#’শ্রাবণ রাতের বর্ষণ’❤
#’লেখিকাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা
#’পর্বঃ ১৫
.
পোশাক আর অলংকার বাছাই করা শেষ হতেই সম্রাট রুদ্র সকলকে আদেশ করেন কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে। কিন্তু দাসীগণ সবাই কক্ষ থেকে বের হলেও রত্নমা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে নিজ জায়গায়। সেদিকে বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন রুদ্র। তবে এতে বিন্দু মাত্র পাত্তা দিচ্ছে না রত্নমা। সে তার মতো করেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এবার বেশ রেগে গেলেন রুদ্র। ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
—” সমস্যা কি তোমার? আমি কক্ষ থেকে বের হতে বলেছি!”
রত্নমা মাথা তুলে তাকিয়ে বিদ্রুপ কণ্ঠে বলে উঠলেন,
—” আমি কেন যাবো সম্রাট? আমি তো আপনার সম্রাজ্ঞী।”
রুদ্র চোখ বন্ধ করে ফেললেন দ্রুত গতিতে। হাত মুঠো করে লম্বা একটা নিশ্বাস টেনে গম্ভীর থেকেও গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,
—” আমাকে রাগাবে না রত্নমা। তুমি আমার সম্রাজ্ঞী নও। সে মর্যাদা আমি তোমাকে দি নি। রক্ষিতা রক্ষিতার মতো থাকবে। নিজের সীমা অতিক্রম করার চেষ্টা করবে না মোটেও। খারাপ কিছু হওয়ার আগেই কক্ষ থেকে বের হয়ে যাও, দ্রুত!”
রত্নমা তাও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে রুদ্র আবারও ধমকে বলে উঠলেন,
—” কি হয়েছে কথা কানে যায় নি?”
রত্নমা কেঁদে উঠল এবার। ন্যাকা কান্না করে বলে উঠল,
—” আপনি এ মেয়ের অগ্রে আমাকে অপমান করছেন সম্রাট? এ সাধারণ মেয়ের জন্য?”
রুদ্র তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হেসে উঠলেন এবার। পরপরই উচ্চস্বরে একজন প্রহরীকে ডেকে উঠলেন। প্রহরী এসেই মাথা নিচু করে অভিবাদন জানালো রুদ্রকে। রুদ্র কঠিন কণ্ঠে বলে উঠলেন,
—” এই নোংরা মহিলাকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও।”
সাথে সাথে ‘না’ শব্দ করে চেঁচিয়ে উঠল রত্নমা। রুদ্র চোখ গরম করে রত্নমার দিকে তাকাতেই সে চুপসে গেল। ‘টু’ শব্দটিও করল না আর। কেননা রুদ্রকে দেখতে ভয়ংকর লাগছে। এখন কিছু বললে কিংবা করলে রুদ্র যে তাকে আস্ত রাখবে না সেটা রত্নমা দৃঢ় ভাবে জানে। চুপচাপ কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলেই রুদ্র তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হেসে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন,
—” সাধারণ কে এবং অসাধারণ কে তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ এতক্ষণে।”
রত্নমা পিছনে ফিরে চন্দ্রার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো একবার। পরপরই রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেল কক্ষ থেকে। রত্নমা বেরিয় যেতেই চন্দ্রার সামনে সটান হয়ে দাঁড়ান রুদ্র। চন্দ্রা এতক্ষণ নির্বাক দেখে যাচ্ছিল রুদ্র আর রত্নমার কান্ড। রুদ্র হঠাৎ করে চন্দ্রার অগ্রে দাঁড়াতেই চমকে যায় চন্দ্রা। পিছু হটতে নিলেই রুদ্র তার বাহু শক্ত করে ধরে ফেলে। এতে ক্রোধিত হয় চন্দ্রা। ক্রোধ মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠে,
—” আমার হাত ছাড়ুন সম্রাট।”
—” কখনোই নয়!”
রুদ্রের কণ্ঠে কিছু একটা ছিল। যাতে বিস্মিত হয় চন্দ্রা। রুদ্রের পানে তাকাতেই দেখে রুদ্র নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মুহুর্তেই অস্বস্থিতে পরে যায় চন্দ্রা। মাথা নিচু করে ফেলে তৎক্ষণাৎ। রুদ্র চন্দ্রার অবস্থা বুঝতে পেরে বাঁকা হাসেন। জানালার অগ্রে চন্দ্রাকে দাঁড় করিয়ে তার পশ্চাতে দাঁড়িয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন। শিউরে ওঠেন চন্দ্রা। নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করতেই রুদ্র চন্দ্রাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন। শান্ত স্বরে বলে উঠেন,
—” উহু! নড়ো না। ভালো লাগছে। অনুভব করো আমাকে।”
চন্দ্রা কেন যেন আর নড়তে পারলো না। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। বেশ কষ্টে বলে উঠল,
—” আমাকে ছাড়তে বলেছি আপনাকে!”
—” আমি ছাড়বো না বলেছি।”
—” আমি আপনার প্রতি বিরক্ত সম্রাট।”
—” আর আমি অনুরক্ত।”
—” অসহ্য!”
—” উহু! সহ্যকর।”
___________________
দিবা হতেই রাজ্যের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক দাস-দাসী এসে হাজির হয় চন্দ্রার কক্ষে। চন্দ্রা বিরক্তি প্রকাশ করেন এতে। নিদ্রা থেকে জাগ্রত হতেই এমন সব কান্ড প্রচন্ড বিরক্তি লাগছে তার। কোনো মতে গম্ভীর কণ্ঠে সকলকে আদেশ দিয়ে ওঠেন চন্দ্রা,
—” আমি একা থাকতে চাই। তোমরা এখান থেকে যেতে পারো।”
তবুও নড়ছে একজনও। সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে৷ এতে আরো বিরক্ত হলেন চন্দ্রা। খানিকটা উচ্চস্বরে বললেন,
—” কি হলো?”
এবার আমতা আমতা করে কিরণ বলে উঠল,
—” আজ আপনার বিবাহ রাজকুমারী। আমরা আপনাকে তৈরি করতে এসেছি।”
চন্দ্রা হঠাৎ-ই চমকে ওঠে। তার তো জ্ঞাতই ছিল না আজ তার বিবাহ। অথচ সে ঘুমানোর আগেও পালানোর পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু এখন কিভাবে পালাবে সে? এত লোকের অগ্রে? গুণে গুণে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন দাস-দাসী হবে। এদের মাঝে কি আদৌ পালানো সম্ভব? প্রশ্নটা নিজেকে নিজে করেও উত্তরটা মিললো না আর। আফসোসের সঙ্গে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো চন্দ্রার। পরপরই মুখশ্রী কঠিন করে চন্দ্রা কিরণের উদ্দেশ্যে বলে উঠেন,
—” তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল কিরণ।”
কিরণ অপ্রস্তুত হয়। নিজেকে সামলে নিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠে,
—” বলুন রাজকুমারী।”
চন্দ্রার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠেন,
—” আমি একান্তভাবে তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই। বাকি সকলকে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলো।”
কিরণ দ্রুত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। পরক্ষণেই সকল দাস-দাসীকে কক্ষের বাহিরে পাঠিয়ে দিলো। এবার চন্দ্রা শয্যা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। কিরণের অগ্রে গিয়ে কঠিন কণ্ঠে বলে উঠলেন,
—” তুমি আমার বিশ্বস্ত দাসী তাই না কিরণ?”
—” আজ্ঞে হ্যাঁ রাজকুমারী।”
—” আমার সকল কথা শুনবে? আমি যা বলল তা করতে পারবে?”
—” অবশ্যই রাজকুমারী। চাইলে আমার প্রাণও আপনার পদতলে বিছিয়ে দেবো।”
এরুপ কথায় বাঁকা হাসলেন চন্দ্রা। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,
—” আমি যা করতে বলব তাইই করতে হবে তোমার। বিনা সম্রাটকে জানিয়ে! পারবে?”
এবার অনেকটা চমকিত হয় কিরণ। কি বলবে তা সম্পর্কে অজ্ঞাত সে। কিরণের উত্তর না পেয়ে চন্দ্রা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলে উঠলেন,
—” দেখেছো কিরণ? বলেছিলাম না তুমি আমার বিশ্বস্ত, প্রাণপ্রিয় কিরণ কখনোই হতে পারবে না। তুমি আমার নয় তোমার সম্রাটের দাসী।”
কিরণ এবার কাতর কণ্ঠে বলে উঠল,
—” এভাবে বলবেন না রাজকুমারী। আমি অবশ্যই আপনার সমস্ত কথা শুনবো। বিনা….বিনা স..সম্রাটকে জানিয়ে।”
এ কথায় প্রসন্ন হলেন চন্দ্রা। লম্বা শ্বাস টেনে বলে উঠলেন,
—” আমাকে এ স্থান থেকে পালাতে সাহায্য করো। বিবাহের আগেই আমি এখান থেকে পালাতে চাই।”
চন্দ্রার কথায় দু কদম পিছিয়ে গেল কিরণ। চোখে জল এনে বলে উঠল,
—” দয়া করে এরুপ কথা বলবেন না রাজকুমারী। ইহা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। সম্রাট জানলে আমাকেসহ আমার পরিবারেরও ক্ষতি করবেন।”
চন্দ্রা হতাশ কণ্ঠে বলে উঠলেন,
—” তাহলে তুমি আমাকে সাহায্য করবে না?”
কিরণ কোনোরুপ উত্তর দিতে পারলো না এবার। তবে পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠল,
—” কিরুপ সাহায্য চাই তোমার চন্দ্রা? পালাতে চাইছো নাকি? তাহলে বলো আমিই সাহায্য করছি। কি করবো সাহায্য?”
চন্দ্রা চমকে উঠে পাশে তাকাতেই দেখতে পান রুদ্র দাঁড়িয়ে আছেন। একেবারে বিয়ের পোশাক পরে আছেন তিনি। মাথায় পাগড়ী, কোমড়ে তলোয়াড় আর মুখে বাঁকা হাসি। চন্দ্রা মুখ ফিরিয়ে নিলেন আবার। রুদ্র চন্দ্রার কাছে এসে দাঁড়ালেন। চোখের ইশারায় কিরণকে যেতে বলতেই সে চলে যায় কক্ষ থেকে। রুদ্র এবার চন্দ্রার আরও কাছে এসে দাঁড়ান। কানে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠেন,
—” উত্তর দিলে না যে? পালাতে সাহায্য করব আমি?”
চন্দ্রা প্রবল ক্রোধে বলে উঠেন,
—” আপনার সাহায্য চাই নি আমি। দয়া করে দূরে সরে দাঁড়ান।”
—” উহু, দাঁড়াবো না।”
বলেই রুদ্র এবার পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলেন চন্দ্রাকে। শক্ত করে! চন্দ্রা বিরক্তি প্রকাশ করলেন। তবে নিজেকে ছাড়ানোর কোনোরুপ চেষ্টা করলেন না। রুদ্র শান্ত কণ্ঠে মৃদু ভাবে বলে উঠলেন,
—” কিছুক্ষণ পর তুমি চিরদিনের জন্য আমার হয়ে যাবে চন্দ্রপ্রভা। শুধুই আমার।”
—” আপনার দুঃস্বপ্ন এটা সম্রাট। আমি কখনোই আপনার হবো না।”
এমন কথায় রেগে যান রুদ্র। নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে বলে উঠেন,
—” তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না?”
চন্দ্রার সোজাসাপ্টা উত্তর,
—” না!”
রুদ্র তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হাসলেন এবার। চন্দ্রার কানে ঠোঁট লাগিয়ে মৃদু স্বরে বলে উঠেন,
—” তোমার রাজ্য কিন্তু এখন আমার দখলে চন্দ্রা। তোমার একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তারা কিন্তু কষ্ট পাবে। এবং হ্যাঁ, নিভৃতরাজ্যের বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কথা স্মরণ আছে নিশ্চয়ই। যারা তোমাকে আশ্রয় দিয়েছিল! তারাও কিন্তু আমার কাছে বন্দী চন্দ্রা। তাদেরও ক্ষতি করতে দ্বিধাবোধ করব না আমি। এখন সিদ্ধান্ত তোমার। আমাকে বিয়ে করবে কি না?”
জলে চোখ ভরে এলো চন্দ্রার। বুক ফেঁটে কান্না আসতে চাইলো। তবুও সেটা অনেক কষ্টে দমন করলেন চন্দ্রা। কঠিনতার সঙ্গে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে উঠলেন,
—” আপনি অনেক নিষ্ঠুর, পাষাণ, অমানুষ। আপনি সম্রাট হওয়ার যোগ্য নন।”
রুদ্র এবারও নির্লজ্জের মতো হেসে বললেন,
—” আমার থেকে একথা আর কে বেশি জানবে চন্দ্রা? যাই হোক, আমার উত্তর কিন্তু ইহা নয়। দ্রুত উত্তরটা দাও নতুবা প্রহর যত অতিবাহিত হবে আমি বিভিন্ন ভয়ংকর পন্থা তাদের জন্য ততই প্রয়োগ করব।”
চন্দ্রা চুপ করে রইলেন। বার কয়েকবার শুকনো ঢোক গিললেন। চোখ থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরার সাথে সাথে বলে উঠলেন চন্দ্রা,
—” আমি রাজী।”
চন্দ্রার এ কথায় হয়তো খুশি হয়েছেন রুদ্র। তবে প্রকাশ করলেন না কিছু৷ মুখ গম্ভীর রেখে চন্দ্রাকে ফিরালেন নিজের দিকে। দু’হাত দিয়ে চন্দ্রার দু’গালে গড়িতে পড়া জল মুছে দিলেন। চন্দ্রার মৃদু স্বরে বলে উঠেন,
—” আমাকে বিবাহ করলেও মন থেকে আমি কখনই আপনার হবো না রুদ্র। আপনি আমার পিতা-মাতার হত্যাকারী। নিষ্ঠুর, নির্দয় সম্রাট!”
রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে চন্দ্রার কপালে কপাল ঠেকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলেন,
—” তাহলে নিজের ভালোবাসা দিয়ে বদলে দাও এই আমিটাকে। কথা দিচ্ছি বদলে যাবো।”
চন্দ্রার কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন,
—” আর আমার পিতা-মাতা? তাকে ফেরত আনতে পারবেন আপনি?”
—” আমি তাদের হত্যা করিনি চন্দ্রা। প্রমাণটা বিয়ের পরেই দেবো তোমাকে।”
আর কোনো কথা হলো না দু’জনের মাঝে। শুধু শোনা গেল একে অপরের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ।
____________________
সব রিতিনিতি মেনে বিবাহটা অবশেষে হয়েই গেল চন্দ্রা এবং রুদ্রের। যখন রুদ্র চন্দ্রার সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দিচ্ছিলেন চন্দ্রার তখন কান্নায় ভেঙ্গে পরেছিলেন। রুদ্র সেদিকে মুখ শক্ত করে তাকিয়ে ছিলেন মাত্র। তবে কান্না মাঝেও একটা জিনিস খেয়াল করেছেন চন্দ্রা। উৎসবের কোথাও রত্নমাকে দেখতে পান নি তিনি। রুদ্রকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলেন চন্দ্রা, কিন্তু তার আগেই রুদ্র বিবাহের পরপরই কয়েকজন সৈনিককে ডেকে আনেন উৎসবে। তাদের দেখে সবাই চমকিত হয়। কেননা সৈনিকের সঙ্গে রত্নমাও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আসছেন তাদের সঙ্গে। পোশাকের কিছু কিছু স্থান ছেঁড়া তার। বিষণ্ণতা ছেঁয়ে আছে পুরো মুখে। উপস্থিত সবার মুখে বিস্ময়ের ভাব। অথচ রুদ্রের মুখে বিরাট হাসি। রত্নমা চন্দ্রা ও রুদ্রের অগ্রে দাঁড়াতেই রুদ্র কঠিন কণ্ঠে বলে ওঠেন রত্নমাকে,
—” সত্যিটা কি তুমি এখন বলবে নাকি শাস্তি পাওয়ার জন্য কাল রাত্রির মতো তোমাকে আবারও কারাগারে পাঠাবো?”
রুদ্রের এরুপ কথায় খানিকটা কেঁপে উঠল রত্নমা। ভাঙ্গা গলায় চন্দ্রাকে বলে উঠল,
—” আমাকে ক্ষমা করবে চন্দ্রা। আমি মিথ্যা বলেছিলাম তোমাকে। তোমার পিতা-মাতা বেঁচে নেই সত্য, তবে তাদের সম্রাট হত্যা করেন নি।”
রত্নমা এতটুকু বলে থামলো। লম্বা একটা শ্বাস টেনে আবারও বলল,
—” তুমি যখন তোমার রাজ্য থেকে পালিয়ে গিয়েছিলে তখন যুদ্ধে তোমার পিতা তার একটি পা হারিয়ে ফেলেন। পায়ের অসহ্য যন্ত্রণায় তিনি একদিন পরই মারা যান। তোমার
পিতার মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে পরে তোমার মাতাও মৃত্যু বরণ করেন….. চন্দ্রা! তোমার মাতা-পিতার মৃত্যুর পেছনে সম্রাটের কোনো দোষ ছিল না। তিনি নির্দোষ।”
চন্দ্রা অবাক হয়ে রুদ্রের পানে তাকালো। রুদ্র তারই দিকে বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছেন। যেন তার খানিকটা বাদামী আর নীলাভ চোখ দু’টো ইশারায় বলছে- “আমি জিতে গেছি চন্দ্রা। তুমি হেরে গেছো এ রণক্ষেত্রে।” কিন্তু পরপরই রুদ্রের সারা মুখে কঠিনতা বিরাজ করে। রুদ্র রত্নমাকে ধমকে বলে উঠেন,
—” কেন করেছিলে তুমি এমন? সত্য বলবে নতুবা তোমার গির্দান কেটে দেবো আমি।”
রত্নমা আমতা আমতা করে বলল,
—” সত্যি বলছেন তো? আমাকে হত্যা করবেন না আপনি?”
—” একবার বলেছি আমি। শুনতে পাও নি?”
আবারও ধমকে উঠলেন রুদ্র। রত্নমা কিছুক্ষণ পরপর হাত কচলাচ্ছে ভয়ে। অবশেষে ভয় কে জয় করে মৃদু স্বরে সে বলে উঠল,
—” আমার শুরু থেকেই চন্দ্রাকে পছন্দ ছিল না। আমার মনে হচ্ছিল ও আমার কাছ থেকে আপনাকে ছিনিয়ে নেবে। তাই ওকে আপনার থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করতে থাকি আমি। এবং ওর পিতা-মাতাকে আপনি হত্যা করেছেন সেকথা নানাভাবে চন্দ্রাকে বিশ্বাস করানো চেষ্টা করি। পরিকল্পনা মতে চন্দ্রাও আমার কথা বিশ্বাস করে। ভেবেছিলাম চন্দ্রা আপনাকে ঘৃণা করলে আপনিও রেগে চন্দ্রাকে দূরে ঠেলে দেবেন। সেই সুযোগে আমি তাকে রাজ্য থেকে মুক্ত করার নামে ওকে হত্যা করব। কিন্তু……”
কথাটা শেষ করতে পারলো না রত্নমা। তার আগেই তার ছোট ছোট চুলের মাথাটি এবং শরীর দু’খন্ড হয়ে পরে গেল স্থলে। বিস্ময়ে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল সবার। রুদ্র বাঁকা হেসে রত্নমার অগ্রে হাঁটু গেড়ে বসে পরলেন। রত্নমার পোশাকে তলোয়াড়ে লেগে থাকা রক্ত মুছতে মুছতে ভাবলেশহীন ভাবে বলে উঠলেন,
—” দুঃখীত রত্নমা। রুদ্র তার কথা কখনোই রাখে না।”
.
____________চলবে_____________
Romana Akter Nishe, Nupur Aktar, Promi Montaha, সহ আরও অনেকের কমেন্ট দারুণ ছিল❤
Ishanur Tasmia