এখানে আকাশটা ভালোবাসার পর্ব ২০

#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ২০
.
“আমার পছন্দ আছে কিনা সে তো তুমি জানো আম্মু”
“তবুও জানতে চাইছি”
“না মা”
“মা তোর বাবার কাছে একটা প্রোপোজাল এসেছে।”
“ও আচ্ছা”
“জানতে চাইছিস না যে কিছু?”
মায়ের কথায় হেসে ফেলল নওশি।
“হাসছিস কেন?”
“আম্মু আমি তোমাদের প্রিয় মানুষ, আর প্রিয় কিছুকে কেউ অপ্রিয় জায়গায় দেয় না। আর তোমরাও দিবে না এই বিশ্বাস আমার আছে। তাহলে কেন আমি শুধু শুধু চিন্তা করব!”
মেয়ের কথা শুনে হতবাক হয়ে যান জাহরা। মাকে চুপ থাকতে দেখে নওশি আবার বলে,
“আম্মু শোন, তোমরা যেখানে যেভাবে যার কাছেই দিবে আমি তাকেই হাসিমুখে বিয়ে করব, দেখতে না জানতে চাইব না, হয়তো অনেকের কাছে এটা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে কিন্তু আমার মতামত এটাই”
“তোর বাবার বন্ধু ইরফান সাহেবের ছেলে ঈশান। সরকারি কলেজে জব করে, খুব ভাল ছেলে। তোর বাবার খুব পছন্দ”
“বেশ তো”
“তিন ভাইবোন ঈশানরা। তোর বাবার মুখে শুনলাম ছেলেটা বেশ ভাল। ভদ্র ছেলে। তোর বাবার কিন্তু পছন্দ হয়েছে। তোর বাবার উপর আমার ভরসা আছে। তোর কোনো অমত নেই তো মা”
“না মা তোমরা যা করবে তাতেই আমি রাজি”
“আচ্ছা মা পড় তাহলে”
“ওকে”
মা চলে গেলে নওশি মাথা থেকে ঈশান শব্দটা ঝেড়ে ফেলতে পারছে না কিছুতেই।
জাহরা খুব খুশি হলেন। মেয়েকে নিয়ে তার খুব গর্ববোধ হচ্ছে। ভাবেননি মেয়ে এত সুন্দর করে উত্তর দেবে।
খুব ভালো লাগছে তার।
নওশির বাবা শুনলে খুব খুশি হবে। নিশিকা এই সময়টাতে থাকলে খুব ভালো হত। ঈশানের সম্পর্কে সবকিছু নওশিকে বলতে পারত। তিনিও পারবেন।
তবে মা তো…. নওশির হয়তো কিছু জানতে ইচ্ছে হলেও প্রশ্ন করতে পারবে না। হাজার হলেও বিয়ের ব্যাপার তো! জাহরা একপ্রকার ধরেই নিয়েছেন বিয়েটা হবে।
“দা…দা…দা..” মায়ার আধোবোলে চমক ভাঙলো জাহরার।
ছুটে গেলেন মায়াকে নিতে। মায়ার মা আজ নিয়ে যায়নি। জাহরা একজন মা হিসেবে মনে করেন মায়ের উচিত সন্তানকে কাছে রাখা।
কিন্তু রিদিমা আজ খুব ব্যস্ত থাকবে বলে নিলো না মায়াকে। কি জানি বুঝতে পারেননা তিনি।
মায়াকে বড্ড ভালবাসেন জাহরা। শুধু জাহরা না সবার মধ্যমনিই মায়া।
.
“রিদিমা তোমার সিদ্ধান্ত বদলাবে না তো?”
“না আরিফ” আরিফের হাতটা শক্ত করে ধরে রিদিমা। কেন যেন আরিফের মাঝে এক নির্ভরতা খুঁজতে শুরু করেছে সে। তবে কি এই প্রথম সে সত্যিকারের ভালবাসছে? হতে পারে। তবে রিদিমার আরিফকে চাই, নিজের বিজনেস বাড়াতে চাই… সবই চাই। যে কোনো মূল্যে।
“আর তোমার মেয়ে? মানে মিঃ সায়ানের মেয়ে কোথায় থাকবে?”
বুক কেঁপে ওঠে রিদিমার। মায়ার মুখ ভেসে উঠল তার মনে।
“আরিফ মায়া আমাদের কাছে থাকুক”
আরিফ রিদিমার নরম কন্ঠ শুনে বুঝে গেছে রিদিমা এখন আরিফের নেশায় ডুবে গেছে। তাই সে শক্ত কন্ঠে বলে,
“বাচ্চা কি আমাদের হবে না? খামোখা অন্যের বাচ্চা নিয়ে কেন টানাটানি আমি করব রিদিমা। আইনের ঝামেলা। আরে বাদ দাও তো!”
চমকে ওঠে রিদিমা। উত্তর খুঁজে বেড়ায় মনের মাঝে। কিন্তু কোনো উত্তর পায় না সে।
“রিদিমা দেখ প্লিজ এমন করেনা লক্ষ্মীটি!
তোমার ক্যারিয়ার প্রায় বিল্ড আপ হয়েই গেছে, তীরে এসে তরি ডোবাবে। আর আই লাভ ইউ তো রিদিমা! প্লিজ…”
শিহরণ খেলে যায় রিদিমার মাঝে। তবে কি সে তাই করবে আরিফ যা বলছে?
মস্তিষ্ককে খুব দ্রুত ভাবাচ্ছে রিদিমা।
.
“ভাই, আমার মেয়ের আমার মতামতে কোনো আপত্তি নেই, এমনকি সে ছেলে সম্পর্কে কিন্তু জানতে বা দেখতেও চায়নি”
“সত্যি বলছেন ভাই?”
“সত্যি, মেয়েটা কবে যে এত বুঝতে শিখেছে আমিই জানিনা।” উত্তর দিলেন সাহরাফ সাহেব। তারপর নওশির সেই কোনো এক বড় ভাইয়ের প্রোপোজ করার বিষয় টা বললেন।
ইরফান সাহেব রীতিমতো অবাক হয়ে গেলেন। এতটা আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন মেয়ে!
ইরফান সাহেবের মনে আগে নওশিকে ছেলে বউ করার যে ক্ষীণ সম্ভাবনা ছিল এখন তা পুরোপুরি ইচ্ছে রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে।
“ভাই তাহলে আমরা এই সপ্তাহের শেষে নওশিকে দেখতে যাই, ওরা দুজন দুজনকে দেখুক, আপনি কি বলেন?”
“আমিও চাই পারিবারিক ভাবেই দেখুক দুজন দুজনকে”
“সেটাই আমারো মনের ইচ্ছে।”
.
ঈশানের সম্পর্কে রোশনির কাছে শুনতে শুনতে নওশির কানে ঈশানের বায়োডাটা সেট হয়ে গেছে।
এরেঞ্জ ম্যারেজে সবাই সাধারণত ভয় পায়।
কোনো এক অজানা কারণে নওশির কোনো ভয় হচ্ছে না। কোনো এক কারণে নওশি রোমাঞ্চিত। শিহরিত হচ্ছে বারবার।
“আপু ঈশান ভাইয়া ভীষণ ধার্মিক, তুমি যেমন চাও”
“থামবি রুশু!”
“ওকে থামলাম কিন্তু মোস্ট ইমপর্ট্যান্ট কথাই বললাম না” দুষ্টু হাসি দেয় রোশনি।
“কি?”
“বলব না…”
“বল না… প্লিজ… ”
“বলব না… ” বলেই দৌড় দেয় রোশনি।
নওশি দৌড়ে ধরতে যায় নওশি।
রোশনি সোজা গিয়ে বাবার পাশে বসে পড়ে।
নওশি ফিরে যাওয়ার সময় খেয়াল করল রায়ানের রুমে মোবাইল বাজছে।
রায়ানকে খুঁজে দেখে রুমে নেই। এই সময়ে ভার্সিটিতে রায়ান। হয়তো মোবাইল রেখে গেছে।
আবার ফোন বেজে ওঠে। নওশি গিয়ে ফোন হাতে নিতেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে স্ক্রিনের দিকে… “Rahat Vaiya” নাম্বারটা দেখেই বুঝে এটা সেই রাহাত।
কিন্তু রাহাতের নাম্বার রায়ানের কাছে কেন?
তবে কি রাহাত রায়ানকে কিছু বলেছে নাকি বলার জন্য আজই প্রথম ফোন দিয়েছে!
ফোন রিসিভ করে সালাম দেয় নওশি,
রাহাত চমকে যায়, নওশির কন্ঠ!
“রাহাত ভাইয়া আপনি এখানে ফোন কেন দিয়েছেন??”
“মানে কি! তুমি কেন!”
“আমি কেন বুঝেন না আপনি!”
“না মানে…”
“কি মানে মানে করছেন?”
রাহাত কোনো কিছু বুঝতে না পেরে ফোন কেটে দেয়।
রাহাত বুঝতে পারছে না নওশি ওখানে কেন, আর রাহাতের ফোন নওশির কাছে কেন!
বেশ কৌতুহলী হয়ে নওশি রায়ানের ফোনের কল হিস্ট্রি চেক করে দেখে রাহাতের সাথে একবার না বহুবার কথা হয়েছে আর অনেকক্ষন সময় নিয়েই।
নওশি মেলাতে পারে না কিছু।
রায়ান তো চিনে রাহাতকে।
রাহাত সিনিয়র।
আর চেনার কথাও না। রায়ানের সব ফ্রেন্ডদের চিনে নওশি।
নওশি তো বাসায় নাম বলেনি রাহাতের!
তবে!
ছোট ভাইয়ার কাছেই সব শুনতে হবে।
.
“আরে তুই ফোন আনিস নি???”
“আর বলিস না সানজু, একদম ভুলে গেছি”
“আরে ভাইয়া আজ তোর কাছে কেন যেন ফোন দেবে বলছিল”
“ইশ! সরি রে…”
“হুম, বাসায় যেয়ে কথা বলে নিস”
এমন সময় মোবাইল বেজে ওঠে সানজানার।
“সানজানা তুই কই!”
“এইতো ভার্সিটিতে… ”
“রায়ান কই?”
“আছে কেন ভাইয়া?”
“রায়ানের মোবাইল কোথায়?”
“ভাইয়া ও মোবাইলটা আজ ভুলে বাসায় রেখে এসেছে”
“হুম এই জন্যই এত বড় সত্যিটা প্রকাশ পেল”
“মানে?”
“রায়ানকে দে!” কড়া স্বরে বলে রাহাত।
সানজানা একটু ভয় পেয়ে যায়।
“রায়ান ভাইয়া তোমাকে চাইছে” বলে ফোন এগিয়ে দেয়।
“তোমার কয়টা মেয়ে লাগে?”
“মানে!” রাহাতের কথায় আকাশ থেকে পড়ে রায়ান।
“আমার বোনকে ঠকিয়েছিস তুই, তোকে আমি ছাড়ব না শয়তান কোথাকার!”
আচমকা রাহাতের এত বাজে ব্যবহারের ব্যবহারের কারণ খুঁজে পায় না রায়ান।
“কেন বলবেন তো!”
“তোর বাসায় ফোন দিয়েছিলাম, তুই আজ ফোন রেখে গিয়েছিস তাই জানতে পারলাম”
“কি তুই তুই করছেন? হুম বাসায় রেখেছি তো”
সানজানা পাশে থেকে অনেক বার বোঝার চেষ্টা করে কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না।
“বাসায় ফোন ধরল একটা মেয়ে, নওশি, বাসায় একটা রেখে আমার বোনকে ঠকাচ্ছিস!”
“ওই কি যা তা বলছেন! মুখ সামলে কথা বলবেন! কথা বলার আগে ভাবতে হয় কি বলছেন!”
“ওই কি ভাববো রে! আমি যা তা বলছি!”
“হুম, যা তা” কড়া স্বরে জবাব দেয় রায়ান।
“ওই তোর সাহস তো কম না আমার সাথে তুই এভাবে কথা বলিস!”
রায়ানের এবার মেজাজ চরমে উঠে যায়!
জোরে বলে উঠে…
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here