অশ্রুমালা পর্ব ১৩+১৪

#অশ্রুমালা
part–13
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

সিএনজি তে করে বাড়ি ফিরছে আবেগ এবং রোদেলা। দুজন পাশাপাশি বসে আছে। রোদেলার দৃষ্টি আবেগের দিকে। আবেগ চোখজোড়া বন্ধ করে রেখে হেলান দিয়ে বসে আছে।

রোদেলা মনে মনে ভাবে, হয়তো আবেগ খুব বেশি ক্লান্ত।

বাসার গেটের সামনে সিএনজি এসে থামলো। রোদেলা বের হলো।

আবেগ নামতেই ড্রাইভার বলে উঠে, দুইশ টাকা ভাড়া।

আবেগ পকেটে হাত দিয়ে দেখে সঙ্গে মানিব্যাগ নেই। সে রোদেলা কে জিজ্ঞেস করল, টাকা আছে তোমার সাথে?

রোদেলা উত্তর দিল, না।

–উপর থেকে নিয়ে আসো।

–আচ্ছা। বলে রোদেলা উপরে গেল।

আবেগদের বাসা তিনতলায়। সে সিড়ি বেয়ে বাসায় ঢুকতেই মামা-মামীর সম্মুখীন হতে হলো।

রোদেলা কে দেখেই মামা প্রশ্ন করে, আবেগ কোথায়? মেঘ তো বললো ওকে রিলিজ করে দিয়েছে। তাহলে কোথায় ও?

রোদেলা কিঞ্চিৎ হেসে বলে, হু। নিচে দাঁড়িয়ে আছে৷

মামী কাঠ গলায় বলে, নিচে কেন দাঁড়িয়ে আছে ও?

–মামী, আমাদের কাছে টাকা নেই। সিএনজি ওয়ালাকে ২০০ টাকা দিতে হবে।

একথা শুনতেই মামা বলল, মা তুই রুমে যা। আমি দিয়ে দিচ্ছি।

বলে মামা নিচে নেমে গেলেন।

ইমতিয়াজ রহমান নিচে নেমে আসলেন। তিনি দেখলেন, আবেগ সিএনজি চালকটার সাথে কথা বলছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কোন কথা চলছে।

আবগ তার বাবাকে নেমে আসতে দেখে বলে উঠে, আব্বা তুমি কেন আসতে গেলে? কাউকে পাঠিয়ে দিতে।

–দরকার কি? আমিই নেমে আসলাম। বলে উনি আবেগের হাতে টাকা দিলেন।

আবেগ সিএনজি ওয়ালাকে টাকা দিতে দিতে বলল, আপনার পায়ে ইনফেকশন হয়েছে। এন্টিবায়োটিক যেটার নাম লিখে দিলাম সাত দিন খান। ব্যথা না কমলে ডাক্তার দেখাবেন। দিনে একটা মানে হলো চব্বিশ ঘন্টায় একটা খাবেন। আর অবশ্যই ভরা পেটে খাবেন।

লোকটা টাকা পকেটে ঢুকিয়ে বলে, আচ্ছা ডাক্তার সাহেব৷

আবেগ হাটা ধরল সামনের দিকে। তার বাবা পিছনে পিছনে এসে বলে, শোন আবেগ?

আবেগ থেমে গিয়ে বলে, কি?

–তুই কি আমার উপর রেগে আছিস?

আবেগ কথা না বাড়িয়ে সোজাসোজি বলে, রাগ করে কি কোন লাভ হবে আব্বা? যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে তাই না?

এরপর কঠিন গলায় বলে, আর যা চেয়েছো তাও হয়েছে। আর তুমি চিন্তা করিও না। সমুদ্রের দায়িত্ব আমার। ওর দায়িত্ব টা আমি নিজের মনের সম্মতি তে নিয়েছি। সমুদ্র কে নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। ওকে বড় করার দায়িত্ব আমার। সমুদ্রকে আমি নিজের সন্তান মানি। আগামীতে ওর বাবা হিসেবেই সবাই কে পরিচয় দিব।

এইটুকু বলে আবেগ আগাতে যাবে তার আগেই ইমতিয়াজ রহমান বলে উঠে, আর রোদেলা? ওকে মেনে নিয়েছিস?

আবেগ হাটা না থামিয়ে আগাতে আগাতে বলল, জানি না। এটার উত্তর অন্য কোনদিন দিব। তবে অবশ্যই চেষ্টা চালাব। যদি সফল হই তাহলে খুবই ভালো আর,,,,,

ইমতিয়াজ রহমান বলে উঠে, আর না হলে কি করবি? ছেড়ে দিবি?

আবেগ বিরবির করে বলে, জানি না। তবে যতটুকু জানি ছেড়ে দেওয়ার জন্য তো বিয়ে করিনি!

আর কোন কিছুর উত্তর দিল না আবেগ। উপরে উঠে গেল।

বাসার সামনে আসতেই আবেগ বুঝতে পারল, তার মা নিশ্চয়ই রোদেলাকে কঠিন কোন কথা শুনাচ্ছিলেন। রোদেলার মুখটা কালো হয়ে আছে।

আবেগ সেদিকে কর্ণপাত না করে ভেতরে ঢুকে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

মামী রাগীচোখে রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলে, আমার ছেলেটার জীবনটাই শেষ করে দিচ্ছে এই অলক্ষী মেয়েটা।

রোদেলা প্রতিউত্তরে কিছু বললো না। চুপচাপ মাথা নিচু করে ফেলে।

মামা উপরে আসলে মামা-মামী তাদের রুমে চলে যায়।

রোদেলা ইভানার রুমে গেল।

সে দেখল সমুদ্র আর ইভানা দুজন ই ঘুমিয়ে আছে।

রোদেলা সমুদ্র কে কোলে তুলে নিল। খাওয়াতে হবে সমুদ্র কে। সেই কখন খাইয়েছে তারপর তো সে ছিল ই না বাসায়। রোদেলা ছেলের কপালে চুমু খেয়ে নিল।

রুমে কারো উপস্থিতি দেখে ইভানা চোখ খুলে। সে উঠে বসে বলে, ভাবি! ভাইয়া কোথায়? ঠিক আছে ও?

–হ্যা। আবেগ ঠিক আছে। রুমে গেল মাত্র৷ বাবু কি কান্না করেছিল?

–প্রথমের দিকে ঠিক ছিল। কিন্তু রাত তিনটার দিকে খুব কান্না করছিল। থামতেই ছিল না। আমি তো আর কান্না থামাতে পারি না।

রোদেলা বিচলিত হয়ে গেল এবং বলল, তারপর কিভাবে ঘুমালো?

–আম্মু ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। সমুদ্র বেবিকে কাদতে দেখে আমার রুমে এসে ওকে নিয়ে গেল। ঘন্টাখানেক পর আমার পাশে শুইয়ে দিয়ে গেল। ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি মা ওকে।

রোদেলা মৃদ্যু হাসল। যাক মামীর একটু হলেও তার ছেলের জন্য মায়া আছে। এটাই তার কাছে অনেক বড় পাওয়া।

রোদেলা সমুদ্র কে নিয়ে রুমে গেল। রুমে যেতেই দেখল আবেগ দরজার দিকেই তাকিয়ে আছে। মনে হয় তার আসারই অপেক্ষায় ছিল।

রোদেলাকে আসতে দেখে আবেগ বলে উঠে, এতোক্ষন কোথায় ছিলে?

–ইভানার রুমে। তুমি ফ্রেস কেন হও নি?

এই কথার জবাব না দিয়ে আবেগ উঠে দাড়ালো এবং তার কাছে গিয়ে উকি মেরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলেন,সমুদ্র তো ঘুমাচ্ছে।

রোদেলার সমুদ্রকে কোলে নিয়েই একটু নড়াচড়া করে বলে, হু। ঘুমিয়ে আছে৷

–ওর কি খিদা লাগে নি?

রোদেলা একবার আবেগের দিকে তাকালো তারপর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, খিদা লাগলে তো উঠে কান্না জুড়ে দিত। তাহলে মনে হয় না খুদা লেগেছে। ঘুম থেকে উঠলে খাওয়াব। কিন্তু তুমি ফ্রেস হও নি কেন?

আবেগ সাবলীল ভাবে বলে, একটা হেল্প লাগবে।

আবেগের মুখে এমন ফর্মালিটিমার্কা কথা শুনে রোদেলা কিছুটা টাস্কি খেল।

এবং বলল, হ্যা বল।

আবেগ তার ডান হাত নাড়াতে নাড়াতে বলে, আমার হাতটা মচকে গেছে বোধহয় । নড়াতে পারছি না। নড়াতে গেলেই ব্যথা করছে।

–এজন্য বাথরুমে যাও নি?

আবেগ মাথা নাড়িয়ে বলে, হ্যা। শার্ট খুলতে পারছি না। একটু বোতাম গুলো খুলে দাও৷

রোদেলা সমুদ্র কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আবেগের সামনে দাড়ালো।

তারপর দুই হাত আবেগের শার্টের প্রথম বোতাম ঘরে রাখতে গিয়ে থেমে গেল। কেমন যেন একটা দ্বিধা কাজ করছে তার।

আবেগ বললো, কোন সমস্যা? সমস্যা থাকলে ইটস ওকে। আমি ম্যানেজ করে নিব।

–না। না করছি বলেই রোদেলা শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। আলতো ছোয়া লেগে যাচ্ছে আবেগের বুকে। এতে যেন রোদেলাই কেপে উঠছে। তার মনে বৃহৎ পরিমাণ সংকোচ! সে ইচ্ছা করেই মাথা নিচু করে রেখেছে। আবেগের দিকে তাকানোর সাহস নেই তার।

শার্ট খুলে দিতেই আবেগ থ্যাংকস বলে বাথরুমে চলে গেল।

তখনি সমুদ্র জেগে উঠে। রোদেলা শার্ট সুন্দর করে গুছিয়ে রেখে সমুদ্রের কাছে গেল।

মাকে দেখতে পেয়েই ছোট্ট সমুদ্র হেসে দিল। রোদেলা তার গালে চুমু দিয়ে খাওয়াতে শুরু করে।

ঠিক তখনই আবেগ বাথরুম থেকে বের হলো। রোদেলাকে এই অবস্থায় দেখে সে কিছুটা বিব্রত হয়ে বলে উঠে, আমি বারান্দায় যাচ্ছি।

রোদেলা নড়েচড়ে উঠে বলে, সমস্যা নাই৷ তুমি শুয়ে পড়ো।অনেক ক্লান্ত তুমি।

বলে খানিকটা সরে এলো৷ কিন্তু আবেগ রোদেলার কথা শুনল না। সে বারান্দায় চলে গেল।

★★★

অথৈ আগাচ্ছে। জোড়ে জোড়েই আগাচ্ছে সে। কিন্তু পেছন থেকে আসা পায়ের শব্দ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না সে৷ পায়ের শব্দটা তাকে ফলো করেই চলেছে৷ অথৈয়ের গা ভিজে শেষ ঘামে। কপালে, নাকের ডগায়, বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। সে একটা ঢোক গিলল। আসার সময় ফোন ও আনে নি সঙ্গে। এখন কি করবে সে? যদি পেছন থেকে কোন দুষ্টু লোক এসে তাকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে গুম করে ফেলে? এইসব ভাবতেই তার কান্না চলে এলো। কি করবে সে!

অথৈ বারবার আশেপাশে তাকাচ্ছে কিন্তু নাহ দূর দূর কেউ নেই। সে থেমে গেল। তারপর রাস্তার এক সাইড থেকে একটা ইট কুড়িয়ে নিল। এবং অন্য হাতে এক মুঠো বালি হাতে পুড়ে নিল।

পায়ের শব্দটা নিকট থেকে নিকটতর হতেই অথৈ কোন কিছু পরোয়া না করে নিজের চোখ বন্ধ করে পেছন ঘুরে সামনের দিকে না তাকিয়েই তার হাতে পুরে রাখা বালুর দলা সামনের ব্যক্তির চোখের উপর ছিটকে মারল।

আর সঙ্গে সঙ্গে মেঘ চিৎকার দিয়ে বলে ,ও মা গো! আমার চোখ!

মেঘের কন্ঠ পেতেই অথৈ চোখ খুলে ফেলে এবং দেখতে পেল মেঘ তার দুই হাত দিয়ে চোখ ঘষছে।

অথৈ বুঝতে পারল সে অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছে। কিডন্যাপারের জায়গায় মেঘের চোখে বালু দিয়ে দিয়েছে।

চোখ ঘষতে ঘষতে মেঘ বলে উঠে, কি সমস্যা টা কি তোমার? সস্যা কি মাথায় নাকি অন্য জায়গায়? আমার চোখে বালু কেন মারলা?

তারপর মেঘ এক দন্ড থেমে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নিয়ে কটমট গলায় বলে, বাই এনি চান্স তুমি কি ছিনতাই করতে চাচ্ছিলা নাকি? এরকম নির্জন রাস্তায় পথচারীকে একা পেয়ে আক্রমণ করে টাকা-পয়সা, মানিব্যাগ কেড়ে পালাতে নাকি?

একথা শুনে অথৈ টাস্কি খেল। বলে কি ও? সে কেন ছিনতাই করতে যাবে? বরং তাকে কেউ কিডন্যাপ করতে চাচ্ছে।

মনের কথা মনে রেখেই অথৈ বলে, তোমার কি আছে যে ছিনতাই করব? মানিব্যাগে দুই টাকাও পাওয়া যাবে না।

একথা শুনে মেঘ কিছু না বলে শুধু বলল, পানির বোতলটা দাও। চোখে পানি দিব। খচখচ করছে৷

অথৈ কিছু না বলে ব্যাগ থেকে পানি বের করে দিল।

মেঘ জানত অথৈয়ের ব্যাগে পানি থাকবেই। অথৈর স্বভাব হলো কোথাও যাওয়ার আগে সঙ্গে এক বোতল পানি নিবে।

সে বোতল খুলে পানি চোখে দিল। কিছুটা আরামবোধ করলে পানি দেওয়া থামিয়ে দিয়ে মুখ লাগিয়ে পানি খেতে লাগলো।

সঙ্গে সঙ্গে অথৈ চেচিয়ে উঠে বলে, বোতলে মুখ কেন লাগাচ্ছো? উপর দিয়ে খাও।

মেঘ শুনেও না শোনার ভান ধরে মুখ লাগিয়ে পানি খেল। সে আবার বোতল উপর করে মুখ হা করে পানি খেতে পারে না।সে বোতলে মুখ লাগিয়ে পানি খেয়ে নিল।

অথৈ মেঘের হাত থেকে বোতল টা নিয়ে ফেলে দিল।

তা দেখে মেঘ অবাক হয়ে গেল এবং বলল, বোতলটা ফেলে দিলা কেন?

অথৈ বলে, আমি কারো মুখ লাগানো বোতলে পানি খাই না।

মেঘ এবার বলল, এবার বল তো! কি করতে চাচ্ছিলে তুমি?আমার কাছ থেকে জিনিসপত্র নিয়ে কোথায় পাচার করতে? তোমাদের দলের লিডার কে? সব ইনফরমেশন দাও।

অথৈ গলার তেজ বাড়িয়ে দিয়ে বলে, তোমার মতো ফকিরের কাছে ছিনতাই করার শখ আমার নাই।

একথা শুনে মেঘ তার ওয়ালেট বের করল। এবং ওয়ালেট থেকে ক্যাশ দশ হাজার টাকা বের করে অথৈয়ের সামনে এনে বলে, দশ হাজার ক্যাশ নিয়ে ঘুরি আর আমার ফোনটাও দামি! চল্লিশের কাছাকাছি। ওয়ান প্লাস কোম্পানির।

অথৈ চোখ-মুখ লাল করে বলে, তুমি আমাকে টাকার গরম দেখাচ্ছো? আমাকে? (থরথর করে৷ কাপতে কাপতে বলল)

অথৈ আবারো রাগী গলায় বলে উঠে, দুই দিনের বৈরাগী ভাতকে যে অন্ন বলে এই প্রবাদ তোমাকে দেখেই সৃষ্টি হয়েছে। আর দামি ফোনের অহংকার দেখাচ্ছো আমাকে? ভুলে যেও না তোমার প্রোফাইলে যত গুলো ডিপি আর কভার পিকচার আছে না? সব আমার ফোনে তোলা। আগে তো কমদামি ফোন ইউস করতা এখন ক্যাডার হয়ে আমাকে টাকার গরম দেখাচ্ছো?

মেঘ বুঝতে পারছে অথৈ রেগে গেছে। এখন এসব উল্টা-পাল্টা কথা বলতেই থাকবে। এটাও অথৈয়ের একটা বৈশিষ্ট্য৷ রেগে গেলে যা খুশি তাই বকতে থাকবে।

মেঘ এবার মুখ খুললো এবং বললো আচ্ছা যাও আজকে বাসায় গিয়েই তোমার ফোনে তোলা সব ছবি অনলি মি করে দিব তারপর আস্তে করে বলে, ছবি অনলি মি করে দিতে পারলেও তোমাকে অনলি মি করতে পারলাম না। ব্যর্থতা!

অথৈ ততোক্ষণে হাটা ধরেছে৷

মেঘ জোড়ে আওয়াজ করে অথৈ বলে ডেকে উঠে।

এক বছর পর মেঘের মুখে নিজের নাম শুনে থময়ে যায় অথৈ। তার চোখ ভিজে উঠতে লাগে তাই তো পিছনে তাকালো না। সে চায় না মেঘ তাকে দুর্বল ভাবুক। কোন ক্রমেই সে এটা চায় না৷

মেঘ কিছুক্ষন চুপ থাকল। প্রতিউত্তরে কিছু শোনার আশায়। কিন্তু অথৈ না কিছু বললো আর না পেছনে তাকালো। বরং তাকে উপেক্ষা করে আগাতে লাগলো।

মেঘ এবার বলে, ফ্লাস্কটা নিয়ে যাও। এটা পেপসি-মিরিন্ডার বোতল না যে ফেলে দিবা। উঠায় নিয়ে যাও। গরম পানি দিয়ে ধুলেই হবে।

কিন্তু অথৈ মেঘের কোন কথায়ই কান না দিয়ে অনেক জোড়ে জোড়ে হাটতে লাগলো।

তার দিকে কিছু সময় হতভম্ব হয়ে চেয়ে থেকে মেঘ বোতলটা কুড়িয়ে নিল।

তারপর অথৈয়ের পিছে আসতে লাগল। কিন্তু মেঘ এবার আর অথৈয়ের হাটার গতির সাথে পারল না। তাদের মাঝে অনেকটা, অনকটা দূরত্ব চলে এসেছে!

ঠিক যেমন তাদের মনের মাঝে বিঘা বিঘা জমি পরিমাণ দূরত্ব বিরাজ করছে।

★★★

প্রাচুর্য আর নেহা ঘন্টা খানেক আগেই নেহার বাসায় এসেছে। তারা বর্তমানে নাস্তার টেবিলে বসে আছে। শুধুমাত্র প্রাচুর্যের জন্য আজকে নেহা তার বাবার কাছ থেকে বকা খাওয়া থেকে বেচে গেছে৷

নেহা বাসায় ঢুকতেই দেখতে পায় তার বাবা-মা গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে।

নেহার বাবা রাগী চোখে তাকিয়ে ছিল। বাবাকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় নেহা। সে তো ভেবেছিল আজকে আর রক্ষা পাচ্ছে না সে!

কিন্তু প্রাচুর্য এসে তাকে বাচিয়ে দিল। সে বাসায় ঢুকে বলে, চাচ্চু! কেমন আছো?

নেহার বাবা প্রাচুর্য কে কিছুটা স্বস্তি পেয়ে বলে, ভালো। তুমি আর নেহা একসাথে ছিলে?

–হ্যা। চাচ্চু। আসলে কাজিনরা নাইট স্ট্রে করছিলাম কালকে আমাদের ফার্মহাউসে। মিতু আপুর বিয়ে ঠিক হওয়ার সেলিব্রেশন করছিলাম।

–আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলে না?নেহা বাসায় নেই, কিছু বলে যায় নি। চিন্তায় আমার আর ওর মায়ের ঘুম হয় নি৷

–সর‍্যি চাচ্চু। আর এরকম ভুল হবে না।

নেহার বাবা বলে উঠে, ওকে। এইবারের মতো মাফ করলাম। নেক্সটে যেন আর না হয়। ব্রেকফাস্ট করে যাবে কিন্তু।

প্রাচুর্যের কথা বিশ্বাস করে নেয় তিনি। তাই নেহাকে আর কিছু বলেন নি।

ব্রেকফাস্ট এ প্রাচুর্য আর তার বাবা নাস্তা খাচ্ছে৷ কিন্তু নেহার খাওয়ার একদম ইচ্ছা নেই। সে খুব করে অন্য রুমে চলে যেতে চাচ্ছে কিন্তু বাবার জন্য পারছে।

প্রাচুর্য নাস্তা শেষ করে বলে, চাচ্চু আমি বিকেলে নেহাকে শপিংয়ে নিয়ে যাব৷

–আচ্ছা।

প্রাচুর্য উঠে দাড়ালো এবং বলল, ওকে রেডি থাকতে বললেন।

★★★

আটটা কিংবা সাড়ে আটটা বাজে। আবেগের ঘুম ছুটে গেল। আজকে সমুদ্রকে মাঝখানে দেওয়া হয়েছিল আর রোদেলা ওপাশে শুয়েছে।

আবেগের চোখ জোড়া খুলতেই সমুদ্রের কাছ গেল। একি! সমুদ্র তো জেগে গেছে।

আবেগ মৃদ্যু হেসে কোলে তুলে নেয় সমুদ্র কে।

তারপর রোদেলার দিকে তাকায়। রোদেলা ঘুমাচ্ছে।

আবেগ কি ভেবে সমুদ্র কে বারান্দায় নিয়ে গেল। সকালের সূর্য এর আলো বাচ্চাদের গায়ে মাখাতে হয়।

বারান্দায় গিয়ে বোধহয় সমুদ্র খুব খুশি হলো। তার আর হাসি থামছেই৷

আবেগ আদরমাখা গলায় বলে উঠে, আব্বাহুজুর! আপনার ভালো লাগছে?

সমুদ্র বুঝলো কিনা কে জানে কিন্তু হেসে দিল।

তা দেখে আবেগ নিজেও হেসে সমুদ্র কে আদর করতে লাগলো। অনেকগুলো চুমু খেল সমুদ্রের হাতে৷

তারপর বলল, দেখো আব্বাহুজুর! কি সুন্দর একটা বিড়াল! ( রাস্তার পাশ দিয়ে একটা বিড়াল যাচ্ছিল)

সমুদ্র আবারো হেসে দিল।

এভাবে এক ঘন্টা থাকার পর রুমে আসল আবেগ। ততোক্ষনে সমুদ্র আবারো ঘুমিয়ে গেছে। তাকে বিছানায় শোয়াতে গিয়ে রোদেলার মুখোমুখি হতে হলো আবেগকে।

আবেগ রোদেলা কে দেখতে লাগলো। রোদেলার সামনের ছোট ছোট চুল গুলো মুখের উপরে এসে পড়েছে।

আবেগ কোন রকম সংকোচ না করে রোদেলার চুল গুলো সরিয়ে দিল এবং হুট করে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে বসে তা হলো রোদেলার কপালে চুমু দিয়ে দেয়!

হুট করে এমন কাজ কেন করে বসলো জানে না আবেগ! কিন্তু এই কান্ড ঘটানোর পর পাক্কা দশ মিনিট সে হা হয়ে রোদেলার দিকে তাকিয়ে ছিল।
#অশ্রুমালা
part–14
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

রোদেলা ঘুমের মাঝেই হালকা নড়ে উঠল। খানিকটা মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো ঘুমের মধ্যেই রোদেলা। এরপর অন্য পাশ ফিরে সমুদ্রের জন্য যেই কোলবালিশ রাখা হয়েছে সেটাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল।

এই দৃশ্য দেখে আবেগ কেন যেন আনমনে হেসে দিল আর মনে মনে বলল, কে বলবে এই মেয়ে কোন বাচ্চার মা!

আবেগের মনটা মূহুর্তের মধ্যে বিষিয়ে গেল৷ কেন যে হুট করে মন খারাপ হলো বুঝে উঠতে পারল না।

রোদেলা আবারো নড়চড় করতে লাগলো। এক পলকের জন্য আবেগের মনে হলো রোদেলা সজাগ আছে। যখনি এমন ভাবনা মাথায় এলো তখনি আবেগের মধ্যে একটা লজ্জা কাজ করতে লাগলো। সে মনেপ্রাণে চাচ্ছে রোদেলা যেন বুঝতে না পারে একটু আগে সে কি কান্ড করেছে।

এই চিন্তার সাথে আবেগের মাথায় একটা উদ্ভট চিন্তা এলো তাহলো এই যে সে সমুদ্র কে কতো গুলো চুমু খেল কই তখন তো এতো সংকোচ বা লাজলজ্জা গ্রাস করেনি তাকে? কিন্তু রোদেলার বেলায় তার মরে যেতে মন চাচ্ছে৷ তাহলে কি বয়স ভেদে ঔষধের মতো আদর করার প্যাটার্ন বদলে যায়?

অবশ্য ই! একটা বাচ্চার মতো যদি কোন মেয়েকে কেউ আদর করে চুমু খায় তাইলে তো সেই লোকের একটা হাড্ডিও আস্ত থাকবে না।

আবেগ নিজের চিন্তার করার টপিক দেখে ভ্রু কুচকালো। এসব কি চিন্তা করছে সে? উল্টা-পাল্টা জিনিস সম্পর্কে কেন সে চিন্তা করবে?

আগে তো সময় পেলেই পড়তে বসত। আবেগ ঠিক করল আজকে সারা দিন স্টাডি করবে।ডাক্তার হওয়ার ফাস্ট এন্ড ফরেফাস্ট কন্ডিশন হচ্ছে চুল পাকা অব্দি পড়াশোনা করে যেতে হবে!

আবেগের খুব ইচ্ছা কার্ডিওলোজির উপর ডিগ্রি নেওয়ার। একজন কার্ডিওলজিস্ট হতে চায় সে!

বাংলাদেশে আজকাল এমবিবিএস ডাক্তারের কোন খাওয়াই নেই। সব ডাক্তারদের নামের আগে কতো গুলো করে ডিগ্রি ঝুলানো! সেখানে সে মাত্র একজন এমবিবিএস ডাক্তার। ডাক্তারি পড়ে বেরুনোর বেশি দিন হয় নি। মাত্র পাঁচ বছর হয়েছে পাশ করার। এখন তার বয়স বত্রিশ। সাতাশে পাশ করেছে ডাক্তারি। আবেগের সিনিয়র রা বলে তার নাকি ডাক্তারি হাত খুব ভালো। আবেগের রেজাল্ট ও আউটস্ট্যান্ডিং ছিল বরাবর সব প্রফেই। লাস্ট এন্ড ফাইনাল প্রফে সবচেয়ে ভালো ছিল তার রেজাল্ট! আবেগের মনে আছে ফাইনাল প্রফের আগের দিন সেই যে সন্ধ্যা ছয়টায় পড়তে বসেছে এক বোতল পানি নিয়ে। পরের দিন সাতটায় চেয়ার ছেড়ে ফ্রেস হয়ে মেডিকেলে গিয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টা টু সকাল সাতটার মাঝে জাস্ট বাথরুম করতে আর খেতে উঠেছে। এখন চাকরি আর জীবিকার তাড়নায় সেভাবে পড়া হচ্ছে না৷

আবেগ তার বুক সেল্ফের দিকে এগিয়ে গিয়ে বই বের করে পড়তে লাগে।

“পড়াশোনা করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে। “– এইটা কতোটুকু সত্য প্রবাদ জানে না আবেগ কিন্তু তার এখন খুব করে মন চাচ্ছে সমুদ্র যেন গাড়ি করে স্কুলে যেতে পারে! এটা তার একটা অপূর্ণ ইচ্ছা যা অপূর্ণ ই রয়ে গেছে!

আগে যখন স্কুল যেত তখন তার কয়েকজন বন্ধু তাদের বাবার গাড়ি করে স্কুলে আসত তার খুব সেই অনুভূতি টা উপভোগ করার ইচ্ছা।

কেমন লাগে স্কুল ব্যাগটা কাধে না ঝুলিয়ে গাড়ির সিটের এক পাশে রেখে এসি গাড়িতে হেলান দিয়ে স্কুল গেটের সামনে নামতে? নিশ্চয়ই খুব চমৎকার এক অনুভূতি!!!

সমুদ্র কে এই অনুভূতির ভাগীদার করতে চায় আবেগ। খুব করে চায়।

সে একবার পেছন ঘুরে তাকালো বিছানার দিকে। মা-ছেলে নিশ্চিতে ঘুমিয়ে আছে।

রোদেলা আমার কাধে সব দায়িত্ব দিয়ে নিজে কতো আরামে ঘুমাচ্ছে! —নিজের আনমনে বলে উঠে আবেগ। তারপর ছোট একটা শ্বাস নিয়ে পড়ায় মন দেয়৷

সমুদ্র কে সবার প্রথমে আবেগ ই কোলে নিয়েছে। সাধারণত বাচ্চাদের কে সবার আগে তার বাবা কোলে নেয় কিন্তু সমুদ্রকে সে নিয়েছিল কারন হয়তো বিধারা আগে থেকেই জানত আবেগ ই সমুদ্রের বাবা হবে!

রোদেলা কে হসপিটালে নেওয়ার পর ঘন্টা দুইয়ের মধ্যে সমুদ্র জন্ম নেয়। ডক্টর আফরোজা অনেক ভালো আর অভিজ্ঞ গাইনোলজিস্ট জন্য সমুদ্র বেচে গিয়েছিল আর অক্ষত ই ছিল।অবশ্যই আল্লাহর ইচ্ছা ছিল জন্য ই সমুদ্রের জন্ম হয়েছে।

অপারেশন থিয়েটারে আবেগ নিজেও দাড়িয়ে ছিল। তার হাত-পা কাপছিল বারবার আল্লাহ আল্লাহ করছিল যেন বাচ্চাটা বেচে যায়। আবেগ তো সে সময় রোদেলার দিকে ভুলেও তাকায় নি একবারো।

বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পর মোরশেদা আপা রক্ত মুছে ক্লিন করে তার কোলে দিয়েছিল সমুদ্র কে। নরম তুলতুলে একটা বাচ্চা পুতুল কে কোলে নিয়ে আবেগের কেমন যেন অনুভূত হতে থাকে! এমন না যে এর আগে এতো ছোট বাচ্চা দেখে নি। এস এ ডক্টর কাজের ছলে অনেক বেবি দেখেছি কিন্তু এমন ফিলিং তো হয় নি৷

কি যে খুশি লাগছিল তখন সেটা কেবল এবং কেবলমাত্র আবেগ ই জানে। খুশিতে তার চোখে পানি চলে এসেছিল।

সমুদ্রের চোখে সে-ই টর্চ মেরে চোখ খুলিয়েছিল। সমুদ্র চোখ খুলে সবার আগে তাকেই তো দেখেছিল।

তখনো আবেগ জানত না রোদেলাকে রিশাদ ধাক্কা মেরেছে। রোদেলার যেহুতু জ্ঞান ছিল না তাই আবেগ জানতে পারে নি রোদেলার এমন ক্রিটিকাল অবস্থার জন্য রিশাদ দায়ী। সেদিন রোদেলার বাসায় ঢুকে সে রিশাদ কে দেখতে পায়নি কাজেই ভেবেছিল রোদেলা মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছে।

রোদেলা প্রেগন্যান্ট অবস্থায় নিজের বাবার বাসায় চলে এলেও রোদেলার বাবা-মা, আবেগের মা এবং বাড়ির মুরুব্বিরা চাচ্ছিলেন রোদেলা যেন ফিরে যায় তার শ্বশুড়বাড়ি। এভাবে যেন সংসার না ভাঙ্গে! ডিভোর্স না দেয় রিশাদ কে। রোদেলাকে বারবার বাচ্চা হওয়ার পর সব মিটিয়ে আবার সংসারে মন দিতে প্রেশারাইজ করছিলেন সবাই।মেনে নিয়ে চলতে আদেশ দেওয়া হচ্ছিল। এই কাজে আবার আবেগের মা সবার আগে ছিলেন। উনি প্রায়ই রোদেলা কে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ই ফিরে যেতে বলতেন। কিন্তু রোদেলা যাই নি। আবেগরা সবাই ভেবেছিল রিশাদ আর রোদেলার ঝগড়া হয়েছে তাই রোদেলা রেগে আছে।

তাই তো সমুদ্র হওয়ার দিন রোদেলার কমপ্লিকেশন যখন বেড়ে যায় আবেগ নিজে গিয়ে রিশাদ কে ডাকতে যায়। নিজের বাচ্চা আর বউ দেখার জন্য রিশাদকে ডাকতে গিয়েছিল । কিন্তু রিশাদরোদেলা কে দেখতে যেতে সাফ মানা করে দেয়। ওইদিন রিশাদ অনেক জঘন্য ব্যবহার করে আবেগের সাথে। আবেগের সাথে মেঘ ও ছিল।

কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তো রিশাদ সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে বলেই দেয়, রোদেলার পেটের বাচ্চা নাকি তার না। এটা রোদেলার জারজ সন্তান। এই বাচ্চা নাকি আবেগ আর রোদেলার পাপের ফসল হেন-তেন আরো অনেক কিছু বলে রিশাদ।

আবগ লজ্জার মাথা খেয়ে চলে আসে রিশাদের বাসা থেকে। সেদিন আরো একটা বিষয় বুঝে গিয়েছিল আবেগ আর মেঘ। তা হলো রিশাদের চরিত্র ভালো না। একে তো ব্যবহার ভালো না ই সেই সাথে চরিত্রে দোষ আছে। এটা বোঝার কারন হলো আবেগ আর মেঘ যখন সমুদ্র হওয়ার খবর দিতে রিশাদের বাসায় যায় তখন তারা রিশাদকে একটা মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলে।

দুজন ই ব্যাপার টা চেপে যায়৷ এরপর রোদেলা হালকা সুস্থ হলে যখন তাকে কেবিনে শিফট করা হয় তার পরের দিন হাসপাতালে এসে হাজির হয় রোদেলার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন। যেহুতু আবেগরা সবাই মধ্যবিত্ত পরিবার তাই রোদেলার ট্রিটমেন্ট এর খরচ রিশাদের কাছে চাওয়া হয়েছিল। ডিভোর্স তখনো হয় নি তাদের। বাচ্চা যেহুতু রিশাদের তাই দায়িত্ব তো তাকে পালন করতেই হবে। কিন্তু নাহ রিশাদ বিল তো দেয় নি বরং নিজের সন্তানকে স্বীকার করে নি
রিশাদের ভাষ্যমতে, এই বাচ্চা তার না। রোদেলা আর আবেগের বাচ্চা।

আবেগ ও কম না। ওইদিন ঠিক সেই মূহুর্তেই ডিএনএ টেস্ট করিয়েছিল কিন্তু রিপোর্ট আসতে তো সময় লাগবে। সেই সময়টুকুতে ই রিশাদ যা নয় তাই বলতে আরম্ভ করে দেয়।

মৃত্যুর হাত থেকে বেচে আসা মেয়েটাকে যা নয় তাই বলে গালিগালাজ করে রিশাদ। এমন কাজে রিশাদের মাও তাকে সাপোর্ট দেয়।

পুরা হাসপাতালেরর সামনে আবেগকে অপমান, লাঞ্জনা, অপবাদ দেওয়া হয়। একজন ডাক্তারের কাছে তার সম্মান যে কি জিনিস এটা কেবল সেই ডাক্তারই জানে। হাসপাতালের স্টাফ, নার্স৷ ওয়াড বয়, ডাক্তার সবার সামনে আবেগের চরিত্রে আঙুল তোলা হয়৷

রিশাদ যেন এতেও ঠান্ডা হয় নি। এতো কিছু করার পর ও তার মন ভরে নি। সে সবার সামনে রোদেলার গায়ে হাত তুলে।ব্যস আবেগ অনেক রেগে যায় । এমন কি! নিজের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়ে যায়। তাই তো সে রিশাদকে পেটাতে শুরু করে।

হাসপাতালের বাকি স্টাফ রাও আবেগের দেখাদেখি রিশাদকে মারতে চলে আসে। কারন একটা অবলা মেয়েকে তার স্বামী লোকালয়ে পিটাচ্ছে এটা বাঙালী সাধারণ জনতা সহ্য করবে না তাই তো রিশাদকে পিটিয়ে গনধোলাই দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়।

আবেগ ভাবতে লাগলো, রিশাদ বুঝি সেদিনের শোধটাই নিল তার উপর?

রোদেলা ঘুম থেকে উঠেই দেখে আবেগ টেবিলে বসে পড়ছে। সে ভ্রু কুচকে ঘড়ির দিকে তাকালো। সাড়ে আটটা বাজে। এতোক্ষনে তো আবেগের অফিস যাওয়ার কথা!

সে উঠে পড়ল। এবং আবেগের কাছে গিয়ে বলে, হাসপাতালে যাবে না আজকে?

আবেগ পড়তে পড়তে জবাব দেয়, না।

রোদেলা আবারো প্রশ্ন করে, কেন?

–আজ শুক্রবার।

–ওহ!

আবেগ পড়ায় মনোযোগ দেয়। এতে রোদেলার হাসি পেয়ে যায়। এতো দামড়া ছেলেকে পড়তে দেখে তার হাসি পাচ্ছে
হাসি দমিয়ে রেখে সে বাথরুমের দিকে হাটা দেয়।

রোদেলা যখন হেটে যেতে থাকে তখন আবেগ তার দিকে তাকালো এবং অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখল।

রোদেলা হাটছিল সেই সাথে আস্তে আস্তে করে তার খোপা বাধা চুল উম্মুক্ত হয়ে যায়। এবং ছড়িয়ে পড়ে কোমড়ের নিচ অব্দি।

অদ্ভুত এক মুগ্ধতা গ্রাস করে নেয় আবেগের মনে! কিছু একটা হয়ে গেল তার মনে যার পূর্বাভাস পেলেও ফলাফল হাতে পায় নি!

চলবে।

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here