তোকে_দিয়েছি_মন❤
১৯.২০
পর্ব – ১৯
Writer: Sidratul muntaz
🍂
আমার ইচ্ছে হচ্ছে এখনি জায়মার বাসায় ছুটে যেতে। ওকে বাসা থেকে ধরে এনে তারিফ ভাইয়ার সামনে দাড় করিয়ে ভাইয়াকে সবটা বুঝিয়ে বলতে। কিন্তু ও বাসায় আছে তো?? গিয়েই দেখতে হয়। আমি আর কিছু চিন্তা না করে সদর দরজার সামনে থেকেই ছুট লাগালাম উল্টোদিকে। চারদিক অন্ধকার। ঘুটঘুটে অন্ধকার। তবুও আমি ছুটে চলেছি। পেছন থেকে আমার নাম ধরে তোলপাড় করা ডাক কানেও নিচ্ছি না। আমার একমাত্র লক্ষ্য এখন জায়মাকে খুজে বের করা। কিন্তু আমি বেশি দূর যেতে পারলাম না। তার আগেই ভাইয়া পেছন থেকে আমার হাত টেনে ধরলেন। আমি টলমল চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়াকে বোঝাতে চাইলাম যে আমার যাওয়াটা খুব জরুরি। কিন্তু ভাইয়া আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেল। এতো কঠোর হতে ভাইয়াকে আমি কোনোদিনও দেখিনি। ভাইয়া যেন আজ আমার কোনো কথা শুনতে রাজি নয়। আমাকে উঠানের ঠিক মাঝখানে এনে ছেড়ে দিল ভাইয়া। আমি তাল সামলাতে না পেরে কয়েক পা পিছিয়ে গেলাম। ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল—
কোথায় ছুটে যাচ্ছিলিস তুই এই অন্ধকারে??
ভাইয়া আমাকে যেতে হবে। জায়মাদের বাসায় যাবো আমি। ওর সাথে আমার খুব দরকার।( অস্থির হয়ে)
প্রয়োজন হলে জায়মাকে বাসায় নিয়ে আসা হবে। কিন্তু তুই বাসার বাহিরে বের হবি না। চৌকাঠের বাহিরে এক পাও রাখবি না। অন্তত বিয়ের আগে তো একদমই না।
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম–
কেনো??
সমস্যা আছে। তোর বোঝা উচিৎ তারু। বিরাট কোনো সমস্যা না থাকলে নিশ্চয়ই আমি এতোবড় একটা সিদ্ধান্ত নিতাম না। এখন বাড়ির বাহিরে পা রাখাও তোর জন্য মারাত্মক বিপদজনক।
আমি জানিনা ভাইয়া কিসের বিপদের কথা বলছে। কিন্তু আপাতত আমার মনে হচ্ছে এই বিয়েটাই সব থেকে বড় বিপদ। যতক্ষণ সবটা আমি সবাইকে জানাতে না পারছি ততক্ষণ যে কিছুতেই শান্তু হতে পারবো না আমি। কিছুতেই না। ভাইয়া সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন–
শোনো সবাই। সাফিন আয়মান তোরা কালকে সকালের মধ্যে বিয়ের সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলবি। অয়ন্তি তুই তারুকে সাজাবি। খুব ঘরোয়া ভাবে অল্প আয়োজনে বিয়ে সম্পন্ন হবে। আমার বিয়েটা আপাতত স্থগিত। ইশান আর তারুর বিয়ের পর সব দেখা যাবে। ( বুড়ির দিকে তাকিয়ে) আর তোমাকে বলছি দাদী! ভুলেও যেন এই কথা পাচকান না হয়। তারুর বিয়ে হয়েছে এই কথা যেন কেউ কোনোভাবে জানতে না পারে। আর যদি জেনেও যায় অন্তত ইশানের ব্যাপারে কোনো ইনফরমেশন কাউকে দেবে না। খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে তাহলে। ইশান তোকেও বলছি। বিয়ের আগে তুইও বাসা থেকে বের হবি না একদম। খুব বেশি শতর্ক থাকতে হবে আমাদের। শুধু একবার বিয়েটা হয়ে যাক….. তারপর তুই তারুকে নিয়ে ঢাকা চলে যাবি। তোদের এইখান থেকে বিদায় করতে পারলেই কেবল আমার শান্তি। এই টেনশন আমি আর নিতে পারছি না। যাস্ট পারছিনা।
বলতে বলতে দরজার সামনে বসে পড়লেন ভাইয়া। ইশান ভাইয়াও তড়িঘড়ি করে ভাইয়ার কাছে গিয়ে বসলেন। কিছু একটা বলতে লাগলেন ভাইয়াকে। আমি সেটা খেয়াল করলাম না। মাথায় জটলা পাকিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। কি থেকে কি হয়ে গেল কিছু আমার ব্রেইন ক্যাচ করতে পারছে না। আমি আন্দাজও করতে পারছি না যে কেনো ভাইয়া এমন করছে। নিজের অজান্তেই মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলাম। মা আমার কান্নার মানে বুঝলো কিনা জানিনা। শুধু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল কয়েকবার।
.
.
লাল বেনারসি গায়ে জড়িয়ে বসে আছি আমি। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। আপাতত আমার কান্না শোনার জন্য ঘরে কেউ নেই। নিস্তব্ধ এই ঘরটায় একলা বসে কেদে চলেছি আমি। আর কিছুক্ষণ পরই আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে বিয়ের জন্য। তারপর হয়তো সব শেষ। আমি আমার মনে জমে থাকা একবুক কষ্ট টা প্রকাশও করতে পারবো না। আর যখন পারবো…… তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। কথাটা ভাবতেই আরো বুকফেটে কান্না আসছে আমার। একটা সময় এই বিয়ে নিয়েই কত স্বপ্ন বুনেছিলাম আমি। হ্যা আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম ইশান ভাইয়ার বউ হওয়ার। ঠিক এইরকম একটা দিনের স্বপ্ন দেখে কিছুদিন আগেও আমি লজ্জার হাসি হাসতাম। আজ সেই স্বপ্নটা বাস্তব হতে চলেছে। আমার চার বছর ধরে দেখে আসা স্বপ্নগুলো আজ পরিণতি পেতে চলেছে। কিন্তু সেইজন্য বিন্দুমাত্র আনন্দ লাগছে না আমার। একটুও আনন্দ না। দুই হাত দিয়ে দুই চোখের পানি মুছে আবার নতুন করে কান্না শুরু হল আমার। এই কান্নার শেষ কোথায় আমি জানিনা। হঠাৎ জানালায় কারো গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে চমকে উঠলাম আমি। কৌতুহল নিয়ে জানালার দিকে চোখ রাখতেই দেখলাম জানালাটা নড়ছে। কেউ হয়তো বাহিরে থেকে ধাক্কাচ্ছে জানালাটা সাথে আমার নাম ধরে ফিসফিসিয়ে ডাকছে। আমি মুহুর্তেই বুঝে গেলাম এটা জায়মা। চট করে চোখ টা মুছে নিয়ে জানালা খুলে দিলাম আমি। জায়মাকে দেখে মুখে হাসি ফুটল আমার। কিন্তু জায়মার চোখেমুখে আতঙ্ক। আমি ওকে জিজ্ঞেস করতে চাইলাম যে ও কাল কোথায় চলে গিয়েছিল কিন্তু তার আগেই জায়মা আমার হাত ধরে বলে উঠল–
তারু আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোন। তারিফ ভাইয়া তোকে যতই জোড় করুক আর যাই হয়ে যাক না কেনো। তুই ইশান ভাইয়াকে কিছুতেই বিয়ে করবি না। দরকার হলে তুই পালিয়ে যা। তবুও বিয়ে করিস না তুই। ইশান ভাইয়া তোকে মেরে ফেলবে তারু!! তোকে বাচতে দেবে না উনি।
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলতে বলতে আমার হাতটা নিজের মাথার উপর রাখল জায়মা–
তারু আমার মাথায় হাত রেখে বল যে তুই বিয়েটা করবি না। বল আমার কসম। প্লিজ তারু।
করুণ চোখে করুণ কণ্ঠে কথাগুলো বলছে জায়মা। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও ভীষণ ভয় পেয়ে আছে। ভয়ে ঘামছে মেয়েটা। মাথা থেকে ঘাম ঝরিয়ে পড়ছে গলা পর্যন্ত। ঢোক গিলে যাচ্ছে ক্রমাগত। চোখ দুটো লাল টকটকা হয়ে আছে। আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম–
দোস্ত এভাবে বিয়েটা আটকানো যাবেনা। তারিফ ভাইয়া এই বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছে। আমার কোনো কথাই শুনছেন না উনি। তুই আমার সাথে ভাইয়ার কাছে চল। আমাকে যা যা বলেছিস সবকিছু ভাইয়াকে বলবি তুই। তবেই কেবল বিয়েটা আটকানো সম্ভব।
জায়মা অদ্ভুত শব্দ করে বলে উঠল–
না! আমি কিছু বলতে পারবো না। ইশান ভাইয়া জানতে পারলে আমাকে মেরেই ফেলবে। তুই কিন্তু ইশান ভাইয়াকে কিচ্ছু বলবি না আমার ব্যাপারে। আমি তোকে উনার সম্পর্কে যা যা বলেছি এসব কিচ্ছু বলবি না কাউকে। আমার নাম মুখেও আনবি না তুই। আমার কসম খেয়ে বল!!
আমি জায়মার মাথা থেকে হাত সরিয়ে নিলাম–
কি বলছিস এসব জায়মা?? কসম খাওয়া গুনাহ। মহান আল্লাহ ছাড়া অন্যকারো নামে কসম খাওয়া শিরক। তাই কসম আমি খেতে পারবো না। আর তুই এতো ভয় কেনো পাচ্ছিস?? একবার ভাইয়াকে সবটা জানতে দে তারপর দেখবি ভাইয়াই সব ঠিক করে দেবে। ইশান ভাইয়ার ব্যবস্থা ভাইয়াই করবে। কিন্তু তুই যদি আমার সাথে ভাইয়ার কাছে যেতে না চাস….. তাহলে আমি মনে করবো তুই মিথ্যা বলছিস। তোর সব কথা মিথ্যা।
আমার কথা শুনে জায়মার চোখমুখ কঠিন হয়ে উঠল। হাতের কবজি উল্টো করে চোখের পানি আর গলার ঘাম মুছে নিয়ে বলে উঠল সে—
তার মানে তুই আমার থেকে ইশান ভাইয়াকে বেশি বিশ্বাস করিস?? ভুল করছিস তারু। অনেক বড় ভুল করছিস। এইজন্য তোকে পস্তাতে হবে। মারাত্মকভাবে পস্তাতে হবে।
বলতে বলতে মুখ ভেঙে কেদে দিল জায়মা। আমি আর কিছু বলার আগেই জানালা ছেড়ে ছুটে চলে গেল সে। আমি জায়মার নাম ধরে ডাকতেই থাকলাম এক নিঃশ্বাসে। কিন্তু মেয়েটা আমার দৃষ্টির অগোচরে হারিয়ে গেল। আমি জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে দেখলাম শুধু। গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরছে কিন্তু তাতেও কোনো খেয়াল নেই আমার। জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে জায়মার কথা গুলো মনে করতে লাগলাম আমি। একটা লাইনই কানে বাজছে–” তোকে পস্তাতে হবে ”
🍂
তোকে_দিয়েছি_মন❤
পর্ব – ২০
Writer: Sidratul muntaz
🍂
ভাইয়ার ঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি আমি। ভাইয়া ইশান ভাইয়ার সাথে কি একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। কথাগুলো খুব মিনমিনিয়ে বলা হচ্ছে বিধায় আমি স্পষ্ট শুনতে পারছি না। শোনা উচিতও না। কারণ এইভাবে তাদের কথা শুনলে ব্যাপারটা আড়ি পাতার মতো হয়ে যাবে। যেটা আমি কিছুতেই করতে চাই না। তবুও কয়েকটা শব্দ আমার কানে আসছে তার মধ্যে এমন একটা শব্দ ছিল….. যেটা শুনে তাদের কথা শোনার আগ্রহ আমার প্রবলভাবে বৃদ্ধি পেল। শব্দটা হল–” থান আওয়াং চাও।” এই শব্দটা যেই মুহুর্তে আমি শুনলাম ঠিক সেই মুহুর্তে আমার শরীরে প্রতিটা লোম যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে দাড়িয়ে গেল। আমার জীবনের খুব অভিশপ্ত একটা নাম– থান আওয়াং চাও। আমি ভাবনার সাগরে ডুব দেওয়ার আগেই ভাইয়ার কথার আওয়াজ কানে আসলো—
ইশান প্লিজ তুই খুব সাবধানে থাকবি তোকে আমি বারবার বলে দিচ্ছি। থাঞ্চু যদি একবার টের পেয়ে যায় যে তারুর বিয়ে তোর সাথে হচ্ছে….. তাহলে তোর লাইফ রিস্ক হয়ে যাবে। ছেলেটা খুব ডেঞ্জারাস। কালকে মিঃ আরিয়ানের অবস্থা দেখলে তুই বুঝতে পারতি। সোজা হয়ে দাড়াতে পারছিল না লোকটা। পুরো শরীর গাছের সাথে বেধে পেটানো হয়েছে। ব্যথার জায়গায় হয়তো ঠান্ডা পানি দিয়ে টর্চার করা হয়েছে। তার উপর কিছু মনেও নেই বেচারার। কি ডেয়ারিং ছেলে একবার চিন্তা কর! মিঃ আরিয়ান তো শুধু তারিনকে দেখতে এসেছিল। তাতেই এই হাল করেছে বেচারার। আর যখন জানতে পারবে তারিনের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তখন ঠিক কি করবে ছেলেটা একবার ভেবে দেখ। আমার তো টেনশনে মাথা কাজ করছে না।
ভাইয়ার কথা শেষ হতে না হতেই ইশান ভাইয়ার বিষম খাওয়ার শব্দ শোনা গেল। বিষম আমারো খেতে ইচ্ছে করছে। শুধু বিষম না….. ইচ্ছে করছে বিষমের জায়গায় বিষ খেয়ে প্রাণ ত্যাগ করতে। মানে সিরিয়াসলি?? কালকে মিঃ ভুড়িওয়ালাকে নিয়ে যেটা হলো সেটার জন্য ভাইয়া থাঞ্চু কে দায়ী ভাবছে?? অবশ্য ভাইয়ার এমন চিন্তা করার কারণও আছে। ছোটবেলা থেকেই ওই আদিবাসী ছেলেটার অত্যাচারে আমার জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে প্রায়। ছেলেটা কেনো আমার পিছনে পড়ে আছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই। শুধু এইটুকু জানি যে ওই ছেলেটাকে আমি ভীষণ ভয় পাই। ভীষণ পরিমাণে। ক্লাস নাইনে থাকতে একটা ঘটনা আমার এখনো মনে আছে। আমার জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা বলা যায়। আমি সাইকেলে করে বাসায় ফিরছিলাম তখন। আমার গায়ে ছিল স্কুল ইউনিফর্ম। কড়া রোদে খুব বিরক্তিকর অবস্থায় একটা নিরিবিলি রাস্তা অতিক্রম করছিলাম আমি। ঠিক সেই সময় আমার পথ আটকালো একটা কুকুর। আমি কুকুর ছোটবেলা থেকেই অনেক ভয় পাই। কুকুরের ভক ভক শব্দ শুনে ভয়ে সাইকেল উল্টে পড়ে গিয়েছিলাম আমি। ঠিক সেই সময় ওই থাঞ্চু নামের ছেলেটা আমাকে টেনে তুলেছিল। সেদিনই ওই ছেলের সাথে আমার প্রথম দেখা। ছেলেটাকে দেখতে একদম কোরিয়ান ড্রামার হিরোদের মতো। নিজেকে কোরিয়ান ড্রামার হিরোইন মনে হচ্ছিল তখন আমার। আর ওই ছেলেটাও কেমন এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। মনে হচ্ছে কোরিয়ান কোনো মিউজিক ভিডিওর শ্যুটিং হচ্ছে। খুব লজ্জা লাগছিল তখন। কিন্তু সেই লজ্জাটা মুহুর্তেই ভয়ে পরিণত হল যখন দেখলাম থাঞ্চু তার পকেট থেকে একটা ধারালো চাকু বের করে ওই কুকুরটার গলায় বসিয়ে দিল। তার এমন আচরণে আমি রীতিমতো আতকে উঠেছিলাম। আমার সামনে বীভৎস আওয়াজ করতে করতে ছটফটানি শুরু করল কুকুরটা। একসময় ছটফটানি থামিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরল সে। পুরো ঘটনায় আমি একদম স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম সেদিন। কয়েকরাত ঘুমও হয়নি ঠিক মতো। চোখ বন্ধ করলেই আর্তনাদ ভেসে উঠতো ওই মরা কুকুরের। আমি ডিপ্রেসড হয়ে গিয়েছিলাম প্রায়। সেদিনের পর থেকে প্রতিদিন থাঞ্চু মানে থান আওয়াং চাও নামের ছেলেটি আমাকে ফলো করতে শুরু করে। আমার সাথে যেই মিসবিহেভ করতো…… তারই পরিণতি এমন ভয়ংকর হতো। আমার জীবনটা বদলে যেতে লাগল ওই থাঞ্চুর জন্য। তারপর একদিন বাধ্য হয়ে ওই জায়গা ছেড়ে প্রস্থান করলাম আমরা। এইখানে আসার পর থাঞ্চুর উপদ্রব অনেকটাই কমেছে। একেবারে নেই বললেই চলে। কিন্তু ভাইয়া হয়তো এখনো বিষয়টা নিয়ে ভয় পায়। তাইতো মিঃ আরিয়ানের ঘটনা নিয়ে থাঞ্চুকে সন্দেহ করছে। অথচ ভাইয়া বুঝতেও পারছে না যে আসল কালপ্রিট তার সামনে বসে আছে। ভাইয়া ইশান ভাইয়াকে নিয়ে ভয় পাচ্ছে। ভাবছে থাঞ্চু ইশান ভাইয়ার ক্ষতি করে দেবে। কিন্তু আমার যে ভয় লাগছে থাঞ্চুকে নিয়ে। ভাইয়া নিশ্চয়ই থাঞ্চুর বিষয়ে সবটা ইশান ভাইয়াকে বলে দিয়েছে! আর আমার তো মনে হয়না ইশান ভাইয়া এতো সহজে থাঞ্চুকে ছেড়ে দেবে। মিঃ আরিয়ানের যেই হাল করেছেন উনি…… থাঞ্চুর অবস্থা তো তার থেকেও অনেক বেশি ভয়াবহ হবে। যেটা কল্পনা করতেও শরীর কাটা দিয়ে উঠছে আমার। ইশান ভাইয়ার পায়ের আওয়াজ শুনে দেয়ালের পিছনে লুকিয়ে পড়লাম আমি। উনি ভাইয়ার রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। একবার উকি মেরে দেখে নিলাম উনাকে। লাল রঙের শেরয়ানি পড়েছেন আজ। কি সুন্দর লাগছে দেখতে। বিশ্বাসই হয়না যে এতো সুন্দর একটা ছেলের চরিত্র এতোটা কুৎসিৎ হতে পারে। কেনো মানুষের সৌন্দর্যের আড়ালে এতো নৃশংস রুপ লুকিয়ে থাকে? ? মানুষের বহিরাবরণ দেখেই যদি আমরা বুঝে যেতে পারতাম তার চরিত্র কিংবা চরিত্র সম্পর্কে ধারণা পেতাম…… কতই না ভালো হতো। কাউকে তখন ধোকা খেতে হতো না। কষ্ট পেতে হতো না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাইয়ার রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম আমি। ভাইয়া আমার উপস্থিতি বুঝতে পেরে মুচকি হাসলেন। আমাকে বসতে বললেন সোফায়। আমি বসে পড়লাম। ভাইয়া পিসিতে কিছু একটা করছে। সেইদিকে নজর রেখেই আমাকে বলল–
কিছু বলবি??
হুম।
বল।
ভাইয়া তুমি আমাকে কতটুকু ভালো বাসো??
যতটুকু ভালো তুই আমাকে বাসিস! তার থেকে একটু বেশি। এখন কেনো বলতো?
যদি সত্যিই তাই হয়….. তাহলে প্রমাণ করো।
কি প্রমাণ চাস?
এই বিয়েটা ভেঙে দাও।
ভাইয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। আমি মাথা নিচু করে নিলাম। ভাইয়া আবার স্বাভাবিকভাবে কম্পিউটারের স্ক্রিনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন–
আচ্ছা ভেঙে দেব। গিভ মি আ ভেলিড রিজন দেন।
আমি এই বিয়েতে রাজি না। এইটাই কি তোমার ভেলিড রিজন মনে হচ্ছে না??
না হচ্ছে না। এইটা কোনো ভেলিড রিজন মনে হচ্ছে না আমার।
আমি এবার কেদে দিলাম। এইটাই আপাতত আমার মুল অস্ত্র। দেখি আমার কান্না কতক্ষণ সহ্য করতে পারে ভাইয়া। কিছুক্ষণ কান্না কান্না এপিসোড চলার পর হঠাৎ ভাইয়া বিব্রত হয়ে বলল–
দেখ তারু মাথা খারাপ করিস না। বিয়ে ভাঙার মতো কোনো পরিস্থিতিই নেই এখন। আর কিছুক্ষণ পরেই কাজী সাহেব আসবে। সব আয়োজন শেষ। ইশানকেও আমি কথা দিয়েছি। তাহলে কিভাবে কি?? ছেলেমানুষী না করে ঘরে যা।
ভাইয়া তোমার মনে আছে? ছোটবেলায় একবার ইয়ার ফাইনাল এক্সাম চলাকালীন টায়ফয়েড হয়েছিল আমার। এক্সাম দিতে না পারলে ইয়ার লস হয়ে যেতো। আমার জেদের কাছে হার মেনে সেদিন পাড়ার ভাইয়াদের নিয়ে আন্দোলন করেছিলে তুমি। দিনরাত না খেয়ে স্কুল গেইটের সামনে দাড়িয়ে থেকে অবশেষে পরীক্ষা স্থগিত করিয়েছিলে। শুধুমাত্র আমার মুখে হাসি দেখার জন্য এতোবড় অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলে তুমি। তাহলে আজ এটা কেনো পারবে না? তুমি কি সত্যিই আমার সেই ভাই?(চোখের পানি মুছতে মুছতে)
আমার কথা শুনে ভাইয়া ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন। পিসির মাউস থেকে হাত সরিয়ে কি বোর্ড ভেতরে ঠেলে দিয়ে আমার দিকে ঘুরে বসলেন। গালে হাত রেখে খুব শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন–
তোরও কি মনে আছে?? একবার ফুটবল খেলতে গিয়ে মাথা ফেটেছিল আমার। তার পরের দিন ছিল আমার প্র্যাকটিক্যাল জমা দেওয়ার লাস্ট ডেইট। সারারাত হসপিটালের বিছানায় সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলাম আমি। আর তুই কি করেছিলি?? যেমন আমার সেবাও করেছিলি তেমন শিহাবের প্র্যাকটিক্যাল কপি করে আমার নামে জমাও দিয়েছিলি কলেজে। যদিও সেটা গ্রান্টেড হয়নি! কিন্তু কষ্ট করেছিলি খুব। তাহলে আজকে এইটুকু করতে পারবি না আমার জন্য?? তুই কি সত্যিই আমার সেই বোন??
ভাইয়ার কথায় আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। কি বলবো বুঝতে পারছি না। ভাইয়া আবার কম্পিউটারের কাজে মনোযোগ দিতে দিতে বললেন–
ঘরে যা তারু ঘরে যা। আমি যেটা করছি ভালোর জন্যই করছি ।একটু বিশ্বাস রাখিস আমার উপর।
আমি আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম আর কোনো রাস্তা নেই। সর্বনাশটা তাহলে হয়েই যাবে। পরে আফসোস যেন না হয় ভাইয়া তোমার!
🍂
চলবে