা মেঘে বৃষ্টি নামতে শুরু করে।

(
”””” চলবে…..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here