হলুদ খামের চিরকুট পর্ব ৫

#হলুদ_খামের_চিরকুট

রুমের মধ্যে বসে অপেক্ষা করছি আলভীর জন্য। ঘড়ির কাটা তারমত করে ঘুরছে। বারান্দায় বসে রাতের আকাশ দেখছি।

আজ আকাশে চাঁদ নেই। মেঘের ভিতরে লুকিয়েছে আর মাঝে মাঝে উকি দিচ্ছে। রাত গভীর হচ্ছে কিন্তু আলভী এখনো ফিরে নি।

বারান্দায় চেয়ারেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, ঘুম ভাঙলো আজানের শব্দে। এভাবে চেয়ারের মধ্যে ঘুমানোর কারনে কাধটা প্রচুর ব্যাথা করছিল। নামাজ পড়ে রান্নাঘরে এলাম। মা নাস্তা বানাচ্ছে।

আমিও কোন কথা না বলে চুপচাপ মাকে সাহায্য করতে লাগলাম।
– কিরে মন খারাপ?
– মা, আলভী বাসায় ফিরে নি। কাল রাতে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে এখনো বাসায় ফিরে নি।
– কি, বাসায় ফিরে নি।!! এই ছেলেটা যে কি করে। তুমি ফোন করেছিলে ওকে?
– না (ফোন নাম্বার থাকলে না ফোন করবো)
– আচ্ছা আমিই ফোন করছি।
ফোন বন্ধ বলছে। এই ছেলেটা আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না। আচ্ছা শুনো, নাস্তার টেবিলে যদি আলভীর বাবা আলভীর কথা জিজ্ঞেস করে, তাহলে বলিও না যে ও রাত থেকে বাসায় নেই।
– ঠিক আছে মা।
– ওর বাবা যা রাগী। জানতে পারলে আবার বাবা ছেলের মধ্যে একটা দন্দ শুরু হবে।

নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা করছি।
– আলভী কোথায়? ও নাস্তা করতে আসে নি কেন?
– আসলে বাবা আলভী….
– আমি বলছি, আলভীর ফোন এসে ছিল। বললো খুব গুরুত্বপূর্ণ তাই সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে।
– ওহ আচ্ছা।

নাস্তা করে রুমে আসলাম। প্রচুর অস্বস্তি লাগছে। লোকটা রাতে বেরিয়ে গেছে এখনো ফিরে নি।
লোকটার কি কান্ডজ্ঞান বলতে কিছু নেই । আমার কথা নাহয় বাদই দিলাম কিন্তু উনার মা যে উনার জন্য চিন্তা করছে, এতো টুকু জ্ঞানবোধ কি নেই উনার মধ্যে।

এরই মধ্যে শাশুড়ি মা এলো আমার রুমের মধ্যে।
– অর্থী, আমি আলভীর বন্ধু আরাফ কে ফোন করেছিলাম সে বললো, আলভী তার এখানেই আছে। তুমি চিন্তা কর না কেমন।
– জি মা।
এতো রাতে ওভাবে বেরিয়ে গেলে সবারই চিন্তা হয়।
.
আম্মুর ফোন এলো। রিসিভ করে সালাম দিলাম। আম্মু সালামের উত্তর না দিয়েই বললো,
– অর্থী, মুমু ফিরে এসেছে ওর জামাই সহ।
– কিহহ। আপু ফিরে এসেছে!!!
– হ্যাঁ, তোর খালু, তোর আব্বু সবাই খুব রেগে আছে। আমরা এখন তোর খালামনির বাসায় যাচ্ছি।
এই বলে আম্মু ফোন রেখে দিলো।
উফফ এই আপুটা যে কি করে। তুই পালিয়েছিস, ঠিক আছে। এতো জলদি বাসায় ফেরার কি দরকার তাও আবার বর সহ। আগে পরিস্থিতি টা একটু ঠান্ডা হোক তারপরে আসতি। বাসায় আবার কি অশান্তি লাগবে কে জানে। এতো ঝামেলা আমার ফ্যামিলিতেই কেন?
.
আলভী দুপুরে বাসায় এলো। ওর চোখদুটো লাল হয়ে আছে, মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমায় নি। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।
– কিরে এমন কেন দেখাচ্ছে তোকে? (মা)
আলভী কিছুই বলছে না।
– কি হলো কিছু বলছিস না কেন?
আলভী কোন উত্তর না দিয়ে রুমে চলে গেলো, আমিও ওর পিছে পিছে রুমে এলাম।
রুমে ঢুকে দেখলাম আলভী জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে। কি করছে দেখার জন্য আমিও চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম ।এভাবে অনেক্ষণ পেরিয়ে গেলো। কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে বললাম,
– আলভী, আপনি ঠিক আছেন?
আমার কথা শুনতে পেয়ে আমার দিকে ফিরে তাকালো। দুচোখে পানি ছলছল করছে। তারপর কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।

অদ্ভুত ইনার আবার কি হলো । আমি আলভীর জন্য খাবার আনতে গেলাম। খাবার নিয়ে এসে দেখি আলভী বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে।
– আলভী খাবারটা খেয়ে নিন।
– আমার খিদে নেই। খাবার নিয়ে যাও এখান থেকে।
– দেখুন কিছু খেয়ে নিন। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুই খান নি।
– এই মেয়ে বললাম না এখান থেকে নিয়ে যেতে কথা কানে যাচ্ছে না। (ধমক দিয়ে)
আমি আর কিছুই বললাম না। খাবারটা ওইখানে রেখে দিয়ে বারান্দায় এসে দাড়ালাম।
হয়েছে কি লোকটার? এমন উদ্ভট বিহেভ করছে কেন।
সারাদিন আলভী শুয়েই ছিলো। রাতে খাওয়া করে এসে চুপচাপ বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লো।
আজকে এক বিছানায় থাকা নিয়ে, কোন কিছু নিয়ে কোন ঝামেলা করলো না।
.
আমার প্রচুর অস্বস্তি লাগছে। এইদিকে আলভীর এমন উদ্ভট আচরণ অপরদিকে মুমু আপুকে নিয়ে কি হচ্ছে তাও জানি না। আম্মুকে কখন থেকে ফোন দিচ্ছি ফোন রিসিভ করছে না।
বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না।
এপাশ ওপাশ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে আম্মুকে ফোন দিলাম। আম্মু বললো, খালু খালামনি মুমু আপুকে বাসার ভিতর ঢুকতে দেয় নি।
কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগলো। যদিও মুমু আপু অপরাধ করেছে তবুও তার কথা ভেবে খারাপ লাগছে।
দিন পেরিয়ে রাত হলো, আলভী সারাদিন রুমের মধ্যেই ছিলো।
লোকটার এমন আচরন আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলছে।
খাওয়া শেষে মায়ের সাথে সবকিছু গুছিয়ে রুমে এলাম তখন আলভী ফোন টিপছিল বিছানায় বসে।
আমি গিয়ে বিছানায় বসতেই আলভী বলে উঠলো,
– শোন মেয়ে তুমি গিয়ে সোফায় ঘুমাও।
– দেখুন আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি আমায় সোফায় ঘুমাবো না। আমার এক বিছানায় ঘুমাতে কোন সমস্যা নেই। আপনার সমস্যা হলে আপনি গিয়ে ঘুমান।
– তোমার মতো ঝগড়ুটে মেয়ের সাথে কথা বলাই বেকার।
এই বলে আলভী বালিশ ও চাদর হাতে নিয়ে সোফায় যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো।
– কি বললেন, আমি ঝগড়ুটে 😠
– তা নয়তো কি।
মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আমাকে ঝগড়ুটে বলা,
টেবিলের উপর পানির জগ ছিলো। সব পানি সোফায় ঢেলে।
– এই মেয়ে, এটা কি করলে।
– বেশ করেছি। আমাকে ঝগড়ুটে বললে আরও করবো।
– তুমি কি পাগল নাকি!!!
– এখনো হই নি তবে আপনার সাথে সাথে থাকতে থাকতে একদিন ঠিকই হয়ে যাবো।
এখন ঘুমোন গিয়ে ভিজা সোফায়। ছাগল একটা ( মিনমিনিয়ে)
– এই মেয়ে কি বললা কি বললা??
– বললাম আপনি একটা ছাগল।
– কিহ তুমি আমাকে ছাগল বললা!!!,
– হ্যাঁ বলেছি। আপনি একটা ছাগল, যেমন তেমন ছাগল না হাইব্রিড ছাগল।
– খবরদার আমাকে ছাগল বলবা না।
– একশ বার বলবো, হাজার বার বলবো। ছাগলকে ছাগল বলবো না তো কি ভেড়া বলবো।
– একদম ছাগল বলবা না বলে দিলাম কিন্তু নইলে
– নইলে কি, কি করবেন। কিছুই করতে পারবেন না। করার মতো একটা জিনিস ই পারবেন। হয় বারান্দায় নয় ছাদে গিয়ে পায়চারি করে রাগের বহিঃপ্রকাশ করবেন। আর কিছুই পারবেন না।
সরুন আমি ঘুমাবো।
এই বলে আমি আলভীর পাশ কেটে বেড এর দিকে এগোতেই আলভী আমার বাম হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে তার একদম কাছে নিয়ে দুই সেকেন্ডের মধ্যে আমার ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিলো।
আমার তো আক্কেল গুড়ুম।
(চলবে)
.
লেখা – ইশিতা মানহা ইচ্ছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here