অতঃপর_ভালোবাসি পর্ব ৩+৪

#অতঃপর_ভালোবাসি
Sumon Al-Farabi
৩য় পর্ব

আঁচলের দুচোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝাড়ছে। আজ বুঝি তার জন্য তার দুই নিষ্পাপ বোনের জীবনেও আধার নেমে আসে । পৃথিবীতে কেউ ভালো না। সবাই দিনের আলোয় পবিত্র দিন ফুরাইলে বোঝা যায় সবার আসল চরিত্র ।

রাহী দরজার কাছে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো আঁচল মাথা নিচু করে আছে। মনে হচ্ছে একটা মূর্তী দাঁড়িয়ে আছে । রাহী আবার বললো- আসতে ভুল হয় না যেন।
দরজার থেকে কিছুটা দূরেই সেই পিচ্চি মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে – তোমার নাম কি?
” আরসি।
” তোমার আপুর সাথে আজ আমার বাসায় এসো। তোমাদের দাওয়াত রইলো কেমন?
রাহী কথাটা বলেই আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।
আঁচল ততক্ষণে বের হয়ে আসছে। রাহীর কথা শুনে মনে মনে ভাবছে সবাই ভালো মানুষের মুখোশ পড়া। আর যাই হোক আমার কারণে আমার বোনের জীবনে আধার আসতে দিবো না। কিন্তু আমি কি করবো? দরকার পড়লে তার পায়ে ধরবো তবুও আমার বোনের জীবনে আধার আসতে দিবো না । ওনার যত চাহিদা সব আমায় দিয়েই পূর্ণ করুক তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

সারাটি দিন আঁচলের মনমরা হয়ে কেটে গেলো। কি করবে সে? কিছুতেই ভেবে কোনো কূল পায় না। এখন সূর্যটাও ডুবে গেলো। যাবে নাকি যাবে না সেই চিন্তা এখন আবার নতুন করে জায়গা করে নিলো। সে তো পুলিশ যদি না যায় আর যদি আঁচল কে বেআইনি কাজের জন্য এসে ধরে নিয়ে যায়? তবে সমাজ কি বলবে সে চিন্তা সে করে না। কিন্তু তার বোনরা কি করবে? কোথায় যাবে? কি খাবে?
অবশেষে সকল চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দুই বোনকে সাথে নিয়ে রওনা দিলো রাহীর বাসার উদ্দেশ্যে।

দুই বার কলিং বেল বাজানোর পর রাহী এসে দরজা খুলে দিলো।- ওহহ আপনারা? আসুন। কেমন আছো অধরা আরসি?
অধরা বললো- ভালো, আপনি?
” আমি ভালোই আছি। আসো ভিতরে আসো।

ভিতরে এসেই অধরা আর আরসি সোফায় বসে পড়লো। আঁচল পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। – কি হলো আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন।
” হুম ।
টিভিটা অন করে অধরা আর আরসি কে দেখতে বললো।
” আপনি আমার সাথে আসুন – আঁচল কে বললো।
আঁচল মনে মনে প্রস্তুতি নিতে লাগলো। কারণ সে জানে তার সাথে এখন কি হতে যাচ্ছে ।
রাহী আঁচল কে নিয়ে রান্না ঘরে আসলো। আঁচল অবাক হয়ে রাহীর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে এখানে কেন তাকে নিয়ে আসলো?

” ফ্রিজ থেকে মুরগির মাংস গুলো বের করুন।
রাহীর কথায় আরও অবাক হয়ে তাকালো আঁচল । লোকটা কি বলে? লোকটা কি পাগল হয়ে গেছে নাকি?
” কি হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
” আপনি কি বলছেন? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
” ফ্রিজ থেকে মুরগির মাংস গুলো বের করুন।
” কিন্তু কেন?
” রান্না করবো। না মানে আপনি রান্না করবেন আমি আপনাকে সাহায্য করবো। খাওয়া করতে হবে তো।
” হুম।
আঁচল আর কথা না বলে রান্না করতে শুরু করলো। রাহীও তাকে সাহায্য করছে আর এদিকে অধরা আর আরসি বসে টিভি দেখছে।

রান্না শেষ করে সবাই মিলে বসে খাওয়া শেষ করলো। আঁচল খাওয়ার মাঝে মাঝে রাহীর দিকে তাকাচ্ছে। লোকটা চাচ্ছে কি? তার চাওয়া তো শারীরিক তৃপ্তি কিন্তু সে আমাদের এভাবে আপ্যায়ন করছে কেন? নিশ্চই এর পিছনে মতলব আছে। নইলে লোকটা কে যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। সে আসলে কি করতে চাচ্ছে? আজকাল তো সিরিয়াল কিলারের অভাব নেই । তবে কি উনিও আমাদের এভাবে খাইয়ে পরে হত্যা করবে?
নানান চিন্তা ভর করলো আঁচলের মাথায়। ভাত যেন তার গলা দিয়ে আর নামছে না। শরীর টাও হিম শীতল হয়ে আসছে।

” হি হলো আপনি খাচ্ছেন না কেন?
রাহীর কথায় ভাবনায় ছেদ ঘটলো। কিছুটা চমকে উঠে বললো- আমি আর খাবো না আমার খাওয়া শেষ।
” অধরা আরসি কেমন লাগছে?
অধরা বললো- খুবই ভালো। আপনি খুব ভালো ভাইয়া।
” আরসি কথা বলো না কেন?
আঁচল এবার বললো- ও অপরিচিত কারো সাথে কথা বলে না।
” আপনার বোন গুলো কিন্তু খুবই মিষ্টি।
আঁচল রাহীর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। হয়তো একটু পরেই আমাদের জীবনের শেষ হতে চলছে। মনে মনে বোনদের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিলো। ক্ষমা করে দিও বোন আমার জন্য অকালে তোদের জীবন ঝরে গেলো।

খাওয়া শেষ হতেই আরসি বললো – আপু আমার খুবই ঘুম পেয়েছে।
আরসির কথার সাথে তাল মিলিয়ে অধরাও বললো।
” ওদের যখন ঘুম পেয়েছে তাহলে ঐ রুমটায় ওদের শুইয়ে দিন।
আঁচল, অধরা আর আরসি কে নিয়ে রুমে চলে গেলো। রাহী টিভি দেখছে। টম জেরি কার্টুনটা খুবই প্রিয় তার। প্রতিটি এপিসোড তার মুখস্থ। তবুও সে দেখে। এক অন্য রকম আনন্দ কাজ করে।

প্রায় ত্রিশ মিনিট পরে আঁচল রাহীর সামনে এসে দাঁড়ালো। রাহী লক্ষ করলো আঁচলের চোখ লাল হয়ে আছে । – আপনার চোখ গুলো এতো লাল হলো কিভাবে?
” আরসির আঙুল লেগে ।
” ওহহ। ছাঁদে যাবেন?
আঁচল কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ালো।

দুজনেই ছাঁদে । চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রাহী একটু সামনে আর আঁচল পিছনে ।
আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে রাহী। হঠাৎই সে খেয়াল করলো আঁচল এসে তার পা জাপ্টে ধরে কান্না করছে।
” কি করছেন আপনি এসব?
” আপনার যত চাহিদা মেটানোর ইচ্ছে আপনি আমায় দিয়ে মেটান। আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেভাবেই আপনাকে প্রশান্তি দেওয়ার চেষ্টা করবো। কিন্তু প্লিজ আমার বোনদের কোনো ক্ষতি করবেন না। প্লিজ।
” আপনি উঠুন। উঠুক বলছি।
” আপনি প্লিজ তাদের কোনো ক্ষতি করবেন না।
” আচ্ছা করবো না। এবার পা ছাড়ুন।

আঁচল পা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। রাহী পকেট থেকে টিস্যু বের করে এগিয়ে দিলো আঁচলের দিকে। – কান্না করলে মন ফ্রেশ থাকে তাই বলে এতো কান্না করা ঠিক না।

আঁচল কিছু বললো না। টিস্যু দিয়ে চোখ মুছলো।
” আচ্ছা একটা কথা বলি? আমার খুবই জানতে ইচ্ছে করছে
” জ্বি বলুন।
” আপনি ভেবেছিলেন আমি আপনার বোনদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করবো তাহলে ওদের নিয়ে আসছেন কেন?
” আপনি পুলিশ যদি আমাদের কোনো ক্ষতি করেন তাই।
” আমি পুলিশ আপনাকে কে বললো?
” আপনি তো গতকাল রাতে বলেছিলেন।
আঁচলের কথা শুনে রাহী একটু শব্দ করেই হেঁসে দিলো।
রাহীকে হাসতে দেখে আঁচল অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ।
” আপনি হাসছেন কেন?
” আমি ওসব পুলিশ টুলিশ কিছু না। ঐদিন আপনাকে বাঁচানোর জন্য উপস্থিত বুদ্ধির প্রয়োগ করেছি। আচ্ছা ভালো কথা, আপনি যদি দেহকর্মী হয়ে থাকেন তাহলে কেন গতকাল তাদের থেকে পালিয়ে যেতে চাইছিলেন? তারা তো আপনাকে মোটা অংকের টাকা দিতো।

আঁচল মাথা নিচু করে বললো- আমি মাত্র সাত দিন হলো এসব নোংরা কাজে নিজেকে জরিয়েছি। তাই আমার সহ্য করার ক্ষমতা এখনো এতটা হয় নি যে চারটা হিংস্র খাদকের হাতে নিজের শরীর টা সপে দিবো।
” যে কাজ আপনার এবং আপনার পরিবারের খাদ্য যোগান দেয় সে কাজকে বাজে বলছেন? বাহ্
” যেটা বাজে সেটাকে তো বাজেই বলবো। পৃথিবীতে বাঘ সিংহ ভাল্লুক এদের থেকে যে বড় খাদক পুরুষ জাতি তা এই কদিনে বুঝতে পেরেছি। চাহিদার টানে কাছে টানে কিন্তু যে তার চাহিদা মেটাচ্ছে তার কতটা কষ্ট হচ্ছে সেটার দিকে তার কোনো খেয়াল নেই। আর সে খেয়াল করবেই বা কেন? সে তো এমনি এমনি আসে নি টাকা দিয়ে নিয়ে আসছে এতে সে বাচুক বা মরুক তাতে তার কি। তার টাকা উসুল হলেই হলো।

চারদিকের আবছা আলোয় আঁচলের চোখের পানি চকচক করছে।
” এই বাজে পথটা বেচে নেওয়া টা কি খুবই জরুরি ছিলো?
এবার আঁচল মাথা তুলে রাহীর দিকে তাকালো।
অতঃপর ভালোবাসি
Sumon Al-Farabi
৪র্থ পর্ব

” কেউ কি নিজের শখে যৌনকর্মী হয়? আপনার ভদ্র সমাজ হতে বাধ্য করে।
” সমাজে তো অনেক কাজেই আছে আপনি চাইলে অন্য কাজও তো করতে পারতেন।
” চেষ্টা তো আর কম করি নি । কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই বিছানায় যাওয়ার অফার পেতে হয়েছে নয়তো অপমানিত হতে হয়েছে, হয়েছে হাসির পাত্র হতে। কেন জানেন? কারণ আপনার ভদ্র সমাজ Give and Take মেনে চলে। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হবে। আর সেই কিছুটা হলো প্রতি নিয়ত তাদের বিছানায় যেতে হবে ।
” ওহ।
” একজন আমায় কি অফার করেছিলো জানেন?
” কি?
” তার মাদকাসক্ত ছেলে যে কি না নেশা করার পর হিংস্র জানোয়ারের থেকেও হিংস্র হয়ে যায় মেয়েলী মাংসের স্বাদ নিবে জন্য প্রতিদিন তার বিছানায় যেতে । তার যৌনতা চাহিদা মেটাতে।
” আপনি কি বলেছিলেন?
” আমি শুধু বলেছিলাম এসবের থেকে আমার সাথে বিয়ে দিন আমি ওনাকে শুধরে দিবো। পাল্টা উত্তর কি শুনতে হয়েছে জানেন?
” কি?
” তোমার মতো রাস্তার মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিবো এটা ভাবলে কিভাবে? তোমাকে শুধু তার চাহিদা মেটাতে বলেছি। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে নয়। ভাবুন তাহলে আপনার সমাজ কতটা ভালো। বাবা তার ছেলের যৌনতার জন্য একটা মেয়ের বয়সের মেয়েকে তার বিছানায় পাঠাতে একবার ভাবে না। ভাবুন দারিদ্র্য ঘরের মেয়েদের সমাজে কোন চোখে দেখা হয়?
” তবুও তো আপনার চরিত্রে যৌন কর্মী ছাপটা উঠতো না। তাহলে
” আপনার সমাজ
” আচ্ছা আপনি তখন থেকে আপনার সমাজ আপনার সমাজ বলছেন কেন? এই সমাজ টা আপনার না?
” না। আমি সেই অন্ধকার, নোংরা বাজে সমাজের। যে সমাজের নাম শুনলেও আপনারা থুথু ফেলান। আবার রাতের আধারে চোরের মতো সেই সমাজেই হারিয়ে যান।

” চলুন ওখানটায় বসি।
রাহী আঁচল এসে দালানে হেলান দিয়ে বসলো।
” বাবা মার মৃত্যুর পর জমানো কিছু টাকা ছিলো। সেগুলো দিয়ে কিছু দিন চলি। এরপর থেকেই শুরু হয় জীবন যুদ্ধ । অনেক বার চেয়েছিলাম সুইসাইড করতে কিন্তু পারিনি। ছোট বোন দুটোর মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমি মরে গেলে হয়তো ওদের ও আমার রাস্তায় আসতে হবে । কিন্তু আমি চাই না। আমি ঝড় সামলে নিয়ে তাদের ছাতা হবো। বাকীটা জীবন ।

রাহী কিছু বলছে না। শুধু ভাবছে মেয়েটা কতটা চাপে পরে আজ এমন অবস্থায়। পৃথিবীতে যার মা বাবা নেই পৃথিবী টা সত্যি তার কাছে মৃত্যু যন্ত্রণার মতো ভয়ংকর । যেখানে কেউ কাউকে এক ফোটা জায়গা ছেড়ে দেয় না ।

রাহী আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছু সময় পর হঠাৎ তার কাঁধে কিছু একটা পড়লো মনে হলো।
আঁচল ঘুমিয়ে পড়ছে। সেই রাহীর ঘাড়ে মাথা হেলিয়ে দিয়েছে।
রাহী আঁচলের দিকে কিছুটা সরে আসলো। যাতে আঁচলের কষ্ট না হয়।
আঁচল বার বার হিংস্র শব্দটা ব্যবহার করছিলো এর মানে কি আমরা পুরুষ জাতি সত্যি নিজের চাহিদা পূরণে হিংস্র পশুর ন্যায় আচরণ করি? হয়তো বা।

রাহী আঁচলের দিকে তাকালো। চোখের পাতায় এখনো পানি জমেই আছে । আলতো করে পানিগুলো মুছে দিয়ে আঁচল কে কোলে করে নিয়ে নিচে আসলো। অধরা আর আরসির পাশে শুইয়ে দিয়ে রাহী অন্য রুমে চলে গেলো।

আঁচল অধরা আরসি, আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো বুঝতে পারে নি।

সময় ঠিক কয়টা মনে নেই। তবে খুব বেশি সকাল হয় নি এটা ঠিক । চোখে সূর্যের আলো পড়ায় ঘুম ভেঙে গেলো রাহীর।
চোখ খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু চোখ খুলছেই না। হাত দিয়ে চোখ মুছে এবার চোখ খুললো রাহী। আঁচল জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিয়েছে তাই আলো এসে সরাসরি চোখে পড়ছে।

” আপনি রুমে আসলেন কিভাবে?
” দরজা তো খোলায় ছিলো।
” ওহহ আচ্ছা । ক’টা বাজে?
” ১০ঃ৩০।
” আমাকে অফিসে যেতে হবে তাড়াতাড়ি। আজ নাকি একটা মিটিং আছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার সিগনেচার লাগবে ।

আঁচল কে আর কিছু না বলতে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে রাহী। ইতিমধ্যে আঁচল রাহীর জন্য খাবার গরম করতে রান্না ঘরে চলে আসছে।
রাহী তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে ।
” একটু অপেক্ষা করুন। বেশিক্ষণ সময় লাগবে না। খাবার গরম হয়ে গেছে প্রায়।
” সময় নেই। এসে খাবো। আর হ্যাঁ সব কিছু ফ্রিজে আছে । তাড়াতাড়ি রান্না করেন।। আপনারা সকালের টা খেয়ে নেন আমিও একটু পরেই আসছি।

রাহী আর কিছু না বলে চলে গেলো। আঁচল পিছনে থেকে ডাকলো কিন্তু রাহী সে কথায় কান দিলো না।

অফিসে গিয়ে অফিসের কাজ শেষ করলো। এরপর ঐদিন যে বন্ধুর বউকে রক্ত দিয়েছিলো তাকে দেখার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলো।
এখন প্রায় রাত ৯ টা। কলিং বেল বাজার সাথে সাথেই আঁচল দরজা খুলে দিলো। মনে হয় দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো। রাহী কখন আসবে সেই অপেক্ষা করছিলো।
” আপনারা চলে যান নি?
” না মানে।
” আচ্ছা আসুন।
ভিতরে এসে অধরা কে জিজ্ঞেস করলো – খাওয়া করছো রাতে?
” হ্যাঁ ভাইয়া।
” আরসি খাইছে?
” হ্যাঁ। ও খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। শুধু আপু খায় নি।
রাহী ঘাড় বাকা করে আঁচলের দিকে তাকালো। চোখাচোখি হতেই আঁচল মাথা নিচু করলো।
” তুমি ঘুমাবে না?
” হ্যাঁ ।
” যাও শুয়ে পড়।
আঁচলের দিকে তাকিয়ে বললো- ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিন।
আঁচল অধরাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো। রাহী রুমে এসে ফ্রেশ হলো। এরপর বাইরে এসে সোফায় বসে টিভি দেখতে শুরু করলো।
একটু পরেই আঁচল এসে দাঁড়ালো।
” অধরা ঘুমিয়েছে?
” হ্যাঁ
” এতো তাড়াতাড়ি?
” হুম ।
” আপনি পারবেন এতো তাড়াতাড়ি ঘুমাতে?
ঘাড় নাড়িয়ে না বললো আঁচল ।
” ছোটবেলা টা আসলেই সুন্দর কোনো চিন্তা নেই। তাই জন্য বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে চোখে বাসা বাঁধে।
” হুম ।
” চলুন খাওয়া করি।
আঁচল কে নিয়ে খেতে আসলো রাহী। চুপচাপ খাওয়া শেষ করে রাহী নিজের প্লেট টা পরিস্কার করে ছাঁদে চলে আসলো । আঁচলের খাওয়া তখন ও বাকী।
রাহী চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবছে যদি চাঁদে যেতে পারতাম তাহলে আর কোনো দিন পৃথিবীতে আসতাম না। এসব বড় বড় দালান ভালো লাগে না। কেমন জেনো মানুষের মন গুলোও ইট পাথরের মতো কঠিন হয়ে গেছে ।
” আমরা চলে যাই নি জন্য রাগ করছেন তাই না?
আঁচলের কথায় রাহী পিছনে ফিরলো। মুচকি হেঁসে বললো- আমি চাইতাম যাতে আপনারা না যান।
” কেন?
” আচ্ছা সেটা আমি পড়ে বলছি। আগে আপনি বলুন আপনি কেন জান নি?
” আপনার কাছে যে জন্য টাকা নিয়েছি সেই কাজটা শেষ করি নি তাই । কারণ আমি বাজে হতে পারি চিটার নই।
” ওহহ আচ্ছা । আপনি চাইলে চলে যেতে পারতেন।
” হুম। আমি বলবো আপনি কেন চাইতেন যেন আমরা না যাই?
আঁচলের কথাটা শুনে খুবই উৎসাহিত হলো রাহী। হাসি হাসি মুখে বললো- তাই? বলুন শুনি।
” আপনার চাহিদা পূরণ হয় নি। আপনি কি আপনার টাকা পানিতে ফেলবেন নাকি। তাই জন্য।।

আঁচলের কথাটায় রাহীর মনের কোথাও যেন একটা বড় জখমের সৃষ্টি করলো। হাসি মুখটা নিমিষেই ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। রাহী আবার ফিরে আকাশের দিকে তাকালো।
রাহী মনে মনে ভাবছে – পৃথিবীর সবাই কি চাহিদার জন্যই অন্য কে কাছে টানে? হয়তো হ্যাঁ আবার হয়তো না। তবে জীবন যাকে যেভাবে শিখিয়েছে সে সেভাবেই সবাইকে বিচার করবে এটাই স্বাভাবিক।

To be continue….
(অনেকেই বলেছিলেন যে রাহী নামটা পরিবর্তন করতে। আসলে কয়েকটা পর্ব ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছি এখন কি নামটা পরিবর্তন করা ঠিক হবে? আপনাদের মতামত আশা করছি। যদি সবাই এটাই চান যে নামটা পরিবর্তন করি তবে ইনশাআল্লাহ তাই করবো পরবর্তী পর্বে। ধন্যবাদ)
To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here