অন্তহীন পর্ব -১৯+২০

#অন্তহীন💜
#পর্ব_১৯
#স্নিগ্ধা_আফরিন

বৃষ্টির পরের পরিবেশ স্নিগ্ধতায় ছেয়ে আছে। পশ্চিম দিগন্তে আদিত্য প্রায় ডুববে ডুববে। মেহেদী রাঙ্গা অম্বর দেখলেই যেনো নেত্র জুড়িয়ে যায়। দখিনা বাতাসে কিশোরীর চুল গুলো উড়ছে। ছাদের রেলিং এর উপর বসে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে চৈতি। চৈতি পড়ে যেতে পারে বলে চৈতির কোমর জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে প্রহন।
চৈতি ঊর্ধ্বদৃষ্টে আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাসীন গলায় বললো,”আপনি অনেক ভয়ংকর কথা বলেন।যা শুনলে আমার বুকের বা পাশে ধক করে উঠে।”

চৈতির কথা শুনে হাসলো প্রহন। চৈতি কে রেলিং এর উপর থেকে নামিয়ে দিয়ে বললো,”আমি সার্থক।”

প্রহনের উত্তর শুনে ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল চৈতির। বুঝতে না পেরে বললো,”মানে?”

“মানে?বড় হও বুঝতে পারবে। এখন নিচে চলো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।”

চৈতি আর কিছু বললো না।জানতে ও চাইলো না।কারন সে ভালো করেই বুঝতে পেরে গেছে বকবক করে মাথা নষ্ট করলেও প্রহন কিছুই বলবে না।নিজ থেকে বুঝে নিতে বলবে।জানা আছে চৈতির।
প্রহন ছাদ থেকে নামার আগে চৈতি নেমে পড়ে।ড্রইং রুমের সোফায় বসে চা খাচ্ছেন রেদোয়ান চৌধুরী।
চৈতি কে দেখে হাত দিয়ে ইশারা করে ডাক দিলেন। চৈতি মুচকি হেসে এগিয়ে যায় সে দিকে। রেদোয়ান চৌধুরীর পাশে বসে নিজ থেকেই বলে,”আব্বু আপনাকে যে চকলেট এর কথা বলে ছিলাম ভুলে গেছেন তাই না?”

চৈতির কথা শুনে জিভে কামড় দিলেন রেদোয়ান চৌধুরী।যার অর্থ তিনি ভুলে গিয়ে ছিলেন।
অপরাগতা প্রকাশ করে বললেন,”সরি মা। আমি ভুলে গেছি।বয়স বেড়েছে তো।বুড়ো মনের খেয়াল ছিল না।”

চৈতি মুচকি হেসে বললো,”কিচ্ছু হবে না। আপনার ছেলে আছে না। উনি না হয় নিয়ে আসবেন।”

প্রহন সেই সময় সিঁড়ি বেয়ে সে দিকে আসছিল। চৈতির কথা শুনে দ্রুত এগিয়ে এসে বললো,”কী আনবো আমি? কিছু আনতে পারবো না।”

প্রহনের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল চৈতির।বসা থেকে উঠে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল। মিসেস ইয়াসমিন তখন বিকেলের নাস্তা বানাচ্ছিলেন। চৈতির গোমড়া মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,”কী হয়েছে?মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

চৈতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৌন কন্ঠে বললো,”নাহ!কিছু হয়নি।”

মিসেস ইয়াসমিন চৈতির দিকে এগিয়ে এসে বললেন,”প্রহন কিছু বলেছে?”

“নাহ!কী বলবে?বাদ দাও তো।”

“ওহ বুঝতে পেরেছি।মা বাবার কথা মনে পড়ছে নিশ্চয়ই?”

চৈতি উত্তর দিলো না। মাথা নিচু করে ফ্লোরে পায়ের আঙ্গুল ঘষতে লাগলো।
বসার ঘর থেকে প্রহনের গলার স্বর শোনা যাচ্ছে।সে চিল্লিয়ে বলছে,”এক কাপ চা দিয়ে যাও আমাকে।”

মিসেস ইয়াসমিন মুচকি হাসলেন। চুলার উপর থেকে চায়ের পাতিল নামিয়ে কাপে ঢেলে চা বানিয়ে দিলেন। চৈতির দিকে চায়ের কাপ টা এগিয়ে দিয়ে মিসেস ইয়াসমিন বললেন,”যা ওরে চা টা একটু দিয়ে আয়।”

চৈতি মিসেস ইয়াসমিন এর মুখের দিকে তাকিয়ে তার হাত থেকে চায়ের কাপ টা নিলো।যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মিসেস ইয়াসমিন পেছন থেকে ডেকে বললেন,”চৈতি শোন..”

চৈতি থামলো। পেছনে ফিরে মিসেস ইয়াসমিন এর দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকালো।
মিসেস ইয়াসমিন হাতের ইশারায় কাছে ডাকলেন চৈতি কে। চৈতি ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে যায়। মিসেস ইয়াসমিন চৈতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,”প্রহন শুধু তোর জন্য আমাকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলে ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছে।”

“জানি তো আমি। বলেছেন আমাকে কিন্তু শুধু যে আমার জন্য আসছে তা জানতাম না।”
শেষের কথাটা একটু অবাক হয়েই বললো চৈতি।

“ওরে একটু সময় দিস মা।ওর কাছাকাছি থাকিস।”

মিসেস ইয়াসমিন এর কথা শুনে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো চৈতির। চৈতি ভিতী কন্ঠে বললো,”আমি প্রস্তুত না ভালো মা।”

চৈতির কথা শুনে মিসেস ইয়াসমিন ভ্রু যুগল কুঁচকে কিছুক্ষণ চুপ করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিসেস ইয়াসমিন কে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথা নিচু করে ফেলল চৈতি। মিসেস ইয়াসমিন ফিক করে হেসে উঠলেন।হাসি যেন থামছেই না তার।
চৈতি বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে চোখ বড় বড় করে মিসেস ইয়াসমিন এর দিকে তাকিয়ে রইল।

মিসেস ইয়াসমিন কোনো রকম হাসি থামিয়ে বললেন,”মেয়ে আমার অনেক কিছুই বুঝে। কিন্তু মা আমি তো অন্য কিছু কে উদ্দেশ্য করে বলি নাই। আমি শুধু বলেছি, প্রহনের পাশে থাকতে।ওর প্রতি একটু খেয়াল রাখতে।ওর কাছাকাছি থেকে ওর ভালো লাগা খারাপ লাগা গুলো জানতে।”

মিসেস ইয়াসমিন এর কথার অর্থ বুঝতে পেরে লজ্জায় নুয়ে পড়লো চৈতি।এক নিমিষের জন্য মনে হলো,ফ্লোর ফাঁক হয়ে যাক।সে ভেতরে ঢুকে যেতো।মনে মনে নিজেকে নিজেই ইচ্ছা মতন বকলো।”ইশশ কী বলে ফেললাম”। ভাবতেই লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে।

মিসেস ইয়াসমিন হাসতে হাসতে বললেন,”যা যা, জলদি যা।চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

চৈতি দ্রুত পায়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মিসেস ইয়াসমিন এর সামনে পড়লেই লজ্জায় তাকাতে পারবে না।

বসার ঘরে এসে দেখে কেউ নেই। রেদোয়ান চৌধুরী ও নেই। প্রহন ও নেই। চৈতি ভাবলো প্রহন হয় তো রুমে আছে তাই সে রুমে চলে গেল। রুমে এসে সে সত্যিই প্রহন কে দেখলো। প্রহন কে দেখলেই লজ্জা লজ্জা লাগছে কেন জানি।হয় তো তখন কার ঘটনায়। প্রহন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা খুঁজছে। চৈতি প্রহনের দিকে চায়ের কাপ টা এগিয়ে দিয়ে বললো,”আপনার চা।”

প্রহন মুচকি হেসে চৈতির হাত থেকে চায়ের কাপ টা নেওয়ার সময় চৈতির মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”তোমার মুখ এত লাল কেন পিচ্চি বউ?”

একটার পর একটা কথায় লজ্জার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে শত গুণ। প্রহনের মুখে পিচ্চি বউ ডাকটা শুনে মুখের লালাভ আভা বেড়ে গেলো আরো কয়েক গুণ।

“শুনুন, আপনি এই সব নামে ডাকবেন না।”

চৈতির কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে গেলো প্রহনের। চায়ের কাপ টা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে চৈতির দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে যেতে লাগলো প্রহন। অভাবিত রুপে প্রহন কে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে চমকে উঠলো চৈতি। প্রহন এগিয়ে গেলে সে পিছিয়ে যায়।যেতে যেতে একটা সময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় চৈতির।‌”দে-দে-দেখুন আপনি এ-এই ভাবে এগোবেন না। হৃদয়ের স্পন্দন এর গতি বেড়ে মরে যাবো আমি।”
কথা আটকে আটকে বললো চৈতি। প্রহন তার পাশের দেয়ালে হাত রাখতেই কেঁপে উঠে চোখ মুখ খিঁচে ফেললো চৈতি।
চৈতির মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে প্রহন। মুখের সামনে আসা চুল গুলো কে কানের পিছে গুঁজে দিল আলতো করে। প্রহনের আলতো স্পর্শে কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে যায় চৈতির।কান গরম হয়ে গেল। লজ্জার লালাভ আভায় আচ্ছাদিত হলো নবিনা কিশোরীর আনন খানি। চৈতির লজ্জায় নুয়ে পড়া মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে প্রহনের। চৈতি কে আরো একধাপ লজ্জায় ফেলতে চৈতির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে বললো,”আমার শয়তান মনে শয়তানি ইচ্ছে উদয় হয়েছে।”

“দেখুন আমি এবার দম বন্ধ হয়ে মরেই যাবো নিশ্চিত।”

চৈতির কথা শুনে হাসতে হাসতে চৈতির কাছ থেকে দূরে সরে এলো প্রহন।”শুনো আমি তোমাকে পিচ্চি বউ বলেই ডাকবো।যখন যা বলে ডাকতে মন চাইবে তখন তা বলেই ডাকবো।এতে তোমার ভালো লাগলো কিংবা না লাগলো তাঁতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা।বুঝছো?না বুঝলে নিজে নিজেই বুঝে নাও।”

অসহায় দৃষ্টিতে প্রহনের দিকে তাকিয়ে আছে চৈতি।বিড় বিড় করে বললো,”কী এক মহাজ্বালা। উনি কি বুঝেন না আমার লজ্জা লাগে।”

চৈতির বিড় বিড় করে বলা কথা টা কান এড়িয়ে যায় না প্রহনের। চায়ের কাপ টা হাতে নিতে নিতে বলে উঠলো,”আমি বুঝলাম না, লজ্জাবতী গাছের পাতা ছুঁলে ওরা লজ্জায় নুয়ে পড়ে কিন্তু তোমাকে তো ছোঁয়া দূরের কথা সামান্য বউ বলে ডাকলেই এত লজ্জা।”

চায়ের কাপে চুমুক দিতেই বিরক্ত হলো প্রহন।চা ঠান্ডা হয়ে শরবত।

“খান চা শরবত খান। আমি আর গরম করে দিতে পারবো না।”কথাটা বলেই চৈতি রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে প্রহন চৈতির ওড়নার কোনা ধরে টান দেয়। চৈতি থেমে যায়। প্রহন চৈতির দিকে এগিয়ে এসে চৈতির দিকে তাকিয়ে বললো,”কোনো লোন তো আমায় দাও নি। তার পর ও তোমার প্রতি আমার এত ইন্টারেস্ট বেড়ে যাচ্ছে কেন?”
#অন্তহীন💜
#পর্ব_২০
#স্নিগ্ধা_আফরিন

প্রকৃতি তখন ধীরে ধীরে নিশিথীনির গাঢ় অমায় আচ্ছাদিত হয়ে উঠছে।অন্তরীক্ষে অর্ধ চন্দ্র টা এক পাশে হেলে পড়েছে। শুকতারা টা মিটিমিটি জ্বলছে। নগরীর বড় বড় অট্টালিকার কোথাও আঁধার দূর করতে জ্বলে উঠছে আলো। আবার কোথাও অন্ধকারি রাজত্ব করছে।বিরতিহীন গাড়ির শা শা শব্দ জানান দিচ্ছে নগরীর ব্যস্ততা কমেনি বরং বেড়ে চলেছে। চায়ের কাপে আয়েশ করে চুমুক দিচ্ছে কেউ। যদিও এটাকে শান্তির চা বলা যায় না।ঠান্ডা শরবত বললেই চলে।না চাইতেও বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসির আভাস। দৃষ্টি তার সামনের মেয়েটার দিকে আবদ্ধ।ডান হাত দিয়ে বা হাতের আঙ্গুল মোচড়াচ্ছে চৈতি।ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে প্রহনের দিকে।”চা টা গরম করে দিবো না বলেছি বলেই ঠান্ডা চা খাচ্ছেন?কী অদ্ভুত তো!”
বিড় বিড় করলো চৈতি। প্রহন শেষের চা গুলো এক ঢোকে গিলে চৈতির হাতে চায়ের কাপ টা ধরিয়ে দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,”ঠান্ডা চা খাওয়ালে না আমায়?এর শোধ তুলবো দেইখো।”

শোধ তুলবে মানেই হলো উলটো পাল্টা কাজ।কথাটা মাথায় আসতেই চৈতি চট করে বলে উঠলো,”আমি তো বলিনি চা গরম করে এনে দিবো না। শুধু শুধু ভয় দেখাচ্ছেন কেন?”

চৈতির কথা শুনে ভ্রু যুগল কুঁচকে ফেললো প্রহন।এক পা চৈতির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,”বলো নি তাই না?”

চৈতি এক পা পিছিয়ে গিয়ে বললো,”বলিনি তো!”

প্রহনের অধর জুড়ে শয়তানি হাসি।”মিথ্যুক মেয়ে।” চৈতিকে ধরতে যাবে এমন সময় বসার ঘর থেকে মিসেস ইয়াসমিন এর ডাক ভেসে এলো।”চৈতি একটু এদিক আয় তো।”

ডাক শুনে চৈতি কে আর প্রহন পায় কোথায়,সে প্রহন কে পাশ কাটিয়ে ছুটে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে প্রহনের বলা কথা স্পষ্ট শুনতে পায়।”চঞ্চলা হরিণী শুনো, হরিণীর ন্যায় তো লাফিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে গেলে।তোমায় শুধু হাতের নাগালে পাই মিথ্যা বলার মজা বুঝাবো।”

চৈতির হাতে চায়ের কাপ টা দেখে মিসেস ইয়াসমিন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,”সেই কখন চা দিয়ে ছিলাম সেই কাপ এখন আনলি?”

চৈতি রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বললো,”তোমার ছেলে যদি ঢং করে ঘন্টা লাগিয়ে ঠান্ডা চা খায় তাহলে আমার কি দোষ?”

“সে কি প্রহন ঠান্ডা চা কেনো খেলো?ও তো ঠান্ডা চা মুখে তুলে ও দেখে না।”

চৈতি মিটিমিটি হাসলো।প্রেম সাগরে ডুবে মরলে ঠান্ডা চা মুখে তুলে কেন গিলেও খাওয়া যায়।তা কী আর মিসেস ইয়াসমিন জানে। চায়ের কাপ টা ধুয়ে রেখে এসে মিসেস ইয়াসমিন এর পাশে বসলো চৈতি। চৈতি কে নিজের পাশে এসে বসতে দেখে মিসেস ইয়াসমিন বললেন,”তোকে একটা দরকারে ডেকে ছিলাম।”

চৈতি হাসি মুখে বললো,”বলে ফেলো।”

মিসেস ইয়াসমিন কিছু একটা বলতে যাবেন তখন প্রহন ব্যস্ত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে।কালো রঙের শার্টের বুকের উপরের বোতাম খোলা। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটানো। কালো রঙের শার্ট পরিহিত মানবের দিকে নেত্র পড়লেই দাঁত মুখ খিঁচে ফেললো কিশোরী।ভ্রু যুগল আপনা আপনি কুঁচকে গেলো।আনন জুড়ে রাগান্বিতর আভা ফুটে উঠেছে। উন্মুক্ত বক্ষ দেখেই রাগ হচ্ছে চৈতির। প্রহন মুচকি হেসে বললো”আম্মু আমি বাইরে যাচ্ছি। ফিরতে একটু রাত হলে ও হতে পারে। বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিবো একটু।”

প্রহনের কথা শুনে মিসেস ইয়াসমিন বিরক্ত হলেন। মুখ থেকে বিরক্ত সূচক শব্দ বের করে বললেন,”তোর আবার বান্ধবী কোথা থেকে আসছে? মেয়েদের থেকেই তো দূরে দূরে থাকতি।”

“এখন আর অনেক মেয়ে ফ্রেন্ড আছে। সোনিয়া,সিফা, সিমরান অনেক জন।”চৈতির দিকে তাকিয়ে বললো প্রহন।

প্রহনের কথা শুনে দাঁত কিড়মিড় করে চৈতি বলে উঠলো,”আপনার সব মেয়ে ফ্রেন্ডের নাম বুঝি ‘স’ দিয়ে রাখা।তা কে রেখেছে নাম গুলো? আপনি নিজেই?”

চৈতির এহেন কথায় থতমত খেল ‌প্রহন। মনে মনে বললো,”যত ছোট মেয়ে মনে করেছি তত ছোট কিন্তু না।”

মিসেস ইয়াসমিন মুচকি মুচকি হাসছেন। প্রহন চোখ বড় বড় করে চৈতির দিকে তাকিয়ে আছে। চৈতির কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেছে প্রহনের দিকে।
চৈতি প্রহনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মিসেস ইয়াসমিন এর দিকে তাকিয়ে বললো,”ভালো মা তোমার কথা আমি পরে শুনবো।”
মিসেস ইয়াসমিন কে কথাটা বলতে দেরী দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে দেরী হলো না চৈতির। মিসেস ইয়াসমিন মুচকি হেসে প্রহনের দিকে তাকিয়ে বললেন,”পিচ্চি বউ ক্ষেপেছে।সামলাও গিয়ে।”

প্রহন এক পলক মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সে ও রুমে চলে গেল। মিসেস ইয়াসমিন রিমোট দিয়ে টিভি অফ করে হাসতে হাসতে রুমে চলে গেল।

রুমে এসে চৈতি কে দেখলো না প্রহন।বার কয়েক ডাক দিলো,”চৈতি”
সাড়া পেল না। বেলকনিতে কারো ছায়া স্পষ্ট দেখতে পেয়ে প্রহন বুঝলো চৈতি বেলকনিতে আছে।

মৃদু বাতাসে উড়ছে চৈতির খোলা এলোকেশ। বুকে দুই হাত গুজে ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে চৈতি। প্রহন এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো তার পাশে।
চৈতি কে চেতিয়ে দেওয়ার জন্য বললো,”সিমরান নাকি আমায় খুব ভালোবাসে।বুঝছো চৈতি?”

প্রহনের কথা শুনে কোনো এক অজানা বিষাদে ভরে গেল চিত্ত। বুকের বা পাশে খারাপ লাগলো চৈতির। এই অনুভূতির সাথে পরিচিত নয় সে।তাই হয়তো প্রহনের বলা কথাটা গাঢ় করে দাগ কাটলো কিশোরীর অবচেতন চিত্তে।
প্রহন আবারো বললো,”সিমরান কিন্তু অনেক সুন্দর একটা,,”কথাটা শেষ করতে পারলো না প্রহন। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এই প্রথম চৈতি তাকে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরলো। স্তব্ধ হয়ে চৈতির দিকে তাকালো প্রহন।
মেয়েটা কান্না করছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে না নীরবে কাঁদছে। পিঠের অংশের শার্ট খামচে ধরেছে। অভাবনীয় কার্য দেখে কেমন রিয়েকশন করা উচিত বুঝতে পারছে না প্রহন। চৈতির চোখের পানি তে বুকের কাছের শার্টের কিছু অংশ ভিজে শেষ।
প্রহন চৈতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,”কী হয়েছে চৈতি? এই ভাবে কান্না করছো কেন?”
চৈতির উত্তর পেলো না প্রহন। মেয়েটা আগের মতই কান্না করে যাচ্ছে।
প্রহন চৈতি কে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো। থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে চোখের পানি মুছে দিলো প্রহন।
“রাগ করেছো বউ?রাগ করে না। আমি তো মজা করে বলেছি। সিমরান টিমরান কেউ নেই আমার জীবনে।মেয়ে ফ্রেন্ড তো একটাও নেই।”

চৈতি কান্না আটকিয়ে ধরা গলায় বললো,”আপনার মুখে অন্য মেয়েদের নাম আমার সহ্য হয় না কেন জানি।”

“আর ইউ জেলাস?উমম হুঁ আমি বুঝতে পেরেছি।বউ আমাকে ভালোবাসতে শুরু করে দিয়েছে।”
প্রহনের কথা শুনে কান্না থেমে গেল চৈতির।এক সাথে কয়েক বার চোখের পলক ফেলে প্রহনের দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলো,”ভালোবাসা আসলে কি?”

প্রহন মুচকি হেসে বললো,”ভালোবাসা হলো হৃদয়ের একটা অনুভুতি। দূর থেকে ও কাছে থাকার অনুভব করা।মন খারাপের সময় আমরা যখন একা বসে থাকি, আবার কেউ গান শুনি, নামাজ পড়ি এই সব করে আমাদের যে শান্তি টা লাগে ঐটাই ভালোবাসা। ভালোবাসার সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম।যেমন আমার কাছে ভালোবাসা মানে, তোমার বাচ্চামো, তোমার রাগান্বিত মুখ, তোমার চোখ, পুরো তুমি টাই যে আমার ভালোবাসা। ভালোবাসা শুধু প্রেমিক প্রেমিকার জন্য নয়। ভালোবাসা আমাদের পরিবারের জন্য ও থাকে।মা বাবার জন্য, বন্ধু বান্ধব এর জন্য। ভালোবাসায় থাকতে হয় বিশ্বাস ও সম্মান। একদিনের জন্য ভালোবাসা নয় বরং বছরের প্রতিটি দিনই প্রিয় মানুষ গুলো কে ভালো বাসতে হয়।”
দম ছাড়লো প্রহন। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে চৈতির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। প্রহনের সব কথা চৈতির মাথার উপর দিয়ে গেছে। প্রহন চৈতি কে এক মিনিট বলে রুমে আসলো। কাভার্ডের ভেতরে রাখা ব্যাগ থেকে একটা জিনিস বের করে চৈতির কাছে নিয়ে গেল। চৈতির হাতের মধ্যে তা ধরিয়ে দিয়ে হাসলো।
চৈতি অবাক হয়ে বললো,”এক বাক্স চকলেট?”
প্রহন উত্তর দিলো”হুম। এই যে এখন তোমাকে এই চকলেট বাক্সটা দিয়েছি এটাও কিন্তু ভালোবাসা।”

“আপনি আমায় ভালোবাসেন?”
চৈতির প্রশ্নের প্রত্যত্তরে প্রহন চৈতির কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে বলল,”তোমার ঐ চোখ আমায় খুন করেছে। সহস্র বার,,,,”

চলবে,,,,
#চলবে,,,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here