অবুঝ_পাখি পর্ব ১১

#অবুজ_পাখি
#নাম_না_জানা_পথিক
পাট:১১
রিফাত অফিসে কাজ করতেছিল এরকম সময় রুকু রিফাতকে ফোন দেয়।
রিফাত: হ্যালো বল
রুকু: ভাইয়া আলোক ভাইয়া বাসায় আসছে।
রিফাত: আলোক এখন বাসায় কি করে।
রুকু: দাদি আলোক ভাইয়াকে ডাকছে। আগে পরি আর আলোক ভাইয়ার বিয়ে হবে তারপর তোমার আর ফারিয়ার দাদি সব ঠিক করছে। পরি খুব কান্নাকাটি করতেছে। আমি কি করবো কিছুই বুঝতেছিনা।
রিফাত: তুই পরিকে কান্না করতে মানা কর। আমি বাসায় আসতেছি।
রুকু: তাড়াতাড়ি আয়।
রিফাত: ওকে বলে ফোন কেটে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
দাদি: রিফাত তুই এখন বাসায়?
রিফাত: কি করবো তোমাদের জন্য তো শান্তিতে অফিসটাও করতে পারতেছিনা মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যামু।
দাদি: কি হয়ছে। তুই কিসের কথা বলতাছোছ?
রিফাত: দাঁড়াও রুকু যা তো পরিকে এখানে নিয়ে আয়।
দাদি: ওখানে এসে কি করবে কি হইছে আমাকে বলবি তো?
রিফাত: তুমি নাকি আলোকের সাথে পরির বিয়ের তারিখ ঠিক করতাছো। এসবের মানে কি তুমি জানো না পরি আমার স্ত্রী ওর সাথে আমার বিয়ে হইছে।
দাদি: কিসের বিয়ে আমি মানি না এই বিয়ে ও হিন্দু তুই মুসলমান তোদের বিয়ে হতে পারে না।
রিফাত: পরির হাত ধরে বলে কে বলছে ও হিন্দু ও মুসলমান ও ইসলাম গ্রহন করছে ওর নতুন নাম নাফিসা মুনতাহা পরি।
আলোক যা করলো তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি
আলোক: পরিকে রিফাতের কাছ থেকে সরিয়ে ঠাসসস ঠাসসস করে পরিকে দুইটা থাপ্পড় মারলো ছিঃ তুই এতটা নিচ রিফাতের টাকা দেখে নিজের ধম ত্যাগ করলি। আরে আমার কাছে রিফাতের থেকে কম টাকা নাই। আমি তোর মতো একটা রাস্তার মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চাইছিলাম। এরকম কি আছে রিফাতের কাছে যেটা আমার কাছে যার জন্য তুই তোর ধমও ত্যাগ করে দিলি?
পরি: কি বলবে বুঝতেছে না পরির চারপাশ কেমন জানি ঝাঁপসা লাগতেছে। পরির চোখে একরাশ জল এসে হাজির হয়েছে সেগুলো শুধু মুক্ত ঝণার মতো নিচে পরার অপেক্ষায়।
রিফাত: আলোকের গালে সজোড়ে একটা থাপ্পড় দেয় তোর সাহস হয় কি করে আমার স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার যার গায়ে আমি কখনো একটা ফুলের টোকা লাগতে দেয়নি তুই কোন সাহস ওর গায়ে হাত দিলি বলেই রিফাত আলোককে এলোপাতালি মারতে লাগলো। অবস্থা বেগতিক দেখে রিফাতের আম্মু আর রুকু রিফাতকে টেনে আলোকের থেকে দূরে সরায়।
আলোক: তুই এই মেয়ের জন্য আমার গায়ে হাত তুলি তোকে এর কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
রিফাত: তুই আমার কোন বা**লটা ফালাবি সেটা আমার জানা আছে। তোকে যদি আর কোনো দিন আমাদের বাসার আশেপাশে দেখি তাহলে সেই দিন হবে তোর এই পৃথিবীর শেষ দিন।
আলোক পরির দিকে কঠোরভাবে তাকিয়ে রিফাতের বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।
দাদি: এই মেয়েটা বাসায় আশার পর থেকেই বাড়িতে এত ঝামেলা লেগেই আছে। অপয়া মেয়ে ছোট বেলায় নিজের বাবা-মাকে খেয়ে এখন আসছে আমার সুন্দর সংসারটা নষ্ট করতে।
পরির চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি পড়তেছে।
রিফাত: দাদি তুমি চুপ করবা এখানে পরির দোষটা কোথায়?
দাদি: এই মেয়েটার জন্যই তো আজ আলোক তোকে হুমকি দিয়ে গেল। যদি ও তোর কিছু করে ফেলে।
রিফাত: ওর ক্ষমতা আমার জানা আছে বলে রিফাত পরিকে তার রুমে নিয়ে গেল। পরি কান্না থামাও।
পরি কিছু না বলে শুধু কান্না করেই যাচ্ছে।
রিফাত পরিকে শক্ত করে তার বুকে জড়িয়ে নিল। পরিও জেনো এটারই অপেক্ষায় ছিল। পরি শক্ত করে রিফাতের বুক খামচে ধরে রিফাতের বুকে অঝর ধারায় কান্না করতেই আছে থামার কোনো নামই নাই। পরি কান্না করতে করতে রিফাতের শাট ভিজিয়ে ফেলছে।
রিফাত: পরি এত কান্না করলে মাথা ব্যাথা করবে। এখন একটু চুপ করো।
পরি: কিছুতেই কান্না থামাতে পারতেছে না।
রিফাত পরির ঠৌঁট দুটি নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। রিফাতের কাছে মনে হলো কান্না থামানোর এখন এই একটা উপায় আছে। পরি রিফাতের ঠৌঁটের শীতল স্পশ পেয়ে আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে যায় কান্না থেমে যায় দেখে রিফাত পরির ঠৌঁট ছেড়ে দিয়ে পরির জলে ভেজা দুই চোখে রিফাত গভীরভাবে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।
পরি: এখনও রিফাতের বুকে লেপ্টে আছে শক্ত করে রিফাতকে জড়িয়ে ধরে আছে মনে হয় ছাড়লেই চলে যাবে। দা দাভাই আ আমি কি সত্যি আপয়া আ আমার মামিও আমাকে এটাই বলতো। হেঁচকি তুলতে তুলতে কথাটা বলল।
রিফাত: চুপ তুমি মোটেও অপয়া না তুমি আমার অবুজ পাখি তুমি আমার কাছে আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ট উপহার। আল্লাহর কাছে যতই শুকরিয়া আদায় করি কম হবে।
পরি: রিফাতের কথায় একটা ভরসা খুঁজে পেলো। রিফাতকে আরও শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলো। দাভাই জানো আমি যাদের ভালোবাসি তারাই সবসময় আমাকে একা ফেলে চলে যায়। আমার বাবা-মা যখন মারা যায় তখন আমার কিছুই বুঝার বয়স হয়নি। তারপর একটু যখন বুঝতে শিখি দাদুও আমাকে ছেড়ে চলে যায়। তারপর আমার জীবনে সুখ নিয়ে আসলা তুমি। তুমিও কি ওদের মতো আমাকে একা ছেড়ে চলে যাবা।
রিফাত: পরিকে দুহাত দিয়ে পরিকে জড়িয়ে বললো আমার ভিতরে যত দিন প্রান আছে। আমি তোমাকে আমার থেকে দূরে যেতে দিবো না।
পরি: রিফাতের এইটুকু কথায় যেনো অনেক বড় একটা ভরষা পেলো পরি কান্না ভুলে গিয়ে রিফাতের বুকে তার হাটবিট শুনতে ব্যাস্ত হয়ে গেল।
এরকম সময় রিফাতের ফোনে অফিস থেকে একটা ফোন আসে তাকে এখন কিছু জরুরী কাজে যেতে হবে।
রিফাত: পরি আমাকে এখন একটু অফিসে যেতে হবে।
পরি: নাহহ এখন তুমি কোথাও যাবা না। তুমি এখন আমার সাথে থাকবা আমি তোমার বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকবো।
রিফাত: রাতে যত মন চায় শুয়ে থেকো। এখন যাওটা জরুরী। এখন ১২ টা বাজে না আমি ৫ টার মধ্যে চলে আসবো।
পরি: না গেলে হয়না মন খারাপ করে বললো।
রিফাত: আমার চাকরীর বেপার। আসার সময় তোমার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসবো।
পরি: দাভাই সত্যি আনবা কত দিন হলো আইসক্রিম খাইনা।
রিফাত: জ্বি নিয়ে আসবো বলে পরির কপালে আর দুই চোখে গভীর ভাবে চুমু দিয়ে রিফাত অফিসে উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
রিফাত অফিসে গিয়েই কাজে লেগে পড়ে। তার একটাই লক্ষ্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় ফিরা। রিফাত ৪ টার ভিতরে কাজ শেষ করে ফেলে। কিন্তু বের হবে বাহিরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে এই বৃষ্টিতে ড্রাইভ করা খুব রিস্ক তাই রিফাতে অপেক্ষা করে বৃষ্টি থামার কিন্তু বৃস্টি থামার কোনো নাম নেই তাই রিফাত বাধ্য বৃষ্টির মধ্যেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি হওয়ায় রিফাতের বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৪৫ মিনিট লেগে যায়। রিফাত পরির রুমে গিয়ে দেখে পরি রুমে নাই। রান্নাঘর, আম্মুর ঘর বারান্দা পরি কোনো জায়গাতেই নাই। রিফাতের ভিতর অজানা একটা ভয় জাগলো পরিকে হারানোর ভয়। দাদি পরিকে বাসা থেকে বের করে দেয়নি তো। রিফাত রুকুকে জিজ্ঞাস করলো পরি কোথায়? রুকু যা বললে তা শুনে রিফাতের মাথা যেনো আরও গরম হয়ে গেলো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here