অচিনপুর পর্ব -১২

#অচিনপুর – ১২

আমি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে বললাম,
— আমার তো মাইঢ্যা সায়েন্স, আমি তো ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারব না!
প্রহ্লাদ দাদা চোখটা কুঁচকে জানতে চাইল,
— মাইঢ্যা সায়েন্স কী জিনিস? আমি তো জীবনেও শুনিনি এটা!
আমি ফোঁপাতে শুরু করেছি। কান্না থামিয়ে বললাম,
— উচ্চ মাধ্যমিকের ম্যাথ তো প্রাইভেট পড়তেই হয়! মামি বলেছিল এটা মাধ্যমিকের ম্যাথের মতো সহজ নয়, আমি পারব না। তাই আমি হায়ার ম্যাথ নিইনি। হোম ইকোনোমিকস নিয়েছি। ম্যাথ না নিলে তো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফর্মই তোলা যায় না!
প্রভাত দাদা বলল,
— না তোলা গেলে তুলবি না! এইজন্য জ্বর হতে হবে কেন?
— ও তুমি বুঝতে পারবে না। প্রহ্লাদ দাদা বলল শুনলে না? আমার বাবা চাইতেন, আমি যেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি!
প্রভাত দাদার কন্ঠ খুব নরম হয়ে গিয়েছে। সামনের সিট থেকে বাঁকা হয়ে আমার দিকে ঘুরে বসল ও। তারপর আদর আদর সুর করে বলল,
— আমাদের বাবা-মা তো আমাদেরকে নিয়ে কত আশাই করে। সব কি আমরা পূরণ করতে পারি? আর তোর অত ছোটোবেলাতে আংকেল কীভাবে জানবেন যে তুই ম্যাথে ভালো না।
আমি চিৎকার করলাম,
— কে বলেছে, আমি ম্যাথে ভালো না? ম্যাথ সবচেয়ে প্রিয় সাবজেক্ট আমার! মাধ্যমিকে মাত্র দুটো লেটার আমার, দুটোই ম্যাথে। জেনারেল ম্যাথে হান্ড্রেড আউট অফ হান্ড্রেড পেয়েছিলাম। ইলেক্টিভ ম্যাথেও হান্ড্রেডই পেতাম। ওই সুরভী বদ মেয়েটার জন্য পাইনি। আমি লিখেছিলাম, সিলিন্ডারের আয়তন সমান পাই আর স্কয়ার হেইচ! সুরভী আমাকে কনফিউজড করে দিয়ে বলল, টু পাই আর হেইচ! আমি অনেক ভেবে ওরটাই ঠিক মনে করে অঙ্ক করে দিয়ে এলাম আর বাসায় এসে মিলিয়ে দেখি আমার চার নম্বর শেষ! ফুল মার্কস হলো না!
— ভালো হয়েছে। চার, আট মাঝে মাঝে বাদ পড়তে হয়। জীবনে ফুল মার্কস পাওয়া কোনো কাজের কথা না। তোর জ্বর তো বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে। একগাদা কথা বলছিস!
আমি কেঁদে কেঁদে বললাম,
— আমার তো ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া হবে না!
— তোর কি প্যানিক অ্যাটাক হয়? খুব বেশি ভাবছিস কিছু নিয়ে? এইজন্যই কি জ্বর এলো? মুন্নিকে নিয়ে ভাবছিস?
মেজ আপাকে নিয়ে এই ভাবনাটা এত বেশি চাপ দিচ্ছিল যে, সেটা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নানান কিছু ভাবছিলাম আমি। তারপর আবার ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়তে পারার হতাশা!
এতক্ষণ একটা ঝিমঝিম ভাব ছিল। প্রহ্লাদ দাদা বার্গার আনালো, তখন সেটাও খেতে পারিনি। খুব বিস্বাদ লাগছিল। জ্বর হয়েছে জানতে পেরে এখন আমার শরীরটা সত্যিই খারাপ লাগতে শুরু করল। পানির পিপাসায় গলা কাঠ হয়ে আছে আমার। আমি পানি চেয়ে বললাম,
— পানির বোতল আছে? আমি একটু পানি খাব।
গাড়িতে পানি ছিল না। প্রভাত দাদা একটা দোকানের সামনে লাফ দিয়ে নামল। ওর কোলে ডন বসে ছিল। গাড়ি থেকে নামার সময় ওকে নামিয়ে রেখে গিয়েছে প্রভাত দাদা। সেটাও সিটের উপর উঠে বাঁকা হয়ে আমার কাছে চলে এলে আমি ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠলাম।
— ডন, ওইপাশে চুপ করে বস।
ডনকে ধমক দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো প্রহ্লাদ দাদা।
— বেশি খারাপ লাগছে?
— হুম!
— বেশি ভাবিস না। আরেকটু আগে হলে সাবজেক্ট পাল্টাতে পারতি। এখন তো আর সেটা সম্ভব নয়। যেটা পড়ছিস সেটাই ভালো করে কর। শাহাদাত আংকেল অনেক মেধাবী ছিলেন। শুনেছি, আন্টিও অনেক মেধাবী ছিলেন। তাদের মেয়ে হয়ে তুই কোনোরকমে পাশ করে গেলে তো চলবে না!
প্রভাত দাদা পানি নিয়ে ফিরে এসেছে। একগাদা জুসের বোতল আর চিপস, চকলেট এনেছে।
প্রহ্লাদ দাদা বলল,
— এসব আজেবাজে খাবার কেন এনেছিস!
প্রভাত দাদা নির্বিকার মুখে বলল,
— জ্বরমুখে এসবই ভালো লাগে!
আমি প্রহ্লাদ দাদার আগের প্রশ্নটার উত্তর দিয়ে বললাম,
— কিন্তু আমি তো প্রাইভেট পড়ি না। কলেজের ক্লাসও রেগুলার হয় না। আমিও এত দূরের রাস্তা দিয়ে নিয়মিত আসতে পারি না। সবগুলো ক্লাস করতে পারি না। আমি কী করে ভালো রেজাল্ট করব?
— কেন? তুই কেন প্রাইভেট পড়িস না?
— মামির তো অত টাকা নেই! জুম থেকে এখন আর কটা টাকাই বা আসে! সংসার চালাতেই মামির জান শেষ হওয়ার জোগাড় হয়!
প্রভাত দাদা ঘুরে এসে প্রহ্লাদ দাদাকে বলল,
— তুমি নেমে গিয়ে সামনে গিয়ে বসো। আমি ওকে দেখছি।
প্রহ্লাদ দাদা কিছু বলল না। সামনের সিটে গিয়ে ডনকে কোলে নিয়ে বসল।
প্রভাত দাদা গাড়িটে রাখা কুশনদুটো আমার পিঠের পেছনে দিয়ে বলল,
— এখানে হেলান দিয়ে শুয়ে থাক।
আমি ওর হাতদুটো চেপে ধরে ফিসফিস করে বললাম,
— ওই দেমির কুমিরের কথাটা কাউকে বলে দেবে না তো?
— চাঁপা, একটু চোখ বুঝে থাক। জ্বর বেশি আছে। বকবক করেই যাচ্ছিস! একটা নাপা খেয়ে নে।
আমি ওর হাতদুটো চেপে ধরে বললাম,
— তুমি আমার মেজ আপাকে বিয়ে করবে, প্রভাত দাদা? তাহলে ওই দেমির কুমির কিছুতেই মেজ আপাকে টার্কিতে নিয়ে যেতে পারবে না!
প্রভাত দাদার চোখদুটো ছলছল করে উঠল, এমন মনে হলো আমার। খুব নরম করে বলল,
— আর একবারও বলিস না ও কথা, বোকা চাঁপা ফুল! তোর এমন জ্বর মুখের অনুরোধ আমি কখনো ফেলে দিতে পারব না! তুই এমন করে চাইলে অনুরোধে কথা দিয়ে বসতেও পারি! আর বলিস না, প্লিজ!
আমি চুপ করে গেলাম। কথা বলতেও শক্তি পাচ্ছি না একটুও।
যখন ঘুম ভাঙাল আমার, আমরা বরণ পাড়া ছেড়ে শাল্যা পাড়া চলে এসেছি। শাল্যা পাড়া ছেড়ে কিছুদূর গেলেই মেখলি। ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে গিয়েছে আমার। আমি উঠে বসলাম। প্রহ্লাদ দাদা আর ডন গাড়িতে নেই। আমি, ড্রাইভার আর প্রভাত দাদা শুধু। আমি জানতে চাইলাম,
— প্রহ্লাদ দাদা নেমে গেছে?
— হ্যাঁ!
— আমায় কেন ডেকে দিলে না? আমি একা চলে আসতাম!
— এই জ্বর অবস্থায় একা একা ছেড়ে দেবো তোকে?
— আরে ধুর! জ্বর চলে গেছে না? এই দেখো,
প্রভাত দাদার হাতটা টেনে নিয়ে কপালে ছোঁয়ালাম আমি।
ও কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখল। তারপর দুটো হাতে আমার মুখ ধরে রাখল। আমার কেমন যে একটা লাগল। মনে হলো, প্রভাত দাদা আমার এতটা কাছেই যদি থেকে যেত সবসময়!
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই আমি বললাম,
— এখানে ছেড়ে দাও আমাকে। তোমার সাথে দেখলে, মামি খুব বকবে আমাকে।
প্রভাত দাদা খুব ঘাউড়া। ও ঘাড় শক্ত করেই বসে থাকল। আমি কথা রিপিট করলে, আস্তে করে বলল,
— তোর মামিকে গোণার সময় তো এটা নয়, চাঁপা! আজকেও যদি ভয় পাই, তো আমার ক্ষতি হবে। তুই একটু বকুনি শুনবি বলে আমি কিছুতেই আমার কোনো ক্ষতি হতে দেবো না!
আমার শরীরটাও ভালো লাগছে না। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ি পর্যন্ত একা যেতে পারব, এমনটাও মনে হচ্ছে না। কিন্তু জ্বরে না, ভয়েই অজ্ঞান হওয়ার দশা হলো আমার যখন প্রভাত দাদা আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি চোখ বন্ধ করে ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম। ও কঠিন গলায় বলল,
— একটুও ছটফট করবি না, চাঁপা। তুই খারাপ কিছু করিসনি যে এত ভয় পাবি। জ্বরে হাঁটতে পারছিস না, আমি শুধু ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি তোকে!
রাস্তা ছেড়ে একটু উঁচুতে আমাদের বাড়ি। সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে প্রভাত ও বলল,
— অনেকদিন পরে এলাম রে চাঁপা। কিন্তু কিছুই বদলায়নি। তেমনটাই আছে। আংকেলও এখানে খেলত আমাদের সাথে, মনে আছে তোর? ঘাস দিয়ে টেনিস লনও বানিয়ে ফেলেছিলাম এখানে।
প্রভাত দাদা হাসছে। ওর হাসিটা এত সুন্দর! এই এক হাসি দিয়েই হাজার হাজার মেয়েকে খুন করে ফেলতে পারে ও! ও এত খুশি কেন? হাসিতে খলখল করে বলল,
— তুই তো অনেক হালকা রে! মামি খেতে দেয় না তোকে? নাকি জিরো ফিগারে আসতে চাইছিস? কিটো করিস নাকি? একদম না! এনিমিয়া হয়ে মরে যাবি কিন্তু!
বলতে বলতে আমাকে কোলে নিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল প্রভাত দাদা। বসার ঘরে মামা, মামি, বড়ো আপা, ছোটো আপার সাথে সৌমিকও বসে আছে। সবার হাতে চায়ের কাপ। মামা হায় হায় করে এসে বলল,
— কী হয়েছে? কী হয়েছে?
আমাকে নামিয়ে সোফায় বসিয়ে দিতে দিতে প্রভাত দাদা বলল,
— এতটা ভয় পাবেন না। জ্বর এসেছে। আমি নাপা খাইয়ে দিয়েছি।
মামা তবুও চিন্তিত হয়ে বললেন,
— কেন? কেন? জ্বর হবে কেন?
প্রভাত দাদা হেসে হেসে বলল,
— মাঝে মাঝে জ্বর হওয়া ভালো। জ্বর এলেই বোঝা যায়, শরীরের ডিফেন্স মেকানিজম ঠিকঠাক কাজ করছে। আবার জ্বর হলে চমৎকার কিছু ঘটনাও ঘটে যায় কখনো কখনো! ভাববেন না, হয়তো ভাইরাল জ্বর। আবার স্ট্রেস এটাকও হতে পারে। আজকের রাতটা যাক। জাহাঙ্গীর আংকেলকে ফোন করে দিয়েছি আমি। উনি কালকে আসবেন। ওকে দেখে যাবেন। তিন্নিও তো বুঝবে কী কী করতে হবে। যদি দরকার হয় প্রয়োজনীয় টেস্ট করিয়ে নেবেন। আমি সব ব্যবস্থা করে রাখব। শহরে নিয়ে যাওয়ার দরকার হলে আমার গাড়িটাও পাঠিয়ে দেবো।
মামি আমার কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখতে দেখতে বলল,
— তোমাকে অনেক ধন্যবাদ! তোমার আর কিছু করার দরকার হবে না, প্রভাত।
প্রভাত দাদা তেমনি হেসেই বলল,
— অবশ্যই দরকার, মামি! চাঁপার সব কিছুতেই আমার ভীষণ দরকার! আমার যেটা করার দরকার সেটা আমি ঠিকই করে নিই। ওটা নিয়ে ভাববেন না আপনি। আপনি ভালো আছেন? অনেকদিন পরে দেখা হলো আপনার সাথে!
— এতক্ষণ তো ভালোই ছিলাম! বাচ্চাকাচ্চার অসুখ হলে আর ভালো থাকি কীভাবে? তুমি বসবে তো? চা খেয়ে যাও? নাকি অনেক ব্যস্ত?
— না, মামি বসব না। আমি আসলেই অনেক ব্যস্ত!
— ওকে কোথায় পেলে তুমি?
আমি আল্লাহ আল্লাহ করতে শুরু করলাম। প্রভাত দাদা আবার বলে না দেয়, আমি রাবার ফ্যাক্টরিতে ঘুরতে গিয়েছিলাম!
প্রভাত দাদা সেটা বলল না। বলল,
— আমার বোন প্রমিকে আনতে মহিলা কলেজে গিয়েছিলাম। চাঁপাও তো একই কলেজে পড়ে।
সৌমিক জিজ্ঞেস করল,
— এখন কী অবস্থা? জ্বর আছে?
আমি মাথা নাড়লাম।
— মাথা ঘুরছে শুধু।
মামা পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে বললেন,
— তোমাদের মাঝে পরিচয় আছে? ও প্রভাত, এই পাহাড়ের রাজার নাতি। আর প্রভাত, এই হচ্ছে আমাদের ওই বড়ো বাড়ির মালিক সৌমিক! আমাদের ঘরেরই ছেলে এখন। চাঁপার খুব ভালো বন্ধু। এই দেখো না, বন্ধুর অসুখে ঠিক মনে কুডাক ডেকেছে। স্বর্ণর খবর নিতে চলে এসেছে। বন্ধু তো এমনই হতে হয়, তাই না?
সবার মুখই বড্ড কঠিন আর শুষ্ক! সৌমিকও কাষ্ঠ হেসে বলল,
— ফুলপরীর মুখে এত শুনেছি আপনার কথা যে আপনাকে চেনা হয়ে গিয়েছে।
প্রভাত দাদা একবার আমার দিকে তাকাল। তারপর সৌমিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
— কে ফুলপরী?
মামা হেসে উঠল। উদার হাসিতে ঘর ভরিয়ে বলল,
— ওই বলেই সৌমিক ডাকে ওকে! কৃষ্ণার বাগানের ফুল বেচে দেয়, তাই নাকি ও ফুলপরী! হাহাহা।
প্রভাত দাদাও একটুখানি কঠিন করে হাসল।
বড়ো আপা আমাকে ধরে ধরে ওঠালো। বলল,
— এত কথার মাঝে থাকতে হবে না। চল, মাথা ধুইয়ে দিই! আর প্রভাত, তুমি বসো। চা না খেয়ে যাবে না কিন্তু!
প্রভাত দাদা বলল,
— তুমি ভালো আছ, তিন্নি?
— হ্যাঁ। তোমাকে তো দেখাই যায় না এখন! বসো, আমি আসছি। ওকে ঘরে দিয়ে আসি।
— না, না। আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হতে হবে না। আমি রেস্টুরেন্ট থেকে স্যুপ নিয়ে এসেছি। গাড়ি থেকে নামিয়ে এনে, একটু গরম করে, চাঁপাকে খাইয়ে দাও। ও সারাদিনে কিছু খায়নি! তারপর কী ওষুধ দিতে চাও দিও।
বড়ো আপা আমাকে ঘরে এনে শুইয়ে দিয়ে বলল,
— স্যুপটা নিয়ে আসি। তুই চুপ করে থাকবি তো?
আমি মাথা নাড়লাম। ওর হাত ধরে বললাম,
— মামি আমাকে অনেক বকবে আজকে?
— তুই কি কোনো অন্যায় কাজ করেছিস?
আমি মাথা উপর নিচ করে বললাম,
— ঘুরতে গিয়েছিলাম। জানো, য়েন য়েন দিদির সাথে দেখা হয়েছে আজ আমার!
বড়ো আপা আমার গল্পে যোগ দিলো না। বলল,
— শুয়ে থাক। আমি প্রভাতকে চা দিয়ে আসি।
— দরকার হবে না, তিন্নি। তুমি আমাকে অফার করেছ, ওতেই চলবে। থ্যাঙ্কিউ!
প্রভাত দাদা আমার ঘরে চলে এসেছে। আমি খুব করে চাই, বড়ো আপার সাথে প্রভাত দাদার বিয়ে হোক। কিন্তু এমন সুন্দর করে বড়ো আপাকে ডেকে ডেকে কথা বলাটা আমার একদম ভালো লাগল না।
প্রভাত দাদা আবার বড়ো আপাকে বলল,
— তুমি কি আমাকে এক গ্লাস পানি খাওয়াতে পারবে, তিন্নি?
— বোসো। আনছি এখনই।
বড়ো আপা চলে যেতেই প্রভাত দাদা একটা চেয়ার টেনে বসল আমার মাথার কাছে। বলল,
— ভালো লাগছে এখন?
আমি মাথা নাড়লাম।
— মাথাটা কেমন করছে। অনেক ভারী হয়ে আছে!
ও একটু চুপ করে তাকিয়ে থাকল। তারপর বলল,
— অনেক কথা বলার ছিল আজকে। কিন্তু তুই তো বোকা চাঁপা! চোখের ভাষা বুঝিস না। মুখে বললেও এখন জ্বরের ঘোরে কিছু বুঝবি না। আমাকে তো আজ রাতেই ফিরে যেতে হবে। আবার কবে আসতে পারব জানি না!
প্রভাত দাদা আমার হাতটা ওর হাতের মুঠোয় নিয়েছে,
— আমাকে কথা দে চাঁপা, এই কয়েকটা দিন আমার অনুপস্থিতিতে হঠাৎ করে বড়ো হয়ে যাবি না! আর কটা দিন এমনই বোকা ফুল সেজে থাক। অন্য কারো চোখে আমি যা দেখতে পেয়েছি, সেটা পড়ে ফেলার মতো বুদ্ধিমান হয়ে যাস না, প্লিজ! আর কয়েকটা দিন এমন ছোটো থাকবি, এমনই বোকা চাঁপা হয়ে থাকবি, কথা দে?
আমি বিস্মিত হলাম। বোকা আমি না এ? কেউ কাউকে বোকা থাকতে বলে আজ আমি প্রথম জানলাম!
বড়ো আপা পানি নিয়ে এলে, প্রভাত দাদা অল্প একটু পানি খেয়ে গ্লাসটা ফিরিয়ে দিলো। আমার মাথায় হাত রেখে বলল,
— আসি রে চাঁপা!
জো মাও বলেন, প্রভাত দাদার ভেতর নাকি তার বাবা দেবাংশু ফিরে এসেছেন। আমিও দেখলাম, পাহাড়ের মুকুটবিহীন রাজাধিরাজ দৃঢ় হেঁটে আমার ঘর থেকে একপা একপা করে বেরিয়ে গেল… রাজার মতোই প্রতি পায়ের নিচে তার সাম্রাজ্য!

চলবে…
আফসানা আশা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here