শ্রাবণ রাতের বর্ষণ পর্ব ৯

#’শ্রাবণ রাতের বর্ষণ’❤
#’লেখিকাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা
#’পর্বঃ ০৯
________________

শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় রাত এটি। রাজপ্রাসাদের বাহিরে দমকা হাওয়া বইছে বিরতিহীন ভাবে। কিছুক্ষণ পর প্রবল আকারে আকাশ থেকে স্থলে বৃষ্টির আনাগোনা শুরু হয়। সেই সাথে রাজপ্রাসাদের চারদিক ছেঁয়ে যায় ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশে। শয্যায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকা চন্দ্রা খানিকটা উষ্ণতা পাওয়ার লোভে আরও কুঁকড়িয়ে হাত-পা গুটিয়ে নিলেন। ঠোঁট দু’টো কেমন করে নড়ছে তার। যেন কিছু বিড়বিড় করে বলছেন। একদম নবজাত শিশু লাগছে দেখতে। চন্দ্রার এরুপ রুপ দেখে রুদ্র নিঃশব্দে মুখভর্তি হাসেন। এক হাতে মাথা চুলকে পরক্ষণেই শয্যার শেষ প্রান্তের একদম কোণ ঘেঁষে থাকা চাদর চন্দ্রার শরীরে জড়িয়ে দেন। এসময় জোড়েজোড়ে বিদ্যুৎ চমকে উঠে। চন্দ্রা ঘুমের মাঝেই অনেকটা কেঁপে ওঠেন। নিজ শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া রুদ্রের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন। রুদ্র বিস্মিত হয়। নড়েচড়ে বসে। হাত ছোঁটানোর চেষ্টা করতেই চন্দ্রা আরও শক্ত করে রুদ্রের হাত নিজের সাথে আবদ্ধ করে নেয়। রুদ্রের কেন যেন আর ইচ্ছে হলো না হাত ছাড়ানোর। এক হাত গালে রেখে চন্দ্রার দিকে খানিকটা ঝুঁকে তার দিকে তাকিয়ে রইল সে। মনে হচ্ছে যেন সারারাত চন্দ্রার সৌম্য মুখশ্রী দেখেই পার করে দেবেন সম্রাট রুদ্রদীপ।

__________________

প্রভাতের প্রথম কিরণ মুখে এসে পরতেই ভ্রু কুঁচকে চোখের অগ্রে হাত রাখলেন চন্দ্রা। আড়মোড়া ভেঙ্গে পাশ ফিরতেই বিস্ময়ের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পরেন তিনি। রুদ্র কেমন উবু হয়ে শুয়ে তারই দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে আছেন। এরুপ কান্ড চোখের সামনে দেখে কি হয়েছে বুঝতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগে যায় চন্দ্রার। পরপরই বুঝতে পেরে দ্রুত শয্যা ছেড়ে উঠে দাঁড়ান চন্দ্রা। কক্ষের আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। না! – এ কক্ষ তো তার নয়। চন্দ্রার স্পষ্ট মনে আছে তিনি তার কক্ষের শয্যায়ই ঘুমিয়েছিলেন রাতে। তাহলে এখানে এলেন কিভাবে? রুদ্র এনেছেন তাকে? প্রশ্ন দু’টো মস্তিষ্কের নিউরনে পৌঁছাতেই চট করে শয্যায় শুয়ে থাকা রুদ্রের পানে তাকালেন চন্দ্রা। ইতিমধ্যে রুদ্র ঘুম থেকে উঠে পরেছেন। চোখ খুলে পাশে চন্দ্রাকে না পেয়ে দ্রুত শোয়া থেকে উঠে বসলেন রুদ্র। আশেপাশে তাকাতেই নিজ অগ্রে চন্দ্রাকে বিচলিত অবস্থায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলেন রুদ্র। পরক্ষণেই ভ্রু ক্রুটি করে বলে উঠলেন,

—” ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? এদিকে আসো।”

চন্দ্রা সামান্য ঢোক গিললেন। প্রায় অনেকটা সময় লাগিয়ে ধীর পদে রুদ্রের নিকটে এসে দাঁড়ালেন। সঙ্গে সঙ্গে আবিষ্কার করলেন রুদ্রের শরীরের উপরিভাগ বিবস্ত্র৷ চট করে নিজের পোশাকের দিকে তাকালেন চন্দ্রা। না! পোশাক তো ঠিকই আছে তার। তাহলে রুদ্র এমন বিবস্ত্র কেন? তাদের মধ্যে রাতে কিছু হয়েছিল নাকি? ভাবতেই খানিকটা কেঁপে কেঁপে উঠলেন চন্দ্রা। রুদ্র তখনও ভ্রু কুঁচকে আছেন। চন্দ্রার হাতের দিকে তাকিয়ে তার হাতের ওপর নিজের হাত রেখে স্বাভাবিক হলেন। শান্ত স্বরে চন্দ্রাকে বললেন,

—” কাঁপছো কেন? আমাকে ভয় পাচ্ছো বুঝি? ভয় নেই। কিছু করব না তোমাকে। না কিছু করেছি এখনও। শুধুমাত্র নিজের কক্ষের শয্যায় তোমার পাশে শুয়ে ছিলাম। এর বেশি কিছু না।”

চন্দ্রার ঠিক বিশ্বাস হলো না কথাটা। রুদ্রের মতো চরিত্রহীন ব্যক্তি কি-না বলছে সে কিছু করে নি। এটা অন্ততঃ মানা সম্ভব নয়। রুদ্রের প্রতি প্রবল সন্দেহ হচ্ছে চন্দ্রার। সন্দেহ কাটাতে আমতা আমতা করে বলে উঠল সে,

—” তাহলে আপনার বুকের বস্ত্র কোথায়?”

রুদ্র শব্দ করে হেসে উঠলেন এবার। হাসতে হাসতে বলে উঠলেন,

—” আমার অভ্যাস এটা। রাতে বুকের বস্ত্র খুলে ঘুমানো। তুমি বিশ্বাস করতে পারো আমাকে। বিবাহের আগ অব্দী কিছু করব না তোমায়।”

শেষের কথাটা ঠিক শুনতে পেলেন না চন্দ্রা। তার আগেই চট করে বলে উঠলেন,

—” তাহলে আমাকে আপনার কক্ষে এনেছেন কেন?”

—” তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল খুব, তাই।”

চন্দ্রা এবার উত্তর দিলেন না। কিছু একটা ভাবলেন মনোযোগ সহকারে। রুদ্রকে কি তার বিশ্বাস করা উচিত? নাকি না? রুদ্র যদি তাকে মিথ্যে বলে? তার সাথে কাল রাতে অনেক কিছু করেও যদি অপরাধ শিকার না করে? ভাবতেই নিজেকে কেমন গলা কাটা মুরগির মতো মনে হতে শুরু করে চন্দ্রার। কেমন অস্বস্তি লাগতে শুরু করে। পরপরই মনে হলো, তার পোশাক তো ঠিকই আছে। অর্থাৎ সে রুদ্রকে এক বিন্দু হলেও বিশ্বাস করতে পারবে। তবে সত্যিই যদি কাল রাতে কিছু হয়ে থাকে তাহলে চন্দ্রা জ্যান্তলাশ হয়ে পরবেন। আর যদি রুদ্রের বলা প্রত্যেকটা কথা সত্যি হয় তাহলে নিজেকে কখনই রুদ্রের কাছে সমর্পণ করবে না সে। কখনই না!

চোখ তুলে রুদ্রের দিকে একবার তাকালেন চন্দ্রা। রুদ্র এখনও তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন। হাতে কিছু প্রহর নিয়ে রুদ্রের চোখে গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন চন্দ্রা। তবে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলেন না। চোখ নামিয়ে নিলেন। ভাবতে লাগলেন, রুদ্রের চোখ দেখে তো মনে হচ্ছে তিনি মিথ্যে বলছেন না। তাহলে কি চন্দ্রার রুদ্রের কথায় পুরোপুরি বিশ্বাস করা উচিত? পরপরই আরেকটা প্রশ্ন মাথায় এঁটে গেলো চন্দ্রার। রুদ্র কিছু বলার আগেই বলে উঠল সে,

—” আমার পিতা-মাতা কি আর বেঁচে নেই সম্রাট?”

রুদ্র চমকান। বিস্ময় নিয়ে তাকান চন্দ্রার দিকে। বড় একটা ঢোক গিলে খানিকটা তোতলিয়ে বলে উঠেন,

—” হ…হাঃ! ”

চন্দ্রা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এবার রুদ্রের দিকে তাকান। চোখ-মুখ শক্ত করে বলে উঠেন,

—” আমার পিতা মাতাকে কি আপনি হত্যা করেছেন?”

সঙ্গে সঙ্গ জবাব দিলেন না রুদ্র। চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে রইলেন প্রায় অনেক্ষণ। চন্দ্রাও রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছেন উত্তরের আশায়। বেশ কিছুক্ষণ পর গম্ভীর কণ্ঠে রুদ্র বলে উঠেন,

—” কে বলেছে তোমাকে এগুলো?”

—” সেটা পরেও জানা যাবে। আমি শুধু আমার উত্তর চাই।”

রুদ্র ভ্রু ক্রুটি করে তাকালেন। আগের স্বরে বলে উঠলেন,

—” আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি।”

চন্দ্রা যেন থমকে যান। ছলছল নয়নে রুদ্রের দিকে তাকান। কিছু বলার শক্তি নেই তার মাঝে। কণ্ঠস্বর রোধ হয়ে আসছে। বোধশক্তি শূণ্য হয়ে গেছে। আগে তো একটু হলেও আশা ছিল, যে হ্যাঁ তার পিতা-মাতা হয়তো বেঁচে আছেন। রত্নমা হয়তো মিথ্যা বলছেন। কিন্তু সে ভুল ছিল। রুদ্রকে সে এখনও চিনতে পারে নি। মানুষ রুপি অমানুষকে চিনতে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে তার।

.
.
________________চলবে______________
[ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। রি-চেক করিনি। তাই ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

Tashfiah Islam, Ishita Das, Mohammad Rafiqul Islam Ratul সবাইকে অনেক অনেক থ্যাংকিউ।]
Ishanur Tasmia

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here