অন্তহীন পর্ব -২১+২২

#অন্তহীন💜
#পার্ট_২১
#স্নিগ্ধা_আফরিন

শুভ্র নীরদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অন্তরীক্ষে। আদিত্যর তেজ নেই এই প্রহরে। শান্ত, স্নিগ্ধ, সুনসান চৌধুরী ভিলা।এলোকেশে আবৃত আননের পানে সেই কখন থেকেই চেয়ে আছে তৃষ্ণার্ত নেত্র পল্লব। ঘুমের মধ্যেই এদিক ওদিক নড়ছে চৈতি। এতো নড়া চড়ায় বিরক্ত প্রহন। একটু শান্ত হয়ে ঘুমাতেও পারে মেয়েটা।নড়তে চড়তে হবেই যেন বাদ্ধতা মুলক। দরজায় টোকা পড়লো।এক বার দুই বার কয়েক বার।শোয়া থেকে উঠে বসলো প্রহন। দুই হাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে দৃষ্টি পরিষ্কার করলো। বিছানা থেকে নেমে দরজা মেলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা কে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে যায় প্রহন।
তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা হেসে হেসে বলে উঠলো,”কীরে কেমন সারপ্রাইজ দিলাম?”

প্রহন জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো,”খুব বাজে।”

“তোর কাছে তো সব সময় বাজেই মনে হয়। জানি আমি।”

“এক বছর পর হঠাৎ কোথা থেকে দড়ি ছিঁড়ে আসলি মুহিত?”

“বাহ ভাই বাহ। তুই ও আর্মি আমিও আর্মি পার্থক্য শুধু তুই ক্যাপ্টেন আমি সৈনিক তাই বলে তুই ভুলে যাবি আমাকে?”

“ঠাঁটিয়ে এক চড় দিবো।পরশু ও তোরে আমি নিজে থেকে কল করে আধা ঘন্টার বেশি সময় ধরে কথা বলছি। আমার মোবাইল এর কত ব্যলেন্স শেষ হইছে জানিস? আবার বলিস আমি তোরে ভুলে গেছি।”

প্রহনের এহেন কথায় হাসে মুহিত। প্রহনের কাঁধে কিল মেরে বলে,”শালা তুই আগের মতই কিপ্টা রয়ে গেছোস।”

“ঐ ঐ আমি তোর কোনো বোন কে বিয়ে করি নাই।সো ডোন্ট কল মি শালা ওকে?”

মুহিত প্রহন কে পাশ কাটিয়ে রুমের ভেতর ঢুকতে বললো,
“দেখি সর তো সামনে থেকে। ভেতরে ঢুকতে দে।”

প্রহন বিছানার উপর ঘুমন্ত চৈতির দিকে এক পলক তাকিয়ে জলদি করে মুহিতের পথ আটকে সামনে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠলো,”হুরর গেস্ট রুমে যা। আমার বেড রুমে কী?”

মুহিতের অজানা প্রহন যে বিবাহিত।তার রুমে এখন অন্য একজন ও আছে। বিয়ের কথাটা কাছের কয়েকজন আত্মিয় স্বজন ছাড়া আর কেউই জানে না। প্রহনের ছোট বেলার বন্ধু মুহিত ও না।
“তোর রুমে কী মহা কোনো জিনিস আছে?যে আমাকে ঢুকতে বাধা দিচ্ছিস?বউ টউ ও তো নাই তাহলে,,,?”

“বউ নাই তোরে বলছে কে?আসার সময় আম্মুর কাছ থেকে জেনে আসতে পারিস নাই কিছু?”

“মানে?কী জেনে আসবো?আন্টি কে ও তো দেখলাম না আসার সময়।”

“দরজা খুলে দিছে কে তাহলে?”

“আঙ্কেল। উনাকে জিজ্ঞেস করলাম তুই কোথায় উনি বললেন তোর রুমে আছিস।আর কিছু বলে নাই তো।”
প্রহনের রুমের ভেতর উঁকি ঝুঁকি দিতে লাগলো মুহিত।এত সময় পর তার দৃষ্টি গেল বিছানার উপর ঘুমিয়ে থাকা চৈতির উপর। কাঁথা মুড়ি দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে আছে।
মুহিতের দৃষ্টি অনুসরণ করে প্রহন ও তাকালো।মুহিত বিষ্ময় নিয়ে বললো,”কখন কীভাবে করলি এইসব? একটু জানানোর প্রয়োজন বোধ ও করলি না?”

প্রহন মুহিতের কাঁধ জড়িয়ে ধরে ড্রইং রুমের দিকে যেতে যেতে বললো,”আমি নিজে ও জানতাম না যে ছুটিতে আসলে আম্মু আব্বু আমাকে বিয়ে করিয়ে দিবে।”

মুহিত প্রহনের কথা বুঝতে না পেরে বললো,”খোলসা করে সব কিছু বল।একদম প্রথম থেকে।”

প্রহন হাই তুলে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর তার আর চৈতির বিয়ের সব কিছু প্রথম থেকে বলতে শুরু করলো। তার পাশেই মনোযোগী শ্রোতা হয়ে সেই সব কথা চুপ করে শুনছে মুহিত।

.
কাকের কর্কশ গলার কা কা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় চৈতির। ঘড়ির কাঁটা টুং টুং করে উঠলো। শোয়া থেকে উঠে চোখ কচলে ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখলো, সকাল বরাবর ৭টা। উঠে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।৯টা থেকে আবার স্কুল আছে।

রেদোয়ান চৌধুরী সোফায় বসে বসে মনোযোগ দিয়ে চা খাচ্ছিলেন।এত মন যোগ সহকারে চা খাওয়ার একটাই কারণ তা হলো ইদানিং তার চা টা ঠিক মন মতো হচ্ছে না। টেস্ট খুব পানসা পানসা লাগে। মিসেস ইয়াসমিন কে জিজ্ঞেস করলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন,মন দিয়ে চা খাও না দেখেই পানসা লাগে।বইয়ের ভেতরে ঢুকে থাকলে চায়ের স্বাদ কী করে পাবে?অথচ তিনি নিজেই চিনি একে বারে কম করে দেন। রেদোয়ান চৌধুরীর ডায়বেটিস আছে।এত মিষ্টি খাওয়া উচিত নয় একদম। রেদোয়ান চৌধুরী কোনো কালেই নিজের খেয়াল নিজে রাখেননি। বিয়ের পর থেকে তার সব খেয়াল মিসেস ইয়াসমিন রেখে আসছেন। তার আগে রেদোয়ান চৌধুরীর মাই রাখতেন ছেলের খেয়াল।
বেশ কয়েক বার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মুখ কুঁচকে ফেললেন রেদোয়ান চৌধুরী।”ইয়াসমিন তুমি ইচ্ছে করেই চায়ে চিনি দাও না তাই না? আমি তো মিষ্টি খাইতে চাই না সব সময়।ফ্রীজে মিষ্টি এনে রাখো যে ঐ সব কী আমি খাই? শুধু চার বেলা চায় একটু পরিমাণ মতো চিনিই তো চেয়েছি।”

মিসেস ইয়াসমিন সেই সময় রান্না ঘরে সবজি নুডুলুস বানাতে ব্যস্ত। রেদোয়ান চৌধুরীর কথা শুনে উঁচু গলায় বললেন,”সারা জীবন তোমার ভালোটা আমাকেই চিন্তা করতে হয়েছে। এখন ও হচ্ছে বুড়ো হচ্ছো যে তুমি।তাই চা যেমন আছে তেমনই খাওয়ার অভ্যাস করো।”

রেদোয়ান চৌধুরী হাল ছাড়লেন। চিৎকার চেঁচামেচি করে ও কোনো লাভ হবে না। তিনি একবার চিল্লাইলে মিসেস ইয়াসমিন একশো বার চিল্লাবে। প্রহন কে এই বিষয়ে কী বললে সেও ঠিক মায়ের পক্ষই নিবে।তাই অসহায় হয়ে সেই চায়ের কাপে চুমুক দিতে লাগলেন রেদোয়ান চৌধুরী। এমন সময় তার মোবাইল বেজে উঠলো। রিংটোন এর শব্দটা অসহ্য লাগে রেদোয়ান চৌধুরীর কাছে। মোবাইল টা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সরদার সাহেব এর গলার স্বর কানে আসে।কুশোল বিনিময় করে তিনি সবাইকে দাওয়াত দিলেন। সন্ধ্যায় যেনো প্রহন আর চৈতি কে নিয়ে তাদের বাড়িতে যায়। রেদোয়ান চৌধুরী ও হাসি মুখে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে বললেন,”আচ্ছা ভাই যাবো।”

এদিকে প্রহনের মুখ থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে অবাক মুহিত। বিছানার উপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে বললো,”শেষ পর্যন্ত বাল্য বিবাহ করলি তাও কিনা আর্মির ক্যাপ্টেন হয়ে?”

মুহিতের কথায় কেন জানি আজ আক্ষেপ হলো না প্রহনের।সে মুচকি হেসে উত্তর দিলো,”ভাগ্যিস করে ছিলাম। না হলে তো আমার ভেতরে লুকিয়ে থাকা আরেক আমিটাকে কখনো খুঁজেই পেতাম না।”

মুহিত শোয়া থেকে উঠে বসে চট করে বলে উঠলো,”তোর পিচ্চি বউকে দেখাবি না? আমি আমার পিচ্চি ভাবিকে দেখবো না নাকি?”

“দেখতে হচ্ছে কেন? না দেখলে কী হয়?ওটা আমার আমানত।তোকে দেখতে হবে না।”
প্রহনের এমন কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো মুহিত।
“বাপরে এত জেলাস? দেখিস আবার তোর বউ কে নিয়ে আমি যেন পালিয়ে টালিয়ে না যাই।”

“কানের নিচে দুইটা কষিয়ে চড় খেলে এমন কথা কেন এমন চিন্তা ও আর তোর মাথায় আসবে না।”

“বাহ বউ এর প্রতি অনেক ভালোবাসা দেখছি।”

“তা হঠাৎ কী মনে করে আমার বাড়িতে আসলি? কোন উদ্দেশ্যে?”

“তোর বাড়িতে আসতে হলে উদ্দেশ্যে লাগে? অনেক দিন দেখা হয়নি তাই চলে এলাম দেখা করতে। ভাগ্যিস এসেছিলাম। না হলে তো জানতাম না কোনো দিন তোর বিয়ের কথা।”

“না জানলেই ভালো হতো।”মনে মনে বললো প্রহন। মুহিত কে রেস্ট করতে বলে নিজের রুমে ফিরে যায় সে। রুমে এসে বিছানার উপর চৈতি কে না দেখে কয়েক বার ডাক দেয়,”লাজুক লতা বউ আমার, তুমি কই?”

বেলকনি থেকে চৈতির কন্ঠস্বর ভেসে আসে,”আমি এখানে আছি।”
চৈতির কথা শুনে প্রহন চট করে বেলকনিতে চলে গেল। চৈতি এক দৃষ্টিতে ফুলের উপর বসে থাকা প্রজাপতির দিকে তাকিয়ে আছে। প্রহন হুসস হুসস করে তাড়িয়ে দিতে চাইলে বাঁধ সাধে চৈতি।
“কী করছেন কী আপনি?ফুল থেকে মধু খাচ্ছে
যে দেখছেন না? একদম বিরক্ত করবেন না ওদের।”
চৈতির নিষেধাজ্ঞা শুনে শয়তানি হাসে প্রহন। ঠোঁট কামড়ে চৈতির হাত ধরে টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। আচমকা এমন করায় কয়েক টা হার্ট বিট মিস হলো চৈতির। এমন করে কাছে টেনে নিয়েছে মানেই হলো ভয়ঙ্কর সব কথা বলে হৃদয় স্পন্দন প্রক্রিয়া পাল্টে দিবে।দ্রুত গতিতে চলতে থাকবে।
প্রহন চৈতির মুখের সামনে আসা চুল গুলো আলতো হাতে কানের পিছে গুঁজে দিল। চোখে চোখ রেখে বলল,”আমার ও তো ইচ্ছে করছে ভীষণ, ফুলের মধু খেতে। তুমি নামক ফুলের,,”
#অন্তহীন💜
#পর্ব_২২
#স্নিগ্ধা_আফরিন

মেঘলা মধ্যান্হ!
একগুচ্ছ কৃষ্ণবর্ণীয় কাদম্বিনী ছেঁয়ে আছে অন্তরীক্ষে।ছাই রঙা বেশভূষা জানান দিচ্ছে অন্তরীক্ষের মনচিত্ত উদাসীন। গুমোট কালোর আধিপত্য বাড়ছে। পশ্চিম দিগন্তে কালো নীরদ বাহনের বিস্তার চলছে সেই ভোর থেকেই। ধরিত্রীর এমন গুমোট ভাবটা জানান দিচ্ছে ভারি বর্ষণ হবে আজ।বাম পাশের শাড়ির আঁচল টা বাতাসে উড়ছে। কোমর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া এলোকেশ গুলো অবাধ্য হয়ে চোখে মুখে এসে লুটিয়ে পড়ছে। ভেজা চুলের ডগা থেকে বিন্দু বিন্দু জল ফ্লোরে গড়িয়ে পড়ে অনেকটাই ভিজে গেছে।পিঠের অংশের ব্লাউজ টা ও ভিজে শেষ। গোসল করেই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে চৈতি।নিস্পৃহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শূন্য গগনে।
রুমের ভেতর থেকে সেই কখন থেকে একটা কথাই ভেসে আসছে,”চৈতি ভেতরে আসো।এখনি বাহিরে ঝড় শুরু হয়ে যাবে।”
সেই ডাক কর্ণকুহরে পৌঁছালে ও আগ্রহ দেখায়নি সে। আগের মতই আকাশের দিকে ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।
বার কয়েক ভাকার পর ও চৈতির কোনো সাড়া না পেয়ে রুম থেকে বারান্দার দিকে এগিয়ে যায় প্রহন। বারান্দার দরজার সামনে এসে চৈতির ভেজা চুলের দিকে চোখ পড়তেই আবারো রুমে ফিরে যায় সে। সোফার উপরে রাখা তোয়ালে নিয়ে আবারো চৈতির কাছে চলে গেল। পেছন থেকে চৈতির চুল মুছতে মুছতে শান্ত কন্ঠে বললো,”বড্ড অগোছালো হয়ে গেছো। গোসলের পর চুল মুছোনি কেন? পরিবেশ দেখেছো?ঠান্ডা লেগে যাবে তো।”
প্রহনের কথা শুনে নড়েচড়ে উঠলো চৈতি।
“এতো নড়চো কেন?চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো।”
গম্ভীর গলায় বলা বারণ শুনে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো চৈতি। প্রহন এক মনে চুলের পানি মুছিয়ে দিলো। আকাশের দিকে মুখ করে পাশে গিয়ে দাঁড়ালো প্রহন। উচ্চতায় মেয়েটা তার কাঁধ পর্যন্ত হয়। বলিষ্ঠ দেহের লম্বা শ্যাম বর্ণের মানবের পাশে চিকন শরীরের মাঝারি উচ্চতার ফর্সা বর্ণের মানবিকে মানিয়েছে দারুন। মিসেস ইয়াসমিন এর কথা রাখতে গোলাপি রঙের শাড়ি পরেছে আজ।হাতে সোনার চিকন দুটো চুড়ি ও পরেছে। গলায় সাধারণ একটা সোনার মালা।কানে ছোট ছোট দুল।বাম পাশের নাকে ছোট্ট একটা ফুল। সদ্য গোসল করে আসা রমনীকে এমন সাধারণ সাজে ফুটন্ত গোলাপ মনে হচ্ছে রিক্ত প্রেমিকের কাছে।সিক্ত অনুভূতি এসে কড়া নাড়ছে বা পাশের চিত্তে। বেশি সময় ধরে তাকিয়ে থাকতে পারলো না প্রহন।শত জনম চেয়ে থাকলেও তৃষ্ণার্ত নেত্রের তৃষ্ণা মিটবে না।
চৈতি কে নিষ্প্রাণ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল প্রহনের।
অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো সে,”কী হয়েছে চৈতি?মন খারাপ?”
চৈতি তাকালো না প্রহনের দিকে। প্রহন কোনো উত্তর না পেয়ে চৈতির দুই কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিতেই ছিটকে সরে গেল চৈতি।
নিষেধাজ্ঞা জারি করে উত্তেজিত গলায় বলে উঠলো,”আমাকে ছোঁবেন না। দূরে থাকুন,দয়া করে আমার কাছ থেকে দূরে থাকুন।”
চৈতির এমন ব্যবহারে হতভম্ব প্রহন। প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে চৈতির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সে।
চৈতি হাফাচ্ছে।বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে আর ত্যাগ করছে। শরীর ও কাঁপছে মেয়েটার।
চৈতির এমন অবস্থা দেখে প্রহন বিচলিত কন্ঠে বললো,”কী হয়েছে চৈতি?বলো আমাকে। এমন করছো কেন?”
প্রহনের কথার প্রত্যত্তর করলো না চৈতি। সেখান থেকে ছুটে চলে গেল। চৈতির পেছন পেছন যেতে লাগলে ফ্লোরের পানিতে পা পিছলে যায় প্রহনের।পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত পায়ে রুমের দিকে চলে গেল। রুমে এসে চৈতি কে পেলো না প্রহন। রুম থেকে বেরিয়ে মিসেস ইয়াসমিন এর কাছে যাওয়ার সময় পথ আটকে দাঁড়ায় মুহিত।
প্রহন কে দেখে হাসি মুখে বললো,”রোমান্টিক ওয়েদার ব্রো। বউয়ের সাথে রোমান্স না করে এত ব্যাকুল হয়ে কোথায় যাস?”
মুহিতের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো প্রহন। মুহিতের কাঁধে হাত রেখে নিষ্তেজ কন্ঠে বললো,”আমি করবো বউয়ের সাথে রোমান্স? এতো ভালো সৌভাগ্যবান মানুষ আমি না। সামান্য কাঁধ ধরতেই বউ আমার পলাতক।”

প্রহনের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো মুহিত।হাসি যেন থামছেই না। প্রহন যেনো তাকে খুব মজার কোনো কথা বলেছে। মুহিতকে এমন করে হাসতে দেখে বিরক্ত হলো প্রহন। মুখ দিয়ে বিরক্ত সূচক শব্দ করে বললো,”থাক তুই, আমি চৈতি কে খুঁজে আসি।”

“চৈতি,বাহ সুন্দর নাম তো। কিন্তু তোর বউকে আমি তো এখন ও দেখলাম না।”

প্রহন এক পলক মুহিতের দিকে তাকিয়ে ড্রইং রুমের দিকে চলে গেল।ড্রইং রুম ফাঁকা।কেউ নেই। রান্না ঘর থেকে বাসন কোসনের টুং টাং শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রহন সে দিকে এগিয়ে গেল। মিসেস ইয়াসমিন দুপুরের খাবারের জন্য সব কিছু তৈরি করছেন।ডাইনিং টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই উত্তেজিত মন শান্ত হলো। গোলাপি রঙের শাড়ীর আঁচল মাথায় ঘোমটা দিয়ে টেবিলের উপর কনুই রেখে গালে হাত রেখে বসে আছে চৈতি।জল ভর্তি সামনের কাঁচের গ্লাসের দিকে নিবদ্ধ দৃষ্টি।
তার পাশের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসলো প্রহন। মিসেস ইয়াসমিন তরকারির বাটি নিয়ে এসে রাখছেন আর ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন।
প্রহন চৈতির দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে বললো,”চৈতি কী হয়েছে তোমার বলো আমাকে। এমন মন খারাপ করে বসে আছো কেন তুমি?”

“প্রহন খারাপ মন রুমে গিয়ে ভালো করো। এখন তোমার আব্বু আর মুহিত কে ডাকো। খাবার খেয়ে যেতে বলো।”
মিসেস ইয়াসমিন এর কথা শুনে তার দিকে এক নজর তাকিয়ে বসা থেকে উঠে চলে গেল প্রহন। মিসেস ইয়াসমিন চৈতির পাশে এসে বসলেন। চৈতির ডান হাতটা নিজের হাতে নিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। মিসেস ইয়াসমিন এর চোখের দিকে তাকিয়ে চৈতি বুঝতে পারলো মিসেস ইয়াসমিন কী বলবেন তাকে।
“কী হয়েছে মন খারাপ কেন? প্রহন বকেছে?”

মিসেস ইয়াসমিন কে কী করে বলবে তার বুকের ভেতর বয়ে যাওয়া ঝড়ের কথা। ভেবে পাচ্ছে না সে। সকালে প্রহনের বলা কথাটাই যে মন খারাপের কারণ। লজ্জা জনক কথা। ছেলের বউ হয়ে শাশুড়ি কে সেই কথাটা বলা উচিত হবে না।সে যতই ফ্রী মাইন্ডের মানুষ হোক না কেন। কথাটা মজার ছলে বলা হলেও সেই কথার গভীরতা না বোঝার মতন এতোটা ও অবুঝ না চৈতি। প্রহনের মজার ছলে বলা কথাটা মনে দাগ কেটে গেছে যে। মিসেস ইয়াসমিন কে বুঝ দেওয়ার জন্য চৈতি বলে উঠলো,
“এমনিতেই ভালো লাগছে না।বাড়ি যেতে মন চাইছে। আব্বু আম্মু কে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।”

চৈতির কথা শুনে মিসেস ইয়াসমিন তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,”বোকা মেয়ে।এই জন্য এমন করে মন খারাপ করতে হয়? আমরা সবাই আজ যাবো তো তোদের বাড়িতে। সকালে তোর আব্বু ফোন করে দাওয়াত দিয়েছেন সবাই কে নিয়ে যেতে।”
____________
খাবার টেবিলে মুহিত কে চৈতির দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রেগে গেলো প্রহন।পা দিয়ে মুহিতের পায়ের উপর পাড়া দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,”খাবার খেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়িতে চলে যা।”
প্রহনের এহেন কথায় ঘাবড়ে গেল মুহিত। চৈতির দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল। মুহিতের এমন করে তাকিয়ে থাকার জন্য অস্বস্থি হচ্ছিলো চৈতির। দ্রুত খাবার শেষ করে সেখান থেকে সরে পড়লো সে। প্রহন মুচকি হাসলো।

.
“মুহিত আমরা একটু বাইরে যাবো। তুমি কি যাবে আমাদের সাথে?”মিসেস ইয়াসমিন এর কথা শুনে মুহিত খুশিতে গদগদ করে বলে উঠলো,”আন্টি আপনারা তো আমার কাছের মানুষ। আপনাদের সাথে ঘুরতে যেতেই পারি।”

“না, মুহিত তো আমাদের সাথে যাবে না।ও তো বাড়িতে ফিরে যাবে।”
মায়ের কাছে আসতে আসতে কথাটা বলে উঠলো প্রহন। মুহিতের হাসি মুখ চুপসে গেল নিমিষেই।

“কেন প্রহন?”
“আসলে আম্মু ওর মা নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। একটু আগেই ফোন করলেন আন্টি। মুহিত কে পাঠিয়ে দিতে বললেন।”

“আল্লাহ।সে কি মুহিত, তোমার আম্মু তো অসুস্থ বাবা। মায়ের কাছে যেতে হবে তো।”

মুহিত প্রহনের দিকে তাকালো, প্রহন চোখ ছোট ছোট করে দাঁতে দাঁত চেপে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ সরিয়ে ফেললো মুহিত। প্রহন তাড়া দিয়ে বললো,”দোস্ত জলদি বের হ, বাহিরের অবস্থা ভালো না। ঝুম বৃষ্টি নামতে পারে।”
মুহিত কে নিয়ে গেস্ট রুমে চলে গেল প্রহন।
মুহিত ব্যাগ কাঁধে নিতে নিতে প্রহনের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”তোর বউয়ের দিকে তাকালে কী ফোস্কা পড়বে গায়ে?যার জন্য মিথ্যা বলে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছিস।”

প্রহন কোনো ভনিতা না করে বলে দিলো,”তোকে আমার সুবিধার লাগছে না। চলে যা আমাদের বাড়ি থেকে।”

প্রহনের এমন কথায় অপমান বোধ করলো মুহিত। রুম থেকে বেরিয়ে যাবার সময় পেছন ফিরে প্রহনের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,”ইউর ওয়াইফ ইজ সো হট।”
মুহিতের এমন কথায় প্রহনের রক্ত চড়ে গেল মাথায়। কপালের রগ গুলো ফুলে উঠলো রাগে। পেছন থেকে মুহিতের শার্টের কলার চেপে ধরে কাছে টেনে এনে ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিল মুহিতের বা গালে। রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো,”হাউ ডেয়ার ইউ, আমার চৈতি কে এত বাজে উক্তি করার সাহস পাস কই থেকে? একদম কলিজা টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।”

#চলবে,,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here