অজানা তুমি পর্ব ২৯+৩০

#অজানা_তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -২৯

বড়কোনো কাঠের উপর ঠাস পড়ে পড়ে গেলাম।মাথায় পর্যন্ত আঘাত পেয়েছি।উপরে তাকিয়ে দেখি অনেক নিচে পড়ে গেছি।চারপাশে সমান করে গোল কালো দেয়াল দেওয়া।নিচে বাম হাতটা সরিয়ে ছিটকানি পেলাম।কিছুক্ষণ তাকিয়ে বোঝার চেষ্টায় ছিটকিনিটা খুলতেই কাঠের দুটি দরজা খুলে গেলো।আর কিছু বোঝার আগেই আমি ধপ করে উল্টিয়ে পড়ে গেলাম।নিচে ফ্লোরের নাগাল পেতেই চোখ খুলে উঠে বসলাম।কোমড়ে ভালো চোট পেয়েছি।আলহামদুলিল্লাহ সোজা হয়ে হাটতে পারবো না এটা সিওর।চোখ মেলে ধীরেধীরে উঠে চারপাশে তাকাতেই গভীর অন্ধকার চোখে পড়লো।উপরের দরজাটা বন্ধ হয়ে গেছে যেখান থেকে পড়েছি।তখনই নাকে বিচ্ছিরী পচা দুর্গন্ধী এলো।যা সহ্য করার মতো নয়।মাথা ঘুড়ে উঠছে যতোবার শ্বাস নিচ্ছি।মুখ কোনোমতে চেপে ধরে উঠে বসলাস।এ কোথায় আটকে গেলাম?এতো বছর তো থাকলাম এখানে কোনো প্রকার কুয়া জাতীয় কিছু তো চোখে পড়ে নি।তাহলে এটা কি?শুনেছি কুয়াই তো গোল হয়।তাহলে এখানে পানি নেই কেনো?আর ভিতরে এতো কায়দা করে ছিটকানি ওয়ালা দরজা কে বানালো?তাহলে তো এসব কারো প্লাণ করেই তৈরি করা হয়েছে।কিন্তু কথা হলো এই পচা দুর্গন্ধে এক সেকেন্ডও থাকতে পারছি না।সহ্য সীমা পার হয়ে একশত মাইল দূরে চলে গেছে।আর কিছুসময় থাকলে হয়তো মাথা উল্টে সেন্সলেস হয়ে যাবো।তাই গলার কাছে হাতে দিয়ে ওরণা খুজে মুখে বাধলাম।এখান থেকে যেভাবে হোক বেরোতে হবে।পড়ে যখন গেছি কি আর করার!আচ্ছা আমার ফোন কোথায়?হাতেই তো ছিলো।হয়তো এখানে কোথাও পড়ে গেছে।কিন্তু খুজবো কিভাবে অন্ধকারে ছমছম করছে গা।মনে হচ্ছে এই বিষাক্ত অন্ধকারে কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছি আমি।কেউ আছে এখানে।তঁবে এইটুকু উপলব্ধি করতে পারছি যে এখানে আমি ছাড়াও অন্যকারো অবস্থান আছে।একা না আমি।ফ্লোর ধরে উঠে দাঁড়িয়ে এক পা এগোতেই কিছুর সাথে পা বাধলো আর ওমনি এলার্ম জাতীয় কিছু উচ্চশব্দে বেজে উঠে সারা জায়গা আলোয় ভরে দিলো।এতো আলো চোখে সইতে না পেরে দুই হাতে চোখদুটো আড়াল করে নিলাম।ওদিকে বিকট শব্দে এলার্ম বেজেই চলছে।কানে ব্যাথা উঠিয়ে দেওয়ার উপক্রম।আমি ধীরেধীরে চোখ থেকে হাত সরিয়ে সামনে তাকাতেই পাথর হয়ে গেলাম।চিৎকার করবো কিন্তু পারছি না।গলার কাছে আটকে আসছে সব।মনে হচ্ছে বোবা ভূতে ধরেছে আমাকে।সামনে বিদঘুটে পচে যাওয়া একটি ধূসর কালো কংকাল পা এলিয়ে বসে আছে।দু পা পিছিয়ে আচমকা পা বেধে পড়ে গেলাম কোনো শক্ত কিছুর উপরে।কাঁপতে কাঁপতে পিছনে ফিরে এক চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।এ তো সেই বৃদ্ধ মহিলাটি।এখানে মৃত অবস্থায় শক্ত হয়ে বসে আছে।গলার এক সাইড থেকে রক্ত শুকিয়ে গেছে।চোখগুলো খোলা বড় বড় করে তাকিয়ে আছে স্থীর দৃষ্টিতে।আমি মৃদু আওয়াজ তুলে মুখ চেপে উঠে বসলাম।বুক ফেটে কান্না আসছে কিন্তু পারছি না কোনো আওয়াজ করতে।মহিলাটির চামড়া কালো হয়ে ফ্যাকাসে বর্ন হয়ে গেছে।গায়ের ময়লা,নোংরা শাড়ির আচল ফ্লোরে পড়ে আছে।উপরে মাছি উড়াউড়ি করছে আর মাংস চাটকে চাটকে খাচ্ছে।কি বিশ্রী গন্ধ।দেখে তো অনেকদিনের লাশ মনে হচ্ছে।মহিলাটির চোখগুলো বন্ধ করে দিলাম।শুনেছি এভাবে কোনো মৃত মানুষের চোখ খোলা থাকলে তার সামনে কোনো জীবিত মানুষের চোখাচোখি হলে তার অভিশাপ লাগে।কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না।তবুও চোখ বন্ধ করে দিলাম।হা পা বরফের ন্যায় ঠান্ডা এবং শক্ত।ঢোক গিলে চোখ ঘোরাতেই ভাষা হারিয়ে ফেললাম।এখানে আরো অনেক অনেক লাশ পড়ে আছে বিশ্রীভাবে।মাংস চামড়া সবকিছু থেঁতলে গেছে।কারো কারো গায়ে অর্ধেক পোশাক পরিহিত আছে।প্রায় দশ,বিশটা মৃত দেহ এখানে পড়ে আছে।সারারুম জুরে মাছি ভনভন করছে।ছি!এতোগুলো মৃত দেহের সাথে এখন আমি আছি ভাবতেই তীব্র ভয় এবং আতংক গ্রাস করছে আমাকে।গন্ধে টিকতে পারছি না।জর্জেটের ওরণা ভেদ করে এই বিষাক্ত গন্ধ আমার নাকে যাচ্ছে।মৃত দেহগুলো একটার উপর একটা ফালানো।এদের এভাবে মারলো কে?এতো খারাপভাবে?আর এই বৃদ্ধ মহিলাকে তো আমি চিনি।একবার আমাকে জোরজবরদস্তি করে জঙ্গলের ভিতরে নিয়ে গিয়েছিলো।তারপর তো আর দেখা পাই নি।হয়তো ওইদিনই কেউ ওনাকে মেরে গুম করে এখানে ফেলে রেখেছে।কিন্তু তারা সফল হয় নি।ভাগ্য ক্রমে এখানে আমি পড়ে গেছি।লাশগুলোর থেকে আরো দূরে সরে গিয়ে দাঁড়ালাম। এখন এখান থেকে যেভাবে হোক বেরোতে হবে।লাশগুলো দেখে মনে হচ্ছে এখনো জীবিত ভিতরে আত্না আছে শুধু শরীরটাই ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।মনে হচ্ছে সবাই আমাকে দেখছে।তখন ফ্লোরে পরে থাকা ফোনটার উপরে চোখ পড়লো।ভেঙে মোবাইলের গ্লাস গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে।মনে তো হয় না আর কেউকে ফোন করা যাবে।রাগে,দুঃখে আছাড় মেরে দিলাম।মাথা ঘুরাচ্ছে প্রচুর।এতোকিছু চিন্তা করতে করতে ভুলেই গেছি কোন সময় যেনো এই এলার্মটা বাজা বন্ধ হয়ে গেছে।উপর ধুপধাপ করে কারো পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি।গন্ধে সারা শরীর অসাড় হয়ে যাচ্ছে।চোখ মেলে রাখতে পারছি না।মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম।আয়রান আপনি কোথায়?কেনো আপনাকে নিয়ে আসলাম না?তাহলে এরকম কিছুই হতো না আমার সাথে।মনে হচ্ছে উপর থেকে কেউ নিচে আসছে।চোখ বন্ধ হতে হতে দেখতে পেলাম কিছু কালো পোশাক পরিহিত লোক আমার দিকে এগিয়ে আসছে।তারা আমাকে ধরে রুমাল নাকে চেপে ধরলো।

______________

এদিকে আয়রান বাড়িতে এসে রুহিকে তন্ন তন্ন করে খুজেও পেলো না।শেষে দাদিকে জিগ্যেস করতেই সে বললো -“বই-খাতা আনতে গেছে নাকি আগের বাসায় যেখানে থাকতো।আমি মানা করলাম যে কিনে দেবো তারপরেও গেছে।”

আয়রান -“কিহ তুমি যেতে দিলে?সাথে রাকিব চাচাকে পাঠিয়েছো?”

দাদি -“হ্যা রে বাবা!পাঠিয়েছি এতো চিন্তা করিস না।”

আয়রান -“এখনো আসছে না!কোন সময় বেরিয়েছে?”

দাদি -“ওইতো বিকাল ২,৩টার দিকে।”

আয়রান -“মানে?এতো সময় হয়ে গেলো এখনো কেনো আসে নি?এখন তো সন্ধ্যা ৭টা বাজে।মানে এসব কি?ফোন দিয়েছো একবারও?”

দাদি -“ইশ ভুলে গিছে রে।”

আয়রান -“ধুর।মেয়েটা কোথায় না কোথায় আছে কে জানে?”

আয়রান সরে গিয়ে রাকিবের নাম্বারে কল লাগালো।কিছুক্ষণ রিং হতেই রিসিভ হলো।

আয়রান -“হ্যালো রাকিব আংকেল!”

দাদি -“হ বাবজান তোমারেই ফোন করতেছিলাম।রুহি মামনিরে খুজে পাইতেছি না।”

আয়রান -“খুজে পাচ্ছো না মানে?কোথায় গেছে?তুমি কোথায়?”

রাকিব -“আমি তো রুহি মামনির বাসার সামনে।মামনি এখনো বের হয় নাই।ভিতরে গিয়ে খুজছি পাই নাই তো।কোথায় গেছে বুঝতেছি না।আশেপাশে তো খুজছি।”

আয়রান -“ড্যাম ইট।তুমি ওখানেই থাকো আমি আসছি।”

বলে আয়রান কল কেটে দৌড় লাগালো।

_____________

আমি ধীরেধীরে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই ঝাপসা চোখে কেউকে দেখতে পেলাম।পরিচিত মুখ দেখে মনটা খুশি হয়ে গেলো।উঠে দাড়াতে চাইলেই আটকে গেলাম।হাত,পা এভাবে বেধে রেখেছে কেন?

-“হ্যালো সুইট হার্ট নাইস টু মিট ইউ এগেইন।আমি ভেবে রেখেছিলাম এখানেই আবার তোমার সাথে দেখা করবো।কিন্তু তুমি তো নিজেই ধরা দিয়েছো আমাদের।কি আর করার?চলো পরিচয়টা দিয়েই ফেলি।”
#অজানা_তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -৩০

আয়রান গাড়ি নিয়ে রুহির সেই ফ্লাটের সামনে দাঁড়ালো। সেখানেই রাকিবকে দেখতে পেলো।রাকিব দৌড়ে গেলো আয়রানের কাছে।

রাকিব -“বাবজান!আমারে ক্ষমা কইরা দেও।আমার ভুল হইছে।আমার খেয়াল রাখার দরকার ছিলো।বুঝতেছি না মামনিডা কোথায় গেছে।”

আয়রান বিরক্তর নিশ্বাস ফেলে কপালের ঘামটুকু বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মুছে বললো

-“হেই তুমি কোথায় ছিলে?”

রাকিব মাথা নামিয়ে নিলো।আয়রান কপাল কুঁচকে পুনরায় জিগ্যেস করলো

-“বলো!”

রাকিব -“আব্বা আমার একটু “ই” আইছিলো তাই একটু ওদিকে গেছি….”

আয়রান -“থাক আর বলতে হবে না।তোমার কোনো দোষ নেই।”

বর্তমানে আয়রানের হাত পা কাঁপছে।তরতর করে ঘামছে শুধু।বড় বড় ঢোক গিলছে।কিছু না ভেবে রুহির নাম্বারে কল করলো।কিন্তু সুইচড অফ আসছে।এবার আয়ানের পাগল পাগল লাগছে।গেলো কোথায় মেয়েটা?

আয়রান -“রাকিব আংকেল চারপাশে একটু খোঁজো তো।দেখো কোনো কিছু পাও না কি না!যেটা আমাদের রুহিকে খুজতে সাহায্য করবে!”

রাকিব -“হ বাবা যাইতেছি।”

রাকিব আর আয়রান সারা রাস্তা ফ্লাটের রুমগুলো খুজতে খুজতে আয়রান ব্রিজের কাছাকাছি এসে পাতা,শিকড় দিয়ে ঢাকা একটা কুপ দেখতে পেলো।এর পাশে চোখ পড়তেই আতঁকে উঠলো।রুহির গোলাপি রংয়ের জর্জেটের ওরণাটা মাটিতে পড়ে আছে।আয়রান কাপা কাপা হাতে ওরণাটা হাতে নিয়ে নাকের কাছে ধরলো।মিষ্টি সুগন্ধে মনটা জুরিয়ে গেছে একই সাথে বুকটা হুহু করে উঠছে।আয়রান হয়তো অনুমান করতে পারছে রুহি কোথায়!মেয়েটা ঠিক আছে তো?

____________________

হাতে পায়ের দড়িগুলো ছাড়াতে গিয়েও পারলাম।মাথা ঘুড়ে ঘুড়ে উঠছে।চোখে এখনো পরিষ্কার করে দেখতে পাচ্ছি না।তঁবে সামনের মানুষটাকে তো আমি চিনি।আমাকে এভাবে বেধে রেখেছে কেনো?আমি মৃদু গলায় বললাম

-“আয়রান আমাকে আপনি এভাবে বেধে রেখেছেন কেন?জানেন আমি কোথায় পড়ে গিয়েছিলাম?ভালো হলো আপনি আমাকে পেয়ে গেছেন নইলে ওখানেই আটকে থাকতে হতো।এখন এগুলো খুলে দিন না?”

-“আহা সুইট হার্ট এতো তারা কিসের?একটু অপেক্ষা করো।”

কন্ঠটা অন্যরকম লাগছে কেন?মনে হচ্ছে আগে কোথাও শুনেছি।সারারুমে এক ধরণের বিষাক্ত গন্ধ ছরিয়ে আছে।ধীরেধীরে চোখটাকে বন্ধ করে আবার খুলতেই আয়রানকে দেখতে পেলাম।কিন্তু উনি এভাবে কথা বলছেন কেন?ভ্রু কুঁচকে বললাম

-“মানে?”

-“ওয়েইট ওয়েইট ক্লিয়ার করছি।আগে ভালোভাবে আমাকে দেখে নাও।”

বলে উঠে দাড়িঁয়ে আমার চোখে চশমা পড়িয়ে দিলো।হ্যা এখন সবকিছু পরিষ্কার আমার সামনে।আমাকে একটা ঘরের ভিতর চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে।সারা ঘর কালো রং করা।কয়েকটা বস্তা,বাক্স পড়ে আছে।টেবিলের উপর বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র রাখা।তার পাশেই আরেকটা রকিং চেয়ারে আয়রান দোল খাচ্ছে আর সিগারেটে ফুক দিচ্ছে।আয়রান তো সিগারেট খায় না?আয়রান পায়ের উপর পা তুলে বাঁকা হেসে বললো

-“কি হলো সুইট হার্ট?আমাকে নিজের সেই আশিক মনে হচ্ছে?তাহলে তুমি ভুল ভাবছো।আমি সে নই।”

ভ্রু কুঁচকে এলো আমার।কি আবোল তাবোল বকছে আয়রান?মাথা কি গেলো নাকি?আয়রান সিগারেটের ধোয়া মুখ থেকে বাতাসে উড়িয়ে বললো

-“জানো তোমাকে দেখলেই আমার প্রিমার কথা মনে হয়।একদম তোমার মতো দেখতে,কিন্তু অনেক চঙ্গল ছিলো।জানো আমাকে অনেক ভালোবাসতো।কিন্তু সেটা কেউ হতে দেয় নি।”

মানে আয়রান কার কথা বলছে?আমাকে ভালোবাসে না ও?প্রিমা কে?আয়রান এরকম বিহেভ কেনো করছে?সাহস করে কিছু বলতে যাবো তখনই চোখ পড়লো আয়রানের হাতের কনুইয়ের উপর।কোবরা ট্যাটু?এটা? এটা এটা তো রিদ্রিশের হাতে দেখেছিলাম।তাহলে এটা কি রিদ্রিশ? হুবুহু আয়রানের মতো দেখতে।তখনই রিদ্রিশ চিল্লিয়ে উঠে বললো

-“তোর আশিক সেটা হতে দিলো না।সবাইকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে সম্পত্তির লোভে।সবাইকে মেরে ফেলেছে।তাহলে ও বেচে থাকবে কেন?ওর কোনো অধিকার নেই বেচে থাকার।”

বলে পাগলের মতো হাপাতে লাগলো।চুল টেনে ছিঁড়তে লাগলো।এরকম কেন করছে?আমার আশিক আবার কে?কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।শ্বাস নিয়ে জিগ্যেস করলাম

-“আ আপনি রিদ্রিশ?”

-“হ্যা এইতো ধরে ফেলেছো?কিভাবে বুঝলে?”

-“আপনি কার কথা বলছেন?”

রিদ্রিশ ধীর পায়ে হেটে এসে আমার থুতনি ধরে মুখ উঁচু করে বললো

-“কেনো?তোমার আয়রানের কথা?”

-“আপনি কে হন ওনার?”

-“সেটা জেনে তোমার কি কাজ?”

বলে আমার চুলের মুঠি ধরলো।

-“জানো প্রতি গভীর রাতে তোমার কাছে গিয়ে প্রিমার জন্য শূন্য থাকা জায়গাটা পূরণ করতাম।তোমার গায়ের গন্ধ আমাকে প্রিমার কথা মনে করিয়ে দিতো।কিন্তু তুমি কোনোদিনই আমার প্রিমা হতে পারবে না।শুধু প্রিমার মতো দেখতে শরীরের অন্য একটা মন তোমার।”

-“মা মানে?ওই লোকটা আপনি ছিলেন?য যে প্রতি রাতে আমার রুমে আসতো?”

-“হ্যা সুইট হার্ট।এইতো বুঝতে পেরেছো।কিন্তু তোমাকে তো মরতে হবে বেবি।”

শুনে ঘাবড়ে গেলাম।তরতর করে ঘামতে লাগলো শরীর।মরতে হবে মানে?কি মরতে হবে?

-“মরতে হ হবে মানে?কেনো?কি ক্ষতি করেছি আমি আ আপনার?”

-“তোমার দোষ শুধু এটাই তুমি আয়রানের ভালোবাসা,ওর স্ত্রী।ওর উপর প্রতিশোধ নিতে হলে তোমাকে আমার মারতে হবে।এর জন্য এম সো সরি রুহি বেবি।ওয়েইট আয়রান নিশ্চই আসবে তোমার খোজ করতে করতে।তখনই এই খেলা শেষ হবে।আমার প্রতিশোধের শেষে চিরদিনের জন্য আমিও হারিয়ে যাবো।কারণ নিজের হাতে নিজের প্রাণপ্রিয় মানুষগুলোকে আয়রান মারতে পারলেও আমি মেরে অন্তত বেচে থাকতে পারবো না।”

বলে পাগলামি করতে লাগলো।নিজের হাতে পায়ে খামচি দিতে লাগলো।পাগলের মতো প্রলাপ বকতে লাগলো।মুখ থেকে কিছু একটা বলছে।যা স্পষ্ট নয়।গলায় হাত দিয়ে পাগলের মতো করছে।হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে।তখনই চিল্লিয়ে কেউকে ডাকলো।একটা ছেলে সাদা রংয়ের প্যাকেট নিয়ে এসে রিদ্রিশের হাতে দিলো।তারপর চলে গেলো।রিদ্রিশ প্যাকেটটা ছিঁড়ে সাদা সাদা গুঁড়োর মতো কিছু মুখে দিয়ে শান্তিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।উনি?উনি ড্রাগ নেন?নেশাখোর!ছি!আয়রান কোথায় আপনি?আচ্ছা উনি আয়রানের জমজ ভাই নয় তো?আমি তো দাদুর কাছ থেকে শুনেছিলাম ছবিও দেখেছিলাম।কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না।শরীর প্রচন্ড দূর্বল লাগছে যা বলার বাইরে।হাত পা ব্যাথায় টন টন করছে।রিদ্রিশ মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর পাগলের মতো ড্রাগসগুলো জিহ্বা দিয়ে চাটছে।উনাকে এই মুহুর্তে হীংস্র দেখাচ্ছে প্রচুর।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।মাথার উঁচু উঁচু চুলগুলো এলোমেলো।হাতের রগগুলো দৃশ্যমান।হাতে পায়ে নিজেরই দেওয়া খামচির দাগ।সত্যি কি আমাকে মেরে ফেলবে?আয়রানের কোনো ক্ষতি করবে না তো?উনি তো মনে হয় আমাকে না পেয়ে খুঁজছেন।কি করি এখন?আমাকে এখান থেকে বের হতে হবে নইলে রিদ্রিশ ছাড়বে না আমাকে।এটাই আয়রানের জমজ ভাই সবকিছু আমার কাছে পরিষ্কার।কিন্তু প্রিমা কে?আর আয়রান কি কেউকে খুন করেছে?রিদ্রিশের কথায় তো সেটাই বোঝা যাচ্ছে।না আয়রান খুনি হতে পারে না।উনাকে এরকম মনেই হয় না।তবুও!আমি কি আয়রানকে অবিশ্বাস করছি?অবিশ্বাসের কি আছে?প্রমাণ না পাওয়া অবধি নিশ্চিত হতে পারছি না।তবুও আমার মনে হচ্ছে আয়রান কিছুই করে নি।কি হয়েছিলো ওদের সাথে?আয়রান রিদ্রিশের মা-বাবাই বা কোথায়?

_____চলবে_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here