অন্যরকম ভালোবাসা, পর্ব:১

#অন্যরকম_ভালোবাসা

#পর্ব_১

ছুটির পরে কলেজ থেকে বের হয়েই অন্তরার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। একে তো চিড়বিড় করে রোদের তেজ বাড়ছে তার উপর একটা রিকশাও গুপীবাগ যেতে রাজী না। পিচ পোড়া রোদে অন্তরার মগজ গলে যাবার যোগাড়!অগত্যা হাঁটা ধরলো অন্তরা।

তাও ভালো যে এখন পর্যন্ত ওই বেকুবটা বত্রিশ পাটি দাঁত কেলাতে কেলাতে সামনে এসে হাজির হয় নাই, মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে অন্তরা।তবু কেমন খটকা লাগে ওর, নিশ্চিত হতে আশেপাশে চোখ বুলায়…..নাহ্ নেই।

সত্যি বলতে একটু অবাক হয় সে,এমন তো হয় না কখনো! প্রতিদিন কলেজ থেকে বের হলেই দেখে, হয় ওই ফাজিল ছেলেটা স্বয়ং দাঁড়িয়ে নয়তো ওর বন্ধুরা ওকে ডাকাডাকি করছে। আজ দীর্ঘ তিন মাস ধরে এই নিয়মের কোনো ব্যতিক্রম হয় নাই। প্রতিদিন ছেলেটা আসে, তারপর নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে ওর পিছে পিছে হাঁটতে থাকে। ছেলেটা বোবা প্রাণীর মতো কিছু না বলে শুধু পিছু নেয়,তাই ও নিজেও আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে পারে না। রিকশা পেলে ভালো নয়তো কলেজ পাড়া ছাড়ার আগ পর্যন্ত ফেউটা পিছে লেগে থাকে। অন্তরার ভীষণ বিরক্ত লাগে! কেমন আজব মার্কা ছেলে একটা! সবসময় এলোমেলো থাকে ….মাথায় একগাদা এলোমেলো চুল, এলোমেলো জিন্স, ভাঁজ বিহীন টিশার্ট, এমনকি শেভ পর্যন্ত করে না জঙ্গলি ছেলেটা!!

এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হাঁটছিল অন্তরা। হঠাত্‍ ভোজবাজির মতো ফরিদ ওর সামনে এসে ফুশ করে দাঁড়ায়। এই ছেলেটাকে অন্তরা খুব পছন্দ করে। বয়স দশ বারো হবে, ওদের কলেজের সামনে কখনো ফুল কখনো চকলেট কখনো আম আমড়া বিক্রি করে। খুব চটপটে আর এত মজা করে কথা বলে যে অন্তরা ওকে প্রায়ই আদর করে এটা ওটা কিনে দেয়।

ফরিদ এসেই বিশ্বজয়ের হাসি হেসে বলে,
– কেমুন আছেন আপা ? ইসরে! রইদে তো আপনের মুকখান লাল হইয়া গেসে আপা! তয় হেই লাইগ্যাই মনে লয় আইজকা আপনেরে আরো বেশী সুন্দর লাগতেসে।

অন্তরা হেসে ফেলে।
– ঠুয়া চিনস? পাকনামি দিন দিন বাড়তেসে না?

– আল্লাহর কসম আপা, আপনে না দেখতে একদম পরী মণির মতো। তার গায়ের রঙও আপনের মতো ফকফকা সাদা, যারে কয় এক্কেবারে বক সাদা!

– পরী মণি?
অন্তরা হাঁটতে হাঁটতেই ভ্রু কুঁচকে জানতে চায় ।

– কেন, চিনেন না? বাংলা সিনেমার নায়িকা, ওই যে গানটা দেহেন নাই….. ডানা কাটা পরী, আমি ডানা কাটা পরী ।

ফরিদ চলতে চলতে অদ্ভূত ভঙ্গিতে নেচে গেয়ে ওকে দেখায়। তাই দেখে অন্তরা হেসে ফেলে।
– আর বক সাদা মানে?
অন্তরা শুধুই মজা করতে কথা বাড়ায়।

– মানে কয়লা কালার উল্ডাটা। আপনেগো কলেজের সামনে যে জুতা সিলায় জমির ভাই ….সে হইলো কয়লা কালা আর আপনে হইলেন তার উল্ডা… সাদা বকের মতো ।
ফরিদও অন্তরাকে বিনোদন দিতে অকারণে কথা বাড়ায়।

– বুঝলাম! তা তুই এই হাপুস গরমের মাঝেও এমন তিরিং বিরিং করিস ক্যামনেরে? তোর নাম তো ফরিদ না হয়ে ফড়িং হওয়া উচিত ।

– আপনে বললে তাই সই, আপনের কথার উপ্রে ফরিদ জিন্দেগিতে ট্যা ফু করবো না ।

– ঘটনা কী? আজকে এতো মলম দিতেসিস কেন? উদ্দেশ্য কী?
অন্তরা ভ্রু নাচিয়ে জানতে চায়।

ফরিদ ওর পাশে লাফিয়ে লাফিয়ে চলছিল, ওর প্রশ্নে হঠাত্‍ সে দাঁড়িয়ে পড়ে আড়ষ্ট হেসে একটা কাগজ অন্তরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– আপা এই কাগজটা ভাই আপনেরে দিতে কইসে।
সে ইশারায় ওর পিছে কাউকে দেখায় ।

অন্তরা থমকে দাঁড়ায়, ঝট করে পিছে ফিরতেই দেখে সেই ছেলেটা সবসময়ের মত মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। ও যে অগ্নিদৃষ্টি মেলে ছেলেটাকে দেখছে সেটা বুঝেও ছেলেটা একবারও চোখ তুলে চায় না, কথা বলা বা ইশারা করা তো দূরের কথা। অন্তরার রাগে চোখ জ্বালা করতে থাকে। ইচ্ছে হয় দৌড়ে গিয়ে ছেলেটার কলার চেপে ধরে তাকে আচ্ছামত ঝাঁকিয়ে ওর মুখে শব্দ ফোটায়, কিংবা ওর পেটে একটা বোমা মেরে ওর মৌন ব্রতের আজই অবসান ঘটায়। তার ফরিদের উপরেও ভীষণ রাগ হয়। ছেলেটাকে সে এতো আদর করে অথচ সুযোগমতো বদটা ঠিকই দল বদল করে ওই মৌন পাপীর দলে ভীড়ে গেলো! একেই বোধহয় বলে দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পোষা!

অন্তরা নিজের আগুন গরম মেজাজ বহু কষ্টে আয়ত্তে রেখে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে ফরিদকে বলে,
-সাহস খুব বেশী বাড়ছে না? বারো হাত কাকুরের তেরো হাত বিচি হইতে মন চায়? সাইজ দেড় ফুট হইসে কি হয় নাই তুমি ডাক পিয়ন হয়ে গেছো! এক থাপ্পড়ে তোর কান কপাটি ধরায় দিবো, ফাজিল পোলা!

অন্তরার ক্রুদ্ধ মূর্তি দেখে ফরিদ ভয়ে দুই পা পিছিয়ে নিরাপদ দূরত্বে যেয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলে,
-প্লীজ আপা…..আপনের প্লীজ লাগে! কাগজটা লন, নইলে ভাই কিন্তু আমারে মারবো।

রাগের অতিশয্যে অন্তরা আর কিছু ভাবতে পারে না। নিমচাটা এত ফাজিল! বাচ্চা একটা ছেলেকে ভয় দেখিয়ে পাঠিয়েছে নিজের কাজ উদ্ধারের জন্য! কেন, ওর নিজের সাহস হয় না ওকে এসে নিজ হাতে কাগজটা দেয়ার?

অন্তরা রীতিমতো ছো মেরে কাগজটা ফরিদের হাত থেকে নিয়ে নেয়। সুযোগ যখন পাওয়াই গেছে আজ এর একটা দফা রফা করতে তো হবেই।

চলবে….

#আফসানানীতু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here