অতিরিক্ত চাওয়া পর্ব ২৩

অতিরিক্ত চাওয়া {২}
২৩.
———– মাথার স্ক্রু ছিঁড়ে যায়নি? এখনও জীবিত তোমার মাথার স্ক্রু?
আবিরের প্রশ্নে শুধু ভ্রু কুঁচকালো আয়েশা। উত্তর না পেয়ে, আবির তেড়ে আয়েশার হাত চেপে ধরে,
———– সমস্যা কি? এমন উদ্ভট বিহেভিয়ার কেন? আমার সুন্দর ব্যাবহার সজ্য হচ্ছে না?
———— আজরাইলের মতো ব্যাবহার করে, সেটার নাম সুন্দর ব্যাবহার দিলে তো আর সেটা সুন্দর ব্যাবহার হচ্ছে না।
————- আজরাইলের মতো ব্যাবহার করি?
————- অবশ্যই। আপনার ব্যাবহার একদমই জঘন্য।
————- আচ্ছা? তাহলে জঘন্য ব্যাবহার-ই করবো। কি করবি? হাহ?
———— পাপ করেছি এসে। তৃষ্ণা সুস্থ হলে চলে যাবো। আপনি দিন বা দিন জঘ…
বাকিটা আবিরের চেহরার রঙ দেখে আর বলল না। বরং উল্টো ঘুরে বড় শ্বাস নিলো।
আবির আয়েশার বাম কব্জি ধরে নিজের দিক ঘুরিয়ে ফেলে,
———— এসেছিলে নাকি, আমি তুলে নিয়া আসছি? আর কই যাবা? দেখি, আমার পারমিট ছাড়া কোথায় যেতে পারবে।
———— আপনার কথায়?
———— আমার কথায় নানান মিনিস্টার
উঠে_বসে। আর সেখানে তুমি তো ছোট্ট একটা পিঁপড়া। আয়েশা বারবার বলছি। আমাকে রাগিয়ো না। তুমি শুধু-শুধু ছোট কাহিনী কে বড় করে ফেল, আমাকে রাগিয়ে।
আয়েশা স্তব্ধ হওয়ার ভান করল,
————- আচ্ছা। তাহলে আজ থেকে আমি আপনার সেবিকা। জাঁহাপনা যা বলবেন সেটাই মান্য করব। নাহলে পরে দেখা যাবে আমার গলা আর নেই।
আবির চোখ রাঙিয়ে তাকায়,
————- তোমার চঞ্চল মুখটা তোমাকে আরও ডোবাবে। আর ডোবানোর পানি আমি দেব নির্ঘাত।
আয়েশার চিকচিক চোখ দেখে, আবির সরল চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো,
———— আয়েশা, আয়েশা, ও আয়েশা। কেন এমন করছ। আমি এভাবেই বিরক্ত আছি কাজ নিয়ে। আবার তৃষ্ণার খারাপ অবস্থা। এ-র মাঝে তুমিও কেন শুরু করছ। খুব ভালো ভাবে জানো রাগলে সব কাহিনীর ঝাল তোমার উপর তুলবো। আর তুমি চাচ্ছ আমি সেটা করি। তারপর তুমি ড্যাঙড্যাঙ করে তোমার রেস্টুরেন্টে দৌঁড় লাগাবা। এতো বুদ্ধি নিয়ে কিভাবে ঘুমাও? মাথায় জ্যাম লাগবে বেবি। এতো কু-বুদ্ধি ঝেড়ে ফেলো। কারণ তোমার জামাই তোমার থেকে চার-পাঁচ পা আগে হাঁটে। ভাবনা-চিন্তাকে আরও শিক্ষিত করো।
আয়েশার পিটপিট চোখ দেখে, আবিরের মন্তব্য,
———— অন্যরা কি ভাববে এগুলো তোমার ছোট্ট মাথায় ঢুকাতে হবে না। আমি কি বলছি ওগুলো নিয়ে ভাবাভাবি করো কাজে দেবে। এখন রুম থেকে বেরোবে না, একেবারে গোসল সেড়ে বেরোবে।
কথাগুলো বলে তারপর ধুমধাম শব্দে, আবির রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নিজের দিকে সুরু চোখে তাকিয়ে আয়েশা মুখটাকে ফুলিয়ে ফেলল। আপন মনে আবিরকে সাংঘাতিক একটা গালি দিলো।

বিছানায় পা’দুটো টানটান করে শুয়ে তৃষ্ণা। তাঁর মাথার পাশে বসে তাঁকে স্যুপ খাওয়াচ্ছে জয়া। জয়ার চোখে অদ্ভুত যন্ত্রনার ছোঁয়া। যে’টা খেয়াল করে ফুসফুস করছে আমিদ। দাঁড়িয়ে থাকা আমিদ ভাঁড়ি আওয়াজে বলল,
———— এখন আল্লাহর রহমতে তৃষ সুস্থ। তুমি মেহেরবানী করে আর কাঁদিয়ো না। তোমার কান্না-বান্না দেখলে আমার গাঁ জলে যায়।
———— আমি যা করি সেটাতেই তোমার গাঁ জলে। তাতে আমি কি করতে পারি? এখন কি চোখে মুখে সুপার-গ্লু লাগিয়ে দেব?
রুমে উপস্থিত অঞ্জলি হেসে ফেলল,
————- উড়ানো জবাব।
আমিদ অঞ্জলির দিক ছোট চোখে তাকাতেই, অঞ্জলি হুড়মুড়িয়ে তৃষ্ণার জন্য ঔষধ খুঁজতে ব্যাস্ত হওয়ার অভিনয় শুরু করল। জয়া তাঁর আঁচল দিয়ে তৃষ্ণার মুখ মুছিয়ে দিলো। এবং দাঁড়িয়ে থাকা অঞ্জলি কে তৃষ্ণাকে ঔষধ খাওয়ানোর আদেশ দিয়ে নিজে স্যুপের বাটি নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। পিঁছু-পিঁছু আমিদ ও চলে যাচ্ছে। আপাতত তৃষ্ণার রুমে শুধু অঞ্জলি। বাকি সকলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে বাহির থেকে। তাঁরা হয়তো তৃষ্ণার রুমের দিকেই আসছে। অঞ্জলি এক হাতে ঔষধ আরেক হাতে পানির গ্লাস তৃষ্ণার দিক এগিয়ে দিলো। এ-র মধ্যেই হাজির বাড়ির পুরো গ্যাং। আবিদ ধুপ আওয়াজে তৃষ্ণার পাশে আধশোয়া হয়ে শুয়ে পড়লো। অভিও ঠিক সেটাই করলো অপর পাশে। আবিদের উপর হেলান দিয়ে বসলো আয়ুশ। তৃষা বাদামের বাটি সহ তৃষ্ণার হাতের নিচে গিয়ে বসে পড়লো। এবং তৃষ্ণা যত্নশীল ভাইয়ের মতো তৃষার ঠোঁটে লেগে থাকা বাদামের ছোকলা ঝেড়ে দিলো। বাবলু অভির পায়ের নিচে বসে আবারও গেমিস খেলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। ধরতে গেলে পুরো বিছানায় একটুও যায়গায় নেই। তৃষা বাদাম নিজের সাথে তাঁর তিন ভাইয়ের মুখেও তুলে দিচ্ছে। বাবলু খেলার পাশাপাশি নিজেই নিয়ে নিয়ে খাচ্ছে। তৃষ্ণা বাদাম চিবুতে চিবুতে প্রশ্ন করেই ফেলল,
———— বেলী?
আবিদের ছোট উত্তর,
———— ড্রয়িং রুমে বসে।
————- সাথে নিয়ে আসতে।
————- বললাম তো। ইশারায় না করে দিলো।
আয়ুশ মিনমিন করে বলল,
————- না তো করবেই। বেলীর তো লজ্জা আছে।
তৃষ্ণার সোজা জবাব,
————- একদম ঠিক। যেটা আমার একদমই নেই। ভিন্নতার মাঝে যুগলবন্দী ভালো হয়। তারজন্য আমাদের যুগলবন্দী হয়েছে। তাই না আবিদ?
আবিদের সন্দেহজনক প্রশ্ন,
————- কি মিন করছ?
————- তোর আর আরিকার ভিন্নতা মূলক যুগলবন্দীর কথা বোকারাম। তুই যেমন একটু ভীতু প্রেম বিষয়ে, আরিকা হলো সাহসী। তোর পিঁছু পিঁছু গ্রামে চলে এসেছে দেখেছিস। এবং তোকে ডিরেক্টলি প্রপোজ ও করে ফেলল। তারউপর মেয়ে তো কমিশনারের। প্লাস পয়েন্ট হলো ভাই নামকরা ডক্টর। এন্ড গোল্ডেন প্লাস পয়েন্ট হলো মেয়ে সুন্দরীর মাঝে সরলতম। এখন ভাব তোদের যুগলবন্দীর কথা। তোর কি গভীর ভাগ্য ভাই।
অভির বিশ্লেষণ শুনে আবিদ কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইলো,
———— ওঁ ওঁর বাড়ি চলে গেলে ভুলে যাবে।
আয়ুশের মন্তব্য,
————- মনে করিয়ে দিবি। যেভাবে তৃষ ভাই মনে করিয়ে দেয় আমাদের ভাবী কে। গভীর ভাবে মনে করিয়ে দেয়। তাই না ভাই?
তৃষ্ণার চোখ উল্টিয়ে ফেলল । অভির উল্টো জবাব,
———— হ্যাঁ। তারপর ওঁর কমিশনার বাপ আবিদকে হাজতে ভরে রামধলাই দিক।
————- আরিকার ডক্টর ভাই আছে তো। আবার চুটকি দিয়ে ঠিক করে ফেলবে।
আয়ুশ হাসতে শুরু করলো,
————- বোকাসোকা। আমরা থাকতে ওঁর গাঁয়ে হাত কে দেবে? লাগলে আরিকার কমিশনার বাপকে তুলে নিয়ে আসবো।
হটাৎ দরজার থেকে জবাব,
————– তুলতে হবে কেন? আমার বাবা নিজে আসবে প্রস্তাব নিয়ে। এবং নিজে হাতে বিয়ে দেবেন। এখন সেটা বর পক্ষ মানুক আর না মানুক।
আরিকার আওয়াজে আঁড়চোখে দরজার দিক তাকালো আবিদ। আরিকার সাথে বিমান ও আছে। খেয়াল করে তারপর ন্যায়নীতি মোবাইল টিপতে ব্যাস্ত। অভি আওয়াজ করে সিটি বাজালো আঙুলের সাহায্যে।
———— কেয়া বাত, কেয়া বাত। ইম্প্রেস করি ফেলাইছেন ফিউচার ভাবী।
আরিকার চোখ উজ্জ্বলতায় প্রস্ফুটিত,
————- ভাবী? এ-ই, ভাবী বলেই ডাকবে কেমন। শুনতে ভালো লাগছে আমার।
আবিদ চোখ বুঝে ঢোক গিলল। হাতের মোবাইলে আপাতত কোনো মনোযোগ নেই। তারপর ও মোবাইল টিপছে।
আয়ুশের মিষ্টি জবাব,
————- অবশ্যই ভাবী।
আরিকা চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
————- ভাবী বলাতে আমার লজ্জা লজ্জা ভাব থাকা উচিৎ তাই না? আচ্ছা বেলীর চেহারার অবস্থা কেমন থাকে?
আয়ুশ হাসতে লাগলো,
————- বেলী? ওঁকে ভাবী বললে ওঁর চেহরার রঙ লাল হয়ে যায়। তারপর আর কথা বলতে পারে না। যাই বলা হক না কেন ওঁ শুধু মাথা দোলাবে। আর ভাইয়ের চোখের দিক তো তাকাতেই পারে না। আর ভাইকে প্রচন্ড ভয় পায়। এতো ভয় পায় যে কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল করে ফেলে। তুমি যদি বেলীকে গিয়ে বলো
‘ বেলী তোমাকে তৃষ ভাই ডাকছে। ‘ ওঁর মুখের অবস্থা দেখলে তুমি হাসি থামাতে পারবে না। এখন তো একটু কমেছে ওঁর ভয় । আগে আরও বেশি ভয় পেতো। তখন বেলী জানতো না যে ভাই ওঁকে ভালবাসে। তখন যদি ভাই ওঁর সামনে যেতো ওঁ একদম স্ট্যাচু হয়ে যেতো। মানে চিৎকার করে কাঁদবে এমন অবস্থা। মাঝে মাঝে ওঁর ভীতু চেহরা দেখে ভাই ইচ্ছে করে মাথায় টোকা দিতো। আর বেলী ভ্যা করে কেঁদে দিতো। আরেকবার তো ভাই নিজে নিজের কাপড় নষ্ট করে বেলীকে দিয়ে ধুইয়েছে। সেটার ভিডিও আছে মোবাইলে। আবিদ করেছিল। আরও কতো কাহিনী। এখন তুমি লাইভ আরেকটি জিনিস দেখতে পাবে। যেমন ভাই এখন বেলীকে এখানে নিয়ে আসার তাড়া লাগাবে।
তৃষ্ণা চোখ টিপটিপ করল,
————- তুই বিজ্ঞানী? যা বেলীকে নিয়ে আয়।
আরিকা হাসতে উঠে গিয়ে, তৃষ্ণার গাল টেনে দিলো,
————- আয়ে ভাইয়া। তুমি জানো তোমার ব্যাবহার গুলো কতটা হার্ট টাচিং? ইচ্ছে করছে বেলীকে তোমার সাথে সারাজীবনের জন্য তালা মেরে দিতে।
তৃষ্ণার অসহায় গলা,
————- হ্যাঁ করে দাও।
এদিকে অভির একটু-আধটু চোখের চাহনি তে অন্যদিকে তাকাচ্ছে বিমান। তৃষ্ণাকে ইশারা করে বলল,
————- বেলী আব্বুর সাথে বসে, আর বেলী নিজেই উঠতে চাচ্ছে না। হয়তো ঘুম ধরেছে বারবার হামটি দিচ্ছে।
বাবলুর কর্কশ কন্ঠ,
————- কয়েকদিন যাবত ঘুমায় নি তো। খালি কাঁদতে থাকতো। জামাই মারা গেলেও মানুষ মনে হয় এতো কাঁদে না। ও যতটা কেঁদে…।
তৃষ্ণার চাহনি দেখে অভি দ্রুত বাবলুর মুখ বন্ধ করে দিলো। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,
————- কথা নয় শালাবাবু। মোবাইল টিপতে থাকো।
————– তৃষা যা বেলীকে নিয়ে আয়।
তৃষ্ণার আদেশে তৃষা দ্রুত উঠে দৌড় লাগালো। বাবলু মোবাইল টিপতে টিপতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

সোফায় বাবার কাঁধে হেলান দিয়ে চোখ বুঝে বেলী। অপর পাশে আমিদ, আবির আবিদের আব্বু অভির আব্বু। রান্নাঘরে দেখা যাচ্ছে সকল মহিলাদের। আমিদ কথা বলার মাঝে বেলীর দিক তাকালো,
————- বেলী? খারাপ লাগছে? অঞ্জলির রুমে গিয়ে রেষ্ট নিতে পারো।
————- আমি ঠিকাছি।
আনন্দ বেলীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো,
————- চলে যাব। আর কিছুক্ষণ।
আবিরের অসম্মতি,
————- একদম ডিনার সেরে। তার আগে নয়।
এরইমধ্যে তৃষা এসে বেলীর হাত টেনে ধরেছে,
————- চলো তোমাকে আমার ড্রয়িং দেখাব।
অগ্যত বেলী উঠলো। এবং যখন বুঝলো তৃষা কোন রুমে নিচ্ছে, সে হাত ছুটাতে ব্যাস্ত,
————- তৃষা আমি যাব না।
————- ছোট ভাবী যেতেই হবে।
বলতে বলতে টেনে ঠিক তৃষ্ণার রুমে এলো। বেলীকে দেখে আবিদ উঠে দাঁড়ালো। বেলীকে বসতে ইশারা করলে বেলীর জবাব,
————- তুমি বস। আমি আপুর সাথে বসব।
তৃষ্ণার অনুভূতিহীন কন্ঠ,
————- কেন? এখানে কি তেলাপোকা দেওয়া? তুই বসলে তোকে খেয়ে ফেলবে? নাকি আমি খেয়ে ফেলবো?
বেলী আঁড়চোখে বিমানের দিক তাকাচ্ছে। বড় বোনের সামনে এগুলো শুনতে বেশ লজ্জা লাগছে। অবশ্য বেলীর লজ্জা কখন না লাগে আবার। সদা লাগে। আবারও তৃষ্ণার আওয়াজে ভাবনায় ছেঁদ পড়লো,
————- আয়ুশ নিচে কার্পেট বিছিয়ে দে। সেখানে বসবে ওঁ। তাই না? নাকি উঁচু টুল এনে দেব? নিচু টুলে তো তোকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। যন্ত্র লাগবে দেখতে। নাকি টেবিলে বসবি। না, না পাশে বসবি নাহলে দাঁড়িয়ে থাকবি। কিন্তু রুমের বাহিরে যাওয়া চলবে না।
বেলী ছোট ছোট চোখ করে নিচে তাকিয়ে। আরিকা হাসি থামিয়ে বলেই ফেলল,
————- বেলী তুমি ভাইয়ের পাশেই বস। নাহলে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
বেলী মাথা নাড়াচাড়া করে দাঁড়িয়েই রইলো। তৃষ্ণা একধ্যানে বেলীর দিক তাকিয়ে। আরিকার বুক ধুক করে উঠছে। তার ও তো সন্ধ্যা থেকে শুধু আবিদের দিক তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে তো মেয়ে। এতো লজ্জাহীন হলে তো মানাবে না। পরে দেখা যাবে আবিদ তাঁকে পছন্দই করবে না। বলবে লজ্জাহীন গার্লফ্রেন্ড লাগবে না। তখন?
আবিদের দিক তাকাতেই দেখলো আবিদ তাঁর দিক তাকিয়ে। এবং চোখাচোখি হতেই আবিদ অন্যপাশে তাকাই ফেলল। আরিকা হালকা হাসলো।
————- বেলী পানির গ্লাস টা দে তো।
বেলী অভির দিক তাকালো। কারণ অভি ওখানেই বসে। অভি উঠে বিমানের হাত ধরে বেরিয়ে গেলো। যেতে যেতে বলল,
————- আমি দিলে পরে আমাকে পাওয়া যাবে না। খুবই দুঃখিত বেলী।

চারপাশে তাকিয়ে বেলী পানির গ্লাস কোনোভাবে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। তৃষ্ণা বেলীর আগামী পদক্ষেপ এ-র আশায়। আরিকা মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আগে কি হবে দেখার জন্য । আবিদ আরিকার কৌতূহল চেহরার দিক তাকিয়ে।
————- এক গ্লাস পানির জন্য অনন্তকাল বসে থাকব।
তৃষ্ণার খোঁচা মাড়া কথায় বেলী পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। এবং তৃষ্ণা বেলীর হাত ধরে পাশে বসালো। পানির গ্লাস বেলীর মুখে ধরলো,
————- পুরো পানি শেষ করবি।
————- আমি কি বলেছি পানি খাব।
————- আমি বলেছি তাই খাবি।
বেলী অভিমানী চোখে পানি শেষ করলো। এইবার তৃষ্ণা বেলীর আঙুল নাড়াচাড়া করতে করতে প্রশ্ন করলো,
————- এখন তোর সমস্যাটা কি বল? এই বাড়িতে আসলে কি ঢং বেড়ে যায়?
আরিকা চোখের ইশারা দিয়ে আবিদের হাত ধরে রুম থেকে বাহিরে চলে যাচ্ছে। বেলী অসহায় চোখে তাকিয়ে তাঁদের যাওয়ার পানে।
বেলী হালকা স্বরে বলল,
————- বড়রা দেখলে খারাপ ভাববে। আপনি অন্তত একটু বুঝ….
————- তুই বড় না আমি?
————- আপনি।
————- তাহলে বুঝে বেশি কে?
————- আ..আপনি।
————- পাকনামী কে করছে।
বেলী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
————- পাকনামী?
————- তো? কি করছিস? জ্ঞ্যান দিচ্ছিস? তোর কি মনে হয় আমার নেই?
বেলী মিনমিন করে বলল,
————- নেই-ই তো।
তৃষ্ণার বাঁকা হাসি দেখে বেলীও হালকা হেসে ফেলে।
হঠাৎ,

————- আই লাভ ইউ টু।
তৃষ্ণার এমন কথায় চমকে যায় বেলী, থেমে থেমে তাঁর জবাব,
————- আমি লা..লাভ ইউ বলিনি তো।
————- এখনি তো বললি।
————- কখ..কখন?
————- আগে কি বললি।
————- আমি কিছুই বলিনি।
————- কি কিছু বলোনি?
————- লাভ ইউ?
————- আই লাভ ইউ টু।
বেলী স্তব্ধ মেরে বসে রইলো। বুক ধুকপুক করছে, হাত-পা কাঁপছে কেন? মাথাটাও ধরে আসছে…..

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here