#প্রাক্তন
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১৩
সকালে উঠেই অরন্যের দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে গেলাম। সেখানে গিয়ে লক্ষ্য করলাম অরন্য নেই। এদিকে ওদিক তাকিয়ে অরন্যকে খুঁজতে লাগলাম। কোথাও ওকে পেলাম না। বেশ অদ্ভুত লাগল বিষয় টা। বেশ কয়েকবার ফোনে কল দিলাম ফোনটাও বন্ধ। রাগে মাথা ব্যথা শুরু করছিল। তবুও রাগটা দমিয়ে ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করলাম।অপেক্ষা করার পরও যখন অরন্য আসলো না সোজাসুজি কলেজে চলে গেলাম। রেটিনের দুটো ক্লাস করে বাসায় ফিরলাম বিকেলে। এর মধ্যে অরন্য একবারও কল দেয়নি। আমি পুনরায় ওর নম্বরে কল দিলাম নম্বর বন্ধ। বুঝতে পারছিলাম না অরন্য নতুন কী চাল চেলেছে। অরন্য ইদানীং বেশ গুটিবাজ হয়ে গেছে। কখন কী করে বসে তার গতিবিধি বুঝা বড় কঠিন। আমি চুপচাপ পড়ন্ত বিকেলের আলোছায়ার খেলা দেখতে লাগলাম আর এগুলো ভাবছিলাম। এর মধ্যে ফোনটা বেজে উঠল। আবির কল দিয়েছে। আমি কলটা কেটে দিলাম। পর পর তিনবার কল দিল তিনবারেই কলটা কেটে দিলাম। চতুর্থ বার কল ধরতেই ওপাশ থেকে বলে উঠল
– কেমন আছো?
– অনেক ভালো। কিছু বলবেন?
– হঠাৎ আপনি করে বলছো যে?
– অপরিচিত কাউকে তুমি বলতে কমফর্ট ফিল করি না।
– এত রাগ আর এত ভাব কী করে ধরো? এখানে আমার দোষ কোথায় বলতে পারো? দোষ তো তোমার, তুমি লুকিয়েছো। আমার জায়গায় যে কেউ হলে এটা মানতে পারবে না।
– তুমি কী এসব বলার জন্য কল দিয়েছো?
– তোমার খুঁজ নিতে কল দিয়েছিলাম।
– আমার খু্ুঁজ নেওয়ার দায়িত্ব কি তোমাকে দিয়েছি?
– অপ্সরা তুমি সে কখন থেকে উল্টা পাল্টা বলেই যাচ্ছ। আমি কী করেছি বলবে? আমার দোষটা কোথায় বলবে? এখানে সবচেয়ে বেশি কষ্ট আমি পেয়েছি। আমার কাছে তুমি আড়াল করে কম ভুল করো নি৷ তুমিও তোমার স্বার্থটাই দেখেছো। আমাকে তো প্রথম থেকে কিছু বলো নি। শুধু বলেছিলে তোমার জীবনে একটা অতীত আছে। এর বাইরে তো জানতাম না। অতীতটা যে এত নোংরা হবে সেটা কল্পনাও করিনি। তুমি অন্য কারও বউ সেটা মানা কী আদৌ সম্ভব? তোমার যদি সম্পর্ক হয়ে ফিজিক্যাল ও হতো তবুও মেনে নিতে পারতাম। কিন্তু বিয়েটা মেনে নিতে পারছি না।
আমি হালকা হেসে বললাম
– দোষটা তোমার না আবির, দোষটা সমাজের। এখানে একটা মেয়ের বিয়ের আগে প্রেমিকের সাথে সম্পর্ক হলে কোনো সমস্যা হয় না। সেটা মানতে সবাই পারে। আর একটা মেয়ের বিয়ের পর সম্পর্ক হলে ডিভোর্স হলে সেটা সমাজ মানতে পারে না। তখন মেয়েটার দোষ হয়ে যায়। বৈধ সম্পর্কে ডিভোর্স হলে সমাজ হাজারটা দোষ লেপ্টে দেয়। আর অবৈধ সম্পর্কে কিছু হলে সমাজ বলে বিয়ের আগে এসব এখন হয়েই।
এখানে আমার দোষ টা কোথায় বলবে? অতীত ভুলে বাঁচতে চাওয়া কী আমার ভুল? অতীতের গ্লানি মুছে সামনের দিকে এগিয়ে চলা কী আমার ভুল? যে অতীতের কোনো অস্তিত্ব নেই সেটা না বলে আমি ভুল করেছি? কতবার বলেছি তোমাকে অতীতটা বলব তুমিই তো বাঁধা দিয়েছো বারবার। আমার দোষটা কোথায় ছিল যেদিন বাচ্চা পেটে নিয়ে বারবার অরন্যের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। কত মেসেজ তাকে দিয়েছি সেটার হিসাব কী তুমি জানো। অস্থির হয়ে উপায় না পেয়ে নিজের বাচ্চা নিজের হাতে খুন করেছি। হ্যাঁ আমি স্বার্থের জন্য আমার বাচ্চা খুন করেছি কারণ তা না হলে এ সমাজ আমাকে নষ্টা বলত আমার বাচ্চাকে জারজ উপাধি দিত। তখন কেউ আমার আর অরন্যের বিয়ের কথাটা বলত না।এটা বলত না যে আমার বাচ্চাটা পবিত্র। তখন শুনতে হতো আমি আকাম করে পেট বড় করছি। হ্যাঁ আমি স্বার্থপর দিনের পর দিন একজনকে ভালোবেসে ১০ টা বছর পার করার পর তার পায়ে ধরেও তাকে পাইনি। হ্যাঁ আমি স্বার্থপর কারণ অরন্যের জন্য একের পর এক ভালো বিয়ের প্রস্তাব রিজেক্ট করে অরন্যের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। হ্যাঁ আমি স্বার্থপর অরন্যের জন্য নিজের আত্মসম্মানটাও একটা সময় বিলিয়ে দিয়েছিলাম। আর বাকি রইল বিয়ে। যে বিয়ের কোনো অস্তিত্ব প্রমাণ ছিল না, সেখানে আমি অতীতটা বর্তমান এনে কীভাবে ডিভোর্স দিব। যে বিয়ের কথা পরিবারেই জানত না। সে সময় সে পরিস্থিতিতে পরিবারকে বলার মতো কোনো সাহস আমার ছিল না। আমার কাছে কোনো প্রমাণও ছিল না যে বিয়ের বিষয় নিয়ে অরন্যের সাথে লড়ব। আর সে সময় সবাই প্রমাণ চাইত। প্রমাণ দিতে না পারলে দোষটা আমার ঘাড়েই পড়ত। পরিবারকে আরও ছোট হতে হত। আর আমি ছিলাম এক জলে ভাসা নৌকা যার কোনো শক্ত ভিত্তি ছিল না যে একা একা লড়ব।
বলাটা খুব সহজ। তবে করাটা কঠিন। আমার পরিবার আছে আমি তাদেরকে এত কষ্ট দিয়েছি এসব নিয়ে কী বলব। তাদের কথা ভেবে অতীত ভুলে সামনে এগিয়েছিলাম। আমি তো আবার সে অতীত সামনে এনে বাবা মাকে কষ্ট দিতে পারি না।
হ্যাঁ আমার একটা ভুল হয়েছে আমার উচিত ছিল অরন্যকে ডিভোর্স দেওয়া। সে সময়টায় ডিভোর্স দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতিতে আমি ছিলাম না। তবে এত বছর পর নিজেকে যখন আমি গুছিয়ে নিয়েছিলাম তখন এসব অতীত আমি পুরোপুরি ভুলে গেছিলাম। সে অতীত সামনে এনে বর্তমান নষ্ট করতে চাই নি। অরন্য যদি সামনে না আসত এ অতীত বিলীন হয়েই থাকত।
তুমি ঠিকেই বলেছো আমি স্বার্থপর। শুধু আমি না দুনিয়ার সবাই স্বার্থপর। সবাই নিজেকে ভালো রাখার জন্য স্বার্থপর হয়। সবাই হতে পারলে আমি কেন পারব না? অরন্য নিজের স্বার্থ তখন দেখেছে তখন অরন্যের দোষ ছিল না আর এখন আমি আমার স্বার্থ দেখেছি তাতেই দোষ? শুনো আমি স্বার্থপর হলেও সেটা সিমীত পরিসরে, অরন্যরের মতো অন্ধ হয়ে নিজের স্বার্থ খুঁজি না। আমি যদি অন্ধ হয়ে নিজের স্বার্থ খু্ঁজতাম তাহলে তোমাকে আমার জমে থাকা সব অতীত না জানিয়েই অরন্যের সাথে কৌশলে সব শেষ করতে পারতাম। আমি কিন্তু তা করে নি। আর তোমাকে ও তো বিয়ের জন্য জোর করে নি। মা বলেছে তুমি আমাকে চাও না আমি তো কোনো অনুগ্রহ তোমাকে বা মাকে করে নি। তাহলে এখন আমাকে এসব কেন বলা হচ্ছে? আমি কী তোমাকে এসবের জন্য কোনো কথা শুনিয়েছি নাকি কিছু বলেছি। তাহলে আমাকে কেন বলা হচ্ছে?
আবির বেশ রাগী গলায় বলল
– তোমাকে কল দেওয়ায় আমার ভুল হয়েছে। তবে কল দিয়েছি আরেকটা কারণে। অরন্য কোথায়? তোমার সাথে দেখা করার জন্য গিয়েছিল এখনও আসে নি। ফোন ও বন্ধ।
– আমি কী জানি সে কোথায়? আমার সাথেই তো তার দেখা হয়নি। ডিভোর্স দিবে বলে লা পাত্তা। আমাকে আর অরন্যের বিষয় নিয়ে কল দিবে না।
– অরন্যের বিষয় নিয়ে তুমি জড়িয়ে আছো বলেই তোমাকে কল দিই।
– আমি জড়িয়ে নেই। অরন্যের দেখা পেলে বলো আমার ডিভোর্স দরকার সেটা যেন তাড়াতাড়ি করে। আমারও অরন্য কোথায় সেটা জানা দরকার। ভালো থেকো।
বলেই কলটা কেটে দিলাম। ফোনটা কেটে জানালার গ্রিল ধরে বাইরের দিকে তাকালাম। পৃথিবীটা বড়ই অদ্ভুত। এখানে অতীত ভুলা গেলেও অতীত থেকে বাঁচা যায় না। সে সাথে ভাবতে লাগলাম অরন্য কোথায়। কেনই বা সে আমাকে আসতে বলে আসলো না। ফোনটাও বন্ধ। আবিরের কথায় মনে হলো অরন্যকে না পাওয়ার ব্যপারে আমাকেই সন্দেহ করছে। তবে অরন্য এখন কোথায় সেটাই একটা রহস্য। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে অরন্যের নম্বরে কল দিলাম। অরন্যের ফোন এখনও বন্ধ। ফোনটা রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। এর মধ্যেই বাবা পিঠে হাত রেখে বলল
– কী হয়েছে? মন খারাপ? এনগেজমেন্ট হওয়ার পর থেকে খেয়াল করলাম মুখ গোমরা করে রাখো। আমরা তো তোমাকে জোর করে কিছু করতে বলে নি। তোমার পছন্দেই সবটা হয়েছে তাহলে মুখ এত কালো কেন? কিছু নিয়ে কী চিন্তিত?
এর মধ্যেই মা ঘরে ঢুকে বলল
– দুই দিন পর বিয়ে এখন কী চিন্তা করিস এত? চিন্তা করে দুদিনে মুখের কী অবস্থা করেছিস দেখেছিস? চোখের নীচে কালো দাগটা গাঢ় হয়ে গেছে। কী হয়েছে তোর?
মায়ের জোরালো কন্ঠ শুনে বাবা বলল
– অপ্সরার মা চুপ করো তো। চেঁচামেচি কেন করো সব বিষয় নিয়ে। চেঁচামেচির তো কিছু হয়নি। আর এত উত্তেজিত হওয়ার ও কিছু হয়নি। ও তো অবুঝ না। যথেষ্ট বয়স হয়েছে। হয়তো কোনো ব্যপারে চিন্তিত। আগে শুনতে দাও কী হয়েছে। এর আগেই চিৎকার করে বাসা মাথায় তুলতেছ কেন?
– চিৎকার কী আর স্বাধে করি? এত বড় মেয়ে কেন ঘরে সবাই এই কথা জিজ্ঞেস করে। যতই চাকুরী করুক। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত মানুষের মুখ তো আটকে রাখতে পারব না। বের হলেই মানুষ একটা কথায় বলে কবে মেয়ের বিয়ে দিবেন। বয়স তো ২৭ পার হতে চলল। ২৮ এ পড়তে বেশি দিন নাই।
মায়ের কথা শুনে আমার কেন জানি না হালকা রাগ জমলো। বেশ কটু গলায় বলে উঠলাম
– বিয়ে জরুরি। তবে একটা মেয়ের জীবনে তো বিয়েই সব না মা। যারা তোমাকে আজকে এসব জিজ্ঞেস করছে তারা কয় বেলা তোমার বাসায় খাবার দিয়ে যায় বলবে? মানুষের কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো চলো।
– তোরে বুঝিয়েও লাভ হবে না। সেই চার বছর যাবত বুঝাচ্ছি। ইদানিং তোর হাবভাব ও ভালো না। আবিরের সাথে অরন্য আসলো কী জন্য বাসায়? এত কিছুর পর তুই আবিরের সাথে অরন্যকে বাসায় আনার সাহস দিলি কী করে? তোকে এ কয়দিন কিছু বলে নি তাই ভাবিস না আমি কিছু বুঝি না। তোর মধ্যে কী চলছে জানি না তবে কিছু একটা হচ্ছে সেটা টের পাচ্ছি। আমার পেটের থেকে তুই হইছস এটা মনে রাখিস।
– মা তুমি একটু বেশি বেশিই করছো না? এত বলার কী আছে? আমি তো কচি বাচ্চা না যে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। যথেষ্ট ম্যাচুউর। আমার ব্যপার আমাকেই ভাবতে দাও। এখানে এত কিছু টেনে আনার তো কিছু দেখছি না। আর কিছু হলে তো জানবেই। সময় মতো আমিই বলব। এখন আপাতত আমাকে একা থাকতে দাও।
– একা থাক সমস্যা নেই। আজকে আবিরের মাকে কল দিয়েছিলাম বিয়ের ব্যপারে উনি বলল তোর কাছ থেকে জেনে নেওয়ার জন্য। কী হয়েছে বল।
– মা অস্থির হইয়ো না আমিই সময় মতো বলব।
আমাদের কথা কাটাকাটি দেখে বাবা মাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
– তুমি থামো। অপ্সরা যথেষ্ট বড় এবং নিজেরটা বুঝার ক্ষমতা আছে। ওকে ওর মতো ভাবতে দাও। যাই হোক সেটা ভালোর জন্যই হবে৷ আর অপ্সরা আমি আর তোমার মা তোমাকে বকলেও সেটা ভালোর জন্য। তুমি অনেক বড় হয়ে গেলেও আমাদের কাছে এখনও সেই ছোট্ট পরীই আছো। মনের সাথে বুঝা পড়া করে বলার মতো হলে বলো। এভাবে চুপচাপ থাকলে আমাদের কাছে একটু খারাপ লাগে।
আমি হালকা হেসে বললাম
– বাবা আমি জানি তোমরা যা করো ভালোর জন্য। তবে এটা নিশ্চিত করতে পারি আমি যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিই তাহলে সেটা অবশ্যই আবেগে পড়ে নিব না। সবকিছু বিবেচনা করে নিব। আর মা মানুষের কথায় তো জীবন চলেও না আর থেমেও থাকে না। মানুষকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজেকে দাও। আমার জন্য চিন্তা হয় জানি তবে এতটা চিন্তাও করো না যেটা করতে গিয়ে তোমাদের উপর মানসিক চাপ পড়বে। শুধু আমার জন্য দোয়া করো। দোয়ায় আমাকে আরও সুন্দর সহজ রাস্তা দেখাতে পারে। আপাতত কিছুই বলতে পারছি না। খুব শীঘ্রই সবটা বলব।
কথাটা শেষ করতেই মা আর বাবা দুজনেই জড়িয়ে ধরে একসাথে বলল
– মা রে দোয়া চাইতে হবে না। আমাদের দোয়ায় তুই সবসময় থাকিস। তোর হাসি মুখটায় আমরা দেখতে চাই।
আমিও মাকে আর বাবাকে দুই বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। মা আর বাবাকে জড়িয়ে ধরার মধ্যে অসম্ভব প্রশান্তি কাজ করে। যেখানে সব দুঃখ ম্লান হয়ে যায়।
আস্তে আস্তে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা আর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামলো। রাতের ব্যপার টা একটু অন্যরকম। এসময়টা ভীষণ একাকীত্ব গ্রাস করে। হতাশায় থাকা সময়ে রাতটায় সবচেয়ে বেশি দীর্ঘ মনে হয়। সারাদিন এটা সেটা করে চলে গেলেও রাতের প্রতিটা সেকেন্ড যেন দীর্ঘ সময়ের জানান দেয়। তখন শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। যন্ত্রণা তখন ঘিরে ধরে। শূন্য ঘরে শুধু আমি। এ দেয়াল গুলোও যেন হাহাকার করে তখন। রাতের বেলায় মনটা ভীষণ অবাধ্য সে না চাইতেও অতীতে ঘুরাঘুরি আবার কখনও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ব্যাকুল হয়। আমার মনেও ঝড় বইছে সে সাথে হাজার টা প্রশ্ন হাজারটা প্রশ্নের উত্তর মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা। চোখ বন্ধ করতেই যেন অতীতের সময়গুলো চোখে এসে উপস্থিত হচ্ছে। চোখ ও বন্ধ করতে পারছি না সে সাথে ঘুমাতেও। এ কালো অধ্যায়ের সমাপ্তি কবে ঘটবে শুধু এ প্রশ্নই মনে চলছে।
আর আবারও হতাশায় ডুবে গেলাম। হতাশায় ডুবে গিয়ে পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলাম। শক্ত প্রাচীর দিয়ে নিজেকে আবদ্ধ করলাম। তারপর খুব সাহস নিয়ে চোখটা বন্ধ করলাম। চোখটা বন্ধ করতেই অতীত ভেসে উঠল চোখের পাতায় আর আমি সে অতীতের সাথে লড়াই করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম খেয়াল নেই।
সকালটা হলো নতুন ঘটনার সূচনা দিয়ে। সে ঘটনার সাথে না চাইতেও জড়িয়ে গেলাম পুনরায়। সেই সাথে আরও কতগুলো প্রশ্নের উদ্ভব ঘটলো আরও রহস্য ঝেঁকে বসলো।
#প্রাক্তন
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১৪
সকালটা হলো নতুন ঘটনার সূচনা দিয়ে। সে ঘটনার সাথে না চাইতেও জড়িয়ে গেলাম পুনরায়। সেই সাথে আরও কতগুলো প্রশ্নের উদ্ভব ঘটলো আরও রহস্য ঝেঁকে বসলো।
সকালে উঠতেই মা আমার রুমে আসলো। মায়ের মুখটা হাসি মাখা। মনে হচ্ছে হালকা রুদ্দুর এসে মায়ের মুখে লেপ্টে গিয়েছে। মায়ের মুখটা দেখেই কেন জানি না প্রশান্ত লাগছিল। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
– কিছু বলবে? এত খুশি দেখাচ্ছে ব্যপার কী?
– খুশি হওয়ার তো কারণ আছেই। আর তুই কত বেলা করে উঠেছিস দেখেছিস? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ কয়টা বাজে৷
মায়ের কথায় দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম। ১১ টা বাজে। এত বেলা করে উঠেছি কীভাবে বুঝতে পারছি না। সারা রাত ঘুম হয়নি তাই সকাল দিকে ঘুম ঝেঁকে বসেছিল। মা আমার পাশে বসে হাসতে হাসতে বলল
– আবিরের মা এসেছিল। উনি তো চাচ্ছে আবির সুস্থ হওয়ার আগেই তোর সাথে বিয়েটা সেড়ে ফেলতে পরে নাকি প্রোগ্রাম করবে। আমি আর অমত করেনি। তোকে ডাকতে নিছিলাম আবিরের মা বলল ঘুমুচ্ছিস তাই না ডাকতে। আমিও আর ডাকে নি। নাক ফুল দিয়ে গেল। আর একটু আগে বাসা থেকে গেল।
মায়ের কথাগুলো একটু অদ্ভুত লাগছিল। যেখানে গতকালকেও আবির এ বিয়ের বিপক্ষে ছিল আবিরের মা চাচ্ছিল না বিয়েটা হোক সেখানে আজকে কেনই মা এসব বলছে। কিছুটা অবাক হচ্ছিলাম। মনে প্রশ্ন জাগলেও দমিয়ে নিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
– আর আবির কী বলেছে? তোমার সাথে কী আবিরের কথা হয়েছে?
– আমার সাথে তো কথা হয়নি। আবিরের মা বলল আবির রাজি। আর আবির অমত কেন করবে সে তো নিজে তোকে পছন্দ করেছে। যা হাত মুখ ধুয়ে খেতে বস। অনেক বেলা হয়ে গেছে। কয়েকদিন পর তোর বিয়ে এখন একটু নিজের যত্ন নিতে শিখ। নিজেকে একটু গুছিয়ে নে। চোখ মুখের অবস্থা তো পুরো শেষ। একটু রূপচর্চা তো করতে পারিস। এখন যদি নিজের প্রতি এত অবহেলা করিস পরে নিজের যত্ন নিবি কী করে। আগে নিজেকে সুন্দর কর। ভেতর বাহির সবকিছু সুন্দর লাগবে। নিজেকে পরিপাটি করার মধ্যেও দেখবি অদ্ভুত একটা শান্তি পাচ্ছিস। তোর হাসি মুখটা যে আমি সবসময় দেখতে চাই রে মা। তাড়াতাড়ি উঠে খেতে আয় এবার। তোর পছন্দের আলু পরোটা বানিয়েছি।
কথা বলতে বলতেই মা রুম থেকে বের হলো। মা বের হতেই আমি আবিরের মাকে কল দিলাম। ওপাশ থেকে উনি কলটা ধরে বললেন
– হ্যাঁ, মা ঘুম থেকে উঠেছ?
– হ্যাঁ উঠেছি। আচ্ছা মা আপনি কি আমাদের বাসায় এসেছিলেন? বিয়েটা নাকি হচ্ছে? আপনি নিজেই তো বিয়েটা ভেঙ্গে দিছিলেন তাহলে আবার কী এমন হলো নাক ফুল দিয়ে গেলেন। আমি তো বুঝতে পারছি না।
মা হাসতে হাসতে বলল
– আবির বিয়েতে রাজি হয়েছে। আর মা যা হয়েছে তো হয়েছেই আমাদের তাতে কোনো মাথা ব্যথা নেই। এখন যত তাড়াতাড়ি হোক বিয়েটা হয়ে যাক।
– মা অরন্যকে ডিভোর্স দেওয়ার আগে কোনো স্টেপ নিতে চাচ্ছি না। আর আবিরের সাথেও আমার কথা বলার আছে। আমি আপনাকে এ বিষয়ে মতামত পরে দিচ্ছি।
– নতুন করে মতামতের কী আছে? আবির প্রথম বুঝতে পারে নি তাই এমন বলেছিল আর এখন বুঝতে পেরেছে বিষয়টা তাই সব মেনে নিয়েছে। সমস্যা নেই তুমি আবিরের সাথে কথা বলো।
আমি কলটা কেটে আবিরকে কল দিলাম। আবির কলটা ধরেই বলল
– পূর্বের ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। আমি তখন মানতে পারছিলাম না। সব দিক বিবেচনা করে মনে হলো আমার তোমার সাথে এমন করা উচিত হয়নি। কারণ তুমি সে অবস্থায় যা করেছো সেটা তোমার দিকে দিয়ে সঠিক। আমি সব কিছু চিন্তা করে মাকে সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। মাও তোমাকে অত্যন্ত পছন্দ করে তাই বিষয়টা নিয়ে আর কোনো অমত করেনি। তোমার মতামত জানতে চাই। ভুল মানুষ করে আমিও করেছি সব ভুলে কী এক হতে পারি না আমরা?
আমি আবিরকে কী বলব বুঝতো পারছি না। আবিরকে হালকা সন্দেহ হচ্ছিল তবুও একটু বিশ্বাস করতে মন চাইল। আর আজকাল যা হচ্ছে তাতে সন্দেহ জিনিসটা হয়তো মনে আঁকড়ে ধরেছে। আমি কী উত্তর দিব বুঝতে পারছি না। চুপ হয়ে গেলাম। আবিরের হ্যালো, হ্যালো শব্দ কানে আসতেই আমি হালকা গলায় বললাম
– অরন্যকে আগে ডিভোর্স দিতে হবে তারপর এ বিয়ে করতে হবে। কিন্তু অরন্যকে তো পাচ্ছি না। ডিভোর্স কী করে দিব৷ আর কাগজ পত্রও পাচ্ছি না।
– অপ্সরা এত অস্থির হইয়ো না। অরন্যকে কবে বিয়ে করেছিলে সেটা মনে আছে তো? আমি উকিলের সাথে কথা বলেছি কাগজ ছাড়াও ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে নিব। যেদিন বিয়ে করব সেদিনেই ডিভোর্স আগে হবে তারপর বিয়ে। তুমি একদম চিন্তা করো না। আর আমি তো তোমার বাসায় যেতে পারব না। তোমাকে বিয়ের দিন আমার বাসায় আসতে হবে।
– সে নাহয় আসা যাবে। তবে বিষয়টা কেমন জানি গোলমেলে লাগছে।
– তোমার জীবনে অনেক নেতিবাচক বিষয় ঘটেছে তাই তুমি সব কিছু এখন সহজ ভাবে নিতে পারছো না। কালকে তোমার কথাগুলো শুনার পর আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গোলমেলে লাগার তো কিছু দেখছি না। খাওয়া দাওয়া কী করেছো?
– নাহ! মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম।
– খালি পেটে আছো তাই বিষয়গুলে গোলমেলে লাগছে৷ খাওয়া দাওয়া করো সব ঠিক হয়ে যাবে। আর আমাকে ক্ষমা করে দাও। বিষয় টা সাথে সাথে মানতে পারে নি আমি। তাই কী থেকে কী করেছি জানি না৷ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। সবমিলিয়ে আমি তোমাকে আর অসম্মান করব না। আমাকে কী ক্ষমা করে দেওয়া যায় না।
আবিরের কথাগুলো বেশ সাবলীল। মনে মনে ভাবলাম আবিরের জায়গা থেকে আবির এতটাও ভুল ছিল না। সে ভুল বুঝেছে তাকে তো একটা সুযোগ দিতেই পারি। আর এবার তো ও সবটা জেনে আমাকে মেনে নিয়েছে এখানে ও পরবর্তীতে কোনো কথাও শুনাতে পারবে না৷ আবিরের মা ও সবটা জানে। তারা যদি অতীত মেনে আমাকে মেনে নিতে পারে তাহলে অসুবিধা দেখছি না। হালকা গলায় বললাম
– আমার একটা ত্রুটি ছিল তোমাকে প্রথম বলিনি এজন্য দুঃখিত।
– চলো মান অভিমানের পালা মিটিয়ে নিই। আর নাকফুলটা দেখো পছন্দ হয়েছে কী না।
আমি মুখে হাই তুলতে তুলতে বললাম
– আচ্ছা রাখলাম। পরে কথা হবে।
মনটা বেশ প্রশান্ত লাগছে। সবকিছু আবার ঠিক হতে চলল। এত কাহিনি হওয়ার একটা ইতিবাচক দিক হলো এখন আবির আমার সব জেনে আমাকে মেনে নিয়েছে আর তার মাও। এখানে আমার আর কোনো ভুল বা মিথ্যা থাকবে না। হাত মুখটা ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলাম খেতে। মা পরোটা নিয়ে এসে বলল
– তোর পছন্দের আলু পরোটা করেছি।
আমি পরোটা খেতে খেতে বললাম
– আবিরের মা যে নাক ফুলটা দিয়ে গেছে দাও তো দেখি।
মা আমার কথায় নাকফুলটা নিয়ে আসলো। আমি নাক ফুলটা দেখার সাথে সাথে আঁৎকে উঠলাম। কারণ এটা তো সে নাকফুল যে টা অরন্য আমাকে দিয়েছিল। এ নাকফুলটা আবিরের মা কোথায় পেল? কারণ নাক ফুলটা আমি অরন্যকে ফেরত দিয়েছিলাম চার বছর আগে। আর এই নাকফুলেই বা কেন দিল।খাবারটা আটকে যেতে লাগল। খুব বেশি খেতে পারলাম না। নাকফুলটা নিয়ে ঘরে এসে আবিরকে কল দিয়ে বললাম
– আবির নাকফুলটা তো অরন্যের এটা মা পেলো কী করে?
– অপ্সরা কী বলছো? এটা মায়ের নাকফুল। অরন্যের হতে যাবে কেন?
– আমার স্পষ্ট মনে আছে এ নাকফুলটা আমি চার বছর আগে অরন্যকে ফেরত দিয়েছিলাম।
– অপ্সরা ডিজাইন হয়তো এক। কিন্তু অরন্যের নাক ফুল এটা না। আর তুমি নিজেই অরন্যের মধ্যে ডুবে আছো। নিজেকে সামলাও। নিজের প্রতি অস্থা রাখো। সব কিছুতে সন্দেহ আর কারণ খুজতে গেলে ভালো থাকবে না। আর আজকে কী ক্লাস আছে তোমার?
– আজকে ক্লাস নেই।
– তাহলে বিকেলে এসো।
– হুম আসবো।
কলটা কেটে দিলাম। সত্যিই তো এক ডিজাইনের নাক ফুল তো হতেই পারে। আমি সত্যিই একটু বেশি কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছি সবকিছুতে। যা হবে ভালোর জন্য কথাটা মনে মনে বলেই দীর্ঘ শ্বাস নিলাম। তবে অরন্য কোথায় গায়েব হলো সেটাও ভাবার বিষয়। এমন সময় ফোনে অচেনা নম্বর থেকে কল আসলো আমি কলটা ধরতেই একটু বিস্মিত হলাম। কারণ
(কপি করা নিষেধ। চাইলে শেয়ার করে পাশে থাকতে পারেন)
( কপি করা নিষেধ। চাইলে বেশি বেশি শেয়ার করে পাশে থাকতে পারেন)