অতিরিক্ত চাওয়া পর্ব ৩৪

অতিরিক্ত চাওয়া { ২ }
৩৪|

অতিরিক্ত রাগে তৃষ্ণার মাথা ধরে আসছে। অবস চাহনিতে কিছুক্ষন যাবত ফোনের স্ক্রিনের দিক তাকিয়ে। তারপর আবিদের দিক তাকালো,
— ডোন্ট ট্যাল মি বেলী এগুলো দেখেছে?
আবিদ অসহায় ভাবে তাকালো। তৃষ্ণা ফোন আছাড় দেওয়ার আগেই আবিদ দ্রুত ফোন কেঁড়ে নিলো।
— ভাই এটা অভির ফোন।
— বেলী কিভাবে পেলো?
অভি বলতে লাগলো,
— রাত্রে পাঠিয়েছে এগুলো বিমান। আর সাথে আমার কানে আগুনও। ওর কথায় বোঝা গেলো এগুলো বেলীর ফোনে পাঠানো হয়েছে।
তৃষ্ণা দ্রুত বেলীকে কল লাগালো। আবিদ অসহায় গলায় বলল,
— ফোন বন্ধ।
— আহ! শিট।
তৃষ্ণা দ্রুত পায়ে বিছানা ছেড়ে তৈরি হতে লাগলো। আবিদ নিজেও অন্যরুমে গিয়ে তৈরি হওয়া শুরু করলো। সেও যাবে তৃষ্ণার সাথে। বেলী এগুলো দেখার পর একদমই ভালো নেই। মেয়েটা এখনও বাচ্চা। নতুন অনুভূতির মাঝে এমন তেতো অনুভূতি ওর জন্য কষ্টকর হবে। এর মাঝেই আবির রুমে আসে,
— তৃষ?
— হ্যাঁ।
— একটু ওপার যেতে হতো…
— আয়ুশ যাবে৷
আবির অভিকে ইশারা করলো,
— কোথায় যাচ্ছে?
— ভাইর সব যেখানে শেষ হতে যাচ্ছে সেখানে যাচ্ছে।
— কিসব বলছিস?
— রোমিও হয়ে ঘোরার ফল পাচ্ছে। আজ নিশ্চিত ব্রেক-আপ ট্রিট পাব। এগুলো দেখার পর বেলী তো,
কিন্তু, অভি নিজেই চুপ হয়ে যায় তৃষ্ণার অতি চিন্তার চেহরা দেখে।
ভাই তার ঝরের গতিতে রেডি হচ্ছে। রীতিমতো আশেপাশে কি হচ্ছে কোনো ধ্যান নেই।
আবির আবারও বলল
— কাহিনি কী?
— আর্বিদার বান্ধুবী শ্রাদ্ধা ওটার সাথে রিলেশনে ছিলো । রিলেশনে থাকাকালীন চুম্বন তো করেছিল। সেগুলোর ছবি আর ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। তাও যেমন তেমন যায়গায় না। বেলীর ফোনে।
— এমন ভয়ানক সাহস কার?
— বেলীর ফোনটা প্রয়োজন। যেই নাম্বারে ক্লিপ গুলো সেন্ড হয়েছে। তারপর নাম্বার দেখে লোকেশন ট্রেস করা যাবে নাকি। বা ফারদার কোনো ক্লু পাওয়া যাবে নাকি দেখতে হবে।
আবির শ্বাস ফেলে তৃষ্ণার দিক এগিয়ে গেলো। এর মাঝে আবিদ চলে এসেছে। আবির তৃষ্ণার সোলডারে হাত রাখল।
— চিন্তা করিস না।
তৃষ্ণা ধপ করে বিছানায় বসলো।
— ইটস ন’ট অ্যা সিম্পল ম্যাটার মামা। ( দু’হাতে মাথা চেপে।) ওকে আমি কিভাবে কি দিয়ে বোঝাব? ও কিভাবে রিয়েকশন দিবে ভাবতেই আমার ভয় হচ্ছে।
আবির অসহায় গলায় বলল,
— একমাস বেলীকে শুধু দেখেই কাটাতে হবে ভাইর। ধরা আর লাগবে না। মেয়ে মানুষ সহজে যেতে দিবে না এই কাহিনী।
তারপর আবিরকে ইঙ্গিত করে,
— মাম্মা, তুমি তোমার এক্সদের বাড়িতে হামলা দিয়ো। ক্লিপক্লুপ লুকিয়ে রেখেছে নাকি। পরে আবার মামীর কাছে সেন্ড মেরে দিলে তো…
আবির ধমকে উঠলো,
— আবিদ চুপ থাক।
আবিদ চুপ হয়ে গেলো। আবির তৃষ্ণার মাথায় হাত রাখলো।
— এখন আর যেতে হবে না। দুপুর দিকে যাওয়া হচ্ছে বর পক্ষ হয়ে। তখন বেলীকে পারসোনালি বোঝাস।
তৃষ্ণা রাগী কন্ঠে ভয়ানক এক গালি দিলো।
— এই বিচ্ছিরি ব্যাপারটা যেই ******** করেছে। হাতের সামনে পেয়ে নেই। আই ফাকিং গননা কিল দ্যাট বাস্টার্ড।
আবির তৃষ্ণার সোলডারে হালকা চাপড়ে তাকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে।
এবার আবির আবিদকে প্রশ্ন করলো,
— আরিকাদের আসার কথা ছিলো তো?
— হ্যাঁ। আসবে। আমাদের বেরোনোর আগেই আসবে বলল। ওর ভাই একা ছাড়বে না। আর ওর ভাইয়ের সার্জারী আছে একটা। কমপ্লিট করে আসবে।
— দ্যাটস গুড।

——————–

ব্রিজ থেকে বাচ্চারা চেঁচাতে চেঁচাতে আসছে,
— বর আসছে, বর আসছে।
গেইট আটকানোর সময় বেলী নেই। সে দূর থেকে আড়ালে। তৃষ্ণা ঠিক তাকেই খুঁজছে। বেলী এক ধ্যানে তাকিয়েই রইলো তৃষ্ণার দিক। গেইট ধরেও মুসকিলে পড়লো কন্যাপক্ষ। বর পক্ষ টাকা দিচ্ছিলোই না। তৃষ্ণার খোঁজাখুঁজি দেখে আবিদ সরাসরি করলো,
— আমার ভাইর ছোট শালী কই?
বাবলু মহাসুখে জবাব দিলো,
— আমি আনছি।
অগ্যত বেলী আসলো তার গ্রাউন ধরে ধরে। তৃষ্ণার সাথে চোখাচোখি ব্যাপারটা মাত্র একবারই হলো। অথচ, পুরোটা সময় তৃষ্ণা বেলীর একপলকের আশায়। বারবার ইশারা করছে। কিন্তু বেলী তাকাচ্ছেই না। একবার দাঁত কিড়মিড়িয়ে সকলের সামনেই ধরতে গেলো। হঠাৎ সামনে আনন্দ আসায় থেমে যেতে হলো। টাকা পেয়ে গেইট ছেড়ে দিলো। আবিদ গেলো বেলীকে মানাতে।
— বেলল্লল্লী? ভাবী?
বেলী সোজা প্রশ্ন,
— কিসব বলছ?
বেলী আবিদকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিচ্ছিলো তখনই চেনা আওয়াজে ফিরে তাকালো পেছনে। আরিকা? মেয়েটা আরও সুন্দর হয়েছে কি? আবিদ নিজেও দ্রুত পেছনে ফিরলো। আরিকা মাত্র গ্রামে এসেছে। এবং সোজা এখানে। তার সাথে খুব সুন্দর এক ভদ্রলোক। আরিকার ডাক্তার ভাই। এবং সাথে তৃষা ও আছে। সে এসেই বেলীকে ধরে বসলো। বেলী বলল,
— কেমন আছেন আপু?
— চমৎকার। ( পাশের ভদ্রলোক কে দেখিয়ে) আমার ভাই।
— আসসালামু আলাইকুম।
লোকটাও হেসে সালাম ফেরত দিলো। আরিকা সকলের সামনে আবিদের হাত ধরে ফেলল। এবং তার ভাইকে দেখালো,
— আমাদের মানিয়েছে না?
ভদ্রলোক বোনের চুল টেনে ধরলো,
— কবে বুঝবি কখন কোনটা করতে হয়?
অগ্যত আবিদ মাথা চুলকিয়ে অন্যপাশে চলে যাচ্ছে।

কাজিন এবং আরও মেয়েদের মধ্যে নতুন চর্চা শুরু হলো তৃষ্ণার খালাতো বোন আর্বিদাকে নিয়ে। আর্বিদার সাথে রয়েছে আরও কিছু মেয়েরা। কিন্তু, সকলের মধ্যে আর্বিদা ফুটে উঠেছে। মেয়েটার চাহনিটা আজকে কেমন অন্যরকম লাগলো বেলীর কাছে। কিভাবে যেনো তার দিক তাকাচ্ছে। পুরো বিকেল জুড়ে বেলী তৃষ্ণাকে এভোয়েড করে চলল। মা-বাবার আশাপাশ লেগেই ছিলো। যার কারণে তৃষ্ণা পাশ ঘেঁষতে পারে নি।এইযে লোকটা আজকে ফরমাল লুকে তৈরি হয়ে এসেছে। কি মারাত্মক দেখাচ্ছে। মেয়েরা ইচ্ছে করে করে তার আশপাশ ঘুরাঘুরি করছে। বারবার লুক দিচ্ছে। এগুলো বেলী খুব ভালোভাবেই দেখছে। মুখ বুঝে সহ্য ও করছে৷
বেলীর কাজিন গুলো দিব্বি বরযাত্রীদের সাথে আলাপে মত্ত। এর মধ্যে তৃষ্ণা কয়েকবার এসেছে। এবং তার কথা বলার চেষ্টা ছিলো এমন,
— বেলী? শোন না,
বেলী এই প্রথম তৃষ্ণার নার্ভাসন্যস অনুভব করতে পারলো। তারপরও সে মুখ খুলল না। অন্যদিকে চলে গেলো। যখন অন্যপাশে গিয়ে একা দাঁড়ালো দেখা গেলো তার সামনে আর্বিদা এসেছে। এসে সোজা প্রশ্ন করে ফেলল,
— তোমার নাকি ছোডদার সাথে রিলেশন আছে?
বেলীর স্বাভাবিক জবাব,
— হ্যাঁ। আপনি জানতেন না?
— তোমাদের মাঝের ডিফারেন্স বুঝেছ?
— ডিফারেন্স দিয়ে কি হবে? তার আমায় লাগবে আমার তাকে লাগবে। দ্যান, হোয়াট সুড আই ডু উইথ ডিফারেন্সেস?
— বয়স অনুযায়ী তুমি বেশিই পাকনা। ভাইর আশেপাশে থাকারও যোগ্যতা রাখনা। এটা মাথায় নিচ্ছো না কেন? বড়লোক পেয়ে গলায় ঝুলে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছো। বয়স, জাত, ধর্ম, ব্যবধান কিছুই চোখে নিচ্ছো না। লজ্জা করে না?
বেলী তার হাতে থাকা ফোনটা আর্বিদার দিক ঘুরিয়ে দেখালো। ওন করে রাখা রেকর্ডিং টা বন্ধ করে, সেটা প্লে করলো। আর্বিদার মাত্র বলা কথাগুলো বাজতে লাগলো। বেলী রেকর্ডিং বন্ধ করে বলল,
— আপনাকে ছোট বোন ভাবে। এমন কিছু শুনলে তার আশেপাশে যাওয়া কেন, ছোডদা ডাকার অযুহাত ও পাবেন না। বি গুড। আর হ্যাঁ, আমার লজ্জা সবকিছুতে আসে না।
শুধু তার সামনেই আসে৷
বেলী এবার সোজা ঘরে প্রবেশ করলো। দেখা গেলো তৈরি হওয়া বিমান অলরেডি কান্নাকাটি শুরু করেছে। বাবা, মা আর বাবলুও কান্না করছে। বেলীর চোখের পানি এবার আর বাধ সাধলো না। অনায়াসে চোখের পানি গাল বেয়েই যাচ্ছে। বেলীর হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে। এতো ধাক্কা সে কিভাবে নিবে?

বিমানকে তুলে দেওয়ার সময় বিমানের এতো কান্নাকাটি দেখে অভি বারবার বলছে ,
— কষ্ট হচ্ছে। থাক, পরে নেয়া যাবে। ও থাকুক এখানে।
আমিদ হালকা হেসে বলল,
— চুপ থাক গাধারাম। গিয়ে বস গাড়িতে।
বিমানের সাথে পাচজনকে পাঠানো হবে। বেলী, বাবলু আর বিমানে তিন কাজিন। কথা হচ্ছে, বেলী কাঁদছে আর বলছে সে যাবে না। তৃষ্ণা তো বেলীর কান্না দেখে রীতিমতো বারবার তার দিক আসছে আর বলছে,
— যখন বিমানকে মনে পরবে এখানে রেখে যাবে।
তুই কাদিস না।
তৃষ্ণার কথায় মনে হচ্ছে বেলীর কান্নার বেগ বাড়লো। বিমানকে এক প্রকার জোর করেই গাড়িতে তোলা হয়। আনন্দ প্রায় ভেঙে পড়েছে। বারবার অভির হাত ধরছে তার মেয়েকে দেখে রাখার জন্য। আমিদ এবং চৌধুরী বাড়ির সবাইকে বারবার করে বলে যাচ্ছেন তার মেয়েকে দেখে রাখার জন্য।

বেলী যাবে না। কিন্তু ঘর থেকে তাকে এক প্রকার জোর করে এনেছে আয়ুশ, আবিদ, তৃষা। বেলীর ‘ যাবো না। আমি যাবো না। ‘ কেউ শুনলো না। বেলীকে গাড়ির পেছনে দিয়ে দিলো। পাশে সিট ফাঁকা দেখেই বেলীর মন আনচান করতে লাগলো,
— এখানে আর কাকে বসাবেন? আমি আপুর গাড়িতে বসব।
বেলীর কথা শেষ হবার আগেই, তৃষ্ণা এসে তার সাথে প্রায় ছুঁইছুঁই হয়ে বসে। বেলী শ্বাস মনে হচ্ছে আটকে যাচ্ছে। চেনা পারফিউমের ঘ্রাণ। বেলী দরজা ধরলো নেমে যাবে। দেখা গেলো তৃষ্ণা তার হাত চেপে ধরে,
— আবিদ গাড়ি স্টার্ট কর।
আরিকা এসে বসতেই আবিদ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেয়। বেলী চেঁচাচ্ছে,
— আমি যাবো না। একদম যাবো না। গাড়ি থামান।
গাড়ির দরজা লক করে, তৃষ্ণা নিজের শরীর পুরো বিলিয়ে দিলো সিটে। তারপর এক নজরে তাকিয়ে রইলো বেলীর দিক। বেলী আবিদকে ভয়াবহ ভাবে বলছে,
— আবিদদদদ্দদ্দদ্দদ্দদ। দরজা খুলেন। এক্ষুনি।
— স্যরি ভাবী।
বেলী রাগী কন্ঠে তৃষ্ণাকে বলছে,
— দরজা খুলুন। আমি যাবো না।
— বেলী?
— দরজা খুলুন যাবো না আমি।
আধশোয়া হয়ে থাকা তৃষ্ণা বেলীর কোমর টেনে নিজের উপর নিয়ে আসলো। আচমকা টানে হতভম্ব বেলী। পরমুহূর্তেই চেঁচালো,
— আমাকে ধরবেন না। ছাড়ুন। স্পর্শ করবেন না আমায়।
তৃষ্ণার শক্তি আরও বেড়ে গেলো। বেলী দু’হাত দিয়ে তৃষ্ণার বুকে ঘুষি দিতে লাগলো,
— ছাড়ুন। ধরবেন না আমায়।
কিন্তু, তৃষ্ণা এক ধ্যানে বেলীকে দেখতে লাগলো। বেলী নিজের সব শক্তি দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টায় লেগে। একপর্যায়ে নিজেকে ছাড়াতে না পেরে কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বলছে,
— ছাড়ুন।
তৃষ্ণা বেলীকে ধরেই সোজা হয়ে বসলো। বেলীকে জোর করে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ধীর আওয়াজে বলল,
— আম স্যরি। ভ্যারি স্যরি। এমন কিছু কখনও হবেনা। আই প্রমিজ। প্লিজ। তাকা আমার দিকে। বেলী?
বেলী চোখ বন্ধ করেই বলে যাচ্ছে,
— ছাড়ুন । ধরবেন না।
তৃষ্ণা বেলীর মুখ নিজের দিক উঁচু করে ধরে।
— চোখ খুল। তাকা আমার দিকে।
— না।
— চুমু খাবো?
— বেলী দ্রুত মাথা অন্যপাশে নিতে চাইলে তৃষ্ণার শক্তির সাথে পারেনা। বেলী অসহায় গলায় বলল,
— ছিঃ। গাড়িতে…
আর না বলে নিজেকে আবারও ছাড়াতে চাইলেও পারছে না। তৃষ্ণা পরম যত্নে বেলীর মুখে পানিতে লেপ্টে থাকা চুলগুলো কানে গুঁজে দিলো। চোখের পানি মুছে দিচ্ছে আর বেলীর চোখের পানি আবারও বন্যার ধারায় বইছে৷ চোখ বুঝে থাকা বেলী অনুভব করলো তৃষ্ণার ঠোঁট তার চোখের উপর। তৃষ্ণার কন্ঠ,
— আম স্যরি। এমন কিছু আর কখনও হবেনা। তোর রাগ হচ্ছে তো? নে আমাকে মার। যতটা ইচ্ছে। চোখ খুল প্লিজ?
এবার বেলী চোখ খুলল। তৃষ্ণার চোখে নিজের চোখ আটকে রইলো। লালচে হয়ে আছে তৃষ্ণার চোখ। তার ধীর আওয়াজ,
— আর কখনও হবেনা এমন। আই প্রমিজ। প্লিজ এমন করিস না। আমি একদম নিতে পারছি না। আই লাভ ইউ…
বেলী আবারও কাঁদতে লাগলো। এবার সে ধীরে নিজের মাথা তৃষ্ণার বুকে রেখেই কাঁদতে লাগলো।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here