হলুদ খামের চিরকুট পর্ব ৭

#হলুদ_খামের_চিরকুট

.
আলভীর ভাগ্য ভালো ছিলো যে এখানে কোমড় পর্যন্ত পানি। কিন্তু এই পানিতে উল্টো হয়ে পরে যাওয়ার কারনে পুরো শরীর ভিজে গেছে সাথে লাগেজও।
আলভী পরে যাওয়ায় অর্থী ভয় পেয়েছিল, প্রায় চেচিয়ে আলভীর নাম ধরে ডাকলো।
অর্থীর ডাকে এক পিচ্চি বললো,
– আপু ভয় পাইয়েন না, এইখানে পানি কম আছে। ভাইজানের কিচ্ছু হইবো না।
আলভী যতক্ষণে উঠে দাড়ালো ততক্ষণে অর্থী নৌকা থেকে নেমেছে।
আলভী পানি থেকে উঠে আসছে আর পিচ্চি ছেলেটা পানি থেকে লাগেজ হাতে নিয়ে আসছে।
আলভী অর্থীর কাছে আসতেই অর্থি কোমড়ে হাত দিয়ে ভুরু কুঁচকে বললো,
– আপনার ছাগল নাম রাখা যে যথার্থ হয়েছে তা আপনি প্রমান করলেন।
আলভী কিছুই বললো না শুধু মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো। অন্যসময় হলে হয়তো ঝগড়া শুরু করে দিতো ছাগল বলার জন্য। এখন কিছুই বলছে না।
আলভীর ফোন ওয়ালেট সব কাপড় চোপড় ভিজে একাকার।
– এভাবেই দাড়িয়ে থাকবেন নাকি যাওয়ার চিন্তা ভাবনাও আছে। আলভী কোন উত্তর না দিয়ে হাটা শুরু করলো।
আলভী কিছুই বলছে না দেখে অর্থী পিচ্চি ছেলেটাকে বললো,
– এখানে আমিন মেম্বারের বাড়িটা কোথায় বলতে পারো?
– আপনেরা মেম্বারের বাড়ি যাইবেন। আগে কইবেন না। চলেন আমি আপনাগো দিয়া আসতেছি।
– হ্যাঁ চলো। এখান থেকে কতদূর?
– হাইটা গেলে পচিশ থেকে ত্রিশ মিনিট লাগবো। আপনারা চিন্তা কইরেন না ওই সামনে যে হাট টা দেখতেছেন ওইখানে গেলেই ভ্যান পাওয়া যাইবো।
অর্থী ছেলেটার কথা বলার ধরন দেখে হাসলো, শুদ্ধ ও আঞ্চলিক ভাষা গুলিয়ে ফেলেছে।
.
ভ্যান এ বসে আছে দুজনেই। আলভী পকেট থেকে ফোন টা বের করে অন করার চেষ্টা করছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা গন্তব্যে পৌঁছে গেলো। ভ্যান এসে থামলো পুরোনো দিনের রংচটা দোতলা বাড়ির সামনে।
বাড়ির বাইরে লোকজন দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এই বাড়িতে বিয়ে।
তারা গিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই সবাই এসে যেনো তাদেরকে ঘিরে ধরলো।
নতুন বৌ এসেছে বলে হৈচৈ করতে লাগলো।
এরই মধ্যে আলভীর মা এলো
– তোরা চলে এসেছিস। একি রে আলভী, তোর এই অবস্থা হলো কি করে? ভিজলি কিভাবে?!
– উফফ মা, প্রশ্ন পরে করিও তো। আগে ভেতরে যেতে দাও।
– আচ্ছা, আয় ভিতরে আয়।
.
অর্থী সবার সাথে কথা বলে, সবার সাথে পরিচিত হয়ে যখন রুমে ঢুকলো তখন দেখে আলভী ফুল পাওয়ারে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে আপাদমস্তক কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।

কি ব্যাপার ইনি এই গরমে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে কেন?
– এইযে শুনছেন। আলভী… (পানিতে ভিজে জ্ব্রর এলো না তো) এইযে আলভী শুনছেন?
– এই মেয়ে কেন এইভাবে ডাকাডাকি করছ(কাথার ভিতর থেকেই জবাব দিলো আলভী)
– কাহিনী কি….!!!!!!নাহ বিষয়টা দেখতে হচ্ছে।
অর্থী চট করে একটা বুদ্ধি বের করলো।
– এইযে শুনুন। বাবা এসেছে আপনার সাথে কথা বলার জন্য।
– কিহ বাবা এসেছে কোথায়?

এই বলে আলভী এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসলো। আর এতে আলভীর গা থেকে কাথাটাও পরে গেলো।
অর্থী আলভীকে দেখে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।
আলভীর পড়নে শুধু একটা লুঙ্গি ছিলো। এই জন্যই আলভী গায়ে কাথা মুড়ি দিয়ে ছিলো । ওর সব কাপড় ভিজে একাকার, তাই উপায় না পেয়ে লুঙ্গি পড়তে হয়েছে।

আলভী পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো যে কেউ নেই। এতে তার বুঝতে বাকি রইলো না যে, অর্থী চালাকি করে মিথ্যে বলে আলভী কে বোকা বানিয়েছে।

– যাই বলুন না কেন আপনাকে কিন্তু লুঙ্গিতে দারুণ মানিয়েছে।
এই বলে অর্থী জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
আলভী প্রতিউত্তরে কিছু বলতেই যাচ্ছিলো তখনই কেউ দরজায় নক করলো, আলভী চট করে কাথার ভিতর ঢুকে পড়লো।
অর্থী আলভীর কান্ড দেখে হেসেই চলেছে।

অর্থী দরজার কাছে গিয়ে দেখলো, তার শাশুড়ি দাড়িয়ে আছে।
– আরে মা বাইরে দাড়িয়ে আছো কেন?
– শুন, আজ সন্ধ্যায় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। গ্রামের সব লোকজন আসবে, তোমার নতুন নতুন বিয়ে সবাই তোমাকে দেখতে চাইবে। আর গ্রামের পরিবেশ বুঝতেই পারছো। এই শাড়িটা আজকে পড়িও আর এটা কালকের জন্য।
– আচ্ছা মা
– আর হ্যাঁ, আলভীর সব কাপড় তো ভেজা। এতো জলদি শুকোবেও না। ও কি করছে? আজকে অনুষ্ঠান এ ছেলেটা কি পড়বে??
– মা, আপনার ছেলে আজ ঘর থেকে বের হবে না।
এই বলে অর্থী হাসতে লাগলো
.
অর্থী আলভীর জন্য খাবার নিয়ে এসে তাকে ডাকছে,
– এইযে মিঃ আলু আই মিন আলভী শুনছেন….
আলভী কাথার ভিতর থেকে মাথা বের করে বললো ,
– এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার। বারবার কেন ডাকছ?
– শুনুন আমার কোন শখ নেই আপনাকে ডাকার, মা আপনাকে খাবার দিতে বললো তাই ডাকছি।আপনার খাওয়ার ইচ্ছে না থাকলে বলুন আমি নিয়ে যাচ্ছি।
আলভীর খিদে লেগেছে খুব। তাই বললো
– টেবিলে প্লেট টা রাখো। আমি খেয়ে নিবো।

আলভী কাথাটা চাদরের মতো করে গায়ে দিয়ে খাবারের প্লেট নিয়ে খাচ্ছে ।
তা দেখে অর্থী মুখ চেপে ধরে হাসছে।

– শুনো মেয়ে একদম হাসবা না কিন্তু বলে দিলাম। এখানে কোন সার্কাস চলছে না।
অর্থী হাসি থামিয়ে বললো,
– কি করবো বলুন, আপনার অবস্থা দেখে হাসি পাচ্ছে। একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজী। খুব তো তখন ছোটবেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে গর্ব করছিলেন। এখন কি হলো!!

.
একটু পরেই কনেকে হলুদ মাখানো হবে। অর্থীর শাশুড়ি এসে তাকে শাড়ি পড়ার জন্য তাগাদা দিয়ে গেছে। কিন্তু সমস্যা হলো অর্থী শাড়ি ঠিকমতো পড়তে পারে না, কারো কাছ থেকে পরে নিবে তারও কোন উপায় নেই, অর্থীর শাশুড়িও ব্যস্ত। তাছাড়া এই বাড়িটা অনেক পুরোনো আমলের, রুমের সাথে এটাস্ট বাথরুম নেই। দুটো বাথরুম আছে তাও নিচতলায়।
রুমের ভিতর আলভী আছে। অন্যসব রুমও আত্মীয় স্বজনে ভর্তি।
অর্থী কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। শাড়িটা নাহয় যেমন তেমন করে পড়ে নিবে, কিন্তু কোথায় চেঞ্জ করবে কাপড়টা সেটার জন্যেও তো জায়গা দরকার।

অনেক্ষণ থেকে ভাবার পর অর্থী আলভী কে ডাকলো।
– শুনেন না, আপনি একটু বাইরে যাবেন প্লিজ। আমি কাপড় চেঞ্জ করবো।
– বাইরে এইভাবে আমি যেতে পারবো না। তুমি অন্য রুমে গিয়ে চেঞ্জ করো।
অর্থী কিছুটা রাগী ভাব নিয়ে বললো,
– অন্য রুমে জায়গা থাকলে কি আর আপনাকে বাইরে যেতে বলতাম নাকি।
– সো হোয়াট! আমি এভাবে বাইরে যাবো না।
– ইচ্ছে হচ্ছে…..(নাহ বেশি কিছু বলা যাবে না যদি আবার সেই রাতের মতো 😷)
ওকে ঠিক আছে যেতে হবে না বাইরে। আপনি কাথা মুড়ি দিয়ে থাকুন। একদম কাথার ভেতর থেকে বের হবেন না।

আলভী কিচ্ছুক্ষণ অর্থীর দিকে তাকিয়ে থেকে বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো,
– ওকে। এন্ড লিসেন তুমি যেমনটা ভাবছো আমি তেমন নই।
এই বলে আলভী কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।
আর অর্থী কাপড় চেঞ্জ করে শাড়ি পরে নিলো।

অর্থী শাড়ি পরে বাইরে যাচ্ছিলো তখন আলভী বললো,
– এই মেয়ে শুনো
অর্থী আলভীর দিকে ঘুরে দাড়াতেই আলভীর চোখ অর্থীর দিকে আটকে গেলো। কারন তাকে অপরুপা লাগছিলো।
– আপনাকে না কতবার বলেছি যে আমার নাম ধরে ডাকবেন!
– (উফফ্ যাস্ট ঝগড়ার জন্য সুযোগ খুজে) তোমার ফোনটা একটু দেওয়া যাবে, আমার ফোনটা তো অফ।
– হুম। এই নিন।
– ও হ্যাঁ, আর একটা কথা….
– কি?
– তোমাকে সুন্দর লাগছে(গম্ভীর ভাবে), এখন যাও।
অর্থী কিছুক্ষণ অবাক হয়ে আলভীর দিকে তাকিয়ে থেকে বাইরে এসে মুখ বাকিয়ে বললো,
– এটা আবার কেমন প্রশংসা। তেতোমুখো একটা।

(চলবে)
.
লেখা – ইশিতা মানহা ইচ্ছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here