আলো আঁধার, পর্ব:১০+১১

#আলো_আধাঁর
লিখা- জেসিয়া জান্নাত রিম

১০.
অসময়ে হুটহাট বৃষ্টি যেন বাংলাদেশের প্রকৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাহলে বর্ষার আসতে যেখানে এখনো অর্ধ বছর বাকি সেখানে এখন এই পূর্ণিমার রাতে হুট করে বৃষ্টি একটুও অবাক করেনি এদেশের মানুষকে। পূর্ণিমা যেমন সুন্দর তেমনি পূর্ণিমায় বৃষ্টি ও সুন্দর। যদিও বৃষ্টি হিয়ার বিশেষ পছন্দ না। চারিপাশ কেমন স্যাত্যাস্যাতে লাগে। তবে হঠাৎ মধ্য রাতের এই বৃষ্টিটা হিয়ার ভালো লাগছে। বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ কালো মেঘ যখন পূর্ণ চাঁদটাকে ঢেকে ফেলছে পুরো পৃথিবী তখন আঁধারে ডুবে যাচ্ছে। আবার মেঘ যখন সরে যাচ্ছে তখন পৃথিবী আবার আলোকিত। আলো আঁধারের এই খেলাটা দেখতেই হিয়ার বেশি ভালো লাগছে। হঠাৎ ঘাড়ে কারো গরম নিঃশ্বাস পড়ায় চমকে উঠে পিছনে তাকালো হিয়া। ততক্ষণে রাজিব ওর অনেকটা কাছে চলে এসেছে। রাজিবের দৃষ্টিতে আজ অন্যরকম মুগ্ধতা। ঐ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হিয়া লজ্জায় পিছিয়ে এলো। রাজিব ও কিছুটা এগিয়ে এলো ওর দিকে। এভাবে আরেকটু পিছোতেই বারান্দার কাঁচের দরজায় হিয়ার পিঠ ঠেকে গেল। রাজিব দুহাত ওর দু’পাশে রেখে একেবারে কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলল,
আজ যদি সম্পর্কটাকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাই খুব বেশি ক্ষতি হবে কি?
রাজিবের গলার স্বরে কিছু একটা ছিল যাতে হিয়া‌ কিছুটা কেঁপে উঠল কিন্তু বলতে পারলো না কিছু। রাজিব হিয়ার মৌনতাকে অসম্মতি ভেবে ফিরে যেতে চাইলে পিছন থেকে ওর হাত আঁকড়ে ধরল হিয়া। হিয়ার সম্মতি পেয়ে মুচকি হেসে ওকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিল রাজিব। এমন সময় সাইফ টেবিলে থাকা ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো। রাজিব একবার ফোনের দিকে আরেকবার বিছানায় দুহাতে মুখ ঢেকে শুয়ে থাকা হিয়ার দিকে তাকালো। তারপর হাত বাড়িয়ে ফোনটা সুইচড্ অফ করে ড্রয়ার বন্ধ করে দিল। এবং নিশ্চিত মনে হাত বাড়িয়ে হিয়ার শাড়ির আঁচলটা ধরে ফেলল রাজিব।

কিরে গিয়েছিলি তোর সিগারেট সুন্দরীর ওখানে?
ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই প্রশ্নটা করল ফাহিম। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিয়াদ উত্তরে বলল,
গিয়েছিলাম ফোন ও দিয়েছিলাম ম্যাসেজ ও করেছিলাম। ম্যাডাম প্রথমবার ফোন ধরে শুধু হ্যালো বললেন। এরপর আমার আওয়াজ শুনে সেই যে কল কাটলেন না ধরলেন ফোন না করলেন ম্যাসেজের রিপ্লাই। আমি দুই ঘণ্টা ওর হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম নিষ্ঠুর টা একবার বারান্দায় ও এলোনা।
রিয়াদের কথায় শব্দ করে হেসে উঠলো ফাহিম। ওর হাসি শুনে কন্ঠে অভিমান এনে রিয়াদ বলল,
কেমন বন্ধু তুই আমার কষ্টে হাসছিল?
তোর কষ্ঠে হাসি না। তোর কথায় হাসি।
আমি একটা সিরিয়াস কথা বলেছি মোটেও হাসির কিছু না।
হাসির কিছু বলিস নি?
মোটেও না।
তোদের রিলেশনশিপ শুরু হয়েছে কতদিন?
এইতো এক… ওয়েট রিলেশনশিপ মানে এখনো তো ও আমার সাথে একটা কথাও বলেনি। আমিতো ওর মনের কথাটাই জানিনা।
তাহলে তুই কি করে এক্সপেক্ট করিস তোর একটা কলেই ও তোর সাথে কথা শুরু করে দিবে। তোর প্রতিটা ম্যাসেজের রিপ্লাই সাথে সাথে দিবে। তুই বললেই ও তোর সাথে দেখা করবে। এটা হাসির কথা না।
ফাহিমের কথার কোনো জবাব দিলো না রিয়াদ। আগের টোনেই ফাহিম বলতে থাকলো,
প্রেমে পড়ে তোর বুদ্ধি শুদ্ধি সব শেষ হয়ে গেল নাকি। তোর কথা শুনে আমার তো বিশ্বাস ই করতে ইচ্ছা করছে না তুই প্রফেশনে একজন সাইকায়ট্রিস্ট। কি হলো বল কিছু।
কি বলবো আমি নিজেই তো কিছু বুঝতে পারছি না। ওকে দেখার পর থেকে আমার এই অবস্থা। মনে হয় সারাদিন ওকে সামনে বসিয়ে দেখতে থাকি। পাগল পাগল অবস্থা। মানুষের মন বোঝা আমাদের পেশা অথচ নিজের মনই আমি বুঝতে পারছি না।
তোর কথা শুনে মেয়েটাকে দেখতে ইচ্ছা করছে।
না তোকে দেখাবো না।
কেন কেন?
প্রেমে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা একশ পার্সেন্ট।
বাবাহ এতো সুন্দরী?
হুম। খুব সুন্দরী। আমি ভাবছি ঐ ছেলেটা কি বোকা এত সুন্দর মেয়েটাকে পেয়েও হারিয়ে ফেলল।
সৌন্দর্য চিরদিনের জন্য থাকে না।ওর যা প্রয়োজন ছিল সেটা পেয়ে গেছে। এখন সৌন্দর্যে ওর কাজ কি?
শুধু তো সৌন্দর্য ফ্যাক্ট না। ওকে দেখলেই ভালোবাসতে ইচ্ছা করে। মনে হয় ওর চোখের দিকে তাকিয়ে নির্দ্বিধায় পুরো পৃথিবী ছেড়ে দিই।
হয়েছে বুঝেছি ভালোবাসা তোমাকে পাগলের ডাক্তার থেকে পেসেন্ট বানিয়ে ছেড়েছে। তোর সাথে এভাবে বকবক করতে থাকলে আমিও পাগল হয়ে যাবো। এখন না তোদের ওখানে রাত। এত মেয়েটির কথা না ভেবে চুপচাপ ঘুমিয়ে পর।
ঘুমাতেই তো পারি না। চোখ বন্ধ করলেই ওর মুখ ভেসে ওঠে। ব্যস ঘুমের বারোটা বেজে যায়। তুই একটা আইডিয়া দে না কিভাবে ওর সাথে দেখা করব?
জোঁক চেনো বন্ধু জোঁক?
চিনবো না কেন।
তবে শোন ঐ জোঁকের মতো মেয়েটার পিছে লেগে থাক। অনবরত ফোন করতে থাক একসময় বিরক্ত হয়ে ঠিকই ফোন রিসিভ করবে। আর কিছুদিন ওর বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাক একসময় না একসময় তো বাহিরে আসবে। যখনই বেরোবে কিছু বোঝার আগেই নিয়ে দিবি এক দৌড় ব্যাস খেল খতম।
আরে দারুন আইডিয়া দিয়েছিস তো। বেরোলেই নিয়ে এক দৌড়। হেব্বি আইডিয়া।
এটুকু বলেই ফোনটা কেটে দিলো রিয়াদ। ফোনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ফাহিম। শেষের কথাটা ও মজা‌ করে বলেছিল কিন্তু সেটাকেই রিয়াদ সিরিয়াসলি নিয়ে নিল। ওর বন্ধুটির মাথা সত্যিই গেছে। এবার দেশে ফিরে মা যে মেয়েটিকে ওর জন্য পছন্দ করেছে তাকেই টুপ করে বিয়ে করে ফেলবে। ফাহিম এসব ভালোবাসার চক্করে পড়ে পাগল হওয়ার কোনো শখ নেই ওর।

সকলের সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেল হিয়ার। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকাতেই নিজেকে শক্ত বাঁধনে আবিষ্কার করল ও। ওকে আস্ট্রে পৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে রাজিব। রাজিব কে দেখে কাল রাতের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল হিয়ার মুখ। কাল রাতে রাজিবের প্রতিটি ছোঁয়ায় ও অন্য রকম একটা অনুভূতি পেয়েছিল। কে জানে ওটাই ভালোবাসা কিনা। তবে রাজিবকে নিয়ে ওর মনে যে আশংকা গুলো ছিল সবই কালকের পরে শেষ হয়ে গেছে। মানুষটা একেক সময় একেক রকম। এই যে ঘুমের মধ্যে এখন কেমন বাচ্চাদের মতো নিষ্পাপ লাগছে দেখতে। কে বলবে কাল এই নিষ্পাপ মানুষটাই সারারাত ওকে জ্বালিয়েছে। এসব ভাবতে ভাবতেই একটা ভয়ংকর কাজ করে বসল হিয়া। রাজিবের চুলের মধ্যে আঙুল চালাতে চালাতে টুপ করে ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বসল। এতে রাজিবের ঘুম ছুটে গেল। ও হিয়াকে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নিয়ে বলল,
ঘুমে দেখে এডভান্টেজ নিচ্ছ। কাল রাতে তোমার এই সাহস কোথায় ছিল?
হিয়ার হার্টবিট ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। একে তো হুট করে রাজিবের ঘুম ভেঙ্গে গেল তার উপর এই প্রথম রাজিব ওকে তুমি করে বলল। তাই রাজিবের কথার কোনো উত্তর ও দিতে পারলো না। হিয়া কে চুপ থাকতে দেখে রাজিব আবারো বলল,
এখন চুপ কেন একটু আগে তো আমাকে ঘুমে পেয়ে ভালোই চুমু খেলে। কে জানে অচেতন অবস্থায় ঠিক কোথায় কোথায় চুমু খেয়েছো?
রাজিবের শেষের কথাটা শুনে কান লাল হয়ে গেল ডিয়ার। কোনোমতে ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,
মোটেও না। আপনি….
হিয়া কে থামিয়ে দিয়ে কন্ঠে কৃত্রিম রাগ ঢেলে রাজিব বলল,
মনে হচ্ছে আমার মুখ থেকে তুমি ডাকটা আপনি শুনতে চাইছেন না।
রাজিবের চমকে উঠলো হিয়া। হঠাৎ করে সেদিনের কথাটা মনে পড়ায় জিহ্বায় কামড় দিয়ে হিয়া বলল,
একদমই সেটা না।
তাহলে বলো?
কি বলবো?
বলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি রাজিব।
হিয়া একটা শুকনো ডোক গিলল কিন্তু কিছু বলতে পারলো না। হিয়া কে চুপ থাকতে দেখে ওকে ছেড়ে দিয়ে ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে শুলো রাজিব। রাজিবের এমন কাজে নিজের উপর রাগ হলো হিয়ার। এই প্রথম মুখ ফুটে রাজিব ওকে কিছু বলতে বললো আর ও কিনা… ইস মানুষ টা সত্যিই রাগ করেছে। এটা ভাবতেই মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে রাজিবকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো হিয়া। রাজিব আবারো ওর দিকে ফিরে ওকে বলল,
শুধু জড়িয়ে ধরলে তো হবে না কথাটা বলতে হবে।
কথাটা শুনতে হলে আগে নিজেকে বলতে হয়।
আচ্ছা তাই নাকি।
বলেই ওকে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে রাজিব বলল,
আমি তোমাকে ভালোবাসি হিয়া। খুব ভালোবাসি। কেন জানা নেই। তুমিও কি আমাকে ভালোবাসো?
“আমিও তোমাকে ভালোবাসি” কথাটি ওর গলা অবধি এসে আটকে গেল। কিন্তু রাজিব কথাটা শোনার অপেক্ষা করছে ভেবে জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে হিয়া আস্তে আস্তে বলল,
আমিও তোমাকে খুব……
এমন সময় শব্দ করে হিয়ার ফোনের এলার্ম বেজে উঠলো। হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে এলার্ম বন্ধ করে দেখল সাতটা বেজে গেছে। হিয়া তাড়াতাড়ি উঠে বসে কোনোমতে শাড়িটা পেঁচিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকলো। কাল থেকে সাড়ে ছয়টার এলার্ম দিতে হবে। আজ গোসল করে রেডি হতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
চলবে…….

#আলো_আধাঁর
লিখা- জেসিয়া জান্নাত রিম

১১.
দিয়ার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। আজ পাঁচদিন যাবত লোকটা ওকে জ্বালাতন করছে। কখনো ফোন দিয়ে, কখনো ম্যাসেজ করে। ও বেশিরভাগ সময় ফোন রিসিভ করে না। কিন্তু অনেক সময় বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করলে ওকে নানান উল্টাপাল্টা কথা বলে। আর সবসময় সিগারেট সুন্দরী বলে ডাকে। সিগারেট সুন্দরী আবার কেমন সম্বোধন। সিগারেট খোর বলতে পারতো বা শুধু সুন্দরী বললেও হতো। কিন্তু এসবে ওর অতটা রাগ হচ্ছে না। মেইনলি ওর রাগ হচ্ছে হুট করেই ওর লোকটার ফোন রিসিভ করতে ইচ্ছা করছে। বিশেষ করে সিগারেট সুন্দরী ডাকটা শুনতে ও ইচ্ছা করছে। তার উপর কাল রাতে একটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে। ও ঘুমিয়ে লোকটাকে স্বপ্ন দেখে ফেলেছে। সবকিছু মিলিয়ে প্রচন্ড পরিমানে রেগে আছে ও। রুমের মধ্যে দম বন্ধ ভাব হওয়ায় ও বারান্দায় বেরিয়ে এলো। আশেপাশে নজর দিতেই ও দেখলো ওর হোস্টেলের সামনে মুখ করে গাড়িতে হেলান দিয়ে ফোন হাতে কিছু একটা করছে রিয়াদ। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ওর ফোন বেজে উঠায় বুঝতে পারলো ওকেই ফোন করছিল রিয়াদ। মূহুর্তেই ভয়ানক রাগ হলো দিয়ার। ফোন রিসিভ না করেই সোজা নিচে নেমে রিয়াদের সামনে এসে দাঁড়ালো ও। রিয়াদ কে কিছু কড়া কথা শুনাতে গেলে হুট করেই হাতে টান পড়লো ওর। হঠাৎ আক্রমনে কিছু বলতে পারলো না দিয়া। এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিজেকে গাড়ির ভেতরে আবিষ্কার করলো ও। যখন ঘোর কেটে গিয়ে আশেপাশে তাকালো ততক্ষণে গাড়ি হোস্টেলের রাস্তা ছেড়ে কোনো এক অজানা গন্তব্যে এগিয়ে চলেছে। এমন অবস্থায় কি বলবে বা করবে কিছুই বুঝতে পারলো না দিয়া। সবার আগে ওর মাথায় যেটা এলো তা হচ্ছে লোকটা কোনো ভাবে ওকে কিডন্যাপ করেনি তো? ওকে কিডন্যাপ করে লোকটার কি লাভ? দিয়ার এত এত চিন্তার কারণ যে সে তখন নিশ্চিন্তে শিষ বাজাতে বাজাতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। আর মাঝে মাঝে আড় চোখে তার সিগারেট সুন্দরীকে দেখছে। হঠাৎ করেই রিয়াদ গেয়ে উঠলো, ” পড়েনা চোখের পলক
কি তোমার রুপের ঝলক
দোহাই লাগে মুখটি তোমার
একটু আঁচলে ঢাকো, আমি
জ্ঞান হারাবো, মরেই যাবো
বাঁচাতে পারবে না কেউ…….

রিয়াদের গলা বেশ ভালো কিন্তু গানটা দিয়ার বিশেষ পছন্দ হলোনা। ও বিরক্তি নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
দয়া করে চুপ করবেন। একে তো হুট করে তুলে নিয়ে এলেন। এখন আবার এই ফালতু গান গাইছেন। অসহ্যকর।
তোমার গানটা পছন্দ হয়নি। নো প্রবলেম আমি আরেকটা গাইছি।
না প্লিজ। গান গাইতে হবে না। গাড়িটা থামিয়ে দিন আমি নেমে যাবো।
থামাবো তবে গন্তব্যে পৌঁছানোর পর। তখন গাড়ি থেকে নামবে নাকি গাড়িতে থাকবে সেটা তোমার ব্যাপার।
আর কিছুই বললো না দিয়া। গাড়ি থামার অপেক্ষায় চুপ করে বসে রইল ও।

দেখো সারাহ পাগলামি করো না আমি খুব শিঘ্রই আসবো। ঠিক মতো মেডিসিন গুলো নাও। আর তো মাত্র কয়েক মাস দেখতে দেখতে কেটে যাবে।
তুমি তাড়াতাড়ি এসো প্লিজ। তিনমাস ধরে দেশেই পরে আছো। তোমার ফ্যামিলি কে এখনো আমার ব্যাপারে কিছু জানাও নি। আর কবে থেকে বলে যাচ্ছ আসবে অথচ….. এই একমিনিট ওখানে কাউকে পছন্দ হয়ে যায়নি তো আবার?
তুমি বেশি ভেবো না তো। ওখানে এসে কথা বলবো তোমার সাথে।
দেখো আমরা কিন্তু ওনেক ডিসকাশনের পর এই সিদ্ধান্তে এসেছি। এই মুহূর্তে আমি পিছিয়ে যেতে পারবো না।
আমি তো বললাম বেশি টেনশন নিও না ওখানে গিয়ে কথা বলবো। বাই।
বলেই আর একমুহূর্ত দেরি না করে ফোনটা কেটে দিলো রাজিব। কয়েক মাস একটু চুপচাপ থাকতে হবে। অনেক চিন্তা ভাবনা করে ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হিয়াকে ও ছাড়তে পারবেনা কিছুতেই। সারা কে ঠান্ডা মাথায় সব বোঝাতে হবে। সারা নিশ্চয়ই বুঝবে এতো দিনের বন্ধুত্ব ওদের।
কোথাও যাবে নাকি?
হিয়ার কন্ঠে চিন্তায় ভাটা পড়লো রাজিবের। পিছন ফিরতেই দেখলো হিয়া দাঁড়িয়ে আছে। হুট করে টেনশনে পড়ে গেল রাজিব। ওর আর সারার কথা গুলো শুনে নেয়নি তো হিয়া। কোনো মতে নিজেকে সামলে ও বলল,
তুমি কখন এলে?
এই মাত্র। এসেই শুনলাম তুমি কোথাও যাওয়ার কথা বলে ফোন রেখে দিলে। কোথায় যাবে?
দেশের বাইরে।
কতদিনের জন্য?
কয়েক মাস লাগতে পারে।
কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো হিয়ার। তারপর কি মনে করে বলল,
আমাকে ও সঙ্গে নিয়ে চলো।
হিয়ার কথায় কিছুক্ষণ কোনো কথা বললো না রাজিব। হিয়া কে কি করে সঙ্গে নিবে ও? সারা কে কিভাবে কি বলবে সেটাই এখনো ঠিক করতে পারেনি ও । তার উপর হিয়া কে সঙ্গে নিলে কোন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় কে জানে। তাই ভেবে চিন্তে বলল,
বাবা অনুমতি দেবেন না মনে হয়।
যাওয়াটা কি খুব জরুরি?
হুম।
আবারও মনটা খারাপ হয়ে গেল হিয়ার। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কলিজায় মোচড় কাটলো রাজিবের। এক হাত বাড়িয়ে হিয়া কে বুকের সাথে মিশিয়ে বলল,
মন খারাপ করো না। বিজনেসের ব্যাপার। সবকিছু ঠিকঠাক করে আমাদের তো ওখানেই থাকতে হবে বেশির ভাগ সময়।
মানে আমরা এখানে থাকবো না?
না। এখানে মাঝে মাঝে আসবো। ওখানে এখনো বিজনেস টা ভালোভাবে দাঁড়াতে পারেনি। বিয়ের জন্য মাঝখানে বাবা ডেকে পাঠালেন। তারপর তো এখানেই আটকে গেলাম।
আমি তো শুনেছিলাম তুমি একবছর আগে একবারে দেশে ফিরেছো।
ফিরেছিলাম। তারপর আবারো গিয়েছিলাম। বাবাকে বলে আমাদের বিজনেস টাকে স্প্রেড করার বাহানায় ওখানে নিজের একটা বিজনেস খুলে ফেললাম।
ওহ।
তুমি এখনো মন খারাপ করে আছো তাইনা?
নাহ। তুমি যাও। কিন্তু তাড়াতাড়ি ফিরবে। তোমাকে ছাড়া একা সেকেন্ড থাকার কথা মাথায় আসলেই আমার দম বন্ধ হয়ে যায়।
তাই এতো ভালোবাসো?
হুম।
শুধু হু তে কাজ হবে না। তুমি কিন্তু এখনো পুরো কথাটা আমাকে বলো নি। এখন বলো তো জলদি।
আমি তোমাকে……
কথাটা পুরোপুরি শেষ করতে পারলো না হিয়া তার আগেই দরজায় টোকা পড়লো। এবং ওপাশ থেকে হিয়ার ছোট ননদ ওদের রাতের খাবার খেতে জলদি নিচে আসতে বলল। তখনই হিয়ার মনে পড়লো তার শাশুড়ি তাকে এজন্যই রাজিব কে ডাকতে পাঠিয়েছিল। তাই জলদি করে দরজা খুলে রাজিব কে নিচে আসতে বলে ইমির সাথে নিচে চলে গেল ও। রাজিবের মুখে বিরক্তি তে ভরে গেল। হিয়া যখনই ওকে কথাটা বলতে রায় তখন কিছু না কিছু হয়েই যায়। আর কথাটা শোনা হয়না। খাবারের পাঠ চুকিয়ে আজকে ও রুমে এলে সবার আগে এই কথাটাই বলাবে ও হিয়াকে দিয়ে।
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here