#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_২৭
#M_Sonali
— শুধু তোমার থেকে নয় শ্রাবণী। এখন ওর আমার থেকেও বড় বিপদ রয়েছে। কারণ ও আমার আসল পরিচয় জেনে গেছে। আর যে পর্যন্ত ওর 25 বছর পূর্ণ না হচ্ছে, সে পর্যন্ত আমি ওর সামনে যেতে পারবো না। তুমি তো জানোই এখন যদি আমি ওর কাছে যাই। তাহলে ওর কত বড় ক্ষতি হবে। যা চাইলেও আমি আটকাতে পাড়বো না!
শ্রাবণের কথা শুনে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে রইলো শ্রাবণী। তারপর কিছু একটা ভেবে ভ্রু কুঁচকে বললো,
— কিন্তু চাঁদনী তোমার ব্যাপারে বুঝলো কিভাবে? তুমিতো অনেক সতর্কতার সাথে ওর সাথে থেকেছো সব সময়। তাহলে ও কিভাবে বুঝল যে তুমি একজন ভ্যাম্পায়ার? এটা কিভাবে পসিবল হলো ভাইয়া?
— সেটা আমিও সঠিকভাবে জানিনা শ্রাবণী। ও কিভাবে আমার আসল রূপটা ধরে ফেলল। তবে আমাদের অনেক বড় একটা ভুল হয়ে গেছে। আর সেটা হল ওর সামনে আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত ছিল। আমরা নিজেদের অসতর্কতার কারণেই ওকে এমন বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছি। এখন ওর কিছু হলে কি হতে পারে ভাবতে পারছ একবার? বুঝতে পারছি না ওকে কিভাবে রক্ষা করব আমি। এখন তো ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যে পর্যন্ত আগামি তিন মাস পার হয়ে ওর পঁচিশ বছর পূর্ণ না হচ্ছে।
ওর কথার উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ থেকে শ্রাবনী বলে উঠল, তুমি এত টেনশন করো না ভাইয়া। চাঁদনীর কিছুই হবেনা। ও যতক্ষণ ওই বাসার মাঝে আছে ততক্ষণ ও একদমই নিরাপদ। কারন ওই বাসায় কোন বাজে ভ্যাম্পায়ার ঢুকে ওর ক্ষতি করতে পারবে না। তুমি তো জানো ঐ বাসার ক্ষমতা।
— আমি সেটা জানি শ্রাবণী। তোমায় সেটা বলতে হবে না। কিন্তু আমি চাঁদনীর রাগের ব্যাপারেও জানি। ওর অসম্ভব রাগ ও জেদ। ও যদি জেদ ধরে বসে যে বাসা থেকে বের হবে। তাহলে ওকে আটকানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। আর আমরা চাইলেও ওর সামনে এখন যেতে পারবো না। কিন্তু ও যদি বাসা থেকে বের হয়, তাহলে ওর কত বড় ক্ষতি হবে সেটা কি ভাবতে পারছো একবার? ও তো জানে না ওর চারিপাশে ওর জন্য কত বিপদ উৎপেতে আছে সব সময়।
— হুম বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এখন তাহলে আমরা কি করব ভাইয়া? চাঁদনীকে কিভাবে বাঁচাবো সব বিপদ থেকে? এই তিনটা মাস!
— আমি কিছু ভেবেছি। তুমি এদিকটা খেয়াল রাখো। আমি সব সময় চাঁদের উপর নজর রাখব দূর থেকেই। সেটাও ওর আড়ালে থেকে। কারণ ও কে আমি বিশ্বাস করিনা। ও ভীষণ জেদি একটা মেয়ে। ও জেদের বসে ছাদের উপরে উঠতে পারে। বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করতে পারে। আর এই সুযোগটার’ই অপেক্ষা করছে হয়তো ওই ভ্যাম্পায়ারেরা। যেটা চাঁদনীর জন্য ভীষণ বিপদজনক সাথে আমাদের জন্যও।
রর কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল শ্রাবণী। তারপর শ্রাবণের থেকে বিদায় নিয়ে নিজের কাজে চলে গেল। শ্রাবণ ও আর দেরি না করে ডানা মেলে উড়ে চলে এলো সেই বাসাটার কাছে। বাসাটা অনেক বড় একদম রাজ প্রাসাদের মতো। কিন্তু বাসাটা কে ঘিরে অনেক বড় দেওয়াল রয়েছে। যে দেওয়ালের কারণে বাইরে থেকে বোঝা যায় না যে ওর মধ্যে কোন বাসা আছে। আর বাসাটা ঠিক সমুদ্রের মাঝখানে একটি দ্বীপ এর উপর যাদু দ্বারা নির্মিত। যা চাঁদনী একটুও বুঝতে পারেনি।
শ্রাবন উড়ে এসে বাসার মধ্যে নেমেই লুকিয়ে পরল চাঁদনীর চোখের আড়ালে। যাতে চাঁদনী ওকে দেখতে না পারে । তবে শ্রাবণ চাঁদনীর খুব একটা কাছে গেল না। কেননা এখন ওর কাছে গেলেই ওর রক্তের প্রতি ভীষন নেশা অনুভব করবে। তাই নিজেকে কন্ট্রোল করার জন্য চাঁদনীর থেকে অনেকটা দূরেই রইল সে।
এদিকে চাঁদনী একা একা বসে থাকতে থাকতে ভীষণ বোর হয়ে গেছে। রাত হয়ে গেছে অনেক বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এত বড় বাসায় একা থাকতে ভীষণ ভয় করছে ওর। খুধাও লেগেছে বেশ। অনেক্ষন হলো কিছু খাওয়া হয়নি তার। তাই আর বসে না থেকে শ্রাবণের নিয়ে আসা সেই খাবারগুলোর প্যাকেটের কাছে চলে গেলো সে। খাবারের প্যাকেট খুলে যখনি তা খেতে যাবে, তখনি দেখলো খাবারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সেই সকালে নিয়ে আসা খাবার কি আর এখনো থাকে! মনটাই খারাপ হয়ে গেলো চাঁদনীর। সাথে রাগও হচ্ছে ভীষন। এতটা রাগ হচ্ছে যে শ্রাবণকে সামনে পেলে এখন ও’ই শ্রাবণের রক্ত চুষে মেরে ফেলতো।
দূরে আড়ালে দাঁড়িয়ে ওর কার্যকলাপ সবকিছুই লক্ষ্য করছে শ্রাবণ।আর মুচকি মুচকি হাসছে। যখনই দেখল রাগে ফেটে পড়ছে চাঁদনী। তখনই দ্রুত ফোনটা বের করে চাঁদনীর নাম্বারে কল দিলো শ্রাবণ। সাথে সাথে ওর ফোনটা বেজে উঠল। ফোন বেজে উঠতেই দৌড়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো চাঁদনী।তারপর রাগি গলায় বলল,
— আপনার এতক্ষনে ফোন দেওয়ার সময় হল? আমি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি। কোন খোজ আছে আপনার? আমি যে কখন থেকে না খেয়ে আছি সেটা জানা আছে আপনার? এক্ষুনি আমার জন্য খাবার নিয়ে এখানে হাজির হবেন। নইলে কিন্তু,,,!
এতোটুকু বলতেই ওকে থামিয়ে দিয়ে শ্রাবণ বলে উঠল,
— কুল, চাঁদনী কুল, এত রাগ করছো কেন তুমি? তোমার জন্য এত রাগ মোটেও ভালো নয়। তোমার অনেক ক্ষুদা লেগেছে তাই তো? তুমি এক কাজ করো। তুমি এখন যে রুমে বসে আছ, তার পাশের রুমের জানালার কাছে গিয়ে জানলাটা খুলো। খুললেই দেখবে সেখানে খাবারের প্যাকেট রাখা আছে। খাবারের প্যাকেট গুলো নিয়ে বসে খাও। আর মাথা ঠান্ডা করো। একদম ভয় পাবে না। এখানে তুমি একদম সেভ আছো। এখানে তোমার কোন ক্ষতি হবে না বুঝলে। আর খেয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।
— ঘুমিয়ে পরবো মানে? আমি এখানে একা ঘুমাতে পারবো না। আপনি এই মুহূর্তে এখানে আসবেন। আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে। এত বড় একটা বাসায় আমি একদম একা একা রয়েছি। আপনি বুঝতে পারছেন আমার কি অবস্থা হচ্ছে? আপনি আসুন এখন। এখানে এসে আমার সাথে একসাথে থাকবেন।
অভিমানি কন্ঠে কথাগুলো বললো চাঁদনী। ওর কথা শুনে বাঁকা হাসল শ্রাবন। তারপর মৃদু কণ্ঠে প্রশ্ন করে উঠলো,
— কিন্তু আমি তো একটা ভ্যাম্পায়ার! সেটাতো তুমি এখন জেনে গেছ। আমি আসলেই তো তোমার আরো বেশি বিপদ হতে পারে তাই না! আমি যদি তোমার রক্ত চুষে তোমায় মেরে ফেলি তখন কি হবে?
— আমি জানি আপনি এমন কখনোই করবেন না। আমাকে মারা তো দুর আমাকে একটা ফুলের টোকা দিয়েও কখনো আঘাত করবেন না। এত টুকু বিশ্বাস আছে আমার আপনার প্রতি।
ওর কথায় কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো শ্রাবণ। তারপর গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,
— কিন্তু এই বিশ্বাসটা কি করে এলো আমার প্রতি? আমি তো তেমন নাও হতে পারি! যদি তোমার কোন ক্ষতি করে বসি? বা নিজের কোন স্বার্থের জন্য তোমাকে ব্যবহার করে থাকি! তখনও কি আমাকে এভাবে বিশ্বাস করবে তুমি?
— আমি এই কয়েকদিনে আপনাকে যতটুকু জেনেছি। তাতে আমার বিশ্বাস আপনি আমাকে প্রচুর ভালোবাসেন। আর আপনি কখনই আমার ক্ষতি করতে পারবেন না। এখন আপনিও জানেন যে আমি আপনাকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসা নিশ্চয়ই বিশ্বাস ছাড়া হয়না। আপনার প্রতি আমার যেমন ভালোবাসা আছে। নিশ্চয়ই আপনার মনেও আমার জন্য এই একই ভাবে ভালোবাসা আছে। আমি যেমন কখনো আপনার ক্ষতি করতে চাইবো না। তেমনি আপনিও আমার ক্ষতি করতে চাইবেন না। আর এই বিশ্বাসের জোরে আমি কথাগুলো বলছি। তাই এত কথা না বাড়িয়ে সোজা এখানে চলে আসুন। আমার একা ভীষণ ভয় করছে। প্লিজ চলে আসুন শ্রাবণ। অন্তত আমাকে একটু সাহস দেওয়ার জন্য চলে আসুন।
ওর কথার উত্তরে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো শ্রাবণ। তারপর গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,
— চাঁদনী তুমি একজন মানুষ। তাই তোমার চিন্তাধারা আর একজন ভ্যাম্পায়ার হিসেবে আমার চিন্তাধারা কখনো এক নাও হতে পারে। মানুষের মনে যেমন ভালোবাসা আছে। একজন ভ্যাম্পায়ার এর মধ্যে ঠিক একই রকম ভালোবাসা থাকবে সেটা তো নাও হতে পারে! তুমি হয়তো আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসো। কিন্তু আমি যদি তোমাকে কোন স্বার্থের জন্য ভালোবেসে থাকি? তবেও কি তুমি আমাকে ওভাবে ভালবাসবে? যদি কখনো জানতে পারো যে আমার ভালোবাসা শুধুমাত্র আমার কোন স্বার্থ হাসিলের জন্য! তখনও কি তুমি আমায় এভাবে কাছে ডাকবে?
ওর কথার উত্তরে কিছুক্ষণ নীরব থেকে চাঁদনী বলল,
— দেখুন শ্রাবণ আমি আপনার কাছ থেকে এত কথা শুনতে চাচ্ছি না। আপনার কাছ থেকে অনেক প্রশ্নের উত্তর জানার আছে আমার। আমি এই মুহূর্তে আপনাকে এখানে চাই। পরের কথা পরে ভাবা যাবে। আপনি এখন এখানে চলে আসুন নয়তো আমি বাসা থেকে বাইরে বের হতে বাধ্য হব।
— ভুল করেও তুমি এমন কাজ করবে না চাঁদনী। তুমি জানো না তোমার জন্য বাইরের পৃথিবীটা কতটা ভয়ংকর। তোমার চারিপাশে কত শত্রু উৎ পেতে আছে। এমনকি তুমি আমার থেকেও নিরাপদ নও, আমার আসল পরিচয় জানার পর। যে পর্যন্ত তোমার 25 বছর পূর্ণ না হবে, সে পর্যন্ত তুমি আর আমার সাথে সামনাসামনি এভাবে দেখা করতে পারবে না। তাহলে হয়তো তোমার সবচাইতে বড় ক্ষতির কারণ আমি হয়ে দাঁড়াবো। যেটা আমি চাইনা। তুমি যদি নিজের ভাল চাও তাহলে আমার কথা শোনো। চুপচাপ খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো এ তিনটা মাস কষ্ট করে বাসাতেই থাকো বাইরে বের হয়ো না প্লিজ।
— বিপদ বিপদ বিপদ, এই শব্দটা শুনতে শুনতে ছোটবেলা থেকে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছি আমি। আমি আজ অব্দি জানিনা বাইরের পৃথিবীতে আমার জন্য এত বিপদ কেন লুকিয়ে আছে? আমি এমন কে, যার জন্য চারিপাশে শুধু এত বিপদ? আর এত ভ্যাম্পায়ারের সাথেই বা আমার সম্পর্ক হলো কিভাবে? নিজের চোখে ভ্যাম্পায়ারদের হাতে বাবাকে মরতে দেখেছি আমি। মাকে তো কখনো দেখিই নি। আবার যার সাথে বিয়ে হল যাকে আমি ভালবেসে ফেললাম সেও একজন ভ্যাম্পায়ার। এসব কি হচ্ছে আমার সাথে? আমি সব কিছুর উত্তর জানতে চাই শ্রাবন। বলুন এসবের মানে কি? এতকিছু কেন হচ্ছে আমার সাথে? কি দোষ আমার?
কথাগুলো একনাগাড়ে বলেই কান্না করতে শুরু করল চাঁদনী। শ্রাবণ কোন উত্তর দিল না চুপ করে থেকে মোবাইলে ওর কান্নার শব্দ গুলো শুনতে লাগল। এভাবে বেশ কিছুক্ষন কেটে যাওয়ার পর শান্ত স্বরে বললো,
— চাঁদপাখি প্লিজ এভাবে উত্তেজিত হইও না। সময় আসলে সকল প্রশ্নের উত্তর তুমি নিজে থেকেই জেনে যাবে। আমাকে বলতে হবে না। শুধু তিনটা মাস অপেক্ষা করো প্লিজ। আর আমাকে বিশ্বাস করো। যদি আমাকে সত্যিই মন থেকে ভালোবেসে থাকো তাহলে বিশ্বাস রাখো। যা হবে ভালো হবে। শুধু এই তিনটা মাস একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করো। প্লিজ চাঁদপাখি ডোন্ট ক্রাই।
ওর কথার উত্তরে আর কিছু বললো না চাঁদনী। ফোন কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ মন ভরে কান্না করে নিলো। তারপর উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেয়ে শুয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করতে লাগলো।
#ভ্যাম্পায়ার_বর (সিজন ২)
#পার্ট_২৮
#M_Sonali
আজ বেশ কড়া রোদ উঠেছে চারিদিকে। সূর্যটা যেন তার তেজ ঢেলে দিয়েছে পৃথিবীর বুকে। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে চারিদিক। তবে কোথাও কোনো মানুষের চিহ্ন বা সাড়াশব্দ নেই। চারিদিকে শুধু পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ আর অদ্ভুত সব শব্দ। সাথে পানির কলকলানি শব্দও ভেসে আসছে বেশ তিব্র ভাবে। বলতে গেলে বেশ মিষ্টি একটা পরিবেশ চারিদিকে। রোদের তাপটা’ই যা একটু অসহ্যনীয়। তবে সমুদ্রের পাড়ে বাড়িটা হওয়ায় সমুদ্রের স্নিগ্ধ ঠান্ডা বাতাসের কারণে সেই অসহ্যতাকে তেমন একটা মালুম হচ্ছে না শরীরে। চাঁদনী সেই কখন থেকে চুপ করে ছাদের উপর বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সূর্যের তিব্র তাপ ওর শরীরে লাগলেও তেমন একটা ক্ষতি হচ্ছে না তাতে। বা গরমও লাগছে না খুব একটা, সমুদ্রের ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে। যদিও ও জানে না ও এখন কোথায় আছে। এটা আসলে কোন জায়গা। কিন্তু এতোটুকু বুঝতে পারছে যে, এটা কোন নদী বা সমুদ্রের পারে। কেননা সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ বেশ ভালোভাবেই ওর কানে এসে বারবার বারি খেয়ে যাচ্ছে।
শ্যাম্পু করে রাখা ভেজা চুলগুলো বাতাসে আলতোভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে। দু চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে চাঁদনীর। মনটা যেন ভীষণ খারাপ তার। ছাদের রেলিংয়ের ওপর দুই হাতে রেখে চেয়ারে বসে থুঁতনিটা হাতের উপর ভর করে রেখে এক নজরে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। কিছুক্ষণ পরপর কয়েকটা করে নাম না জানা পাখি ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে আকাশে। সেগুলো দেখে যেন মন ভোলানোর চেষ্টা করছে সে। কিন্তু এতই কি সহজ মনকে ভুলিয়ে একটু শান্ত করা?
গত একমাস হলো এই বাসায় একদম একা একা রয়েছে চাঁদনী। চাইলেও কোথাও যাওয়ার উপায় নেই তার। শ্রাবণের কথা মত শুধু দিনের বেলাতেই একটু ছাদের উপর উঠে বসে থাকতে পারে। মনটাকে হালকা করতে পারে। বাইরে ফুলের গাছের চর্চাও করতে পারে। ফুল গাছের সাথে থাকতেও বেশ ভালোলাগে চাঁদনীর। কিন্তু রাতটা যেন মোটেও কাটতে চায় না তার। সন্ধ্যা হবার আগেই নিজের রুমে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে হয়। বাসা থেকে কোথাও বের হতে পারে না সে। সে জানে শ্রাবণ প্রতিদিন আসে। তার জন্য খাবার দিয়ে যায়। তার ওপর দূর থেকে নজর রাখে। কিন্তু কখনো সামনে আসেনা।
এই কয়েকদিনে চাঁদনী ভালোভাবে বুঝে গেছে যে শ্রাবণ যা করছে ওর ভালোর জন্য করছে। এখন যদি শ্রাবণ ওর সামনে আসে, তাহলে নিশ্চয়ই ওর বড় কোন বিপদ হবে। যেটা হয়তো শ্রাবণ কোনোভাবেই চাইছে না। “কথায় আছে ভালবাসায় বিশ্বাস না থাকলে সেটাকে ভালোবাসা বলে না।” চাঁদনীও হয়তো সেই বিশ্বাসের জোরে শ্রাবণের কথা মতো একা একা থাকতে বাধ্য হয়েছে। ওর উপর আর জোর করেনি নিজের সামনে আসার জন্য। তবে ভীষণ কষ্ট হয় এমন একটি বাসায় একদম একা একা থাকতে। তবুও নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছে চাঁদনী। ছোটবেলা থেকেই বন্দিশালায় থেকে মানুষ চাঁদনী। তাই হয়তো খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না তার। কিন্তু তবুও তখন তো ওর বাবা ছিলো ওর সাথে কথা বলার জন্য। গল্প করার জন্য। এখানে তো কেউ নেই। বেশ কষ্ট হয় চাঁদনীর। তবে সে শ্রাবণ কে বুঝতে দেয় না। তবে শ্রাবনও ঠিক ওর মনের কথা বুঝতে পারে। আর সেও ভীষণ কষ্ট পায় ওর কাছে আসতে না পেরে। তবুও সব কষ্টকে দীর্ঘশ্বাসের সাথে উড়িয়ে দিয়ে নিজেকে সংযত রেখে ওর থেকে দূরেই থাকে শ্রাবণ। কারণ ওর সামনে গেলে যে সবকিছু মাটি হয়ে যাবে। এত দিনের সব প্রচেষ্টা শেষ হয়ে যাবে। চাঁদনীর জীবনটা ধ্বংসের মুখে পড়ে যাবে। যেটা শ্রাবণ কখনোই চায়না। সে যে অসম্ভব ভালোবাসে তার চাঁদপাখিকে।
হঠাৎ ফোনের শব্দে ধ্যান ভাঙলো চাঁদনীর। সে আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে পাশে রাখা ফোনের দিকে তাকালো। তারপর ফোনের স্ক্রিনে শ্রাবনের নাম্বার দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানের কাছে ধরে ছোট্ট করে বলল,
— হুম বলুন!
ওর কথার উত্তরে ওপাশ থেকে শ্রাবন শান্ত গলায় বলে উঠল,
— কান্না করছো কেন চাঁদ পাখি? খুব মন খারাপ লাগছে বুঝি?
শ্রাবণের কথার উত্তর না দিয়ে আশে পাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিল চাঁদনী। তারপর উল্টো প্রশ্ন করে কান্নাভেজা কন্ঠে বলে উঠলো,
— আচ্ছা আপনি কি সব সময় আমার দিকে নজর রাখেন? আপনি কি আমার আশেপাশেই কোথাও থাকেন সবসময়? তাহলে আমার সামনে আসেন না কেন? আমার যে ভিশন দম বন্ধ হয়ে আসছে এখানে। এভাবে থাকতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আপনাকে। আপনি কি এখন একটু আমার সামনে আসতে পারবেন প্লিজ? পাশাপাশি বসে একটু কথা বলবেন আমার সাথে?
চাঁদনীর এমন কান্নাভেজা কণ্ঠে কথাগুলো শুনে যেন বুকটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল শ্রাবণের। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ওর চাঁদনীর জন্য। কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। এখন যদি আবেগের বশে চাঁদনী সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তাহলে যে ওর অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। যেটা কোনোভাবেই করতে চায় না শ্রাবণ। কিন্তু নিজেকে আটকে রাখাও যে ভীষন কষ্ট হয়ে পড়ছে তার। ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে চাঁদনীকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিয়ে নিজের ভালোবাসা পরশ বুলিয়ে দিয়ে ওর সব কষ্ট মুছে দিতে। কিন্তু সেটা যে কোনোভাবেই সম্ভব নয় এখন। শ্রাবণ যদি কোন ভ্যাম্পায়ার না হয়ে কোন সাধারন মানুষ হতো! তাহলে হয়তো এতক্ষণ চোখের পানি দিয়ে বন্যা হয়ে যেত তার। কিন্তু ভ্যাম্পায়ার যে কান্না করতে পারে না! তার চোখ দিয়ে জল পড়ে না। শুধু ভেতরে ভেতরে পুরে পুরে ছাই হয়। ঠিক তেমনটাই যেন হচ্ছে শ্রাবণের সাথে। কান্না না করলেও অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে তার। বুকটা যেন জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে চাঁদনীর কষ্টে। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে নিজেকে যতটা সম্ভব শক্ত করল শ্রাবণ। তারপর গম্ভীর গলায় বলে উঠল,
— চাঁদনী বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল। এখন তুমি রুমে যাও। দরজা জানালা সবগুলো সব ভালভাবে লাগিয়ে দাও। তোমার এখন আর ছাদে বসে থাকা নিরাপদ নয়।
শ্রাবণের এমন উত্তরে মনটা যেন ভেঙে গেল চাঁদনীর। সে ভেবেছিল তার এভাবে কথা বলায় শ্রাবণ নিশ্চয়ই তার কাছে ছুটে আসবে। তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে সান্তনা দেবে। অন্ততপক্ষে 5 মিনিটের জন্য হলেও সে আসবে। কিন্তু তাঁর সেই ধারণাটা ঠিক হল না। শ্রাবণ তাকে এক প্রকার এড়িয়ে গেল। এ জিনিসটা ভীষণভাবে ক্ষতবিক্ষত করল চাঁদনীকে। সে আর একটা কথাও না বলে ফোনটা কেটে দিয়ে সোজা ছাদ থেকে নিচে নেমে গেল। তারপর ছাদের দরজা লাগিয়ে, বাসার দরজা-জানালা সব লাগিয়ে দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে বসে আনমনে কিছুক্ষণ কান্না করে নিলো। দূর থেকে সব কিছুই দেখছিলো শ্রাবণ। সেও যে ভালো নেই তার চাঁদপাখির কষ্টে। তারও যে ভীষন কষ্ট হচ্ছে।
বেশ অনেকটা সময় নিয়ে কান্না করার পর চোখ মুখ মুছে ওয়াশরুমে চলে গেল চাঁদনী। তারপর হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে কিছু একটা ভাবলো। তারপর বাইরের রুমের দিকে পা বাড়ালো সে। বাইরে রুমে গিয়ে এদিক ওদিক একটু ঘোরাঘুরি করতেই একটি দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে গেলো তার। বেশ কিছুদিন হল সে খেয়াল করছিল যে একটা রুমের দরজা দিনের বেলা দৃশ্যমান থাকলেও রাতের বেলায় সেই রুমটা গায়েব হয়ে যায়। চাঁদনীর বেশ ভালো করেই মনে আছে সে দিনের বেলায় এই দেওয়াটার কাছে একটি অদ্ভত দরজা দেখেছিলো। কিন্তু তখন এতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি সেটা। তবে সন্ধ্যা নামতেই সেই দরজাটা যেনো অদৃশ্য হয়ে দেওয়ালে পরিনত হয়েছে। কি হচ্ছে ওর সাথে তা কোনোভাবেই বুঝতে পারছেনা চাঁদনী। এ কদিন খুব একটা ধ্যান না দিলেও আজকে বিষয়টা বেশ ভালোভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল তার।
সে কৌতুহলের বশে সেই দেওয়ালের কাছে এগিয়ে গেল। তারপর দেওয়ালে হাত বুলিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো এখানে সত্যিই কোন দরজা আছে কিনা। নাকি সেটা ওর মনের ভুল! কিন্তু না দেওয়ালে হাত বুলিয়েও কোন দরজা খুঁজে পেল না সে। তাই মনে মনে ভাবল হয়ত তার ভুল ধারণা ছিল। এখানে আসলে কোন দরজা নাই। কিন্তু তবুও মনের মাঝে একটি খচখচানি ঠিকই থেকে গেল তার। মনে মনে ঠিক করল সত্যিই যদি এখানে দিনের বেলা কোন দরজা দৃশ্যমান হয় তাহলে তখনই সে দেখে নেবে। এটা আসলে কি ছিল। কথাগুলো ভেবে সেখান থেকে আবার নিজের রুমে ফিরে এলো চাঁদনী। তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে শ্রাবনের নাম্বারে ডায়াল করল। একবার রিং বাজার সাথে সাথে রিসিভ করলো শ্রাবণ। বলল,
— হ্যালো, চাঁদ পাখি কিছু বলবে?
— আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব। প্রশ্নগুলোর সত্যি উত্তর দেবেন আমার কাছে?
চাঁদনীর প্রশ্নে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো শ্রাবণ। ওকে চুপ থাকতে দেখে চাঁদনী আবারো বলে উঠলো,
— কি হলো শ্রাবণ! সত্যি উত্তর দেবেন না আমার কাছে? আমি তো কখনই আপনার কাছে জোর করে কোন কিছু জানতে চাইনি। তবে আজকে একটা কথা জানার জন্য ভীষণ ইচ্ছে করছে। বলুন না আমায় সঠিক উত্তর দিবেন তো?
— বল কি জানতে চাও?
— আচ্ছা আপনার এই বাসাতে তো আমি অনেকদিন হলো আছি। এতদিন তেমন একটা খেয়াল না করলেও আজকে খুব ভালভাবে খেয়াল করলাম এই বাসার বাইরের রুমের দেয়ালের ওখানে অদ্ভুত একটা দরজা ছিল। যে দরজার সাথে কেমন প্রাচীন যুগের কিছু দৃশ্য আকি বুকি আঁকা ছিল। আমি দরজাটা কেনো জানিনা ভালোভাবে খেয়াল করিনি তখন। দরজাটা খুলে ভিতরে গিয়ে দেখাও হয়নি। কিন্তু এখন যখন আমি বাইরে গেলাম তখন দরজাটা সেখানে ছিল না। মনে হয় অদৃশ্য হয়ে গেছে। দেওয়ালে হাত বুলিয়েও দেখেছি। সেখানে কোনো দরজা নেই। আপনি কি আমায় বলতে পারেন! ওখানে কি সত্যি কোন দরজা ছিল নাকি সেটা আমার মনের ভুল?
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে চুপ করে গেল চাঁদনী। ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে গম্ভির গলায় বলল,
— চাঁদনী তুমি একজন মানুষ। তাই তোমার কৌতুহল অনেক বেশি। কৌতূহল ভালো কিন্তু কৌতূহলটা অতিরিক্ত পরিমাণে রাখা ভালো নয়। তুমি জানো তুমি একটা রহস্যের মায়াজালে বন্দি। তোমার জীবনটা একটা রহস্যময় জীবন। যে রহস্যের কোন কূলকিনারা এখন পর্যন্ত তুমি পাওনি। আর না আমি তোমাকে পেতে দিয়েছি। সেটাও তোমার ভালোর জন্য ভেবে নাও। ওই দরজাটা ও তোমার জীবনের একটা রহস্য। যেটা তুমি সময় মত ঠিক জানতে পারবে। আমি বলছি কি তুমি আর কখনো ওই দরজার দিকে হাত বাড়াবে না। কোন কৌতুহল মনে রেখো না। কালকে যদি তুমি ঐ দরজাটা দৃশ্যমান ও পাও তবুও সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। এতে তোমার’ই বিপদ বাড়বে।
শ্রাবণের কথাগুলো শুনে কেন জানি না ভীষণ রাগ হলো চাঁদনীর। সে আর একটা কথাও না বলে ফোনটা কেটে ছুড়ে বিছানার ওপর ফেলে দিল। তারপর মনে মনে ভাবতে লাগল সে আর চুপ করে বসে থাকবেনা। শ্রাবণের কোন কথা শুনবে না। বাসা থেকে বাইরে বের হতে না পারলেও ওই দরজাটা খুলে দেখবে। ওটার ভেতরে আসলে কি আছে। কি এমন রহস্য লুকিয়ে আছে সেখানে! যেটা দিনের বেলাতে দৃশ্যমান হলেও রাতে অদৃশ্য হয়ে যায়। এসব কিছু ভেবে মাথার ভেতর হিবিযিবি বুদ্ধি আটতে লাগল চাঁদনী। সে মনস্থির করে ফেলল দিনের বেলা যেভাবেই হোক সে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেই ছাড়বে।
তারপর কোন মতে খাওয়া-দাওয়া করে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিল চাঁদনি। শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগল। ওকে শুয়ে পড়তে দেখে শ্রাবণ সেখান থেকে উড়ে দূরে কোথাও একটা চলে গেল। তারপর সেই জঙ্গলের মাঝে শ্রাবনীর সাথে গিয়ে দেখা করল সে। শ্রাবণী ওকে দেখতেই পাশে এগিয়ে এসে বলল,
— ভাইয়া কি খবর চাঁদনীর! কেমন আছে ও? ওকি আর কোন পাগলামো করেছে?
— আমার যতদূর ধারণা চাঁদনী কালকে ভুল পথে পা বাড়াবে। আমি বুঝতে পারছি না ওকে কিভাবে আটকাবো এখন। ওকে না আটকালে যে অনেক বিপদ হয়ে যাবে ওর। যেভাবেই হোক কালকে সেই দরজাটা খুলে ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করবে ও। এতোটুকু আমি বুঝে গেছি। কিন্তু এটা যদি ও সত্যিই করে, আর সেই রুমের মাঝে যদি কোন ভাবে প্রবেশ করতে পারে। তাহলে ওর সামনে আরো নানারকম রহস্যের বেড়াজাল ঘিরে ধরবে। আর সেই রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে আরো বেশি বিপদে পড়ে যাবে ও। বুঝতে পারছি না এখন ওকে আটকাবো কিভাবে আমি। আমি তো ওর সামনেও যেতে পারছিনা কোনো ভাবে।
— কী বলছ ভাইয়া? চাঁদনী যদি একবার ওই রুমে প্রবেশ করে তাহলে তো ও আর ঠিক থাকতে পারবে না। পাগল হয়ে যাবে সেই রহস্য উন্মোচন করার জন্য। তখন আমাদের কোন কথাই শুনবে না। ভুল পথে পা বাড়িয়ে ফেলবে। যেটার কারণে ও সহ আমরাও বিপদে পরে যাবো। এখনো পুরা 2 মাস বাকি। ওকে আটকাবো কিভাবে আমরা? কি করা যায় এখন। আমারও ভীষণ টেনশন হচ্ছে। আমরা তো ওর সামনেও যেতে পারব না। তাহলে তো আমরা’ই ওর বিপদের কারণ হয়ে যাব।
শ্রাবনীর কথার উত্তরে বেশ কিছুক্ষন চুপ করে রইলো শ্রাবণ। তারপর কিছু একটা ভেবে বলে উঠল,
— আচ্ছা শ্রাবণী তুমি অনেকদিন আগে বলেছিলে না, তোমার একটি মানুষ মেয়ের সাথে পরিচয় আছে। যে মেয়েটা জানে যে তুমি একজন ভ্যাম্পায়ার। যাকে তুমি ঐ খারাপ ভ্যাম্পায়ার দের হাত থেকে একবার বাঁচিয়েছিলে? তারপর থেকে তুমি আর সেই মেয়েটা বান্ধবীর মতো একে অপরকে ভালোবাসো? কি যেন নাম বলেছিলে মেয়েটার?
— মিতু, ওর নাম মিতু। কিন্তু ওকে দিয়ে কি দরকার ভাইয়া?
— দরকার আছে, আগে বলো ও এখন কোথায়?
— ওর সাথে তো অনেকদিন হলো আমার কোনো যোগাযোগ নেই। ও এখন কোথায় থাকে সেটাও আমি জানি না।
— আজ রাতের মধ্যে ওর ঠিকানা খুঁজে বের করো শ্রাবণী। আর যেভাবেই হোক ওর সাথে কথা বলে ওকে রাজী করাও চাঁদনীর কাছে এসে এই দুইটা মাস থাকতে। কারণ এখন একমাত্র একটা মানুষই পারে চাঁদনীকে সবকিছু থেকে বিরত রাখতে। আর তোমার কাছে যতদূর শুনেছি মিতু মেয়েটা ভালো। নিশ্চয়ই ও আমাদের সাহায্য করবে!
— আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া। আমি এখনই যাচ্ছি মিতুকে খুঁজে বের করতে। আর ও চাঁদনীর ব্যপারে সবকিছু জানার পর আমাদের অবশ্যই সাহায্য করবে। কারন আমি ওর জীবন বাঁচিয়ে ছিলাম। আর তাছাড়া ওকে আমি যতদূর জানি ও কখনই আমার বিপদে সাহায্য না করে পারবেনা।
কথাটা বলে শ্রাবণের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল শ্রাবণী। ও চলে যেতেই শ্রাবণ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারো ফিরে এল সেই বাড়িটার কাছে।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
জানিনা কে আমার সাথে শত্রুতা করে আমার আইডিতে রিপোর্ট মেরে ছিল। আজ পর্যন্ত কখনো জানা মতে কারো ক্ষতি করিনি। কারো সাথে বাজে আচরন করিনি। তবুও কে এমনটা করেছে জানিনা।😢 যে কারণে পুরো 28 ঘন্টা আমার আইডিটা একদম ডিজেবল হয়ে গেছিলো। আমি আইডিতে কোনোভাবেই ঢুকতে পারছিলাম না। কোন পোস্ট বা লাইক কমেন্ট করতে পারছিলাম না।😰 তাই গল্প দিতে পারিনি। সেজন্য দুঃখিত। তাই এখন সময় পেতেই গল্প টা দিয়ে দিলাম। কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন সবাই। ধন্যবাদ
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,