অন্যরকম ভালোবাসা, পর্ব:৩

#অন্যরকম_ভালোবাসা

#আফসানানীতু

#পর্ব_৩

কলেজ থেকে বের হতেই ফরিদ অন্তরার সামনে পড়ে গেলো। ওই দিনের ঘটনার পর থেকে অন্তরাকে দেখলেই ফরিদ পালিয়ে বেড়ায়। কিন্তু আজ আর শেষ রক্ষা হলো না! তবে ফরিদও সাত ঘাটের জল খাওয়া চালাক ছেলে তাই মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নেয়। আকর্ণ হাসি হেসে বলে,

-কেমুন আছেন আপা ? লন, এই ফুলডা রাখেন। এইডার রঙ এক্কেবারে আপনের মতোই গোলাপী!

আজকে সে গোলাপ বিক্রি করছে। তাই অন্তরাকে পটাতে একটা পূর্ণ প্রস্ফুটিত গোলাপী গোলাপ এগিয়ে দেয় ওর দিকে ।

নেবেনা নেবেনা করেও শেষমেষ অন্তরা গোলাপটা হাতে নিলো।
– এই না সেদিন বললি আমার গায়ের রঙ বকের মতো ফকফকা সাদা, আজ আবার গোলাপী হলো ক্যামনে?

ফরিদ উত্তর না দিয়ে মাসুম হাসি হেসে সহজ হবার চেষ্টা করে।

– তা এইটাও কী তোর ভাই দিছে ,না নিলে মারবো ?

অন্তরা খোচা মারতে ভোলে না, তবে সেই সঙ্গে স্পন্দনের নিখোজ হবার কারণ জানার একটা সূক্ষ্ম ইচ্ছেও বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটাকে আন্দোলিত করে কম বেশী। ভাবে…যদি ফরিদ উত্তরে স্পন্দন সম্পর্কে কোন তথ্য দেয় ।

– কী যে কন আপা ! তয় ধান্দার টাইমে মিছা কমু না আপা, ভাই আমারে কুনোদিন মারে নাইকা, আল্লাহর কসম! আমি জানতাম আপনে কাগজটা লইবেন না তাই মিছা কতা কইসিলাম। ভাই তো আপনের মতই খুব ভালা!
তারপর অন্তরার হাতে গোলাপটা গুঁজে দিয়ে বলে,
– ফুলডা আপনে রাখেন আপা, প্লিজ লাগে! দাম দিতে হইবো না, এইডা হইলো হেই দিনের মিছা কতা কওনের কাফ্ফারা।

বলেই আর দাঁড়ায় না ফরিদ , ফুল নিয়ে হারিয়ে যায় ভীড়ের মাঝে ।

– এই অন্তু, চল রিকশা ঠিক হইসে।

প্রীতি পাশে এসে দাঁড়ায় । কিন্তু অন্তরা এতো তাড়াতাড়ি রিকশা পাওয়ায় খুশী হবার বদলে অসহায়ের মত মুখ করে বলে ,

– এত তাড়াতাড়ি রিকশা ঠিক করলি কেন?একটু হাঁটতাম!

শুনে প্রীতির চোখ ছানাবড়া !
-কিরে,তোর মাথা টাথা সব ঠিক আছে তো ? আরদিন তো কলেজ থেকে বের হয়েই রিকশার জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দেস আর আজকে এই ঠাডা রোদে তোর হাঁটতে মন চায়? মফিজ মাইয়া কোথাকার!! আর ফুল নিয়ে দাঁড়ায় আছিস কেন, নতুন রোমিও জুটসে নাকি ?

– না তোর জামাই দিসে!
বলে অন্তরা থমথমে মুখে রিকশায় উঠে বসে।

প্রীতি ওর পাশে উঠে বসে বলে,
– তাহলে তো দোস্ত ভালই হয় ! অপবাদের হাত থেকে বেঁচে যাই।

-কিসের অপবাদ !
অন্তরা অবাক হয় ।

– শোন,কালকে স্বর্ণা আমারে ডেকে বলে “কিরে, স্টুডেন্ট লাইফ তো শেষের পথে!তোরা দুইটায় এখনো একটা প্রেম করতে পারলি না? সারাদিন দুইজনে একসাথে কি এত গুটুর মুটুর করস? নাকি তোদের দুইটার ম্যানুফেকচারিং ডিফেক্ট আছে?” চিন্তা কর !! আমি বলসি “আমি আর অন্তু ঠিক করসি প্রেমের মত প্যারাময় এডিকশনে আমরা যাব না, বাপ্ মা যারে ঠিক করবে আল্লাহু আকবার বলে তার গলায় ঝুলে পড়বো” ঠিক বলসি না বল ?

প্রীতি এমন সরল মুখ করে কথাগুলো বলে যে অন্তরা না হেসে পারে না। মাঝে মাঝে প্রীতি এমনভাবে কথা বলে যে শুনলে মনে হয় ও এখনো বারো তেরো বছরের কোন কিশোরী মেয়ে।

অন্তরা হেসে বলে,
– নাকি সত্যিই আমাদের ম্যানুফেকচারিং ডিফেক্ট আছেরে ?

প্রীতি হাসতে হাসতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে গান গায় …
– কি বললা মন কাড়িলা ,
ও বন্ধুরে …
অন্তরে পিরিতের আগুন ধরাইলা 🎶🎶🎶

প্রীতির গান শুনে ওদের রিকশাওয়ালা পেছন ফিরে দাঁত বের করে হাসে। তাই দেখে অন্তরা প্রীতিকে মৃদু ধমক দেয়,
– ছাড়তো প্রীতু, বদ জানি কোথাকার !

এমনসময় ওর সেল ফোনটা বেজে উঠে। অন্তরা দেখে ওর মা কল করেছে।
– হ্যাঁ আম্মা বল ।

– তুই কই অন্তু ?

– রিকশায় আম্মা,আসতেসি ।

– শোন ,আসার পথে কষ্ট করে একটা ফ্রুট কেক আনতে পারবি? স্বপ্ন এসেছে ।
সাবিনা তার কণ্ঠে আনন্দের ছোয়া লুকাতে পারেননা ।

এদিকে স্বপ্ন এসেছে শুনেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় অন্তরার।সে বিরক্ত কণ্ঠে বলে,
– আম্মা শোন , আমি এই গরমে রিকশা থেকে নেমে কারো জন্য কিছুই কিনতে পারবনা, অসম্ভব! আর তোমার স্বপ্ন না ঘুম আসছে তার জন্য আমার কেক আনতে হবে কেন? বাসায় কাজের লোক নাই ?

– ছিঃ অন্তু, এইগুলা কি ধরনের কথা ! ওরা আনা আর তুই কেক আনা এক হল বুঝি?

– সে যেমন কথাই হোক…. আই এম সরি, আমাকে দ্বারা হবে না। আর এই ভরদুপুরে ওর কেক খাবার কি দরকার শুনি? ওরে ভাত খাওয়াও তো মেখে মেখে। আমি রাখলাম।

অন্তরা কল কাটতে প্রীতি উত্সুক কণ্ঠে জানতে চায়,
– কিরে, ফালতুটা আবার আসছে তোদের বাসায়?

ওর ফোনের কথোপকথন শুনেই প্রীতি বুঝে গেছে কাকে নিয়ে আলাপ চলছিল ওদের মা মেয়ের মধ্যে ।

-আর বলিস না! আম্মারে যে কি জাদু করসে আল্লাহ্ মালুম ! আম্মা আর তার প্রানের বান্ধবী তাদের দাম্রার সাথে আমার বিয়ে দেবার জন্য কত যে আজগুবি চেষ্টা চালাচ্ছে !

– তা এতে তোর প্রবলেমটা কোথায়? দাম্রা তো দেখতে খারাপ না! নিজে ডাক্তার , বাপের ক্লিনিক আছে। ওরে বিয়ে করলে তো তোর লাইফ পুরা সেট।

– আরে ধুর! ওরে দেখলেই আমার গা জ্বলে! আর সুন্দর কই দেখলি তুই? কেমন তেলাপিয়া মাছের মত তেলতেলে ! বেশি ভালো লাগলে বল তোরেই নইলে সেট করে দেই বেটার সাথে।

– জ্বী না বস , তোর দাম্রা তোরেই মোবারক!
বলেই প্রীতি এমনভাবে মুখ গোল করে বমির ভঙ্গি করলো যে অন্তরা না হেসে পারলো না ।

***

ঘরে ঢুকতেই অন্তরা দেখে তাদের ড্রয়িংরুম আলো করে স্বপ্ন জামাই সেজে সোফায় বসে আছে।
ওকে দেখা মাত্রই কথার ফুলঝুড়ি ছোটায় স্বপ্ন ।

– আরে অন্তরা যে! কেমন আছো ? কই ছিলে এতক্ষণ, তোমাদের ক্লাস এখনো সাসপেন্ড হয় নাই ?

– ভালো আছি। ক্লাস সামনের মাসে সাসপেন্ড হবে ।
মেপে মেপে উত্তর দিয়ে আর দাঁড়ায় না অন্তরা। চটজলদি নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

ঘরে ঢুকতে মেয়েকে দেখেই আহ্লাদী গলায় সাবিনা বলেন,
– কিরে ,স্বপ্নের সাথে দেখা হইসে? আর কেক কই? তোরে না কেক আনতে বললাম একটা?

– আর আমি না তোমাকে বললাম আমি পারবো না? তুমি ওই মেনি মাছটারে দেখলে এত হ্যাপি হও কেনো বলতো ? তোমার কি ধারণা ওর বাপ্ আমি পাশ করলেই আমাকে ওদের ক্লিনিকে নিয়ে নেবে সেই আশায় আমিও আহ্লাদীপনা করবো ওরে দেখলে ? নাকি কেক এনে ওর পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে লুতুপুতু চোখে ইশারায় জানাবো, আমি আপনার পাণিপ্রার্থি… প্লিজ ম্যারি মি! ঘরে আসতে না আসতেই কেক কেক করা শুরু করছো, এমনেই রোদের দাপটে বাইরে মেজাজ ঠিক থাকে না তারউপর তোমার এই ঘ্যানঘ্যান!

অন্তরা ঘরের বাইরের সব রাগ অযথাই মায়ের উপরে ঝাড়ে।

– ছিঃ অন্তু ! লুতুপুতু , ঘ্যান ঘ্যান , মেনি মাছ এইগুলা কি ভাষা! কোত্থেকে শিখসিস এইগুলা ! প্রীতিরে দেখ্, কত সুন্দর করে কথা বলে ! এত ভদ্র একটা মেয়ের সাথে থেকেও তুই ভাষা শিখলি না ।

– ধুর! এইজন্যই প্রীতুরে বলি তোমাকে ফোন না দিতে। সবসময় খালি কম্পেয়ার করো ।

অন্তরা হাতের ব্যাগটা খাটের উপরে ছুঁড়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

চলবে …

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here