আমার হৃদয়ে সে পর্ব -১১+১২

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-১১

”আপনার আগের ক্যালিগ্রাফির ডিজাইনগুলো আমাকে দেখান!যেটা আমার ভালোলাগবে সেটা চুজ করবো।”

পাশে রাখা আমার ল্যাপটপটা ওপেন করে ক্যালিগ্রাফির প্রোডাক্টগুলো স্ক্রিনে শো করে তা অভির দিকে এগিয়ে দিই।কাজটা অত্যন্ত ফর্মালভাবে করি।করার মাঝে কোনো রকম জড়তা বা আড়ষ্টতা ফুঁটে উঠে নি।দেখলেই যে কেউ বুঝবে অভির সাথে আমার এই প্রথম দেখা বা প্রথম কথা।অভি চটজলদি হাতে ল্যাপটপটা আমার থেকে টান মেরে ক্যালিগ্রাফিগুলো দৃঢ় মনোযোগে দেখতে ব্যস্ত হয়ে যায়।দেখা শেষ হলে সে ল্যাপটপটা আবার আমার দিকে তাঁক করে।স্ক্রিনে ইশারা করে। বলে,

“আমার কুয়াড্রানগুলার ক্যালিগ্রাফিগুলো পছন্দ হয়েছে।তবে গোলাপী কালার দেওয়া যাবে না।গোলাপীর বদলে গাঢ় নীল দিতে হবে।আর বাদবাকি কালার সব ঠিক আছে।তবে হ্যাঁ,কাজটা আমার একদম সলিড চাই।অত্যন্ত নিঁখুত কর্মা।কোনোরকম কাঁচা যেন না থাকে।আশা করি মোটামুটি ক্লিয়ার!”

বলে আমার দিকে তাকায়!আমার চোখের পাতা নিশপিশ করে উঠে।প্রথমে তাকাতে বিপত্তি বেঁধে যায়।তারপরও বিপত্তিকে ঠেলে স্বাভাবিক তাকিয়ে বলি,

“ক্লিয়ার!তবে হ্যাঁ,একদম নিঁখুতের ব্যাপারে আমি এখনো অনিশ্চিত।করার আগমুহূর্তে বলতে পারছি না।তবে আশা করি,নিঁখুত না হলেও সুন্দর হবে!”

বলে সৌজন্যতামূলক একটু হাসি।অভি চোখের দৃষ্টি অন্যদিক করে জোরে গাঢ় নিঃশ্বাস ছাড়ে।আবার আমার দিকে তাঁকায়।বলে,

“ইট’স ওকে।আমি তাহলে প্রোডাক্টসগুলো আপনাকে ই-মেইল করে দিচ্ছি যেগুলোর বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।”
“সিউর।”

তারপর অভি আমার ই-মেইলটা নিয়ে তাতে প্রোডাক্টসগুলো এক এক করে সেন্ড করে।সেন্ড করা শেষ হলে। বলে,
“কাজ করার সময় আপনার যাবতীয় যা যা তথ্য জানার প্রয়োজন হবে আমাদের এম.ডি সাহেব আছেন।তাকে কল করে জেনে নিতে পারবেন।আপনাকে ডিরেকশন দেওয়ার কাজ উনার উপর।”
“ওকে।”
“কয়দিন লাগবে বানাতে আপনার?”
“আপনি ক’দিনের মধ্যে চান?”
” চারদিনের মধ্যে চাই।”
“ঠিক আছে।”

অভি আর কিছু বলে নি।তার কথা সম্ভবত শেষ।সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে সামনে থেকে চলে যায়।তারপর এম.ডি আমার সামনে বসে।বিনীত বাক্যে বলে,

“ম্যাম,আপনার যত যা সমস্যা হয় কাজ করতে গিয়ে আমাকে সাথে সাথে কল দিবেন।ঠিক আছে?”
“সমস্যা হলে অবশ্যই দিব।”
“থ্যাংক ইউউ,ম্যাম।”
“মোস্ট ওয়েলকাম।”

তারপর চলে আসি।

১৩.
ভেতরটা নিশপিশ করছে।মনটা খুব একটা ভালো নেই!অবশেষে অভির কোম্পানিরও বিজ্ঞাপন বানাতে হচ্ছে?
জীবনে ঘুরে দাঁড়াবার সময়ে এটাও ছিল কপালে?কখনো ত ভাবিই নি ওর সামনে গিয়ে এভাবে দাঁড়াবো।আর আজ!আর আমি ওর সামনে কীভাবে এতটা শান্ত,স্বাভাবিক এবং সাবলীল থেকেছি!অবাক!বড্ড অবাক নিজের উপর!তবে কেনজানি ওর কোম্পানির বিজ্ঞাপন বানাতে মন থেকে একসেপ্ট করতে পারছি না।মন চায় এখুনি অফার টা সোঁজা রিজেক্ট করে দিই!কয়েক সেকেন্ডস নিশ্চুপ থাকি।এরইমাঝে খালামণি আসেন।আমি ফ্যাকাসে চোখমুখ মসৃণ করে আবার ঠিকঠাক হয়ে বসি।জোরপূর্বক হেসে।বলি,

“খালামণি..!”

তালে খালামণিও হেসে দেন।হাতে থাকা খাবারের প্লেট টি-টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলেন,
“বিকেলো আসার পর থেকেই রুম থেকে বের হচ্ছিস না।সন্ধে নাশতাও করলি না। আঁটটা বাজতে চললো।এখনতো কিছু খেয়ে নে?”
“খুদা নেই খালামণি।”
“খুদা নেই মানে?আবার জ্বরটর হলো নাকি?”

বলে তিনি উদ্বিগ্নতা মুখে আমার কাছে আসেন।কপালে,মুখে,গাঁয়ে হাত বুলান।নাহ তাপমাত্রা ঠিকই আছে।বলেন,

“তাপমাত্রা ত ঠিক আছে।তাহলে খেতে ইচ্ছে করছে না কেন?”
বলে খালামণি কয়েক সেকেন্ডস চুপ থাকেন।এরমাঝে কিছু ভাবেন।পরক্ষণে মনে অন্য আশঙ্কা ঢুকতেই চোখজোড়া বড় করে ফেলেম। বলেন,
“এই পারিসা?আবার মন খারাপ নাকি?ওখানে কিছু হয়েছে?ওখান থেকে আসার পর থেকেই ত দেখছি খেতে চাচ্ছিস না!”

আমি খালামণির এ’কথার পিঠে খালামণির দিকে মাথা তুলে তাকাই।পরক্ষণে মাথা আবার নত করে ফেলি।কথার জবাব দিই নি।নিশ্চুপতায় খালামণির জহুরি চোখ আমার মনের কথা বুঝে যায়।আসলেই মন খারাপ আমার।খালামণি ওমনির হাত চাপড়ে ধরেন।বলেন,

“কি হয়েছে অফিসে?বল আমাকে?”

আর চুপ থাকতে পারি নি।অভির কথা খালামণিকে বলে দিই।খালামণি সবটা শুনে হেসে দেন।তা দেখে আমার চোখ জোড়া সরু হয়ে আসে।খালামণি বুকে হাত রেখে হাসি থামান।বলেন,

“আরেহ,ওর কোম্পানি থেকে সুযোগটা হলো এটা তো খুশির সংবাদ!তুই ওর কোম্পানির বিজ্ঞাপন বানিয়ে দিবি এটা তোর যোগ্যতার প্রমাণ পারিসা!তুই ওকে তোর জাস্ট যোগ্যতা টা দেখিয়ে দিবি।আর সাথে ইগো,ব্যক্তিত্ব সব।কখনোই বুঝতে দিবি না তুই একসময় ওরজন্যে দুর্বল ছিলি! কেদেছিলি। কষ্ট পেয়েছিলি।ওর সামনে নিজের বিলং লাইফ এনজয় করবি।শেষে কি হবে জানিস?ও ভাববে তুই ওকে ছাড়া খুব ভালো আছিস।খুব ভালো।আর এই ভালোটুকুই তোর দাম্ভিকতা!তোর অহংকার!”

তাকিয়ে থাকলাম খালামণির দিকে।খালামণি কথাগুলোা বলা শেষে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলেন আমি সন্তুষ্ট নই।দ্বিধাদ্বন্দে।এবার কাঁধে হাত রাখেন।বলেন,

” কাজ এবং পার্সোনাল কিছু খুবই আলাদা!কাজের সাথে কখনো পার্সোনাল লাইফ টানবি না।পার্সোনাল পার্সোনালই।তা মানুষ একা ফিল করে।আর কাজটা সবার মাঝে!নিজের কাজকে এড়িয়ে যাবি না।আগে নিজের কাজ করবি তা যেই জায়গায় বা যেই পরিস্থিতিতেই হোক।এখানে মনোবল হারালে পরে অন্য জায়গায়ও মনোবল রাখতে কষ্ট হয়ে যাবে।তবে তোর পার্সোনাল লাইফে এখনতো আর মাথাব্যথা নেই তাই তো?”

আমি স্থির চাহনিতে খালামণির মুখ পানে তাঁকাই।খালামণি এবারো হাসেন।বলেন,

“যদিও থেকে থাকে।তুই তোর এই যোগ্যতা দিয়েই তোর পার্সোনাল লাইফকে সফল করবি।আর এটাতে এত দ্বিধাদ্বন্দ হবার কি আছে?সহজভাবে ভাব।যাইহোক একদম মন খারাপ করবি না।মনকে শক্ত কর।খেয়ে নে।খাবার ঠান্ডা হয়ে যাছে।ফাহিম বোধহয় ডাকছে আমাকে। গেলাম।”

বলে খালামণি দরজার দিকে পা বাড়ায়।কিছু একটা ভেবে আবার পেছনে ঘুরে দাঁড়ায়।বলে,

“ওহ পারিসা?তোকে একটা কথা বলতাম..।”
“বলো?”
“তুই যাওয়ার পর তোর মাকে তোর জবটার ব্যাপারে ডিটেইলস বুঝিয়েছি।বুঝেছেন হয়তো।কথার ভঙ্গিমায় বুঝলাম পরে আর আপত্তি করবে না মনে হয়।যদিও আপত্তি করে বসে তাহলে সোঁজা আমাকে জানাবি,ঠিক আছে?”

মৃদু হেসে উঠি।বলি,
“মা কখন বাসায় গিয়েছে,খালামণি?”
“তুই যাওয়ার দুই ঘন্টা পরই।থাকতে বলেছি।থাকে নি।”
“থাকবে না।আমার উপর রেগে আবার থাকবে!কল্পনা! ”

খালামণি ঠোঁট টিপে হেসে উঠেন।তারপর রুম ত্যাগ করেন।
#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-১২

১৪.
চারিদক শুনশান নিরবতা।বাইরে থেকে ফাঁকে ফাঁকে বাতাস ধেঁয়ে আসে।বাতাসে পর্দাগুলো দুলে ওঠে।জানলা বন্ধ করা হয়নি।জেগে আছি।কাজ করছি ল্যাপটপে।অভির কোম্পানির বিজ্ঞাপনের প্রজেক্টটা নিয়ে বসলাম দুইঘন্টা হলো।এখন ১টা বাজতে চলছে।অভির প্রজেক্টে আসলে কাজ করতাম না।খালামণি যা বললো মনটা তাতেও ওতটা সায় দেয়নি।তবে আঙ্কেল অফিস থেকে ফিরে খালামণির থেকে অভির কোম্পানির প্রজেক্ট পেয়েছি শুনে তিনি খালামণি থেকেও আরো উৎসাহ দিয়েছেন। নাহ কাজটা ছাড়তাম না।কিছুতেই না।করতাম।যেভাবেই হোক করতাম।এখন বলা যায় উনাদের কথার চাপাতলে একপ্রকারে বাধ্য হয়ে করতে বসেছি।তবে কাজটা আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়েই করবো।কাজ শেষে অভির নিরস কথা শুনতে রাজি নই।এক তিল পরিমাণ ভুল হবে তাও নই।সে যেমন সলিত এবং নিঁখুত কর্মা চেয়েছে।ইনশাল্লাহ এরচেয়েও ভালো কিছু উপহার দেবার চেষ্টা করবো।করতে করতে অনেকটা সময় পার হয়।চোখমুখে ক্লান্তি এসে যায়।হাত ব্যথায় নিশপিশ করে।তারপরও রেস্ট নিচ্ছি না।সময় মাত্র চারদিন।এই চারদিনে সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা।ক্লান্তিকে কোনো পরোয়া নয়।

চারদিন কেঁটে যায়।কাজটা সম্পূর্ণ হয়।এগোরটার দিকে অভির কোম্পানিতে যাওয়ার কথা।তাদের তাই বলেছি।এখন আঁটটা বাজে।তাই প্রোডাক্টসেরক্যালিগ্রাফি ডিজাইনগুলো আবার চেইক করতেছি কোনো ভুলত্রুটি থেকে গেলো কি না।স্ক্রিন ছোট্ট করি।আবার বড় কি।আঙ্কেল রুমে ঢুকেন।বলেন,

“কাজ কম্প্লিট?”

আঙ্কেলের দিকে তাকাই।হেস জবাব দিই,
“হ্যাঁ।তবে কোম্পানিটির রুচি মতন আমার কাজটা হলো কি না টেনফিল করছি।”
“আরেহ কিছু হবে না।দেখে অভি তোমার প্রোডাক্টস ডিজাইনগুলো দেখে আর খুশি হয়ে যাবে।”
“এত কনফিডেন্স?”
“তোর উপর আমার কনফিডেন্স আছে।তুই পারবি।তোকে দিয়েই পসিবল।”
“বেশি প্রশংসা করা হলো না,আঙ্কেল?”
“প্রশংসা নয়।যা সত্য তাই বলছি।”

আঙ্কেলের কথায় আর তর্কে যাই নি।ইনার সাথে এখন কথা বলেও আর লাভ হবে না।আমি যদি সারাদিন চিল্লাপাল্লা করেও বলি,নাহ আঙ্কেল, কাঁচা হয়েছে!’উনি বলবেন,সুন্দর হয়েছে।”জানি না উনার কোম্পানিতে সিলেক্ট হবার পর আমার প্রতি কেন উনার এমন বিশ্বাসটা জন্মালো।বুঝতে পারছি না।

১৫.

এগোরটার দিকে অভির কোম্পানিতে ঠিক ঠিক এসে পৌঁছায়।এম ডি আমাকে দেখে খুশি হয়ে যান।হাসিমুখে বলেন,

“ম্যাম,প্রজেক্ট কম্প্লিট?”
“জ্বী।”
“থ্যাংক ইউ, ম্যাম।স্যারের অফিসে যেয়ে বসুন।স্যার আপনাকে উনার অফিসে যেতে বলেছে।”

এম ডির কথায় খুব ধাতস্থতা হয়ে যাই।এখন অভির সামনে যেতে হবে।তার মুখোমুখি বসতে হবে।কথা বলতে হবে।ভাবতেই হৃদপিণ্ডটা লাফিয়ে উঠে।গলার পানি শুকিয়ে আসে।চোখের পাতা আতংকে উঠানামা করতে থাকে।

“ম্যাম?যান।”

এম ডির কথায় আমি টনক নড়ে উঠে।নিজেকে বহুকষ্টে সংযত করে ঠোঁটে জোরপূর্বক হাসি ফুঁটিয়ে বলি,

“জ্বী,যাচ্ছি।”

কাঁপা কাঁপা পায়ে হেঁটে দরজার কাছে গেলাম।দটজা ঠেলে ভেতরে তাকালাম।অভি হুইল চেয়ারে বসে ল্যাপটপে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে মনোযোগ নিয়ে টাইপিং করছে।আমি আমার উপস্থিতি জানান দিতে খ্যাঁক করে হালকা কেশে উঠি।তাতে অভির কানে পৌঁছায় নি।নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকি কয়েক মুহূর্ত।দাঁড়ানোর সময়টা একটু বেশিই গড়াতে ওপাশ থেকে,

“দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।এত ফর্মালিটি লাগবে না।অভি এসব পছন্দ করে না!”

এ’কথা গুলো সে কাকে বললো?এখানে আমি ছাড়া ত আর কেউ নেই।আমি ই ত শুধু দাঁড়িয়ে আছি।তাহলে সে কথাগুলো আমাকেই ইন্ডাইরেক্টলি বললো!এত ইগো!ভ্রু কুঁচকে আসে আমার।এদিকওদিক তাকিয়ে মনে জেগে ওঠা ক্রোধটাকে বহু কষ্টে সামলিয়ে তারপর ভেতরে ঢুকি।কোনোকিছু না বলে ধপাস করে তার সামনে চেয়ারটায় বসে পড়ি।এখানেও ফর্মালিটি দেখানো হয়নি।দেখাবোই বা কেন! সে ই ত মাত্র বললো এত ফর্মালিটি লাগে না তার কাছে।ল্যাপটপটা অন করি।বলি,

“কাজ কম্প্লিট।নাউ ইউ ক্যান সি।”

বলা মাত্রই অভি স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে আমার দিকে তাকায় এবার।তাকানোর চাহনি দীর্ঘ হয়।আমি তাকাই নি।একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব এনে টগবগ চোখে চারপাশে তাকাতে থাকি।অভি হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নেয়।বলে,

“থ্যাংকু।”

থ্যাংকুর আর জবাব দিই নি।দৃষ্টিটা সরাসরি আমার ল্যাপটপের দিকে নিবদ্ধ করে।বলি,

“কাজগুলো দেখে নিন।”
“সিউর।”

ল্যাপটপটা টেনে প্রোডাক্টস ডিজাইনগুলো একে একে দেখতে থাকে।এতক্ষণ পর এবার আমি অভির দিকে দৃষ্টি দিই।দেওয়ার কারণ ডিজাইনগুলো দেখে সে আসলে কতটা সন্তুষ্ট তার ভাব বুঝতে।দেখে যতটা মনে হলো সে খুশি হয়েছে।খুশি টা যদিও মুখে ফুঁটছে না তবে তার ঠোঁটের দিকে তাকালে স্পষ্ট ।কারণ ডিজাইনে চোখ বুলাবার মাঝে মাঝে বারবার ঠোঁট নড়ে উঠছে তার।এই নড়াটাই উৎফুল্লতার,প্রোজ্জ্বলতার এবং আকাঙ্খার।আমি যদিও সিউরিটি বলছি না তবে আমার মন তাই বলছে।হলোও তাই।দেখা শেষ করে সে আমার দিকে তাকায়।পুরো মুখ ছড়িয়ে হেসে দেয়।বলে,

“যতটা ভেবেছি।তারথেকেও সুন্দর হয়েছে।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।”
“মোস্ট ওয়েলকাম।”

অভি আর কিছু বলে নি।সে এবার তার প্রোডাক্ট ডিজাইগুলোর ফাইলটা তার ল্যাপটপে ট্রান্সফার করে নেয়।ট্রান্সফার করা শেষ হলে,
“আজ রাতের মধ্যেই আপনার বাজেটটা ডাচ বাংলাতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
“আসি …!”

বলে আমি ল্যাপটপটা টেনে হাতে নিই।উঠে দাঁড়াই।অভি আরো কিছু বলতে মুখ নড়ে উঠে।কিন্তু তাতে আমি আর পাত্তা দিলাম না।চলে এলাম সোঁজা।ওয়েটিং রুমের কাছে আসতে কোথা থেকে এমডি ছুটে আসেন আমার দিকে।বলেন,

“ম্যাম,এখনই চলে যাবেন?”
“জ্বী।”
“থাকুন প্লিজ আরেকটু।”
“কেন?”
তীর্যক চোখে তাকিয়ে বললাম।এমডি হেসে উঠেন।হাসি বজায় রেখেই জবাব দেন,

“ম্যাম,আপনি প্রথমবার এখানে এসেছে কিছু খানননি।আজ খেয়ে যেতে হবে।”
“সরি।”
“আজ আর সরি টরি শুনবো না।অভি স্যার ওদিন আমার উপর বড্ড খেপেছে।আজ যদি কিছু না খেয়ে যান তাহলে আরো খেপবে।তাই প্লিজ ম্যাম স্যারের প্যারা থেকে আমাকে বাঁচাতে আবদার টুকু প্লিজ রাখুন।আমি অভি স্যারকে খুব ভয় পাই।”

বলতে বলতে এম ডি মুখটা খুব নিরস করে ফেলে
আমি তাকিয়ে থাকি।তবে আমার কিছুই করার নেই।যেহেতু অভি আমাকে খাওয়ানোর জন্যে এম ডি কে থ্রেট দিয়েছে।তাহলে খাবারের অফারটা অভির থেকে এসেছে।আর তার সরাসরি মুখে না বলা অফার অন্যের মুখে থেকে গ্রহণ করে খাবো তা আমি নই!শক্ত হয়ে এম ডি কে জবাব দিলাম,

“সরি।”
দাঁড়ালাম না।চলে এলাম।আর বেচারী এম ডি মাথায় হাত দিয়ে তাকিয়ে আছেন।

১৬.
দুইদিন না যেতেই ফেসবুক,টুইটার,গুগল,টেলিভিশন জুড়ে শুধু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির, আই মিন অভির কোম্পানির বিজ্ঞাপন!বিজ্ঞাপনের প্রতিটি প্রোডাক্টে শুধু আমারই হাতের অঙ্কন।মানুষ বিজ্ঞাপনের কর্মা দেখে বিমোহিত।রুচি,আগ্রহ বেড়ে যায় সাথে।ভিড়তে থাকে অনলাইনে,দোকানে-শপিং মলে যেখানে শুধু মাল্টিন্যাশনালের প্রোডাক্টস বেচেতা দেখে আঙ্কেল টেলিভিশন থেকে চোখ সরিয়ে ফেলেন।আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

“শেষে তুই যেয়ে ওদের আরো সুনাম বাড়িয়ে দিলি?”

আমি আঙ্কেলের এ’কথার বিনিময়ে একটা বাঁকা হাসি দিই।আঙ্কেল চোখের চশমা টা খুলেন।জোরে বার কয়েক নিশ্বাস ছাড়েন।তারপর আবার বলেন,

“আমি দোয়া করি তুই জীবনে অনেক বড় হ!”

কথাটা বলেই আঙ্কেলের গলার স্বর করুণ হয়ে এলো।বুঝলাম আঙ্কেল আমাকে মন থেকে দোয়া করছেন।আমি মাঝেমাঝে খুব অবাক হই।এই মানুষগুলোকে দেখে।।মা-বাবা আমাকে যতটা না বুঝেন তারথেকেও বেশি বুঝে এই মানুষ গুলো।বেশি সাপোর্ট করেন এই মানুষ গুলো।এই মানুষ এত ভালো কেন,হ্যাঁ?একটু কম ভালো হতে পারলো না?আবেগে বুকটা কেঁপে উঠে আমার।চোখে পানি চলে আসে।আঁচল টেনে মুখের উপর আলতো হাত উপর রাখি।পানি মুছে যায়।পাশে আন্টিও বসা ছিল।আন্টি বুঝতে পারেন আমি কাঁদছি। বলেন,

“তুই কাঁদছিস যে?”
মুখ থেকে আঁচলটা সরিয়ে।বলি,
“সুখে কাঁদি।অতি সুখে।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here