অতঃপর প্রেমের গল্প পর্ব ১৯+২০

#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤[উপন্যাস]
#কায়ানাত_আফরিন
#পর্ব__১৯
গাড়ি থেকে নেমে কলেজের গেটের সামনে দাঁড়ালো আফরা,ফাহিম আর ইলা। চারিদিকে অনেক মানুষের সমাগম। বেশিরভাগই ছাত্ররাজনীতি সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মী। আরও দু একদল ছাত্রদের দেখা যাচ্ছে যারা স্বেচ্ছাসেবী হয়ে কলেজ কাজ করছে। আফরা মৃদু চোখে আশপাশ পরখ করে নিলো। ক্যাম্পাসটি একথায় সুন্দর। ইলা এবার জিজ্ঞেস করলো,

-‘ক্যাম্পাসটি কেমন লাগলো আপু?’

-‘সুন্দর।’

আফরার মৃদু প্রতিউত্তর। ইলা এবার বিনয়ী হাসি দিলো। ফাহিম বললো,

-‘তো সামনে এগিয়ে চলো। এখানে দেখার মতো অনেক কিছু আছে।’

-‘চলো তাহলে।’

আফরা ধীরভাবে বলো। তারপর সবাই প্রবেশ করলো কলেজটিতে। এই কলেজে মোট চারটা ভবন আছে। যার মধ্যে প্রথম ভবনটি দখল করে রেখেছে ছাত্রদলেরা। আর বাকি তিনটে ভবন মোটামোটি খালি। ফাহিম বলে ওঠলো,

-‘তিন নম্বর ভবনের পেছনে একটা ঝিল আছে। সেখানকার পরিবেশটা সুন্দর। আপনি যেহেতু প্রকৃতিপ্রেমী আপনার তাহলে ভালোলাগবে সেখানে।’

ফাহিমের কথামতো ওরা তিনজন এবার চলে গেলো ঝিলের দিকে। ক্লান্ত দুপুর। গতরাতের প্রচন্ড বৃষ্টির পর দুপুরের রৌদ্রতপ্ত মৌসুমে দাউ দাউ করছে সারা পরিবেশ। আফরা গরমের সাথে পরিচিত থাকলেও এত গরমের সাথে সে পরিচিত ছিলো না। যার দরুন গরমে শরীর পুড়ে যাচ্ছে বেশ। কিন্ত ঝিলের দিকে এগিয়ে যেতে আফরা শরীরে অজান্তেই এক শীতল বাতাসের খেলা ছেয়ে গেলো। তিন নং ভবনটির পিছে থাকায় এখানে রৌদ্রের রেশ কম। অল্পবিস্তর ছায়ায় এক অন্যরকম প্রশান্তি খেলে যাচ্ছে হৃদয়ে। আফরার এ দৃশ্য দেখে ভালোলাগলো। কেননা কলেজের অন্যান্য স্থানগুলো থেকে এ স্থানটি বেশ পরিষ্কার।
ঝিলের এক প্রান্তে কদমগাছ পেয়ে গেলো আফরা। ইলা তা দেখে বললো,

-‘ওখানে বসবে?’

-‘হাঁ বসি। জায়গাটি ভালো লেগেছে।’

তারপর তিনজন বসে পড়লো কদম গাছটির ঠিক নিচে। ঘাসের বিস্তীর্ণ কার্পেটে শরীর এলিয়ে দেওয়ার মধ্যে যে আনন্দটা আছে সে আনন্দ অন্য কোথাও নেই। ফাহিম গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসলো এবার। আড়চোখে দেখে যাচ্ছে আফরার ঠোঁটকোলের অল্পবিস্তর হাসিটাকে।

-‘আপনার হাসিটা খুব সুন্দর আফরা।’

ফাহিমের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে আফরা ফাহিমের দিকে তাকালো। ফাহিম ইতিমধ্যে আফরা থেকে চোখ সরিয়ে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আফরা কিছুই বললোনা এতে। কেন যেন হঠাৎ ফারহানের কথা ওর মনে পড়লো।আফরার মন অজান্তেই ইচ্ছে পোষণ করতো যে ফারহান ওর সম্পর্কে এমন দু’চারটে কথা বলুক। কিন্ত এমন কিছুই বলেনি যে। বরং দাম্ভিকতা আর নিপুণতার সাথে সুন্দরভাবে আফরাকে এড়িয়ে চলেছে। ফাহিম এবার বললো,

-‘আচ্ছা আফরা, আপনার ট্রাভেলিং জিনিসটা কেমন লাগে?’

আফরা ভাবলো কিঞ্চিত। তারপর আড়ষ্ট গলায় বললো,,

-‘এককথায় অনেক ভালো। আমি এই পর্যন্ত অধনেক জায়গায় ঘুরাফিরা করেছি। ক্যাম্পিং থেকে শুরু করে আইস স্কেটিং তারপর ক্লাইম্বিং এগুলো আমার শখ বলতে পারেন।’

-‘তাহলে তো আপনার ভালো এক্সপেরিয়েন্স আছে তাই না?’

-‘উমমম। বলতে পারেন হ্যাঁ।’

ফাহিম তপ্ত শ্বাস ছাড়ল এইবার। তারপর মিহি কন্ঠে বললো ,

-‘তাহলে একটা মানুষের লাইফ ঠিক করার মতো এক্সপেরিয়েন্স আপনার আছে?’

আফরা কপাল ভাঁজ করে ফেললো এবার। সেই সাথে ইলাও। ফাহিম আফরার দিকে তাকিয়ে আছে কৌতুহল নিয়ে। আফরা হাজার খুঁজেও বুঝতে পারলো না যে ঠিক কি বলতে চাচ্ছে ফাহিম। তাই অপ্রস্তুত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

-‘ম-মানে?আপনি ঠিক কি বলতে চাচ্ছেন ফাহিম?’

ফাহিম আফরার ঠিক মুখোমুখি হয়ে বসলো । ওর চোখে মুখে খানিকটা দুশ্চিন্তা। নিঃশ্বাস ফেলছে বারবার। জিভ দিয়ে ঠোটঁজোড়া ভিজিয়ে বলে ওঠলো,

-‘আমি………..আসলে ফারহানের কথা বলছি।’
আফরা অবাক হলো আরও এক দফা। ফাহিম বলতে শুরু করলো,

-‘আপনি তো এতদিন দেখে বুঝতেই পেরেছেন যে ফারহান ঠিক কেমন , তাই আর বেশি কিছু বলবো না। আসলে , চাচু-চাচি মারা যাওয়ার পর থেকে বড় একাই বড় হয়েছে ফারহান। আমার মা কখনোই ফারহানকে পছন্দ করতেন না। মনে করতেন যে ও একটি বোঝা। তবুও আমাদের দুজনের মধ্যে সখ্যতা খুব বেশি ছিলো। আমরা দুজন কলেজ পর্যন্ত অনেক কাছাকাছি থাকলেও একসময় আমাদের সম্পর্কে সময়ের ব্যবধানে ফাটল ধরে যায়। আমি যখন পড়াশুনার সুবাদে ময়মনসিংহ মেডিক্যালে চলে যাই তখনই ও ঢুকে পড়ে রাজনীতিতে। একটা রাতও ও বাড়িতে থাকতোনা। কি করতো,,তা আমরা বুঝেছি অনেকদিন পর। তবে ততক্ষণে আমাদের থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলো সে। হ্যাঁ , আমি মানছি যে রাজনীতি সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে করলে সেটা ভালো, তবে নিজের জীবনটা কি এভাবে বিলিয়ে দেওয়াটা ভালো হবে?……..(কিছুটা থেমে)………ফারহানের এই অবস্থাটা আমার খারাপ লাগে অনেক। আমি চাইনা ওকে এভাবে অন্ধকারে রেখে দিতে। আমি চাই যে ওর একটা সুশৃঙ্খল লাইফ হোক।’

বলেই অবশেষে থামলো ফাহিম। আফরা বসে আছে নির্বিকারভাবে। যেন ফারহানের কোনো বিষয়তেই ওর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ফাহিমের বলা শেষ হওয়ার পর আফরা আবার ফাহিমকে জিঙ্গেস করলো,

-‘ফারহান আমার হাজবেন্ড?’

-‘না।’

-‘বয়ফ্রেন্ড?’

-না।

-‘তাহলে ভাই?’

-‘মোটেও না।’

-‘তো আমাকে এসব বলছেন কেন?’

ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো আফরা। ফাহিম কিছু বলতে চেয়েও বললোনা। কেননা আফরার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে ফারহানের নাম শুনে মেয়েটা অনেক রেগে গিয়েছে। আসলেই হয়েছে তাই। গতরাতে ফারহানের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত সেই ব্যবহারটা বড়ো গভীর দাগ কেটেছে আফরার মনে। আফরার কাছে ফারহানই প্রথম মানুষ যার জন্য এত গভীরভাবে আফরা অনুভবকরে আর ফারহানই সেই শেষ মানুষ যার সম্পর্কে সকল ভাবনা নিঃশেষ করে ফেলবে সে। আফরা অবাধ্য চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিলো এবার।তারপর শীতল গলায় বললো,

-‘লিসেন ফারহান? আপনার ওই ভাইটা আস্তো একটা বদমেজাজী দাম্ভিক টাইপ মানুষ। এমন মানুষদের আমি যতটা পারি ইগ্নোর করে চলি। তবুও নিজের ইগোর মাথা খেয়ে কথা বলতে গিয়েছিলাম উনার সাথে। কিন্ত আমার মনে হয়না সে এতে সন্তুষ্ট। তাই আমি আর ওই কমরেড ওপসস,, ফারহান জুবায়ের এর দিকে মাথা ঘামাবো না।তাই উনার সম্পর্কে আমার সাথে কথা না বললেই ভালো হবে।’

শেষ কথাগুলো বলতে গিয়ে আফরা এলোমেলো করে ফেললো। আসলেই বাংলা বেশ কঠিন। একাধারে বেশি বাক্য বললেই উল্টাপাল্টা হয়ে যায়। ফাহিমের সাথে ইলাও হেসে ফেললো এবার। আফরা চোখ ছোট ছোট করে দুজনের দিকে তাকালো এজন্য। ইলা হাসি দমিয়ে বললো,

-‘থাক আপু আর ওই মানুষটার কথা বলতে হবে না। তোমার কথার যেই অবস্থা ছিলো ওই গম্ভীর মানুষটাই হেসে ফেলবে।’

বলে আবার হেসে দিলো ইলা। যোগ দিলো ফাহিমও। আফরা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-‘তোমরা দুই ভাই-বোন আসলেই অনেক বদ।’

ইলার মোবাইল বারবার বেজে ওঠছে এই সময়ে। ছয়বার রিং হওয়ার পর বন্ধ হতে না হতেই আবার ক্রিং ক্রিং করে রিং বেজে ওঠলো। ইলা স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নামটি দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো এবার। একবার ফাহিমের দিকে তাকালো তো একবার আফরার দিকে।ভাগ্যিস ওর ভাই আফরার সাথে কথা বলছে নাহলে স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নামটি দেখলে তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে ফেলতো এবার। ইলা সন্তর্পণে মোবাইল ভাইব্রেট করে দিলো , মেসেন্জারের নোটিফিকেশনও অফ করে দিলো যাতে ফাহিম ভাই বিন্দুমাত্র সন্দেহ পোষণ না করতে পারে। আপাদত কিছুদিন এ ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখাই ভালো হবে।

____________

প্রধান ভবনের বামপন্থী ছাত্রদলের নেতা ওমর ফারুকের সামনে আয়েশ করে বসে আছে ফারহান। ওমরের পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে ওর সাঙ্গপাঙ্গরা। সকলেরই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাক্তিত্ব ফারহান জুবায়েরের দিকে। ওমরের দল শুনেছে, কোনো পক্ষের হয়ে কাজ না করেই নাকি এই যুবক সারা শ্রীমঙ্গলে নাম ছাপিয়ে দিয়েছে। এখানকার প্রতিটা সমাজ কল্যাণ সংস্থায় যদি কারও নাম ডাকা হয় সে হলো নিয়াজি সাহেবের অন্তর্ভুক্ত ছাত্রনেতা কমরেড ফারহান জুবায়ের।সেই হিসেবে অন্য দলের সামনে ফারহানের দাম্ভীকতাটা একটু বেশি। ওমর ফারহানের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকালো এবার। তারপর বলে ওঠলো,

-‘তোমায় এখানে আসতে বলার কারন কি তুমি জানো মিঃ ফারহান জুবায়ের?’

বাকা হাসি দিলো ফারহান। মৌনতা কাটিয়ে প্রখর কন্ঠে বললো,

-‘প্রথমত, তোমার ডাকে আমি আসিনি। আমি এখানে এসেছি স্টুডেন্টসদের জন্য। আফটার অল ছাত্রনেতা আমি, আমার তো এখানে আসতেই হবে।’

অপমানে থমথমে হয়ে ওঠলো ওমর। দেখলে ওদের দুজনকে সমবয়সী লাগলেও ফারহানের কথাবার্তা ওকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে।ওমন সশব্দে নিঃশ্বাস ফেললো এবার। তারপর বলে ওঠলো,

-‘চেয়্যারম্যান আদিত্য ব্যানার্জীকে চিনো তো?’

-‘অবশ্যই চিনি। গতপরশু আমাদের সাথে একটি গোল বৈঠক হয়েছিলো উনার সাথে।এখন এসব প্রশ্ন করছো কেনো ওমর?’

ওমর নিজের ছোট ছোট দাঁড়িতে আবছাভাবে হাত বুলিয়ে নিলো। ফারহান ছেলেটাকে যেভাবেই হোক নিজেদের দলে আনতে হবে। নাহলে ওদের কর্মপরিকল্পনা কখনোই সফল হবে না। ওমর টেবিলে একটা বারি দিয়ে বলে ওঠলো,

-‘আমরা চেয়্যারম্যান আদিত্য ব্যানার্জীর অন্তর্ভুক্ত দল। তাই এখানে ইলেকশনের আমাদের যেমন পাওয়ার আছে তেমনি সবার সুযোগ করে দেওয়ার বড় সুবিধাও আছে। কলেজ সংক্রান্ত যেকোনো বিবাদে বড় পাওয়ারের দরকার হলে অনায়াসে আমাদের চেয়্যারম্যান সে ব্যবস্থা করে দিবে। তাই বুঝতেই পারছো আমাদের বিপরীত দল থেকে আমাদের ক্ষমতা এবং ইলেকশনে পাস করার চান্সটা বেশি।’

ফারহান একটু ঝুকে এলো টেবিলের দিকে। গম্ভীর গলায় বললো,

-‘আর,,,,,,,,,,,,তুমি আমার কাছ থেকে কি চাও?’

স্মিত হাসলো ওমর। তারপর বললো,

-‘তোমার কথার স্ট্রাইল দেখে আমি অভিভূত ফারহান। যাই হোক , মেইন পয়েন্টে আসার জন্য ধন্যবাদ।…………আমি চাই যে তুমি আমাদের দলের নেতা হয়ে ইলেকশনে কাজ করো। তাহলে নিশ্চিত আমরাই জিতবো। এটা তোমার জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ ফারহান।আমাদের দলে যোগ হলে কেউ তোমার পাওয়ার কেড়ে নিতে পারবে না। যেই ফারহান জুবায়েরকে শ্রীমঙ্গল থেকে শুরু করে সারা সিলেট বিভাগ আংশিক চিনে সে আরও পরিচিত লাভ করবে। সামনে আরও বড় ভাবে তুমি ইলেকশনেও যোগদান করতে পারবে।সুতরাং মিস করো না।’

ফারহান ওমরের প্রতিটা কথা শুনলো, ভালোমতো শুনলো। সাব্বির-শামসু সহ ওর দলের বাকি মানুষরা মানুষরা ভাবছে যে ফারহান আসলে কি করবে। এটা ওর জন্য আসলেই বড় সুযোগ। আর এমন লোভনীয় প্রস্তাবে যে কেউই সহজে লোভে পড়ে রাজি হয়ে যেতে চাইবে। ফারহান মৌনতা কাটিয়ে হঠাৎ বলে ওঠলো,

-‘প্রস্তাবটা লোভনীয়। কিন্ত আমি সরাসরি এটা রিফিউজ করছি।’

ওমর অবাক। সাথে ওর বাকি সাঙ্গপাঙ্গরাও। হতভম্ব হয়ে বললো,

-‘তুমি কি বোকা ফারহান? এমন সুযোগ স্বয়ং চেয়্যারসাহেব তোমায় দিয়েছে। আর তুমি,,,,,,,,,,’

-‘আমি আগেই স্পষ্টত বলে দিয়েছি যে আমি কোনো দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে কাজ করবো না। আমার নিজের যতটুকু পাওয়ার আছে এটাই আমার জন্য যথেষ্ট। আর একটা কথা, আমরা স্টুডেন্টসদের জন্য লড়াই করি। কোনো সো কল্ড চেয়্যারম্যানের সাঙ্গপাঙ্গদের ইলেকশনে জেতার জন্য না।’

তুখর কন্ঠে বলে ওঠলো ফারহান। ওমর রেগে গেলো হঠাৎ। টেবিলে সজোরে বারি দিয়ে ফারহানের শার্টের কলার ধরার চেষ্টা করতেই ফারহান ওর দু’হাত চেপে ধরলো ।ফারহানের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। ওমরের চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে এবার। ফারহান বলে ওঠলো,

-‘আজ শুধু হাত চেপে ধরলাম ওমর ! আগামীবার এমন কাজ করার দুঃসাহস দেখালে একেবারে হাত ভেঙ্গে দিবো।’

ফারহান কথাগুলো শান্তভাবে বললেও ওর চোখেমুখে ভয়ঙ্কর রাগ দেখা যাচ্ছে। কলেজের পরিবেশ ফারহান আর ওমরের কারনে উত্যপ্ত।ডানপন্থী দলের লোকেরাও ওদের সংঘর্ষ দেখতে এসে পড়েছে এখানে। এসব একপর্যায়ে এমন ভাবে বেড়ে গেলো সে সারা কলেজে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো খবরটি। তিন নং ভবনের ঝিলে বসা ফাহিম, আফরা আর ইলার কানেও বিষয়টি আসতে সময় লাগেনি। সবার মুখে মুখে একই কথা , ‘বামপন্থী দলের ওমর ফারুকের সাথে তর্কাতর্কি চলছে কমরেড ফারহান জুবায়ের এর।’

ফাহিম অস্থির হয়ে বলে ওঠলো,

-‘ও মাই গড! জলদি ফারহানের কাছে যেতে হবে। ওর মাথা খারাপ হয়ে গেলে খুনখারাপি করতেও দু’বার ভাববেনা।’

কথা অনুযায়ী সবাই দ্রুত রওনা হলো প্রধান ভবনের উদ্দেশ্যে। কিন্ত সেখানে এত শোরগোল যে মানুষের সমাগমে ভেতরে কেউই ওরা প্রবেশ করতে পারেনি। ফাহিম শক্তপোক্তভাবে চেপে আছে আফরার হাত, যাতে আফরা হারিয়ে না যায়। ফাহিম আফরাকে এখানে আসতে না বলেছিলো তবুও আফরা কথা শুনেনি। সে জানতে চায় ফারহানের সাথে কি হয়েছে ওই নেতার। ফাহিমের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তা সাথে বিরক্তিও। মা’কে বারবার বলেছিলো আফরাকে এখানে না নিয়ে আসলে ভালো হয়। এসব জায়গায় আনন্দ থেকে ত্রাস বেশি থাকে। ইলা ইতিমধ্যে পেছনে চলে গিয়েছে। আফরা বিব্রত হয়ে বললো,

-‘ফাহিম এখানে অনেক মানুষ। আমি বাহিরে চলে যাই?’

-‘আমিও তাহলে আপনার সাথে আসছি।’

-‘সমস্যা নেই। আমি বাহিরে দাঁড়াই । আপনি দেখেন , ফারহানের কি হয়েছে।’

এবার আফরা ফাহিমের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বাহিরে চলে গেলো। ভেতরে যেমন মানুষ ; সেরকমই মানুষ বাহিরেও। একরকম ধস্তাধস্তি চলছে। তবুও কপাল করে ইলাকে পেয়ে গেলো আফরা। ইলা অবাক হয়ে বললো,

-‘আপু তুমি ঠিকাছো তো?’

আফরা কিছু বলতে যাবে এর মধ্যেই ভীড়ের মাঝে কারও আপত্তিকর স্পর্শ অনুভব করা শুরু করলো সে। ইলার চোখ-মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। কেননা সেও এ অবস্থার শিকার। আফরা ঘাড় ঘুরিয়ে এদিকওদিক তাকানোর চেষ্টা করলো। যেমনটা ভেবেছিলো ঠিক তাই।দুজন ছেলে ওদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। এগুলো কে বা কারা আফরা জানে না , শুধু জানে এরা ভীড়ের মাঝে লুকিয়ে থাকা কিছু নরপিশাচ। যারা মানুষের অগোচরে নিজের নোংরামিপণা দেখিয়ে চলে। আফরা দাঁত চেপে বললো,

-‘ছাড়ো আমায়।’

ছেলেটা গা ঘিনঘিন করা একটা হাসি দিলো। এখন চিল্লালেও কোনো কাজ হবে না। সারা ক্যাম্পাস এখন প্রধান ভবনের খবর নিয়ে উত্যপ্ত হয়ে আছে। ইলার অবস্থাও শোচনীয়। বেচারা মেয়েটাতো পারছে না কেদে দিতে।তখনই একটা প্রচন্ড ধাক্কায় দুজনেই ওই ছেলেগুলোর থেকে ছাড়া পেয়ে গেলো আকস্মিকভাবে। একজন ছেলে দুইটাকে এলোমাথারিভাবে মেরেই চলছে। ছেলেদুটোও ওকে পাল্টাপ্রয়োগ করলো কিন্ত অদ্ভুতভাবে ওরা দুজনেই আহত হয়ে গেলো অনেক বেশি। আফরা অবাক হয়ে দেখতে থাকলো মানুষটিকে। ফারহান। চোখ-মুখ ভয়ঙ্কর লাল হয়ে আছে। কপালের হাতের রগ ফুলে আছে অস্বাভাবিকভাবে। ওই দুইজনের পক্ষ হয়ে আরও কিছু লোক ফারহানকে আক্রমণ করতে চাইলো কিন্তু ফারহানের লোকেরা সবাই এসে এদিকে রীতিমতো হকিস্টিক দিয়ে রক্তারক্তি শুরু করেছে। ফারহান চেচিয়ে বলে ওঠলো,

-‘তোদের মতো কু*****দের রাজনীতি করার মুলুক নেই। সাহস কি করে হলো ওদের দিকে হাত আগানোর? আজ তোদের হাত ভেঙে দিবো একেবারে।তোদের আজ যদি কবরে না শোয়াতে পারছি…….’

আফরা এবার সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছে। অ্যামেরিকায় গড়ে ওঠা একজনের কাছে এমনদৃশ্য বুক কাপানোর মতো। চারিদিকে মারামারি. রক্তারক্তি, মানুষের সংঘর্ষ। আফরার মনে একটাই কথা, ‘যেভাবেই হোক। ফারহানকে থামাতে হবে।’
.
.#অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤ [উপন্যাস]
#কায়ানাত_আফরিন
#পর্ব____২০

রাজনৈতিক কোন্দল ছেড়ে হঠাৎ সময়ের ব্যবধানে সারা কলেজ নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। এতক্ষণের চলা ভয়ঙ্কর মারামারি অবশেষে থেমেছিলো পুলিশ অফিসারদের চার্জ পড়াতে। ফারহান থেমে যায় তখন। সেই সাথে ডানপন্থী দলের লোকরাও। বলা বাহুল্য, আফরা আর ইলার সাথে যে বা যারা অশ্লীল আচরণ করেছিলো তারা ছাত্রনেতা ওমর ফারুকের লোক ছিলো। মেয়ে দুটোকে ভীড়ের মাঝে অসহায় দেখে ওরা দুজন নিজের পশুত্বটা দমাতে পারেনি। তখনই ওমর ফারুকের সাথে তর্কাতর্কির পর ফারহান দ্রুত পায়ে বেরিয়ে আসছিলো প্রধান ভবন থেকে। ওর মস্তিষ্কে এখনও ওমরের সেই হুমকি দেওয়া কথাগুলো স্মৃতিচারণ হচ্ছে বারবার। সাহস কি করে হলো ওর ফারহার জুবায়ের কলার ধরার মতো দুঃসাহসিক কাজে হাত বাড়ানোর? এদিকে চেয়ারম্যান আদিত্য ব্যানার্জী রীতিমতো ওকে ফোর্স করছে ইলেকশনে যোগদান করার জন্য যেদিকে ফারহান স্টুডেন্টসদের পক্ষে এবং এসব কোন্দলের বাহিরে।
ফারহান নিঃশ্বাস ছাড়লো তখন।নিজের রাগকে যথাসম্ভব কাবু করে ফিরে যাচ্ছিলো তখনই হঠাৎ ওর চোখ যায় ভীড়ের মধ্যে থাকা ইলা আর আফরার দিকে। ওদেরকে দুজন ঘিরে আছে। চোখেরদৃষ্টিতে কামুকতা। ইলার কাদো কাদো মুখ দেখে ফারহান বড়ো বড়ো পা ফেলে এগিয়ে গেলো সেখানে। যা দেখলো এতে ওর চাপা ক্ষোভ নিমিষেই আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরণ করলো এবার। ওরা দুজন ডানপন্থী দলের লোক। গায়ে জড়ানো টিশার্ট তারই প্রমাণ দিচ্ছে। এর মধ্যে একজনের হাত আফরার শরীরে অপ্রীতিকর স্থানে ছোয়াতে গেলেই ফারহান আর দমাতে পারো না নিজেকে। কোনো কিছু না ভেবে এলোপাথারি ওদের মারতে লাগলো। ভেতরকার ওমরের আচরণে একপলকও ফারহানের মনে হয়নি ওকে শেষ করার ইচ্ছা। কিন্ত এদেরকে মেরে পিষে ফেলার মতো হিংস্র ইচ্ছে জেগে ওঠেছিলো ফারহানের মনে। পরে মারামারিটা এতই তুঙ্গে উঠে যায় যে কলেজ কতৃপক্ষ বাধ্য হয় পুলিশকে জানাতে। পরবর্তীতে পুলিশ এসে ওদের গ্রেফতার করার জন্য উদ্ধত হলেই চেয়্যারম্যান আদিত্য ব্যানার্জী ঘরে বসেই ব্যাপারটা সামলে নেয়। যেহেতু ফারহানের সাথে তার নিজেদের লোকরাই যুক্ত রয়েছে তাই তিনি চাননা যে ওমর ইলেকশনের আগে কোনো পুলিশি ঝামেলায় পড়ুক। তারপর সেখানেই থেমে যায় ব্যাপারটি।

এখন দুপুর ঢলে নেমেছে বিকেল। তপ্তমান দুপুরের কড়া রোদ্দুর পাড়ি দিয়ে এখন সিক্ত শীতল হাওয়ির সমাহার সর্বত্র। ফারহানের গাড়িটি এবার দ্রুত ব্রেক কষলো একটি কাঠবাগানের সামনে। ফারহানকে এখানে গাড়ি থামাতে দেখে পিছু পিছু গাড়ি থামালো ফাহিমও। ফরহান খেয়াল করেছে পেছনে ফাহিমকে অনুসরণ করতে। কিন্ত ফারহান সেটাতো নজর না এলিয়ে বসে পড়লো গাড়ির ওপর। সাব্বির-শামসু এদিকে ফারহানের মোবাইলে বার বার কল দিয়ে যাচ্ছে, এমনকি নিয়াজি সাহেবও। তবে এদের একজনের কলও ধরলো না ফারহান। সুইচড অফ করে গাড়ির ভেতর ছুঁড়ে মারলো। ফাহিম তা দেখে বললো,

-‘ফারহান শান্ত হও। তোমার এই তেজি আচরণ বেশ ভাবিয়ে তুলছে আমাকে।’

ফারহান গর্জে ফাহিমের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

-‘ফাইন ফাহিম ! আমার সম্পর্কে মোটেও ভাবতে হবেনা তোমাকে। তুমি আমার কাজির ব্রাদার ছাড়া কিছুই নও। সো এসব ভাবাভাবি না দেখিয়ে আমার চাচি মিসেস নাবিলার মতো আমায় ট্রিট করলেই তো পারো!’

ফাহিম নীরব হয়ে গেলো। এতক্ষণ আফরা আর ইলা গাড়িতে বসে থাকলেও ফারহানের হঠাৎ এভাবে গর্জে ওঠাতে বেরিয়ে এলো গাড়ি থেকে। তখনই ফারহানের চোখাচোখি হলো আফরার সাথে। অপরূপা সুন্দরী আফরার গায়ের রূপ যেন সর্বত্র কাঠবনে ছড়িয়ে পড়ছে। পিচ ঢালাই পথের একপাশে গভীর খাদ আর একপাশে কাঠবন। মাঝখানে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে দুটো গাড়ি। বিকেলের হলদেটে আলো পরিবেশে অন্য মাদকময় করে তুলছে। সেই সাথে আফরাকেও। ফারহান শ্বাস ক্রমশ রুদ্ধ হয়ে এলো আফরার এমন চাহিনী দেখে। ও এগিয়ে গেলো আফরার দিকে। বাহুটা সজোরে চেপে বলে উঠলো,

–‘আপনি কি পাগল আফরা? নুন্যতম কমন সেন্স কি আপনার মাঝে নেই? দেখছিলেন যে ওই জায়গিাটি গরম ছিলো রাজনৈতিক তাপদাহের জন্য তাহলে কেনো এগিয়ে গিয়েছিলেন ওখানে?’

আফরা ফারহানকে বলতে না দিয়েই মিহি কন্ঠে বলে ওঠলো,

–‘আপনার জন্য ।’

ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে ফারহান। আস্তে করে ছেড়ে দিলো আফরার বাহু। ফারহানের শরীর আজ দুর্বল লাগছে বেশ। তখনকার মারামারিতে সে নিজেও কড়াকড়ি আঘাত পেয়েছে। এর মধ্যে সাদা টিশার্টের হাতের কাছে কিভাবে যে রক্তে মাখামাখি হয়ে গেলো তা সে খেয়ালই করে নি। আফরা সেটা দেখেই বিচলিত হয়ে গেলো হঠাৎ। বলে ওঠলো,

–একি ফারহান! আপনার হাতে দেখি………

একথাটি বলে আফরা ফারহানের হাত স্পর্শ করতেই ফারহান নিজের হাত ছাড়িয়ে বললো,

–‘ডোন্ট চাট মি।’

আফরা শুনলোনা। এতদিন এই মোহনীয় মানুষটার বড্ড অবাধ্য হয়েছে সে । আজ আরও একবার অবাধ্য হলে দুনিয়া উল্টে যাবে না। ফারহানের হাত টেনে দ্রুত ফাহিমের গাড়ির কাছে নিয়ে গেলো। বিচলিত কন্ঠে বললো,

–‘ফাহিম ! দ্রুত এর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিন।’

–‘আমার লাগবে না বললাম তো?’

ফারহান নিজের হাত ছাড়িয়ে চলে যেতেই আফরা আরও জোরালোভাবে ওর হাত আকড়ে ধরলো। ফারহানের এবার অস্বস্তি হচ্ছে বেশ। আফরা কড়াভাবে বললো,

–‘আপনার যা মন চায় তাই করুন তবে আগে হাতে ব্যান্ডেজটা করে নিন ফারহান!’

‘ফারহান’ নামটা আফরাকে খুব কমই উচ্চারণ করতে দেখা যায়। তাই বিচলিতভাবে মিঃ কমরেড নামটি না শুনে নিজের নাম শুনাতে সপ্রতিভ হলো ফারহান। এবার নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো নিবিড়ভাবে। ফাহিমকে মাথা নাড়িয়ে ইশারায় তাই ব্যান্ডেজ করতে বললো আফরার কথায়। আজকে আফরার আর সাত রঙের চা খাওয়া হলোনা কলেজের সেই দুর্ঘটনার জন্য। যদিও ফারহান বারবার বলেছিলো যে ওর জন্য আফরাকে নিজের ভ্যাকেশন নষ্ট না করতে কিন্ত আফরা শুনেনি।কেনো শুনেনি তা নিজেও জানেনা আফরা। ও শুধু এতটুকু অনুভব করতে পেরেছে যে এই আহত মানুষটাকে রেখে কিছুতেই শান্তিতে ঘুরতে পারবে না সে। তাই সবাই মিলে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ফিরে গেলো নেলসন টি এস্টেট এর উদ্দেশ্যে।

_______________

খাওয়ার টেবিলে রাতের খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে ডায়নিং টেবিলে এসে বসলো আফরা।ফাহিম আর ইলা ইতিমধ্যে খাবার খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। মিঃ ইফাজ অপেক্ষা করছিলেন আফরার আসার জন্য। আফরার সাথে উনার চোখাচোখি হওয়া মাত্রই আফরা বিনিময়ে মুচকি হাসি দিলো। বিনয়ী কন্ঠে বলে ওঠলো,

-‘কেমন আছেন আঙ্কেল? ইদানীং তো আপনাকে বেশ ব্যস্ত দেখছি। আমার সাথে তো কথা বলারই সময় পান না।’

মিসেস নাবিলা মিহি ভাবে বললেন,

-‘তা আর বলো না আফরা। এই বুড়ো বয়সে কি দরকার এত কাজ সামলানোর? আমি বারবার না করেছিলাম এসব কাজ রাখো , আগে নিজের শরীরের যত্ন নাও। কিন্ত তোমার আঙ্কেল কি আদৌ আমার কোনো কথা শুনে?’

ইফাজ সাহেব মলিন হাসলেন। খাবারে আঙুল নাড়াতে নাড়াতেই বলে ওঠলেন,

-‘আমি না করলে এসব কাজ কে করবে শুনি?’

-‘কে করবে আবার? তোমার ভাইয়ের ছেলে ফারহান আছে না? এতবছর ওকে দেখেশুনে রাখলাম ; এখন ওর উচিত না একটু চাচার দিকে নজর রাখার? তাছাড়া ও করেটা কি শুনি? চা বাগান থেকে বসে বসে ইনকাম করে রাজনীতিতে বিলিয়ে দেয়।’

শেষের কথাটি ব্যঙ্গস্বরূপ বললেন মিসেস নাবিলা। এতে অসন্তুষ্ট হলেন মিঃ ইফাজ। সেই সাথে ফাহিম আর ইলাও। আফরা যে ঠিক কি ভাবছে সেটা ওর মুখভঙ্গি দেখে বোঝা গেলো না। সে আপনমনে খাবার খেয়ে যাচ্ছে। মিঃ ইফাজ ফারহানের ব্যাপারে আর কথা বাড়ালেন না। আফরা কে জিজ্ঞেস করলেন,

-‘আফরা তোমার মম ড্যাডের সাথে কথা বলো তুমি?’

আফরা খাওয়া রেখে শীতল দৃষ্টিতে একপলক মিঃ ইফাজের দিকে তাকালো। তবে কোনো কথা না বলে পুনরায় খাওয়াতে মনোযোগ দেওয়ায় উনি বুঝে গিয়েছেন আফরার উত্তর। তাই বলে ওঠলেন,

-‘কেনো কথা বলোনা উনাদের সাথে তুমি? তোমার মম ড্যাড তো প্রতিদিন কল দেয় আমায় তোমার খোঁজ নেওয়ার জন্য।’

-‘তাদের বলে দিয়েন আঙ্কেল যে আমি কোনো বাচ্চা মেয়ে না যে বারবার খোঁজ খবর নিতে হবে।আমি চাই না যে কেউ বারবার আমায় নিয়ে খোঁজখবর নিক।’

আফরা শীতল কন্ঠে কথাগুলো বলে খাওয়া শেষ করলো এবার। ঘুমানোর উদ্দেশ্যে সবাইকে শুভরাত্রি জানিয়ে চলে গেলো নিজের শোয়ার ঘরে। মিঃ ইফাজ আফরাকে এখনও বাবা মায়ের প্রতি এত বিক্ষোভে জর্জরিত দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তিনি সবই জানেন আফরার সাথে অ্যামেরিকায় ঘটা সেই ঘটনাগুলো যার জন্য ওর মা বাধ্য হয়ে শাস্তিস্বরূপ ওকে পাঠিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশে। তবে এটা সত্যি যে অ্যামেরিকায় ও যেভাবে লাইফ লিড করে সেভাবে ও আরও কিছুসময় থাকলে ওর জীবন আরও অগোছালো হয়ে যেতো। হয়তো ওর জীবনের এক নতুন মোড় বাংলাদেশের এই ছোট্ট অঞ্চল শ্রীমঙ্গলেই হবে।

___________

রাতের গহীনে উন্মাদ সারা অঞ্চল। কিছুক্ষণ আগে কারেন্ট চলে যাওয়াতে দূর দূর বাড়িগুলোকে ভুতুড়ে বাড়ি মনে হচ্ছে। ইলা আস্তে করে মোবাইল নিয়ে পূব দিকের বারান্দায় চলে গেলো। ওর কপালে সুক্ষ্ণ ঘাম রয়েছে। ঠোঁট কাঁপছে তুমুল উত্তেজনায়। আজ কলেজে থাকাকালীন সময়ে ওর প্রিয় মানুষটা কল করেছিলো বারবার। কিন্ত ভাইয়ের নজরে পড়ার ভয়ে একবারও কল ধরার সিহস পায়নি। এখন সারা বাড়ি নিস্তব্ধ। তার ওপর আবার বিদ্যুৎ নেই। তাই তাকে কল দিতে হলে খুব সাবধানে কল দিয়ে মিহি স্বরে কথা বলতে হবে। ইলা এবার তপ্ত শ্বাস ছেড়ে সেই নম্বরে কল দিলো এবার। দু’বার রিং বাজতেই অপরপাশ থেকে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে ওঠলো,

–‘হ্যালো ইলা। কি হয়েছিলো তোমার? তখন বারবার কল দিচ্ছিলাম কি হয়েছিলো যে ফোন ধরোনি?’

ইলার ঠোঁটকোলে স্মিত হাসি ফুটে ওঠে মানুষটির কন্ঠ শুনে।প্রতিউত্তরে বলে উঠলো,

-‘ভাই আর আফরা আপু সাথে ছিলো সাব্বির। তাই তোমার কল ধরিনি।’

সাব্বির চুপ হয়ে রইলো এতে। এটাই সেই সাব্বির যে হলো ফারহানের বিশ্বস্ত সঙ্গী। ফারহানের সাথে কথা বলার সুবাদে প্রায়ই শামসুর সাথে আসা হতো নেলসন টি এস্টেটে। সেই সুবাদে পরিচয় হয়ে যায় ফারহানের ছোট চাচাতো বোন ইলার সাথে। কথার ভাঁজে ভাঁজে কখন যে ওদের মধ্যে নতুন অনুভূতির সূত্রপাত হয় তা দুজনের কাছেই ছিলো একেবারে ধারনার বাহিরে। তবে ওদের এ সম্পর্কের ব্যাপারে কেউই জানেনা। তাছাড়া সাব্বির বা ইলা কেউই চায়না ওদের সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে। কেননা উপযুক্ত সময় এখনও হয়নি। সাব্বিরের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো ইলার। কথা হলো আজ দুপুরে ফারহানের হঠাৎ মারামারির কোন্দল নিয়েও। সাব্বির একপর্যায়ে বলে ওঠলো,

-‘আচ্ছা ইলা , আফরাকে ফারহান ভাইয়ের সাথে কেমন লাগবে?’

ইলা বিস্মিত হলো সাব্বিরের কথা শুনে। এমনভাবে সে মাবলেও এতোটা গভীরভাবে সে ভাবেনি। তাই অবাক গলায় বললো,

-‘মানে?’

-‘আমার কেনো যেনো মনে হয় ফারহান ভাই কিছুটা দুর্বল আফরার প্রতি। কেননা আমি কখনোই কোনো মেয়ের প্রতি তাকে অভিভূত হতে দেখিনি।’

ইলা ঠোঁট চেপে রাখলো কিছুক্ষণ। এই ব্যাপারে কথা এড়িয়ে কল কেটে দিলো পরিশেষে। বাহিরে ফুরফুরে হাওয়া বইছে। নিশিরাতের বাতাসে অন্যরকম এক উত্তেজনা কাজ করলো ইলার। তবে চিন্তাও হচ্ছে ফারহান ভাইয়ের ব্যাপারে। কেননা ইতিমধ্যে মায়ের কাছে শুনেছে আফরা আর ফাহিম ভাইয়ের সম্পর্ক এগোনোর কথা। তাছাড়া ইলার ধারনা ফাহিম ভাই মনে মনে পছন্দ করে আফরাকে যা সূচনাতেই সে ধরতে পেরেছিলো। যদি ফারহান ভাই ব্যাপারটাতে এগিয়ে আসে তাহলে মা কখনোই ক্ষমা করবেনা ফারহানকে। ভাবতেই ওর ছোট মনে প্রবল উদ্বেগ দেখা দিলো।
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ
.
.
#চলবে……ইনশাআল্লাহ

আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় থাকবো,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here