অবুঝ_পাখি পর্ব ৩+৪

#অবুজ_পাখি
#নাম_না_জানা_পথিক
পাট:৩
রিফাত পরিকে নিয়ে তাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। দীঘ ৩ ঘন্টা পথ চলার পর রিফাত আর পরি পৌঁছায়।
রিফাত কলিংবেল দিতেই কাজের লোক মুনিয়া খালা দরজা খুলে দিল।
মুনিয়া খালা: খালাম্মা গো দেখেন রিফাত ভাই বিয়ে করে বউ নিয়ে আইছে।
আম্মু: রান্না ঘর থেকে এসে মুনিয়া এসব কি বলতাছোছ।
মুনিয়া খালা: এই দেখেন।
আম্মু: দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে রিফাতের সাথে একটা ১৪-১৫ বছরের মেয়ে বউয়র সাজে দাড়িয়ে আছে। রিফাত এসব কি হচ্ছে তোমার সাথে এই মেয়েটা কে?
রিফাত: সব বলতেছি আমাকে আগে ভিতরে তো আসতে দিবা। মুনিয়া খালা সবাইকে নিচে আসতে বলো।
আম্মু দরজার সামনে থেকে চলে গেলো। এখন বল কি হইছে?
রিফাত: সবাই আসুক বলতেছি।
দাদি: এই মেয়ে কে এখানা বউয়ের সাজে কি করে?
পরি: ভয়ে চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
রিফাত সবাইকে সব ঘটনা খুলে বললো। শুধু বিয়ের ঘটনা টা বলে নাই।
দাদি: তাই বলে একটা অন্য ধমের মেয়েকে এইভাবে বাড়িতে নিয়ে আসাটা তোর ঠিক হয় নাই।
রিফাত: ঐ সময়ে আমার যা ঠিক মনে হয়েছে আমি তাই করেছি।
আম্মু: এই বিষয়ে পরে কথা হবে মুনিয়া যাতো মেয়েটাকে রিফাতের পাশের রুমটা খালি ঐ রুমে নিয়ে যা।
মুনিয়া: আচ্ছা খালাম্মা। ঐ মেয়ে আসো।
রিফাত: পরিকে আমি নিয়ে যাচ্ছি। পরি আসো।
পরি চুপচাপ রিফাতের পিছনে যেতে লাগলো।
রিফাত: তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি এখন তোমাকে রুকুর একটা জামা দিচ্ছি ঐটা পড়ে নেও বিকালে তোমার জন্য জামা কিনতে যাবো।
পরি: শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো।
রিফাতও নিজের রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।
পরি: ফ্রেশ হয়ে এসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ঘরটা দেখতে লাগলো। পরি কখনো এর আগে এত বড় ঘর দেখেনি। পরি ঘুরে ঘুরে ঘর দেখতেছে এমন সময় রিফাত রুমে আসলো। পরি হটাৎ রিফাতকে দেখে কিছুটা চমকে গেল।
রিফাত: আমি আসতে পারি।
পরি: আপনার বাড়ি আপনার আসবেন জিগান কে
রিফাত: এই নেও এই ড্রেসটা পড়ে আসো।
পরি: আচ্ছা বলে পরি ড্রেসটা নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল। পরি কিছুক্ষন পর ড্রেস চেন্জ করে বের হলো।
রিফাত: জাস্ট আআ করে পরির দিকে তাকিয়ে আছে কালো রঙের থ্রি-পিছে পরিকে একটা ফুটন্ত কালো গোলাপ মনে হচ্ছে।
পরি: দাভাই তুমি এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন আমাকে দেখতে খারাপ লাগছে নাকি।
রিফাত: তোমাকে অনেক সুন্দর লাগতেছে পরি।
পরি: হুহ আমি জানি আমি সুন্দর একটা ভেংচি কেটে বললো।
রিফাত: হইছে আর নিজের প্রশংসা করতে হবে না এখন নিচে চল।
পরি: কেনো কিছুটা ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বললো।
রিফাত: লান্চ করতে।
পরি: কি করতে?
রিফাত: দুপুরের খাবার খেতে।
পরি: এটা বললেই হয়।
রিফাত: এখন চলো
রিফাত আর পরি নিচে চলে এলো লান্চ করতে।
রুকু: ভাইয়া এটা কি আমার ভাবি। দেখতে কিন্তু খুব সুন্দর।
পরি: ভাবি নামটা শুনে একটু মুচকি হাসলো।
দাদি: তুই চুপ করবি জাত পাত নাই কই থেকে আইছে অন্য ধমের মেয়ে। রুকুকে ধমক দিয়ে বললো।
আম্মু: রুকু খাওয়ার সময় কোনো কথা না। পরি খেতে বসো।
নিশি: এখন একটা বেধর্মী মেয়ের সাথে এক টেবিলে বসে খেতে হবে।
ইমন ভাইয়া: নিশি এগুলো কোন ধরনের কথা। পরি তুমি খেতে বসো। আমার কাছে রুকু যেমন তুমিও তেমন আমাকে ভাইয়া বলবা পরি ওকে
পরি: দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
রিফাত পরিকে তার পাশে বসিয়ে লান্চ কমপ্লিট করলো।
রিফাত: পরি একটু রেস্ট নিয়ে তোমাকে নিয়ে শপিং করতে যাবো।
পরি: আচ্ছা।
বিকালে রিফাত আর পরি শপিং এ যায়। পরি শক্ত করে রিফাতের হাত ধরে আছে। পরি আগে কখনো এতো বড় শপিং মল দেখেনি। রিফাত পরির জন্য অনেক গুলো ড্রেস কিনে সাথে রুকুর জন্য ও কিছু কেনাকাটা করে পরিকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে যায়। রেস্টুরেন্টে পরিকে রিফাত একটা ছোট বাচ্চার মতো নিজের পাশে বসিয়ে নিজের হাতে খাওয়াই দেয়। পরিও চুপটি করে খেয়ে নেয়। ডিনার শেষে রিফাত আর পরি বাসায় চলে আসে। পরি তার রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। আর রিফাত যায় রুকুর রুমে। রুকুর রুমে গিয়ে দেখে ফাহিম আর রুকু লুডু খেলতেছে।
রিফাত: আজ আমি শেষ ফাহিমের জন্য কিছু কিনতে একদম মন আসিলো না।
রুকু: ভাইয়া বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ভিতরে আসো।
রিফাত: হুম তোরা কি সারাদিন খেলোছ না একটু পড়তেও বসোছ।
ফাহিম: সারাদিন পড়ার উপরে থাকি এখন একটু টাইম পাইছি খেলার এখন আইছে জ্ঞান দিতে।
রুকু: ভাইয়া তোমার হাতে কি?
রিফাত: তোর জন্য কিছু ড্রেস আর কসমেটিক আছে। দেখ পচ্ছন্দ হয় কিনা।
রুকু: তুমি আনছো আর আমার পছন্দ হবে না তা হতে পারে আমার কিউট ভাইয়া।
ফাহিম: আমি তো কেউ না তাই আমার জন্য কিছু কিনো নাই
রিফাত: যেটার ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো। আমি অসহায় ভাবে রুকুর দিকে তাকালাম।
রুকু: আরে গাধা পরি আপুর জন্য শপিং এ গেছিল। তখন আমার জন্য কিনছে। এখন তোর জন্য ও কি মেয়েদের পোশাক কিনবো
ফাহিম: মেয়েদের পোশাক দিয়ে আমি কি করবো। আমি আমার রুমে যাই।
রিফাত: বোন বাচাইলি নাহলে আমারে কি যে করতো।
রুকু: কাল আগে ফাহিমের জন্য শপিং করবা।
রিফাত: ওকে আমি এখন যাই ফ্রেশ হতে হবে।
রুকু: ভাগো আমি এখন ড্রেস দেখবো।
রিফাত নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে যেই ঘুমাতে যাবে কে জানি দরজায় টোকা দিতে লাগলো।
রিফাত: এখন আবার কে আসলো। দরজা খুলে দেখে পরি দাঁড়িয়ে আছে। পরি কি হইছে
পরি: দরজা খোলার সাথে সাথে রিফাতের রুমে ঢুকে গেল।
রিফাত: কি হইছে
পরি: আমি ঐরূমে ঘুমাবো না আমি একা ঘুমাতে পারিনা। দাভাই আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।
রিফাত: ঘুমাও কিন্তু সকালে কেউ উঠার আগেই তোমাকে তোমার রুমে চলে যেতে হবে।
পরি: ঠিক আছে এখন ঘুমাতে দেও দাভাই।
রিফাত দরজা লাগিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো। পরি রিফাতের বুকে এসে শুয়ে রিফাত কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
রিফাত: আমার #অবুজ_পাখি টা
#অবুজ_পাখি
#নাম_না_জানা_পথিক
পাট:৪
সকালে ফযরের আজানে রিফাতের ঘুম ভাঙ্গে উঠে চোখ খুলে দেখে। পরি তাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। পরি এক পা রিফাতের পেটে দিয়ে দুই হাত দিয়ে রিফাতকে জড়িয়ে রিফাতের বুকে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থায় পরিকে অনেক নিশপাপ মনে লাগতেছে। মনে হচ্ছে একটা ফুটন্ত গোলাপ। রিফাত আলতো করে পরির কপালে একটা কিস করে ভাবতে লাগলো। পরি আমি যে তোমার মায়ায় আটকে গেছি কিন্তু আমাদের এই সম্পকের কি কোনো ভবিষ্যৎ আছে। কেউ কি আমাদের বিয়েটা মেনে নিবে। এসব ভেবে রিফাত একটা দীঘ শ্বাস ছাড়ে। আরেকটু পর সবাই উঠে যাবে পরিকে আমার রুমে দেখলে সমস্যা হবে। রিফাত পরিকে কোলে নিয়ে পরির রুমে নিয়ে শুয়িয়ে দিলো। রিফাত নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে চলে গেলো।
পরি: ঘুম থেকে উঠে দেখি আমাকে যে ঘরটাতে থাকতে দিছে আমি সেই ঘরে শুয়ে আছি। আমার তো স্পষ্ট মনে আছে যে আমি রিফাত দাভাইয়ের রুমে দাভাইকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলাম। দাভাইকে যখন জড়িয়ে ধরে ছিলাম মনে হচ্ছিল বুকের ভিতর কেউ ঢোল বাজাইতাছিল। কিন্তু আমি এই ঘরে আইলাম কেম্নে।
রিফাত: পরিকে নাস্তার জন্য ডাক দিতে গিয়ে দেখি পরি বিছানায় বসে এক আঙ্গুল মুখে দিয়ে বাচ্চাদার মতো কি জানি ভাবতেছে। পরি কি ভাবতেছো?
পরি: হটাৎ রিফাতের আওয়াজে চমকে উঠলো। নিজেকে শান্ত করে বললো আমি না রাতে তোমার ঘরে ছিলাম। এই ঘরে আসলাম কি করে?
রিফাত: কেউ যদি তোমাকে আমার রুমে দেখে ফেলতো তাহলে সমস্যা হতো তাই কেউ ঘুম থেকে উঠার আগে তোমাকে তোমার রুমে নিয়ে আসছি। তুমি ঘুমিয়ে ছিলা। তাই আর ডাক না দিয়ে আমি কোলে করে তোমাকে তোমার রুমে নিয়ে আসছি।
পরি: কিছুটা অবাক হয়ে বললো দাভাই তুমি আমাকে ডাক দিলেই পারতা।
রিফাত: ঘুমন্ত অবস্থায় তোমাকে অনেক কিউট লাগে তাই আর ঘূমটা নষ্ট করি নাই।
পরি: লজ্জা পেয়ে বললো আমি ফ্রেশ হতে যাই।
রিফাত: আমার অবুজ পাখিটা বলে রিফাত মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে গেল।
পরি ফ্রেশ হয়ে একটা মিষ্টি রঙের ড্রেস পড়লো। বসে বসে ভাবতেছে দাভাই আমাকে কোলে নিয়ে আসছৈ এই কথাটা শুনে আমার এত লজ্জা লাগলো কেনো আগেও তো কতবার মামার কোলে উঠেছি কখনো তো এইরকম লাগেনি। পরি এসব ভাবনায় মশগুল সেই সময় পরির রুমে রুকু আসে।
রুকু: আসতে পারি?
পরি: মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো।
রুকু: তুমি আমার থেকে ছোটই হবা তাই তুমি করেই বললাম।
পরি: জ্বি আপামনি।
রুকু: আপামনি মানে?
পরি: আপনি তো রিফাত দাভাইয়ের বোন তাই আপামনি বললাম।
রুকু: তুমি আমাকে নাম ধরে ডাকবা আমি তোমার থেকে এত বড়ও না। আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড।
পরি: আমরা কি পেন্ড!
রুকু: পেন্ড না ফ্রেন্ড মানে বন্ধু।
পরি: সত্যি আপনি আমার বন্ধু হবেন। জানেন আমার না কোনো বন্ধু নেই।
রুকু: বন্ধু হতেই তো আসলাম কিন্তু তুমি তো খালি আপনি আপনি লাগিয়ে দিছো বন্ধু কিভাবে হবো।
পরি: না না তুমি করে বলবো তো।
রুকু:এখন চলো নাস্তা করতে।
রুকু পরিকে নিয়ে নাস্তা করতে চলে গেলো। নাস্তা করে রুকু রিফাতের রুমে গেলো।
রুকু: ভাইয়া আসবো?
রিফাত: আমার রুমে আসবি এখানে জিজ্ঞাস করতে হয় নাকি।
রুকু: ভাইয়া তোমার আর পরির সম্পকটা কী?
রিফাত: মানে?
পরি: আমি সকালে দেখেছি তুমি পরিকে কোলে করে তার রুমে নিয়ে যাচ্ছো। এখন কাহিনী কি তাড়াতাড়ি বলো।
রিফাত পরিকে সব ঘটনা খুলে বললো।
রুকু: তারমানে পরি আমার ভাবি লাগে। ভাবি কিন্তু সেই। তোমারই দিন আর আমি সিংগেলই মরুম।
রিফাত: ফাজিল মেয়ে। শুন আম্মুকে বল কাল আমার কিছু ফ্রেন্ড আসবে।
রুকু: ওকে।
লোকডাউনের জন্য রিফাতের সারাদিন বাসায় কাটে।



রাতে কালকের মতো আজকেও পরি রিফাতের রুমে চলে আসে। কিন্তু দেখে আজকে ঘরের দরজা খোলা। দেখে শুয়ে আছে। পরি দরজা বন্ধ করে সোজা গিয়ে রিফাতের উপর শুয়ে পড়ে।
রিফাত: আমার পাখিটা আসছে তাহলে।
পরি: জামাই তুমি আমাকে পাখি বলো কেনো???
রিফাত: তুমি যে আমার পাখি তাই।
পরি: ইহহহ আমি মানুষ।
রিফাত: হইছে এখন ঘুমাও‌
পরি: রিফাত কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিফাতের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেল।

( আগামী পর্বে চমক আছে। আগামী পর্বে থেকে মূল কাহিনী শুরু হবে)

চলবে….
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here