আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ১৭+১৮

#আগুনের_তৃষ্ণা
#Maishara_Jahan
Part………..17

,,,, আপনার মাথা একটু বেশিই গরম তাই ঠান্ডা করতে সাহায্য করেছি বুঝলেন, দুজন এখানে সুইমিং করুন আমরা যায়।

বলে হাসতে হাসতে চলে যায়। এই কথা মনে করাতেই প্রহর হাসতে হাসতে অতীত থেকে ফিরে আসে।

সকালে উঠে আমি অয়নকে দেখছি না, সোজা ওয়াশ রুমে সাওয়ার নিয়ে বের হয়েও দেখছি না, নিচে গিয়েও দেখি নেয়, অয়নকে ফোন করি।

মারু,,,, হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
,,,,ওয়ালাইকুম আসসালাম,,, জ্বী বলেন মেম, নাস্তা করেছেন।

,,,, না এখনো করিনি,, আপনি কোথায়।
,,,, আমি তো কাজে, আজকে সকালে একটা সার্জারি ছিলো তাই তাড়াতাড়ি আসতে হয়েছে।

,,,,,আমাকে ডাকলেন না কেনো, আমাকে ডেকে পরে যেতেন।
,,,,,হুমম ভেবেছিলাম একবার কিন্তু তোমার ঘুমটা ভাঙতে ইচ্ছে করেনি। আর এতো ব্যস্ততা আমাকে মিস করছো বুঝি।
,,,,,, না মানে হুমম
,,,,,,চিন্তা করবেন না মেম আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।

,,,,,, হুমম তাড়াতাড়ি চলে আসবেন কিন্তু, আপনাকে ছাড়া ভালো লাগে না।
,,,,, ইশশ এভাবে বলো না জান, উড়ে উড়ে চলে আসতে ইচ্ছে করছে। তোমার কথায় আমি নিহত। কাজের টাইমে এভাবে বললে কার কাজে মন লাগবে বলো।

,,,, ঠিক আছে, ঠিক আছে আর ভাব দেখাতে হবে না,আমি রাখছি।
,,,,ওকে আই লাভ ইউ জান।

মা ডাকার সাথে সাথে সবাই নাস্তা করতে বসে। আমি তাদের দেখে জিজ্ঞেস করলাম,,,,, আজকে দুজনেই রেডি কোথাও যাচ্ছো নাকি দুজনে।

প্রহর,,,,হুমম তোমার হাসবেন্ড যে একটা দায়িত্ব ধরিয়ে দিয়েছে আমার হাতে সেটাই সামলাতে যাচ্ছি। কিন্তু সায়ন তুই কোথায় যাচ্ছিস। আজ তো ফ্রাই ডে।

সায়ন,,,,,,, একটু ঘুরতে যাচ্ছি।
প্রহর,,,,,কার সাথে হুমম,,নাকি ডেটিং কোনটা।
সায়ন,,,, না ভাই, এমনি ঘুরতে যাচ্ছি।
প্রহর,,,, তোর দ্বারা কিছু হবে না।
সায়ন,,,,, ভাই ভুলে যেয়ো না তুমি আমার বড়,তাই বড় ভায়ের দ্বারা এখনো কিছু হলো না, তাহলে আমারটা তো বাদ দিলাম।
প্রহর একটা কাশি দিয়ে বললো,,,,,, চুপচাপ নাস্তা কর।আজ কাজ বেশি কথা বলছিস।

সায়ন কিছু বলতে নেয়, প্রহর আগেই সায়নকে থামিয়ে বলে,,,,,খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে নেয়, নাস্তা কর।
বলে প্রহর আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,,,,, অয়ন কোথায় হসপিটালে গেছে নাকি।
,,,,হুমম
,,,,,তাহলে বাসায় তুমি একা থাকবে নাকি, আমাদের সাথে চলো।
সায়ন,,,,, তোমাদের আসতে লেইট হবে, এর আগেই ভাইয়া চলে আসবে। আর আমার মনে হয় এখন ভাইয়ার স্নেহার সাথে একা টাইম কাটানো উচিত, কে জানে যদি স্নেহা আমাদের ভাবী হয়ে যায়।

আমি একটু হেঁসে বললাম,,,,, কথাটা মন্দ বলো নি। তাছাড়া স্নেহা যেমন সুন্দর দেখতে তেমনি তার ব্যবহার।

প্রহর একটু বিরক্তি ভাব নিয়ে বলে,,,, হয়েছে এখন তোমাদের।

সায়ন একটা হাসি দিয়ে বলে,,,, লজ্জা পেলে নাকি ভাইয়া।
প্রহর সায়নের কান ধরে বলে,,,, একটু বেশিই দুষ্টু হয়ে গেছিস, মার খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে নাকি।

নাস্তা শেষ করে যে যার কাজে বেরিয়ে পড়ে। আমিও ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে প্রহরের “কে তুমি” বইটা পড়তে থাকি। এই বইটা পড়লেই একটা রোমান্টিক মেজাজ চলে আসে।
,,,,,,,
প্রহর স্নেহাকে আনতে তার বাসায় যায়। গিয়ে স্নেহাকে ফোন করতেই স্নেহা এসে গাড়িতে বসে, আজ স্নেহার মনটা বেশি একটা ভালো না। মুখে কোনো হাসি দেখা যাচ্ছে না।

প্রহর স্নেহার মনের অবস্থাটা কিছুটা বুঝতে জিজ্ঞেস করে,,,, কিছু হয়েছে স্নেহা, আজ এই আকাশে এতো কালো বাদল দেখা যাচ্ছে কেনো।

স্নেহা কান্নার ভাব নিয়ে বলে,,, কারন আজ এই আকাশ মেঘ জমেছে তাই।

প্রহর মুশকি হেঁসে বলে,,,, তা বৃষ্টি কখন হবে।

স্নেহা জালানা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে বলে,,, যে কোনো সময় হতে পারে।
প্রহর হেঁসে বলে,,,, বলো কি আজ তো ছাতা আনি নি, আগে বলবে তো, তাহলে ছাতাটা নিয়ে আসতাম, এখন যদি বৃষ্টিতে ভিজে যায়, তাহলে তো আবার ঠান্ডা লাগবে।

আমি প্রহরের দিকে তাকিয়ে মুখ ভার করে বলি,,, আমাকে কি দেখে মনে হয়, যে আমি মজা করার মুডে আছি।
,,,সেটা তো মনে হচ্ছে না, তবে এখানে মজাটা করছে কে।
আমি মুখ ফুলিয়ে সামনের দিকে তাকালাম। প্রহর পেইন্টিং এর মিউজিয়াম এ নিয়ে আসে। আমি গাড়ি থেকে বেরিয়ে ভিতরে যেতে যায়, প্রহর আমার হাত ধরে অন্য পাশে নিয়ে যাচ্ছে। এই প্রথম প্রহর সচ্ছায় আমার
হাত ধরে, এক অন্য রকম ভালো লাগে। আমিও কথা ছাড়া যেতে থাকি।

প্রহর আমাকে মিউজিয়ামের পিছনের বাগানে নিয়ে আসে, জায়গাটা অনেক শান্ত, নিড়িবিলি আর গাছ দিয়ে গেড়া পুরোটা জায়গা।মিউজিয়ামের এই সাইডে আমি আগেও এসেছি তবে আজ সব কিছু নতুন লাগছে। আমরা একটা বেঞ্চে বসি।

আমি প্রহরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি,,, আমাকে এখানে কেনো আনলেন।
প্রহর ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,,আকাশে এতো মেঘ জমার কারনটা জানতে। কারন যে আকাশে সব সময় সাদা বাদল দেখেছি সেখানে কালো বাদল ভালো লাগছে না।

আমি মুখ ঘুরিয়ে বললাম,,,,,আকাশে সবসময় সাদা বাদল থাকে না, যেমন সাদা থাকে তেমনি কালো বাদল ও ঘুরাঘুরি করতে পারে এটা স্বাভাবিক, এটা নিয়ে এতো চিন্তিত হওয়ার কিছু নেয়।

,,,আচ্ছা এখন কথা না ঘুরিয়ে সোজাসুজি জিজ্ঞেস করছি,, বলো কি হয়েছে।

আমি মুখ বেকিয়ে বললাম,,,,কিছু না।

এবার প্রহার আমার হাত ধরে বললো,,, বলো কি হয়েছে।

আমি প্রহরের দিকে তাকায়, কেনো জানি আজ প্রহরকে আমার অনেক আপন মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে আমার মনের সব কথা ওনাকে বলে দিতে পারবো।

আমি একটা কান্না ভাব নিয়ে বলি,,, বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে তাও আবার আমাকে না বলে।

প্রহর মুশকি হেঁসে বলে,,,,, তাহলে ওদের এখন না করে দাও, যদি তোমার ছেলে পছন্দ না হয়।

,,,, আপনার কি মনে হয়, আমি না করিনি, না করেছি আমি, কিন্তু আব্বু আম্মু কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। ওরা বলছে আমার নাকি বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে।

আমি প্রহরের দিকে তাকিয়ে, নিজের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,,বলেন তো আমাকে দেখে কি বেশি বয়স্ক মনে হয়, আমি কি দেখতে খারাপ। কতো ছেলেরা আমার আগে পিছনে ঘুরে হুম, খারাপ হলে কি ঘুরতো, আপনি বলেন আমি দেখতে খারাপ হুমম।

প্রহর স্নেহার দিকে তাকিয়ে মুশকি হেঁসে বলে,,,, না, একদমি না, তোমাকে দেখে যে কেও এক নজরে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে।

,,,,,, সত্যি,,,, আপনিও
প্রহর আমার দিকে তাকিয়ে, আবার চোখ অন্য দিকে ফিরিয়ে বলে,,, আচ্ছা এখন সমস্যাটা কি, তোমার ছেলে পছন্দ হয়নি।

,,,আরে ওনাকে দেখারা দরকারি পরেনি, ওনার ডিমান্ড শুনেই আমি শিহরিত।

,,,,,কি এমন ডিমান্ড করেছে শুনি।

,,,,,,আমার পেশায় ওনার সমস্যা আছে, ওনি একটা হাউস ওয়াইফ চাই, ওনার হিসাবে এটা কোনো কাজ না, শুধু টাইম নষ্ট করা। আর ওনি এটাও ভাবে যে, মেয়েরা একসাথে কাজ আর ঘর সামলাতে পারে না।

এ কথা শুনে প্রহর দাঁড়িয়ে বলে,,,,এই ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য তোমার বাবা মা রাজি হলো কিভাবে।

,,,,,কারন ছেলে অনেক টাকা পয়সা আর নাম আছে, ছেলে নাকও আবার দেখতেও ভালো।

,,,,এটা কোনো কথা হলো,ঐ ছেলে তোমার জন্য পার্ফেট না, তোমার ড্রিম শেষ হয়ে যাবে একে বিয়ে করলে। তোমার এমন কাওকে বিয়ে করা উচিত যে তোমার ড্রিম আর তোমাকে বুঝবে।

,,,,,, ঠিক আপনার মতো তাই না।

প্রহর আমার দিকে তাকিয়ে, কিছু না বলে আবার বেঞ্চে বসে বলে,,,, তুমি তোমার মা বাবাকে বুঝিয়ে বলো তাহলেই হবে, তাড়া তো তোমাকে ভালোবাসে, তাই একটু কান্না করলে মেনে যাবে, যেটা মেয়েরা ভালো করে ইউস করতে পারে।

,,,,কোনো কাজে আসবে না, ওনারা তো আমাকে ভালোই বাসে না৷ ভালোবাসলে ঠিকি আমার মনের অবস্থা বুঝতো, আমার মনে হয় ওনাদের কাছে আমাকে একটা বুঝার মতো মনে হচ্ছে। তাই তো বিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দিতে চাইছে। আমি এক কাজ করবো, ওদের থেকে আলাদা হয়ে যাবো, থাকবো না ওদের সাথে।

এসব বলতে বলতে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। প্রহর আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,, পাগল তুমি যানো, মা বাবা একটু শাসন করলেই তাড়া খারাপ হয়ে যায় না, তারা তোমার সব সময় ভালো চাই, হুমম এটা ঠিক অনেক সময় তারা তাদের দিক থেকে বিবেচনা করে। তার মানে এটা না যে, তুমি তাদের থেকে দূরে চলে যাবে। এতে না তুমি খুশি থাকতে পারবে না তোমার মা বাবা।

,,,,,আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,,, আমি জানি আমি খুশি থাকতে পারবো আর তারাও।

প্রহর মৃদু হেঁসে বলে,,,,এটা মনে হয় কিন্তু বাস্তব তার থেকে আলাদা, এক দিনও খুশি থাকতে পারবে না তুমি। তাছাড়া মা বাবা থেকে দূরে থাকার কষ্ট তুমি বুঝবে না, যাদের মা বাবা নেয় তাঁরাই বুঝবে শুধু।

,,,, আপনি তো এমন ভাবে বলছেন যেনো আপনি খুব ভালে করে বুঝেন।

প্রহর ঠোঁটের কোনায় হালকা হাসি এনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,,,, অনেক বছর আগে আমার মা বাবা এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। তাই এটা বুঝা আমার জন্য খুব একটা বড় ব্যাপার না।

প্রহরের মুখে হাসি থাকলেও ওনার চোখের কোনায় হালকা জমে থাকা পানিটা ঠিকি চোখে পড়েছে আমার, যেটা ওনি নিচে পড়তে দিচ্ছে না। আমি ওনার কাঁধে আলতো করে হাত রেখে বললাম,,,,আম সরি, আসলে আমি জানতাম না, আমি কোনো দিন না বই এ, না মিডিয়াতে বাবা মার সম্পর্কে কিছু উল্লেখয়ি করেননি তাই জানি ও না।

প্রহর আমার হাতটা সরিয়ে বলে,, ইটস ওকে,, আর আমাকে দেখে দয়া করে অনুসূচনা দেখাবে না, আই হেট দিস। তাছাড়া আমি যথেষ্ট ভালো আছি। অয়ন যূি শুনে আমি এসব নিয়ে মন খারাপ করে আছি তাহলে আমার খবর আছে। যাই হোক মা, বাবা থেকে দূরে যাবে না ওকে।

,,,হুমম বুঝেছি, আমি ওদের বুঝানোর ফুল চেষ্টা করবো।

,,,হুমম গুড,, ওদের মানানোর জন্য যা খুশি করবে কিন্তু ওদের ছেড়ে যাওয়ার কথা বলবে না, তাহলে এখন চলো মিউজিয়ামে যায়,নতুন কিছু পেইন্টিং এসেছে, দেখে আসি।

,,,হুমম চলেন।

আমরা দুজনে মিউজিয়ামে গিয়ে এক সাথে পেইন্টিং দেখছি, এই বিষয়েও আলোচনা করছি।
,,,,,,
সায়ন একটা রেস্টুরেন্টে যায়,সেখানে আলোও বসে ছিলো। সায়ন গিয়ে বসতে বসতে বলে,,, সরি ফর লেইট।

আলো মুখ বেকিয়ে বলে,,,,,,এভাবে কেও ঘুরতে যায়।
,,,,তোহহ কিভাবে যায়।
,,,, আমার তো মনে হয় আপনি ঘুরতে যাওয়ার মানেটাই বুঝেন না। আরে কোনো একটা যায়গায় মানুষ ঘুরতে যায়, তাও আবাড একসাথে। আর আপনি একটা টাইম আর রেস্টুরেন্টের নাম লিখে শুধু মেসেজ করে দিয়েছেন,, এই জায়গা আসতে। এটা ঘুরা বলে না, জাস্ট নরমালি দেখা করা বলে।

,,,, আচ্ছা আরেক বার তুমি নিয়ে যেয়ো ঘুরতে।

,,,,ওহহ আচ্ছা, তার মানে আমার সাথে আরো ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে আপনার।
,,,,,,থাকতেই পারে, বন্ধু বলে কথা।
,,,,,ওওওহহহ তাই বুঝি, তাহলে তো ভালোই। তাহলে তোমার গার্লফ্রেন্ড অবশেষে তোমাকে দেখা করার অনুমতি দিলো।

,,,ও আমাকে কোনো কিছুতেই না করে না, বুঝলেন, অন্য সব মেয়েদের মতো নয় আমার দিয়া।

,,,,আচ্ছা তাই বুঝি, অনেক কথা বলে বুঝি আপনার সাথে।
,,,আসলে ও বেশি কথা বলে না, বলে কিন্তু এতো বেশি না, আর আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে, আমি তো অনেক বকবক করি। শুরু অনেক সময় অনেক বেশি আবদার করে বসে।

,,,আচ্ছা কি কি আবদার করে।

,,,,একটু বেশিই ইনট্রেস দেখাচ্ছো আমার গার্লফ্রেন্ড এর প্রতি হুমম।

,,,, না তেমন কিছুই না, শুধু জানতে ইচ্ছে করছিলো, এতো হেন্সাম ছেলের গার্লফ্রেন্ডরা কেমন হয়।

এটা শুনে সায়ন হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে বলে,,, বলো কি খাবে।

,,,, জাস্ট কফি।

,,,,আর কিছু খাবে না।

,,,, স্যার আপনি যে টাইমে দেখা করতে বলেছেন সে টাইমে সবাই নাস্তা করে আসে।

,,,, হুমম,,নাস্তা তো অবশ্য আমিও করে এসেছি। তাহলে কফিই অর্ডার করি।
,,,,হুমম।
,,,,অবশ্য আজ ডক্টরের এনিফোর্ম ছাড়া তোমাকে অন্য রকম লাগছে।

,,,অন্য রকম বলতে, ভালো নাকি খারাপ।
,,,,,অফকোর্স ভালো লাগছে।
,,,আর এনিফোর্ম পড়া থাকলে।
,,,, আরে তখনো ভালো লাগে, কিন্তু আজ একটু অন্য রকম লাগছে কারন এনিফোর্ম ছাড়া প্রথম দেখলাম তো তাই।
,,,,,ওহহ,,ধন্যবাদ।
,,,, ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।

সায়ন আর আলো কফি খেতে খেতে বেশ অনেক ক্ষন কথা বলে, সায়ন হঠাৎ করেই বলে তার মাথাটা নাকি ঘুরছে। আর তার কয়েক সেকেন্ড পরেই সায়ন তার জ্ঞান হাড়ায়। কিন্তু এতো আলোর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। সে দুজন লোক ডেকে সায়নকে গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে একজনকে ফোন দিয়ে বলে,,,,হ্যালো আমি সায়নকে নিয়ে আসছি, সব কিছু রেডি করে রাখো,আমাদের হাতে কিন্তু বেশি টাইম নেয়।

পরে অন্য এক হসপিটালে নিয়ে যায়,সায়নকে হসপিটালে বেডে শুয়িয়ে একটা ডক্টরকে ইশারা দিয়ে দরজা বন্ধ করতে বলে। তারপর সায়নের মাথয় হাত দিয়ে বলে,,,যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে, এ ব্যপারে যেনো সায়ন জ্ঞান ফিরার পর কিছু জানতেও না পারে কিছু বুঝতেও না পারে।

বেশ অনেক ক্ষন পর সায়ন এর জ্ঞান ফিরে, সে চোখ খুলে আলোকে তার পাশে বসা পায়, আর নিজেকে হসপিটালে। সায়ন আস্তে করে জিজ্ঞেস করে,, কি হয়েছিলো আমার।

আলো,,,,, আসলে আপনাকে যে ঔষধ গুলো দেওয়া হয় সে গুলো একটু স্ট্রোং তো তাই মাথা ঘুরা স্বাভাবিক, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেয়।

,,,ওহহ,,তা এটা কোন হসপিটাল ভাইয়া যে হসপিটালে থাকে আর তুমি যেটাতে পড়ো ওটাতে নিয়ে যাওনি আমাকে।

,,,, না আসলে এটা কাছপ ছিলো তো তাই নিয়ে এসেছি।

,,,,ভালো করেছে, আর ভাইয়াকে বলবে না, শুধু শুধু টেনশন করবে।

,,,,হুমম,,ওকে।
,,,আমি একন বাসায় যাবো।
,,,হুমম যাবে তো, সেলাইটা শেষ হতে দাও পরে চলে যেয়ো।
সায়ন এতো ক্ষনে খেয়াল করে ভয়ে আলের হাত চেপে ধরে বলপ,,,,,,এতো বড়ো সুই আমার হাতে মধ্যে ডুকানো কেনো, বের করো।

,,,,আরে ভয় পেয়ো না।

,,,,আমি ভয় পাই না।
,,,, সেটা তো জানিই,,,,এদিকে তাকিয়ো না, এক কাজ করো চোখ বন্ধ করে রাখো। আর আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, ঠিক কতো বার তোমার মাথায় হাত বুলাচ্ছি সেটা খেয়াল করো তাহলেই হবে।

সায়ন চোখ বন্ধ করে,আলো তার মাথা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, সায়ন আলোর হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। আলো মুশকি হেঁসে সায়নের দিকে তাকিয়ে আছে।
,,,,,,,
ছাদে বসে বসে পুরো বইয়া শেষ করলাম, তাই বইটা আবার প্রহরের রুমে দিয়ে আসতে যায় কিন্তু দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ি,কারো রুমে এভাবে প্রবেশ করা ঠিক না। মনে মনে ভাবলাম,তাড়াতাড়ি গিয়ে বইটা রেখে চলে আসবো।

তাই আর না ভেবে ভিতরে যায়, গিয়ে বইটা রেখে চলে আসতে নিয়, তখনি আমার চোখে পরে প্রহরের আকা আমার ছবিটাতে। আমি খুশিতে লাফিয়ে সেখানে গেলাম।

ছবিটা দেখতে দেখতে বলছি,,তাহলে প্রহর এটা লুকাচ্ছিলো আমার থেকে, কিন্তু প্রহর আমার ছবি কেনো আঁকতে যাবে, আর আঁকলেও আমার কাজ থেকে কেনো লুকাবে। হুমম এটা তো প্রহর আসলেই বুঝা যাবে।

ছবিটা ভালো করে দেখতে গিয়ে তার পিছনে আরেকটা ছবি নজরে পড়লো, তাই পেইন্টিংটা উঠিয়ে দেখলাম সেখানে আমার আরেকটা ছবি আকা,এমন করতে করতে কয়েকটা পেজ উল্টিয়ে দেখলাম,এখানে শুধু আমার ছবি।

মাথায় কিছু ডুকছে না, তার মানে কি প্রহর কোনো ভাবে আমাকে ভালোবাসে,কিন্তু প্রহরের সাথে তো আমার দেখায় হয়েছে কিছু দিন আগে, আর পেইন্টিং এ তারিখ লেখা অনেক মাস এমনকি বছর আগের। তাহলে কি প্রহর কোনো ভাবে আমার অতীতের সাথে জরিয়ে আছে, আর সেটা ও আমাকে বলেনি, কিন্তু কেনো।

আমার সন্দেহর কারনে আমি প্রহরের রুমটা ভালো করে খুঁজতে থাকি, যদি কিছু পায়। সেখনে একটা বইয়ের মধ্যে একটা ছবি পায়, যেটা দেখে আমি কিছু বুঝছি না, ছবিটাতে আমি আর প্রহর একসাথে হলুদ পাঞ্জাবি আর শাড়ী পরে বসে আছি, আর প্রহর আমার খোঁপায় ফুল লাগিয়ে দিচ্ছে।

এই ছবিটা দেখে আমার সব কিছু কেমন উল্টা পাল্টা লাগছে। তার মানে কি, আর ছবিটা তো আমার গ্রামের বাড়ির মতো লাগছে,তার মানে কি প্রহর আমার জীবনে অনেক আগে থেকে ছিলো।

শুধু ছিলো না ভালোও বাসতো, না হলে এতো যত্ন করে গুলো আঁকতো না। তাছাড়া ছবি দেখে মনে হচ্ছে আমিও হয়তো প্রহরকে ভালোবাসতাম। তাহলে কি আমার অতীতে আমি প্রহরকে ভালোবাসতাম, তাহলে প্রহর আমাকে কিছু বললো না কেনো।

তাই তো বিয়ের পরে প্রহর আমাকে দেখে এভাবে তাকিয়ে ছিলো। আর অয়ন তাকে টেনে উপরে নিয়ে যায়, তাহলে কি অয়ন আমাকে বিয়ে করেছে বলে কিছু বলেনি। আমি কিছু বুঝতে পারছি।

ঠিক এই সময় অয়নের ডাক আসে, আমি তাড়াতাড়ি ছবি রেখে রুম থেকে বেরিয়ে যায়, অয়ন আমাকে প্রহরের রুম থেকে বের হতে দেখে বলে,,, তুমি এই রুমে কি করছিলে।

আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলি,,,, কি কি কিছু না, একটা বই রাখতে গেছিলাম।

আমি আর অয়ন রুমে যায়,রুমে যেতেই অয়ন আমাকে জরিয়ে ধরে বলে,,, আই মিস ইউ বেবি।

কেনো জানিনা আমি খুশি হতে পারছি না। আমার মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে , আমি কি প্রহরকে ভালোবাসতাম, ওর সাথে কি আমার কোনো সম্পর্ক ছিলো। যদি থাকতো তাহলে অয়ন নিশ্চয়ই যানতো, আর জানলে আমাকে বিয়ে কেনো করবে।
#আগুনের_তৃষ্ণা
#Maishara_Jahan
Part………..18

কেনো জানিনা আমি খুশি হতে পারছি না। আমার মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে , আমি কি প্রহরকে ভালোবাসতাম, ওর সাথে কি আমার কোনো সম্পর্ক ছিলো। যদি থাকতো তাহলে অয়ন নিশ্চয়ই যানতো, আর জানলে আমাকে বিয়ে কেনো করবে।

আমাকে এভাবে নিস্তীর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অয়ন আমাকে ছেড়ে জিজ্ঞেস করলো,,,,,, কিছু হয়েছে নীর।

ঠিক এই মূহুর্তে কি বলা ঠিক হবে আমার জানা নেয়, সত্যিটা ঠিক কি সেটা কি অয়নকে জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে। না এখনি না, আগে আমি সিউর হয়ে নিয়, তারপরে যা জিজ্ঞেস করার করতে হবে।

অয়ন আমাকে একটু ঝাঁকি দিয়ে বললো,,,, কোন দেশে হারিয়ে গেলে আমাকে রেখে।

অয়নের কথা শুনে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে মিথ্যা হাসি ঠোঁটে এনে বললাম,,,,, কোথায় আর যাবো, এখানেই আছি। শুধু আপনাকে এতো তাড়াতাড়ি আসতে দেখে অভাক হলাম।

অয়ন হাসতে হাসতে একটু দুষ্টু ভাব নিয়ে বললো,,,, তাই নাকি আর এতো সুন্দর বউ ঘরে থাকলে কি কাজে মন রাখা যায়।

ওনার কথায় আমি মুশকি হেঁসে বললাম,,, আচ্ছা,, তাহলে মনটা আপনার কোথায় ছিলো।

অয়ন একটু ভাবার মতো করে বললো,,, ছিলো পাগলীর কাছে।

,,,,হুমম আচ্ছা,, আপনি এখন ফ্রেশ হয়ে আসেন, আমি আপনার খাবারের ব্যবস্থা করছি।

,,,,, এই তুমি আমাকে আপনি আপনি বলা বন্ধ করবা।

,,,,, তো কি করবো।

,,,,তুমি তুমি করে বলবা, আপনি বললে কেমন দূরের দূরের মনে হয়, আর তুমি বললে আপন মনে হয়, বুঝলে।

,,,,হুমমম বুঝলাম।
,,,, তাহলে এখন থেকে কিভাবে ডাকবে।
,,,,তুমি তুমি ডাকবো হয়েছে, তুমি করে ডাকতে কেমন অদ্ভুত লাগে।
,,,,,আরে অদ্ভুত এর কি হলো, তুমি আমার স্ত্রী তাই তুমি করে ডাকাটাই এখন স্বাভাবিক। আর আমি কিছু জানি না, তুমি করেই ডাকতে হবে।
,,,,,,, ঠিক আছে, ঠিক আছে। যান, না মানে যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।
,,,হুমম,এবার মনে হচ্ছে তুমি আমাকে বলছো, ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।

বলে অয়ন ওয়াশ রুমে চলে যায়,আমি নিচে ড্রয়িং রুমে বসে আছি, মাথায় আমার শুধু একটা কথায় বার বার ঘুরছে।

একটু পরেই সায়ন আসে, তাকে দেখে একটু অসুস্থ মনে হচ্ছে, আমি সায়নকে দেখে দাঁড়ায়, সায়ন এসে সোফাতে বসে, একটু ক্লান্ত ভাবে বলে,,, ভাবী একটু পানি এনে দাও না।

আমি তাড়াতাড়ি পানি এনে দিয়ে বলি,,,,কি হয়েছে সায়ন,তোমাকে এমন অসুস্থ লাগছে কেনো।

সায়ন পানি খেয়ে, পানির গ্লাসটা টেবিলে রাখতে রাখতে বললো,,,,এমনি একটু ক্লান্ত লাগছে, তেমন কিছু না।

,,,বেশি খারাপ লাগলে বলো আমি অয়নকে ডাক দেয়।
,,,,না না ভাবী তার দরকার হবে না, আমি মিস্ আলোকে দেখিয়ে এসেছি, কোনো প্রবলেম নেয়।
,,,,ওহহ আচ্ছা।
,,,,ভাইয়া এসে গেছে।
,,,হুমম মাত্র আসলো, এখন ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হচ্ছে।
,,,,,ওহহ আচ্ছা,, তাহলে ভাইয়াকে শুধু শুধু বলার দরকার নেয় ভাইয়া টেনশন করবে।
,,,,হুমম ঠিক আছে। তোমার ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে আসছে, তুমিও ফ্রেশ হয়ে এসে লাঞ্চ করে নাও।
,,,,,ভাবী আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।
,,,,, খাবে নাকি তোমার ভাইয়াকে বলে দিবো।
,,,,,, ভাবী ব্লেকমেইল করা কিন্তু ভালো না, তাও আবার সায়নকে।
আমি হেঁসে বললাম,,,,,আচ্ছা তাহলে তো আরো বেশি করে করবো, খাবে কিনা বলো।
,,,,,,হুমম ঠিক আছে।

সায়ন সিরির রেল ধরে ধরে উপরে যায়, আমি টেবিলে খাবার সাজাতে থাকি কিন্তু মন তো আমার অন্য জায়গায়। একটু পর দুজনে এসে খাবার টেবিলে বসে। আমিও খেতে বসি, এ সময় প্রহর আসে, অয়ন তাকে খেতে বসতে বলে, কিন্তু সে বলে, সে নাকি খেয়ে এসেছে,পেটে নাকি একটুও জায়গা নেয়।

আমি উঠে প্রহরের দিকে তাকিয়ে বলি,,, আমি আজ নিজ হাতে বিরিয়ানি রান্না করেছি, খাবেন না আপনি।

প্রহর এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে মুশকি হাসি দিয়ে বলে,,, পেটের এক কোনায় খালি খালি লাগছে, সেটা না হয় তোমার বিরিয়ানি খেয়েই পূরণ করবো।

প্রহর এসে বসে, আমি সবাইকে বিরয়ানী সার্ফ করলাম। সবাই খাচ্ছে, আমি বার বার প্রহরের দিকে তাকাচ্ছি, অনেক কষ্টে খাচ্ছে মনে হচ্ছে। আমি প্রহরের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,এতো কষ্ট হলে খাওয়ার দরকার নেয়,ইটস ওকে।

প্রহর মুশকি হেঁসে বলে,,,, তোমার হাতে বিরিয়ানি আর আমি খাবো না এটা হতে পারে। কষ্টের থেকে বেশি মজা লাগছে।

অয়ন টেবিলের নিচে থেকে আমার হাত ধরে বলে,,,, বিরিয়ানিটা অনেক টেস্টি হয়েছে। সায়নও বলে উঠে,,,ভাবী যে এতো মজার রান্না করতে পারে যা তো জানতাম না, জানলে তো মাকে ছুটি দিয়ে দিতাম।

আমি মুশকি হেঁসে উঠি, ঠিক এই সময় প্রহর বলে উঠে,,, মারু তো সব সময় ভালো বিরয়ানী রান্না করতে পারে সাথে মাংসও।

আমি প্রহরের দিকে সন্দেহের নজরে তাকিয়ে বলি,,,, আমি তো আজি রান্না করে খাওয়াল আপনি সব সময়ের কথা বলছেন কেনো।

প্রহর একটু নার্ভাস হয়ে বললো,,, না মানে, আজ এতো ভালো রান্না করেছো মানে সব সময় হয়তো এমনি ভালো রান্না করো তাই বললাম।

,,,,আর আমি যে ভালো মাংস রান্না করতে পারি সেটা কিভাবে জানলেন আমি তো মাংস করি নি।

প্রহর গ্লাস উঠিয়ে একটু পানি খেয়ে বললো,,, আরে বিরিয়ানিতে যে মাংস গুলো আছে না সে গুলো অনেক মজা লাগছে, তাই বললাম।

অয়ন আমার দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে,,,আরে তোমার রান্নার প্রশংসা করছে, এটা কি তোমার সহ্য হচ্ছে না নাকি,, এমন ডিটেকটিভের মতো প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করছো।

আমি একটু স্বাভাবিক হয়ে বললাম,,,, না এমনি।

আমি অনেক ক্ষন ধরে দেখছি প্রহর প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে, খুবি অল্প অল্প করে খাচ্ছে, আর আমার দিকে নজর মিলাচ্ছে না। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছি, কারো মুখে কোনো কথা নেয়, হঠাৎ করেই সায়ন টিভিতে কার্টুন ছেড়ে দেয়,সবাই সায়ন এর দিকে তাকায়।

সায়ন সবার দিকে তাকিয়ে একটা ইনোসেন্ট হাসি দিয়ে বলে,,, এখানে কি কোনো সিরিয়াস কথা হতে যাচ্ছিলো নাকি। ঠিক আছে আমি বন্ধ করে দিচ্ছি।

আমি রিমোটটা নিয়ে বললাম,, না না বন্ধ করো না, এটা আমার ফেবারিট কার্টুন।

সায়ন একটু নড়েচড়ে বসে বলে,,তাহলে তো দুজনে মিলে দেখবো। অয়ন হেঁসে বলে,,,আমরা সবাই মিলে দেখবো তোমরা একা কেনো দেখবা।

আমি কার্টুন দেখে হাসার নাটক করছি যেনো সবাই সব কিছু একটু স্বাভাবিক ভাবে নেয়, আর তাই হলো সবাই আমার সাথে সাথে কার্টুন দেখে হাসছে।কিন্তু কথা হলো এটুকু কথা নিয়ে সবাই এতো সিরিয়াস হয়ে গেছে কেনো, তাহলে কোনো রহস্য তো আছে, হয়তো আমার স্মৃতি কিছু দিনের না বেশ অনেক দিনের বা হতে পারে বছরের চলে গেছে।

সবাই মিলে বেশ অনেক ক্ষন কার্টুন দেখার পরে আমরা সবাই যার যার রুমে চলে যায় রেস্ট করার জন্য।আহান
আমাকে সাথে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। অয়ন আমার দিকে ফিরে আমার উপরে তার এক হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।

আমি শুয়ে আছি কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেয়। আমি অয়নের দিকে তাকায়, ঘুমন্ত অবস্থায় চেহেরার মায়াটা যেনো আরো বেশি বেড়ে যায়। আমি অয়নের গালে হাত বুলিয়ে ধরে ভাবছি,,যদি আমি যেমন ভাবছি তেমন কিছু হয় তাহলে আমাদের সম্পর্কের কি হবে। অয়নের মায়া মনে হয়না আমি ছাড়তে পারবো। কিন্তু যদি এতে তোমার দোষটা একটু বেশিই হয়ে থাকে তাহলে তোমার সাথে থাকতেও আমার অনেক কষ্ট হয়ে যাবে।

এগুলে ভাবতে ভাবতে কখন যে অয়নের ঘুম ভেঙে যায় সেদিকে আমার কোনো খেয়ালি নেয়। অয়ন আলতো চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,,,, কি দেখছো নীর।

অয়নের কথায় আমার হুশশ আসে, আমি মৃদু হেঁসে বলি,,,,,কিছু না, ঘুম ভেঙে গেছে।

অয়ন আবার চোখ বন্ধ করে আমাকে তার দিকে ফিরিয়ে আমার বুকে মাথা রেখে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে শুয়ে থাকে। আর ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,,,,,,, আমাকে একটু ঘুমাতে দাও নীর। আর তুমিও ঘুমাও আমার সাথে।

কিছু ক্ষন পরে অয়নের সাথে আমিও ঘুমিয়ে পড়ি। বিকেলে আমার ঘুম ভাঙে কিন্তু আশেপাশে অয়নকে দেখতে পারছি না, টেবিলে একটা কাগজে লিখা “আমি কাজে যাচ্ছি, খুব তাড়াতাড়ি এসে পড়বো”

আমিও উঠে ফ্রেশ হয়ে ছাদে যায়, রোদের তেজ নেয় তেমন, ঠান্ডা হওয়া ভালোই লাগছে। একটু সাইডে তাকাতেই দেখি প্রহর আমার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে। আমি একটু কাছে গিয়ে তাকিয়ে বলি,,,,,আপনি এখানে, কি করেন।

প্রহর কোনো জবাব দিচ্ছে না, আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম তবে এখন একটু জোরে। প্রহর তার নজর সংযত করে বললো,,, না মানে, শাড়ী পড়ে চুল গুলো খোঁপা করেছো তো তাই।

এটা বলে প্রহর নিজেই চুপ হয়ে গেছে, হয়তো মুখ থেকে কথাটা বেরিয়ে গেলো। আমি একটু দূরত্ব বজায় রেখে বসে বললাম,,,,, হুমম তাতে কি হয়েছে।

প্রহর অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,,,, কিছু হয়নি, তবে তুমি তো বেশি চুল খোঁপা করো না তাই আরকি।

,,,কেনো ভালো লাগছে না বুঝি।

প্রহর আমার দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি হাসলো। কিছু বললো না। আমি প্রহরের ডাইরির দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,,,, কি করছেন এখানে, এই সময়।

প্রহর তার ডাইরিটা বন্ধ করে বললো,,, আমি তো প্রতিদিনি আসি, আর গল্প সাজায়।

,,,,ওহহ আমি এসে ডিস্টার্ব করে ফেললাম বুঝি। তাহলে আমি আসি।

প্রহর হাল্কা হেঁসে বললো,,,তাহলে আমি ডিস্টার্ব হতে ইচ্ছুক।

ওনার কথা শুনে আমারো মুখে হাসি চলে এলো। কিছু ক্ষন দুজনেই চুপচাপ বসে আছি, আমিই নিড়াবতা ভেঙে বললাম,,,,,, আচ্ছা আপনি কখনো কাওকে ভালোবেসেছেন,, বললে সত্যিটা বলবেন পিল্জ, মিথ্যা বললে আপনার ভালোবাসার অপমান হবে।

প্রহর আমার দিকে বলে,,, আমি তো এখনো ভালোবাসি প্রচুর।
,,,,,,কাকে?

প্রহর শুধু আমার দিকে তাকালো তারপর বললো,,,, হঠাৎ ভালোবাসার পিছনে পড়লে যে, তাও আবার আমার।

,,,,এটা আমার প্রশ্নের উত্তর না।

প্রহর অন্য দিকে তাকিয়ে বলে,,,, কিছু প্রশ্নের উত্তর না জানাই ভালো।

,,,,, ভালো মন্দ তো শুনার পরে বলা যায়, এর আগে বিবেচনা করা বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমার মনে হয় না।
,,,,সবসময় বুদ্ধিমানের মতো কাজ করা বিপদজনক হতে পারে।
,,,,তাহলে আপনি বলবেন।
,,,,,,, সব কিছু যানা কি খুব প্রয়োজন, কিছু অজানা থাকাটাও ভালো।

,,,জানতে যে খুব ইচ্ছে করে,কি করবো।
,,,,সব ইচ্ছে তো আর পূরণ হয় না।
,,,আচ্ছা তাহলে আপনি বলবেন না, ঠিক আছে তাহলে এটা বলুন আপনি কি কখনো ময়মনসিংহ গিয়েছেন।

প্রহর উঠে দাঁড়িয়ে বললো,,,,,, না কখনো না।

বলে চলে যায়, আমি বসে আছি, প্রহর মিথ্যা বলছে বুঝা যাচ্ছে। আমিও কিছু ক্ষন চুপচাপ বসে থেকে ছাদ থেকে চলে যায়। আমি আমার রুমের দিকে যেতে থাকি, কিন্তু কি একটা ভাঙার আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে যায়,আওয়াজটা সায়ন এর রুম থেকে আসছে। আমি দেখতে যায়, গিয়ে দেখি সায়ন রাগে রুমের জিনিস পত্র ভাঙছে।

আমি গিয়ে সায়নকে আটকায়,আটকিয়ে বলি,,,,কি হয়েছে সায়ন।
সায়ন তার নিজের মাথার চুল খামচে ধরেছে। আমি সায়নকে বিছানায় বসিয়ে বলি,,, কি হয়েছে সায়ন।

সায়ন মাথায় ধরে বলছে,,,যানি না ভাবী, হঠাৎ করেই কেনো যানি অনেক রাগ উঠছে, মাথাটা ব্যাথা করছে। রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না, কেনো এমন হচ্ছে।

,,,আমি তোমার ভাইয়াকে কল করছি।
,,,,না ভাবি, এক কাজ করো তুমি আলোকে ডাকো, ও দেখে যাক, পরে বেশি প্রবলেম হলে ভাইয়াকে বলবো।
,,,,ঠিক আছে, তুমি শুয়ে থাকো।

আমি কল আলোকে ডাকি, আর রুম পরিষ্কার করার জন্য একজন মেইডকে বলে দিয়। আমি আমার রুমে আসি। এখন আমার নিজের মাথাটাই ঝিম ঝিম করছে। ভাবলাম সাওয়ার নিলে ভালো লাগবে, আলমারি থেকে কাপড় বের করার সময় একটা ফাইল আমার চোখে পড়লো, অয়নের জরুরি ফাইল মনে করে রাখতে গেছিলাম,,

বাট ফাইলটা রাখতে গিয়ে যা চোখে পড়লো তা বিশ্বাস করার মতো না, পুরো ফাইলটা পড়ে আমার মাথা ঝিম ঝিম করছে। ফাইলটা দেখে মনে হচ্ছে অয়ন আমার সাথে কোনো গেইম খেলছে, “কে বাঁচে কে মরে” এমন টাইপের গেইম। ফাইলটা নিয়ে আমি বিছানায় বসে পড়ি, চোখের পানি কোনো ভাবেই বাঁধা মানছে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here