মেঘ-বৃষ্টি ❤❤পর্ব=৬

#মেঘ-বৃষ্টি
❤❤পর্ব=৬
রোদ-রোদেলা

#তানিয়া[আনিতা]

দরজার দিকে তাকাতে………

মেঘ দাঁড়িয়ে আছে সাথে পুলিশ সহ। উপস্থিত সবাই এটা দেখে থ হয়ে আছে। এদিকে রোদ পুরো শকড, সে কিছুই বুঝতে পারছে না এতো বছর পর মেঘ এখানে কোত্থেকে তাও তাদের বিয়ের দিন আর বৃষ্টি যেন এবার বুঝতে পারল তার অস্থিরতা কারণ কি। সে কোনো ভাবে বুঝে উঠতে পারছে না মেঘ কেন এখানে এসেছে আর জানল কীভাবে আজ বৃষ্টির বিয়ে তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

মেঘ ঢুকতে ঢুকতে বলল,

——-এ বিয়ে হতে পারে না একজন বিবাহিত নারীকে বিয়ে করার সাহস কই পান মি.রোদ, আপনি জানেন এটা কতোবড় অন্যয় আবার যদি সেই নারীর স্বামী বেচে থাকে।

রোদ বুঝতে পারছে না মেঘ কি বলছে আর বিবাহিত নারী মানে কাকে বুঝাচ্ছে আজ তো তার আর বৃষ্টির বিয়ে তার মানে……..

তখনি রোদ বলে উঠল,

——মেঘ আপনি এখানে আর কি বলছেন বিবাহিত মানে আজ তো আমার আর বৃষ্টির বিয়ে তাহলে।

মেঘ:হুম ওই টাই তো বলছি মিস বৃষ্টি বিবাহিত আর আপনি ওকে বিয়ে করছেন কোন সাহসে।

রোদ :মানে বিবাহিত কার সাথে কখন আপনি মিথ্যা বলছেন আমাদের বিয়েটা বন্ধ করার জন্য আপনি মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন বৃষ্টির নামে যদি সত্যি বৃষ্টি বিবাহিত হয় তবে ডাকুন তাকে যে বৃষ্টিকে বিয়ে করেছে আমি তাকে দেখতে চাই অন্যথায় আমি আপনাকে এখানে শেষ করে ফেলব।

রাগে গজগজ করতে করতে কথা গুলো বলল রোদ।
মেঘ ওয়েট ওয়েট এতো হাইপার হচ্ছেন কেন আস্তে আস্তে কথা বলুন এভাবে মেঘ আহমেদের সাথে উচু গলায় কথা বলা আপনাকে মানায় না আর কি জানি বলছিলেন বৃষ্টির স্বামীকে দেখতে চান ও তো আপনার সামনে দাড়িয়ে আছে এ যে আমি মেঘ আহমেদ আর ওই যে আমার ওয়াইফ মিসেস মেঘ যাকে আপনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন

কথাটা শোনার সাথে সাথে রোদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল ও সাথে সাথে বসে পরল আর এতক্ষণ ওদের দুজনের কথা গুলো শুনছিল বৃষ্টি কিন্তু মেঘের শেষ কথাটা শুনে নিজেকে ধরে রাখতে পারল না গিয়ে সবার সামনে কলার টা টেনে ধরে বলে উঠল,

——কি বলছেন আবোল তাবোল আমি বিবাহিত তাও আবার আপনার সাথে এটা কখন হতে পারে না আর আজ আমার বিয়ে আপনি জানলেন কি করে আমি তো কাউকে বলি না আপনি আমার বিয়ে ভাঙ্গার জন্য এসব নাটক সাজিয়েছেন তাই না কিন্তু মনে রাখবেন সেটা কখনো আমি সফল হতে দিব না।

কথা টা বলতে বলতে মেঘকে ধাক্কা দিল। রোদ তখন বসা থেকে উঠে মেঘকে বলল,

——-আপনার সাথে বৃষ্টির দেখা হয়েছে কীভাবে আর আপনার কাছে কি প্রমান আছে যে বৃষ্টি আপনার ওয়াইফ।

——-মেঘ বৃষ্টির সাথে আমার তো রোজ দেখা হয় আফটার অল আমি বৃষ্টির অফিসের বস আর কি জানি বলছিলেন প্রমান ওয়েট……….

কথাটা বলেই মেঘ একটা কাগজ বের করল আর সেটা রোদের হাতে দিয়ে বলল,

——এই নিন আমার আর বৃষ্টির বিয়ের রেজিষ্টি যেখানে আমাদের দুজনের স্বাক্ষর রয়েছে।

রোদ কাগজটা দেখে সাথে সাথে ধপ করে বসে পরল আর বৃষ্টির দিকে এগিয়ে দিল বৃষ্টি কাপা কাঁপা হাতে কাগজটা নিয়ে দেখতে তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না য এটা তার স্বাক্ষর তাও এ কাগজে এবার বৃষ্টি রোদের কাঁধে হাত রাখতে রোদ বলে উঠল,

——কেন করলি এটা আমি তো কোনো অন্যায় করি নি শুধু তোকে ভালোবেসে নিজের করতে চেয়েছিলেন তাহলে কেন ঠকালি, কেন এভাবে বিয়ের নাটক করে আমার পুরো পরিবারকে অপমান করলি, কেন, কেন।

বিলাপ করে কাদতে কাদতে কথা গুলো বলল রোদ।

——বিশ্বাস কর আমি এসবের ব্যাপারে কিছুই জানি না তুই তো জানিস আমি কখন এই মেঘ আহমেদকে পছন্দ করতাম না সেখানে বিয়ে তো পরের কথা।

রোদ :তাহলে এই কাগজ এই স্বাক্ষর এগুলো কি সব মিথ্যে

বৃষ্টি :জানি না এগুলো কীভাবে হলো কিন্তু আমি যে সজ্ঞানে এসব করি নি সেটা আমি বুঝতে পারছি আমাকে ঠকানো হয়েছে আমার অজান্তে এটা করা হয়েছে।

তখনি রোদের মা বলে উঠল,

——কেন তুমি কি ছোট বাচ্চা যে তোমাকে না জানিয়ে এসব করবে যদি আগে থেকে এ ছেলের সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক থাকে তাহলে আমাদের বলতে আমরা কখন আমার ছেলেকে তোমার সাথে বিয়ে দিতাম না তাহলে কেন ঠকালে আমার ছেলেকে কেন হেনস্তা করলে আমাদেরকে বলো। ছিঃ আগে যদি তোমার এসব অপকর্ম সম্পর্কে জানতাম তবে কখনো আমার ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দিতাম না।

এতক্ষণ কথা গুলো বলছিল রোদের মা কিন্তু শেষের কথাটা মেঘ হজম করতে পারল না তাই চেচিয়ে বলল,

——চুপ করুন আর একটা বাজে কথা আমি ভুলে যাব আপনারা আমার গুরুজন আমার সামনে আমার স্এীকে এতো বাজে কথা বলার সাহস কই পান।

রোদ তখন চিৎকার দিয়ে বলে,

——মেঘ আপনি কিন্তু আমার বাবা মাকে অপমান করছেন।

মেঘ :অপমানের কিছুই হয়নি এক্ষুনি ওনাদের নিয়ে চলে যান আর না হলে কথা টা……

বলেই পুলিশের দিকে তাকালো সাথে সাথে রোদের বাবা মা রোদকে নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে গেল বৃষ্টি নির্বাক হয়ে চেয়ে রইল রোদের যাওয়ার পানে মেঘ কাজিকে বলল এতোদিন বৃষ্টি আইনগত ভাবে আমার বউ ছিল কিন্তু আর শরীয়ত মোতাবেক আমাদের বিয়ে হবে কথাটা শুনে বৃষ্টির এবার ধ্যান ফিরল সে মেঘের সামনে গিয়ে সজোরে মেঘকে একটা থাপ্পড় দিল আর বলতে লাগলো,

——আমি বেচে থাকতে কোনোদিন আপনাকে বিয়ে করবনা দরকার হলে নিজেকে শেষ করে দিব তবুও….

আর কিছু বলতে পারলা না তার আগেই বৃষ্টির মা বৃষ্টিকে থাপ্পড় দিয়ে দিল বৃষ্টি ছলছল চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে,

——মা তুমি আমাকে মারলে

——হুম মারলাম। শান্তি হয়নি তোর আমাদের অপমান করে আর কতো অপমান করবি আজ মনে হচ্ছে যদি তোর বাবার মৃত্যুর সাথে আমিও মরে যেতাম তাহলে আজ তোর এই নোংরা কাজ আমাদের দেখতে হতো না। এখনি তুই এই ছেলেটাকে বিয়ে করবি আর এই বাড়ি থেকে চলে যাবি না হলে, তুই আমার মরা মুখ দেখবি

কথাটা বলেই কান্না করতে করতে চলে গেল
বৃষ্টি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কি বলল তার মা। তারপর মায়ের পিছনে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল
এমন বলো না মা তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি যে নিজেকে শেষ করে দিব তুমি যদি চাও তবে আমি ওনাকে বিয়ে করব।

কথাটি শুনে বৃষ্টির মা দরজা খুলল তারপর বৃষ্টিকে নিয়ে মেঘের পাশে বসালো অবশেষে ওদের বিয়েটা সম্পন্ন হলো। বিদায়ের সময় মা মেয়ে একেওপরকে জরিয়ে কান্না করল। তারপর মেঘের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিল গাড়িতে দুজন নিশ্চুপ হয়ে বসে ছিল বাসায় এসে সোজা বাড়িতে ঢুকতেই দেখল মেঘের মা ড্রয়িংরুমে বসে আছে ওদের দুজনকে দেখেয় তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন,

——কিরে মেঘ তোর এই অবস্থা কেন আর এই মেয়েটা বা কে

——মা ও তোমার বউমা

——তুই কি আমার সাথে মজা করছিস

——না মা আসলে আমি তোমাকে সব খুলে বলছি

কথা টা বলে মেঘ রোদেলার সামনে গিয়ে বলল
তুই তোর ভাবিকে রুমে নিয়ে যা আর হ্যা এখন ওর সাথে কোনো কথা বলবি না। রোদেলাও তাই করল বৃষ্টিকে সাথে করে মেঘের রুমে দিয়ে কোনো কথা না বলে চলে এল বৃষ্টির কোনো হেলদোল নেই সে এখনো নির্বাক হয়ে রয়েছে মেঘ তার মাকে সব খুলে বলল তার মা বলল,

—–তার মানে তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসিস ওর পরিবার মেনো নেয়নি বলে তোরা পালিয়ে বিয়ে করছিস তাই তো

—–হুম আর তাই বৃষ্টির মন খারাপ করে আছে

—–কিন্তু মেয়েটাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না মনে হচ্ছে অন্য কিছু

——না মা এটাই কারন

—–কিন্তু…

——-কোনো কিন্তু না মা তুমি খুশি হওনি

——-হুম খুব খুশও হয়ছি অন্তত তুই বিয়েটা তো করলি
,
,
,
,
,
তারপর মা ছেলে কিছুক্ষন হেসে মেঘ তার রুমের দিকে পা বাড়ালো কি ভাবছেন মেঘ তার মাকে সব সত্যি কথা বলেছে না যদি তার মা সত্যিটা কানতে পারে তবে মেঘকে ভুল বুঝবে তাই মেঘ সাজিয়ে বলল ওরা একে অপরকে ভালোবাসসে ওদের পরিবার মানেনি বলে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছে আর মেঘের মা নিজের ছেলেকে খুব বিশ্বাস করে তাই আর কোনো কথা বাড়ায়নি
,
,
,
,
,
আসলে মেঘ চাইনি তার মা তাকে ভুল বুঝুক সে সময় মতো সব সত্যি কথা তার মাকে বলবে ভেবে রেখেছে তাই এখন সব গোপন করেছে মেঘ রুমের দরজা খুলতে দেখে পুরো ঘর অন্ধকার কোথাও বৃষ্টি নেই তাই সে বারান্দায় গেল গিয়ে দেখে বৃষ্টি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে একটু সামনে যেতেই বৃষ্টি বলে উঠল,

——-কেন করলেন এমন একটা চর দিছিলাম বলে তার প্রতিশোধ আপনি এভাবে নিলেন যদি আমাকে ৫ টা চর দিতেন তবে আমও একটা শব্দও করতাম না কিন্তু কি করলেন আমার জীবন টাকে পুরো নষ্ট করে দিলোন আমার আর রোদের পরিবারকে সবার কাছে ছোট করলেন আমাকে সবার কাছে খারাপ প্রমান করলেন সবাই আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলছে আপনি তো এটা চেয়েছিলেন তাই না

কথা টা বলে মেঘের দিকে ঘুরে তাকালো বৃষ্টি

——কি হলো বলছেন না কেন উওর দিন কেন করেছেন

জোরে চিৎকার দিয়ে। আসলে আপনার কাছে কোনো উওর নেই। কারন আপনি তো সব ইচ্ছা করে করেছেন তাই না এবার মেঘের কলার টেনে চিৎকার দিয়ে
মেঘ ও আর চুপ থাকতে পারল না চিৎকার দিয়ে বলল

—–হ্যা ইচ্ছে করে করছি তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জান্য করছি কারন আমি তোমাকে তখন ও ভালোবাসতাম আর এখনও ভসলোবাসি যেদিন তোমাকে অফিসে দেখি সেদিন বুঝতে পাটি জবটা তোমার খুব দরকার ছিল আর তাই আমি আড়ালো গিয়ে জবটা তোমাকে কনর্ফাম করে দেয় তারপর তোমার পিছনে আমার লোক লাগায় তুমি চেয়েছিলে আমাট কাছ থেকে বিয়ের খবরটা লুকাতে কিন্তু ঠিকি সেটা আমি জানতে পারি আর তাই আমি প্লানটা করি

——তাহলে রেজিস্টি সেটা কখন করলেন

——যেদিন তুমি অফিসের এগ্রিমেন্ট পেপারে সাইন কর সেদিন আমি ওই পেপারটা রেখে দিয়েছিলাম কিন্তু সেটা এভাবে কাজে আসবে ভাবতে পারি নি যাই হোক আমি কখমো তোমাকে কারো পাশে সহ্য করতে পারতাম না রোদকে তো কখনও না যদি তোমাকে পাওয়ার জন্য রোদকে খুন করতে হতো আমিও করতাম।

কথাটা বলতেই বৃষ্টি মেঘকে কষে একটা থাপ্পড় দিল জোরে জোরে বলল,
.
.
.
.
.
.
——তুই কি মনে করিস নিজেকে অনেক কিছু আমাকে ঠকিয়ে আমার সাথে প্রতারনা আমাকে বিয়ে করে জিতে গেছিস ভুল ভাবছিস কখনো না আমি কোনোদিন তোকে স্বামী হিসেবে মানব না তেোকে আমি তখনও ঘৃনা করতাম আর এখনো করি তুই ভালো করে জানিস যাকে আমি অপছন্দ করি তার সবকিছুতে আমি উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখায় তুই যে খেলাটা আমার সাথে খেললি মনে রাখিস এর দাম তোকে দিতে হবে আর আমার ওপর কখনো নিজের অধিকার দেখাতে আসবি না তাহলে আমি নিজের এমন ক্ষতি করব যে তুই নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবি না নিজেকে অপরাধী মনে করবি বের হয়ে যা আমার সামনে থেকে তোর মতো পশুর চেহারা দেখতে আমার ঘৃনা লাগছে।
.
.
.
.
কথা গুলো বলতে বলতে মেঝেতে বসে পরে বৃষ্টি। তারপর কাদতে থাকে। মেঘ আর কিছু না নলে চলে যায় কারন সে জানে এখন যদি বৃষ্টিকে কিছু বলতে যায় তবে উল্টো খারাপ কিছু করে ফেলবে তাই নিরবে চোখের জল ফেলে সেখান থেকে চলে গেল।
.
.
.
.
এদিকে বৃষ্টি কাদতে লাগলো আর বলতে লাগলো আল্লাহ কেন করলে আমার সাথে এমন কেন মেঘ নামের সেই কালো ছায়াটা আবার ফিরে আনলে আমার জীবনে আমি তো ওর থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি কেন করলে এটা কেন. তারপর ডুব দেয় অতীতে।
,
,
,
,
,
,
৪ বছর আগে………..
,
,
,
,চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here