মেঘ-বৃষ্টি ❤❤পর্ব=৭

#মেঘ-বৃষ্টি
❤❤পর্ব=৭
রোদ-রোদেলা

#তানিয়া[আনিতা]

৪ বছর আগে……….

বৃষ্টি মা বাবার একমাত্র মেয়ে, ছোট একটা ভাই আছে। বৃষ্টি বড় আর বাবা মায়ের খুব আদরের। বৃষ্টির নামটা বৃষ্টির খুব পছন্দের কারন এই নামটা রাখার একটা বিশেষ কারনও আছে। যেদিন বৃষ্টির জন্ম হয় সেদিন বাইরে খুব ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিল আর বৃষ্টির বাবার খুব ইচ্ছে ছিল তার প্রথম সন্তান মেয়ে হবে তাই যেদিন বৃষ্টি হলো সেদিন তিনি এতো খুশি হয়েছিলেন যার জন্য তিনি প্রকৃতির বৃষ্টির সাথে মিল রেখে মেয়ের নাম রাখে বৃষ্টি।
,
,
,
,
,
বৃষ্টির স্বভাবটাও ঠিক প্রকৃতির বৃষ্টির মতো শান্ত কিন্তু যখন সে বৃষ্টিতে ভিজে তখনই সে অসুস্থ হয়ে পরে এই জায়গায় বৃষ্টির মনে হয় প্রকৃতির সাথে তার শএুতা রয়েছে না হলে বৃষ্টিতে ভিজলে বৃষ্টি অসুস্থ হয় কেন? আর এই কারণে বৃষ্টির বাবা মা তাকে কখনও বৃষ্টিতে ভিজতে দিত না। কিন্তু বৃষ্টি তো নাছোড়বান্দা সেই যেকোনো ভাবে বৃষ্টিতে ভিজবেই এই নিয়ে কতবার মা তাকে বকা দিয়েছে কিন্তু বাবা সবসময় তাকে আগলে রাখতো। বৃষ্টির আরেকটা সমস্যা আছে বৃষ্টি যাকে পছন্দ করে তাকে নিজের সবটুকু দিয়ে দেয় কিন্তু যে একবার বৃষ্টির নজরে অপছন্দের হয়ে যায় তাকে বৃষ্টি কখনো দেখতে চাই না শুধু তাই নয় সে যা করবে বৃষ্টি ঠিক তার উল্টো কাজ করবে। যদি তাকে বলে এই কাজটা করো সে জেদ ধরে সেই কাজটা করবে না। এভাবে অপছন্দের মানুষটিকে সে এড়িয়ে চলে।
,
,
,
,
এবার এইসএসচি পরীক্ষা দিয়ে সবেমাত্র ভার্সীটিতে উঠেছে আর আজ ভার্সিটির প্রথম দিন সকালে বাবা তাকে ভার্সিটিতে দিয়ে গেছেন নতুন স্টুডেন্ট হওয়ায় তেমন কারো সাথে কথা হলোনা ক্লাস শেষ হওয়ার পর যেইনা বের হতে যাবে ওমনি শুরু হলো বৃষ্টি কিন্তু মেঘলা থাকায় বৃষ্টি আগে থেকে ছাতা নিয়ে এসেছিল। তাই ছাতা নিয়ে বের হয়ে কিছু দূর যেতেই হঠাৎ দুটা ছেলে তার সামনে দৌড়ে গেল কিন্তু একটা ছেলে দৌড় দিতে গিয়ে বৃষ্টির সাথে ধাক্কা খায় আর সাথে সাথে বৃষ্টি পাশে থাকা খাদে পড়ে যায় বেস আর কি এবার বৃষ্টির রাগ চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল তার সারা শরীর মুখে কাদা লেগে একাকার যেইনা পেছনে ফিরে তকালো দেখল ধাক্কা দেওয়া ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো আর বলতে লাগলো,

——সরি আসলে আমার এই হারামি বন্ধুটাকে মারতে গিয়ে তোমার সাথে ধাক্কা লেগে গেছে তাই তুমি কাদায় পরে গেছ।

বৃষ্টি রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে ছেলেটি বলে উঠল,

——কিন্তু তোমাকে না এমন রূপে দেখতে খুব ভালো লাগছে দাড়াও তোমার একটা ছবি তুলি।

কথা টা বলেই ওর একটা পিক তুলে নিল আর বলল

——এটা রেখে দিলাম ঠিক আছে

বলেই সেখান থেকে হাওয়ার গতিতে চলে গেল বৃষ্টি ঠিক তখনও দাড়িয়ে আছে আর নিজের সমস্ত রাগ নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিল।

বাসায় গিয়ে দরজা খুলে বৃষ্টির এমন অবস্থা দেখে বৃষ্টির মা অবাক হয়ে বলল,

——কিরে তোর এই অবস্থা কেন কোথায় গিয়ে গড়াগড়ি করে আসলি আবার

বৃষ্টি মায়ের কথা শুনে অগ্নি চোখে মায়ের দিকে তাকালো সাথে সাথে তার মা বলে উঠল,

——আচ্ছা যা বলতে হবে না যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে

বৃষ্টি দ্রুত গিয়ে নোংরা কাপড় চেঞ্জ করে বের হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায় বৃষ্টির পানি হাত দিয়ে ধরতে থাকে বৃষ্টির পানি ধরতেই বৃষ্টির সমস্ত রাগ যেন নিমিষেই হারিয়ে গেল। বৃষ্টির মা রুমে এসে বৃষ্টিকে না পেয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখে বৃষ্টি বৃষ্টির পানি নিয়ে খেলা করছে তিনি পেছন থেকে হাত দিয়ে বলল,

——কিরে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজছিস কেন অসুস্থ হয়ে পরবি তো আচ্ছা বল তো কি হয়েছে তখন এতো রেগে ছিলি কেন আর তোর এই অবস্থা কে করেছে।

——মা বাদ দাও কিছু হয়নি কেন এসেছ

——কেন মানে দেখছিস কয়টা বাজে খাবিনা

——ও মনে ছিল না আসলে বৃষ্টি দেখে লোভ সামলাতে পারিনি চলো খেতে যায়

তারপর মা সহ গিয়ে খেয়ে বিছানায় শুয়ে পরল। ঠান্ডা হাওয়ায় ঘুম ও তাড়াতাড়ি চলে আসল আর পরের দিন সকালে রেডি হয়ে ভার্সীটিতে চলে গেল কিন্তু গেটের কাছে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ কারণ সেখানে গিয়ে দেখল লম্বা একটা লাইন। একটু এগোতে বুঝতে পারল সিনিয়র রা জুনিয়রদের র‍্যাগ দিচ্ছে বৃষ্টি এবার ঘাবড়ে গেল তাও চুপচাপ সামনের দিকে হাটা ধরল হঠাৎ সামনের দিকে চোখ যেতে দেখতে পেল কালকের সেই ছেলেটাকে যে তাকে ধাক্কা দিয়েছিল, বুঝতে পারল ছেলেটাও সিনিয়র যে সবার সাথে মিলে জুনিয়রদের র‍্যাগিং করছে। হঠাৎ ছেলেটির সাথে চোখাচোখি হতেই ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে আছে আর এদিকে ছেলেটি বৃষ্টিকে দেখে পুরো থ কারণ একটা মেয়ে এতো সুন্দর কেমন করে হয় তার ওপর ড্রেসের সাথে ম্যাচ করে হিজাব পরেছে দেখতে পুরো কিউটনেস এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ছেলেটি বৃষ্টিকে ডাক দেয়

—–হে ইউ কাম হেয়ার

বৃষ্টি পা টিপে টিপে সামনে যায়

——জ্বি আমায় ডেকেছেন

——হুম নতুন নাকি কোন ডিপার্টমেন্ট

——জ্বি নতুন আর সাইকোলজি বিভাগের

——ও আচ্ছা তো নাম কি

——জ্বি বৃষ্টি

——ও আচ্ছা আমার নাম মেঘ তোমাদের সিনিয়র তো দেখে চলে যাচ্ছে যে জানোনা নতুন আসলে সিনিয়রদের সম্মান জানাতে হয়

——আসলে বুঝতে পারি নি

——ওকে পরের বার দেখলে সালাম জানিয়ে যাবে ঠিক আছে

হুম বলে সেখান থেকে চলে যায় বৃষ্টি মেঘ তার যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে পাশে থাকা বন্ধুকে বলে,

——মেয়েটা অনেক কিউট আর চোখ গুলো দেখছিস পুরো টানা টানা হরিণের মতো

——তুই কি মেয়ে টাকে চিনতে পারছিস

——আরে ধুর ব্যাটা এমনভাবে বলছিস যেন মেয়েটাকে আমি আগে দেখছি

——লাইক সিরিয়াসলি সত্যি চিনতে পারিস নি

——না তুই বল কে মেয়ে টা

——আরে গাধা কাল তুই যে মেয়ে টাকে ধাক্কা দিয়ে কাদায় ফেলে দিছিলি এটা সেই মেয়ে।

——হোয়াট কিন্তু কাল তো আমি মেয়েটার ফেস দেখি নাই ওয়েট ওয়েট কাদায় পরার কারণে হয়তো মেয়ে টার মুখ দেখা হয়ে উঠে নি ইস কি ভুলটাই না করলাম হয়তো মেয়েটা আমার ওপর রেগে আছে ছুটির পর মাফ চেয়ে নিতে হবে
,
,
,
,
এই বলে তারা ক্লাসে চলে গেল। মেঘ আহমেদ, বাবা-মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে মেঘ বড়, ছোট একটা বোন আছে, মেঘ পড়ালেখায় যেমন দূর্দান্ত দেখতেও তেমন হ্যান্ডসাম। ভার্সীটির সকলের ক্রাশ। এবার দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছে বৃষ্টিদের এক বছরের সিনিয়র। অনেক মেয়ে তাকে প্রপোজ করেছে কিন্তু তার কাছে কখনো পাত্তা পায়নি কারণ মেঘের এক কথা যদি প্রেম করে তাহলে এমন কারো সাথে করবে যাতে একেবারে বিয়ে করে ফেলতে পারে তাই সব মেয়েদের সাথে এমনি ফ্ল্যাট করে, মজা নেয় কিন্তু কাউকে মন থেকে মেনে নেয়নি। এদিকে বৃষ্টি ক্লাসে বসতেই কোত্থেকে একটা ছেলে এসে বলল,

——হাই আমি রোদ তোমার ব্যাচমেট তুমি

——আমি বৃষ্টি আর আপনাকে তো আগে দেখি নি

——কিন্তু আমি তোমাকে দেখছি আর আমরা যখন একি ক্লাসের তাহলে আমাকে আপনি বলার দরকার নাই

——হুম ঠিক আছে তুমি করে বলবো

আরো কিছুক্ষন কথা বলে এরপর স্যার আাসায় যে যার সিটে চলে যায় ক্লাস শেষ হলে বৃষ্টি বেরিয়ে আসে হঠাৎ তার সামনে মেঘ এসে দাড়ায় আচমকা এমন হওয়ায় বৃষ্টি একটু চমকে যায় তাও নিজেকে ঠিক করে বলে

——আপনি হঠাৎ কিছু কি বলবেন

——আসলে সরি আমি বুঝতে পারি নি কাল তোমায় না দেখে কাদায় ফেলে দিয়েছি প্লিজ কিছু মনে করো না সরি

বৃষ্টি একটু উপহাস করে বলল

——সরি বললেই কি সব সমস্যার সমাধান হয় কালকে আপনি আমায় ধাক্কা দিলেন আর আজকে সরি বলছেন যদি ক্ষমা চাইবার হতো তবে কালকেই সরি বলতেন তাই আজকে আর সরি বলতে হবে না আমি কিছু মনে করিনি




কথাটা বলেই মেঘকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল আর মেঘ বুঝতে পারল না বৃষ্টি কি বুঝিয়েছে তাই চেয়ে রইল তার যাওয়ার দিকে। এভাবে তাদের দিন চলতে থাকে।





এরমধ্যে বৃষ্টির সাথে রোদের খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায় আর অন্যদিকে মেঘ বিভিন্ন কৌশলে রোজ বৃষ্টিকে আড়াল থেকে দেখে কারণ তার মাঝে বৃষ্টির জন্য একপ্রকার অনুভূতি কাজ করছে সে জানে না কি নাম এই অনুভূতির কিন্তু সময় করে প্রতিদিন তার একবার বৃষ্টিকে দেখতে হবে এ যেন এক নেশায় পরিনত হয়েছে মাঝে মাঝে কথা বলার চেষ্টা ও করে কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও বৃষ্টি কথা বলে কারন সিনিয়র বলে কথা যদি ওলোট পালোট কিছু করে সেই ভয়ে কথা বলে কিন্তু বেশিরভাগই বৃষ্টি মেঘের থেকে আড়ালে থাকে কিন্তু মেঘের এই কাজটা তার ফ্রেন্ড দের একজনের চোখ এড়ালো না কারন বৃষ্টির প্রতি মেঘের এই আচরন সে বুঝতে পারল, সে চাই না মেঘ কোনোভাবে তার হাতছাড়া হোক তাই একদিন সে বৃষ্টিকে ডেকে পাঠায়………….
,
,
,
,,
,
,
চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here