#হলুদ_খামের_চিরকুট
.
৮
.
অর্থী বাইরে এসে সবার সাথে কথা বলছে। এই বাড়ির উঠোনে হলুদের স্টেজ করা হয়েছে। কনেকে স্টেজ এ বসানো হয়েছে। সবাই তার গায়ে হলুদ দিচ্ছে।
অর্থী একজায়গায় বসে দেখছিলো। অর্থীকে তার শাশুড়ি হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে কনের পাশে বসালো আর বললো,
– অর্থী মা, তোমার বিয়ের সময় তো তোমার গায়ে হলুদের ছোয়া পরেনি। যেভাবে বিয়েটা হয়েছে।
তাই এখন আজ তোমারো গায়ে হলুদ দিয়ে দেই।
– কিন্তু মা….
অর্থীর শাশুড়ি সবাইকে বললো কনের সাথে যেন অর্থীর গায়েও হলুদ ছুইয়ে দিতে।
অর্থী আর কিছুই বললো না। সবাই কনের সাথে অর্থীকেও হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছে। অর্থীর প্রথম প্রথম কেমন লাগলেও পরে ভালোই লাগছিলো।
হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হলে সবাই মিলে কনেকে বাড়ির বাইরে পুকুরে নিয়ে গেলো গোসল করিয়ে দিতে সাথে অর্থীকেও নিয়ে গেলো।
.
গোসল সেড়ে রুমে এসে দেখে আলভী রুমের ভিতর পায়চারি করছে। অর্থী মনে মনে ভাবছে (উনার আবার কি হলো)
অর্থী জিজ্ঞেস করবে ভেবেও জিজ্ঞেস না করেই তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে রুমের ভিতরে গেলো।
আলভী এতটাই গভীর চিন্তায় মগ্ন আছে যে অর্থী যে রুমে ঢুকেছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। অর্থী ভাবলো তার মায়ের সাথে কথা বলবে কিন্তু ফোন আলভীর হাতে। অর্থী আলভীর সামনে গিয়ে ফোন চাইলো। কিন্তু আলভী যেন অর্থীর কথা শুনতেই পায় নি। এবার অর্থী একটু চেচিয়ে বললো,
– শুনছেন, আমার ফোনটা..
– ওহ্ হ্যাঁ, এই নাও তোমার ফোন।
অর্থী আলভীর হাত থেকে ফোন নিয়ে তার মা কে কল দিতে গিয়ে দেখে ডায়াল কলে দুটো নাম্বার। একটা নাম্বারে একাত্তর বার ডায়াল করা হয়েছে। অর্থী একটু অবাকই হলো। তারপর ভাবলো হয়তো খুব জরুরী কিছু, আলভীকেও অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছে।
অর্থী তার মায়ের সাথে ফোনে কথা বলা শেষ হলে, আলভী অর্থীকে বললো,
– শোন মেয়ে মা’কে একটু ডেকে দাও তো।
অর্থী আলভীর কথার কোন প্রতিউত্তর না করে তার শাশুড়িকে ডাকতে চলে গেলো।
.
– কিরে আলভী কেন ডাকছিস? কি হয়েছে?
– মা, আমার কালকেই যেতে হবে।
– কাল!! কিন্তু কেন? কাল বিয়ে আর তুই বলছিস তোর যেতে হবে।
– হ্যাঁ মা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। মাস্ট বি যেতেই।
– আমি নাহয় বুঝলাম তোর গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে কিন্তু তোর বাবাকে কি বলবি?
– এইজন্য তো তোমাকে বলছি। প্লিজ তুমি একটু ম্যানেজ করে নাও।
– আমি কিভাবে ম্যানেজ করবো? তুই তোর বাবাকে তো চিনিস।
অর্থী এতক্ষণ চুপ করে মা ছেলের কথা শুনছিলো।
– আমি একটা কথা বলি?
– এখানে তুমি কি বলবে?
– আহা! মেয়েটা কি বলতে চাইছে শুন আগে। বলো মা
– না মানে যদি খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয় তবে আপনি চাইলে আমি বাবাকে ম্যানেজ করতে পারি।
– কি বলে ম্যানেজ করবে তুমি?
– বলবো আমার এডমিশন টেস্টের জন্য দুইটা ভার্সিটিতে ফর্ম পুরনের লাস্ট ডেট কালকে। এভাবে বললে বাবা না করতে পারবে না।
– হ্যাঁ এটাই ঠিক হবে। আমি গিয়ে তোর বাবাকে বলছি, অর্থী পরে কথা বলে নিবে। তোরা কাল সকাল সকাল রওনা দিয়ে দিস।
আলভী আর কিছুই বললো না। কি যেনো চিন্তা করছে।
অর্থী মনে মনে ভাবছে কঅত এক্সাইটেড হয়ে আসলো বিয়ে দেখতে গ্রামে, কিন্তু বিয়েটাই দেখা হবে না।
অর্থী তার শ্বশুর কে গিয়ে ভালো করে বুঝিয়ে বলতেই, তার শ্বশুর আর তাদের যাওয়ার জন্য না করলো না ।
আলভী পুরো রাত পায়চারি করে শুয়ে বসেই পার করেছে। তাকে এতটা চিন্তিত হতে দেখে অর্থীর ও ভালো লাগছিলো না। পরেরদিন সকাল সকালই সবার কাছ সাথে কথা বলে তারা বেরিয়ে পরলো। সবাই বলছিল বিয়েটা পর্যন্ত থেকে যেতে। কিন্তু আলভী খুব তাড়া দিচ্ছিলো। যেনো তারাতারি পৌছুতে না পারলে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলবে।
আজ বাসে আলভী নিজেই ঘুমিয়ে যায় অর্থীর কাধে মাথা দিয়ে।
তারা বাসায় পৌছালো। আলভী বাসায় পৌঁছে সাথে সাথেই তার বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
অর্থী মনে মনে ভাবছে। কি এমন জরুরী কাজ যার জন্য এতো তাড়া। অর্থী তার শাশুড়ি কে ফোন করে জানিয়ে দিলো যে তারা পৌছে গেছে বাসায়।
দিন পেরিয়ে গেলো। সময় যাচ্ছে কিন্তু আলভী এখনো বাসায় ফিরে নি। এদিকে অর্থী বাসায় একা। একা বাসায় তার অস্বস্তি লাগছে, মনের ভিতর কিছুটা ভয়ও কাজ করছে। এটা তার বাবার বাসা হলে পুরো বাসায় সারারাত একা থাকলেও তার কিছুই মনে হতো না। কারণ সেখানে সে ছোট থেকে বড় হয়েছে। কিন্তু এখানে ধীরে ধীরে ভয়ের পরিমান বেড়েই চলছে। রাত গভীর হচ্ছে, আলভী এখনো বাসায় ফিরছে না। অর্থী টিভি অন করে বসে আছে আর দাত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে একবার ঘড়ির দিকে একবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে।
রাত এগারোটা বাজে। বাইরে বাইকের শব্দ শুনতে পেলো অর্থী। এক দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল অর্থী।
কিন্তু দরজার কাছে কেউ নেই। সিড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো, আলভীর বন্ধু সাদিক আলভী কে কাধে হাত দিয়ে ধরে উপরে নিয়ে আসছে৷ আলভী কি যেনো বিড়বিড় করছে।
তারা দরজার কাছে আসতেই অর্থী আলভীর গা থেকে বাজে স্মেল পেলো।
সাদিক অর্থীকে দেখে মাথা নিচু করে আছে।
আলভী কে তার রুমে শুইয়ে দেওয়ার পর অর্থী বললো,
– ওর কি হয়েছে সাদিক ভাইয়া?
সাদিক মাথা নিচু করে আছে।
– কি হলো ভাইয়া বলো।
– আসলে অর্থী, আলভী …. আলভী। আমি বলতে পারবো না। তুই আমার ছোট বোন হস তোকে কষ্ট দিতে পারবো না।
– ভাইয়া কি হয়েছে প্লিজ বলো।
– আমি ভেবেছিলাম ওর বিয়ে হয়েছে ও হয়ত সেই চিরকুট লেখা মেয়েটাকে ভুলে গেছে।কিন্তু
– কি বলো আমাকে
– ও আজ সেই মেয়েটার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল যে ওই চিঠিটা লিখেছিল।
অর্থী সাদিকের কথা শুনে অনেক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
কিভাবে মেয়েটার খোজ পেয়েছে জানিনা, আজ আমাদের বন্ধু আরাফের সাথে ওই মেয়েটার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। তারপর কি হয়েছে আমি জানি না। তবে আরাফ এটুকু বললো যে মেয়েটা নাকি কাউকে ভালোবাসে।
আমাকে আরাফ ফোন করে বললো যে আলভী ড্রিঙ্ক করেছে। আমি গিয়ে তাকে নিয়ে আসলাম।
অর্থী কিছুই বলছে না শুধু স্তব্ধ হয়ে আছে।
– অর্থী, আলভী এমন না বুঝলি। ও এর আগে কখনও ড্রিঙ্ক করে নি।
– ভাইয়া তুমি বাসায় যাও, আন্টি হয়তো চিন্তা করছে।
– তুই………
– আমি ওর খেয়াল রাখবো তুমি যাও।
.
সাদিক চলে গেলে অর্থী দরজা লাগিয়ে রুমে এসে দেখে আলভী এখনো বিড়বিড় করছে কিন্তু ওর একটা কথাও বুঝা যাচ্ছে না।
অর্থী কিছুক্ষণ এক পলকে আলভীর দিকে তাকিয়ে রইলো। আলভীর চোখে পানি ছলছল করছে
( কেউ কিভাবে এতো ভালোবাসতে পারে, এতো ভালোবাসা আছে এই লোকটার মনে। চিনে না, জানে না, কখনো দেখে নি শুধু মাত্র একটা চিঠির উপর ভিত্তি করে এক অপরিচিত কাউকে এতো বছর থেকে কিভাবে এতো ভালোবাসতে পারে।) এই ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
তারপর আলভীর কাছে এগিয়ে এসে তার পায়ের জুতা খুলে দিল। তারপর আলভীর মাথা ধরে বালিশে দিতে গিয়ে বুঝতে পারলো আলভীর শরীরে জ্বর ।
.
(চলবে)
.
লেখা – ইশিতা মানহা ইচ্ছে