অবহেলার শেষে পর্ব ৪

#__অবহেলার__শেষে___(৪র্থ পর্ব)
লেখক সালাহউদ্দিন তারিক

ডিভোর্স লেটারটা বাবার হাতে পরতেই বাবা আমাকে ডাকতে থাকেন আর বলতে থাকেন “এই সব কি?মা মরছে এখনো ১৫ দিন হয় নাই এর আগেই তোরে ডিভোর্স দিছে?ও ভাবছে টা কি। আমার আগেই সন্দেহ হইছিল খালি যখন ওর মা আইসা বিয়া ঠিক করে গেছে। তোর মা তো খালি লাফাইছে পোলা ভালা পোলা ভালা কইয়া এখন যে তোর জীবনটা নষ্ট কইরা দিল।”
ততক্ষণে আমার ভাবি রান্না ঘর থেকে দৌড়ে আসে। এসেই বলতে থাকে
— “পোলাটা এতো ভালা ভাবছিলাম আর তার ভিতরে ভিতরে এই, মার পছন্দে বিয়া কইরা এখন মা মরতেই ডিভোর্স দিয়া দিছে। এতক্ষণে বুঝলাম তাইলে মনে হয় মারে খুশি করার লাইগাই বিয়া করছিল। এখন মা মইরা গেছে গা আর বউ ডিভোর্স দিয়া দিছে।”
আমি শুধুই অভিনয়ের কান্না করতে থাকি। ভাবী আমার মাথায় হাত দিয়ে বলতে থাকে “কান্দিস না আমরা আছি না, কাঁদতে হইব না তোর। আমরাই তোরে দেইখা রাখমু।”

আমি শুধুই অভিনয়ের কান্নাকাটি করে নিজের ঘরে এসে দরজা দিয়ে বসে থাকি। আর ভাবতে থাকি। সব কিছু তো আমার কারনেই হয়েছে সব দোষ আমার ওনার তো কোন দোষ নেই৷আমার পরিবারের সবার কাছে উনি এতো প্রিয় ছিল। আর আজকে সবাই ওনাকে নিয়ে কতো খারাপ মন্তব্য করতেছে৷ সব কিছুতে তো আমার ই দোষ। এখন যদি গিয়ে আমি আমার দোষের কথা বলি আব্বা আমাকে আস্ত রাখবেন না।

আমি ওই দিন রাতে বয়ফ্রেন্ড কে ফোন দিয়ে ডিভোর্স এর কথা জানাতেই ও যেন চমকে উঠে, আর বলতে থাকে, “কি বলো এই সব ফাজলামো বন্ধ কর, ডিভোর্স দিছে বললেই হয়ে গেল”?
আমি বলি “হ্যা মোহরানার সব টাকা আগেই পরিশোধ করা ছিল। বিয়ের দিনই দিয়ে দিছিল তাই সমস্যা হয় নাই”।
ও বলে “তবে এখন কি করব”.।
আমি বলি “তুমি এবার তোমার বাসায় জানাও”।
সে উওর দেয় ” কি বলছ তুমি বাসায় জানালেই হবে নাকি আমার বাড়িতে রাজি হবেনা,আর তাছাড়া ডিভোর্সি মেয়ে কি ভালো”।
আমি বলি “কি বলতে চাও তুমি? ডিভোর্সি মেয়ে ভালো না মানে আমি কি করছি? তোমার কথায় ই তো আমি আমার স্বামীর সংসার ছেড়ে আসছি এবার তুমি তোমার বাড়িতে জানাও”।
সে বলে “এটা কোন দিন ই সম্ভব না,আমি পারব না।আর তুমি যদি আমাকে বিয়ে করতে চাও তবে পালিয়ে বিয়ে করতে হবে”।
আমি বলি “পালিয়ে বিয়ে করব কেন, এতোদিন তো আমাকে জ্বালিয়ে মারছ খালি ডিভোর্স আর ডিভোর্স। এখন এই কথা বলতেছো কেন? আমি ওতো কিছু বুঝি না৷ তুমি কবে আমাকে বিয়ে করবে সেটা বলো।
সে বলে ” ইসলামি শরিয়ত তো বলে মেয়েদের ডিভোর্স হলে ৪ মাস (ফিকহের মাসায়ালাতে এটাকে তিন তুহুর ও বলা হয়,যদি এটা অনেক দিন আগে পড়েছিলাম যদি ভুল হয়ে থাকে আমাকে বলে দিবেন দয়া করে) ইদ্দত পালন করতে হয়। ঐ কয়টা দিন আগে শেষ হোক তারপর বলি”।
আমি বলি “আমার সেটা প্রয়োজন নেই, ঐটা প্রেগনেন্সি সিওর হওয়ার জন্য,আর আমাদের এমন কোন সম্পর্কই ছিলনা যে আমার বাবু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”
সে বলে, “তুমি বললেই হলো এমন কি সিওর আছে একসাথে ২ মাস থাকছ কতো কিছুই তো হতে পারে।”

আমি বলি, “কি বলতে চাও তুমি! তোমার কি আমার প্রতি বিশ্বাস নেই, আর আমি না করার পরেও তুমি এ কথাটা কিভাবে বলতে পারলে?”
সে বলে, ” বলতে পারলাম কি আবার তুমি কি দুধে ধোঁয়া তুলশী পাতা নাকি,না মহা মনীষী যে তোমার কথা বিশ্বাস করতেই হবে।”
আমি বললাম, “এই ৩ বছরে তুমি আমাকে এতো টুকু চিনছ? আমাকে এতো অবিশ্বাস হলো তোমার? নাকি আমাকে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই তোমার?”
সে বলে, “আমি জানিনা,আমি বাড়িতে কোন দিনই তোমার কথা বলতে পারব না।যদি পালিয়ে যেতে পারো তবেই আমি রাজি আছি।”

আমি পুরা উত্তাল সাগরের মাঝে পরে যাই। কোন দিক যাবো কোন কিছু মাথায় আসে না। এখন যদি পালিয়ে না যাই তবে ও আমাকে বিয়ে করবে না।আবার পালিয়ে গেলে আমার বাবার সব মানসম্মান ধুলায় মিশে যাবে। সবাই টিটকারী করবে। তার পর ও আমি বাধ্য হয়ে ওকে বলি যে, “হ্যা আমি পালিয়ে যেতে রাজি আছি।এখন বলো কবে বিয়ে করবে?”

সে বলে, “সেটা আমি কি বলব তুমিই ঠিক করো।আর টাকা মেনেজ হলে তারপর আমাকে বলবে।”

আমি বলি, “টাকা মেনেজ হলে মানে? টাকা কি আমি দিব নাকি?টাকা আমি কোথায় পাব?”

সে বলল, ” টাকা কোথায় পাবে মানে?দেনমোহর এর টাকা কি হইছে?”

আমি বলি, “দেনমনোহর এর টাকা উনি বিয়ের সময়ই পুরো টা দিয়ে দিছিল ওটা আব্বুর কাছ থেকে আমি নিতে পারবনা।”

সে বলে, “নিতে না পারলে বিয়ে হবে কি করে?আমি একটা টাকাও খরচ করতে পারব না।আমার কাছে কোন টাকা নাই।”

আমি বলি, “কি বলছ তুমি এই সব তোমার কাছে যদি বিয়ে করার মতো টাকাই না থাকে। আবার বাড়িতেও জানাতে না পারো তবে আমার সংসার ভাঙলে কেন?”

সে বলে, “আমিতো ভাবছিলাম দেনমোহর এর ২-৩ লাখ টাকা পাবা ওই গুলো দিয়েই হবে”।

আমি বলি, ” তুমি ইদ্দত পালনের কথা জানো তবে এটা জানো না স্ত্রী নিজে ডিভোর্স দিলে ওইটা খোলা তালাক বলে এতে স্বামীর টাকা দিতে হয়না উল্টো স্বামীকে টাকা দিয়ে ওই তালাক নিতে হয়।তুমি কেন তবে শুধু শুধু আমার সংসার ভাঙলে। ”

ও বলে, “দেখ যা হওয়ার হয়ে গেছে তুমি আবার চলে যাও আমার তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না ।”

আমি বলি, ” সম্ভব না মানে তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?যদি আমাকে বিয়েই না করো তবে আমার সাথে রিলেশন করলে কেন?”

সে বলে, “তোমার বিয়ের আগে হলে হয়তো বাড়িতে বলতে পারতাম।এখন তুমি একটা ডিভোর্সি মহিলা। ডিভোর্সি মহিলাকে বিয়ে কোন পরিবার মেনে নিবে? আর আমি ভাবছিলাম তুমি দেনমোহর এর টাকা পাবে সেটা দিয়ে না হয় বিয়ে করে নিব। পরে ২-১ বছর পরে বাড়িতে আসলে ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু এখন তুমিই টাকা দিতে পারবে না। তাই আমিও বিয়ে করতে পারব না। আর আমি তোমাকে আজ থেকে ভালোবাসি না। আমাকে আর ফোন দিবা না।”

এটা বলেই সে ফোন কেটে দেয়। আমি ফোন দিলে আর রিসিভ করে না। আমি কার জন্য সব ছেড়ে চলে আসলাম আজ সে আমাকে এই কথা বলতেছে? কার জন্য আমি এতো কিছু করলাম। আমি এখন কোন দিকে যাব। আমি আমার বাবা মাকে কি বলব। আর যদি আমি আবার আমার স্বামীর কাছে ফিরে যাই তবে উনার সামনে আমি কোন মুখে দাঁড়াবো। কিবা জবাব দিব ওনার কথা গুলোর৷ আমার চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে। এতো কিছুর চাপ সহ্য করতে না পেরে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফিরতেই দেখি আমার পাশে আমার মা আর ভাবী বসা।

ওনারা আমার অজ্ঞান হওয়াটাকে সেই ভাবেই দেখে যেভাবে আট আট দশটা নব বিবাহিত মেয়ের মাথা ঘুরে পরে যাওয়া আর অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটাকে দেখে। মানে আমি প্রেগনেন্সির কথা বলতেছি আর কি। কিন্তু আমি তো জানি যে আসলে কি হয়েছে। আম্মু চলে গেলে আমি ভাবীকে বলি যে, ” ভাবী তোমরা যা ভাবছ আসলে তা না।আমার অনেক টেনশন হচ্ছিল যার ফলে এমনটা হয়েছে।আর আমার প্রেগনেন্ট হওয়ার সুযোগ নেই।উনার সাথে আমার তেমন কোন সম্পর্কই ছিল না।”
আমার ভাবী বলে, “কি বলছো তুমি এসব ও তোমাকে ১ম থেকেই মেনে নেইনি।তুমি আমাদের বলো নি কেন”?

আমি কি বলব ভেবে পাইনা। কারন উনিতো আমাকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় নি। আমার জন্যই তো এই সব হলো। তাই আমি আর কোন উওর দিতে পারিনি শুধু বলি ” ভাবী বাদ দিন তো ওই সব আর বলবেন না।”
ভাবী ও আর কিছু বলে না,চলে যায়।
পর দিন আমি আবার আমার বয়ফ্রেন্ড কে ফোন দিই। তখন ও আমাকে যেই কথা গুলো বলে তা শুনে আমার মনে হয় এখনি আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যাক, আমার আর এই পৃথিবীতে থাকার প্রয়োজন নেই৷

(চলবে…)
(পরের পর্ব আগামীকাল রাত ৭:৩০ এর পরে পাবেন)

[শব্দ সংকেত=ইদ্দত==”ডিভোর্স তথা তালাক হলে মহিলাকে ৪ মাস কোন বিয়ে ছাড়াই অবস্থান করতে হয়, এই ৪ মাস চলার খরচ টা স্বামীকে দিতে হয়, যদি ও এখন আমাদের দেশে এটা উঠেই গেছে প্রায়।তবে এটা না মানলে অবশ্যই গুনাহগার হতে হবে] (কোন ভুল হলে জানাবেন)
[ খোলা তালাক == একটা স্ত্রী তার স্বামীকে বলে নিজের ইচ্ছায় যে তালাক নেয়।অনেক ক্ষেত্রে স্বামীকে টাকা দিয়ে এই তালাক নেয়।এটা হলো খোলা তালাক।এটা এখন বাংলাদেশে প্রচলিত নেই। কারন এদেশে স্বামী স্ত্রী উভয়ই তালাক/ডিভোর্স দেয়ার ক্ষমতা থাকে]
(আগের পর্ব টাইমলাইন এ পাবেন)

#___অবহেলার__শেষে___(৪র্থ পর্ব)
লেখক সালাহউদ্দিন তারিক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here