হলুদ_খামের_চিরকুট পর্ব ৬

#হলুদ_খামের_চিরকুট

.
আলভী আমাকে ছেড়ে দিলো। আর আমি শকড হয়ে সেখানেই দাড়িয়ে আছি।
– অর্থী, আসলে আমি
আমি কিছু না শুনেই দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।
এটা কি হলো। আমার এখনো কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে৷ পুরো শরিরের মধ্যে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে শরীরের লোম খাড়া হয়ে আছে।আলভী কি আমাকে সত্যিই কিস করলো!
কিছুক্ষণ এভাবেই ওয়াশরুমে দাড়িয়ে থাকলাম। তারপরে অনেকক্ষণ পর ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম৷
আলভী বিছানার মধ্যে একপাশ ফিরে শুয়ে আছে। মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে গেছে।
আমিও আর কিছু না বলে চুপচাপ পাশে শুয়ে পড়লাম।
এদিকে আলভী ঘুমায় নি। চুপটি করে চোখ বন্ধ করে ভাবছে, এটা আমি কি করলাম। না জানি মেয়েটা আমার ব্যাপারে কি ভাবছে? যত দোষ ওই মেয়েটার কি দরকার ছিলো, আপনি কিছুই করতে পারবেন না বলে খেপানোর।

অর্থী বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে, কিছুতেই ঘুম আসছে না। শুধু সেই ঘটনাটাই চোখের সামনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এভাবে ভাবতে ভাবতে দুজনেই ঘুমিয়ে গেলো।

সকালে যখন অর্থীর ঘুম ভাঙলো। দেখলো আলভী ওর দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে আছে। অর্থী আনমনে কিছুক্ষণ আলভীর দিকে তাকিয়ে আছে।
বাহ! ঘুমন্ত অবস্থায় তো গোমড়া মুখো কে ভালোই দেখায়, এমনিতেও ভালো দেখায় শুধু রাগী ভাবটা পচা লাগে। এইবলে অর্থী একটু হাসলো।
তারপর কালকের ঘটনা মনে পড়তেই এক ঝটকায় বিছানা থেকে উঠে বসলো।
উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে রান্নাঘরে গেলো নাস্তা রেডি করতে।
.
নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা করছে আর আড়চোখে আলভীর দিকে তাকাচ্ছে। আলভীর চোখে চোখ পড়তেই চোখ সড়িয়ে নিলো।
আল্লাহ আমার এতো লজ্জা লাগছে কেন।
.
– আলভী?
– – জি বাবা।
– শুন, তোর আমিন চাচার মেয়ের বিয়ে পড়শুদিন। আমি আর তোর মা সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছি, তোরাও সব কিছু গুছিয়ে নে। আমরা বিকেলেই রওনা দিচ্ছি।
– কিন্তু বাবা, আজ আমার একটা খুব ইমপরটেন্ট কাজ আছে।
– আমি এতো বাহানা শুনতে চাচ্ছি না। আমি তোদেরকে রেডি থাকতে বলেছি রেডি থাকবি। বিকেলে আমরা রওনা দিবো
– মা….
আলভীর মা হাত দিয়ে আলভী কে ইশারা করলো।
– বলছিলাম কি আলভীর বাবা, ছেলেটা যখন বলছে এতো করে তাহলে নিশ্চয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ আছে। এক কাজ করি আমরা দুজন আজ চলে যাই। আলভী আর বৌমা নাহয় কাল চলে যাবে।
– হুম ঠিক আছে।
এই বলে আলভীর বাবা নাস্তার টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো।
.
অর্থী রুমে এসে দেখে আলভী রুমের ভিতর পায়চারি করছে। অর্থী রুমে ঢুকা মাত্রই আলভী বললো,
– এই মেয়ে তুমি বলতে পারলে না যে তুমি যাবা না।
– আশ্চর্য, আমি কেন বলবো যে যাবো না। আমার তো গ্রামে যাওয়ার জন্য এক্সাইটেড লাগছে। কেন আপনার যাওয়ার ইচ্ছে নেই বুঝি?
– আমার হৈচৈ ভালো লাগে না, তার উপর গ্রামের বিয়ে। উফফ্ অসহ্য
– বেরসিক মানুষ একটা ( মিনমিনিয়ে)
– কিছু বললা?
– আপনাকে কেন কিছু বলতে যাবো।
.
অর্থী লাগেজে কাপড় গুছাচ্ছে। কাল সকালেই রওনা দিবে তারা, আজ বিকেলে তার শ্বশুর শাশুড়ি চলে গেছে। আলভী রুমে এলো।
– এই মেয়ে এই, কি করছ কি তুমি?
– দেখতেই তো পাচ্ছেন কাপড় গুছাচ্ছি, আবার জিজ্ঞেস করছেন কি করছি?
– সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি কি করছ। কিন্তু তুমি আমার কাপড় সহ গোছাচ্ছ কেন?
– কেন আপনি যাবেন না।
– উফফ্ বড্ড বেশি কথা বলো তুমি।
– আমি আবার কি বললাম।
অর্থী ওর কাপড় আর আলভীর কাপড় একই লাগেজে গোছাচ্ছিল। আলভী কাপড়গুলো বের করে অন্য একটা লাগেজ নিয়ে তাতে ওর কাপড় গুছিয়ে রাখলো।
.
দুজনেই রওনা দিয়েছে আলভীর চাচা বাড়ির উদ্দেশ্যে।বাসে করে। অর্থী বললো,
– আচ্ছা আপনার চাচা বাসা কতদূর?
– মোটামুটি দুরত্বে।
– আমরা কি বাইকে যেতে পারতাম না।
– না, বাইকে যাওয়া পসিবল না। আর তাছাড়া চাচা বাসায় যেতে নদী পার হতে হয়। প্লিজ আর একটাও প্রশ্ন করবে না। অর্থী আর কিছুই বললো না
বাসে উঠার পর থেকেই অর্থী কেমন যেন নড়াচড়া করছে। আলভী সেটা লক্ষ্য করে বললো,
– এভাবে নড়াচড়া করছ কেন? স্থির হয়ে বসতে পারো না।
– আসলে বাসে উঠলেই আমার বমি বমি লাগে।
– কিহহ
– হুম।
– খবরদার বমি করবা না বলে দিচ্ছি।
– আজিব, বমি কি বলে বলে আসে নাকি যে আপনি হুমকি দিলেন আর বমি বমি ভাব চলে গেলো ।
– বাসে উঠলে বমি করো, সেই কথাটা আগে বলতে পারতে না, যত্তসব।
– না আমি ভেবেছিলাম কাল তো মা বাবা ট্রেনে গিয়েছে, আমরাও বোধহয়…..
– শুনো মেয়ে নিজে নিজে ভেবে নেওয়াটা বন্ধ করো বুঝলে, এই নাও পানি। মাঝে মাঝে অল্প অল্প করে খাবে, তাহলে খারাপ লাগাটা একটু কমবে। আর যদি এখন বেশি খারাপ লেগে থাকে তাহলে আমার কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রাখো। দেখবে অনেক আরাম লাগছে।
– হুম
অর্থী আলভীর কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। চারঘন্টার জার্নিতে অর্থীকে অনেক দুর্বল দেখাচ্ছে। বাস থেকে নেমে কিছুক্ষণ পরেই ওর চেহারা থেকে ক্লান্তি ভাবটা চলে গেলো, এক মুহূর্তে প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো।
.
– আচ্ছা আমরা হেটে হেটে কোথায় যাচ্ছি?
– নদী ঘাটে।
– ওয়াও, কোন নদী ঘাট? মানে নদীর নাম কি?
– আত্রাই নদী। আর একটা প্রশ্ন করবে না। চুপচাপ হাটতে থাকো।(রেগে)
– রাক্ষস একটা…
.
তারা হাটতে হাটতে নদীঘাটে পৌছে গেলো। বর্ষা মৌসুমে নদী খরস্রোতা হয়ে উঠেছে। তারা নৈকোতে উঠলো।
আলভী একদম কর্নারে বসেছে, সাথে তার লাগেজ নিয়ে ।
– এইযে শুনুন, এপাশে এসে বসেন। এতো কর্নারে বসেছেন, বলা যায় না পরে যেতে পারেন।
– শুনো মেয়ে ছোটবেলায় অনেক যাওয়া আসা করেছি নৌকায়। তাই আমাকে উপদেশ দিতে এসো না, নিজে সাবধানে বসো।
অর্থী আর কিছুই বলল না। বলেও কোন লাভ নেই কারন আলভী কিছুই শুনবে না।
ইঞ্জিন চালিত নৌকা।
নৌকা চলতে শুরু করেছে। অর্থী স্রোতের বিপরীত এ ছোট ছোট ঢেউ দেখতে লাগলো।
.
নৌকা প্রায় কিনারায় চলে এসেছে। নৌকায় যারা বসে ছিলো সবাই নড়েচড়ে বসলো। নৌকা চালক নৌকা তীরে ভিড়ানোর আগে বললো। নৌকা থামার পর লগি না বাধা পর্যন্ত কেউ যেন নৌকা থেকে না নামে।
কিন্তু আলভী নৌকা চালকের কথার গুরুত্ব না দিয়ে নৌকা থামার সাথে সাথে নামার জন্য তীরে পা বাড়ালো। এতেই যা হওয়ার হলো, নৌকা একটু সরে আসলো আর আলভী
“ধপাস”
.
(চলবে)
.
লেখা – ইশিতা মানহা ইচ্ছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here