#আমার_হৃদমাঝারে_তুমি_প্রিয়
#পর্বঃ৫
#Sohana_Akther
দরজা খুলে নিহানের বন্ধু রিনি ও আকাশ ভিতরে ঢুকে আসলো । তারা হয়তো ভাবছে এই মেয়ে এখানে কি করে । তারা আমার দিকে প্রশ্নাতীত চোখে তাকিয়ে আছে । তখন রিনি বললো ,
” এই মেয়ে তুমি এখানে কি করছো, এই এরিয়া যে সিনিয়রদের জানো না তুমি ” ।
” আহহ রিনি থামতো কি হয়েছে যে সে এখানে এসেছে , এই রুম তো আর আমাদের পার্সোনাল রুম না ভার্সিটিরই আর নিরা এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট ” ।
আকাশের কথা শুনে রিনি মুখ কালো করে ফেললো জবাবে সে এমন ভঙ্গি করলো যেনো আকাশের কথায় অনেক বিরক্ত হচ্ছে ।
” আচ্ছা তুমি বললে না এখানে হঠাৎ কি করে কোনো কাজ ছিল ” ।
নিহানের কথা ওদেরকে বলা যাবে না কি না কি মনে করে বসে তাই কথা কাটিয়ে বললাম ,
” আসলে ভাইয়া আমি এইদিক টা ঘুরে দেখছিলাম , ঘুরতে ঘুরতেই এই রুমে চলে আসলাম । সরি আমি এখনি চলে যাচ্ছি বলে ওদেরকে আর কিছু বলাল সুযোগ না দিয়ে আমি চলে আসলাম । এমনিতেই ঐ নিহান পেঁচার কারণে মেজাজ চরম খারাপ হয়ে আছে তার উপর তাদের এই ইনকোআইরি উফফ বাবাহ ।
গেইট দিয়ে বের হওয়ার সময় আবারো ছেলেটি বেলী ফুল নিয়ে আসলো কিন্তু আজ রাগের চোটে ছুঁড়েফেলে দিলাম ফুলটি যেয়ে কারোর পায়ের নিচে পরলো চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলাম সে আর কেউ না নিহান । কেমন করে যেনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি চুপ করে সেখানেই দাড়িয়ে রইলাম । হয়তো নিহান কিছু বলতে চেয়ে ছিল কিন্তু তার বন্ধু রিজভী এসে তাকে তাড়া দিয়ে নিয়ে গেল ।
ওদের যাওয়ার পর পার্কিং এর দিকে নিহানের গাড়ির দিকে নজর পরলো । যতোটুকু জানি নিহান থার গাড়ি দিয়েই চলাফেরা করে , রাগটা আবার মাথায় চওড়া করলো । ক্যান্টিনে যেয়ে একটা জুস আর সসের বোতল কিনে নিহানের ড্রাইভিং সিটে একদম ঢেলে দিলাম ।
” লে বেটা আব আয়েগা মাজা , আমায় জ্বালানো এবার দেখি কি করিস তুই আহহ কি যে শান্তি ” এই বলে পিছনে ফিরে দেখি নিহান আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে । গম্ভীর কন্ঠে বললো ,
” কি ব্যাপার এভাবে একা একা দাড়িয়ে কথা বলছো কেনো চোখের সাথে এবার মাথাটাও গেল নাকি ”
এই বলে হাসতে লাগলো , হাসতে হাসতেই তার নজর তার গাড়ির ভিতরে গেল দেখলো কি বাজে অবস্থা হয়ে আছে সিট । রাগি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেই আমি কিছু না বলে এক দৌড়ে গেইটের বাহিরে চলে আসলাম । যাক বাবা বাচা গেল না জানি পরে আবার কি করে ।
এই মেঘলা দিনে দিনে
একলা ঘরে থাকে না তো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ……
বারান্দায় দাড়িয়ে গুনগুন করে গান গেয়ে যাচ্ছি , আজ রাতেও বাহিরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে । এই অন্ধকার রাতে কিছু দেখা না গেলেও বাহিরে দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো । বৃষ্টিকে কেনো যেনো আমার অনেক আপন মনে হয় । বৃষ্টি হলেই আমার সকল মন খারাপ এক নিমিষেই ভালো হয়ে যায় । রিয়া বলে বৃষ্টি নাকি আমার মন খারাপের ঔষুধ । হঠাৎ হাতের মোবাইলটি বেজে ওঠলো , সেই নাম্বার থেকে কল এসেছে । কল রিসিভ করে কানে দেয়ার পর অপর পাশ থেকে কেউ একজন গান গেয়ে ওঠলো । আশ্চর্যের বিষয় হলো আমি এতক্ষণ যেই গানটি গাচ্ছিলাম অপর পাশ থেকেও ঐ একই গান গাচ্ছে । কি মন জুড়িয়ে যাওয়া মধুর কন্ঠ তার ।
আমি হ্যালোহ্যালো বলতে লাগলাম কিন্তু অপর পাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসছে না এখন হঠাৎ চুপ হয়ে গেল কন্ঠটি তার কয়েক সেকেন্ড পরেই কল কেটে দিল মধুর কন্ঠধারী লোকটি । কে হতে পারে এই লোক কি উদ্দেশ্যে তার । এসব আর না ভেবে শুয়ে পরলাম ।
এরপর দুইদিন ধরে আমি ভার্সিটিতে যাই নি ।
বলতে গেলে ভয়েই যাইনি , ঐদিনের জন্য নিহান না জানি কি শাস্তি দেয় আমায় এই ভয়ে ।
” ওহহহ নিরা গাধী একটা তুই কেনো যে তার সাথে পাঙা নিতে গেলি এখন বোঝ মজা , ইউ ইডিএট , ডাফার ” । নিজে নিজেই বকতে শুরু করলাম ।
দুইদিন পর আমি প্রিয়া ও রিয়া তিনজনে একসাথে কলেজে গেলাম । ক্লাস শেষে আমরা বট তলায় বসে একে অপরকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছিলাম । ঐদিন প্রিয়া কলেজে আসেনি কারণ তাকে ছেলে পক্ষ দেখতে এসেছিল এই নিয়ে কথা বলছিলাম ।
” দেখে নিস প্রিয়া তোর বর তোকে দিয়ে সব কাজ করাবে ঘরের , তার চাকরানী হয়ে থাকবি তুই ” ।
” মোটেও আমার বর এমন হবে না হবে তো তোর বর ”
” আমি বিয়েই করবো না কখনো ”
” বললেই হলো নাকি তুই বিয়ে করতে না চাইলে তোর হবু বর তোকে ওঠিয়ে নিয়ে যেয়ে বিয়ে করবে মিলিয়ে নিস আমার কথা ” এই বলে রিয়া ও প্রিয়া একজন আরেকজনের উপর ঢলে পরে হাসতে লাগলো ।
কলেজে এসে আরেকটি ঘটনা শুনলাম কে যেনো রিদানের হাত ভেঙে দিয়েছে । কয়েক জন লোক মিলে নাকি তাকে মেরে তার হাত ভেঙে চলে গেছে । আমার হঠাৎ নিহানেরকথা মনে পরলো সে করেনি তো এমন টা।
পরে আবার নিজেকে নিজেই বুঝিয়ে বললাম নিহান কেনো এমন করবে তার রিদানের সাথে কি শত্রুতা । এসব ভাবতে ভাবতেই নজর পরলো আমাদের দিকে এগিয়ে আসা ঐ ছোট ছেলেটি ।
ছেলেটি এসে বেলী ফুলের মালা হাতে দিয়ে দৌড়ে চলে গেল । আজ একটির জায়গায় দুটি বেলী ফুলের মালা সাথে করে একটি নীল চিরকুট আজ নতুন করে সংযুক্ত হলো । চিরকুটে গোটা গোটা কয়েক অক্ষরে লেখা …….
চলবে…..