#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ১৭
রাতের খাওয়া দাওয়ার পরে সবাই শীতের পোশাক পরে ছাদে উঠে এসেছে ছাদে বসে আড্ডা দেবে বলে। মাদুর পেতে সবাই একে একে বসে পড়েছে। রাজিব অনন্যা আর টিয়া এক পাশে বসে। অনন্যার গায়ে জড়ানো চাদরটা আরেকটু ভালো ভাবে জড়িয়ে নিয়ে টিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” এই শীতের মধ্যে আড্ডা দিতে কেন যে ছাদে আসতে গেলি তোরা? আর কী জায়গা ছিল না আড্ডা দেওয়ার মতো?”
টিয়া কিছু বলার আগে রাজিব ওদের তাকিয়ে বলল,
—-” মিরু তুই শুধু শুধু টিয়াকে বকিস না। টিয়ার জন্যই আমরা সবাই শীতময় পরিবেশের বসে আড্ডা দিতে পারছি। কোথায় টি টিয়াকে ধন্যবাদ দিবি তা না উল্টো ওকে বকাবকি করছিস।”
অনন্যা রাসেলের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে রাজিবের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
—-” ঘটনা কী রাজিব ভাইয়া? হঠাৎ করে তুমি টিয়ার হয়ে সাফাই গাইতে শুরু করলে?”
টিয়া অনন্যার হাত চেপে ধরে মৃদু স্বরে বলল,
—-” মিরু কী হচ্ছে এসব? একেতো এই শীতে জন্য অবস্থা খারাপ তার ওপরে তোর আবার বকবকানি। প্লিজ একটু থামবি তুই।”
অনন্যা নিজের গায়ে জড়ানো চাদরটা খুলে টিয়া কে জড়িয়ে নিয়ে ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,
—-” তোর খালি মুখেই পটর পটর। নিচ থেকে আসার সময় শীতের পোশাক নিয়ে আসিস নি কেন? রাজিব ভাইয়া তুমি কিছু বলতো ওকে।”
রাজিব একনজরে সবার দিকে তাকায়। যে যার হাসি ঠাট্টা নিয়ে ব্যস্ত। রাজিব চোখ সরিয়ে অনন্যার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলল,
—-” এই কথাটা কিন্তু একদম ঠিক বলেছে মিরু। এমন শীতের মধ্যে তুমি শীতের পোশাক না নিয়ে এসে একদম ভালো করে নি। সে যাই হোক তুমি চাইলে আমার জ্যাকেট খুলে তোমাকে দিতে পারি।”
টিয়া তাড়াতাড়ি করে বলল,
—-” না না ভাইয়া তার দরকার নেই। আর যদি দরকার পরে আমি নিজেই চেয়ে নেবো আপনার থেকে।”
এইটুকু বলে রাসেলের দিকে আড়চোখে তাকায়। রাসেলের চোখ গুলো লাল লাল হয়ে আছে। এতক্ষণ ধরে ওদের সব কথা শুনছিল। শুধু এখনই নয় আজ সারাদিন ধরে ওদের এমন আরও অনেক কথা শুনতে হয়েছে ওকে। কোন কথাই রাসেলের জন্য সুখকর ছিল না। ওদের ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছে রাজিবের সাথে নতুন কোন সম্পর্কের পথে পা বাড়াতে চলেছে টিয়া। রাসেল যে কয়বার টিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে ততবার টিয়া ওকে উপেক্ষা করে চলে গেছে। রাসেলের করা সামান্য অভিনয়ের জন্য টিয়া ওকে যে ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দেবে তা ভাবতে পারিনি কখনো। টিয়ার সাথে ওর মনের বিচ্ছেদ ওকে প্রতিনিয়ত পীড়া দেয়। রাসেল টিয়ার দিকে তাকিয়ে আহত কন্ঠে বলল,
—-” টিয়া, শুনবে তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।”
টিয়া রাসেলকে পাত্তা না দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল,
—-” খালি মুখে আড্ডা টা ঠিক জমে না তাই না? তোমরা বসো আমি তোমাদের জন্য কফি নিয়ে আসছি।”
এইটুকু বলে টিয়া আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে নিচের দিকে যায়। কেন দাঁড়াবে ওখানে? রাসেলের কথা শুনতে? তার তো মিমি আছে তার কথা শোনার জন্য। তাহলে ওকে কেন ডাকছে বারবার? কেন মিথ্যে মায়ার বাঁধনে বারবার করতে চাইছে? টিয়া রাসেলকে একতরফা ভালোবেসে যে ছেলেমানুষি টা করেছিলো তার খানিকটা সামলে উঠেছে ও। আর পারবে না হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণা সহ্য করতে টিয়া। আজকাল টিয়া ভার্সিটিতে হামেশাই শুনতো কোন না কোন ডিপার্টমেন্টের মেয়েদের সুইসাইড করার কথা। এমন নিদারুণ কষ্ট তারা সহ্য করতে না পেরে এমন বোকামির পথ তারা বেছে নিয়েছে। টিয়ার কাছে ঐ মেয়েগুলো ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বোকা। না হলে শুধু একটা মানুষের জন্য পুরো পরিবারকে কাঁদিয়ে চলে যাওয়ার পথ বেছে নেয় না। যাগ্গে এখন আর এসব ভাবতে চাচ্ছে না টিয়া। কিন্তু ভাববে না বলেও ভাবতে হচ্ছে টিয়াকে। জীবনে প্রথম ভালোলাগার মানুষটি সে। কী করে ভুলে যাবে তাকে? পারবে না টিয়া রাসেলকে ভুলে যেতে। রাসেল কেমন আহত চোখে তাকাচ্ছিল ওর দিকে বারবার। যেনো অনেক না বলা কথা বলতে চায় চোখগুলো। এসব ভাবতে ভাবতে টিয়া ট্রে হাতে ধীর পায়ে হেঁটে ছাদে আসে। একে একে সবাইকে কফি দিয়ে রাজিবের সামনে এসে বলল,
—-” কি হলো ভাইয়া নিন কফি।”
অনন্যা সুর টেনে বলল,
—-” হ্যাঁ ভাইয়া নিন না কফি টা। আপনার জন্য আমার টিয়া পাখি স্পেশাল কফি বানিয়েছে।”
টিয়া কিছু না বলে একটু হেসে কফির কাপটা এগিয়ে দেয় রাজিবের দিকে। রাজিবের পরে বসা ছিল রাসেল। রাজিবকে পেরিয়ে ট্রে টা হাতে রাসেলের সামনে গিয়ে ট্রে টা ধরে। রাসেল কফি কাপ টা হাতে না নিয়ে তীব্রভাবে টিয়ার দিকে তাকায়। টিয়া খুকখুক করে বলল,
—-” কী হলো নিন কাপটা!”
কত ঘন্টা পর প্রিয় মানুষটার কণ্ঠস্বর কাছ থেকে শুনলো রাসেল। প্রায় দুই দিনের কাছাকাছি। রাসেল হাত বাড়িয়ে কাপটা নিয়ে টিয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
—-” তোমার সঙ্গে…..
রাসেলের কথার সমাপ্তি ঘটে অনন্যা কথায়। অনন্যা টিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
—-” এত রাতে আবার কে এলো?”
টিয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
—-” কোথায়? কে এলো?”
রাজিব টিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” কেন শুনলে না এইমাত্র বাড়ির সামনে একটা গাড়ি থামায় শব্দ? আমার মনে হয় মিরান ভাইয়া ফিরে এসেছে।”
এরমধ্যে মেঘ দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
—-” তোমরা এখনো এখানে বসে আছো? ওদিকে শান্ত ভাইয়া একটা মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে এসেছে। মনে হয় বিয়ে করে নিয়ে এসেছে মেয়েটা কে।”
মেঘের দিকে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকায়। মেঘের কথা শেষ হতে না হতেই সবাই ছুট লাগায় নিচে যাওয়ার জন্য।
______________________________
তুলি হঠাৎ করে এমন কিছু বলবে তা আন্দাজ করতে পারিনি তোহা। তোহা চোখের ইশারায় তুলিকে চুপ করতে বলে। তুলি তোহার ইশারা বুঝতে পেরে মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে। মিরান বিস্ময় চোখে তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে এই পিচ্চি চিৎকার করে ওমন কথা বলল কেন? মিরান তুলির উপর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে তোহার দিকে তাকিয়ে বিস্ময় গলায় বলল,
—-” ঐ মেয়েটা কী বলল? বড় জামাই মানে?”
তোহা মিরানের দিকে সতর্ক চোখে তাকিয়ে বলল,
—-” কোথায় বড় জামাই? ও তো অন্য কিছু বলেছে।”
মিরানের বেশ মনে আছে তুলি ওকে দেখে বড় জামাই বলে চিৎকার করেছে। মিরান তোহার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,
—-” আমার স্পষ্ট মনে আছে ও আমাকে দেখেই বড় জামাই বলে চিৎকার করেছে। তাহলে আপনি অন্য কথা বলছেন কেন?”
তুলি নিজের বোকামির জন্য নিজের মাথায় নিজের বাড়ি মারতে ইচ্ছে করছে। তুলি ওদের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করে বলল,
—-” ভাইয়া আমি জামাই না জালিম বলেছি।”
মিরান অবাক গলায় বলল,
—-” জালিম?”
তুলি মৃদু হেসে বলল,
—-” হ্যাঁ, জালিম। আসলে ভাইয়া এইটু আগে আমি এই গান টা শুনেছিলাম তাই গানটা বারবার গাইতে ইচ্ছে করছে। মেরা চেন বেন সব উজরা। জালিম নজর হঠা লে। বারবাদ হো রাহে জি তেরি আপনি সেহের ভা লে। মেরে আং রাই না টুটে তু আজা। কাজরারে কাজরারে কাজরারে তেরে কালে কালে নয়না! সুন্দর না গানটা ভাইয়া?”
তুলির গানটা শুনে বাড়ির সবাই মুখ টিপে হাসতে শুরু করে। বাড়ির সবাই তুলির দুষ্টুমির সাথে পরিচিত। কিন্তু মিরান? সেতো পরিচিত নয়! মিরান বিস্ময়াভিভূত হয়ে তাকায় তুলির দিকে। কী সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা! মুহুর্তের মধ্যে কথা ঘুরিয়ে ফেলল। এই মেয়ে তো দেখছি তোহার থেকে আরো কয়েক ধাপ উপর দিয়ে যায়। জামাই থেকে জালিম! আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো নতুন ঘটনা ঘটাবে। তার থেকে বরং এখনই চলে যাওয়া ভালো। মিরান তুলির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তোহার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
—-” অনেক রাত হয়ে গেছে এখন আমার যাওয়া দরকার। আমি আসি বরং।”
আতিক সাহেবের স্নেহা এতক্ষণ ধরে ছোট মেয়ের দুষ্টুমি দেখছিলো। মিরান চলে যাবে শুনে স্নেহা ওর দিকে এগিয়ে এসে ধীর গলায় বলল,
—-” সে কী বাবা তুমি চলে যাবে কেন? আজ প্রথম আমাদের বাড়িতে এলে তোমাকে তো আর এমন খালি মুখে চলে যেতে দিতে পারি না। আর তার চেয়ে বড় কথা তুমি এত রাতে কোথায় যাবে?”
মিরানের স্নেহার কথা খুব ভালো লাগে। মা গুলো বোধহয় এমনই হয়। পরের সন্তান আর নিজের সন্তান দেখেনা আগলে রাখার চেষ্টা করে। মিরান স্নেহার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল,
—-” আন্টি আপনি যে আমাকে বলেছেন এটাই আমার জন্য অনেক। মাম্মা আমার উপর দায়িত্ব দিয়েছিল উনাকে সেভ লি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া। এখন আমাকে যেতে হবে না হলে….
মিরানের কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে আতিক সাহেব এগিয়ে এসে বলল,
—-” তুমি যাই বলো না কেন আমরা কিছু শুনছি না।আজ তোমাকে থেকে যেতেই হবে। স্নেহা তুমি বরং ওকে গেস্টরুমে নিয়ে যাও। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসলে আমরা একসাথে ডিনার করবো।”
মিরান দ্বিধায় পড়ে যায় আতিক সাহেবের কথা শুনে। মিরান আতিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল,
—-” না আঙ্কেল তা হয় না।”
মিরানের কথা পাত্তা না দিয়ে স্নেহা মিরানের হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
—-” এখন আর কোন কথা নয়। আগে ফ্রেশ হবে তারপর যত কথা।”
মিরানের কোন কথা না শুনে স্নেহা মিরান কে নিয়ে গেস্টরুমের দিকে চলে যায়। তুলি এসে তোহার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে ধাক্কা দিয়ে মুচকি হেসে বলল,
—-” মেরা চেন বেন সব উজরা। জালিম নজর হঠা লে। বারবাদ হো রাহে জি তেরি আপনি সেহের ভা লে। মেরে আং রাই না টুটে তু আজা। কাজরারে কাজরারে কাজরারে তেরে কালে কালে নয়না! গানটা সুন্দর না আপু?”
তোহা তুলির তেড়ে গিয়ে বলল,
—-” দাঁড় আজ তোর হচ্ছে। আজ তোর একদিন কী আমার একদিন।”
তুলি আর কারো অপেক্ষা না করে ছুট লাগায় ওখান থেকে আর তোহা তুলির পিছনে দৌড় দেয়।#না_চাইলেও_তুই_আমার
[ সিজান ৩ ]
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্ব- ১৮
বেশ কিছুক্ষণ ধরে দরজা নক করার শব্দ আসছে। কিন্তু ঘুমের জন্য চোখ খুলতে পারছেনা মিরান। কাল রাতে শুতে প্রায় দুটোর বেশী বেজে গেছিলো। তোহার বাবার সাথে জমিয়ে গল্প করেছে রাত জেগে। খুব হাসিখুশি মানুষটা। কিন্তু এই দরজা নক করার শব্দ যে থামছেই না। মিটমিটে চোখ খুলে উঠে বসে মিরান। লম্বা হাই তুলে দরজার দিকে তাকায়। এমন ভাবে দরজা নক করছে যেন দরজা ভেঙে ফেলবে। যেন মনে মনে শপথ করেছে যতক্ষণ না দরজা খুলছে কতক্ষণ ধরে দরজার ধাক্কিয়ে যাবে। মিরান বিরক্তি নিয়ে বিছানা থেকে উঠে হেলেদুলে দরজার দিকে যায়। দরজা খুলতে না খুলতেই তোহা হনহনিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। মিরান ভুরু কুঁচকে তোহার দিকে তাকায়। মিরান আগেই বোঝা উচিত ছিল এমন কাজে এ বাড়িতে দুটো মানুষ ছাড়া আর কেউ করতে পারে না। যদি জানতো দরজার ওপাশে তোহা দাঁড়িয়ে আছে তাহলে এখন কিছুতেই ওর আরামের ঘুম নষ্ট করে উঠে দরজা খুলতো না। এখন নিশ্চয়ই আবার ওর সঙ্গে রাগারাগি করবে। তোহা কোমরে এক হাত দিয়ে মিরানের দিকে তাকিয়ে বলল,
—-” এতক্ষণ কী করছিলে? কতক্ষণ ধরে দরজা নক করছিলাম শুনতে পাওনি তুমি?”
মিরান ভুরু সোজা করে আবারো হাই তুলে বলল,
—-” ঘুমোচ্ছিলাম! কেন কিছু হয়েছে? এভাবে দরজা ধাক্কা দিলেন কেন?”
তোহা চোখ ছোট ছোট করে মিরানের দিকে তাকায়, চোখ গুলো লাল লাল হয়ে আছে হয়তো ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি রাতে। ধ্যাত! কেন যে বেচারা কে এখন শুধু শুধু বিরক্ত করতে গেলাম? আর কিছুক্ষণ পর ডাকলে কী এমন ক্ষতি হতো? কিন্তু অনেক বেলা হয়ে গেছে ওদিকে বাবা ওর সাথে কথা বলবে বলে বসে আছে নীচে। মিরান তোহার চোখের সামনে তুরি বাজিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
—-” কী হলো কিছু বলছেন না যে?”
তোহা ভাবনা থেকে বেরিয়ে মিরানের দিকে তাকিয়ে ছোট করে বলল,
—-” ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নীচে এসো, বাবা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি নিচে যাচ্ছি তুমি তাড়াতাড়ি এসো।”
তোহা আর কিছু না বলে চলে যায়। মিরান তোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করে, হঠাৎ করে এই মেয়ের হলো কী? এসে রাগী চোখে তাকিয়ে আবার শান্ত চোখে চলে গেলো! যাগ্গে এসব এখন না ভেবে আগে ফ্রেশ হতে হবে। একা একা এসব ভাবতে ভাবতে মিরান ওয়াশরুমের দিকে যায়।
______________________________
সন্তান হারিয়ে একজন মায়ের মনের অবস্থা কেমন হতে পারে তা আর একজন মা উপলব্ধি করতে পারে। আর সে সন্তান যদি হয় মায়ের অতি আদরের একমাত্র সন্তান তাহলে সেই মায়ের মনের অবস্থা অতি বেদনপূর্ণ। বাসে কখন চোখটা লেগে গেছিল বুঝতে পারিনি তাসলিমা জাহান। চোখ খুলে মাঝরাতে মেয়েকে যখন পাশে পায় না তখন থেকেই তার পাগলামী শুরু। বাস চালক এর সাহায্যে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার মেয়ের খোঁজ পায়নি তার স্বামী। তার স্বামী সোহান সাহেব তাকে ক্রমপর্যায় সান্তনা দিয়ে চলেছে। এদিকে তার চোখের আড়ালে বারবার চোখ মুছছেন তিনি। সোহান সাহেব তাসলিমাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তার বন্ধু আজমলের বাড়িতে নিয়ে যায়। সোহান সাহেব ইতিমধ্যে পুলিশ মাধ্যমে তার মেয়েকে খুঁজতে শুরু করেছে। আজমলের স্ত্রী নদী তাসলিমাকে সামলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে, কিন্তু মেয়ের কথা মনে পড়লেই তিনি চিৎকার করে কেঁদে উঠেন। বিয়ের অনেক বছর পর যখন সন্তানাদি হচ্ছিল না কতনা ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েছেন তারা, তাতেও কোনো ফল পাচ্ছিল না দেখে একসময় তারা সব আশা ছেড়ে দেয়। কিন্তু? ওই যে নিয়তি? নিয়তি বলতে একটা কথা আছে না! হঠাৎ একদিন জানতে পারে তাদের তাদের ঘর আলো করে কেউ আসতে চলেছে এই পৃথিবীতে। খুশির অন্ত ছিল না তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে। ঘর আলো করে জন্ম নেয় মেয়ে সন্তান। জন্মের সময় ফুটফুটে মিষ্টি চেহারা দেখে তার বাবার নাম রেখেছিল জান্নাতুল ফেরদৌস। সবাই ভালোবেসে জান্নাত বলেই ডাকে ওকে। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে আদর-যত্নে মানুষ করেছে তাদের মেয়েকে। একমাত্র মেয়ে বলে কখনো চোখের আড়াল হতে দেয়নি আর আজ সেই কলিজার টুকরা কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়ে হারানোর যন্ত্রণা তিনি সহ্যাতীত করতে না পেরে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন।
______________________________
মিরান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মিররের সামনে যায়। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। অনেকটা পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। চুলগুলো ঠিক করবে বলে চিরুনি হাতে নেয় মিরান। চিরুনি চুলের স্পর্শ করার আগেই মিরানের ফোন বেজে ওঠে। চিরুনিটা রেখে বেড সাইডের টেবিলের সামনে যায়। একটু ঝুঁকে ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকায়। স্ক্রিনের নামটা দেখে ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে ফোন রিসিভ করে মৃদু হেসে বলল,
—-” হ্যাঁ, মাম্মা বলো।”
মিরা মৃদু স্বরে বলল,
—-” কখন বের তুই?”
মিরান ফোনটা স্পীকারে দিয়ে আবার মিররের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
—-” এইতো একটু পরে বের হবো। কেন কিছু বলবে?”
মিরা শান্ত গলায় বলল,
—-” হ্যাঁ বলবো তো। তোর এখন বের হবার দরকার নেই। তোহার কনসার্ট শেষ হলে সন্ধার পর কিংবা রাতে বের হোস।”
মিরান খানিক কপাল ভাঁজ করে বলল,
—-” কেনো? তোহার কনসার্টের পর বের হব কেন?”
মিরা মৃদু স্বরে বলল,
—-” কারন তোহার কনসার্ট শেষ হলে ওকে সাথে নিয়ে তুই ময়মনসিংহে ফিরবি।”
মিরান কথাটা শোনামাত্র হাতে থেকে চিরুনি পড়ে যায়। দ্রুতপায়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বলল,
—-” কেন? ওনাকে আবার সাথে করে নিয়ে আসতে হবে কেন?”
মিরা মৃদু হেসে বলল,
—-” তোকে তো বলতে ভুলে গেছিলাম। মিরু আর তোর পাপা তোহা কে ওর কনসার্ট শেষ করে তোর সঙ্গে আবার এখানে আসতে বলছে।”
মিরান ওর মাম্মার কথা শুনে আপনি আপনি ভুরু কুঁচকে যায়। এই মেয়েটাকে আবার ওর সাথে করে ময়মনসিংহে নিয়ে যেতে। অসম্ভব! মিরান তাড়াতাড়ি করে বলল,
—-” না মাম্মা আমি পারবোনা আমি এক্ষুনি ফিরে আসছি।”
মিরা মন খারাপের অভিনয় করে বলল,
—-” বাবা তুই আমার কথাটা রাখবি না?”
মিরান সবকিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু ওর মাম্মা মন খারাপ করে থাকবে তা কখনো সহ্য করতে পারে না। মিরান মুখ গোমড়া করে বলল,
—-” আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে আসব তোমাদের সিঙ্গার কে আর মন খারাপ করতে হবে না তোমাকে।”
মিরা ঠোঁটে হাসি এনে বলল,
—-” সত্যি?”
মিরান ছোট করে বলল,
—-” হুম।”
মিরা মৃদু হেসে বলল,
—-” আমি জানি তো আমার বাবা কখনো আমার কথা ফেলতে পারে না। আচ্ছা বাবা এখন আমি রাখি সাবধানে আসিস।”
মিরান ফোন রেখে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। কোথাকার না কোথাকার একটা মেয়ে হঠাৎ করে উড়ে এসে ওর মাম্মা, পাপা আর বোনের মন জুড়ে বসে আছে। এবার চলুক না ওর সাথে ময়মনসিংহে তখন বুঝাবো মজা এই মিরান কী জিনিস! আর করবেই বা কী? কথায় কথায় ভয় দেখায় মারার হুমকি দেয়। বড্ড ভয়ঙ্কর মেয়েটা। না জানি যে এই মেয়েটার বর হবে তার কী অবস্থা হবে?”
#না_চাইলেও_তুই_আমার [ সিজান ৩ ] #লেখিকা_সারজীন_ইসলাম #পর্ব- ১৮ বেশ কিছুক্ষণ ধরে দরজা নক করার শব্দ আসছে। কিন্তু ঘুমের জন্য চোখ খুলতে পারছেনা মিরান। কাল রাতে শুতে প্রায় দুটোর বেশী বেজে গেছিলো। তোহার বাবার সাথে জমিয়ে গল্প করেছে রাত জেগে। খুব হাসিখুশি মানুষটা। কিন্তু এই দরজা নক করার শব্দ যে থামছেই না। মিটমিটে চোখ খুলে উঠে বসে মিরান। লম্বা হাই তুলে দরজার দিকে তাকায়। এমন ভাবে দরজা নক করছে যেন দরজা ভেঙে ফেলবে। যেন মনে মনে শপথ করেছে যতক্ষণ না দরজা খুলছে কতক্ষণ ধরে দরজার ধাক্কিয়ে যাবে। মিরান বিরক্তি নিয়ে বিছানা থেকে উঠে হেলেদুলে দরজার দিকে যায়। দরজা খুলতে না খুলতেই তোহা হনহনিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। মিরান ভুরু কুঁচকে তোহার দিকে তাকায়। মিরান আগেই বোঝা উচিত ছিল এমন কাজে এ বাড়িতে দুটো মানুষ ছাড়া আর কেউ করতে পারে না। যদি জানতো দরজার ওপাশে তোহা দাঁড়িয়ে আছে তাহলে এখন কিছুতেই ওর আরামের ঘুম নষ্ট করে উঠে দরজা খুলতো না। এখন নিশ্চয়ই আবার ওর সঙ্গে রাগারাগি করবে। তোহা কোমরে এক হাত দিয়ে মিরানের দিকে তাকিয়ে বলল, —-” এতক্ষণ কী করছিলে? কতক্ষণ ধরে দরজা নক করছিলাম শুনতে পাওনি তুমি?” মিরান ভুরু সোজা করে আবারো হাই তুলে বলল, —-” ঘুমোচ্ছিলাম! কেন কিছু হয়েছে? এভাবে দরজা ধাক্কা দিলেন কেন?” তোহা চোখ ছোট ছোট করে মিরানের দিকে তাকায়, চোখ গুলো লাল লাল হয়ে আছে হয়তো ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি রাতে। ধ্যাত! কেন যে বেচারা কে এখন শুধু শুধু বিরক্ত করতে গেলাম? আর কিছুক্ষণ পর ডাকলে কী এমন ক্ষতি হতো? কিন্তু অনেক বেলা হয়ে গেছে ওদিকে বাবা ওর সাথে কথা বলবে বলে বসে আছে নীচে। মিরান তোহার চোখের সামনে তুরি বাজিয়ে মৃদু স্বরে বলল, —-” কী হলো কিছু বলছেন না যে?” তোহা ভাবনা থেকে বেরিয়ে মিরানের দিকে তাকিয়ে ছোট করে বলল, —-” ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নীচে এসো, বাবা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি নিচে যাচ্ছি তুমি তাড়াতাড়ি এসো।” তোহা আর কিছু না বলে চলে যায়। মিরান তোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করে, হঠাৎ করে এই মেয়ের হলো কী? এসে রাগী চোখে তাকিয়ে আবার শান্ত চোখে চলে গেলো! যাগ্গে এসব এখন না ভেবে আগে ফ্রেশ হতে হবে। একা একা এসব ভাবতে ভাবতে মিরান ওয়াশরুমের দিকে যায়। ______________________________ সন্তান হারিয়ে একজন মায়ের মনের অবস্থা কেমন হতে পারে তা আর একজন মা উপলব্ধি করতে পারে। আর সে সন্তান যদি হয় মায়ের অতি আদরের একমাত্র সন্তান তাহলে সেই মায়ের মনের অবস্থা অতি বেদনপূর্ণ। বাসে কখন চোখটা লেগে গেছিল বুঝতে পারিনি তাসলিমা জাহান। চোখ খুলে মাঝরাতে মেয়েকে যখন পাশে পায় না তখন থেকেই তার পাগলামী শুরু। বাস চালক এর সাহায্যে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার মেয়ের খোঁজ পায়নি তার স্বামী। তার স্বামী সোহান সাহেব তাকে ক্রমপর্যায় সান্তনা দিয়ে চলেছে। এদিকে তার চোখের আড়ালে বারবার চোখ মুছছেন তিনি। সোহান সাহেব তাসলিমাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তার বন্ধু আজমলের বাড়িতে নিয়ে যায়। সোহান সাহেব ইতিমধ্যে পুলিশ মাধ্যমে তার মেয়েকে খুঁজতে শুরু করেছে। আজমলের স্ত্রী নদী তাসলিমাকে সামলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে, কিন্তু মেয়ের কথা মনে পড়লেই তিনি চিৎকার করে কেঁদে উঠেন। বিয়ের অনেক বছর পর যখন সন্তানাদি হচ্ছিল না কতনা ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েছেন তারা, তাতেও কোনো ফল পাচ্ছিল না দেখে একসময় তারা সব আশা ছেড়ে দেয়। কিন্তু? ওই যে নিয়তি? নিয়তি বলতে একটা কথা আছে না! হঠাৎ একদিন জানতে পারে তাদের তাদের ঘর আলো করে কেউ আসতে চলেছে এই পৃথিবীতে। খুশির অন্ত ছিল না তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে। ঘর আলো করে জন্ম নেয় মেয়ে সন্তান। জন্মের সময় ফুটফুটে মিষ্টি চেহারা দেখে তার বাবার নাম রেখেছিল জান্নাতুল ফেরদৌস। সবাই ভালোবেসে জান্নাত বলেই ডাকে ওকে। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে আদর-যত্নে মানুষ করেছে তাদের মেয়েকে। একমাত্র মেয়ে বলে কখনো চোখের আড়াল হতে দেয়নি আর আজ সেই কলিজার টুকরা কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়ে হারানোর যন্ত্রণা তিনি সহ্যাতীত করতে না পেরে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। ______________________________ মিরান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে মিররের সামনে যায়। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। অনেকটা পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। চুলগুলো ঠিক করবে বলে চিরুনি হাতে নেয় মিরান। চিরুনি চুলের স্পর্শ করার আগেই মিরানের ফোন বেজে ওঠে। চিরুনিটা রেখে বেড সাইডের টেবিলের সামনে যায়। একটু ঝুঁকে ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকায়। স্ক্রিনের নামটা দেখে ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে ফোন রিসিভ করে মৃদু হেসে বলল, —-” হ্যাঁ, মাম্মা বলো।” মিরা মৃদু স্বরে বলল, —-” কখন বের তুই?” মিরান ফোনটা স্পীকারে দিয়ে আবার মিররের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, —-” এইতো একটু পরে বের হবো। কেন কিছু বলবে?” মিরা শান্ত গলায় বলল, —-” হ্যাঁ বলবো তো। তোর এখন বের হবার দরকার নেই। তোহার কনসার্ট শেষ হলে সন্ধার পর কিংবা রাতে বের হোস।” মিরান খানিক কপাল ভাঁজ করে বলল, —-” কেনো? তোহার কনসার্টের পর বের হব কেন?” মিরা মৃদু স্বরে বলল, —-” কারন তোহার কনসার্ট শেষ হলে ওকে সাথে নিয়ে তুই ময়মনসিংহে ফিরবি।” মিরান কথাটা শোনামাত্র হাতে থেকে চিরুনি পড়ে যায়। দ্রুতপায়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বলল, —-” কেন? ওনাকে আবার সাথে করে নিয়ে আসতে হবে কেন?” মিরা মৃদু হেসে বলল, —-” তোকে তো বলতে ভুলে গেছিলাম। মিরু আর তোর পাপা তোহা কে ওর কনসার্ট শেষ করে তোর সঙ্গে আবার এখানে আসতে বলছে।” মিরান ওর মাম্মার কথা শুনে আপনি আপনি ভুরু কুঁচকে যায়। এই মেয়েটাকে আবার ওর সাথে করে ময়মনসিংহে নিয়ে যেতে। অসম্ভব! মিরান তাড়াতাড়ি করে বলল, —-” না মাম্মা আমি পারবোনা আমি এক্ষুনি ফিরে আসছি।” মিরা মন খারাপের অভিনয় করে বলল, —-” বাবা তুই আমার কথাটা রাখবি না?” মিরান সবকিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু ওর মাম্মা মন খারাপ করে থাকবে তা কখনো সহ্য করতে পারে না। মিরান মুখ গোমড়া করে বলল, —-” আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে আসব তোমাদের সিঙ্গার কে আর মন খারাপ করতে হবে না তোমাকে।” মিরা ঠোঁটে হাসি এনে বলল, —-” সত্যি?” মিরান ছোট করে বলল, —-” হুম।” মিরা মৃদু হেসে বলল, —-” আমি জানি তো আমার বাবা কখনো আমার কথা ফেলতে পারে না। আচ্ছা বাবা এখন আমি রাখি সাবধানে আসিস।” মিরান ফোন রেখে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। কোথাকার না কোথাকার একটা মেয়ে হঠাৎ করে উড়ে এসে ওর মাম্মা, পাপা আর বোনের মন জুড়ে বসে আছে। এবার চলুক না ওর সাথে ময়মনসিংহে তখন বুঝাবো মজা এই মিরান কী জিনিস! আর করবেই বা কী? কথায় কথায় ভয় দেখায় মারার হুমকি দেয়। বড্ড ভয়ঙ্কর মেয়েটা। না জানি যে এই মেয়েটার বর হবে তার কী অবস্থা হবে?” #চলবে….
#চলবে….
চলবে….