মেঘ-বৃষ্টি ❤❤পর্ব=৮

0
3189

#মেঘ-বৃষ্টি
❤❤পর্ব=৮
রোদ-রোদেলা

#তানিয়া[আনিতা]

——তুমি কি বৃষ্টি?

——জ্বি কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না

——হুম চেনার কথা ও বা কারণ এর আগে তোমার সাথে আমার দেখা হয় নাই। আমার নাম তানিশা, মেঘের বন্ধু, বলতে গেলে বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু। আচ্ছা সোজা কথায় আসা যাক আমি আবার কথা পেচানো পছন্দ করি না তুমি কি মেঘকে আগে থেকে চিনো বা তোমাদের মাঝে কি আগে থেকে কোনো সম্পর্ক আছে।

——কি যাতা বলছেন আমি কেন ওনাকে আগে থেকে চিনতে যাব ওনার সাথে আমার এখানে পরিচয় আর কি জানি বলছেন সম্পর্কের কথা আপনার কি মনে হয় ওনার সাথে আমার আদো আমার কোনো সম্পর্ক আছে বা থাকতে পারে।

——আমার তো মনে হয় তেমন কিছু যদি তা না হয় তবে মেঘ সবসময় তোমাকে ফোলো করে কেন ইবেন দেখি তোমার ক্যাম্পাসের সামনে দাড়িয়ে থাকে শুধু তা না ও এখন আমাদের সাথে তেমন সময় কাটায় না আর আসলে তোমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তুমি কি বুঝতে পারছ তোমার জন্য মেঘ আমাদের থেকে কতো দূরে চলে গেছে এসব কিছু তো তোমার জন্য হয়েছে এরপরও কি তুমি বলবে তুমি কিছু জানো না বা তোমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই

——হুম আমি কিছু জানিনা আসলে ওনাকে দেখলেই আমার খুব বিরক্ত লাগে তবুও সিনিয়র বলে কিছু বলতে পারি না ওনি নিজ থেকে গায়ে পরে আমার সাথে কথা বলে তাহলে আমার দোষ কোথায় তাছাড়া ওনাকে যেখানে আমি পছন্দ করি না সেখানে সম্পর্কের ব্যাপারটা নিছক বিনোদনের বিষয়

তানিশা কিছুক্ষন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে

——-ঠিক আছে যদি তোমার কথা সত্যি হয় তবে তোমার জন্য লাকি আর যদি দেখি অন্য কিছু তবে……

——তবে কি হুমকি দিচ্ছেন মিস তানিশা এই বৃষ্টি কারো হুমকিতে ভয় পাইনা আর আমি আমার মতো তাই কাউকে কোয়ারও করি না

——-তা তো দেখছি কিন্তু মনে রেখো ভুলেও কখনো মেঘের দিকে চোখ তুলে তাকাবে না ও আমার আর আমার জিনিসের দিকে কেউ হাত বাড়ালে আমি তার হাত গুরিয়ে দিয় মাইন্ড ইট

——হেই অন্যের জিনিসের দিকে আমার কখনো কোনো ইন্টারেস্ট ছিল না আর কি বলছেন আপনার জিনিস নিজের জিনিস সামলে রাখতে শিখুন নাহলে হাত ফসকে অন্যের কাছে চলে যাবে তখন চাইলেও কিছু করতে পারবেন না

কথাটা নলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে সেখান থেকে বৃষ্টি চলে যায় আর তানিশা রেগে সেদিকে চেয়ে থাকে আর মনে মনে বলে

——আমিও দেখবো তুমি কীভাবে মেঘের দিকে হাত বাড়াও দরকার পরলে তোমাকেই…….. বলে পৈশাচিক একটা হাসি দেয়

এদিকে বৃষ্টির রাগে পুরো শরীর জ্বলছে শুধু মাএ ওই মেঘ আহমেদের জন্য আজ একটা মেয়ে তাকে এতো কথা শুনিয়ে দিল তাই বিড়বিড় করতে করতে ক্লাসের দিকে হাটা দেয় কিন্তু কোত্থেকে মেঘ তার সামনে এসে একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে

—— কেমন আছো আর তুমি আমার থেকে এতো দূরে দূরে থাকো কেন

কথাটা আর পুরো বলতে পারলনা তার আগেই বৃষ্টি রেগে গিয়ে বলল

——- আপনার সমস্যা কী আপনি সবসময় আমার পেছনে পরে থাকেন কেন আপনি কি বোঝেন না আপনার সাথে কথা বলতে আমার বিরক্ত লাগে তাহলে শুধু তাই না আজ আপনার জন্য আমাকে অন্যের কাছ থেকে হুমকি শুনতে হয়েছে আর কি চাই আপনার আমাকে রেহাই দিন আমার থেকে দূরে থাকুন আপনার জন্য আমি নিজের কোনো বিপদ আনতে পারব না

বৃষ্টির কথা শুনে মেঘ যেন আকাশ থেকে পরল হে এটা ঠিক মেঘ বৃষ্টিকে ফোলো করে কিন্তু একবারও তাকে বিরক্ত করে নি আর হুমকি শুনতে হয়েছে মানে কে দিল বৃষ্টিকে হুমকি। কথাটাকে আরো ভালো ভাবে জানার জন্য মেঘ বলল,

——তুমি এমন ভাবে কথা বলছ কেন আর তোমাকে কে হুমকি দিয়েছে বলো আমায়।।

——-আপনার কাছের কেউ নিজ দায়িত্বে খুজে নিন আর হ্যা দয়া করে আমর থেকে দূরে থাকুন প্লিজ।

কথা টা বলে বৃষ্টি চলে যায় আর মেঘ ওখানে দাঁড়িয়ে তার বন্ধুকে ডাক দেয়

—— খোজ নে কে বৃষ্টিকে হুমকি দিয়েছে

কথাটা শুনে তার বন্ধু বলে উঠে

——আমি জানি আসলে তানিশা তোর এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না তাই তানিশা বৃষ্টিকে বলেছে সে তোকে ভালোবাসে আর বৃষ্টি যেন তোদের মাঝে না আসে

কথাটা শুনে মেঘের মেজাজ বিগড়ে গেল সে হনহন করে গিয়ে তানিশার সামনে গেল তানিশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেঘ তানিশার চুলের মুঠি টেনে ধরে তাকো সজোরে থাপ্পড় দেয় আর বলে উঠে

——তোর সাহস কি করে হয় বৃষ্টিকে এসব কথা বলার হুমকি দেওয়ার আর কি বললি আমি তোকে ভালোবাসি তুই বল আমি কখনো তোকে বলছি তোকে ভালোবাসি বা তোর সাথে আমার এমন কোনো সম্পর্ক আছে

——মেঘ আমার কথা টা শোন প্লিজ

——-আমি যা বলছি তার উওর দে

——হুম আমি তোকে ভালোবাসি কিন্তু ওই মেয়েটার জন্য তুই আমাকে অবহেলা করছিস তোর এই অবহেলা আমি মেনে নিতে পারছি বা আার তাই আমি এসব বলছি

——আসলে আমি তোকে ভালো বন্ধু ভাবতাম আর তুই কিনা ছিঃআজকের পর থেকে তুই কখনো আমার সাথে কথা বলবি না শুধু তাই নয় তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।

কথা টা বলে মেঘ সেখান থেকে চলে যায় আর তানিশা সেখানে বসে চোখের জল ফেলতে থাকে আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে

——এভাবে আমাকে সবার সামনে অপমান করে তুই ঠিক করলি না মেঘ এর মাশুল তোকে দিতে হবে আর ওই বৃষ্টিকে তো আমি ছাড়ব না।

কথাটা বলেই সে ভার্সীটি থেকে বেরিয়ে যায় এদিকে মেঘ খুব ভয়ের মধ্যে আছে যদি বৃষ্টি তাকে ছেড়ে চলে যায় তাই সে ভাবল খুব শিঘ্রই সে বৃষ্টিকে তার মনের কথা জানাবে দেখতে দেখতে বৃষ্টিদের ফাইনাল পরীক্ষা চলে এলো আর বৃষ্টি মেঘের কথা ভুলে গেল মোটামুটি পরীক্ষা দেওয়ার পর বৃষ্টি কিছুটা ফ্রি সময় কাটালো অন্যদিকে রোদ ভাবছে কীভাবে বৃষ্টিকে নিজের ভালোবাসার কথা জানাবে তাই ঠিক করল যেদিন তাদের রেজাল্ট বের হবে সেদিন রোদ বৃষ্টি কে প্রোপোজ করবে কিন্তু কথা টা হাওয়ায় গতিতে মেঘের কানে চলে গেল সে শুনে আর নিজেকে স্থির রাখতে পারল না তাই সে তার বন্ধুদের নিয়ে রওনা দিল রোদকে মারার উদ্দেশ্য।

রাত ৯ টা বৃষ্টি পরিবার সহ ডিনার করতে বসবে এমন সময় তার ফোন বেজে উঠল ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে যা শুনল তাতেই বৃষ্টি কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল এদিকে পেছন বৃষ্টির বাবাও রওনা দিল হাসপাতালে গিয়ে দেখে রোদ বিছানায় শুয়ে আছে বৃষ্টিকে দেখে বসার চেষ্টা করল বৃষ্টি গিয়ে রোদের পাশে বসে জিজ্ঞেস করল

—–কীভাবে হলো তোর এই অবস্থা কে করেছে

রোদ বৃষ্টি কে সব খুলে বলল। বৃষ্টি কিছু না বলে রোদকে রেস্ট নিতে বলে সেখান থেকে চলে আসল। বাসায় এসে সে রাগে ফুঁসতে লাগলো আর বলতে লাগলো,

——বড্ড সাহস তাই না তাহলে দেখো কাল আমি তোমার কি হাল করি

সারারাত আর বৃষ্টির ঘুম হলো না সকালে উটে ভার্সীটিতে গিয়ে সোজা প্রফেসরের রুমে গেল কিছুক্ষন পর মেঘ ও গেল

——স্যার আমায় ডেকেছেন

——হুম কি শুনছি মেঘ এসব তোমার নামে তুমি কি এখানে পরতে আসছো নাকি মানুষ মারতে কালকে রোদের ওমন অবস্থা কেন করলে

—— স্যার আমি তো রোদকে কিছু করি নাই তাহলে আর আপনাকে কে বলল

——মিথ্যা বলো না তোমার জন্য রোদ এখন হাসপাতালে আমার কাছে বৃষ্টি তোমার নামে নালিশ করেছে এরপরও কি বলবে মিথ্যা

মেঘ এতোক্ষণ বৃষ্টি কে খেয়াল করেনি সামনে তাকাতে বুঝতে পারল এসব কাজ বৃষ্টি করেছে তাই কিছু না বলে চুপ হয়ে রইল

——কি হলো কিছু বলছোনা কেন

——সরি স্যার আর কখনো হবে না

——মনে থাকে যেন নাহলে পরের বার বের করে দিব কলেজ থেকে

কথা টা শুনে মেঘ বেরিয়ে যায় তার একটুপর বৃষ্টি ও স্যার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেল কিন্তু হঠাৎ করে কেউ তার হাত টান দিয়ে তাকে একটা ফাকা রুমে ঢুকায় আর বলে উঠে

——তোমার সাহস কি করে হয় আমার নামে নালিশ করার তুমি কি ভেবেছ আমি থেমে যাব কখনো না রোদ কেন কাউকে আমি তোমার পাশে ঘেষতে দিব না দরকার হলে সবার অবস্থা রোদের মতো করব আর তোমার সমস্যা কোথায় আমাকে মেনে নিতে তুমি জানো আমার বাবার কতো টাকা তোমার কোনো কষ্ট হবে না আর কোন অংশে কম আমি বলো টাকা পয়সা হ্যান্ডসাম সব দিক দিয়ে আমি পারফেক্ট তাহলে

——-আপনি কি সত্যি আমায় ভালোবাসেন

——-হুম কেন কোনো সন্দেহ

——-তাহলে যা বলব তাই করবেন তো কাল ১৪ ই ফেব্রুয়ারি আমাকে সবার সামনে চিৎকার করে ভালোবাসার কথা জানাতে হবে কি পারবেন তো

——-সত্যি???????? যদি তাই হয় তবে আমি রাজি দেখবে আমি তোমায় এমন ভাবে আমার ভালোবাসার কথা জানাবো যাতে সবাই শকড হয়ে পরে

কথা টা বলে মেঘ বৃষ্টিকে ছেড়ে দিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ায় আবার কীভেবে পেছনে এসে বৃষ্টির গালে একটা চুমু খেয়ে বলে

—— কালকের অপেক্ষায় রইলাম বলে চলে যায় বৃষ্টি এবার আরো খেপে গেল কেননা এই প্রথম কোনো ছেলে তাকে স্পর্শ করেছে তাও তার অপছন্দের মানুষটি এবার সে মনে মনে বল্ল

——আমিও রইলাম কালকের অপেক্ষায় কালকের দিনটা আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন হয়ে থাকবে কথা টা বলে একটা শয়তানি হাসি দিল মেঘ বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে বৃষ্টির ছবিটা দেখতে লাগলো যেটা সেদিন তুলে রেখেছিল আর বলল

——-আমার এতোদিনের স্বপ্ন কালকে পূরন হবে আমার ভালোবাসার কথা জানাবো তোমাকে শুধু আজকের রাতটা পার হোক কথা টা বলে বৃষ্টির ছবিতে একটা চুমু খেল

সকাল হওয়ার সাথে সাথে মেঘ নিজেকে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে চলে গেল ভার্সীটি একটু পর বৃষ্টি ও চলে আসল তারপর মেঘ সবাইকে জোরো করল আর বৃষ্টির সামনে হাটু গেরে বসে পরল আর চিৎকার করে বলে উঠল

——-l love you bristi l really love you

তারপর একটা রিংক নিয়ে যেইনা বৃষ্টিকে পরাতে যাবে ওমনি বৃষ্টি সবার সামনে মেঘকে টাটিয়ে থাপ্পড় দিল মেঘ বুঝে উঠতে পারলা না কি হলো ঠিক তখনি বৃষ্টি বলে উঠল

——-কি মি. মেঘ কষ্ট হচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না আমার ও কষ্ট হয়েছিল যখন আপনার জন্য আমাকে অন্যের থেকে কথা শুনতে হয়েছে আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে টাচ করার আর কি বলছিলেন আপনার বাবার অনেক টাকা আমাকে সুখে রাখবেন আসলে আমাকে বিয়ে করার কোনো যোগ্যতা আপনার নেই টাকা তো আপনার বাবার আপনার কি আছে বাবার টাকার গরম দেখান নিজের বলতে তো কিছু নাই তাহলে কি নিয়ে এতো এটিটিউড এতো অহংকার শুনে রাখুন আমি আপনাকে ঘৃনা করি আগে নিজের যোগ্যতা প্রকাশ করুন দেন কাউকে ভালোবাসার কথা বলতে আসবেন আর হ্যা কখনো আমার সামনে আসবেন না আপনি আমার জীবনের সবচেয়ে অপছন্দের ও ঘৃনিত মানুষ যাকে আমি কখনো সহ্য করতে পারি না আর কখনো নিজের এই মুখ আমাকে দেখাবেন না

কথা টা বলে বৃষ্টি সেখানে থেকে চলে যায় আর মেঘ ওখানে দাঁড়িয়ে স্থির চাহনিতে চেয়ে থাকে মেঘের এক বন্ধু বলে উঠে

——দোস্ত ওই মেয়ে টার এতো সাহস তুই বল আমরা এখনি মেয়ে টাকে……….

আর বলতে দিল না মেঘ সাথে সাথে ছেলেটাকে মারতে লাগলো আর বলতে লাগলো

—— ওকে নিয়ে একটাও কথা বলবি না নাহলে জীবন্ত কবর দিয়ে ফেলব ও আমায় অপমান করেছে আমি এর শোধ নিব কিন্তু তার আগে আমাকে আমার যোগ্যতা প্রমান করতে হবে বলে বাসায় চলে গেল।
,
,
,
তারপর তার বাবাকে বলে সে বাইরের দেশে চলে গেল হই স্টাডি করতে এর কিছু দিন পর বৃষ্টিদের রেজাল্ট বের হয় আর বৃষ্টি ও নিউ ইয়ারে উঠে ওইদিনের অপমানের পর থেকে বৃষ্টি আর মেঘকে দেখেনি মনে মনে খুশি হলো যে মেঘ নামের কালো ছায়া টা তার জীবন থেকে চলে গেছে তানিশাকেও আর দেখা যায় নি এভাবে কেটে গেল ৪ বছর রোদ স্টডি শেষ করে বাবার বিজনেস দেখছে অন্য দিকে বৃষ্টির বাবা মারা যওয়ায় বৃষ্টি কে পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয় এরপরের গুলো তো আপনাদের জানা
,
,
,
,
,
হঠাৎ
.
.
.
.
.
.
চলবে………

(আসসালামু আলাইকুম গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন আর দয়া করে মন্তব্য করুন নাহলে আমি বুঝতে পারবনা আপনাদের কাছে আমার গল্প কেমন লাগছে আর রেসপন্স এতো কম কেন আপনাদের উৎসাহ না পেলে গল্প লিখার ইচ্ছে টা হারিয়ে যায় তাই আপনারা বেশি করে রেসপন্স করুন আর অপেক্ষা করুন পরবর্তী পর্বের জন্য। ধন্যবাদ 😊😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here