অপরিচিত ঘ্রাণ পর্ব ১

অপরিচিত ঘ্রাণ
.
অন্ধকার রুমে জিয়ান একটা যুবতী মেয়ের উপস্থিতি আন্দাজ করলো, মিষ্টি কন্ঠে গুনগুন করে একটা যুবতী মেয়ে গান গেয়ে যাচ্ছে।
রুমে একটা অপরিচিত ঘ্রাণও পাচ্ছে সে । জিয়ান মুগ্ধ হয়ে গুনগুন গান শোনে চোখ বন্ধ করে নাক টেনে ঘ্রাণ নিচ্ছে। হঠাৎ তার খেয়াল হলো সে মুগ্ধ হবার কথা না ! তার অবাক হবার কথা, অবাক হয়ে বাতি জ্বালিয়ে দেখার কথা কে গান গায়, আর কোথা থেকে এই ঘ্রাণ আসে।
ক’দিন যাবত জিয়ানের সাথে এরকম অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটছে। সেদিন প্রথম সে ভার্সিটিতে গেল, কিছু সিনিয়র ভাইয়েরা হঠাৎ তাকে ডাক দিয়ে বলল, ‘ব্রাদার ভার্সিটিতে নতুন এলে মনে হয়।’

– ‘জ্বী ভাইয়া নতুন এসছি।’

– ‘তো বড় ভাইদের দেখলে সালাম করতে হয় না, সালাম না করেই চলে যাচ্ছ যে ?’

– ‘ভাই আমি আসলে সেভাবে খেয়াল করিনি।’

এক সিনিয়র ভাই একটা কাগজে কিছু একটা লিখতে লিখতে বলল, ‘আমার জন্য একটা কাজ করতে পারবে ?’

– ‘হ্যাঁ ভাই বলুন কি করতে হবে।’

– ‘দাড়া দেখি কোনো নতুন মেয়ে এসছে কিনা।’

খানিক পরে একটা মেয়ে এলো, ধবধবে সাদা পোশাক পরনে, অপরুপ সুন্দর একটা মেয়ে, চুল পেছন দিকে নিয়ে খোঁপা বাধা, খানিকটা লম্বাটে মুখ, সে ধীরে ধীরে হাটছে।

সিনিয়র ভাই কাগজ দিয়ে বলল, ‘এই সাদা পোশাকের সুন্দরী মেয়েকে কাগজ দিয়ে এসো।’

জিয়ান কাগজ হাতে নিয়ে মেলে দেখলো সেখানে লিখা, ‘প্লিজ কিস মি।’

জিয়ান মাথা নিচের দিকে দিয়ে বলল,’ভাই এই কাগজ আমি দিতে পারবো না।’
সাথে সাথে থাপ্পড় দিয়ে বলল, ‘শালা বেয়াদব, কাগজ না দিলে মাটিতে থুথু ফেলবো তুই সেটা চাটতে হবে।’
তারপর পাছায় লাথি দিয়ে বলল, ‘যা, দিয়ে আয় কাগজ।’
জিয়ান জানে ভার্সিটিতে আজকাল খুব অশ্লীলভাবে র‍্যাগিং হয়, তার সাথেও হচ্ছে।
জিয়ান কাঁপতে কাঁপতে কাগজটা মেয়ের সামনে নিয়ে ধরলো।
সে পুরোপুরি নিশ্চিত মেয়েটা কম হলেও ভার্সিটির সবার সামনে তাকে একটা থাপ্পড় দিবে। কিন্তু ঘটলো তার উল্টোটা, কাগজ হাতে না নিয়ে মেয়েটা মুচকি হেসে জিয়ানের চোখের দিকে তাকালো। জিয়ানের চোখের পাতা বন্ধ হয়ে গেল নিমিষেই, চোখ বন্ধ করে সে নাক টেনে মুগ্ধ হয়ে অপরিচিত একটা ঘ্রাণ নিচ্ছে। খানিক পরে মেয়েটা মুচকি হেসে জিয়ানকে কাছে টেনে নিয়ে সারা ভার্সিটির ছেলেমেয়ের সামনে ঠোঁটে চুমু খেলো ।
দৃশ্যটা দেখে সেই বড় ভাই আবার কাগজে ‘প্লিজ কিস মি’ লিখে নিজেই মেয়েটার সামনে এনে ধরলো, ‘সাথে সাথে গালে থাপ্পড় খেয়ে সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে রইলো, এরপর জ্ঞান ফিরলেও আর কানে শোনে না। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল, এই মেয়েকে আর কেউ আজ অব্দি ভার্সিটিতে দেখেনি।
এই বাসায় জিয়ানরা প্রথম যেদিন উঠলো, সে রাতে সেক্স ভিডিও দেখার জন্য সে পর্ণ সাইটে ঢুকার চেষ্টা করছে। কিন্তু পর্ণ সাইটের এড্রেস লিখে search দেবার সাথে সাথেই ফোন অফ হয়ে গেল। ফোন অন করে দেখলো ৭৯% চার্জ আছে, মনে মনে ধারণা করলো ফোনে হয়তো কোনো টেকনিক্যাল কারণে অফ হয়েছে। আবার সে চেষ্টা করল, আবার অফ হয়ে যায়। আবার অন করে দেখলো ফেইসবুকে ঢুকতে পারে কিনা, অদ্ভুত ব্যাপার হলো অন্য সবকিছু ঠিক আছে।
ক’দিন আগে হঠাৎ করে মধ্যরাতে জিয়ানের মা শায়লা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এতো রাতে ডাক্তার কোথায় পাবে। জিয়ান বাসার মালিকের দরজায় নক করে জিজ্ঞেস করলো এখন ডাক্তার পাবে কিনা, মালিক বলল, ‘এই পাড়ায় এতো রাতে গাড়ি পাওয়া যাবে না, শহরে হেটে যেতে হলে এক ঘন্টার বেশি সময় লাগবে। তারচেয়ে বরং এখান থেকে ত্রিশ মিনিট হেটে গেলে রাস্তার মোড়ে একটা ফার্মেসী পাওয়া যাবে, সেখানে ফার্মেসীতেই ডাক্তার ঘুমায়, তাকে ডেকে একটু অনুরোধ করলে বাসায়ও আসতে পারে। জিয়ান রাস্তায় বের হলো, খানিক পরেই শুরু হলো বৃষ্টি, ভাবছে বৃষ্টিতে ভিজে সে যেতে পারবে, কিন্তু এতো বৃষ্টিতে ডাক্তার আসবে কিনা। খানিক পরেই একজন ভদ্রলোকের দেখা মিললো, মাথায় কাচা পাকনা চুল, খানিক গোঁফ ও আছে। ছাতা মাথায় ভদ্রলোক জিয়ানের পাশে এসে বললেন, ‘আরে ভাই বৃষ্টিতে ভিজে কোথায় যান ?’
– ‘ভাই সামনের ফার্মেসীতে যাচ্ছি, ফার্মেসীও ঠিকমতো চিনিনা, তাও বৃৃষ্টি শুরু হয়েছে, কি করি বলুন তো ?’

ভদ্রলোক মুচকি হেসে বললেন, ‘আরে আমিতো সেদিকেই যাচ্ছি, চলেন আমার সাথে।’
কিছুদূর যাওয়ার পর ভদ্রলোক বললেন, ‘এইতো ফার্মেসী, আপনি ছাতা নিয়ে যান, আমার বাসা পাশেই ছাতা লাগবেনা।’ কথাটা বলেই ভদ্রলোক দ্রুত চলে গেলেন।
জিয়ান ফার্মেসীতে ডাকাডাকি করছে, কিন্তু ডাক্তার দরজা খুলছে না, অনেক্ষণ ডাকাডাকির পর ডাক্তার দরজা খুলে বিরক্ত গলায় বলল, ‘কি মশাই, এতো রাতে ডাকাডাকি করছেন কেন ?’
– ‘ডাক্তার সাহেব, আমার মা খুব অসুস্থ আপনি এখনই যেতে হবে।’
– ‘আরে ভাই বৃষ্টির মাঝে কই যামু, যান যান সরেন ডিস্টার্ব করবেন না।’
– ‘ভাই ছাতা আছে তো সাথে।
– ‘আরে মিয়া রাখেন আপনার ছাতা, বৃষ্টিতে হেটে হেটে যেতে পারবো না।’
খানিক পরেই শুনলো সিএনজির ডাক, জিয়ান হাত তুলে সিএনজিকে থামার জন্য ইশারা করলো।
জিয়ান তাকিয়ে দেখলো আগের সেই ভদ্রলোক, সে বিস্ময় নিয়ে বলল, ‘আরে ভাই আপনি ?’
– ‘হ্যাঁ ভাই, আমি সিএনজি চালাই।’
জিয়ান ডাক্তারকে বলল, ‘চলেন ডাক্তার সাহেব সিএনজি আছে, হেটে যেতে হবে না।’
সিএনজি যখন বাসার সামনে গিয়ে থামলো, জিয়ান ডাক্তারকে প্রথমে ছাতা দিয়ে বাসার ভিতরে দিয়ে এসছে ড্রাইভারকে ভাড়া এবং ছাতা দিতে। এসে দেখলো সিএনজি সহ ড্রাইভার উধাও, শুধু চারপাশে সেই অপরিচিত ঘ্রাণ।

অন্ধকার রুমে গুনগুন করে এখনও গান শোনা যাচ্ছে, রুমে কে গান গায় দেখার জন্য জিয়ান রুমের বাতি জ্বালালো। অশ্চর্যের ব্যাপার! বাতি জ্বালিয়ে দেখলো রুমে কেউ নেই, এখন গান বা ঘ্রাণ কিছুই শোনা যাচ্ছে না।
জিয়ান বাতি বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
হঠাৎ সে লক্ষ করলো, কে খিলখিল করে হাসছে, জিয়ান বিস্ময় নিয়ে বলল, ‘কে! কে হাসে ওখানে ?
– ‘তুই এমন কেন রে ? আমি ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য উলঙ্গ হলাম, আর তখনই তোর বাতি জ্বালিয়ে দিতে হল ? একটুর জন্য যে আমার সব দেখে ফেলছিলি।’
জিয়ান লক্ষ করলো এক তরুণী কথা বলছে! খুব মিষ্টি আর নরম স্বরে কথা বলে সে। জিয়ান আবার বিস্ময় নিয়ে একই প্রশ্ন ছুড়ে দিলো, ‘কে! কে কথা বলে ওখানে?’
– ‘আমি তুরেছা তৈয়েবী ।’
– ধারাবাহিক চলবে নাকি ?
লেখক: jobrul islam habib

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here