অতঃপর প্রেমের গল্প পর্ব ২১+২২

#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤
#কায়ানাত_আফরিন
#পর্ব___২১
ভোরের আমেজে এক অন্যরকম টান অনুভব করা যায় শ্রীমঙ্গলে। চারিদিকে ফুরফুরে হাওয়া, নির্মল আকাশে উড়ে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। সেই মেঘের আড়ালে রৌদ্দুর লুকোচুরি খেলা শুরু করেছে সবার সাথে। আফরা সেসব প্রকৃতিতে বিভোর না হয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে রইলো। আজ ওর শরীরটা ভালোলাগছে না। বাবার সাথে কথা বলেছে অনেক রাত পর্যন্ত। মা’এখনও রেগে আছে ওর ওপর। সেদিন মায়ের অফিসে হঠাৎ করে নাকি এরিকের উপদ্রব হয়েছিলো। এরিক জানতো না যে এখানেই আফরার মা জব করে কিন্ত এরিককে দেখে বেজায় রেগে গিয়েছিলেন তিনি। আফরা সেসব সামলে নিয়ে ঘুমালো অনেক রাত করে। ঘুমের মধ্যেও বারবার ভেসে উঠছিলো একটি মানুষের চেহারা , মানুষটি আর কেউ নয় , ফারহান! গতকালকের কলেজের ঘটনায় সর্বপ্রথম ফারহানের উত্তেজিত রাগের মুখোমুখি হয়েছিলো সে। কি ভয়ংকরভাবেই না হামলে পড়লো সে মানুষগুলোর ওপর! আচ্ছা রাজনীতি কি আসলেই এত ভয়ংকর? আফরা দুর্বলচিত্তে ঘুমানোর চেষ্টা করতেই অনুভব করলো কপালে কারও উষ্ণ স্পর্শ।
আফরা শুনতে পারছে মিসেস নাবিলার কন্ঠ। উনি বলছেন,

-‘আফরা, আজ এতক্ষণ ঘুমাচ্ছো যে? শরীর খারাপ করছে?’

-‘না আন্টি।’

মিথ্যে বলতে বলতে উঠে বসলো আফরা। আফরার নিজেরই খারাপ লাগছে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে মিথ্যে বলাতে। কিন্ত সত্য বললে সবাই টেনশনে অস্থির হয়ে যেতেন ওর জন্য। আর আফরা এসব বিষয় কখনোই পছন্দ করেনা। মিসেস নাবিলা এবার তপ্তশ্বাস ছাড়লেন। জড়ানো কন্ঠে বললেন,

-‘জলদি মুখ ধুয়ে আসো মা। এতো বেলা করে ওঠা ভালো নয়।’

-‘আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।’

আফরার কথা শুনে চলে গেলেন মিসেস নাবিলা। আফরা হাতগুলো হালকা ঝারি মেরে নিজেকে ষতেজ করে নিলো। মাথাটা যন্ত্রণায় ভোঁ ভোঁ করছে। তারপর দ্রুত ফ্রেস হওয়ার জন্য চলে গেলো বাথরুমে।

_____________

ড্রইংরুমে যেতেই আফরা প্রথমে মুখোমুখি হলো ফারহানের।ফারহানকে দেখে আফরা কিঞ্চিত অবাক। বাংলোবাড়িতে সচরাচর কমই আসে ফারহান। আর যদি এসে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে খুব প্রয়োজনের জন্যই এসেছে। আফরা মিহি কন্ঠে ফারহানকে এবার বললো,

-‘গুড মর্নিং!’

-‘মর্নিং!’

প্রতিউত্তর দিলো ফারহান। তারপর ড্রইংরুমের সোফায় আড়ষ্ট হয়ে বসে পড়লো। ফারহানের শরীর ক্লান্ত, অবসন্ন। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাচ্ছে। আফরা আন্দাজ করে নিলো হয়তো বাহিরে গিয়ছিলো সে।মিসেস নাবিলা আফরাকে বললো,

-‘একি আফরা! ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? নাস্তা করতে আসো?’

-‘জ্বি আসছি।’

বলেই ডাইনিং টেবিলে বসলো আফরা। ফাহিম মিঃ ইফাজ ড্রইংরুমে বসে আছে ফারহানের সাথে। আফরা মিসেস নাবিলাকে পরখ করে নিলো একবার। ভদ্রমহিলা কিচেনে কাজ করতে ব্যস্ত। এখনই উত্তম সুযোগ ফারহান সম্পর্কে ইলাকে প্রশ্ন করার। নাহলে মিসেস নাবিলা বরাবরের মতোই সুক্ষ্ণ চালে এড়িয়ে যাবেন ফারহানকে।আফরা ফিষফিসিয়ে সামনে বসা ইলিকে ডাক দিয়ে বললো,

-‘এই ইলা!’

-‘হুম?’

-‘ফারহান তো কখনোই এখানে আসে না। আজ তাহলে এখানে এসেছে যে?’

ইলাও একবার দেখে নিলো ওর মা’কে । তারপর ফিসফিসিয়ে বললো,

-‘আসলে এই টি এস্টেটটা ফারহান ভাইয়ের কাছ থেকে কিনে নিতে চাচ্ছে আমার মা। যদিও ফারহান ভাই সাফ মানা করে দিয়েছে। আমার মনে হয় এ বিষয় নিয়েই কথা হচ্ছে। তবে কি কথা হচ্ছে তা আমি জানি না আপু।’

আফরা ছোট্ট করে ‘ওহ্’ বলে আবার খাবারে মনোনিবেশ করলো।ইলাও এ প্রসঙ্গে কথা বাড়ালো না আর।
.
.
ফারহান সোফায় মেরুদন্ড সোজা করে বসে অপেক্ষা করছে মিঃ ইফাজ আর ফাহিমের কথাবার্তা শোনার জন্য। দুজনেই কথা শুরু করতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে বারবার। ফারহান একটা উষ্ণশ্বাস ছাড়লো। হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে মিহি স্বরে বললো,

-‘অনেকক্ষণ তো হয়ে গেলো চাচু আমি এখানে এসেছি। কি বলতে চাও বলো?’

মিঃ ইফাজ অগোচরে ঠোঁটজোড়া চেপে ভাবলেন কিছুক্ষণ। তারপর প্রতিউত্তরে বললেন,

-‘আমি বারবার তোমায় বিরক্ত করতে চাচ্ছি না ফারহান। তবুও করতে আমি দায়বদ্ধ। কেনো জানো? তোমার চাচির জন্য।’

ফারহান মৌন রইলো এবার। ওর চাচি ওরফে মিসেস নাবিলা যে ফারহানের কাছে ঠিক কি চায় ফারহান তা ভালোমতই জানে।ফারহানকে এতটা ভাবুক হতে দেখে ফাহিম এবার বললো,

-‘মা’কে আমি বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি ফারহান। কিন্ত মা আমার কথা মোটেও শুনছে না। সে যে করেই হোক , তোমার থেকে এই টি এস্টেটটা কিনে নিতে চায়।’

ফারহান তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। গম্ভীর কন্ঠে বললো,

-‘তোমরা কি মনে করো চাচি কেন আমার থেকে এই টি এস্টেটটি কিনে নিতে চায় তা আমি বুঝিনা?শ্রীমঙ্গলে এরকম অজস্র টি এস্টেট আছে। শুধু তাই নয় ইন্ডিয়ার বর্ডার ঘেষে এই টি এস্টেট বলে এখানকার সিকিউরিটি যেমন কম , তেমনই এর চাহিদাও অনেক বেশি। তাহলে এত টি এস্টেট থাকতে চাচি এটাই কেনো চাচ্ছে?আসলে দাদু যে এই সম্পত্তিটা আমার নামে করে দিচ্ছে এটা উনার ভালোলাগছে না।’

ফারহান থেমে গেলো এবার। মিঃ ইফাজ নিশ্চুপ। ফাহিম আগ বাড়িয়ে বললো,

-‘আরে এমন কিছু না ফারহান। আসলে তুমি এই জায়গাগুলো থেকে যা প্রফিট পাও সবই তো পার্টি আর এখানকার মানুষদের জন্য বিলিয়ে দাও। এটাই মা’র পছন্দ না।’

-‘আমার কোনো কাজে কখনোই তো উনার মাথা ব্যাথা ছিলো না , বরং যতদিন আমি তোমাদের মাথায় বোঝা ছিলাম ততদিন চাচি শুধু এটাই চেয়েছে কতদিনে আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। আমি আগেও বলেছি ফাহিম আবারও বলছি ,আমার দাদুর দেওয়া শেষ স্মৃতি এটি। আমি মরে যাবো তবুও কারও কাছে এই জায়গা হস্তান্তর করবো না।’

মিঃ ইফাজ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তিনি জানেন ফারহান তার সিদ্ধান্তে অটল। আফরা খাওয়ায় মগ্ন থাকলেও ঙ্কীণ স্বরে ওদের কথাগুলো শুনতে পেয়েছে আবছা আবছা। কিন্ত ও সেদিকে কর্ণপাত করলো না। কেননা মানুষের কথা লুকিয়ে শোনার মতো অভ্যাস ওর কখনই ছিলো না। মিঃ ইফাজ মৃদুভাবে বললেন,

-‘আচ্ছা তোমাকে আর চিন্তা করতে হবে না। আর কখনোই আমি বা ফাহিম এ বিষয়ে তোমায় জোর দেবো না। ঠিকাছে?’

-‘হুমমম।’

-‘এখন তাহলে আসো। নাস্তা করো।আমাদের নাস্তা করা শেষ। আফরা খাচ্ছে। তুমিও পাশ দিয়ে বসে পড়ো।’

-‘ঠিকাছে।’

ফারহান সোফা থেকে উঠে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়লো আফরার পাশে।আফরা গোল গোল চোখ করে একপলক তাকালো ফারহানের দিকে। মানুষটা নির্বিকার। মিসেস নাবিলা এবার মৌনতা বজায় রেখে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিলো ফারহানকে। আফরা হঠাৎ ফারহানকে ফিসফিসিয়ে বললো,

-‘আপনার হাতের ব্যাথা কমেছে মিঃ কমরেড?’

ফারহান ভ্রু কুচকে তাকালো আফরার দিকে। আফরা উত্তর শোনার জন্য তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ফারহান ঠোঁট চেপে মৃদু কন্ঠে বললো,

-‘তুমি গতকাল আমার হাতে রক্ত দেখে যেরকম করছিলে ব্যাথা তো ভয়ে আগেই পালিয়ে গিয়েছে যাতে তোমার মুখোমুখি আর হতে না লাগে।’

ফারহানের ঠাট্টা ধরতে পরে আফরা মুখ ফুলিয়ে আবার খাওয়াতে মন দিলো। ফারহান আলতো হাসলো এবার। মেয়েটার কিছু কিছু পাগলামি দেখলে ভালোই লাগে। হঠাৎ সদর দরজায় জোরে জোরে কড়াঘাতের জন্য সবাই ওদিকে নজর দিলো। মিসেস নাবিলা ইলাকে বললো,

-‘ইলা! দেখ তো কে এসেছে!’

-‘দেখছি মা।’

বলেই ইলা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। কিন্ত ইলাকে সেই জায়গায় স্তব্ধ হয়ে থাকতে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলো সবাই। মিঃ ইফাজ বললো,

-‘কে এসেছে ইলা?’

-‘পু-পু-পুলিশ বাবা!’

ইলা বে ওঠলো তটস্থ গলায়। পুলিশের কিছু লোক এবর ঘরে প্রবেশ করে ফেললো অনুমতির অপেক্ষা না করেই। হঠাৎ ঘরে পুলিশ বেশধারী লোকদের দেখে সবাই আশ্চর্য। মিসেস নাবিলা ভয় পেয়ে গিয়েছেন এদেরকে দেখে।ফাহিম এবার বললো,

-‘কি চাই আপনাদের?’

পুলিশের মধ্যে একজন বলে ওঠলো,

-‘ফারহান জুবায়েরকে।’

আফরা কিছুই বুঝতে পারছে না এদের কার্যকলাপ।পুলিশ এবার ফারহানের কাছে হ্যান্ডক্রাফ এগিয়ে বললো,

-‘কমরেড ফারহান জুবায়ের। ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট। গতকাল কলেজে তোমার আঘাতে দুজন আহত হয়েছে। ডানপন্থীর দল তোমার নামে মামলা দিয়েছে নির্বাচনের পরিবেশ উত্যপ্ত করার জন্য আর তাদের আহত করার জন্য।’

.
.#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤
#কায়ানাত_আফরিন
#পর্ব___২২
-‘কমরেড ফারহান জুবায়ের। ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট। গতকাল কলেজে তোমার আঘাতে দুজন আহত হয়েছে। ডানপন্থীর দল তোমার নামে মামলা দিয়েছে নির্বাচনের পরিবেশ উত্যপ্ত করার জন্য আর তাদের আহত করার জন্য।’
পুলিশ অফিসারের এই কথাটি বজ্রপাতের মতো বিক্ষোভ ঘটালো পুরো ঘরে। এতক্ষণের ব্যস্ততম পরিবার নিস্তব্ধ হয়ে গেলো হঠাৎ। আফরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পুলিশি পোশাক পরা মানুষগুলোর দিকে। কথাগুলো হজম করতে কষ্ট হয়েছে অনেক। মিসেস নাবিলা ধিক্কার জানালেন এবার। ফারহানের উদ্দেশ্যে বললেন,

-‘আর কত কি করবে তুমি ফারহান? শেষ পর্যন্ত পুলিশ এসে পড়লো তোমায় গ্রেফতার করতে। বলি মানসম্মান কি আমাদের একটুখানি রাখবে তুমি?’

ফারহান মিসেস নাবিলার কথা উড়িয়ে দিলো তরঙ্গহীন টেউয়ের মতো। উনার কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা নিতান্তই ব্যার্থতা। মিঃ ইফাজ মৌনতা বজায় রাখলেন তখন। ফাহিম এগিয়ে বললো,

-‘কিন্ত অফিসার, গতকালকের সংঘর্ষে দোষ দু’পক্ষেরই ছিলো। আপনি কিভাবে একপাক্ষিক হয়ে ওকে গ্রেফতার করতে পারবেন?’

-‘সেসব থানায় গিয়ে দেখা যাবে। তাছাড়া দোষ যদি ফারহানের না হয় তাহলে ও মামলা করেনি কেনো?তাছাড়া এই জোয়ান ছেলের রক্তের তেজ অনেক বেশি। এর আগেও মামলা-মোকাদ্দমা, রিপোর্ট এর জন্য কম ঘুরাঘুরি করেনি আদালত-থানায়। কিন্ত রাজনৈতিক দাপট আর নিজের উন্নত ব্যাক্তিত্বের জন্য প্রত্যেকবারই ছাড় পেয়ে গেছে। এখন যেহেতু স্বয়ং চেয়্যারম্যান সাহেব নিজের লোকদল নিয়ে ওর নামে মামলা করেছে আমাদের আর কি করার?’

বলেই পুলিশ উদ্ভট একটা হাসি দিলো। ফারহান এতক্ষণ চুপ ছিলো। কিন্ত চেয়ারম্যান সাহেবের নাম শুনে বুঝতে বাকি রইলো না যে ও একটি বিরাট চক্রান্তে ফেসে গেছে। ফারহান নিজের হাত মুঠো করে নিঃশ্বাস ফেললো কয়েকবার। এই পরিস্ফিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। এখন ১৯ থেকে ২০ হওয়া মানেই বিশাল বড় একটি ধাক্কার মুখোমুখি হওয়া। ফারহান জানে সে একা মানুষ। তার এই পরিস্থিতিতে সংশ্লীষ্ট স্বেচ্ছাসেবীরা ছাড়া আর কোনো আপনজন নেই যে ওকে ঠিক এই মুহূর্তে সাহায্য করতে পারে।ফারহান ঠোঁট চেপে নিজের হাত এগিয়ে দিলো এবার। পুলিশ হ্যান্ডক্রাফ পরিয়ে দিতেই আফরা বাধা দিয়ে বললো,

-‘উনি কি কোনো খুনের আসামি যে এভাবে হ্যান্ডক্রাফ পড়াচ্ছেন?’

পুলিশ ভ্রু কুচকে তাকালো ওর দিকে। ফারহানও কিছুটা অবাক হলো আফরার ব্যবহারে। তাই অদ্ভুতভাবে সে তাকালো মেয়েটির দিকে। আফরার কপালে ভাজঁ পড়া, ঠোঁটদুটো মৃদুভাবে নাড়িয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে কিন্ত পারছে না বাংলা ভাষার জটিলতার জন্য। আফরার প্রথম ভাষা ইংরেজী। তাই কোনো কিছু বলতে গেলে মাথায় চট করে ইংরেজী ভাষাগুলোই আসবে। বাংলা বলতে গেলে আগে ইংরেজী কথাটা গুছিয়ে নিতে হবে তারপর ভাবের প্রসার ঘটাবে। আফরার ক্ষেত্রেও হয়তো বিষয়টি ঠিক তাই।পুলিশ তাই বিরক্ত হলো। বলে ওঠলো,

-‘আমাদেরকে আমাদের কাজ করতে দিন আপা। আপনার ঝামেলা হলে সসম্মানে থানায় আসুন। এখন আমরা গেলাম।’

পুলিশ আর কথা বাড়ালোনা সেদিকে । ফারহানকে চলে গেলো এখানকার কেন্দ্রীয় থানায়।
.
.
আফরা বিস্মিত। এহেন অবস্থায় ওর মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এসব রাজনৈতিক জট, পুলিশ, স্ট্রাইক,মারামারি এসকল দৃশ্যপট ওর কাছে নিতান্তই নতুন। বলতে গেলে শূণ্য অভিজ্ঞতা এসব ব্যাপারে। এটা কি আদৌ ভালো কাজ নাকি মন্দ কাজ আফরা তা জানে না। শুধু এতটুকু জানে এখানে জীবনের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। আর সেই ঝুঁকি নিয়েছে ফারহান। বিষয়টা ভাবতেই বুকে চিনচিন ব্যাথার উপদ্রব হলো আফরার। আফরা আদৌ জানেনা এই মানুষটার সাথে ওর যেই অন্তর্নিহিত সম্পর্ক আছে সেটার নাম কি , তবে তার প্রাণশঙ্কার কথাটা ভাবতেই ওর কেমন যেন ভয় জেঁকেছে মনে।
পুরো ড্রইংরুম কেমন যেন নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেলো। সদর দরজা খোলা থাকার কারনে। চা বাগানের উত্তাল হাওয়া আকড়ে ধরেছে সারা দেহে। মিঃ ইফাজ, ইলা , ফাহিম ,মিসেস নাবিলা কারওই প্রতিক্রিয়া বোঝা যাচ্ছেনা তেমন একটি। আফরা তাই অবাক হয়ে বললো,

-‘আপনারা নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছেন কিভাবে সবাই? ফারহানকে একটা মিথ্যা মামলায় এরেস্ট করে নিয়ে গেলো। আপনারা কিছু করবেন না?’

ফাহিম কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিসেস নাবিলা বলে ওঠলো,

-‘ওই নিজে এই রাস্তা নিয়েছে। বারবার না করেছিলাম,,,,,,,,,,আমি বারবার না করেছিলাম যে , ফারহান! এই রাজনীতির জালে ফেসেঁ যেও না।কিন্ত ফারহান বিন্দুমাত্র শুনেনি আমার কথা। উজাড় করে দিয়েছে নিজেকে রাজনীতি আর মানবসেবার জন্য। করো তবে মানবসেবা! যেদিকে নিজের জানের পর্যন্ত ঝুঁকি আছে।’

আফরা আগেভাগেই বুঝেছে আর যাই হোক, মিসেস নাবিলা কখনোই ফারহানের পক্ষপাতিত্ব করবেন না। তাই সে কঠোর গলায় বললো,

-‘তাই এভাবেই থানায় রেখে দিবেন ওকে?আঙ্কেল? আপনি তো কিছু একটা করুন!’

আফরাকে হঠাৎ এতটা উদ্বিগ্ন হতে দেখে অবাক হলেন মিঃ ইফাজ। অল্প কয়েকদিনের পরিচিত একটা মানুষের জন্য আসলেই কেউ কি এতটা উদগ্রীব হতে পারে কোনোরূপ কোনো অনুভূতি ছাড়া? বিষয়টা সন্দিহান নজরে দেখলেন তিনি। তবে বুঝতে দিলেন না। ধীর গলায় বললেন,

-আমি দেখছি বিষয়টা আফরা? তুমি উদ্বিগ্ন হবে না!’

আফরার দমবদ্ধ লাগছে ঘরের ভেতর। ফারহানের বিপদাশঙ্কা ওর মস্তিষ্ককে চৌচির করে ফেলেছে। আপাতত কিছুক্ষণের জন্য হলেও কিছুটা শান্তির প্রয়োজন ওর। তাই ড্রইংরুম ত্যাগ করে একটু নিজেকে শান্ত করার জন্য সে চলে গেলো বাংলোবাড়িটির পূব প্রান্তে। মিঃ ইফাজ মিসেস নাবিলাকে বললেন তার নিজ কাজ করার জন্য। ইলা চলে গেলো নিজের রুমে।সোফায় শুধু বসে আছেন উনি আর ফাহিম। মিঃ ইফাজ ব্যগ্র ভাবে বললেন,

-ফাহিম?

-‘জ্বী?’

-ফারহানকে কেনো গ্রেফতার করলো ওরা? মানে সংঘর্ষের কারমটা তুমি জানো?

ফাহিম ব্যাপারগুলো বলার পর সন্দেহ আরও দৃঢ় হলো উনার। ফারহান আর আফরা ওদের মধ্যে হয়তো খুবই সুক্ষ্ণ একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে যার সম্পর্কে কেউ জানেনা। মিঃ ইফাজ নীরব রইলো এতে। পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ার আগে খুব ভালোভাবে বিষয়টা সামাল দিতে হবে।

____________________

থানায় এক পুলিশ অফিসারের সামনে ফারহান নির্বিকারভাবে বসে আছে। এমন একটা ভাব করছে যেনো থানায় আসা যাওয়াটা ওর কাছে কোনো ব্যাপারই না। পাশে সাব-ইনস্পেক্টরের টেবিলের একপ্রান্তে সাধারন মানুষের সাইন লেগে আছে রিপোর্ট জারি করার জন্য। কিন্ত সাব-ইন্সপেক্টর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মোবাইলে আজগুবি জিনিস করতে মগ্ন। ফারহান চেয়ারে একটু হেলে সেই সাব-ইন্সপেক্টরের দিকে ঘাড় বাকিয়ে বললো,

-‘এইযে সাহেব, এটা মোবাইল চালানোর জায়গা নয়,,,,,,আগে নিজের ডিউটি করুন।’

সাব-ইন্সপেক্টর চরম বিরক্তি নিয়ে কিছু বলতে যাবে দেখলো ফারহানের বরাবর টেবিলে বসা সিনিয়র অফিসার চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।একটা শুকনো ঢোক গিললো সাব-ইন্সপেক্টর। তারপর মোবাইল রেখে নিজের ডিউটিতে মত্ত হয়ে গেলো।ফারহানকে আর কিছু বলতে পারলো না সে সিনিয়রের সামনে। নাহলে এই ছেলের দফারফা করে ফেলতো।
সিনিয়র অফিসার ফারহানের তুখর সাহসিকতা দেখে অবাক না হয়ে পারছে না। সে এবার একটা সিগারেট ধরালো। ফারহানের উদ্দেশ্যে আরেকটা দিয়ে বললো,

-‘এই নাও নেতাসাহেব।’

-‘আমি সিগারেট খাই না!’

ফারহানের গম্ভীর কন্ঠ। সিনিয়র অফিসারের একপলক মনে হলো এই যুবক হয়তো মজা করছে ওর সাথে। কেনা রাজনীতিবিদের কমবেশি সিগারেটে আসক্ত না দেখলেও সিগারেট একেবারেই মুখে দেয়না সেটা অবিশ্বাস্য। তাই উনি বলে ওঠলেন,

-‘ধ্যুর মিয়া? সিগারেট না খেয়ে মনের দুঃখ মেটাও কেমনে?’

ফারহান একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললো। বলে ওঠলো,

-‘গ্রেফতারের নাম করে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো জানতে পারি?’

ফিচালো হাসি দিলেন অফিসার। সিগারেটের ধোয়াগুলো উড়িয়ে বলে ওঠলেন,

-‘তখন বললাম না তোমারে গ্রেফতার করার জন্য ওপর থেকে নোটিশ আসছে?’

-‘আসল কথাটা বলুন অফিসার।’

থমথমে গলায় বললো ফারহান। অফিসার এবার টেবিলে একটু ঝুকে এসে অদ্ভুত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ফারহানের দিকে। মিহি স্বরে বললো,

-‘আমার কি তোমার থেকে কিছু চাওয়া আছে? আমার চাওয়া তো চেয়ারম্যান সাহেব থেকে। সাহেব বলছে তোমারে গ্রেফতার করতে আর ততক্ষণ থানায় রাখতে যতক্ষণ তুমি হ্যাঁ না বলো। আর গতকাল তুমি যেই কাজ করসো, আরও ৭ টা মামলা করে তোমারে ছয় মাসের জেলে ঢুকান যাবে। তাইতো সাহেবের রাস্তা ফাঁকা।’

ফারহান আগেই আন্দাজ করে নিয়েছিলো এমন কিছু হওয়ার আশঙ্কা। তাই কোনোরূপ কোনো প্রতিকিয়া দেখালো না। তবে সে যে এক বিশাল চক্রান্তে ফেসেছে এটা ভালো করে বুঝতে পারছে ফারহান। এখন এগুলো খুব সাবধানতার সাথে পারি দিতে হবে। পুলিশ অফিসার তাই জিজ্ঞেস করলেন,

-‘কি নেতাসাহেব? এত ভাবাভাবির কি আছে?চেয়ারম্যানকে হ্যাঁ বলে তাদের দলে ঢুকে গেলেই তো মিটে যাবে ঝামেলাটা।

ফারহান হেসে বললো,

-‘ওইসব দুর্নীতিবাজের সাথে কাজ করার ইচ্ছে নেই আমার অফিসার। উনাকে সসম্মানে না বলে দিন।’

-‘ভেবে বলছো তো? একবার জেলে ঢুকলে সহজে কিন্ত ছাড়া পাবে না।মামলা কিন্ত বেশ কয়েকটা হয়ে গেছে তোমার নামে।’

-‘আপনাদের রিমান্ডে রাখার আগেই আমার লোকজন ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে আমায়।’

-আচ্ছা! দেখা যাবে।

পুলিশ অফিসার রহস্যময়ী হাসি দিলো বিনিময়ে। হয়তো ফারহানের আগাম বিপদ সম্পর্কে কিছুটা আভাস করতে পেরেছে। ফারহান সবার অগোচরে এবার একটা তপ্তশ্বাস ছাড়লো। ওপর ওপর শক্তসাপেক্ষ থাকলেও মনে চলছে তুমুল অস্থিরতা। কিছু একটা হতে চলছে ওর ধারনা। হয়তো অনেক বড় কিছু!!

___________________

পড়ন্ত দুপুরে কেমন যেন এক ভ্যাপসা আভাস। পুরো শ্রীমঙ্গলের এই ‘উত্তর গাও’ অঞ্চলটিতে অন্যান্য অঞ্চলের তুলায় আদ্রতার সাথে উষ্ণতাও একটু বেশি। এমন একটা অসময়ে টেবিলে বসে রৌশিন আনমনে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। ওর কেন যেন পড়াশোনা করতে ভালোলাগছে না মোটেও। কিন্ত মায়ের ভয়ে টেবিল থেকে আর উঠতে পারলো না ও। মা পাশের ঘরেই ঘুমিয়ে আছে। তাই সেই ঘর টপকে টিভি ছাড়ার ভাবনাটাই ব্যার্থ রৌশিনের কাছে। এসময় বাবা বা ভাই বাসায় থাকলেও কাজ হয়ে যেতো। বাবা ওয়াচটাওয়ারে গিয়েছে কিছু কাজের জন্য। আর ভাই গিয়েছে ঢাকায়। রৌশিনেরও বড্ড ইচ্ছে ছিলো বড় ভাইয়ের সাথে একদিন বাংলাদেশের প্রাণের শহর ঢাকায় ঘুরে আসবে। কিন্ত এই ১৮ বছরে একটাবারও যাওয়া হয়নি ওখানে। এই শ্রীমঙ্গলের ‘উত্তর গাও’ থেকে শুরু করে তোরাপগন্জ বাজার , মৌলভীবাজার, কাওরান চর, রাতারগুল , লাউয়াছড়া উদ্যান, মেঘালয় সীমান্ত দূর দূর এই সিলেট বিভাগ পর্যন্তই ওর যাওয়া-আসাটা সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্ত ভাই ঢাকায় গিয়েছে কিছু কোট সংক্রান্ত কাজে। তাই আর যাওয়া হয়নি।

এগুলো ভাবতে ভাবতেই রৌশিন বইয়ের পাতায় মুখ ডুবালো আবার।এই অসময়ে হঠাৎ করে সদর দরজায় বেজে উঠলো কলিংবেল। এসময় সাধারনত কেউই আসেনা বাড়িতে। তাই দরজায় কলিংবেল বেজে ওঠাতে অবাক না হয়ে পারলোনা। মা’কে ডাকতে গিয়ে দেখলো মা গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে আছে। তাই পা টিপে টিপে দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-‘কে এসেছেন?’

-‘আমি রৌশিন।’

পরিচিত কন্ঠ পেয়ে চোখজোড়া চিকচিক করে ওঠলো রৌশিনের। আজ প্রায় দু’তিন সপ্তাহ পর এই প্রিয় মানুটার কন্ঠ শুনেছে যেই মানুষটাকে দেখার জন্য ওর তৃষ্ণার্ত দৃষ্টি উসখুস করছিলো।রৌশিন তাই না ভেবে দ্রুত খুলে দিলো কাঠের দরজাটি। ওর চোখে মুখে উৎফুল্লের রেশ ছিলো। দরজা খুলতেই রৌশিনকে দেখে বিনয়ী হাসি দিলো ফাহিম। কিন্ত ফাহিমের পাশে অপরূপা সুন্দরী একটি মেয়েকে দেখে রৌশিনের প্রাণোচ্ছল মন নিমিষেই অন্ধকারে ছেয়ে গেলো।
মেয়েটির চেহারা বাঙালিত্বের আংশিক ছাপ থাকলেও মনে হয়না সে বাঙালী। রৌশিন দু’জনের উদ্দেশ্যে মলিন হেসে বললো,

-‘আসসালামু আলাইকুম।’

-‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’

প্রতিউত্তরে বললো ফাহিম। রৌশিন ব্যস্ত হয়ে বললো,

-‘আপনারা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো ভাইয়া? ভেতরে আসুন। আমি মা কে ডেকে নিয়ে আসছি।’

আফরা মিহি হেসে প্রবেশ করলো এই ছোট্ট বাড়িটিতে। ড্রইংরুমে কয়েকটি কাঠের সোফার পাশদিয়ে সুসজ্জিতভাবে বেশ কয়েকটি পোট্রেট রাখা। সবগুলোই এককথায় অসাধারণ। রৌশিন অল্পসময়ের ব্যবধানে ফাহিম আর ওই অপরিচিত মেয়েটির জন্য ফটাফট লেবুর শরবত নিয়ে আসলো৷ ফাহিমের কাছে রৌশিনের এই জিনিসটাই বড্ড ভালোলাগে। মেয়েটি অল্পবয়সী হলেও বেশ গুণী আর সহজেই সব কাজ সামলে নিতে পারে। ফাহিম বললো,

-‘খালাম্মা কোথায়?’

-‘এখন দুপুরের সময় তো, তাই ঘুমুচ্ছে।’

-‘তাহলে তাকে ডাকতে হবে না, আমি এসেছিলাম তোমার ভাইয়ার কাছে। ওকে ডাক দাও তো!’

-‘সাদ্দাফ ভাইয়া তো বাসায় নেই। ভাইয়া ঢাকা গিয়েছে কিছু জরুরি কাজের জন্য।কোনো দরকার ভাইয়া?’

মুখ কালো হয়ে গেলো ফাহিমের। কেননা এসময় ফারহানকে থানা থেকে নিয়ে আসার জন্য সাদ্দাফকে খুব প্রয়োজন ছিলো ওর।সাদ্দাফ হলো ফাহিমের ছোটবেলার খুব কাছের একজন বন্ধু। সময় আর ব্যবস্ততার ব্যবধানে দুজনের মধ্য যোগাযোগ আগের তুলনায় কমে গিয়েছে। আর ওর কাছের বন্ধুর একমাত্র ছোট বোন হলো রৌশিন। কিশোর বয়সেই ফাহিম মানুষটির জন্যই রৌশিনের মনে একপ্রকার ভালোলাগা কাজ করতো।রৌশিনের ধারনা, বড় হলে হয়তো এই অনুভূতি গুলো হাওয়ার ন্যায় চলে যাবে। কিন্ত দিন যতই এগোলো ততই যেন ভালোালাগাগুলো চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়ে গিয়েছে। তবে ফাহিমের পাশে এত সুন্দরী একটি মেয়েকে দেখে বেশ খচখচানি হলো রৌশিনের মনে।একপর্যায়ে ধৈর্যহারা হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-‘ভাইয়া উনি কে?’

ফাহিম মিহি হেসে বললো,

-‘ও আমাদেরই একজন আত্নীয়, আফরা। অ্যামেরিকা থেকে এসেছে সপ্তাহখানেক হলো।’

আফরা ঠোঁটে স্মিত হাসি ফুটিয়ে বললো,

-হ্যালো।

-হ্যালো আপু।

মিনমিনিয়ে হেসে বললো রৌশিন। রৌশিন বলতে বাধ্য যে আফরা স্বভাবসুলভে অত্যন্ত বিনয়ী ধরনের। অল্পতেই সহজে কাউকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। তবে ফাহিমের সাথে আফরাকে দেখে বেশ হিংসে হলো রৌশিনের। তবুও বিষয়টা মনের মধ্যেই রেখে দিলো। ফাহিম বললো,

-‘আমরা তাহলে এখন আসি রৌশিন। আসলে সাদ্দাফের সাথে খুব প্রয়োজন ছিলো দেখা করার। ও যেহেতু নেই তাই সময় নষ্ট করবো না এখানে। আমাদের এক জায়গায় যেতে হবে ‘

রৌশিন কিছু বলল না প্রতিউত্তরে। ফাহিম আর আফরা এবার চলে গেলো কেন্দ্রীয় থানার উদ্দেশ্যে। রৌশিন তপ্ত শ্বাস ফেলে এবার দরজাটা হালকা লাগিয়ে দিয়ে পা বাড়ালো নিজের ঘরে।

________________________________

কথানুযায়ী ফারহান আসলেই রিমান্ড থেকে বের হলো সন্ধ্যা ঢলে যাওয়ার পর। পুলিশ এসে বললো,

-‘কমরেড সাহেব, আপনার ছুটির সময় হয়েছে।’

ফারহান জানতো যে আজকের মধ্যেই ও ছাড়া পাবে। তবে এত দ্রুত যে ছাড়া পাবে তা ওর ধারনার বাহিরে ছিলো। সাব্বির আর শামসু দুজনেই খুব ধীরস্থির মানুষ। কোনো কাজ করতে সারাদিন লাগিয়ে দেয়। সেদিকে ওদের এত দ্রুত পরিস্থিতি সামলে নেওয়াটা আসলেই অবাকের বিষয়। থানায় অফিসারের কাছে দাঁড়াতেই ও থমকে গেলো। কেননা ফাহিম বসে আছে এখানে। ফারহানের কাছে এবার পরিষ্কার হলো ব্যাপারটা। কাজটা সাব্বির শামসু না, বরং ওর আপন চাচাতো ভাই ফাহিম করেছে। ফাহিমের সাথে ফারহানের চোখাচোখি হওয়ার পর সে বললো,

-‘জলদি বাসায় চলো।’

ফারহান কথা বাড়ালো না আর। ওখানে খাতায় নিজের একটা সৈ নিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে পড়লো।

মাগরিবের আযান দেওয়ার পর ঘুটঘুট করছে সারা পরিবেশ। থানার ঠিক দক্ষিণ পশ্চিম কোণের চা বাগান থেকে ছাড়িয়ে পড়ছে ফুরফুরে চাঙা হাওয়া। দূর দূর মানুষ নেই বললেই চলে। রাস্তার একপাশে গভীর খাদটিকে দেখে মনে হচ্ছে এ যেন এক ভুতুরে কুয়ো। ফারহান ফাহিমের গাড়ির সামনে এগোতেই দেখলো আফরাকে। আফরা গাড়ির এককোণে ঠেস দিয়ে আনমনে মোবাইল স্ক্রল করতে মগ্ন। আর যাই হোক এই জায়গাটিতে আফরাকে মোটেও আশা করেনি ফারহান। তাই তাজ্জব হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-আফরা এখানে কি করছে?

-আমি যে কারনে এসেছি ঠিক সে কারনেই এসেছে।

ফাহিম বললো প্রতিউত্তরে। এই প্রথম ফারহানের পাষাণ হৃদয়ে একটা সুক্ষ্ম অনুভূতির জন্ম নিলো মেয়েটর জন্য। বাইরের ফুরফুরে হাওয়াও যেন পুরোদমে বলছে,

‘তুমি একা না ফারহান জুবায়ের, তোমার নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য এই আফরাই তোমার জন্য যথেষ্ট’❤️
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here