অপরিচিত ঘ্রাণ ( ২য় পর্ব )

অপরিচিত ঘ্রাণ ( ২য় পর্ব )
.
– ‘আপনি কি ভূত ?’

– ‘না, আমি জীন বে।’

– জিয়ান কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনারা নারী জিনদেরকে পরী নাকি পেত্নী ডাকেন ?’

অন্ধকার রুমে খিলখিল করে হাসতে হাসতে তুরেছা তৈয়েবী বলল, ‘তুই বোকা বে, ভুত, পেত্নী, আত্মা, পরী এসব তোরা মানুষেরা আলাদা আলাদা নাম দিস । আমরা তো একজন আরেকজনকে নাম ধরে ডাকি। তোরা যেরকম, ‘এ মানুষ বলে ডাকিস না’ আমরাও এ পরী, এ পেত্নী, এ জীন বলে ডাকিনা,’ নিজস্ব নামে ডাকি। আমাকে সবাই ডাকে তুরেছা তৈয়েবী।’

-জিয়ান লক্ষ করল তুরেছা তৈয়েবী বাচ্চাদের মতো মিষ্টি করে কথা বলে, ‘কিন্তু আপনি এখানে কেন ?’

-তুছেবা তৈয়েবী বলল, ‘আমাদের বাসায় কি আমি থাকবো না ?

– ‘এটা আপনাদের বাসা ?’

– ‘অয় বে, এই বাসা অনেকদিন ধরে ফাকা ছিল, তোরা কোথা থেকে এসছিস ?’

জিয়ানের শরীর ঘেমে যাচ্ছে, ভয়ে তার হাত – পা কাপছে, সে কথা বলছে কাপা গলায়। জিয়ান ভাবতেই পারছেনা এতোদিন যাবত তারা জীনের বাসায় থাকছে। জিয়ান ভয়ে ভয়ে তুরেছা তৈয়েবীর উত্তর দিলো, ‘বাবা আমাদের গ্রামের স্কুলের হেড মাস্টার, আমি আমার আব্বু – আম্মুর একমাত্র সন্তান, তাই ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর আব্বু – আম্মু আমাকে মেসে দিতে চাননি, বাসা খুজছিলেন। সেই বাসায় আম্মু আমার সাথে থাকবেন। হঠাৎ একদিন আব্বু পত্রিকায় খুজে পেলেন এই বাসার সন্ধান, বাসার নীচতলায় মালিকের পরিবার থাকে আর উপর তলা ভাড়া হবে, অন্যান্য বাসার তুলনায় টাকাও অনেক খুব কম। তাই আমরা এই বাসায় এসে উঠেছি।’

– ‘হুম বুঝতে পেরেছি, জানিস তোর জন্য সেদিন রাতে কি হয়েছিল, তুই ছোট প্যান্ট পড়ে ঘুমিয়েছিস, ভাইয়া আমার রুমে এসে তোকে ছোট প্যান্টে দেখে রেগে গেছিল, সে চিৎকার দিয়ে আব্বু – আম্মুকে ডেকে এনে বলল, ‘তোমরা তো বল আমি মানুষের সাথে শুধু শুধু লাগালাগি করি, এই দেখো একটা মেয়ের রুমে খবিশ মানুষ অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুমিয়েছে। মনটা চায় আদমের বাচ্চাটারে তুইলা একটা আছাড় দেই। তারপর আব্বু – আম্মু আর আমি ভাইয়াকে বললাম, ‘মানুষ তো আর দেখে না আমরা যে এখানে বসবাস করি।’ ভাইয়া আরও রেগে গিয়ে বলল, ‘দেখবে কিভাবে! তারা মানুষরা মনে করে এই পৃথিবী শুধু তাদের একা, যেভাবে ইচ্ছে চলাফেরা করবে, তারা সৃষ্টির সেরা জীব। শালারা মাঠির তৈরী মাটি উপরের দিকে ছুড়ে মারলে নিচের দিকে এসে পড়ে৷ আর আমরা জীনরা আগুনের তৈরী, আগুনকে লক্ষ হচ্ছে উপরের দিকে যাওয়া।

– জিয়ানের ভয় আরও বেড়ে গেল, সে ভয়ার্ত গলায় বলল, ‘তোমার ভাই কি আমাদের কোনো ক্ষতি করবে ?’

– ‘ ভাইয়া এখানে থাকেনা, হঠাৎ আসে তারপর আবার চলে যায়, আমার ভাইয়া নষ্ট হয়ে গেছে রে, ইবলিস জীনদের সাথে চলাফেরা করে। জানিস তাদের একটা সংগঠন আছে, তোরা মুভিতে যে আমাদেরকে খারাপভাবে উপস্থাপন করিস, তারা সেটা দেখে বিগড়ে যায়। ইবলিস জীনরা মানুষকে দু’চোখে দেখতে পারে না। তোরা যে রাস্তাঘাটে এখন সিসি ক্যামেরা রাখিস, আমাদের চলাফেরা করতে অনেক কষ্ট হয়। তোরা যাদেরকে পরী বলিস, সেরকম ডানা পেছন দিকে দু’টা মেয়ে জীন আকাশে মেঘের আড়ালে হাটাহাটি করছে। ওমা সেটা মানুষরা দেখে ভিডিও করে ইউটিউব ফেইসবুকে সব মানুষকে দেখিয়েছে। কিছুদিন আগে ইংল্যান্ডেও ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল দু’টা পরী । সেটা নিয়ে আমাদের জীন সমাজে কিযে হৈচৈ শুরু হয়েছিল । জানিস তোরা দেখে ফেললে আমাদের জাত যায়, কারণ আমাদের ধর্মই হচ্ছে অদৃশ্য থাকা। কিন্তু পৃথিবীতে মানুষদের প্রভাবে আমরা টিকতে পারছিনা। এখন আমরা খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হয়, ইবলিস জীনরা সেদিন জীন পাহাড়ে আলোচনা সভা করেছিল। ইবলিস জীনের সভাপতি বলল, ‘মানবজাতি দিন দিন এতো উন্নত হচ্ছে যে, একদিন এমন কিছু একটা যন্ত্র আবিষ্কার করবে, তারা আমাদেরকে সেটা দিয়ে দেখে ফেলবে, আমরা তাদের দেখেও কিছু করিনা, কিন্তু মানুষরা আমাদেরকে দেখতে পারলে পেছনে দৌড়ানি দেবে। আমাদেরকে মারার যন্ত্র আবিষ্কার করবে। এখনও সময় আছে মানুষের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন। আসেন প্রতিরোধ গড়ে তুলি। তখন মুসলমান জীনদের সুলতান বললেন, ‘ইবলিস সাধারণ জীনদের কুবুদ্ধি দিয়ে ইনসানদের ( মানুষের ) পেছনে লেলিয়ে দিস না। মনে রাখিস, আল্লাহর কাছ থেকে শেষ কিতাব আর শেষ নবী কিন্তু শুধু মানুষের জন্য আসেনি, জীন মানুষ সবার জন্য এসেছে। মানুষের ক্ষতি করলে গুনাহ হবে, আল্লাহ এটা শাস্তি দেবেন। তোরা আল্লাহর কাছ থেকে অভিশপ্ত হয়েছিস বলে আমাদেরকেও সেরকম অভিশপ্ত পথে ডাকিস না, আমরা সব সময় মানুষদের পক্ষে কাজ করে যাবো। কারণ মানুষ এবং আমাদের কালিমা এক, ‘লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ।’ মুসলমান জীনের সরদার এই বক্তব্য দেবার পর ইবলিস জীনরা মারামারি শুরু করেছিল, তারপর মুসলমান জীন আর ইবলিস জীনে বড় রকমের যুদ্ধ হয়েছিল।’ ইবলিশ জীনরা সব সময় আদম সন্তানদের ক্ষতি করে, আর ভালো জীনরা আড়াল থেকে মানুষের সেবা করে।’

– জিয়ান কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করল, ‘ভার্সিটিতে যে মেয়ে আমাকে কিস করেছিল আর সিনিয়র ভাইকে থাপ্পড় দিয়েছিল সে কে ?’

অন্ধকার রুমে তুরেছা তৈয়েবী হাসতে হাসতে বলল, ‘আমি ছিলাম, তোর সাথে আমি গোসল করেছি বাথরুমে, তোকে উলঙ্গ দেখে আমার খুব পছন্দ হয়েছে, তারপর তোর সাথে সাজগোজে মানুষের রুপ ধরে ভার্সিটিতে গিয়েছি। রাতেও বৃষ্টির সময় ছাতা এবং সিএনজি দিয়ে তোকে আমিই সাহায্য করেছিলাম। আমি বিভিন্ন রুপ ধারণ করতে পারি, তোর সাথে একদিন দেখা করবনে।’

– ‘আপনার বয়স কতো তুছেবা তৈয়েবী ?’

– ‘তেরো বছর, তোর বয়স কতো ?’

– ‘সতেরো বছর, আমার আব্বু স্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন, তাই কম বয়সে শিখিয়ে পড়িয়ে স্কুলে ভর্তী করায় সতেরো বছরেই ভার্সিটিতে পড়ি।’

– ‘জানিস তোকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে, আমার বন্ধু হবে তুই ? তোকে মেঘের দেশে নিয়ে যাবো, সেখানে আমরা জীন পরীরা আড্ডা দেই। তবে সাবধানে থাকতে হবে আমাদের। যদি আমার ভাই জানে আমি মানুষের সাথে সম্পর্ক করেছি তোকে মেরে ফেলবে।’

– ‘না, আমি আপনার বন্ধু হতে চাই না, জীনদের আমার ভয় লাগে, আমি কালই মাকে নিয়ে এই বাসা ছেড়ে চলে যাবো।’

অন্ধকার রুমে একটা ভয়ংকর হাসির সাথে সেই অপরিচিত ঘ্রাণ আরও গাঢ় হল, আর তুরেছা তৈয়েবী গুনগুন করে গাইতে শুরু করল, ‘আমার জলে ভরা শান্ত ডোবায় ঢিল মেরে
জলের উথাল – পাতাল ঢেউ তুলে কেন ঢং করে।’

তুরেছা তৈয়েবীর গলার স্বর এখন জিয়ানের কাছে ভয়ংকর লাগছে, সে ভয়ে কাপতে কাপতে বলল, ‘ আপনার গলা এখন ভয়ংকর লাগছে কেন তুরেছা তৈয়েবী, আমার খুব ভয় করছে।’

তুরেছা তৈয়েবী আরও ভয়ংকরভাবে হাসি দিয়ে বলল, ‘তোর সাহস তো কম না, তুই জীনের কথায় কথায় তর্ক করিস ? কি বলছিস, আমার সাথে বন্ধুত্ব করবিনা ?’

-ধারাবাহিক চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here