অতঃপর_ভালোবাসি পর্ব ৯+১০+শেষ

অতঃপর ভালোবাসি
Sumon Al-Farabi
৯ম পর্ব

আঁচলকে কিছুটা বিব্রত বোধ করতে দেখে রাহী আবার সরে গেলো- একটা প্রশ্ন সব সময় আমার মনে নাড়া দেয় তবে কখনো আমি এর সঠিক মন মতো উত্তর পাই নি।।
খুব উৎসাহ নিয়ে আঁচল জিজ্ঞেস করলো – কি প্রশ্ন?
” একজন নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ যদি তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে তবে সেটাকে ধর্ষন বলা হয়। আর সেই ধর্ষনের ফলে যে বাচ্চা হয় তাকে জারজ সন্তান বলা হয় ।
” হুম ।
” একটা মেয়ের যখন সুদীর্ঘ দিন একজন ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে থাকার পর তাকে অন্য একটা ছেলের সাথে তাকে পরিবার কতৃক জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়, এরপর বিয়ের রাতেই স্বামী তার সাথে শারীরিক সম্পর্কে মেতে ওঠে। যেন সে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্যেই বিয়ে করেছে। তখন তো স্বভাবতই মেয়েটার ইচ্ছে থাকবে না শারীরিক সম্পর্ক করতে তাই না?
” হুম।
” তাহলে তো মেয়েটার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা হচ্ছে ।
” হুম।
” তাহলে এটা কি ধর্ষন না? আর এই শারীরিক সম্পর্কের ফলে যে সন্তান পৃথিবীতে আসবে তাকে কি বলা হবে?

রাহীর প্রশ্ন শুনে আঁচল থ হয়ে গেলো। অপলক দৃষ্টিতে রাহির দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ দিয়ে যেন কিছুই বের হচ্ছে না ।

” কি হলো চুপ হয়ে গেলেন কেন?
” এর কোনো উত্তর আমার কাছে নেই ।
” জানি আমি । একবার ভাবুন প্রতিরাতে কতগুলো মেয়ে মুখ বুঝে নিরবে ধর্ষন হচ্ছে । অবশ্য এটা পবিত্র ধর্ষন।
পবিত্র ধর্ষন কথাটা শুনে আঁচল জিজ্ঞেস করলো – পবিত্র ধর্ষন মানে?
” মানে বিয়েটা পবিত্র একটা বন্ধন। আর বিয়ের পরে যে ধর্ষনটা হচ্ছে সেটাও পবিত্র তাই পবিত্র ধর্ষন। আর বিয়ের আগে ধর্ষনের ফলে আগত বাচ্চা কে সমাজ কতৃক গায়ে একটা অবৈধ সন্তান নামক প্রতিলিপন করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ের পরে আসা বাচ্চা কে সেই প্রতিলিপনটা দেওয়া হয় না। তাই জন্য আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছিলাম যে মন থেকে মেনে নিবেন নাকি স্বামী জন্য মেনে নিবেন?
” আপনি আমার স্বামী তাই জন্য স্বামী হিসাবে মেনে নিবো। আর যেহেতু আপনাকে আমি ভালোবাসি তাই মন থেকেও।
” হুম । কিন্তু তাদের শারীরিক সম্পর্কের সাথে ভালোবাসার কোনো যোগসূত্র থাকে না তাই জন্য সেটা পবিত্র ধর্ষন। মনে করুন একজোড়া প্রেমিকযুগল রুম ডেট করলো। এটা কিন্তু ইসলামের বিধানের বাহিরে। ইসলাম এটাকে সমর্থন করে না। কিন্তু তবুও কিন্তু এটাকে ধর্ষন বলা হয় না। কারণ সেখানে ভালোবাসা সংশ্লিষ্ট। তাই সেই শারীরিক সম্পর্ক কে প্রেমের বহিঃপ্রকাশ বলা হয় ।
” হুম । তে আপনার মতে কি হওয়া উচিত?
” প্রতিটি পুরুষ কে প্রেমিক হওয়া উচিত । আগে তার বিয়ে করা বউয়ের মনটা ছুঁতে হবে তারপরেই শরীর ।
” হুম আপনি ঠিকই বলছেন কিন্তু আপনি সব কিছু আপনার নিজের মতো করে ভাবলে তো হবে না।
রাহী মুচকি হেঁসে বললো- আমি সব কিছু আমার নিজের মতো করে ভাবি জন্য আমি এতটা সুখী। কারণ আমি কখনো ভাবি না সমাজ কি বললো। । কারণ আমি আমার রাজ্যের একমাত্র রাজা। আর রাজা কখনো কারো কথা শুনে চলে না। তাই আমি সেটাই করি যেটা আমার ভালো লাগে ।
” হুম । আপনি কি এখন ঘুমাবেন? আমার প্রচুর ঘুম পেয়েছে ।
” আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন। আমি আর কিছুক্ষণ এখানে বসে থাকবো।

রাহী ছাঁদের এক কোনায় পড়ে থাকা দোলনায় গিয়ে বসে পড়লো। আঁচল কি যেন ভেবে রুমে না গিয়ে রাহীর পাশে গিয়ে বসলো। রাহীর হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । রাহী আঁচলের দিকে তাকিয়ে হাতটা সরিয়ে নিয়ে তাকে কোলে বসিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো ।।

” আপনার স্পর্শে আমায় এমন লাগে কেন?
” কেমন?
” পুরো শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে । আগেও তো অনেক পুরুষ আমায় ছুঁয়েছে কিন্তু কখনো এমন হয় নি ।
” নারীর শরীর ছুঁলেই কি পুরুষ হওয়া যায়?
” মানে?
” কিছুনা। হয়তো আপনার অনুভূতিরা আমার স্পর্শে ভালোবাসার চিহ্ন খুঁজে পেয়েছে। তাই আপনার এমন মনে হচ্ছে ।
” হুম ।
” বাসার সামনের ঐ জমিটায় একটা পোশাক কারখানা করবো।
” কেনো?
” আপনি তো বললেন যে যৌনকর্মীদের জন্য কিছু করতে চান। তাই তাদের কর্মস্থল তৈরী করবো।
” কিন্তু এটার জন্য তো অনেক টাকার দরকার।
” হ্যাঁ । আমি তো বলি নি যে বললেই হয়ে যাবে।
” এতটাকা কোথায় পাবো?
” সেটা নিয়ে আপনাকর চিন্তা না করলেও চলবে ।
” আচ্ছা আপনি কোথায় জব করেন বলেন তো?
” আমি কোথায় জব করি সেটা জেনে কি করবেন? আমার জীবনে শুধু ভালোবাসাটার অভাব । আপনি শুধু আমার এই অভাব টা পূরণ করে দিন আপনার জন্য জীবন দিতেও আমি এক মুহুর্ত ভাববো না।

আঁচল রাহীর কথা শুনে হতবাক হয়ে গেছে। কি বলছে কিছুই যেন তার মাথায় যাচ্ছে না । সব মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে । আর কোনো প্রশ্ন না করে রাহীর কাঁধে মাথা দিলো। রাহীও কিছুক্ষণ চুপ থাকলো।
” আমি আপনাকে কেন বিয়ে করেছি জানেন?

রাহী এতটুকু বলে থেমে গেলো। আঁচলের” কেন ” প্রশ্ন টি শোনার জন্য। কিন্তু আঁচল কতৃক কোনো প্রশ্ন আসলো।
অতঃপর ভালোবাসি
Sumon Al-Farabi
শেষ পর্ব

রাহী আঁচলের দিকে তাকিয়ে দেখে আঁচল ঘুমিয়ে পড়ছে। তাই সে আর কোনো কথা বললো না। আঁচলকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো।
হালকা বাতাস বইছে। যদিও এমন বাতাস রাহীর খুবই ভালো লাগে । সে কখনো এমন বাতাসে নিজেকে ভেজাতে মিস করে না। কিন্তু আঁচলের শীত করবে তাই জন্য আঁচলকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসলো। আঁচলকে একপাশে শুইয়ে দিয়ে অন্য পাশে রাহী শুয়ে পড়লো। মাঝে অধরা আর আরসি।
সকালে কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো রাহীর। বিছানা ছেড়ে উঠে বাইরে এসে দেখে আরসি কান্না করছে আর অধরা তার কান্না বন্ধ করার চেষ্টা করছে । রাহী তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো – কি হয়েছে আমার ছোট গিন্নির?
অধরা বললো- আপু মারছে।
সকাল সকাল আবার কি হলো যে ও আরসিকে মারলো।
” তুমি কান্না করিও না ছোট গিন্নি। আমি তোমার আপুকে আচ্ছা করে বকে দিবো।
কে শোনে কার কথা? আরসি কেঁদেই যাচ্ছে । কোনো উপায় না পেয়ে ফ্রিজ থেকে চকলেট নিয়ে এসে আরসি আর অধরার হাতে দিলো। এখন আরসি চুপ।
রাহী অধরকে বললো – তোমার আপু কোথায়?
” রান্না ঘরে।
” আচ্ছা তোমরা চকলেট খাও। আমি আসছি।

রাহী রান্না ঘরের দরজায় গিয়ে নক করলো। আঁচল একবার তাকিয়ে বললো- ওহহ আপনি ।
” হুম – বলে রাহি ভিতরে আসলো।
আঁচল রান্না করছে । রাহীর খুব ইচ্ছে তার বউ রান্না করবে সে পিছনে থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে থাকবে। কিন্তু আজ সে ইচ্ছে চাইলেই পূরণ করতে পারবে অথচ সে সাহস পাচ্ছে না। নিজের মাঝেই সে যুদ্ধ করতে লাগলো। অতঃপর কি যেন ভেবে চোখ বন্ধ করে আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরলো।।
আঁচলের সব কাজ নিমিষেই বন্ধ হয়ে গেলো। আঁচল মোটেই এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। কিছু কি বলা উচিত আঁচলের ? সে ভেবে পায় না।
আঁচলের চোখ বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে রাহীর হাতে পড়লো।
রাহী আচলকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো – আপনি কান্না করছেন কেন?
” কই না তো।
” চোখে পানি নিয়ে আবার সেই পানিকে লুকানোর মিথ্যা প্রচেষ্টা। কান্না করছেন কেন?
” আমার কপালে কি এতো সুখ সত্যি আছে?
” উপরওয়ালা কার কপালে কি লিখে রেখেছে সেটা তো আমরা কেউ জানি না।
” হুম ।।
” আপনার যদি অস্বস্তি লাগে তাহলে আমি চলে যাচ্ছি ।
রাহী আঁচলের কোমড় থেকে হাত সরিয়ে নিতেই আঁচল রাহীর হাত ধরে ফেললো।।
” আমি কি আপনাকে যেতে বলেছি?
” থাকতেও তো বলেন নি।
” হুম ।
” তো আমি কি থাকবো নাকি চলে যাবো?
লজ্জা মাখা মুখে বললো – থাকুন ।।
রাহী আঁচলকে জড়িয়ে ধরে আছে আর আঁচল রান্না করছে। হঠাৎই রান্না ঘরে অধরা চলে আসে । অধরা আসতেই রাহী আঁচলকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়ায় ।
আঁচল অধরাকে বললো- তুমি এখানে কেন?
” আরসি পানি চাচ্ছে। ও তোমার সাথে কথা বলবে না।
আঁচল মুচকি হেঁসে বললো- ওহহ আচ্ছা। কতদিন।।
রাহী বললো- ওহহ হ্যাঁ। আমি তো ভুলেই গেছলাম। আমি তো আপনার বিচার করতে এসেছি।।
অধরা পানি নিয়ে চলে গেলো।
” আপনি আরসিকে মেরেছেন কেন?
” আপনার ফোনের কি বাজে হাল করেছে সেটা একবার দেখুন।
আঁচল ফোনটা পাশে থেকে তুলে রাহীর দিকে বাড়িয়ে দেয়।
খুবই বাজে অবস্থা করেছে । মনে হচ্ছে আছাড় দিয়েছে ।
” কিভাবে হলো এটা?
” এটা দিয়ে খেলছিলো পড়ে গিয়ে এই অবস্থা ।
” হুম । এই জন্য মেরেছেন?
” হুম । এটা কোনো খেলার জিনিস যে ওরা খেলবে।
” না। কই ফোন তো আবার আগের মতো হয়ে যায় নি।
” ফোন আবার আগের মতো হয় কিভাবে।
” ফোন যখন ভেঙে গেছে তখন ওকে মারলেন আমি ভাবলাম মারার পর মনে হয় ফোনটা আবার আগের মতো হয়ে গেছে ।
” মানে?
” ও তো ছোট বাচ্চা। ভুল হতেই পারে তাই জন্য ওর উপর হাত তোলা কি ঠিক? আর মারার ফলে যে ভুলটা শুদ্ধ হয়ে যাবে এমনটাও তো না। যেটা ভুল একবার হয়ে যায় সেটা ভুল থেকেই যায়।
” হুম। কিন্তু শাসন করতে হবে তো। নয়তো বিগড়ে যাবে।
” শাসন করলেই বাচ্চারা সাধারণত বেশি বিগড়ে যায়। আর যদি বাচ্চা টা জেদি হয় তবে তো কোনো কথাই নেই। তবে তাদের যদি ভালো করে ভালোবাসা দিয়ে বোঝানো যায় তবে মনে হয় তারা বুঝবে। আর শাসন দিয়ে বোঝানো জিনিস ঠিক ততক্ষণ স্হায়ী হয় যতক্ষণ শাসনের রেশ থাকে।
“হুম ।
” তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করুন আজ আপনাকে আমার সম্পর্কে কিছু জিনিস জানাবো যেটা কেউ জানে না। আপনিও জানতেন না যদি আপনি আমার বউ না হতেন।
” আচ্ছা।

খাওয়া শেষ করে রাহী আঁচলকে নিয়ে বের হলো।
এখন তারা বিশাল একটা বিল্ডিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আঁচল বিল্ডিং টার দিকে তাকিয়ে বললো- এটা তো এলাকার বিখ্যাত ব্যাবসায়ী আবরার সাহেবের অফিস।
” হুম। আপনি চিনেন তাকে?
” তাকে কে না চেনে?
” আর কি জানেন আপনি তার সম্পর্কে?
” তিনি স্টক করে মারা যান। তার একজন ছেলে আছে। ওনার মৃত্যুর পর তার ছেলে ব্যাবসা দেখাশোনা করেন।
” অনেক কিছু জানেন দেখি। তার ছেলেকে কখনো দেখেছেন?
” না।
” আসুন ভিতরে যাই।
” না আমি ভিতরে যাবো না।

রাহী বেশ কয়েকবার বললে কিন্তু কিছুতেই আঁচল যেতে রাজি হলো না । একপ্রকার জোর করেই রাহী আঁচলকে নিয়ে ভিতরে গেলো।
ভিতরে যেতেই সবাই রাহী কে সালাম দিচ্ছে । এটা দেখে আঁচল খুবই অবাক হয়ে গেলো।
একটু পরেই যখন রাহীর পিএ আসলো তখন আঁচল নিজের মুখটা লুকানোর চেষ্টা করছে।রাহী এটা লক্ষ করলো।
যখন লোকটা বললো- স্যার আপনি হঠাৎ অফিসে?
তখন রাহী বললো- আজ থেকে আমি আব্বুর কেবিনে বসবো। সব ব্যবস্থা করুন ।
” ঠিক আছে স্যার । এটা তো আমাদের জন্য খুবই ভালো সংবাদ । আবরার স্যারের অবর্তমানে আনরা তার সন্তান কে পুরো সময়ের জন্য পাচ্ছি ।
এই কথাটা শুনে আঁচল রিতীমত শক। লোকটা কি বলছে এসব।
” স্যার আপনার সাথে উনি কে?
” ও আমার স্ত্রী।
রাহী আচলকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় লোকটা আঁচলকে দেখে ফেলে।
রাহী আঁচলকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে তার বাবার কেবিনে বসলো।
একটু পরেই তার পিএ রুমে আসলো- স্যার আসবো?
” হুম আসুন ।
” স্যার একটা কথা বলি যদি কিছু মনে না করেন তো।
” হ্যাঁ বলুন।
” ম্যাডামের সম্পর্কে সব খোঁজ নিয়ে তবে কি আপনি বিয়ে করেছেন?
” হ্যাঁ। কেন?
” না মানে, উনি তো একজন
” কি? যৌনকর্মী এটাই বলতে চাচ্ছেন তো?
” না মানে, হ্যাঁ স্যার ।
” আপনি কি করে জানলেন?
লোকটা আর কিছু বললো না।
” নিজের বাসায় বউ রেখে অন্ধকার গলিতে না গিয়ে নিজের বউকে সময় দিন। আগে নিজের চরিত্র ঠিক করুন । আর হ্যাঁ আমি সব কিছু জেনেই বিয়ে করেছি পরবর্তী কোনো দিন আমার বউ নিয়ে কিছু বলতে আসবেন না । তার অতীতের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি তার বর্তমান আর আমিই ভবিষ্যৎ। বুঝতে পারছেন?
মাথা নিচু করে বললো- হ্যাঁ স্যার ।।
” আপনি আসুন।
লোকটা চলে গেলো।
রাহী এখন বুঝতে পারলো আঁচল কেন ভিতরে আসতে চায় নি।

সেদিন অফিস শেষ করে একতোড়া ফুল আর কিছু চকলেট নিয়ে বাসায় গেলো রাহী।
পিচ্চিরা খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে । বাসায় কোথাও আঁচল নেই ।। ছাঁদে গিয়ে দেখে আঁচল দাঁড়িয়ে আছে । পিছনে থেকে আঁচলকে জড়িয়ে ধরতেই আঁচল চমকে উঠে ।।
মুখ ফিরে তাকাতেই রাহী আচলের চোখে পানি দেখলো – কান্না করছেন কেন?
” আজ আমার জন্য আপনাকে আপনার কলিগের সামনে
” আমি কি আপনাকে সেটা নিয়ে কিছু বলেছি?
” না। কিন্তু
” কোনো কিন্তু নয়।৷ আর আমি সব কিছু জেনেই আপনাকে বিয়ে করেছি।
” হুম । আপনি আবরার সাহেবের ছেলে বলেন নি কেন?
” যখন খুব ছোট ছিলাম তখন আম্মু মারা যায়।। এরপর থেকে ভালোবাসা জিনিস টা কি সেটা ভালো ভাবে বুঝে উঠতে পারি নি। আব্বুও সব সময় বাইরে থাকতো। তখন দেখেছি সবাই শুধু আমার টাকার জন্য আমার কাছে আসতো। । কেউ ভালোবাসার জন্য কাছে আসে নি। যখন বুঝতে শিখলাম তখন আব্বুকে বলে দেশের বাইরে গিয়ে কিছু দিন থেকে এসে সোজা এই বাসায় উঠি। তখন থেকে কেউ জানে না আমি কে। যখন দরকার পড়তো তখন বাবার সাথে দেখা করতাম। শুধু অফিসের মানুষ গুলোই জানে। এরপর প্রথম প্রেমে পড়লাম। ভাবলাম সে হয়তো আমায় ভালোবাসে আগলে রাখবে কিন্তু না সেও টাকার খোঁজে ছিলো । এরপর বাবা মারা যায়। এরপর আপনার সাথে দেখা তারপর বিয়ে ।
” তো নিজেকে হাইড করার কারনটা কি?
” আমি এমন একজন কে নিজের জীবনের সাথে জড়াতে চেয়েছিলাম যে টাকাকে না আমায় ভালোবাসবে।
” হুম । আমায় ছুড়ে ফেলে দিবেন না তো?
” কেন?
” বড়লোক মানুষ তো এটাই করে। প্রয়োজন শেষে তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়।
” যদি তাই হতো তবে তোমায় টাকা দিয়ে নিয়ে আসতাম বিয়ে করে নয়।
” হুম ।
” এখন থেকে মাথা নিচু নয় উঁচু করে চলবেন। আর হ্যাঁ আমি আপনার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাই। কেন জানি না আপনার স্পর্শে একটা কোমলপ্রাণ খুঁজে পাই। তাই জন্য আপনাকে আমার ভালো লাগে । আর ভালো লাগে জন্যই ভালোবাসি, ভালোবাসাকে ভালোবাসতেই আমার ভালো লাগে।

রাহীর কথাটা শেষ হতেই আঁচল রাহীকে জড়িয়ে ধরলো । এ যেন এক বুক প্রশান্তি । দুটো ঢেউ কিনারা খুঁজে পেলো। এভাবেই চলুক তাদের আগামীর পথচলা। সুখে থাকুক পৃথিবীর সকল ভালোবাসা ।

ধন্যবাদ।

The End….
To be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here